আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৪
সাবিলা সাবি
ফিওনা রান্নাঘরের পরিচ্ছন্ন কাউন্টারটপে তাজা মাছ আর রঙিন সবজির ভাণ্ডারটি হাতে নিয়ে একা একা নাড়াচাড়া করতে করতে এক গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়। এই বাজারের প্রাচুর্য দেখে তার মনে হলো, কল্পনার রাজ্যে প্রবেশ করেছে—এখানে কমপক্ষে বিশাল এক ভোজসভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অতিথি হিসেবে প্রায় পনেরো বিশজন, কিন্তু বাস্তবতাতো অন্যরকম; এখানে আসলে মাত্র তিনজন।
হঠাৎ, আকাশে কালো মেঘ গা ঢাকা দেয় আর বৃষ্টি শুরু হয়। কাঁচের দেয়ালের পাশে যেয়ে দাঁড়ায় ফিওনা, অনুভব করে প্রকৃতি নিজেই তার অনুভূতিগুলোকে সুরেলা সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রকাশ করছে। বৃষ্টির জল কাঁচের দেয়াল বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে। সে হতভম্ব হয়ে কাঁচের উপর তেলাক্ত জলাকৃতির দিকে তাকায়, যেগুলো মেঘের ফাঁক গলিয়ে হালকা সুর্যের কিরন আলোতে রঙিন হয়ে উঠেছে।
ফিওনা তার হাত বাড়িয়ে দেয় কাঁচের ঠান্ডা পৃষ্ঠে,জল বিন্দু-এর স্পর্শ অনুভব করে।
রান্নাঘরের ভিতর থেকে দৃশ্যটি শিল্পকর্মের মতো প্রতিভাত হয়, যেখানে চারপাশের প্রকৃতি আর তার ভাবনা মিলেমিশে এক মহাকাব্যিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করেছে। ফিওনার হৃদয়ে গেঁথে যায় সেই মুহূর্ত—একটি অমলিন স্মৃতি, যা সে কখনো ভুলবে না।
ফিওনা এখনো ধ্যানমগ্ন অবস্থায় বৃষ্টি দেখে যাচ্ছে। প্রকৃতির এই অপরূপ সিম্ফনিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে সে। হঠাৎ,একটি গভীর শক্তিশালী পুরুষালী কণ্ঠস্বর তার ভাবনায় বিঘ্ন ঘটায়।
“কী ব্যাপার, তোমাকে কিচেনে পাঠিয়েছি রান্না করতে আর তুমি এখানে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি বিলাসে মগ্ন?”
ফিওনা দ্রুত পেছনে ঘুরে দাঁড়ায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জ্যাসপার কিছুটা অবাক হয়ে যায়। এতদিন ফিওনা চাইনিজ পোশাক পরিধান করেছে,কিন্তু আজকের এই রূপে সে এক নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে বাইরের বৃষ্টির মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে ফিওনার সৌন্দর্য মিশে একাকার। সফেদ রঙের হালকা চিকচিক লিলেনের গাউনটি তার গা থেকে ঝরে পড়ছে, বাদামী চুলের লকগুলি নিচের দিক থেকে কার্ল করা,ঝরে পড়া পাতার মতোই মাধুর্য ছড়াচ্ছে। তার বড় বড় বাদামী চোখ গভীর জলের ভাণ্ডার, আর গোলাপি অধরগুলো গোলাপের পাপড়ির ন্যায় নান্দনীক। মেকআপ ছাড়াই কোনো রাজ্যের রাজকুমারীর কোমলতা ফুটিয়ে তুলছে।
যদি এখানে জ্যাসপারের জায়গায় সাধারণ কোনো মানব পুরুষ থাকতো, সে নির্ঘাত ফিওনার প্রেমে পড়ে যেত। কিন্তু সৌন্দর্যের মোহে হারিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই; সে ড্রাগন প্রিন্স, যার হৃদয়ে অন্য একটি বোধ জেগে উঠেছে—প্রেম নয়, বরং তার অন্তর্দৃষ্টির দৃষ্টি।
“তোমাকে রান্না করতে বলা হয়েছে কখন আর তুমি এখনো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট করে যাচ্ছো ফিওনা। তোমার সৌন্দর্য মোহ এখানে কোনো লাভ নেই, রান্নার কাজটা সম্পুর্ন করো দ্রুত” জ্যাসপার তীক্ষ্ণ স্বরে ফিওনাকে নিজের কাজ স্মরণ করিয়ে দেয়।
ফিওনা কিছুটা দৃষ্টিকে ভেঙে নিয়ে “বলছিলাম, ওই মেয়েটার নাম যেনো কি?” ফিওনা জিজ্ঞেস করে, তার মনে কিছুটা উত্কণ্ঠা প্রবাহিত হচ্ছে।
