আযদাহা পর্ব ২৬ (২)
সাবিলা সাবি
জ্যাসপার ল্যাবে থেকে সিঁড়ি বেয়ে ল্যাবের ছাদে চলে গেল। সেখানে হালকা বাতাস তাকে স্বস্তি দিতে চাইছিল। ছাদে দাঁড়িয়ে,সে আকাশের দিকে তাকাল। পৃথিবী আর আকাশ এক মুহূর্তে এক হয়ে গিয়েছিল, আর জ্যাসপার বুঝতে পারছিল, তার শরীরের মধ্যে দূর্বলতা তাকে বড্ড বেশি জর্জরিত করছে।
প্রচণ্ড গরম অনুভুতি হচ্ছে। ঘূর্ণায়মান মাথা নিয়ে সে অস্থিরভাবে নিঃশ্বাস নিল। তার পিঠের সমস্ত মাংস ক্লান্তিতে ঝুলছিল, আর মাথার মধ্যে পেঁচানো অনুভূতিটি বাড়ছিল।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছাদের প্রশান্ত পরিবেশে জ্যাসপার এক মুহূর্তের জন্য সবকিছু ভুলে গেল। তার শরীরের অস্বস্তি, মাথার ঘূর্ণন—সবকিছু কিছুটা হলেও থেমে গেল।সে শুধু এক টুকরো শান্তি খুঁজছিল, আর হঠাৎ সেখানেই তার সামনে এক অসম্ভব দৃশ্য ঘটল।কোথা থেকে যেন এক ছোট্ট পাখি উড়ে এসে তার হাতের তালুর মধ্যে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। পাখিটি এতই ছোট যে, এক টুকরো রেশমের মতো— অত্যন্ত নরম, প্রায় স্বচ্ছ। জ্যাসপার ঠিক বুঝতে পারছিল না, কীভাবে এ পাখি তার কাছে এসেছে,কিংবা এর বিশেষত্ব কী।
পাখিটি ছোট্ট রত্নের মতো, যা পৃথিবী থেকে সরাসরি তার হাতে এসে পড়েছে। তার অদ্ভুত রঙিন পালকগুলো কিরকম আলোকিত হয়ে উঠছিল, মনে হলো আকাশের তারাদের আলো তার শরীরে ফুটে উঠছে।
জ্যাসপারের অনুপস্থিত টের পেয়ে, তখনই আলবিরা ধীর পদক্ষেপে ছাদে প্রবেশ করলো, তার মুখাবয়বে তীব্র আগ্রহ। জ্যাসপারের হাতে পাখিটিকে দেখেই বিস্মিত হয়ে বলল, “প্রিন্স অরিজিন! এটা তো সেই পাখি—পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি, হামিংবার্ড!”
জ্যাসপার অবাক হয়ে হাতের তালু আরও একটু উঁচু করলো,পাখিটি আরও স্পষ্টভাবে দেখতে পারলো। তার চোখে এক অদ্ভুত মুগ্ধতা ভর করলো,এই ক্ষুদ্র জীবটি পৃথিবীর এক কোণায় এত ছোট, অথচ এত সুন্দর।
জ্যাসপারের চোখের সামনে মুহূর্তের জন্য একটি দৃশ্য ভেসে উঠলো, যা তার মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। সে মনে করল, সেই দিনটি—যেদিন প্রথমবার ল্যাবের ভেতরে ফিওনার সামনে সে তার ড্রাগন রূপে উপস্থিত হয়েছিল। ফিওনা তখন তার সামনে ছিল, ঠিক যেমন এই হামিংবার্ড—ছোট, কোমল, আর রেশমের মতো নরম।
ফিওনা তখন তার কাছে ঠিক এই ছোট পাখির মতোই মনে হয়েছিল। কোমল,মিষ্টি,আর এতটাই ছোট যে,তাকে হাতের তালুতে ধরে রাখাও সম্ভব মনে হয়েছিল।
তবে সেদিন তার ভেতর রাগের আগুন জ্বলছিল।সে ফিওনাকে কেবল প্রতিশোধের মাধ্যম হিসেবে দেখেছিল—একটা পাখি, যা সহজেই বন্দি করা যায়। কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে, জ্যাসপারের মনে হলো,সেই পাখির জায়গায় এখন যেন ফিওনাই রয়েছে তার হাতের তালুর ভেতর।
এই মেয়ে কেমন করে এত গভীরভাবে তার মন আর ইন্দ্রিয়কে আন্দোলিত করে ফেলল?
