আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৩৫

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৩৫
সাবিলা সাবি

ভোরের আলো ধীরে ধীরে পূর্ব দিগন্তের গায়ে থাকা হালকা কুয়াশার চাদর সরিয়ে উঁকি দিচ্ছিল। নীলিমার গায়ে তখনও একটুখানি জ্যোৎস্নার ক্ষীণ পরশ রয়েছে। তিমিরে মোড়া প্রহরের শেষ নিঃশ্বাস তখনও নীলিমার বুকে অলক্ষ্যে ভাবে দুলে যাচ্ছিল।
এল্ড্র গাছটার নিচে ছিল নিস্তব্ধতা—এক ধরনের নৈঃশব্দ্য, যা কোনো শব্দের অভাবে নয়,বরং অতল প্রশান্তির মধ্যে জন্ম নেয়া নিরবতায়। জ্যাসপার বসে ছিল গাছের গুঁড়ির পাশে, মাথাটা হেলান দিয়ে। তার চোখজোড়া বন্ধ, অন্তর্জগতের কোন স্নিগ্ধ আলো যেনো ফুটে উঠেছে তার মুখের আবরণে।
তার শক্তপোক্ত সুগঠিত বুকের মধ্যেই নিস্তব্ধ হয়ে ঘুমিয়ে আছে ফিওনা—তার কপাল জুড়ে ছড়িয়ে আছে এলোমেলো চুল,নিঃশ্বাসের শব্দ ভারি ঠিক যেনো নিভৃতে চলা বায়ুর মতোই। পাখিরা তখনও ডানা ঝাপটায়নি, দূরের বনভূমি নিঃশব্দ; কেবল রয়েছে বাতাসে পাতার স্নিগ্ধ সঞ্চালন।

জ্যাসপারের এক হাত পড়ে আছে ফিওনার পিঠের ওপর আড়াল করে, তার আঙ্গুলে ধরা আছে সেই শূন্যতা, যে শূন্যতায় ভালোবাসার অর্থ তার অজানা, অথচ এই মুহূর্তে তার বুক জুড়ে এক অনির্বচনীয় অনুভব হচ্ছে।
ফিওনার চোখদুটি তখনও বন্ধ,তবে তার মুখের ভাঁজে এমন এক হাসির রেখা জেগে উঠেছে, যেন সূর্যাস্তের পর এক তাজা আলো তার মুখাবয়বে মূর্ত হয়ে ওঠেছে, আর স্নিগ্ধ এক মায়ায় ভরিয়ে দিয়েছে, স্বপ্নে সে কি তবে শীতল চূড়া ছুঁয়ে ফেলেছে? নাকি জ্যাসপারের বুকের এই আশ্রয়ই তার একমাত্র গন্তব্য?
ফিওনা ধীরে ধীরে চোখ খুললো আর চোখ খুলতেই তার চোখের সামনে ধরা পড়ে গেলো জ্যাসপারের সবুজ অরণ্যর ন্যায় নেত্রপল্লবের গভীর চাহনী। এমন এক চাহনী যা ফিওনার ভেতরের আত্মা অব্দি কাঁপিয়ে দিতে সক্ষম।ফিওনার চোখে ফুটে ওঠে অবাক বিস্ময়ের রেখা।নিঃশব্দ ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে সে জ্যাসপারের দিকে। ফিওনার এমন অবাক করা ফ্যালফ্যাল চোখের দৃষ্টি দেখে জ্যাসপার কিঞ্চিত ভ্রুকুটি করলো। তারপর মুখের রেখায় এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে ফিওনার কপালে গাঢ় চুম্বন করলো। তারপর সে গা শিউরানো সেই গাঢ় কিন্তু কোমল কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে বললো, “গুড মর্নিং, হামিংবার্ড…

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তুমি জানো,তোমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখাটা আমার দিনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
ফিওনার ঠোঁটের কোণে তখন প্রশান্তির হাসি,আর হৃদয়জুড়ে কেবল একটাই অনুভব,এই মুহূর্তটিই যেন তার জীবনের আসল শুরু।
প্রভাতের শান্ত আকাশ,গাছের পাতার ফাঁক গলে আসা রোদ আর হৃদয়ের ভেতরে গুনগুন করে জেগে ওঠা ভালোবাসা—এই মুহূর্ত যেন দু’জনের জন্য বানানো এক স্বর্গীয় ক্ষণে পরিণত হয়েছে। জ্যাসপারের চোখের সবুজ রশ্মি তখনও নিবিষ্ট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফিওনার দিকে। যেন তার প্রতিটি নিঃশ্বাসে আঁকা রয়েছে ফিওনার প্রতিচ্ছবি।
ফিওনা ধীরে এগিয়ে আসে কিছুটা জ্যাসপারের দিকে। তারপর হঠাৎই খুব মৃদু কিন্তু গভীর এক চুমু দেয় জ্যাসপারের চোখের পাতায়।সেই স্পর্শে জ্যাসপারের চোখ কিছুটা কেঁপে উঠলো ফিওনার ঠোঁটের পরশে।
ফিওনা মৃদু কণ্ঠে বলে ওঠলো—“তোমার অরণ্যের মতো চোখজোড়া আমার হৃদয়ের দুর্বলতা সেই প্রথম রাত থেকেই প্রিন্স।”

