আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৭ (২)

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৭ (২)
সাবিলা সাবি

জ্যাসপার ফিওনার হাত ধরে যখন অন্য এক কক্ষের দিকে নিয়ে গেলো, তখন ফিওনার মনের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক দানা বাঁধতে শুরু করল। কক্ষে প্রবেশ করতেই তার চোখের সামনে এক অপরূপ দৃশ্য খুলে গেল—এটি ফুলসজ্জার কক্ষ। চারপাশে অদ্ভুত সব ফুলের সাজে পরিবেষ্টিত,যেখানে প্রকৃতির এক অংশ বুনো বনে উদ্ভাসিত হয়েছে।
লাইটিংয়ে সারি সারি ফুলের ভাস্কর্য ঝলমল করছে, আর বাতির কোমল আলোতে প্রতিটি ফুল যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।ঝিলিমিলি বেলুনগুলি সিলিং থেকে ঝুলছে,অন্ধকারে চিকণ চিকণ আলোয় তাদের রঙীনতায় চারপাশকে মাতিয়ে তুলছে।

ফিওনার হৃদয় ধুকপুক করতে থাকে। “আমাকে এখানে কেনো আনলেন?”—তার কণ্ঠে এক ধরনের আতঙ্ক ফুটে ওঠে।
জ্যাসপার মৃদু হাসি হেসে বললো, “আজকে আমাদের বাসর রাত।”
ফিওনার চোখে কৌতূহল আর ভয়ের মিশ্রণ।
“আপনি আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ব্লাকমেইল করে বিয়ে করেছেন,কিন্তু আমাকে স্পর্শ করার সাহস করবেন না।”
জ্যাসপারের যেনো মনের গোপনতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা তার স্বার্থপরতা বুঝতে পারলো।
“ওহো,তোমাকে আগেই স্পর্শ করে ফেলেছি।আর কতবার বলবো?”—তার মুখে এক মিষ্টি হাসির রেখা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চাঁদের আলোয় পাহাড়ি কাঁচের কক্ষটায় মৃদু সোনালি আভা।রাতের বাতাসে এক ধরনের উত্তেজনা ছড়িয়ে আছে,যেখানে প্রকৃতি নিজেও অপেক্ষা করছে কোনো বিস্ফোরণের জন্য।
ফিওনা ফুলসজ্জার কক্ষের পাশের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল,চুল এলোমেলো,চোখ দুটো কুয়াশার মতো ভাবলেশহীন।তার ভেতরে এক অজানা অনুভূতি খেলা করছিল,যেন কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
“তুমি কি পালিয়ে যাচ্ছিলে,হুম?”
জ্যাসপারের গলা একেবারে পেছন থেকে ভেসে এলো,গা ছমছমে কিন্তু মায়াময়।ফিওনা পেছন ঘুরতেই দেখে, অন্ধকারের মধ্য থেকে জ্যাসপার বেরিয়ে আসছে।তার গভীর গ্রিন চোখ যেন দাবানলের আগুনের মতো জ্বলছে।
“আমি… পালাচ্ছিলাম না।”
জ্যাসপার হাসল,কিন্তু সেটা একেবারে শিকারির হাসি।
“তুমি কি জানো,হামিংবার্ড,আমি কখনো কোনো কিছু হাতছাড়া করি না?একবার যা আমার হয়ে যায়,সেটা আমারই থাকে।”

সে এক ঝটকায় ফিওনাকে নিজের দিকে টেনে আনল, তার উষ্ণ হাত শক্তভাবে ফিওনার কোমর ঘিরে রাখল। ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য শ্বাস নিতে ভুলে গেল।
“আপনি সবসময় এত দখলদার কেনো?” ফিওনার কণ্ঠ কাঁপছিল,কিন্তু সে মুখ শক্ত করে রেখেছিল।
জ্যাসপার হাসল,ধীরগতিতে।তার চোখে এক ধরণের শিকারির উন্মাদনা খেলা করছিল।
“তুমি যখন আমার সামনে এত রাগি আর এত সুন্দর দেখাও,তখন… আমার আর কোনো উপায় থাকে না।”
সে ফিওনার চিবুক তুলে ধরল,ধীরে ধীরে তার ঠোঁটের দিকে নামল।কিন্তু এক ইঞ্চি দূরে এসে থেমে গেল, যেন ইচ্ছে করেই আগুন জ্বালিয়ে রেখে দেখছে ফিওনা কতক্ষণ সহ্য করতে পারে।
ফিওনার নিঃশ্বাস দ্রুত হয়ে উঠল,কিন্তু সে পিছু হটল না। “তুমি কি জানো,হামিংবার্ড?ড্রাগনের হৃদয় কেমন করে কাজ করে,আমি জানি না।কিন্তু যখন তুমি আমার সামনে থাকো,আমার শরীরে আগুন জ্বলে ওঠে।আমি তোমাকে স্পর্শ না করে থাকতে পারি না।”