জ্যাসপার নিঃশব্দে চোখ দুটি বন্ধ করল।অন্তরালের গভীরে, তার স্মৃতির ভেতর ভেসে উঠল একটা কাল্পনিক মুহূর্তের চিত্র—ড্রাগনরূপে নিজের বিরাট, শক্তিশালী অবয়ব, আর তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট, নাজুক ফিওনা। সেই মেয়েটি,যার উপস্থিতি তাকে প্রথমবারের মতো নিজের শক্তির ভার অনুভব করিয়েছিল।
তার মন এই স্মৃতির গভীরে হারিয়ে গেল।কীভাবে ফিওনা তার দিকে তাকিয়েছিল, ভয়ে নয়,বরং এমন এক জেদ আর কোমলতায় মেশানো দৃষ্টিতে, যা ড্রাগনের তীব্র দহনেও অনড় থাকতে পারে।
জ্যাসপারের বুকের ভেতর হঠাৎ একটা ভারী অনুভূতি জন্মাল। সেই মেয়েটি—তার “হামিং বার্ড”—যার কোমলতা তার রক্তে প্রবাহিত আগ্রাসী ঝড়কে শান্ত করেছিল। নিজের গভীর মনোভাব আর আকাঙ্ক্ষার জালে আটকে গিয়ে সে নিঃশব্দে ফিসফিস করল, “আমার হামিংবার্ড…”
তার কণ্ঠে এমন এক আকুতি মিশে গেল, এই কথাগুলো বলতে গিয়ে সে নিজেকেও ধরে রাখতে পারছে না। এই মেয়ে, যে তার রাগের আগুনে পুড়ে যাওয়া একান্ত শীতল ছায়া, তাকে এত গভীরভাবে কীভাবে নিজের অন্তরে স্থান দিয়েছে?
তার মুখের কোণে একটা ক্ষীণ হাসি ফুটল—একটা কষ্টের হাসি। ফিওনা, তার শক্তির বিপরীত মেরু, তার অদম্য হৃদয়ের প্রথম পরাজয়।
আলবিরা হতভম্ব হয়ে জ্যাসপারের দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখে অবিশ্বাস স্পষ্ট—যেখানে জ্যাসপারের দুর্বল হয়ে পড়া উচিত, সেখানে সে এক ছোট্ট পাখিকে দেখে এতটা খুশি হচ্ছে,আর অদ্ভুতভাবে বিড়বিড় করছে।
“প্রিন্স,” আলবিরা শেষ পর্যন্ত বলল, “আপনার তো মনে হয় শরীর খারাপ লাগছে। আমাদের এখন উচিত রওনা দেয়া।”
জ্যাসপার ধীরলয়ে পাখিটার দিকে চোখ রেখে বলল, “হ্যাঁ,আলবিরা,ঠিক বলেছো।তুমি যাও।আমি আসছি।”
আলবিরা এক মুহূর্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর মাথা নাড়ল তারপর ধীরে ধীরে ছাদ থেকে নেমে গেল।
জ্যাসপার নরমভাবে পাখিটাকে উড়িয়ে দিল, আকাশে তাকে তার স্বাধীনতা উপহার দিলো।একটা মৃদু হাসি ফুটে উঠল তার মুখে,দুর্বলতায় ভারী হয়ে থাকা শরীর সত্ত্বেও।সে আরেকবার আকাশের দিকে তাকাল,সেখানে কিছু খুঁজলো।তারপর নিজেও ধীরে ধীরে ছাদ থেকে নেমে এলো।
এথিরিয়ন অবশেষে প্রায় পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছে। সে এখন দাঁড়িয়ে আছে,তার ধুসর নীল চোখজোড়ায় এখনও ক্লান্তির মৃদু ছাপ। আলবিরা আর থারিনিয়াস ওর দিকে এগিয়ে এলো অনেকদিনের এক অনিশ্চয়তার পরে তাদের প্রিয় বন্ধুকে ফিরে পেয়েছে।
থারিনিয়াস ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আর আলবিরা তার পিঠে এক বন্ধুত্বপূর্ণ চাপড় দিয়ে বলল,”অবশেষে তোকে ফিরে পেলাম, রিয়ন।” ভেনাসে ওদের মধ্যে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, সেটি এই মুহূর্তে আরও গভীরভাবে প্রকাশ পেল।
এথিরিয়নের কালো চুলে ছড়িয়ে থাকা হালকা আকাশী লেয়ারগুলো অদ্ভুতভাবে আলো ছড়াচ্ছিলো, ওর ভেতরে জমে থাকা জীবনশক্তির নতুন প্রকাশ। তার বাদামি ঠোঁটজোড়া নিঃশব্দে এক ক্লান্ত কিন্তু তৃপ্তি মাখা হাসি ফুটিয়ে তুলল।
এই দৃশ্যটি তাদের জন্য এক নীরব প্রতিজ্ঞার মতো যে যাই হোক না কেন, তারা একে অপরের পাশে থাকবে—জীবন আর সমস্ত সংকটের মুখোমুখি।
জ্যাসপার ল্যাবে পা রাখতেই তার চোখে আনন্দের ঝিলিক খেলে গেল। সামনে এথিরিয়ন দাঁড়িয়ে আছে,অনেকটা সুস্থ।
এথিরিয়ন জ্যাসপারকে দেখে মুগ্ধ কণ্ঠে বলল, “জ্যাসু ভাইয়া!” আর পরম আবেগে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।
জ্যাসপার আলগোছে পিঠে হাত রেখে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করল, “তুই ঠিক আছিস এখন?”