“আলবিরা,” জ্যাসপার উত্তর দেয়, তার কণ্ঠে অস্পষ্ট এক গুরুত্ত্বের ছোঁয়া।
“হ্যাঁ, আলবিরাতো কেবল কিচেন দেখিয়ে গেছে, কিন্তু কিভাবে আর কি কি পদ রান্না করতে হবে, তা তো কিছুই বলে যায়নি।”
“ওটা বলার কাজ ওর নয়,” জ্যাসপার স্থিরভাবে বলে। “কারণ আমি যা আদেশ করবো,তাই রান্না হবে। শোনো, তুমি কি কি রান্না করবে তা বলছি।”
জ্যাসপার প্রায় বিভিন্ন দেশের, জাপান, চাইনিজ, থাইল্যান্ড, রাশিয়া দেশের কয়েকটা খাবারের আইটেম বলে দেয়।
আর কথার সাথে সাথে জ্যাসপার একটি বই তুলে ধরে, বইয়ের পৃষ্ঠাগুলি অক্ষর আর রঙে সজ্জিত।
“এখানে সবগুলোর রেসিপি দেয়া আছে। ঠিকঠাক ভাবে রান্নাটা করো।”
জ্যাসপার কিচেন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখনই ফিওনা ডেকে ওঠে, “শুনুন।”
জ্যাসপার থমকে দাঁড়িয়ে, এক মৃদু বিরক্তির প্রকাশ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। “আবার কি সমস্যা? আমার হাতে বেশি সময় নেই, তাড়াতাড়ি বলো যা বলার।”
ফিওনা কিছুটা অস্থিরভাবে উত্তর দেয়,“বলছি, আমরাতো মাত্র তিনজন এই বাড়িতে! এত খাবার কার জন্য রান্না করতে হবে?”
“তোমাকে কে বলেছে আমরা তিনজন এই হাউজে?” জ্যাসপার কিছুটা বিস্ময়ে বলে। “তুমি সহ আরো পাঁচজন।”
“মাত্র ছয়জনের খাবার অথচ রান্না করতে বলছেন যেন ২০ জন খাবে,” ফিওনা হতভম্ব হয়ে বলে।
“তো, তোমার মতো কি এখানে সবাই দুর্বল মানবী?” জ্যাসপার জিজ্ঞেস করে।
“সবাই ড্রাগন, তাই তাদের খাবারটাও বেশি খেতে হয়। আর একটাও প্রশ্ন করবেনা। রান্না শুরু করো। কিছুক্ষণ পর পর আলবিরা এসে তোমাকে দেখে যাবে।”
জ্যাসপার-এর বক্তব্য ছিলো আদেশের মতো, যা আকাশে উচ্চারিত বজ্রপাতের-এর মতো। ফিওনা কিছুক্ষণ নীরব থাকে, এরপর গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে রান্নার কাজে মনোযোগ দেয়। মনের মধ্যে জ্যাসপারের কথাগুলি প্রতিধ্বনিত হতে থাকে।
রান্নাঘরের পরিবেশটি তাঁর জন্য এক অচেনা, অথচ কঠোরতম চ্যালেঞ্জ।
মিস্টার চেন শিংয়ের মুখে একেবারে অস্থিরতা আর বিরক্তির ছাপ। ল্যাবের ভেতরে সামনে বসে থাকা ওয়াং লির দৃষ্টি গভীর, তীব্র।
“মিস্টার ওয়াং লি,” চেন শিং তাঁর সোজা হয়ে বসার মাঝে বললেন, “আজ তিন দিন হয়ে গেল, আমি ফিওনার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। আমাদের উচিত ওই ড্রাগনকে মুক্ত করতে দেয়া, আর আমি আজকেই ড্রাগনটাকে মুক্ত করতে চাই।”
ওয়াং লি কিছুটা অস্থির হয়ে উঠে। “মিস্টার চেন,” তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, “আপনাকে তো সেদিনই বলেছিলাম—ফিওনা একদম ঠিক আছে, যেখানেই থাকুক।ওরা আমাদের ভয় দেখাচ্ছে।”
চেন শিংয়ের মুখে চিৎকারের প্রস্তুতি স্পষ্ট। “আপনি প্লিজ,” তিনি কিছুটা উচ্চকণ্ঠে বললেন, “আরেকটা কথা বলবেন না ওয়াং লি। আমি আমার নাতনিকে ফেরত চাই—আজকের মধ্যে। ব্যাস, আজকেই।”
এরপর মিস্টার চেন শিং তাঁর দীর্ঘ আঙুল দিয়ে সিক্রেট রুমের দরজার পাশে ডিসপ্লে প্যানেলে রাখেন। প্যানেলের ওপর সেকেন্ড হাতের মতো নরম সুরে প্রতিটি অক্ষর স্থির হয়ে যায়। সেখান থেকে একটি চাপা সংকেত বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
ওয়াং লি হতাশার একটি দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন। “মিস্টার চেন শিং আপনি জানেন যে এটা করা কতটা বিপজ্জনক? আপনি কি জানেন, ড্রাগনটার মুক্তি আমাদের জন্য কিভাবে বিপদ ডেকে আনতে পারে?”