তার কণ্ঠ গভীর হয়ে গেল,নিঃশ্বাস গরম।ফিওনার গাল লাল হয়ে উঠল।
জ্যাসপার তার কপালে ঠোঁট রাখল,কিন্তু সেটা ছিল এত গভীর,এত সম্পূর্ণ,যেন সে নিজের অস্তিত্বের একটুখানি উষ্ণতা ফিওনার ভেতর ঢেলে দিল।
“তুমি যদি অন্য কারও দিকে তাকাও,হামিংবার্ড,
আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি,সে জীবিত থাকবে না।
তার কণ্ঠে ছিল এক ধরনের গা শিউরে ওঠা প্রতিজ্ঞা।
“তুমি আমার,ফিওনা।এই সত্য বদলানোর ক্ষমতা কারো নেই।এমনকি তোমারও না।তুমি কি জানো,আমি চাইলে শুধু আমার কণ্ঠ দিয়েই তোমাকে পাগল করতে পারি?তোমার ধমনিতে আমার নাম বাজবে,আর তুমি ভুলে যাবে দুনিয়ার সবকিছু—শুধু আমাতেই মত্ত থাকবে।”
পরের মুহূর্তেই সে ফিওনাকে নিজের শক্ত হাতে ঘুরিয়ে ফেললো,যেটাতে মনে হলো সে কোনো সাধারণ মেয়ে নয়,বরং তার জন্য তৈরি হওয়া একমাত্র অস্তিত্ব।

ফিওনার গাল চেপে ধরে নিজের দিকে ফেরালো তারপর তার দিকে গভীরভাবে তাকালো আর মৃদু স্বরে বললো “তোমার ড্রাগন প্রিন্স হাজবেন্ড কখনোই কোমল প্রেমিক হবেনা, সে সর্বদা তার আগ্রাসী দখলদারিত্ব দেখাবে।
ফিওনা শিউরে উঠল,যখন জ্যাসপার তার পেছনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে তার কোমল কাঁধ থেকে ড্রেসের ওপরের কোটিটা সরিয়ে ফেললো।সিল্কের কোটি তার কাঁধ থেকে মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে,ফিওনার শ্বাস আটকে গেল।সে যেনো তার পুরো দেহের প্রতিটি কণায় ভয় অনুভব করলো।কোটির নিচের সিল্কের পোশাকটি তার শরীরের আকার আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলো।স্লিভগুলো যেন দড়ির মতো চিকন হয়ে তার বাহু জড়িয়ে ধরেছিলো।
জ্যাসপার তার শক্তিশালী হাত দুটি ফিওনার কাঁধে রেখে,তাকে নিজের দিকে টানল। “আজকে কোনো কথা নয়,আজকে আমাদের বাসর রাত,” সে গম্ভীরভাবে বলল,তার গলার স্বর গর্জনকারী বুলেটের মতো। “আমি তোমাকে আজ রাতে চাই।”

ফিওনার হৃদপিণ্ডের ধড়পড় শুনতে পেল সে,মনে হলো জ্যাসপারের কথাগুলো তার ভিতর গেঁথে যাচ্ছে।সে জানতো,জ্যাসপার ক্ষমতাশালী,আর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার সাধ্য তার নেই। “প্লিজ,” সে ক্ষীণ কণ্ঠে বলল, “আমার সাথে এমনটা করবেন না।”
কিন্তু জ্যাসপারের চোখে এক অদ্ভুত রাগ ও আকর্ষণ ছিল।সে যেনো এক নিমিষেই তাকে গিলে ফেলতে প্রস্তুত। “তুমি জানো, আমি কখনোই প্রত্যাখ্যান পছন্দ করিনা।” তার গলার গভীরতা কানে গমগম করছিল,তার কন্ঠ এমন যে নিজের ইচ্ছাকে বলবৎ করতে প্রস্তুত।
ফিওনার মনে হলো সে একটি অবিশ্বাস্য বিপদের মুখোমুখি,যেখানে জ্যাসপারের প্রতিটি ছোঁয়া তাকে আরও অন্ধকারে নিয়ে যাচ্ছে।সে মনে মনে প্রার্থনা করলো,যেন কিছু ঘটে যা তাকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দেবে।কিন্তু জ্যাসপারের শক্তি তার আশার আলোকে ম্লান করে দিল।