জ্যাসপার স্তব্ধ।কিয়ৎক্ষন বাদেই ফিওনার ঠোঁট তখন তার ঠোঁটে ছুঁয়ে গেলো।ধীরগতীতে সম্মোহিত করে দেওয়ার মতো করে। ঠোঁটের চুমু শেষে ফিওনা পুনরায় জ্যাসপারের চোখে চোখ রেখে বলে, “আর তোমার ঠোঁট যা আমাকে চুম্বকের মতো টানে সবসময়। কিছুতেই নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারি না এই আকর্ষন থেকে।”
একটুও শব্দ হয় না মুহূর্তটিতে।শুধু দু’জন নিঃশব্দে বুঝে যায়ভালোবাসা ঠিক কেমন পাগল করে দেওয়ার মতো অনুভব হতে পারে।হঠাৎ ফিওনার ঠোঁটে একটা দুষ্টু হাসি খেলে যায়। সে আচমকাই ঝুঁকে পড়ে, জ্যাসপার কিছু বুঝে ওঠার আগেই পুনরায় ফিওনা জ্যাসপারের গালে একটা চুমু দেয়, তারপর গলায়,এরপর আবার গালে,এভাবে একটার পর একটা চুমুতে ভরিয়ে দেয় জ্যাসপারকে। জ্যাসপার হতচকিত হয়ে যায়।তার শরীরের ধমনীতে জেগে ওঠে উত্তেজনা। সে এক মুহূর্ত ফিওনার মুখের দিকে তাকিয়ে হঠাৎই দুহাতে ফিওনার গাল চেপে ধরলো। তার চোখে তখন একধরনের অসহায়তা মেশানো আবেগ।কণ্ঠটা গম্ভীর, কিন্তু ভেতরটা যেনো কম্পিত “আমাকে উত্যক্ত করছো কেনো, ফিওনা?আই কান্ট টেক ইট এনি মোর…” তার চোখে চোখ রাখে ফিওনা,মিষ্টি দুষ্টুমি মেশানো কণ্ঠে বলে “তোমার সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিচ্ছি প্রিন্স…”

জ্যাসপার হঠাৎ করেই চোখ টিপে এক দুষ্টু হাসি দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “চলো তাহলে আজকে তোমাকে শাওয়ারের টেকনিক শেখাবো…” ফিওনা তখন ভ্রু কুঁচকে, একটু অবাক হয়ে বললো, “শাওয়ারের… টেকনিক?”
জ্যাসপার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,“হ্যাঁ,পৃথিবীর কন্যা হয়েও এখনো শাওয়ারের আর্ট বোঝো না তুমি! আজ শেখাবো কিভাবে শাওয়ারের জলের প্রতিটা ফোটা তোমার দেহে শীতল করার বদলে আগুন ধরিয়ে দেয়…”
ফিওনার শ্বাস হালকা কাঁপছিল। সে জ্যাসপারের চোখে চোখ রাখলো, কণ্ঠটা যেন গিলে ফেললো নিজের কথা—”প্রিন্স… আমি আর একটুও সহ্য করতে পারব না…”
জ্যাসপারের ঠোঁটে তখন এক ক্ষীণ, রহস্যময় হাসির রেখা। সে ফিসফিসিয়ে বলল,”শ্‌শ্‌শ্‌… ড্রাগন প্রিন্সের রানী হতে গেলে, একটু সহ্য তো করতেই হবে, হামিংবার্ড…”
এই কথা বলেই জ্যাসপার ফিওনাকে নিজের কাঁধে তুলে নিলো। পাহাড়ের হাওয়া চারপাশে ঘূর্ণি তৈরি করছিল, আকাশের প্রথম সূর্যের কিরন আর এল্ড্র গাছটা চুপচাপ সাক্ষী হয়ে রইল এই মুহূর্তের।

সকালের সূর্য তার কোমল আলো মেলে ধরলো এল্ড্র প্রাসাদের রাজকীয় মিনারে মিনারে।য়ডাইনিং টেবিলের ওপরেই মাথা রেখে শুয়ে ছিল লিউ ঝান। আস্তে আস্তে তার জ্ঞান ফিরলো। সে চোখ মেলে তাকাল চারপাশে আর দেখলো সব অতিথিরা যেন সময়ের কোনো ঘোরে বন্দি হয়ে গেছে, যে যে যার যার জায়গাতেই স্থির হয়ে পড়ে আছে। কারো হাত ঝুলে আছে,কারো গ্লাস পড়ে গেছে মেঝেতে। চারদিকে ছড়িয়ে আছে এক নীরব বিশৃঙ্খলা।লিউ ঝান ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো।পকেট থেকে একটা ক্যান্ডি বের করে মুখে দিয়ে দিলো।যখন তার মাথা প্রচণ্ড ঝিমঝিম করে,বা ভিতরটা অস্থির অনুভব হয়,তখন এই ক্যান্ডিটাই ওর একমাত্র আশ্রয়।

এটা তার চোখ থেকেই এক প্রকার অভ্যাস, সাধারণ এক ক্যান্ডি অথচ এটা কাজ করে একরকম মেডিসিনের মতোই।
লিউ ঝান চোখ বুলিয়ে দেখলো সবার দিকে তারপর —একজন একজন করে সবার পালস চেক করলো সে।
ডাকলো সবাইকে, কেউ কেউ অল্প করে সাড়া দিলো।তাদের চোখে-মুখে স্পষ্ট এক প্রকার ঘোর মনে হচ্ছে গতরাতে সবাই প্রচন্ড ড্রিঙ্কস করেছে। সবাই যেন লুটিয়ে আছে কাঁচের পুতুলের মতো। ঠিক তখনই লিউ ঝানের চোখ আটকে গেল সোফার দিকে। সেখানে আধশোয়া ভঙ্গিতে পড়ে আছে অ্যাকুয়ারা। তার রেশমি ল্যাভেন্ডার গাউনের প্রান্তটা কোমল পায়ের ওপর খানিকটা উঠে এসেছে,যেন অনিচ্ছাতেও কিছু প্রকাশ করে ফেলেছে সৌন্দর্যের এক নীরব ব্যাকুলতা।