এথিরিয়নের নীল চোখে একচিলতে হাসি ফুটল। “হ্যাঁ ভাইয়া, আমি এখন পুরোপুরি ঠিক আছি। কিন্তু তুমি?আমাকে বাঁচাতে নিজের শক্তি দিয়ে দিলে,তুমি তো দুর্বল হয়ে পড়েছো।”
জ্যাসপার ঠোঁটে এক মৃদু হাসি এনে বলল, “তোর ভাই কি তার ভাইকে মরতে দেবে? তুই ঠিক আছিস, সেটাই তো আমার সবচেয়ে বড় তৃপ্তি।ড্রাকোনিস তোকে এভাবে সুস্থ দেখে কতটা খুশি হবে, ভাবতে পারছিস?”
আলবিরার কণ্ঠ শোনা গেল পিছন থেকে, “হ্যাঁ প্রিন্স, কিন্তু আমাদের এখন এখান থেকে রওনা দেওয়া উচিত।”
জ্যাসপার একটু গম্ভীর হয়ে মাথা নেড়ে বলল, “ঠিক বলেছো।
জ্যাসপার ড. আর্থারের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ডসেক করে। বিনয়ের সঙ্গে বলল,”আপনাকে ধন্যবাদ, ড. আর্থার।আপনার সাহায্য ছাড়া আমার ভাইকে উদ্ধারের মিশন সফল করা অসম্ভব হতো।”
যদিও ড.আর্থার জ্যাসপারের হিপনোটাইজের প্রভাবের অধীনে ছিল,তবু জ্যাসপার তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করল না। আলবিরা আর এথিরিয়ন নীরবে পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, মুহূর্তটির গুরুত্ব অনুভব করছিল।
কোনো জবাব না দিয়ে ড.আর্থার স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন,মনে হলোতার কৃতকর্মের স্মৃতি আর কোনো অনুভূতিকে ছাপিয়ে গেছে। জ্যাসপার একবার চোখ বুলিয়ে আশেপাশের প্রযুক্তি-সজ্জিত ল্যাবের দিকে তাকাল,তার প্রতিটি কোণ মনে রাখার চেষ্টা করলো।
এরপর সবাই একসঙ্গে ল্যাব ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল,এক নতুন অধ্যায়ের দিকে অগ্রসর হতে।
রাস্তায় সবাই ধীরে ধীরে হাঁটছিল।ৎতাদের লক্ষ্য ছিল যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে দূরে সরে যাওয়া।এথিরিয়ন ছাড়া বাকিরা ড্রাগন রূপে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আলবিরা থারিনিয়াস একে একে বিশাল ড্রাগনে পরিণত হলো। তাদের ডানার ছায়া পথের উপর পড়তে শুরু করল।কিন্তু ঠিক তখনই, জ্যাসপার ড্রাগন রূপ ধারণ করার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল, হঠাৎ করেই সে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।
থারিনিয়াস আর আলবিরা সঙ্গে সঙ্গে মানব রূপে ফিরে এল।এথিরিয়ন দ্রুত দৌড়ে এসে জ্যাসপারকে ধরে রাখল।তার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
“জ্যাসু ভাইয়া! ওঠো! তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?” এথিরিয়নের গলায় ভয় ফুটে উঠল, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।
আলবিরা নিচু হয়ে জ্যাসপারের পালস পরীক্ষা করে বলল,”প্রিন্সের অবস্থা ভালো মনে হচ্ছে না।আমরা এখানে আর দেরি করতে পারি না।”
থারিনিয়াস গভীর গলায় বলল, “আমি প্রিন্সকে নিয়ে যাই।এথিরিয়ন, তুই আলবিরার পিঠে ওঠ।আমাদের এখনই উড়ে যেতে হবে।”
এথিরিয়ন আর আলবিরা একসঙ্গে জ্যাসপারকে ধরে টেনে তুলল। তার নিথর শরীর ভারী হলেও তারা কোনোভাবেই তাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দিতে রাজি নয়। ক্লান্ত হাত দুটো তুলে সাবধানে থারিনিয়াসের গলায় জড়িয়ে দিল এথিরিয়ন।
থারিনিয়াস ধীরে ধীরে ড্রাগন রূপে ধারণ করল।বিশাল ডানা ছড়িয়ে সে শক্ত পায়ে দাঁড়াল।জ্যাসপার তার পিঠে নিস্তেজভাবে পড়ে রইল, একমাত্র থারিনিয়াসের শক্ত ডানা তাকে ভরসায়।