চেন শিংয়ের চোখে এক স্থিরতা,আর মনে সংঘর্ষের এক ছাপ। “আমার জন্য, ফিওনার জীবনই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ,” তিনি বললেন, “আমি যেকোনো মূল্যেই আমার নাতনিকে ফিরিয়ে আনবো।”
এই বলে, চেন শিংয়ের মুখাবয়বের মধ্যে দৃঢ় সংকল্প ফুটে উঠল,সে নিজেই এক মহাবিশ্বের সম্রাট, যে তাঁর রাজ্যের রত্নকে উদ্ধার করতে প্রস্তুত।
“শুনুন,” ওয়াং লি বললেন, “আপনি যদি এমন সংকল্প নিয়ে থাকেন, তবে আমাদের আরও প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের নিশ্চয়তা নিতে হবে যে, ফিওনার জন্য কোনো বিপদ আসছে না।”
“আমার প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই,” চেন শিং কিছুটা জোরালো কণ্ঠে বললেন। “আমি জানি কী করতে হবে। আমাকে একবারের জন্যও দুর্বল মনে করবেন না।”
সেখানে সেই আলোচনার মধ্যে, দুজনের মাঝে উত্তেজনারয়অদৃশ্য স্রোত প্রবাহিত হতে থাকে। দুজনেই জানেন, তাঁদের সিদ্ধান্তের ফলাফল শুধুমাত্র তাঁদের নিজেদের নয়, বরং গোটা জগতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
হঠাৎ করে সিক্রেট রুমের দরজা খোলার সাথে সাথে মিস্টার চেন শিংয়ের চোখে পড়ে এথিরিয়নের অবস্থা। তাঁর মনের মধ্যে ভয়াবহতা আর উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। এথিরিয়ন—যে ছিলো এক শক্তিশালী ড্রাগন—এখন পণ্যের মতো শুয়ে আছে, তাঁর শক্তি নিঃশেষিত হয়ে গেছে।
এথিরিয়নের পিঠের ওপরের স্কেলগুলো এখন সাদা হয়ে গেছে, একসময় যা ছিল চকচকে নীল, এখন তা মৃত শস্যের মতো ফ্যাকাশে। তাঁর দেহের মধ্যে অবশ্যম্ভাবী এক শূন্যতার চিহ্ন দেখা যায়,শক্তির বিশাল স্রোত ইতিমধ্যে কোথাও গিয়ে মিলিয়ে গেছে।
চেন শিং তার হৃদয়ে তীব্র এক সংকট অনুভব করেন। “এথিরিয়ন!” তিনি উঁচু কণ্ঠে ডাক দেন, “এই ড্রাগন টার এই অবস্থা কি করে হলো মিস্টার ওয়াং লি?”
এই দৃশ্য দেখে প্রায় হতবাক,জানতে চাইল, “কেউ এথিরিয়নের শক্তি নিয়ে নিচ্ছে? এটা অসম্ভব!”
চেন শিং অস্থির হয়ে বলেন,“আমিতো এই ড্রাগনটাকে এক ফোঁটা টর্চার করিনি, তাহলে এই বেহাল দশা কি করে হলো”
মিস্টার চেন শিং কিছুক্ষণ নীরবে ভেবে হঠাৎ খানিকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “এই ড্রাগনটার অবস্থা এমন তাহলে কি আপনি?”