এখন ফিওনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জ্যাসপার হলো এক কালো ছায়ার মতো,তার ইচ্ছাকে দমন করার জন্য প্রস্তুত। “এখন আর কোন অবকাশ নেই,” সে বলল, তার প্রণয়ের প্রত্যাশায় ভরা চোখে। “আজ রাত তোমার এবং আমার।”
জ্যাসপার ফিওনাকে ছেড়ে দিয়ে পাশে থাকা টেবিল থেকে এক গ্লাস ওয়াইন তুলে নিল।গ্লাসে রক্তের মতো রঙের পানীয়টি যেন তার অভিব্যক্তিতে আরো একগুঁয়েমি যোগ করল।সাধারণত,সে এলকোহল পান করতে পছন্দ করত না;তার শরীরের প্রতি এই পানীয়ের অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া ছিল—একটুখানি এলকোহল হলেই মাতাল হয়ে যেত।তবে আজকের রাত ছিল ভিন্ন,যা কিছু অদ্ভুত কারণে সে সেই নিয়ম ভাঙতে চেয়েছিল।
জ্যাসপার গ্লাসটি ঠোঁটে নিয়ে,একসাথে বড় একটি চুমুক দিল।পানীয়টি তার গলায় নামার সাথে সাথে,যেন অন্ধকারের শক্তি আরও গাঢ় হয়ে উঠল।তার চোখে-মুখে এক অদ্ভুত উন্মাদনার ছাপ ফুটে উঠল।সে এক মুহূর্তে সময়কে অতিক্রম করে ফেললো।নিজেকে এক নতুন কক্ষে খুঁজে পেতে চাচ্ছিলো।
“তুমি জানো,হামিংবার্ড,” সে ফিওনার দিকে তাকিয়ে বলল, “এই রাতের মধ্যে রয়েছে আমাদের ভাগ্য। আমি চাই না তুমি এই রাতটি ভুলে যাও কখনোই।”

ফিওনার মনে হচ্ছিল,জ্যাসপারের মাতাল অবস্থা তার জন্য একটি নতুন বিপদের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করাচ্ছে।তার চোখের ঝিলিকগুলো কেমন যেন অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে,আর সে ধীরে ধীরে একটি অন্ধকার পথে চলে যাচ্ছে।
“আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি ঠিক আছেন এই মুহূর্তে?” ফিওনা জিজ্ঞেস করল, তার কণ্ঠস্বরের মধ্যে উদ্বেগ স্পষ্ট হয়ে উঠল।
জ্যাসপার একটি হাঁসি দিয়ে বলল,”সব কিছুই ঠিক থাকবে। আমি শুধু তোমাকে এই মুহূর্তে পুরোপুরি ভাবে পেতে চাই।” তার কথাগুলো ছিলো রহস্যময় সুরে বাঁধা,যা ফিওনার মনে আরো শঙ্কার জন্ম দিচ্ছিল।
ফিওনা জানত,জ্যাসপারের এই মাতাল অবস্থার ফলাফল কি হতে পারে। কিন্তু,সে নিজেকে এই অবস্থায় আটকাতে পারছিল না।
জ্যাসপার একসাথে গ্লাসটা খালি করে পাশে ছুঁড়ে মারল।গ্লাসটি মাটিতে পড়ে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।ফিওনা ভয় পেয়ে গেল,মনে হলো একটি ভঙ্গুর স্বপ্ন ভেঙে গেছে।জ্যাসপারের চোখে একটি অদ্ভুত দৃষ্টি ছিল—নেশার কারণে তার চোখগুলো আগুনের মতো জ্বলছে।ফিওনা তার দিকে তাকাতে পারছিল না,মনে হচ্ছিল,সেই চোখগুলো তার মনোজগতের গভীরে প্রবেশ করতে চাইছে বা তাকে হিপনোটাইজ করতে চাচ্ছে।
একটি মুহূর্তের জন্য,জ্যাসপার ফিওনাকে এক টানে নিজের কাছে টেনে নিল।তার কোমরের চারপাশে শক্ত করে হাত জড়িয়ে ধরে, সে ফিসফিসিয়ে বলল,
“ইউ নো হোয়াট?সফট নরমাল রোমান্স আমার পছন্দ না।আই লাভ ওয়াইল্ড ইউনিক রোমান্স।”
ফিওনা অনুভব করল,তার শরীরের প্রতিটি রক্তকণার মধ্যে শঙ্কার এক নতুন ঢেউ বইতে শুরু করেছে। জ্যাসপারের শক্ত হাতের চাপ আর তার কাছাকাছি আসার কারণে তার শ্বাস প্রশ্বাস আরও দ্রুত হতে লাগল।
“তোমার মনে নেই আগের কথা,” জ্যাসপার বলল, “তবে আজকে আবার নতুন করে জানবে ড্রাগন প্রিন্সের রোমান্স কতটা ভয়াবহ।”