আলবিরা দ্রুত নিজেও ড্রাগন রূপ নিল।তার রূপালী রঙের ডানা ঝলমল করে উঠল চাঁদের আলোয়। এথিরিয়ন তার পিঠে উঠে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল,কোনোভাবেই পড়ে না যায়।
“চল,” থারিনিয়াস গভীর গলায় বলল।
আকাশে একসঙ্গে ডানা মেলে তারা উড়ে উঠল।বাতাসে তাদের ডানার ভারী ঝাপটানি সমুদ্রের তীরে পৌঁছাল।বিশাল নীল সমুদ্রের ওপর দিয়ে তারা ছুটে চলল, সময় তাদের পেছনে ধাওয়া করছে।
আলবিরার চোখে চিন্তার ছাপ,এথিরিয়নের মুখে গভীর সংকল্প। আর থারিনিয়াস? সে জ্যাসপারকে তার পিঠে আগলে রেখেছে মনে হচ্ছে নিজের জীবনের থেকেও মূল্যবান কিছু বহন করছে।
আলবিরা আর থারনিয়াস ধপাস করে পাহাড়ের মাটিতে পড়ার পরই তারা তৎপর হয়ে উঠল।নিস্তেজ জ্যাসপারকে হাতে ধরে পাহাড়ের পথে নামালো। ভোরের আলো পাহাড়ের শিখর ছুঁয়ে যাচ্ছিল, পাহাড়ে কম্পনের শব্দেই অ্যকুয়ারা আর ফিওনা বুঝে যায় তারা যে ফিরে এসেছে।
অ্যাকুয়ারা তখনই লিভিং রুমে ছিল,কিন্তু ফিওনা নিজের কক্ষেই।পাহাড়ের ভূমি কাঁপিয়ে আগমন বুঝে অ্যাকুয়ারা দ্রুত বাইরে এলো। জ্যাসপারকে সেই অবস্থায় দেখে তার মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠল। তবে এথিরিয়নকে দেখে তার চোখে এক ঝলক স্বস্তির ছায়া ফুটে উঠল।
এথিরিয়ন ততক্ষণে দৌড়ে এসে অ্যাকুয়ারাকে জড়িয়ে ধরেছে। তার ক্লান্ত চোখ আর ভাঙা কণ্ঠের মধ্যেও ছিল তীব্র আনন্দ সে বুঝতে পেরেছে যে এই দুঃস্বপ্নের পথ পেরিয়ে তারা সবাই নিরাপদে ফিরেছে।
সবাই মিলে জ্যাসপারকে গ্লাস হাউজে নিয়ে গেল।ক্লান্ত, আহত জ্যাসপারকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার সময় সবাই নীরব ছিল। তাদের চোখে উদ্বেগের ছায়া, কিন্তু হৃদয়ে ছিল আশার ক্ষীণ আলো।
থারিনিয়াস আর এথিরিয়ন দেরি করল না।জ্যাসপারকে শুইয়ে দিয়ে দুজন দ্রুত ল্যাবের দিকে রওনা দিল। তাদের লক্ষ্য একটাই—ড্রাকোনিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে বের করা।
আলবিরা দৃঢ় কণ্ঠে অ্যাকুয়ারাকে নির্দেশ দিল,”তুমি সেই ভেষজ ওষুধটি তৈরি করতে শুরু করো। তবে আজ এই ওষুধ কাজ করবে কিনা তা জানি না।তবু চেষ্টা করা দরকার।” অ্যাকুয়ারা মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ নিজের কাজে লেগে গেল। আলবিরা একটু দাঁড়িয়ে থেকে চারপাশে তাকালো, নিশ্চিত হতে চাইছে আর কিছু বাকি নেই। এরপর সে দ্রুত ফিওনার কক্ষের দিকে রওনা দিল।
ফিওনা তখন বিছানায় চুপচাপ শুয়ে ছিল।দরজা খুলে আলবিরা ভেতরে ঢুকতেই তার গম্ভীর কণ্ঠ ভেসে এলো, “এই মেয়ে,শোনো।”
ফিওনা চমকে উঠে বসে জিজ্ঞাসু চোখে তাকাল।
আলবিরা এক মুহূর্ত থেমে বলল,”প্রিন্সের কক্ষে যাও।আমি ল্যাবে যাচ্ছি।হাউজে এই মুহূর্তে আর কেউ নেই। উনি কক্ষে একা,আর তার শরীর মোটেও ভালো নেই। ওনার পাশে কেউ থাকা দরকার।”
ফিওনার মুখে চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করেই সে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল।আলবিরা ততক্ষণে কক্ষ থেকে বেরিয়ে ল্যাবের পথে পা বাড়িয়েছে।
ফিওনা ধীরে ধীরে পা ফেলতে ফেলতে জ্যাসপারের কক্ষে পৌঁছালো। জ্যাসপারের কক্ষে প্রবেশ করতেই, তার চোখে পড়ল জ্যাসপার বিছানায় শুয়ে অচেতন,কপালে ঘামের বিন্দু।তার শরীর একদম দুর্বল হয়ে পড়েছে। ফিওনার মনটা ভীষণভাবে চিড়িচিড়ে হয়ে উঠল।