লিউ ঝান ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল সেদিকে, তার ভেতরে যেন এক অজানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। অ্যাকুয়ারার সমানে গিয়ে সোফার সামনে এক হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।তারপর পালস চেক করলো অ্যাকুয়ারার, ঠিকই আছে… কিন্তু মুখটা অস্বাভাবিক ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে অ্যাকুয়ারার।লিউ ঝান তার কপালে হাত রাখতেই টের পেল হালকা ঠান্ডা ঘাম।এক মুহূর্তে যেন সব কিছুর ভার এসে পড়লো লিউ ঝানের কাঁধে।
“অ্যাকুয়ারা?” নাম ধরে ডাকলো সে এক নিঃশ্বাসে, যেন নিজের অজান্তেই।তবে কোনো উত্তর এলো না।
শুধু নিঃশ্বাস চলছে তার ধীরে ধীরে ভারী ছন্দে,যেন তার শরীরেও চলেছে কোনো অভ্যন্তরীণ লড়াই।
লিউ ঝানের দৃষ্টি স্থির হয়ে গেল অ্যাকুয়ারার মুখের ওপর। এত কাছ থেকে কখনো দেখেনি ওকে। আজ প্রথমবার এত সামনে থেকে তার নিস্পাপ মুখটা ধরা দিল লিউ ঝানের চোখে।সকালের রোদ্দুরের নরম কিরণ ঠিকঠাকভাবে পড়েছে অ্যাকুয়ারার মুখে।তার নীলচে রঙের চুলগুলো সেই আলোয় ঝলমল করছে যেন সমুদ্রের ঢেউর ওপর সূর্যের ছায়া।

আ্যাকুয়ারার মুখটা কোমল মায়াবী শিশুর মতোই দেখাচ্ছে, যে ঘুমিয়ে আছে নিশ্চিন্তে, ভয়-ভীতি, হিসেব-নিকেশের বাইরে এক নিঃশব্দ আশ্রয়ে। লিউ ঝান কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে থাকলো।তার বুকের কোথাও যেন অদ্ভুত এক স্পর্শ খেলে গেল।অপরিচিত, অজানা, কিন্তু গভীর। হঠাৎ নিজের ভিতরে ধাক্কা খেয়ে চমকে উঠলো সে। মনটা বুঝি প্রশ্ন করলো,
“তুই এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? তোর কি অধিকার আছে এভাবে তাকানোর?” সে চোখ সরিয়ে নিল দ্রুত, যেন ধরা পড়ে গেছে কোনো নিষিদ্ধ অনুভবের ফাঁদে।
লিউ ঝান কিছুক্ষণ চোখ নামিয়ে নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল। নিজেকেই যেন ধমক দিল মনে মনে, এই মুহূর্তে আবেগে হারিয়ে গেলে চলবে না।সে ধীরে ধীরে আরো এগিয়ে গেল অ্যাকুয়ারার দিকে। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে খুবই আস্তে করে গাউনটা তার পায়ের ওপর থেকে টেনে নামিয়ে দিল একটুও না তাকিয়ে। তারপর নিঃশব্দে অ্যাকুয়ারাকে কোলের মধ্যে তুলে নিলো।একটা আলগা নিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো লিউ ঝানের ফুসফুস থেকে,অজানা এক অনুভবের ভার যেন বুকের উপর নেমে এসেছে।
সিঁড়ির ধাপে ধাপে সে যতটা সম্ভব ধীরে পা ফেললো
মেয়েটা যেন একটুও না কাঁপে,না জাগে। চুপচাপ, গভীর মনোযোগে সে অ্যাকুয়ারাকে নিয়ে উপরের ঘরে পৌঁছে গেল।

তারপর খুব সন্তর্পণে তাকে শুইয়ে দিল বিছানায়।
চাদরটা টেনে দিল গায়ে, নিজের ভেতরের হালকা কাঁপুনি চেপে রেখে এক ঝলক তাকালো মেয়েটার ঘুমন্ত মুখের দিকে। তখনও অ্যাকুয়ারার মুখে সেই নিস্পাপ প্রশান্তি।
লিউ ঝান যখন অ্যাকুয়ারাকে বিছানায় শুইয়ে ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই একটা কোমল টান অনুভুত হলো,কেউ তার হাতটা কেউ ধরে ফেললো!
লিউ ঝান অবাক হয়ে তাকাল।ঘুমন্ত অবস্থায় অ্যাকুয়ারা তার হাত চেপে ধরেছে।আবার ফিসফিস করে কিছু একটা বলছে।
সে কিছুই বুঝতে পারছিল না। আস্তে করে ঝুঁকে পড়লো, নিজের কানটা নিলো অ্যাকুয়ারার ঠোঁটের কাছে। নিঃশ্বাসের মাঝে ভেসে এলো তারই নাম—
“…লিউ ঝান… লিউ ঝান…” লিউ ঝানের বুক কেঁপে উঠলো। ঘুমের ভেতরেও এই মেয়ে তার নাম ডাকছে?
অতল ঘুমের মধ্যেও সে ডেকেছে লিউ ঝানকে।
যেন তার অবচেতন মনের একমাত্র ভরসা, একমাত্র আশ্রয় এই ছেলেটা। লিউ ঝান স্তব্ধ হয়ে গেল।চুপচাপ বসে রইলো কিছুক্ষণ। মেয়েটা তাকে এমন নির্ভরতায় ডেকেছে—ঘুমের অতল থেকে, নিঃশ্বাসের গোপনে।
সে আস্তে করে হাতটা ছাড়িয়ে নিলো—তবে এবার আর উঠে যায়নি। চুপচাপ বসে রইলো পাশে। মনের গভীরে প্রথমবারের মতো এক প্রশ্ন উঁকি দিলো— এই মেয়েটা কেনো তাকেই ডাকলো ?