তার কথাগুলো ভয়ঙ্কর অঙ্গীকারের মতো লাগছিল। ফিওনার মনে হচ্ছিল,সে একটি অতল গভীর খাদে পতিত হচ্ছে,যেখান থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ নেই।সে জানত,আজকের রাতটা কেমন হতে যাচ্ছে, কিন্তু জ্যাসপারের হাত থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছিল না।
“দয়া করে,” সে বলতে গিয়েছিল, কিন্তু শব্দগুলো তার ঠোঁটের কিনারে আটকে গেল।জ্যাসপার তার মুখের কাছে এসে, নিজের উষ্ণ নিঃশ্বাসে বলল, “ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড,হামিংবার্ড,আই ক্যান্ট হোল্ড ব্যাক এনিমোর।”
এখন ফিওনা পুরোপুরি বুঝতে পারল,যে এই মুহূর্তটি শুধু একটি রোমান্স নয়;এক অভিশপ্ত রাতে পরিণত হতে পারে,যেখানে জ্যাসপার তার অন্ধকার দিকগুলোকে উন্মোচন করতে প্রস্তুত।
জ্যাসপার হঠাৎ ফিওনাকে টেনে এনে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দিল।নরম বিছানার ওপর পড়ে ফিওনা কিছুক্ষণ নীরব রইল।তার মনে হচ্ছিল,পৃথিবী থমকে গেছে।মোলায়েম গদি তার শরীরকে আলিঙ্গন করে নিচ্ছিল,কিন্তু সেই অনুভূতি তাকে আরাম দিতে পারছিল না।

জ্যাসপার তৎক্ষণাৎ তার ওপর চেপে বসলো,ফিওনা তার দিকে তাকাল,ভয়ের একটি ঝলক তার চোখে।সে জানত,এই মুহূর্তে তার প্রতি জ্যাসপারের মনোভাব কী।
“এতো ভয় পাচ্ছো কেনো তুমি হামিংবার্ড,” জ্যাসপার বলল,তার গলার স্বর গভীর ও হুমকির মতো। “এখন তুমি বুঝতে পারছো,আমি তোমাকে কীভাবে চাই।”
ফিওনা তার মুখে কিছু বলতে চাইল,কিন্তু কথাগুলো যেন আটকে গেল।তার শ্বাসের গতি বাড়তে লাগল,আর মনে হলো,সে এক অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে,যেখানে পালিয়ে যাওয়ার-আর কোনো রাস্তা নেই।
“আমার বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা কোরো না,” জ্যাসপার বলল,তার কণ্ঠে এক অদ্ভুত তেজ ছিল। “কারণ আমি সেই রকম একজন,যে নিজের ইচ্ছাকে পূর্ণ করতে কোনো কিছুই ছাড়বো না।”
ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল,নিজেকে সেই ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে।কিন্তু জ্যাসপারের শক্ত হাত তার শরীরে চাপ সৃষ্টি করছিল,মনে হচ্ছিল সে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