সতর্ক পায়ে এগিয়ে এসে ফিওনা ধীরেসুস্থে জ্যাসপারের পাশে বসে। ফিওনা নিঃশব্দে এক দৃষ্টি ফেললো জ্যাসপারের অচেতন মুখের উপর।চাঁদের আলো আর কক্ষের মৃদু ল্যামসিডের হালকা সোনালী আভা মিশে,তার মুখটা আরও মলিন, আরও ক্লান্ত মনে হচ্ছিলো। সেই অচেতন অবস্থায় জ্যাসপারের মুখে যে এক ধরনের গভীর অবস্থা,মনে হচ্ছে সে পৃথিবী থেকে দূরে চলে গেছে,ফিওনার হৃদয়কে আরও অস্থির করে তুললো।
ফিওনার মন আর শরীর এক অদ্ভুত আকর্ষণে আবদ্ধ হয়ে পড়লো। জ্যাসপারের শারীরিক অবস্থা দেখে, তার অচেতন মুখ দেখে,মনে এক অজানা জিজ্ঞাসা জেগে উঠেছিলো। সেই দিনটিই মনে পড়ছিলো, যখন জ্যাসপার অসুস্থ ছিল, আর তার চুমুতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলো। তখন সে জানতো না কী ঘটেছিলো,কিন্তু আজ সব কিছু স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো।
ফিওনা তার হৃদয়ের গভীর অনুভূতির দিকে তাকালো।কোনো অদৃশ্য টান তাকে এই মুহূর্তে একদিকে পরিচালিত করছে। সে জানতো,একমাত্র এই চুমুই সম্ভবত তাকে সুস্থ করে তুলবে, আর কিছু নয়।
তার অস্থির হাতে সে ধীরে ধীরে জ্যাসপারের মুখের কাছে এসে বসলো। চোখে কিছু ছিল, কিছু অনির্দেশিত কিন্তু প্রগাঢ়। তখন, এক নিঃশব্দ শক্তিতে বাঁধা পড়া তার ঠোঁট আস্তে করে জ্যাসপারের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে গেলো।
এটা ছিল এক মুহূর্তের সিদ্ধান্ত, কোনো সন্দেহ বা দ্বিধা ছাড়া,তার অজান্তেই হৃদয়ের তাগিদে, সে জানতো—এটাই একমাত্র উপায়।
ফিওনা জ্যাসপারের ঠোঁটজোড়ার সাথে নিজের ঠোঁট মেলালে,অতি ক্ষুদ্র এক মুহূর্তের জন্য পৃথিবী থেমে গিয়েছিলো। তার মুখ থেকে নিঃশব্দ একটি শ্বাস প্রশ্বাস বের হলো, আর সেই শ্বাসে কোনো এক অজ্ঞাত শক্তি ছিল।এটি ছিল না এক সাধারণ চুমু—এটা ছিল একটি অদৃশ্য যোগসূত্র, এক অপ্রত্যাশিত সংযোগ যা ফিওনার শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে জ্যাসপারের শরীরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এটা ছিল এক ধরনের মেলবন্ধন,যা তার কোষের ভিতরে বায়ো-ক্যামিকেল প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ছিল।এই শক্তি এক ধরনের জীবনদায়ী তরঙ্গ হয়ে জ্যাসপারের শিরায় প্রবাহিত হতে শুরু করলো।
ধীরে ধীরে, জ্যাসপারের চোখের পাতা কাঁপতে শুরু করলো। তার দেহের প্রতিটি কোষ নতুন করে সচল হয়ে উঠছিল,তার শরীরে শক্তি ফিরছিল। ফিওনা খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও অনুভব করলো যে, কিছু অসম্ভবভাবে জাদুকরী ঘটছে, আর তা তার নিজের চুমুর মাধ্যমেই।
জ্যাসপার একটু একটু করে চোখ খুললো,তার মুখে এক গভীর অনুভূতি ফুটে উঠলো।
জ্যাসপারের চোখের পাতা ধীরে ধীরে সরে গিয়ে তার গভীর অলিভ গ্রিন চোখ দুটো ফিওনার দিকে তাকালো। সেকেন্ডের মধ্যে,সময় থেমে গেলো, তাদের দৃষ্টি একে অপরের মধ্যে আটকে গেলো।ফিওনার বুকের ভিতর অস্বস্তির সঙ্গে এক অজানা টান উঁকি দিলো।
ফিওনা নড়তে চাইল, উঠে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো।তার শরীরের প্রতিটি কোষে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে।কিছু একটা হচ্ছিল, যা সে বুঝতে পারছিল না,কিন্তু তা সত্ত্বেও,তার মন কোনোভাবেই থামছিল না।জ্যাসপারের চোখে ধীরে ধীরে একটি অন্ধকার টান ফুটে উঠলো। তার হাত ফিওনার চুলের মুঠি আঁকড়ে ধরে তাকে তার কাছে আরও কাছে টেনে আনলো।