চেন শিং সম্পুর্ন বাক্য ব্যয় করার পুর্বেই, সে আর কথা বলতে পারেনা। হঠাৎ করেই, চারপাশের পরিবেশটি অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে, তাঁর চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে। অবাক করে দিয়ে, সে নিজের ঘাড়ে হাত রেখে কিছু একটা অনুভব করে আর লুটিয়ে পড়ে ফ্লোরে।
চোখের সামনে প্রতিটি বস্তু অবাস্তব মনে হতে থাকে। তাঁর হৃদয়ের মধ্যে আতঙ্কের ঝড় বয়ে যায়,আর তিনি বুঝতে পারেন, এটা কোনো স্বাভাবিক অবস্থার ফল নয়। তাঁর মনের মধ্যে ফিসফিস করে ভেসে আসে ওয়াং লির কৃপণ হাসির শব্দ। “আপনি কি বুঝতে পারছেন না চেন শিং? আপনার নাতনি উদ্ধার হোক বা না হোক তাতে আমার কিছু আসে যায়না। আমার এতদিনের কঠোর পরিশ্রম করা গবেষনা আপনি ভেস্তে দিবেন ভেবেছেন।”
চেন শিং এখনো প্রতিবাদ করতে চায়, কিন্তু কণ্ঠস্বর তাঁর গলার মধ্যে আটকে যায়। সমস্ত শক্তি তাঁর শরীর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।
মিস্টার ওয়াং লি, ল্যাবে প্রবেশ করার পুর্বেই গভীর মনোযোগ সহকারে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে, আন্দাজ করে ফেলেছিল যে মিস্টার চেন শিং আজ ড্রাগনটাকে মুক্ত করতে চাইবে। তাই নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে, সে তার পকেটে লুকিয়ে রেখেছিল তার আনা একটি ইনজেকশ। ইনজেকশনটির মধ্যে ছিল ফেন্টানাইল, অত্যন্ত শক্তিশালী অ্যানালজেসিক, যা দ্রুত অজ্ঞান করতে সক্ষম।
যখন মিস্টার চেন শিং এথিরিয়নের এমন অবস্থা দেখছেন তিনি আন্দাজ করতে পেয়েছিলো এর পেছনে ওয়াং লি রয়েছেন আর সেটা সয়ং ওয়াং লি ও ধরতে পেরেছিলেন। তাই তিনি নিরবে মিস্টার চেন শিং এর পেছনে এসে দাঁড়ায়।
চেন শিংয়ের কাছে পৌঁছে, সে নিঃশব্দে আর দ্রুততার সঙ্গে ইনজেকশনটি বের করে। এক মুহূর্তের জন্যও সে ভয় পায় না;সে চেন শিংয়ের ঘাড়ে ইনজেকশনটি গেথে দেয়।
“এখন তো আর আপনি কিছু করতে পারবেন না,” ওয়াং লি বললো।
ইনজেকশনের প্রভাবে চেন শিংয়ের শরীরের শক্তি দ্রুত তলিয়ে যেতে থাকে। তার চোখে ভেসে ওঠে অবিশ্বাস, কিন্তু শরীরটাকে তখনই ধরাশায়ী করে দেয় ফেন্টানাইলের মারাত্মক প্রভাব।
মিস্টার চেন শিং মুহূর্তের মধ্যে মাথা ঝাকানিতে অস্থির হয়ে পড়লেন। তার চেতনাসম্পন্ন দৃষ্টিতে কিছুই দেখতে পান না। হালকা দোলানোর পর, সে আস্তে আস্তে মেঝেতে পড়ে যায়, তার চোখে বিষণ্ণতার ছাপ।
“এখন আপনি আর কিছুই বলতে পারবেন না,” ওয়াং লি জিজ্ঞেস করে, জয়ের হাসি তার মুখে। “ড্রাগনকে মুক্ত করার আর কোন আশা নেই, কারন ওই ড্রাগনের শক্তি আমাকে অমরত্ব লাভ করতে সাহায্য করবে শুধু অমর নয় আরো অনেক কিছু ভেবে রেখেছি আমি এই ড্রাগনের শক্তি নিয়ে।” এ কথা বলেই ওয়াং লি সঙ্গে সঙ্গে সে বেরিয়ে যায় ল্যাব থেকে আর কিছুর অস্তিত্ব নেই, তার পরিকল্পনা সফল হয়েছে।