“আজ রাতে তুমি জানবে,আমার ভালোবাসার প্রকৃতি কতটা ভিন্ন,” জ্যাসপার বলল। “তুমি প্রস্তুত হও।”
জ্যাসপার পাশে থাকা একটি কালো গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে ফিওনার কপালে রাখল,তারপর ধীরে ধীরে ফুলটির পাপড়ি তার ঠোঁটের দিকে নামাতে লাগলো।প্রতিটি স্পর্শে ফিওনার শরীরের ভেতর তীব্র শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছিল।সে বারবার ঢোক গিলতে লাগলো,তার গলা শুকিয়ে আসছিল।
ফুলের মিষ্টি সুবাস ভরা ঘরটিতে যেন আবেগের এক নতুন অধ্যায় খোলে গেল।ফিওনার মনে হচ্ছিল,সেই গোলাপের প্রতিটি পাপড়ি তার অনুভূতির গভীরে ছুঁয়ে যাচ্ছে।তবে জ্যাসপারের চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাকে ভীতির মধ্যে রেখেছিল।
“তুমি কি জানো,গোলাপের রঙে সাদৃশ্য থাকে?” জ্যাসপার বলল,তার গলার স্বর গভীর মিষ্টি। “লাল গোলাপ প্রেমের প্রতীক,কিন্তু আমি তোমাকে কালো গোলাপ দিতে চাই।কারণ আমার প্রেম অন্ধকারের আবরণে আবৃত।”

“মনে রেখো,” জ্যাসপার বলল,“আজ রাতে আমি তোমাকে পুরোপুরি বুঝিয়ে দেব, আমার প্রেমের আসল স্বরূপ।”
জ্যাসপার নিজের আঙুল দিয়ে ফিওনার নরম ঠোঁটের ওপর আলতোভাবে স্পর্শ বুলিয়ে নিতে লাগল,যা ধীরে ধীরে তার অস্তিত্বের ছাপ রেখে যাচ্ছে।ফিওনা নিঃশ্বাস বন্ধ করে ফেলল,গলার কাছে অজানা এক কম্পন জেগে উঠল।
জ্যাসপার আরও ঝুঁকে এলো,তার উষ্ণ নিঃশ্বাস ফিওনার কানে স্পর্শ করতেই সে শিহরিত হয়ে উঠল। মৃদু কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বলল, “আমার প্রিয় চকলেট হলো মল্টেন ডার্ক ট্রাফল…আর তারচেয়ে বেশি প্রিয় তুমি।ভাবো তো,আমার দুটো প্রিয় জিনিস একসাথে উপভোগ করলে কেমন হয়?”
ফিওনার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে গেল, হৃদস্পন্দন যেন মুহূর্তেই দ্বিগুণ হয়ে উঠল।
ফিওনা বিভ্রান্ত হয়ে তাকিয়ে রইল,বুঝতে পারছিল না জ্যাসপার আসলে কী করতে চাইছে।তার চোখে একধরনের অস্থিরতা,ঠোঁট কাঁপছে,কিছু বলতে চাচ্ছে, কিন্তু শব্দ বেরোচ্ছে না।
জ্যাসপার ধীরেসুস্থে উঠে দাঁড়াল,তারপর এক ঝটকায় ফিওনার পা দুটো একসাথে নিয়ে শক্তভাবে বেঁধে ফেলল।ফিওনা শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেল,চমকে তাকাল তার দিকে।
“তুমি এখানে থাকো,হুম?” জ্যাসপার ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি টেনে বলল। “ততক্ষণে আমি আমার প্রিয় চকলেট নিয়ে আসি।”

বলেই সে দরজার দিকে এগিয়ে গেল।নেশার কারণে হাঁটাটা কিছুটা ভারসাম্যহীন,তবুও তার চলাফেরায় এক ধরনের শীতল আত্মবিশ্বাস ছিল।ফিওনা তাকিয়ে দেখল,জ্যাসপার কিচেনের দিকে চলে যাচ্ছে—তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়েছে,পায়ের শব্দগুলো ধীর অথচ ভারী।
ফিওনার দৃষ্টি নামল তার বাঁধা পায়ের দিকে।এই অবস্থায় সে পালাতে পারবে তো?নাকি জ্যাসপারের সেই উন্মত্ত,বুনো ভালোবাসার সামনে আবারও অসহায় হয়ে পড়বে?
ফিওনার বুক ধকধক করছে।সে জানে,আজ রাতটা আর পাঁচটা রাতের মতো সাধারণ হবে না।একটা বিপদের পূর্বাভাস যেন চারপাশে ছড়িয়ে আছে,অদৃশ্য শিকল বেঁধে ফেলেছে তাকে।
তার শরীর শক্ত হয়ে আসছে,ঠান্ডা হাত-পা যেন জমে যাচ্ছে শীতল আতঙ্কে।পালানোর উপায় নেই,আর প্রতিরোধ করেও হয়তো লাভ হবে না।তবু সে ভেবে চলেছে—জ্যাসপার সত্যিই কি এসব পছন্দ করে?নাকি এটা শুধুই তার খেয়াল,তার নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা?