তার কানের কাছে আবেশী কণ্ঠে জ্যাসপার বললো,”হামিংবার্ড…আরো বায়ো ক্যামিকেল লাগবে।”
এরপর, তার ঠোঁট ফিওনার ঠোঁটে আছড়ে পড়লো।প্রথমে খুব ধীরে,একধরনের অপ্রত্যাশিত কোমলতা নিয়ে,তারপর এক মুহূর্তের মধ্যে চুম্বনটা গভীর হয়ে উঠলো।ফিওনার শ্বাস আটকে গেলো,তার শরীরের সমস্ত শক্তি এক জায়গায় জমে গিয়েছিল, আর তার মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ ছড়িয়ে পড়ছিল।সারা দুনিয়া কেমন থেমে গিয়েছিল,আর শুধুমাত্র এই চুমু, এই স্পর্শ, এই টান একমাত্র সত্য হয়ে উঠলো।
জ্যাসপারের এক হাত ফিওনার কোমর থেকে তার পিঠ পর্যন্ত বিচরন করে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তে তার স্পর্শ আরও গভীর আরও তীব্র হয়ে উঠলো।ফিওনার শরীর শিহরণে কাঁপছিল,তার সমস্ত অনুভূতি একসঙ্গে জাগ্রত হয়ে উঠলো।জ্যাসপার তার চুল আরও শক্ত করে মুঠোচাপ দিলো,তাকে আরো কাছে টানতে চায়, আর ফিওনার ঠোঁটের মধ্যে এক তীব্র চুম্বন রেখে নিজের সব কিছু উজাড় করে দেয়।
জ্যাসপার তার ঠোঁটগুলো ফিওনার ঠোঁটে আরো গভীরভাবে স্থির করেধীরে ধীরে নিজের ঠোঁটের গহ্বরে ফিওনার জিভকে টেনে নিলো।তাদের শ্বাস একে অপরের মধ্যে মিশে গেলো,তার জিভ ধীরে ধীরে ফিওনার জিভের সাথে মিলে, এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ভরিয়ে দিলো তাদের দুজনকে। তাদের ঠোঁট আর জিভ একে অপরকে শুষে নিতে লাগলো। ফিওনার শরীর থেকে এক অস্বাভাবিক উত্তাপ বেরিয়ে আসলো, তার শ্বাস দ্রুত হতে লাগলো, তার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো।জ্যাসপার আরো গভীরভাবে তার ঠোঁটগুলো ফিওনার ঠোঁটে শোষণ করতে শুরু করলো।
জ্যাসপারের তীব্র আবেগ আর নিয়ন্ত্রণে ছিল না।আকর্ষণ আর আবেগের এক গভীর ঢেউয়ে ভেসে গিয়ে জোরে কামড়ে ধরল ফিওনার নিচের ঠোট।ব্যাথায় ফিওনার শ্বাস ভারী হয়ে উঠল। ফিওনার ঠোঁটের উপর তার স্পর্শ আগুনের মতো,প্রতিটি কামড়ে এক নতুন উত্তাপ ছড়াচ্ছিল।জ্যাসপার, যে কখনও এতটা উন্মুক্ত হয়নি,আজ ফিওনার প্রতি এক অবিরাম আকর্ষণে আটকে গেছে।
অ্যাকুয়ারা ধীরে ধীরে করিডোর দিয়ে হেঁটে, জ্যাসপারের কক্ষের সামনে আসলো, দরজাটা স্লাইডিং হয়ে খুলে যেতেই ভেতরের দৃশ্য দেখে অ্যকুয়ারার চোখ মুহূর্তে বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল। তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট ফুটে উঠলো জ্যাসপার আর ফিওনার এই গভীর মুহূর্ত, যা তার জন্য কল্পনাতীত ছিল। সে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো, মনে হচ্ছিল তার চারপাশের পৃথিবী থেমে গেছে।
তবে নিজের চেতনা ফিরে পেতে বেশি সময় লাগেনি।অ্যাকুয়ারা জানে যদি এই দৃশ্য কেউ দেখে ফেলে, বিশেষত আলবিরা, তবে তা ফিওনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তার মন ছটফট করতে লাগলো, কিন্তু কী করবে তা বুঝে উঠতে পারছিল না।কক্ষে প্রবেশ করার সাহস তার হলো না—এই দৃশ্যের মাঝে নিজের উপস্থিতি প্রকাশ করলে হয়তো পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
অ্যকুয়ারা ধীরে ধীরে দরজার পাশে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো,পাহারায় নিযুক্ত এক নিঃশব্দ প্রহরীর মতঝ।তার হাত ঘামছিল, আর হৃদস্পন্দন দ্রুত হচ্ছিল। মাথায় শুধু একটা চিন্তা ঘুরছিল—আলবিরা আর থারিনিয়াস যেন এই মুহূর্তে এখানে না আসে।
.