হাসপাতালের জীবাণুমুক্ত পরিবেশে মিস ঝাংকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে, যেখানে হাসপাতালের সাদা দেয়ালগুলি কেবল জীবন-মৃত্যু*র বাস্তবতাকে ঘিরে রেখেছে।
“ফিওনা কোথায় চলে গেল হঠাৎ?” ডক্টর লিউ ঝান তার চিন্তায় মগ্ন। মেয়েটির ফোনটি বন্ধ; তার গতিবিধি একেবারে অজানা। লিউ ঝানের মন একটি কলসির মতো প্রতিনিয়ত পানির মত ভাবনার ভারে ভারী হয়ে উঠছে।
একদিকে মিস ঝাংয়ের স্বাস্থ্য, অন্যদিকে ফিওনাকে খুঁজে বের করার তাগিদ। “এখনো আসছে না কেনো ? কী ঘটেছে মেয়েটার সাথে ?” এই প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরছে। আতঙ্কে সে নিজের অস্থির হাতটি চুলের ওপর চালায়, যাতে করে কিছু একটা খুঁজে পায়।
হাসপাতালের সাদা আলো, চিকিৎসা সরঞ্জামের শূন্যতা,আর রোগীর স্নায়বিক অবস্থার মধ্যে আটকে থাকা মানুষের কষ্ট—সবকিছুই এই মুহূর্তে লিউ ঝানকে আরও হতাশ করে তুলছে। “আমি তাকে খুঁজে বের করব,” সে মনে মনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলো।
এর মধ্যে, তার মনে একটি প্যানিকের বোধ সৃষ্টি হয়, “ক্যামেলিয়া, তুমি ঠিক আছো তো?”
লিন আর লিয়া, ফিওনাদের বাড়িতে প্রবেশ করে অবাক হয়ে যায়। সমস্ত বাড়ি জুড়ে নিঃশব্দতা, প্রতিটি কোণায় ফিওনার উপস্থিতির ছায়া, তবে সে নেই। হতাশা তাদের হৃদয়ে কষ্টের টান তৈরি করে।
“ফিওনা কোথাও নেই?” লিন মৃদু গুঞ্জন করে। কথাগুলি বাতাসে ভাসতে ভাসতে খুঁজে পায়, তবে উত্তর আসে না।
“আমাদের এখন কি করা উচিত?” লিয়া মাথা নিচু করে বলে, “এতদিন পর, এখনও সে ফিরে আসেনি।” ফিওনাকে না পেয়ে সেদিন তারা দুজনেই ফিরে যায় যার যার বাড়িতে।
লিয়া ডরমিটরিতে ফিরে আসে। ডরমিটরিতে ফিওনার ব্যবহৃত জামাকাপড়, বইয়ের স্তূপ—প্রতিটি জিনিস সেভাবেই আছে কিন্তু ফিওনার হাসির গলা সেখানে অনুপস্থিত। লিয়ার মনের মধ্যে উথলাতে থাকা অসহায়তা সুনির্দিষ্ট উপলব্ধির ছোঁয়া—এখন তার সঙ্গী না থাকায় এই স্থানটি শূন্য হয়ে গেছে।
“কোথায় চলে গেলে ফিওনা তুমি ,” লিয়া আঙ্গুলের ডগায় জামাকাপড়ের পাঁজর স্পর্শ করে বলে, “আমরা আবার কবে একসাথে হবো?”
আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৩
লিন তার বাসার জানালার সামনে বসে বসে ভাবতে থাকে ফিওনার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো।
মুখে এক কঠিন রেখা ফুটে ওঠে। “সে ফিরবে, আমার বিশ্বাস ফিওনা ফিরবেই।” তবে ভিতরে ভিতরে,সে নিজেই জানে যে চিন্তাটি সেই ফাঁকা বাড়ির নিঃশব্দতার মতোই ভঙ্গুর।
কখনও কখনও, একা থাকার এই সঙ্গী মুহূর্তগুলো যতই বিরক্তিকর হোক না কেন, ফিওনার অভাবের জন্য তারা অন্তরালের এক অদৃশ্য দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত। তাদের হৃদয়ে অতলান্ত দুঃখ, আর প্রত্যাশা—ফিওনার ফিরে আসার।