জ্যাসপার বলেছিল,সে “ওয়াইল্ড রোমান্স” পছন্দ করে। কিন্তু সেটার আসল অর্থ কী?এটা কি নিছকই এক ধরনের উগ্র ভালোবাসা,নাকি এর পেছনে আরও ভয়ংকর কিছু লুকিয়ে আছে?
ফিওনা জানে না।শুধু জানে,আজ রাতটা তাকে এক অজানা গভীর অন্ধকারে টেনে নিয়ে যাবে,যেখানে সে হয়তো নিজেকেই আর চিনতে পারবে না…

জ্যাসপার অবশেষে তার কাঙ্ক্ষিত চকলেট—মল্টেন ডার্ক ট্রাফল—নিয়ে ফিরে এলো।ধীর পায়ে এগিয়ে এসে পাশের টেবিলে রাখলো সেটা,মনে হলো শিকারের সামনে অস্ত্র সাজিয়ে রাখা হচ্ছে।তার সবুজ চোখ দুটো ফিওনার ওপর স্থির,ধীরে ধীরে চকচকে আঙুল ডুবিয়ে আনলো চকলেটের নরম,উষ্ণ গলে যাওয়া স্তরে।
একবার ফিওনার দিকে তাকিয়ে সে আঙুলের মাথায় লেগে থাকা চকলেট চেটে দেখলো,চোখ বুজে স্বাদ নিলো গভীরভাবে,এটা শুধু খাবার নয়,এক ধরনের আবেশ,এক ধরনের নেশা। তারপর,চোখ খুলে ফিওনার দিকে ঝুঁকে এসে গভীর কণ্ঠে ফিসফিস করলো,
“এটার স্বাদ তীব্র,কিন্তু তোমার থেকে কম,হামিংবার্ড।”

তার ঠোঁটের কোণে শিকারির মতো এক চাতুর্যের হাসি ফুটে উঠলো। “তবে আমি দুটো স্বাদ একসাথে নিতে চাই।”
ফিওনার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। গলার কাছে ধরা পড়ে গেলো নিঃশ্বাস। জ্যাসপার কি করতে চায়, সে বুঝতে পারছে। কিন্তু জানলেও কিছু করতে পারছে না। তার দেহের প্রতিটা স্নায়ু অবশ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
জ্যাসপার আবার চকলেটে আঙুল ভিজিয়ে আনলো। এবার ফিওনার সামনে এসে থেমে গেলো, এক মুহূর্তের জন্য তার মুখের প্রতিটি ভয়ের রেখা পর্যবেক্ষণ করলো, তারপর আঙুল বাড়িয়ে তার নরম ঠোঁটে ছোঁয়ালো চকলেট মাখা আঙুলের স্পর্শ।
গলে যাওয়া চকলেট ঠোঁটের কোণে লেগে থাকলো, ধীরে ধীরে গড়িয়ে নামলো থুতনির নিচে।জ্যাসপার এক ঝটকায় ফিওনার চিবুকে হাত রাখলো,শক্তভাবে ধরে রাখলো তাকে।
“আবার ভয় পেলে? এইটুকু তো শুরু, হামিংবার্ড।”

তার দৃষ্টি গভীর, তীব্র, শিকারির মতো—আর ফিওনা জানে, এই রাতটা সহজে শেষ হবে না…
ফিওনার চোখে ভয় আর অসহায়তা স্পষ্ট।হালকা শ্বাসের কম্পন,দৃষ্টিতে গভীর অনুরোধ—তবু তার কণ্ঠ আটকে আসছে। অবশেষে, ভাঙা স্বরে সে ফিসফিস করে উঠে,
“দয়া করে… আমাকে ছেড়ে দিন। আপনি আমাকে জোর করে বিয়ে করেছেন, কিন্তু আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না। এটা… এটা আমার কাছে জোরজবরদস্তি ছাড়া কিছুই না।”
জ্যাসপার শীতল অথচ রহস্যময় এক হাসি দিলো। ধীর পদক্ষেপে এগিয়ে এসে ফিওনার মুখের এত কাছে এল যে তার উষ্ণ নিঃশ্বাস গাল ছুঁয়ে যাচ্ছিল। গভীর, গাঢ় স্বরে ফিসফিস করল,
“কে বলল আমি তোমাকে জোর করব, হামিংবার্ড?”
তার চোখে এক ধরনের অদ্ভুত আগুন—সেখানে খেলা করছে মালিকানার দাবি, তীব্র আকর্ষণ, আর ফিওনার প্রতি অদ্ভুত এক মোহ।