.
.
.
ফিওনার মনে ঝড় বইছিল। জ্যাসপারের আচরণে যে উন্মাদনা,তা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল তাদের মধ্যে। জ্যাসপারের এমন উগ্র আচরন ফিওনার কাছে এখন অসহনীয় লাগছিল।
“ছাড়ুন আমাকে!” ফিসফিস করে বলে উঠল ফিওনা,কিন্তু জ্যাসপারের চোখে অন্য এক পৃথিবীর প্রতিফলন। তার সবুজ চোখ দুটি আগুনের মতো জ্বলছিল, আর তার মুখে কোনো ভ্রুক্ষেপের ছাপ ছিল না।
“কিপ সাইলেন্ট হামিংবার্ড”! গম্ভীর অথচ রুদ্ধস্বরে বলে উঠল জ্যাসপার। তার কণ্ঠে এমন এক আধিপত্যের সুর ছিল যা ফিওনাকে মুহূর্তের জন্য স্তব্ধ করে দিল।
ফিওনা পুনরায় নিজেকে ছাড়াতে চাইল,কিন্তু জ্যাসপারের হাতের শক্তি ছিল অবিশ্বাস্য। সে তার হাত দুটি শক্ত করে বিছানায় চেপে ধরেছিল, ফিওনার সমস্ত প্রতিরোধ তার কাছে তুচ্ছ। ফিওনার হৃদয় দ্রুত ছুটছিলো।
“তুমি যা ভাবছ, আমি তা করতে যাচ্ছি না,” জ্যাসপার চাপা কণ্ঠে বলে উঠল। “কিন্তু আমার ভেতর এমন কিছু চলছে যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না।
ফিওনা বিভ্রান্ত আর আতঙ্কিত। জ্যাসপারের আচরণ মুহূর্তে বদলে গিয়েছে—এক উদ্ভ্রান্ত উন্মাদনার স্রোত তাকে গ্রাস করেছে।সে ফিওনার গলায় গভীরভাবে চুম্বন করছিল, তার উষ্ণ নিশ্বাস ফিওনার ত্বকে শিহরণ জাগাচ্ছিল।সেই শিহরণে যেমন আকর্ষণ ছিল,তেমনই ছিল ভয়। ফিওনার ঠোঁটজোড়ার পরে এবার তার গলার নরম ত্বকে জ্যাসপারের ঠোঁটের স্পর্শ আরও গভীর হয়ে উঠলো।
ফিওনার ফ্রকের প্রান্ত হাঁটু পর্যন্ত নেমে ছিল,যা জ্যাসপারের আকাঙ্ক্ষাকে আরও বেপরোয়া করে তুলল।এক হাতে ফিওনার দু’হাত শক্ত করে বিছানায় চেপে ধরে রেখেছিল, আরেক হাত ধীরে ধীরে ফিওনার পায়ের থাইয়ের দিকে নিয়ে গেল, যেখানে তার স্পর্শ ফিওনার শরীরে উত্তেজনার তরঙ্গ সৃষ্টি করল। তার আঙুলগুলো আলতো করে সেখানে আঁচড় কাটতে লাগলো,এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ফিওনার শরীর দুলে উঠলো।সেই হাতের সঞ্চরণ ছিল কোমল, তবে ক্রমেই তা বদলে গেল অন্যরকম স্পর্শে। তার ধাড়ালো নখ থাইয়ের উপর দিয়ে বয়ে গেল।
ফিওনা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করছিল, কিন্তু জ্যাসপারের উন্মত্ত শক্তির কাছে তা বৃথা।
ফিওনার শ্বাস ক্রমেই দ্রুত হয়ে উঠছিল,তার প্রতিটি স্নায়ু জ্বলন্ত আগুনে মোড়ানোর মতো।জ্যাসপার তার দিকে ঝুঁকে এসে ধীরে ধীরে ফিওনার জামার হাতাটি কাঁধ থেকে নামিয়ে দিলো। ফিওনার বুকের কিছু অংশ উন্মুক্ত হয়ে পড়ল, যা চাঁদের আলোয় হালকা ঝলমল করে উঠল।ফিওনার মন স্নায়ুতে ভর করেছিল এক গভীর অস্বস্তি।
জ্যাসপার তার গলায় ঠোঁটের স্পর্শ রেখে লেহন করতে শুরু করলো। তার উষ্ণ স্পর্শ ফিওনার শরীরকে শিথিল করে দিলেও তার ভেতরের দ্বন্দ্ব তাকে আরও অস্থির করে তুলছিল। ফিওনার আঙুলগুলো চাদরের কিনারা খামচে ধরল, তার চারপাশের এই অস্থিরতাকে দমন করার জন্য শেষ আশ্রয় খুঁজছিল।
জ্যাসপার আরও এগিয়ে এল তার ঠোঁটের গভীর চুম্বন ফিওনার বুকের উন্মুক্ত জায়গায় অনুভূত হলো, সেই মুহূর্তে ফিওনা বুঝতে পারল,তার শ্বাস-প্রশ্বাসে এক ভিন্ন রকম অস্থিরতা এসে ভর করেছে।