রাতটা যেন সিলভার জন্য বিষাদে মোড়ানো এক নিষ্ঠুর অধ্যায় ছিল।ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছিল তার।শুধু কান্নার অবশিষ্ট ভার আর ক্লান্তি তাকে ঠেলে দিয়েছিল গভীর ঘুমে। সেই ঘুম এসেছিল এথিরিয়নের কক্ষেই, সোফার এক কোণে।
সকাল হতেই চোখ খুললো সিলভার। শরীরটা ভার লাগছিল, কিন্তু তার চেয়েও বেশি ভার লাগছিল মনে।কালকের রাতটা মুহূর্তে ফিরে এলো তার মস্তিষ্কে।এথিরিয়নের নির্মমতা, তার অজান্তেই জোর করে কাছে আসা…সব কিছু মনে পড়তেই চোখে জল ফিরে এলো না—বরং ফিরে এলো তীব্র ঘৃণা।
কালকের এথিরিয়নের চোখে প্রেম ছিল না সেখানে, ছিল শুধু অহংকার আর দখলের মোহ।
রাগে, অভিমানে, অপমানে সিলভা উঠে দাঁড়ালো।
চোখে মুখে একটা কঠিন দৃঢ়তা ফুটে উঠলো।এথিরিয়নের কক্ষ ছেড়ে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এলো আর নেমে এলো নিচে।

নিচে নেমেই দেখতে পেলো, চারপাশে একটা অস্বাভাবিক নীরবতা।সবার দেহ পড়ে আছে যেভাবে যেভাবে,সেভাবেই
নড়ছে না কেউ। সিলভা ছুটে গেলো তার ফুপু লিয়ারা আর বাবা রাজা জারেনের দিকে। কান্নাজড়ানো গলায় ডেকেই চলেছে— “বাবা… ফুপু… উঠো না! এই কী হলো তোমাদের?”
তাদের চোখমুখে পানি ছিটালো, বারবার হাত নাড়ালো, চিৎকার করলো।অবশেষে রাজা জারেন আর লিয়ারা ধীরে ধীরে চোখ খুললেন। তারপর রাজা জারেন উঠে, রাজা ড্রাকোধিসকে ডাকার চেষ্টা করলেন। এক এক করে বাকিরাও জেগে উঠলো। কেউই ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না, এমন গভীর ঘুমে তারা কিভাবে চলে গেলো। একটা বিভ্রান্তি ঘিরে ধরলো পুরো এল্ড্র প্রাসাদকে।
তবে সিলভা এসব নিয়ে ভাবছে না।তার অন্তর এখন একটাই কথা বলছে, “রিয়ন,আমি আর তোমাকে ক্ষমা করবো না।”

সবার ঘুম ভাঙার ঠিক পর মুহূর্তেই,প্রাসাদের বিশাল দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করলো এথিরিয়ন। তার আগমনের প্রতিটা পদক্ষেপ যেন ধ্বনিত হচ্ছিল এল্ড্র প্রাসাদের অন্দরমহলে।শরীরে আগের মতোই আত্মবিশ্বাস, মুখে এক চিলতে গাম্ভীর্য, কিন্তু চোখ, চোখে অসহায়তা ফুটে এলো যখন সে দেখতে পেলো সিলভাকে।
সিলভা দাঁড়িয়ে ছিল সবার সামনে আর তার চোখজোড়া রক্তবর্ণ অভিমানে ঝলসে উঠছিল। দৃষ্টিতে দৃষ্টি আটকে গেল কিছু মুহূর্তের জন্য,কিন্তু সেই দৃষ্টি স্নেহময় ছিল না, ছিল অভিযোগে পোড়া, ছিল ঘৃণায় শীতল।
সিলভা ঠোঁট শক্ত করলো, তারপর হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে তার বাবার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বললো— “বাবা… আমি… আমি ফ্লোরাস প্রাসাদে ফিরতে চাই। এখনই। আমার শরীর ভালো লাগছে না…”

তার কণ্ঠে ছিল না কোনো কান্না, কিন্তু ছিল এমন এক ক্লান্তি যা বলে দিচ্ছিল সব শেষ।এথিরিয়নের বুকটা মুহূর্তেই ভারী হয়ে এলো।তবুও সে কোনো শব্দ করলো না। শুধু দাঁড়িয়ে রইলো,নিঃশব্দে,এই দৃশ্যের সামনে…যেখানে সিলভা তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলো,দূরে চলে যাচ্ছে আর হয়তো চিরতরের মতোই।
রাজা ড্রাকোনিস, রাজা জারেন আর লিয়ারা-র দিকে তাকিয়ে বললেন, “আপনারা এখন যাবেন না, আজ দুপুরে সবাই একসাথে খেয়ে তারপরই ফ্লোরাস প্রাসাদের পথে রওনা হবেন বলে দিলাম।”
রাজা জারেন মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালেন। লিয়ারাও চুপচাপ রাজি হয়ে গেলেন। কিন্তু ঠিক তখনই চারপাশে চোখ বুলিয়ে লিয়ারা বললেন, “অ্যালিসা কোথায়? ও তো এদিকে নেই..কোথাও দেখছিনা.”
রাজা জারেন একটু ভ্রু কুঁচকে বললেন, “হয়তো প্রাসাদে ফিরে গেছে… সিলভা, তুমিও তাহলে ফিরে যাও, মা।” সিলভা কণ্ঠে ক্লান্তি মিশিয়ে বললো, “ঠিক আছে বাবা।”

কিন্তু ঠিক তখনই ড্রাকোনিস বলেন, “ও একা যাবে নাকি?এটা বলেই তিনি এথিরিয়নের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এথিরিয়ন, তুমি সিলভাকে ফ্লোরাস প্রাসাদে পৌঁছে দিয়ে আসো।” কক্ষে মুহূর্তেই থমথমে নীরবতা নেমে এলো। সিলভা মাথা তুলে তাকালো একবার এথিরিয়নের দিকে। চোখে ছিল তীব্র অবজ্ঞা। তারপর গলা শক্ত করে বললো— “দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারবো। আমার গাড়ি আছে, ড্রাইভার ও আছে।” এটা বলেই আর এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেলো সিলভা। চওড়া প্রাসাদের হলরুমে পেরিয়ে বেরিয়ে গেলো এমনভাবে যেন কোনো হাওয়ার মতো ভেসে চলে গেলো এথিরিয়নের সামনে দিয়ে। এথিরিয়ন হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।
কিছুক্ষণ পর দ্রুত পা ফেলে ছুটে গেলো সিলভার পেছনে। সিলভা গাড়িতে উঠে পড়েছে ততক্ষনে।গাড়ির দরজা বন্ধ।এথিরিয়ন ছুটে গিয়ে গাড়ির জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে পড়লো। গলার স্বর কেঁপে উঠলো— “সিলভা! প্লিজ! আমার তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে। শুধু একবার শোনো, প্লিজ! খুব জরুরি কথা…” সিলভা একবারও তার দিকে তাকালো না।

শুধু ঠোঁট শক্ত করে ড্রাইভারকে বললো, “গাড়ি চালু করুন।”
গাড়ি চলতে শুরু করলো। এথিরিয়নের সামনে দিয়ে ধুলোর দমকে চলে গেলো সেই গাড়ি, সঙ্গে চলে গেলো সেই না বলা কথার ভার আর একটা না-ফিরে-আসা সুযোগ।
গাড়ির ধুলো হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার পরও এথিরিয়ন দাঁড়িয়ে রইলো ঠিক সেখানেই।তার চোখ যেন শূন্যতায় আটকে গেছে। ধীরে ধীরে ঘাড়ে হাত বুলিয়ে নিলো, যেন ভার সমস্ত সেখানেই জমেছে।তারপর একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কণ্ঠটা ভেঙে উঠলো—“এখন আমি কিভাবে তোমার রাগ ভাঙাবো, সিলভা…” একটা ছোট্ট হাসি ফুটলো ঠোঁটে, যার মধ্যে দুঃখের ঝাঁজ স্পষ্ট। “তুমি না বললেও আমি জানি, আমার উপস্থিতি এখন তোমার জন্য বিষ… তবুও আমি চেষ্টা করবো তোমাকে ফেরানোর কারণ আমি এবার আর হারাতে চাই না তোমাকে।”

দুপুরের একটু আগেই লিয়ারা হেঁটে হেঁটে এলেন জ্যাসপারের কক্ষের দরজার সামনে। হালকা কড়া নাড়লেন। “ফিওনা… ফিওনা মা, ওঠো। সকালের নাশতা করবে,” কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সারা শব্দ পেলেও না তাই তিনি দরজা ঠেলতেই দরজা খুলে গেলো আর তিনি ভেতরে ঢুকলেন। কিন্তু…কক্ষ ফাঁকা। চোখ ছুটে গেলো বিছানার দিকেও— সেখানেও কারও ছায়া নেই। জলজ্যান্ত নিস্তব্ধতা। লিয়ারা অবাক হয়ে পেছন ফিরলেন।তাড়াতাড়ি পুরো প্রাসাদে খোঁজ করতে লাগলেন। বাগান, ছাদ, রান্নাঘর, অন্দরমহল— কোথাও নেই ওরা দুজনে। ঠিক তখনই পাশের সিঁড়ি দিয়ে নেমে এল এথিরিয়ন, হাতে এক গ্লাস দুধ। “ফুপি, কোনো সমস্যা?” লিয়ারা চট করে বললেন, “আমি তোমার ফুপি নই, আন্টি বলবে।” এথিরিয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে হেসে বললো,“সরি…আন্টি, জ্যাসু ভাইয়া হয়তো ফিওনাকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে।” লিয়ারার চোখ রাঙা হয়ে উঠলো, “ঘুরতে বেরিয়েছে? কাউকে কিছু না জানিয়ে! আমার মেয়েকে নিয়ে সকালে উঠে কোথাও চলে গেলো? এটা কী ধরনের ব্যবহার! রাজার ঘরে থেকেও শিষ্টাচার শেখেনি!” তিনি বিরক্ত হয়ে প্রাসাদের দরজার দিকে হাঁটলেন, মনে মনে বললেন, “ফিওনা আমার আদরের মেয়ে… আর জ্যাসপার? সে যেন না ভুলে যায়, আমি শুধু ফিওনার মা নই, এক রাজ্যর রানীও।”

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে, জ্যাসপার ফিওনাকে নিয়ে প্রাসাদে ফিরে আসে। তখন প্রাসাদের হলরুম সহ করিডোর ছিলো ফাঁকা। গতরাতের অবশিষ্ট থেকে যাওয়া অতিথিরা ফিরে গেছে অনেক আগেই। আর রাজা জারেন ড্রাকোনিস, লিয়ারা যার যার কক্ষে আরাম করছিলো। জ্যাসপার ফিওনাকে নিয়ে প্রাসাদে প্রবেশ করেই সরাসরি ফিওনাকে নিয়ে নিজেদের কক্ষের বাথরুমে প্রবেশ করলো।এটা ছিল কোনো সাধারণ বাথরুম নয় এটা যেন আধুনিক প্রযুক্তি আর রাজকীয়তার মিশ্রনে এক টুকরো স্বর্গ।
পুরো বাথরুমঠাই ছিলো ছিল কাঁচে ঘেরা, যেন বাইরে থেকে দিনের বেলা মেঘের ভেলা আর রাতে নক্ষত্রভরা রাতের আকাশ দেখে মুগ্ধ হওয়া যায়। ঝরনাটা ছিল বাথরুমের একদম মাঝখানে, বিশাল এক বাক্সের মতো প্ল্যাটফর্মের ওপর। তার মাথা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির ধারা এক অভিজাত ঝর্নার মতো পড়ছিল, যেন কেউ আলতো করে আকাশ থেকে পানি ঢালছে।

দেয়াল জুড়ে শ্বেতসাদা মার্বেলের কাজ, আর ঝরনার নিচে বসানো হয়েছিল সোনালি রঙের লাইটি‍ং—যা গায়ে পড়লে মনে হয় কেউ সোনার ছায়া মেখে দিয়েছে।
ঝরনার এক পাশে ছিল বিশাল এক আয়নাসহ মার্বেল সিঙ্ক, আর পাশে স্মার্ট ভেসিন, যার সেন্সরে হাত দিলেই পানি প্রবাহিত হয়। হ্যান্ড শাওয়ারটা ছিল অলঙ্কারখচিত ড্রাগনের আঁকায় তৈরি হোল্ডার আর পানির ধারায় নীল আলো জ্বলে উঠতো।বাথরুমের প্রতিটি কোণ জুড়ে ছিল আরামদায়ক সুগন্ধ, ল্যাভেন্ডার আর সামুদ্রিক হাওয়ার মিশ্র ঘ্রাণ। বাতাসে হালকা সংগীত চলছিল ,মৃদু, কামনাময় সুরে। এটা শুধু একটুকরো জায়গা নয়, ছিল যেন রাজা-রানীর মিলনের জন্য প্রস্তুত এক স্বর্গীয় মঞ্চ।

জ্যাসপার নিঃশব্দে ফিওনাকে টেনে আনলো বড় বেসিনের বড় রাজকীয় আয়নার সামনে। আয়নার প্রতিচ্ছবিতে ধরা পড়লো এক নারীর নরম ভয় আর এক ড্রাগনের নিঃশব্দ দাবী। ফিওনার হৃদস্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল।
জ্যাসপার এক হাতে ফিওনার কোমর জড়িয়ে ধরলো, আরেক হাতে তার ঘাড় থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে দিলো চুলগুলো। তার স্পর্শে ফিওনার শরীর শিউরে উঠলো। হঠাৎ করেই জ্যাসপার হাত বাড়িয়ে ধরলো হ্যান্ড শাওয়ারটা, আর ফিওনার ঘাড় বরাবর নামিয়ে দিলো এক ধারা নরম উষ্ণ পানি। পানির ধারায় যেন চুম্বন ঝরছিল। ফিওনা চোখ বন্ধ করে অনুভব করলো—পানির চেয়ে বেশি গরম জ্যাসপারের নিঃশ্বাস, তার বুকের ঠিক পেছনে স্পর্শ, আর কাঁধে এসে পড়া ঠোঁটের নীরব দাবি।

জল ধীরে ধীরে ফিওনার ঘাড় বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল, আর জ্যাসপার তার ঠোঁট ঘাড় বেয়ে নামিয়ে আনছিল নিচের দিকে, জলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছিল যেন। তার শ্বাস যেন ফিওনার ত্বকের ওপর এক একটা আগুনের রেখা এঁকে দিচ্ছিল। “তুমি জানো না, ফিওনা তোমার এই কাছে আসার মুহুর্ত আমাকে ভেতর থেকে কেমন ভেঙে ফেলে,” জ্যাসপার ফিসফিস করে বলল, তার হাত ধীরে ধীরে পিছন থেকে ফিওনার কোমর জড়িয়ে ধরল। ফিওনাশিউরে উঠলো, ঠোঁট কামড়ে নিজের কম্পন চেপে রাখলো।
জ্যাসপার তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আনলো। ফিওনার ভেজা চুল কপালের পাশে আটকে ছিল।জ্যাসপার হাত বাড়িয়ে চুল সরিয়ে দিলো আলতো করে, তারপর তার চোখে চোখ রাখলো—তীব্র, নিবদ্ধ এক দৃষ্টি। “তুমি যদি এখনই থেমে যেতে বলো, আমি কিন্তু থেমে যাবো না,” জ্যাসপার বললো।

ফিওনা তার চোখ নামিয়ে নিলো না। শুধু আস্তে করে বলল, “আমি কি আর এখন থামতে বলতে পারি…” এই কথার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাসপার নিজের ঠোঁটজোড়া দিয়ে চেপে ধরলো ফিওনার ঠোঁট। প্রথমে কোমল, কিন্তু তারপর ধীরে ধীরে গভীর,দাবিদার,বুনো হয়ে উঠলো সেই চুম্বন। চুম্বনের মাঝেই জ্যাসপার ধীরে ধীরে ফিওনাকে তুলে এনে বেসিনের ওপরে বসিয়ে দিলো। ফিওনার শরীর কাঁপছিল, ভেজা কাপড় তার গায়ে লেগে ছিলো শক্তভাবে। জ্যাসপার তার ঠোঁট ফিওনার ঠোঁটে ছাপিয়ে দিতে দিতে আরও গভীরভাবে এগিয়ে গেলো—চুম্বনের মাঝে যেন সে ফিওনার আত্মাও শুষে নিতে চাইছিল।

ফিওনা হেলে পড়লো তার পেছনের দিকে। জ্যাসপার সেই সুযোগে পুনরায় হ্যান্ড শাওয়ারটা তুলে এনে ফিওনার বুকের ওপর ছেড়ে দিলো। উষ্ণ জলের ধারা তার বুক বেয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো—সাদা ভেজা কাপড় ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হয়ে উঠলো, দেহের প্রতিটি রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠলো জ্যাসপারের চোখের সামনে।
জ্যাসপার থামলো না—চুম্বন নামিয়ে আনলো ঘাড় থেকে কলারের দিকে, বুকের ওপর, ভেজা ত্বকের প্রতিটা ইঞ্চি ছুঁয়ে ছুঁয়ে এমনভাবে যেন তার একান্ত অধিকার। ফিওনার নিঃশ্বাস অসংলগ্ন হয়ে উঠছিল, ঠোঁট কাঁপছিল, হাত জ্যাসপারের চুলে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
“তুমি জানো না, তোমাকে ছোয়ার সময়,তুমি আমার মধ্যে কী ঝড় তুলে দাও…” জ্যাসপার গম্ভীর গলায় বললো, তার চোখ জ্বলছিল।বাথরুমের সেই কুয়াশা ঢাকা আবহের মধ্যে, ফিওনার শরীর আর জ্যাসপারের আবেগ—দুটো মিলেমিশে এক অভ্যন্তরীণ আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠেছিল।

জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিচে নেমে এলো। তার হাত ফিওনার হাঁটু ছুঁয়ে গেলো,তারপর সে হ্যান্ড শাওয়ারটা তুলে নিয়ে এক ঝাপটা উষ্ণ জল ফিওনার পায়ের উরুর ওপর ছেড়ে দিলো। জলের ধারা উরুর ওপর থেকে গড়িয়ে পড়লো পায়ের পাতায়,প্রতিটি জলের বিন্দুতে ফিওনার শরীর কেঁপে উঠলো।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে তার ঠোঁট ফিওনার পায়ের পাতা ছুঁইয়ে চুম্বন করলো। তারপর পায়ের পাতা বেয়ে ওপরে উঠতে লাগলো সে, প্রতিটি চুম্বনে যেন ফিওনার রক্ত গরম হয়ে উঠছিল। জ্যাসপারের প্রতিটি স্পর্শ ছিল দাবিদার, গভীর, আর অধিকারবোধে ভরা। ফিওনার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছিল, সে নিজেকে থামাতে পারছিল না। ঠোঁট ফাঁকা হয়ে নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসছিল দ্রুতগতিতে।
জ্যাসপার থেমে থেমে উরু থেকে পাতার কিনারায় ঠোঁটের রেখা আঁকছিল,যেন এক শিল্পী তার ক্যানভাসে রঙ ছড়াচ্ছে। ফিওনার হাত তখন বেসিনের ধারে শক্ত করে ধরে আছে নিজেকে আটকে রাখার শেষ চেষ্টায়।
“তুমি বুঝতে পারছো তো, হামিংবার্ড…” জ্যাসপার ফিসফিস করে বললো, ঠোঁট উরুতে ছুঁইয়ে, “এই জগতে তুমি আমার… শুধুই আমার…”

জলরঙের মতো নিঃশব্দে বাথরুমে ছড়িয়ে পড়েছিল বাষ্প। বেসিন থেকে ফিওনাকে জ্যাসপার আস্তে করে নামিয়ে আনলো। তার চোখে তখনো এক ধরণের ঘোর,কিছুটা অবিশ্বাস,কিছুটা অভিমানে মিশে থাকা নিরবতা।
সে কিছু না বলে, ধীরে ধীরে ফিওনার ভেজা পোশাকের সুতো টেনে খুলতে শুরু করলো, কাপড়গুলি মেঝেতে নেমে আসতেই,সে হাত বাড়িয়ে ফিওনার কাঁধ ছুঁলো,নরমভাবে, যেন ওর দেহ নয়,হৃদয় ছুঁয়ে দিচ্ছে।
জ্যাসপার শাওয়ার জেল হাতের তালুতে নিয়ে ফ্যানা তুললো।তারপর সাবানের ফেনায় ভেজানো হাত তুলছিল ধীরে ধীরে ফিওনার কাঁধ থেকে বাহু বেয়ে নামছিল, আঙুল থেকে আঙুলে। ফিওনার আঙুলের ফাঁকে সে নিজের আঙুলগুলো গুঁজে দিল সাবধানী কোমলতায়, যেন এই স্পর্শের মধ্যেই সে হাজার শব্দ বলে দিতে চাইছে।
ফিওনার চোখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে এলো। শব্দহীন সেই মুহূর্তে, শুধু মাঝখানের ঝর্নার পানি পড়ার শব্দ আর দুটি নিঃশ্বাস মিশে ছিল বাতাসে।

হঠাৎ করেই মুহূর্তটা বদলে গেল। জ্যাসপার যেন নিজের ধৈর্যের সীমানা পার করে ফেললো। এক ঝটকায় ফিওনাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো, তার ভেজা চুলগুলো ছড়িয়ে পড়লো বাতাসে। সে এক হাত দিয়ে ফিওনার কোমর আঁকড়ে ধরলো, অন্য হাতে গলা চেপে ধরলো আলতো অথচ জোরালোভাবে একটা শ্বাস নিতে না দিতেই, জ্যাসপারের ঠোঁট জড়িয়ে ধরলো ফিওনার ঠোঁটকে। এটা শুধু একটা চুম্বন ছিলোনা, ছিল দাবি,অধিকার, ভেতর থেকে উঠে আসা এক আদিম অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।পেছনে চাপতে চাপতে ফিওনার পিঠ ঠেকে গেল ঠাণ্ডা কাঁচের দেয়ালে,জল আর বাষ্প মিশে ছিল সেই কাচে, আর তার গায়ে গলে যাচ্ছিল জ্যাসপারের উষ্ণতা। সে ফিওনাকে মিশিয়ে ফেলছিল দেয়ালের সাথে, যেন এ ভেনাসের কিছুই আর তাদের মাঝে না থাকে,শুধু শ্বাস,স্পর্শ, আর তীব্র এক অনুভূতির ঝড়।

চুম্বনের গভীরতা ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ফিওনা যেন নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছিল জ্যাসপারের ঠোঁটের তাপে, তার ছোঁয়ার দাবিতে সমস্ত স্নায়ু থমকে দাঁড়িয়েছিল।
জ্যাসপারের হাত এক মুহূর্তের জন্যও থেমে থাকেনি। কাঁচের দেয়ালের সঙ্গে মিশে থাকা ফিওনার শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছিল তার আঙুলের দখলদার স্পর্শ। একদিকে কোমরের বাঁক, অন্যদিকে ভেজা চুল সরিয়ে জ্যাসপার তার পিঠের ওপর রেখেছিল আগুনের মতো হাত।
তার আঙুলগুলো যেন কথা বলছিল, আকুলতা, ক্ষুধা, অথচ সেইসাথে অদ্ভুত এক কোমলতা মিশে ছিল।ফিওনার শরীর শিউরে উঠছিল, সে বুঝতে পারছিল না এই উত্তাপ তাকে গলিয়ে দিচ্ছে নাকি ভেতর থেকে ভেঙে দিচ্ছে। আর জ্যাসপার? সে যেন নিজেকেই হারিয়ে ফেলেছিল ফিওনার শরীরে,তার হৃদয়ের ভিতরকার জায়গাটায় প্রবেশ করতে চাইছিল যেখানে জ্যাসপার ছাড়া আর কারো প্রবেশ ঘটেনি।
জ্যাসপার হ্যান্ড শাওয়ারটি আবার তুলে নিল। শীতল জল ধীরে ধীরে ফিওনার গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল, যেন তার সমস্ত অনুভূতিকে জাগিয়ে তুলছিল। ফিওনা কিছুটা কাঁপছিল, ঠান্ডা জলে নয়, জ্যাসপারের স্পর্শে, তার চোখের দৃষ্টিতে, সেই উষ্ণ নিঃশ্বাসে।

সে হ্যান্ড শাওয়ারটি ফিওনার গলার কাছে ধরে রাখলো কিছুক্ষণ, যেন প্রতিটি বিন্দুতে জল দিয়ে নিজের উপস্থিতির ছাপ রেখে যাচ্ছে। তারপর এক মুহূর্তে হ্যান্ড শাওয়ারটি দূরে ছিটকে ফেলে দিল, যেন তার দরকার ছিল না আর কোনো কৃত্রিম স্পর্শের,শুধু সে আর ফিওনা।
জল এখনো ফোঁটা ফোঁটা করে ফিওনার গলা বেয়ে নামছিল, আর জ্যাসপার মাথা ঝুঁকিয়ে গলার ত্বক থেকে সেই পানির ফোঁটা চুম্বনে শুষে নিচ্ছিল। ফিওনার নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠছিল, হৃদয়ের ধ্বনি যেন আশেপাশের জলধ্বনিকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল। জ্যাসপার ধীরে ধীরে নিচের দিকে নামলো তাঁর চুম্বনের রেখা ফিওনার ত্বক জুড়ে আঁকা হচ্ছিল, গলার তল থেকে বুকের বাঁক পেরিয়ে সে পৌঁছালো নাভির কাছাকাছি। সেখানে এসে তার ঠোঁট থেমে গেল এক মুহূর্ত—তারপর গভীর এক চুম্বনে সে ফিওনার অনুভূতিকে আরও একধাপ গভীরে টেনে নিয়ে গেল।সেই মুহূর্তে, শব্দ ছিল না—শুধু অনুভব, শুধু শরীরজুড়ে নেমে আসা এক জাদুময় নিঃশব্দ ঝড়।
ফিওনার ঠোঁট কেঁপে উঠলো,তার ভেতরের উত্তাপ,দ্বিধা আর তীব্র এক আবেগ যেন একসাথে জড়িয়ে গিয়েছিলপরক্ষণেই সে নিজের নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরলো, যেন কোনোভাবে নিজের শ্বাস, নিজের স্পন্দনকে সংবরণ করতে চাইছে।

কিন্তু তাতেও কি নিজেকে থামানো যায়? জ্যাসপার তখনো নাভির ঠিক নিচে, তার চুম্বনে যেন ভাষাহীন কবিতা লিখে চলেছে। ফিওনার এক হাত জ্যাসপারের চুলে জড়িয়ে গেল—ধরনটা নরম ছিল না, বরং তীব্র, দাবিদার। আরেক হাতে সে মাথাটা আরো চেপে ধরলো নিজের পেটের সাথে—যেন বলতে চাইছিল, “থেমো না… এখানেই থেকো…”
ফিওনার নিঃশ্বাস তখন আর স্বাভাবিক ছিল না—তাতে ছিল একটা অনিয়ন্ত্রিত সুর, যা কখনো উচ্চারিত হয় না, শুধু অনুভব করা যায়।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো, চোখে তখনো আগুনের মতো আবেগ জ্বলছিল। সে ফিওনাকে ঘুরিয়ে দিলো, যেন নিজের দৃষ্টির সামনে পুরোপুরি উন্মুক্ত করে নিতে চায় তার হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা।

ফিওনার পিঠ এখন জ্যাসপারের সামনে, ভেজা, কাঁপতে থাকা এক অনির্বচনীয় শরীর। জ্যাসপার ফিওনার দুই হাত তুলে নিয়ে চেপে ধরলো দেয়ালের সাথে, যেন পুরো ভেনাসএই মুহূর্তে থেমে গেছে। তারপর সে নিজের আঙুল গুঁজে দিল ফিওনার আঙুলের ফাঁকে,তাপ আর স্পর্শে এক চূড়ান্ত সংযোগ সৃষ্টি হলো। পরের মুহূর্তে, সময় থমকে গেল।
জ্যাসপারের ছোঁয়ায়, তার দখলের গভীরতায়, ফিওনা এক নিমিষে যেন বাস্তব ভুলে গেল। সেই চরম অনুভবের ঢেউ তাকে এক অনন্ত সুখের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেলো—যেখানে শব্দের দরকার নেই, শুধুই স্পন্দন, দেহ আর আত্মার মেলবন্ধন। ফিওনার ঠোঁট থেকে বেরিয়ে এলো এক দীর্ঘ, দমবন্ধ করা গোঙানি, যা শুধু বাথরুম নয়, জ্যাসপারের বুকেও প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছিল।

জ্যাসপারের দখল এখন পুরোপুরি গভীরতায় পৌঁছেছে। তার হাতের দৃঢ়তা, নিঃশ্বাসের তাপ, এবং দেহের প্রতি ইঞ্চিতে ছড়িয়ে থাকা আগুন ফিওনাকে এক অজানা জগতে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। এক ঝটকায় সে ফিওনার মাথাটা কাঁচের দেয়ালের দিকে চেপে ধরলো কোনো হিংস্রতা নয়, বরং এক রকম তীব্র আবেগের বহিঃপ্রকাশে। যেন নিজের মাঝে হারিয়ে ফেলার আগ মুহূর্তে সে চাইছিল তাদের মাঝে কোনো দূরত্ব না থাকুক। তীব্র, রাফ, অথচ আশ্চর্যরকম গভীর তাদের সংযোগে যেন সময়, বাস্তবতা সব থেমে গেল।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৩৪ (২)

ফিওনা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না একটার পর একটা শ্বাস,গোঙানি, আবেগের ঢেউয়ে সে ভাসছিল, জ্যাসপারের হাতে বন্দি হয়ে নয়, বরং এক আশ্চর্য মুক্তির স্বাদ নিয়ে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৩৬