“হাউ ফানি! তুমি কি সত্যিই মনে কর আমি তোমাকে আঘাত দেব? তুমি আমার ওয়াইফ,ফিওনা।আমার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে তোমার ওপর।কিন্তু তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রোমান্সের মতো কিছু? উহুম… আমি কখনো সেটা করবো না।”
তার আঙুল আলতো করে ফিওনার গালে বুলিয়ে নিলো,তারপর থেমে গেলো ঠোঁটের কোণে। ঠোঁটে রহস্যময় এক হাসি, চোখেমুখে নিখুঁত আত্মবিশ্বাস—
“তুমি অধিকার না দিলে… ঠিক আছে,আমি জোর করবো।তবে রোমান্সের ক্ষেত্রে? না,সেটা আমার ধাঁচ নয়।একটু ধৈর্য ধরো,হামিংবার্ড।কিছুক্ষণ পরেই তুমি নিজেই আমার কাছে ধরা দেবে…”
তার কণ্ঠস্বরে এমন আত্মবিশ্বাস ছিল যা ফিওনার হৃদয়ের স্পন্দন এলোমেলো করে দিলো।সে জানে, জ্যাসপারের কথার মানে ঠিক কী…
ফিওনা ঠোঁট চেপে শক্ত কণ্ঠে বলে উঠল, “স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন!আমি কখনোই ধরা দেব না।জোর ছাড়া আমাকে পাবেন না আপনি!”

তার কণ্ঠস্বর দৃঢ়, অথচ তাতে এক ধরনের আতঙ্ক মিশে ছিল, যা সে লুকানোর চেষ্টা করেও সম্পূর্ণ লুকাতে পারেনি।
জ্যাসপার কোনো উত্তর দিল না। শুধু গভীর দৃষ্টিতে ফিওনার দিকে তাকিয়ে রইল—তার চোখে এক গভীর রহস্য লুকিয়ে ছিল,এক শিকারির ধৈর্য,যে জানে তার শিকার একসময় নিজেই ক্লান্ত হয়ে ধরা দেবে।
তার ঠোঁটে এক চিলতে ঠান্ডা হাসি খেলে গেলো।
সে জানে,কথা নয়—কাজই তার শক্তি।অযথা তর্ক তার ধাঁচে নেই।
ফিওনা তার দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পারলো, আর তার ভেতর শীতল এক স্রোত বয়ে গেলো…
জ্যাসপার আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করল না।

ফিওনার ঠোঁটে লেগে থাকা চকোলেটের মিষ্টি আস্বাদ নিতে সে ধীরে ধীরে এগিয়ে এল।প্রথমে আঙুলের ডগা দিয়ে আলতো করে ছুঁয়ে দেখল,সে নিশ্চিত হতে চায়, সত্যিই এতটা লোভনীয় কি না।
তারপর কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই ঠোঁট নামিয়ে আনল ফিওনার ঠোঁটের ওপর।
চকোলেটের স্বাদ নেওয়ার মতোই ধীর লোভী স্পর্শে ঠোঁটের কিনারায় অনুভব করতে লাগলো মখমলের মতো নরম ছোঁয়া।কিন্তু সেটুকুতেই তার তৃষ্ণা মেটেনি।
পরক্ষণেই সে আরও গভীরভাবে আঁকড়ে ধরল ফিওনার ঠোঁট—ঠিক যেন চকোলেটের স্বাদ পুরোপুরি না পাওয়া পর্যন্ত একটুও ছাড়বে না।ফিওনার ঠোঁটে থাকা মল্টেন ডার্ক ট্রাফল চকলেটটিকে নিজের ইচ্ছামতো গ্রহণ করতে শুরু করলো।তার দখলদারির আগুনে ফিওনার নিঃশ্বাসও বন্ধ হয়ে এলো।

জ্যাসপার আঙুল দিয়ে খানিকটা চকোলেট নিয়ে ফিওনার থুতনিতে লাগালো।মিষ্টি রসটি তার স্থির থুতনির বর্ণময়ত্বে স্পর্শ করল,গলে যাওয়া চকলেট এক রূপালী নদীর মতো প্রবাহিত হচ্ছে।ফিওনার প্রতিক্রিয়া দেখে জ্যাসপার আরও উন্মত্ত হয়ে উঠল।
হাঁটু ভেঙে বসে পড়লো,ফিওনার কোমল পেছনের চুল মুঠো করে ধরে,তাকে আধশোয়া অবস্থায় নিয়ে এলো।
জ্যাসপার এক নিঃশ্বাসে ফিওনার গলা চেপে ধরে তাকে কাছে টেনে নিল।তার চুম্বনে ছিল এক অপরিসীম আবেগ,যেখানে সে শুধু চকোলেট নয়,ফিওনার সমস্ত অস্তিত্বকে আত্মস্থ করতে চাইছে।চুম্বনের এক পর্যায়ে সে ফিওনার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দিলো,মনে হলো সেখানেই তার সবটুকু মাধুর্য লুকানো।
এক পর্যায়ে ফিওনা নিজেকে ছাড়াতে চাইলো,কিন্তু জ্যাসপার তখন তার চুম্বন থামিয়ে ফিওনার গলা চেপে ধরে বলল,”লুক ইনটু মাই আইস, অ্যান্ড বি আ গুড গার্ল ফর মি।”

ফিওনা এক মুহূর্তের জন্য তার সবুজ নেত্রপল্লবের দিকে তাকাল।জ্যাসপারের চোখে যে উন্মাদনা ছিল,তা যেন এক জাদুর প্রভাব ফেলছিল।তার সবুজ চোখে ছড়িয়ে পড়ছিল এক অদ্ভুত মাদকতা,যা ফিওনাকে এক অসম্ভব ম্যাজিকের মতো অনুভব করাচ্ছিল।
ফিওনার মনে হচ্ছিল,সে কেমন যেন একটি জাদুর মধ্যে পড়ে গেছে,যেখানে সময় থেমে গেছে আর প্রতিটি শ্বাস তার হৃদয়ের রক্তে এক নতুন রসায়ন তৈরি করছে।মুহুর্তেই ফিওনার অস্তিত্ব আচ্ছন্ন হয়ে ফেললো মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায়।
জ্যাসপার ফিওনাকে তার শারীরিক স্পর্শের মাধ্যমে এমনভাবে ম্যানিপুলেট করল যে,ফিওনা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জ্যাসপারের কাছে পুরোপুরি নিজের শরীরকে স্যারেন্ডার করে দিতে বাধ্য হলো।
জ্যাসপার তখন ধীরে ধীরে নিজের গায়ের প্লেন টি-শার্টটি খুলে ফেললো।টি-শার্টটি ফ্লোরে ছুড়ে মারল,মনে হলো কোনও নিঃসঙ্গতার ভারকে ত্যাগ করলো।তার সামনে থাকা ফিওনার সামনে ধরা দিলো জ্যাসপারের আকর্ষণীয় বডি,যা এক দৃশ্যমান নিখুঁত চিত্রশিল্পের মতো।
ফিওনা,না চাইতেও,তার বডির দিকে তাকাতে বাধ্য হলো।জ্যাসপারের পেশীবহুল শরীর,সুডৌল বুক আর স্নিগ্ধ ত্বক যা তার হৃদয়ে এক অস্থিরতা সৃষ্টি করছিল।

জ্যাসপার ফিওনাকে তার উন্মুক্ত বুকের সাথে চেপে ধরলো,সে তাকে নিজের অস্তিত্বের মধ্যে গভীরভাবে জড়িয়ে ধরতে চাইছে।ফিওনার গরম নিঃশ্বাস জ্যাসপারের উন্মুক্ত বুকে পড়তেই সে এক মুহূর্তের জন্য স্থির হয়ে গেল।জ্যাসপারের মাথা কিছুটা পেছনের দিকে হেলিয়ে গেল,তার চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল, আর ঠোঁট কামড়ে ধরলো,সে যেনো মিষ্টি যন্ত্রণার মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৭

ফিওনা অজান্তেই এক অবর্ণনীয় আকর্ষণ অনুভব করলো।যা তার দেহের প্রতিটি রক্তকণাতে নতুন আগুন জ্বলছে।হঠাৎ,এক প্রবল আবেগে সে জ্যাসপারের উন্মুক্ত বুকে ঠোঁট ছোঁয়ালো,
জ্যাসপারের প্রতি তার আকর্ষণ এতটাই প্রবল হলো, এক মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গেল।ফিওনার চুম্বনটি ছিল নিষ্পাপ কিন্তু তীব্র,সে তার সমস্ত অনুভূতি জ্যাসপারের সাথে ভাগ করে নিচ্ছে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ১৮