জ্যাসপার তার পিঠের ফ্রকে ভেদ করে কাপড় সরিয়ে পিঠে হাত ঢুকিয়ে দিলো।তার হাতের উষ্ণ স্পর্শে ফিওনার সমস্ত শরীর ভেঙে পড়ছিল, কিন্তু মনের ভেতর এক অদ্ভুত শক্তি তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল।
ফিওনার চোখে জল জমতে শুরু করল।তার ভেতরের সমস্ত অনুভূতি জট পাকিয়ে যাচ্ছে—প্রতিরোধের চেষ্টা,অসহায়তা,আর সেই রহস্যময় আকর্ষণের তীব্রতা যা তাকে থমকে দিয়েছে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে লাগল,তার চোখে আগুনের মতো একটি কামুক দৃষ্টি ঝলসে উঠল। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফিওনার মুখ থেকে ধীরে ধীরে তার উন্মুক্ত গলার দিকে নামতে থাকল, প্রতিটি মুহূর্তে তাকে আরও গভীরভাবে গ্রাস করার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ফিওনা ভয়ে আর দ্বিধায় কুঁকড়ে গেল। সে জানে, সামনে কী আসতে চলেছে, কিন্তু তার মস্তিষ্ক আর শরীর তাকে একযোগে প্রতিহত করতে পারছে না। জ্যাসপার পুরোপুরি শার্ট খুলে ফেলে যখন তাকে সরাসরি দেখল, তার চেহারায় এক অসীম আত্মবিশ্বাসের ছাপ ফুটে উঠল। ফিওনার গলা শুকিয়ে গেল।
জ্যাসপার তার দীর্ঘ,মসৃণ আঙুল ফিওনার কপালে আলতোভাবে রাখল।সেই আঙুল ধীরে ধীরে নেমে এলো তার নাকের ওপর,ফিওনার ত্বকের প্রতিটি কাঁপনকে নিজের দখলে নিলো। তারপর তার আঙুল থামল ফিওনার নরম ঠোঁটের কিনারায়।
এক মুহূর্তের জন্য তার দৃষ্টি ফিওনার চোখে আটকে রইল,সে তার ভাবনার গভীরতম কোণ পর্যন্ত দেখতে চাইছে। তারপর,কোনো তাড়াহুড়ো ছাড়াই,তার আঙুলটি ঠোঁটের উপর স্লাইড করতে শুরু করল প্রতিটি স্পর্শে ফিওনার অচেনা অনুভূতিগুলোকে আরও জাগিয়ে তুলছে।
জ্যাসপারের শরীরের প্রতিটি কোষ আগুনে জ্বলে উঠছে।দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে তার শরীরে আটকে থাকা সমস্ত আবেগ,কামনা আর আকাঙ্ক্ষা আজ যেন বাঁধ ভেঙে বেরিয়ে আসছে।তার হৃদস্পন্দন দ্রুত হয়ে উঠেছে,আর প্রতিটি শ্বাস তার উত্তেজনার মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে তার র*ক্ত আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। তার চোখে এক প্রচণ্ড কামনার ঝলক ফুটে উঠেছে,যা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে তাকে ফিওনার দিকে টানছে। জ্যাসপার বুঝতে পারছে না,এই অনুভূতি তার জন্য নতুন—এক অভিজ্ঞতা যা এতদিন তার জন্য নিষিদ্ধ ছিল
ফিওনার উপস্থিতি, তার কোমলতা,তার নীরব প্রতিরোধ—সবকিছুই জ্যাসপারের ভিতরে জমে থাকা সমস্ত ইচ্ছার বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। দীর্ঘকাল ধরে জমে থাকা সেই শারীরিক তৃষ্ণা আজ মুক্তি চাইছে,আর তার সমস্ত মনোসংযোগ এখন শুধুই ফিওনার দিকে।
গ্লাস হাউজের বাইরে আলবিরা,থারিনিয়াস, আর এথিরিয়নের কণ্ঠস্বর শোনা যাচ্ছিল।তাদের তীব্র তর্কের সুর আর অ্যাকুয়ারার চাপা কণ্ঠ ফিওনার কানে পৌঁছায়। “প্রিন্স সুস্থ হয়ে গেছে আর এই মুহূর্তে তার কক্ষে কাউকে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন।” অ্যাকুয়ারা জোর জোরে বললো।
আযদাহা পর্ব ২৬
ফিওনা আতঙ্কে জ্যাসপারকে ঝাঁকাতে শুরু করল,কাঁপা গলায় বলল, “ওরা চলে এসেছে… ছাড়ুন আমাকে!”
জ্যাসপারের চোখে হঠাৎ বোধোদয় হল। তার মনে হলো এক গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে।