আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫০

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫০
সাবিলা সাবি

ভোরের আকাশ আজ অন্য রকম। সূর্য তার রক্তিম আলো ফেলে আলো করে তুলছে ভেরান শূন্যভূমি।
সেই বিশাল প্রান্তরে আজ উপস্থিত চার রাজ্যের হাজারো সৈন্য। লোহার ঢাল, রুপার বর্ম, আর একটানা বাজতে থাকা যুদ্ধের শিঙার শব্দে— মাটি কাঁপছে, আকাশ ভারী।
এল্ড্র রাজ্যের পক্ষ থেকে ড্রাকোনিস নিজ হাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার—তার চওড়া বুক, রক্তগরম চোখ, আর পেছনে দাঁড়ানো হাজার হাজার এল্ড্র সৈন্য।
এমন সময় ড্রাকোনিসের চোখ আটকে যায়— দূরে একজন নারী, হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে, পাশে আরেকজন রাজা।
“রাজা জারেন” – ড্রাকোনিস ফিসফিস করে বলেন। হ্যাঁ, ফ্লোরাস রাজ্যের বড় রাজকুমারী লিয়ারাও এসেছেন রাজা জ্যারেনকে সাথে, তারা নিজেদের রাজ্যের শত শত সৈন্য পাঠিয়েছেন এল্ড্রদের পাশে যুদ্ধ করতে।

জ্যাসপারের বুকটা কেমন যেন নরম হয়ে আসে।
তার চোখে ভেসে ওঠে নিজের মায়ের মুখ।
হঠাৎই সে আরও কয়েকজনকে দেখতে পায়। একটা বিশাল ড্রাগন রূপ নিয়ে এসে দাঁড়ালো একজনে—
তারপর মানুষ রূপ নিলো।
সে আর কেউ নয় সে হলো এলিন্ডর—জ্যাসপারের মামাতো ভাই। পাশে তার বাবা-মা, জ্যাসপারের মামা-মামিও আছেন।
ড্রাকোনিস এবং জ্যাসপার দুজনেই স্তব্ধ।
এরপর আসে ক্যালিক্স আরও অবাক করে হাজির হয় ক্যালিক্সের বড় ভাই।
অন্যদিকে আরো দুই প্রতিপক্ষ রাজ্যের রাজারাও হাজির। তাদের সামনে দাঁড়িয়ে অজস্র সৈন্য, ড্রাগনের ডানায় সোনালি পতাকা।
সবাই একটাই প্রশ্ন করে— “তিন রাজ্যের প্রিন্স, যিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন—সেই প্রিন্স অর্কন কোথায়?”
কেউ জানে না। তবে একটা বার্তা এসে পৌঁছায় তিন রাজ্যের প্রধানের কাছে
“যুদ্ধ শুরু হোক। আমি সঠিক সময়ে মাঠে নামব—
যখন রক্ত গরম হবে, এবং বাতাস কাঁপবে।
প্রিন্স অর্কন!!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সূর্য সবে মাথার ওপর উঠেছে। শত্রু ও মিত্র, চার রাজ্যের সব সৈন্য একত্রিত।
মাঠের মাঝখানে একটি রূপালি আলোর মতো ড্রাগন নেমে এলো আকাশ ভেদ করে। আলো থেকে বেরিয়ে এলো একজন দেবতুল্য পুরুষ—চোখে তার তারার ঝিলিক, কণ্ঠে বজ্রের গর্জন। ভেনাস দেবতা, আভ্রাহার।
সবার নীরবতা ছেঁদে তিনি বললেন “আমি আভ্রাহার, ভেনাস দেবতা। এই মহাযুদ্ধের বিধান আজ আমি স্থির করলাম। শুনো—এল্ড্রের প্রিন্স, জ্যাসপার অরিজিন, তুমি আজ পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নামতে পারবে না, কারণ তোমার আগুনের শক্তি স্তিমিত। তাই যুদ্ধ হবে অর্ধেক সময় ড্রাগন রূপে, আর বাকি অর্ধেক সময় মানব রূপে। এই যুদ্ধ হবে আধুনিক আর প্রাচীন মিলনভূমি হয়ে। সুতরাং, তলোয়ার, ধনুক, বল্লম থাকবে; কিন্তু প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে আধুনিক রাইফেল। যোদ্ধারা ঘোড়া নয়, আধুনিক যুদ্ধযান—বুলেট-প্রুফ ট্রান্সপোর্টে আসবে। তবে রাজা আর প্রিন্সরা যুদ্ধের পোশাক পরবে রাজকীয় ঐতিহ্য বজায় রেখে।”
শুরু হলো সৈন্যদের মুভমেন্ট—লেজারের মতো চকচকে অস্ত্র, শক্ত বর্ম, চোখে গগলস, কাঁধে ডিজিটাল কম্যান্ড ডিভাইস।

আর তখনই এল্ড্র বাহিনীর একদম সামনে এসে হাজির হলো ‘জ্যাসপার অরিজিন।
সে আজ পরেছে গাঢ় মেরুন রঙের রাজকীয় প্রিন্স পোশাক। চওড়া কাঁধ, তলোয়ারে সূর্যের আলো, চোখে আগুন। পাশে দাঁড়ানো তার প্রিয় মানুষগুলো
এথিরিয়ন, আলবিরা, এবং থারিনিয়াস – অভিজ্ঞ যুদ্ধপ্রতিভা, বিজয়ী সেনাপতি।
তারা তিনজনেই প্রস্তুত। তাদের চেহারায় আজ কেবল একটিই লেখা—“বাঁচব অথবা মরবো।”
আর দূরে দাঁড়িয়ে রাজা ড্রাকোনিস, যার মুখে কঠোরতা, চোখে জ্বলছে গর্ব।
যুদ্ধক্ষেত্র এখন প্রস্তুত। প্রতি রাজ্যের ডান ও বাম পাশে আধুনিক ট্রাক, ট্যাঙ্কের মতো ফর্মে সাজানো যুদ্ধযান,
মাঝখানে যুদ্ধ মঞ্চ—যেখানে সূর্য অস্ত না যাওয়া পর্যন্ত চলবে নরকতুল্য সংঘর্ষ।
আভ্রাহার শেষবারের মতো বলে ওঠেন “এ যুদ্ধ শুধুই শক্তির নয়, এই যুদ্ধ হৃদয়েরও। যার রক্তে আছে শুদ্ধতা, সেই হবে বিজয়ী।
শুরু হোক!”

যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে, ভেনাস দেবতা আভ্রাহার হাত তুলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন।
আভ্রাহার বলেন “এই যুদ্ধ শুরু হবার পূর্বে আমি উভয় পক্ষের জন্য এক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এসেছি। যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী, প্রত্যেক পক্ষ আমার কাছ থেকে একটি বিশেষ উপহার পেতে পারে— সেটা হতে পারে আমাকেই তাদের পক্ষের নেতা হিসাবে নেওয়া, অথবা এক হাজার ড্রাগন সেনা, যাদের আমি দেব। কিন্তু মনে রেখো—যদি কেউ আমাকে বেছে নাও, আমি যুদ্ধ করব না। আমি কেবল তোমাদের নেতৃত্ব দেবো, আর তোমার বাহিনীকে পরিচালনা করবো। এখন তোমাদের পছন্দ করো—ড্রাগন সদস্যা নাকি আমি?”
বাকি তিন রাজ্যের নেতারা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠে। তারা বলে “আপনি যুদ্ধে অংশ নেবেন না? নেতৃত্বের নামে শুধু দাঁড়িয়ে থাকবেন? আমাদের দরকার বল, আগুন, ধ্বংস— তাই আমরা এক হাজার ড্রাগন সেনা নেব!”

আভ্রাহার মাথা নাড়েন, নীরব সম্মতি দেন। সবাই জ্যাসপারের দিকে তাকায়। ড্রাকোনিস কিং নিজেও একটু শঙ্কিত।
আলবিরা ফিসফিস করে, “ প্রিন্স আপনি কি নিশ্চিত আপনি দেবতাকে চাইবেন? এক হাজার ড্রাগনের শক্তি আমাদের অনেক কাজে দিত।”
জ্যাসপার তখন এগিয়ে আসে। সে একবার আভ্রাহারের চোখে চোখ রাখে। তারপর বলে “আমি আমার মা’কে হারিয়েছি, আমার আগুনের শক্তি হারিয়েছি, আমার প্রেমকে দূরে পাঠিয়েছি— আর কিছু হারাতে চাই না।
আমি জানি, সংখ্যা বড় কথা নয়। একজন দেবতার অন্তর্জ্ঞান, তার বিচক্ষণতা, আর ন্যায়বোধ—হাজার সৈন্যের চেয়েও বড় শক্তি। আমি—জ্যাসপার অরিজিন, ভেনাসের প্রিন্স, আপনাকেই বেছে নিচ্ছি, দেবতা আভ্রাহার।”
আকাশ যেন এক মুহূর্ত কেঁপে ওঠে। আভ্রাহার হালকা হাসেন, চোখে একটা গভীর গর্বের ঝিলিক। তিনি মনে মনে বলে উঠলেন “সঠিক সিদ্ধান্ত। আজ তুমি দেখবে, সত্যিকারের বিজয় শুধু শক্তির নয়, বুদ্ধির, ধৈর্যের ও আদর্শের।”

সূর্য আকাশের মাঝ বরাবর। যুদ্ধমাঠ এক বিশাল ধূসর সমতল, যার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে তিন রাজ্যের সম্মিলিত বাহিনী—দাঁত বের করে গর্জন করা হাজারো ড্রাগন, আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনারা, আর তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মতো কঠিন চেহারার সেনাপতিরা।
আকাশে হঠাৎ চারদিক থেকে উড়ে আসে অসংখ্য ড্রাগন—তাদের মুখ দিয়ে বেরোচ্ছে আগুনের ঝর্ণা।
তারা একসাথে গর্জন করে বলে “এল্ড্র রাজ্যের পতন হবে আজ! আগুনে পুড়বে প্রিন্স জ্যাসপার!”
তিন দিক থেকে একযোগে শুরু হলো ড্রাগনদের আগুন ছোড়া। সবাই নিজের রূপ বদলে আকাশে উড়ে গেলো।
জ্যাসপারও রূপ নিলো ড্রাগনরূপে—গাঢ় সবুজ আঁশ, চোখে রক্তরাঙা দৃঢ়তা, ডানায় সোনালি প্রান্ত। তবে তার মুখে আগুন নেই।

তিনটা বিশাল আগুনের স্রোত একসাথে তার দিকে ধেয়ে আসে। সে ডানার ভেতর নিজেকে মুড়ে এক লাফে মাটি ঘেঁষে একপাশে সরে যায়। দেখে মনে হয়, যেন আগুন তাকে ছুঁয়ে গেলেও পোড়াতে পারেনি।
আকাশে এক ড্রাগন গর্জে ওঠে “তোমার আগুন নেই, প্রিন্স! তুমি আমাদের কী করবে?”
জ্যাসপার কিছু বলে না, শুধু ঝাঁপ দেয় ওই ড্রাগনের দিকে। ধারালো নখ দিয়ে ডানায় গেঁথে দেয় এক থাবা—রক্ত ছিটিয়ে পড়ে আকাশে। তারপর গলা বরাবর চালিয়ে দেয় দ্বিতীয় আঘাত—ড্রাগনটি আর্তনাদ করে নিচে পড়ে যায়।
একটা ড্রাগন তার পেছন থেকে আগুন ছুঁড়ে দেয়, কিন্তু জ্যাসপার ভরসা করে তার গতির ওপর—উপরে উঠে ঘূর্ণি দেয়, যেন বায়ুপ্রবাহেই সেই আগুন ঘুরে তার ওপরেই ফিরে যায়।
তাকে দেখে আভ্রাহার নিচে দাঁড়িয়ে বলেন “সে নিজেই আগুন—তাকে আগুন পোড়াতে পারে না। তোমরা জানো না, জ্যাসপার আগুন ছাড়াও কতটা বিধ্বংসী হতে পারে।”

এথিরিয়ন, থারিনিয়াস, আর আলবিরাও আকাশে নেমে পড়েছে। তাদের সাথে সম্মিলিত আক্রমণে, এল্ড্র বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। কিন্তু শত্রুরাও কম নয়—তারা বারবার আঘাত করছে, ড্রাগনদের সংখ্যা বেশি, আগুন প্রবল।
জ্যাসপার তখন তার সেনাদের বলে: “তোমাদের তলোয়ার যতটা ধারালো, তোমাদের বিশ্বাস তার চেয়েও বেশি ধারালো হতে হবে! আজ আগুন দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে জয় করো!”

ভেনাসের আকাশে তখন রক্তিম আলোর শেষ ছটা সারাদিনের যুদ্ধ শেষে যখন সবাই ভেবেছিলো, এতক্ষণে বিরতি আসবে…
তখনই তিল রাজ্যর একজন ড্রাগন শত্রু পেছন থেকে আঘাত করে বসে জ্যাসপারকে। সে ছিটকে পড়ে যায় বিশাল এক পাথরের উপর।
তখনই নিচে দাঁড়ানো এলিন্ডর চোখে ইশারা পায়। সে তার আর্মারে থাকা রিমোট জাতীয় একটি যন্ত্রে চাপ দেয়। অতিসূক্ষ্ম সিগনাল ছড়িয়ে পড়ে মাটিতে।
সঙ্গে সঙ্গে, জ্যাসপারের চারপাশে মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে একের পর এক ধাতব রড। তীব্র শব্দে— যেনো ভূমিকম্প চলছে কেবল ওর নিচেই।
প্রচণ্ড গর্জনে রডগুলো উঠতে উঠতে এল্ড্র সেনাদের গায়ে গিয়ে বিদ্ধ হয়। বহু সেনা জায়গাতেই বিদ্ধ হয়ে পড়ে যায় মৃ*ত অবস্থায়।

কিন্তু— এক লম্বা চিকন রড সোজা এসে ঢুকে পড়ে জ্যাসপারের ডান হাতের তালুতে। আরেকটা এসে বিঁধে যায় তার পেটের ডান পাশে।
সে ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে রয় মাটিতে… নিঃসাড়… নীরব…
ঠিক তখনই সূর্য ডুবে যায়। ভেনাস দেবতা আভ্রাহার উচ্চারণ করেন “সূর্য অস্ত গেল। যুদ্ধ আজকের মতো স্থগিত।”
সবাই ছুটে আসে—এথিরিয়ন, আলবিরা, থারিনিয়াস, রাজা ড্রাকোনিস পর্যন্ত—
কিন্তু তার আগেই… জ্যাসপার নিজের রক্তাক্ত ডান হাতে, শক্ত করে ধরে নিজের হাতের রডটা।
সবাই থমকে যায়। তীক্ষ্ণ মুখ, কণ্ঠ নীরব…
সে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস নিয়ে হঠাৎ—
একই ঝাঁকুনিতে সেই রড বের করে ফেলে নিজেই!
ঝরে পড়ে গাঢ় সবুজ রক্ত… কিন্তু সে ভেঙে পড়েনা।
তারপর পেটের পাশে হাত নিয়ে ধীরে ধীরে বের করে ফেলে আরেকটা রড। সবাই স্তব্ধ।
এথিরিয়ন ফিসফিস করে “সে পড়েছে… তবুও ভেঙে যায়নি…”

তখনি জ্যাসপার মাথা তোলে, রক্তাক্ত মুখে বলে “আমি ঠিক আছি‌ আমি আহত হয়েছি—তবে শেষ হইনি।”
ভেনাস দেবতা আভ্রাহার কিছুটা এগিয়ে এসে বলেন
“আজ তুমি আগুনহীন থেকেও এক সত্যিকারের আগুনের মতো লড়েছো। কিন্তু এই যুদ্ধ তো মাত্র শুরু।”
ড্রাকোনিস জ্যাসপারের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসে। “মাই সান… আজ আমি শুধু একজন রাজা নই, একজন গর্বিত পিতা ও বটে।”

ঠান্ডা বাতাসে ফুঁসছে মহাকাশযানের জানালার কাঁচ।
ফিওনা জানালার পাশে চুপ করে বসে আছে।
তাঁর চোখ স্থির, কিন্তু মনের ভিতর যেন হাজারটা প্রশ্ন।
“সে কি করছে এখন?… যদি…” দম বন্ধ হয়ে আসে ফিওনার।
আকাশের তারা ঝিকমিক করছে, কিন্তু আজ তাদের আলো যেন ফিওনার চোখে পৌঁছায় না। স্পেসশিপটি সবচেয়ে আধুনিক—১৬ দিনের মধ্যে সে পৃথিবীতে পৌঁছে যাবে। কিন্তু এই ১৬ দিন তার কাছে একেকটা বছর।
সিলভা,যে ফিওনার সঙ্গেই আছে, সবটাই জানে সে। কিন্তু… জ্যাসপার নিজে আদেশ দিয়েছে, “ফিওনাকে কিছু বলা যাবে না।।”

সিলভা তার সেই আদেশ মানছে, যদিও ভেতরটা জ্বলছে।
অন্যদিকে, এল্ড্র রাজ্যের কেন্দ্র থেকে একটি এনক্রিপ্টেড মেসেজ পাঠানো হয়েছিলো আগেই অ্যাকুয়ারার উদ্দেশ্যে।
ইমেলে লেখা “আসন্ন পরিস্থিতি বিবেচনা করে,
ফিওনাকে মাউন্টেন গ্লাস হাউজে পাঠানো হয়েছে। ১৬ দিন পর তুমি সোজা সেখানে পৌঁছাও। তাকে নিরাপদ রাখো এবং যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে তাকে।”
ইমেলটি খোলার পর অ্যাকুয়ারা নীরব হয়। তার চোখে ভয় নেই,তবে আছে দায়িত্বের ছাপ।
এদিকে ফিওনার জানালার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে “তুমি কি জানো,প্রিন্স.. আমি এখন তোমার দেওয়া সেই নামটা ভাবছি। হ্যাঁ,তোমার সেই ‘হামিংবার্ড’ এখন উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশে,কিন্তু তার ছোট্ট ডানা আজ খুব ক্লান্ত।”

আধুনিক স্পেসশিপের ভেতর আলো কম। নিরবতা, চারপাশে শুধুই সফট যান্ত্রিক শব্দ হচ্ছে। গভীর চিন্তা করতে করতে ফিওনা এখন একটা হালকা কম্বল জড়িয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। তার নিঃশ্বাস ছিল স্থির, যেন কিছুই ঘটেনি।
কিন্তু হঠাৎ— তার স্বপ্নে দেখা যায়—
জ্যাসপার, আগুনের গোলার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।
তার মুখে কষ্টের ছাপ, শরীর র*ক্তাক্ত। পেছন থেকে হঠাৎ আরও আগুন ছুঁড়ে আসে।
ফিওনা চিৎকার করে বলে ওঠে— “প্রিন্স! না!!”
তখনি তার ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠে বসে পড়ে শয্যা থেকে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। চোখ থেকে অঝোরে জল ঝরছে।হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেছে,শরীর কাঁপতে থাকে।
“না এটা স্বপ্ন, স্বপ্ন… কিন্তু কেনো মনে হচ্ছে এটা সত্যি?
প্রিন্স ঠিক নেই… আমার প্রিন্স!” সে গুছিয়ে উঠতে পারে না।
তার বুকের মধ্যে যেন কেউ একটা পাথর বসিয়ে দিয়েছে। হাত দিয়ে নিজের বুক চেপে ধরে সে।
সিলভা, কিছু বুঝতে পেরে ছুটে আসে। “ফিওনা, তুমি ঠিক আছো?”
ফিওনা কোনো উত্তর দেয় না। শুধু ফিসফিস করে বলে… “ও কষ্টে আছে… আমি অনুভব করতে পারছি…
ও আমাকে ডাকছে না, কিন্তু আমি শুনতে পাচ্ছি…”
বাইরে তখন শূন্য মহাকাশ। তারা যেন আজ চুপচাপ তাকিয়ে আছে ফিওনার চোখের জল দেখছে।

রাত ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু এল্ড্র রাজ্যের এক গোপন জঙ্গল আজ নিস্তব্ধ। গাছে গাছে ধোঁয়া জমে আছে। পাখিরাও আজ যেন কম শব্দ করছে।
জ্যাসপার, এথিরিয়ন, আলবিরা আর থারিনিয়াস চারপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এখানে আসা ছিল নিষিদ্ধ, কারণ এ জঙ্গলের নিচে আছে “ফেরনিথ ব্ল্যাকমেটাল” – এমন এক ধাতু, যা শুধু ড্রাগন রক্তে গলে অস্ত্র তৈরি হয়।
থারিনিয়াস ধীরে ধীরে একটি ছোট পাথর খুঁড়ে তুলে বলল, “এটাই ওদের দুর্বলতা… ওদের পক্ষে যদি আমাদের আগুনের পাল্টা কিছু থাকে, আমাদেরও কিছু চাই।”
এথিরিয়ন বলল, “আমরা যদি এই ধাতু দিয়ে ৭টি স্পেশাল ব্লেড বানাই, তবে অন্তত ৭ জন কমান্ডারকে এক ঝটকায় নামিয়ে আনা যাবে।”

জ্যাসপার মুখ নিচু করে মাটি থেকে কিছু গুঁড়ো হাতে নিয়ে বলল— “আমি আগুন ছুঁড়তে পারছিনা, কিন্তু আমি এখন আগুনের মতোই ছড়িয়ে যাবো। আমার দুর্বলতা নিয়ে যারা আজ কটাক্ষ করেছে, কাল তাদের র*ক্ত দিয়ে বুঝিয়ে দেবো— আমি এখনও প্রিন্স অফ ভেনাস।”
এরপর ওরা ৪ জন সেই গোপন গুহার ভেতর ঢোকে যেখানে ফেরনিথ ধাতু গলানো শুরু হয়। সাথে এলড্র রাজ্যের দুই বিশ্বস্ত স্মিথও আছে।
এই রাতে, বিশ্রাম নয়, তারা গড়ে তুলছে এক নিষিদ্ধ অস্ত্রভাণ্ডার— যার কথা কেউ জানে না, এমনকি রাজা ড্রাকোনিসও না।

জঙ্গলের নিস্তব্ধতা যেন গিলে ফেলেছে চারপাশকে। সবুজ ছায়া ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে রাত্রির গভীর অন্ধকারে। সবাই আগুন নিভিয়ে ঘুমে ঢলে পড়েছে। কিন্তু একমাত্র একজন… যার চোখে আজ ঘুম নেই।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল।কোনো শব্দ নেই…
কোনো আলো নেই… সে একা এগিয়ে চলল জঙ্গলের এক পুরনো পথ ধরে।
অনেকটা দূরে, ঘন লতা-পাতা আর শিকড়ে ঢাকা এক পুরনো পাহাড়ি গুহার সামনে দাঁড়াল সে। এই গুহার নাম “ক্রিটন কক্ষ”— যেটা এক সময় ড্রাকোনিস ব্যবহার করতেন গোপন যুদ্ধ-প্রযুক্তি পরীক্ষার জন্য।
পাথরে চাপা এক লক-ডায়াল ঘুরিয়েজ্যাসপার প্রবেশ করল সেই ল্যাবে, যেটা গত ২২ বছর ধরে কেউ খোলেনি।
ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ধাতব সরঞ্জাম, ড্রাগন-শক্তি চালিত যন্ত্রাংশ, আধা-সম্পূর্ণ একাধিক ডিভাইস আর ফেলে রাখা যুদ্ধ-মডেল— সবই যেন অপেক্ষা করছিল জ্যাসপারের হাতের ছোঁয়ার।
সে নিঃশব্দে কাজ শুরু করল।

প্রথম এক ঘন্টায় সে মিশন শুরু করলো একধরনের হাতের গ্লাভস তৈরির, যেটার মাধ্যমে শত্রুর শরীরে লেগে থাকা অস্ত্রকে আকর্ষণ করে ছিঁড়ে ফেলা যায়।
তারপর রিসার্চ শুরু করলো একধরনের ধাতব বলের— যেটার ভেতরে আছে তীব্র চৌম্বক শক্তি আর লুকানো কাঁটার বিস্ফোরণ ক্ষমতা।
এরপর মিশনের অংশে রাখলো এক “শব্দ-বিম” অস্ত্র, যেটা ধ্বনির সাহায্যে ড্রাগনদের ফ্লাইট ব্যালেন্স নষ্ট করে।
এই সবকিছুর মূল শক্তি? তার মায়ের রেখে যাওয়া “ব্লু ক্রিস্টাল”— যেটা দিয়ে সে আগুন ছাড়া যুদ্ধ জেতার প্রযুক্তি দাঁড় করাচ্ছে।
ল্যাবের অন্ধকারে সে দাঁড়িয়ে বললো “আগুন আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে… কিন্তু আমার মাথা, আমার হাত, আর আমার লক্ষ্য এখনো আছে। এবার শত্রু বুঝবে, একজন প্রিন্স মানে কেবল রক্ত আর আগুন নয়… তার মানে—চাতুর্য, প্রতিজ্ঞা আর প্রতিশোধ।”
সে তখন মেঝেতে বসে, ল্যাপটপে টাইপ করছে এক কোড— “Project jasper– Final Weapon Protocol: Activated.”

পরেরদিন সূর্য উঠেছে, কিন্তু তার আলো যেন ধুয়াশায় ঢাকা। যুদ্ধের ময়দান আজও কেঁপে উঠছে ড্রাগনদের গর্জনে, অস্ত্রের শব্দে।
দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তিন শত্রু রাজ্য তাদের বাহিনী নিয়ে একত্রে আক্রমণ চালাচ্ছে। আর এল্ড্র সেনারা প্রতিটি পদক্ষেপে তাদের প্রতিহত করছে।
ময়দানের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার।
তার ডান হাতটা ব্যান্ডেজে মোড়া, সেই হাত থেকে এখনো রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পেটের পাশে ক্ষতের ব্যথা এখনো জ্বলে জ্বলে উঠছে। তবুও সে থেমে নেই। তার চোখে আজ এক অন্যরকম কঠোরতা।
সে বাঁ হাতে তলোয়ার ধরে, ধীরে ধীরে হাঁটছে শত্রুর দিকে। পিছনে থারিনিয়াস বলে ওঠে “প্রিন্স! আজকের দিন বিশ্রাম নিন, আপনার আঘাত গভীর!”
কিন্তু জ্যাসপার থেমে তাকায়, চোখে রক্তিম আগুন—

যুদ্ধ শুরু হয়। জ্যাসপার একে একে তিনটি শত্রু ড্রাগনকে মাটিতে ফেলে। তার হাঁপ ধরা নিঃশ্বাস আর রক্তাক্ত কাপড় তবুও থামায় না তার প্রত্যাঘাত।
কিন্তু হঠাৎ এক তীক্ষ্ণ ব্লেড এসে তার কাঁধে লেগে যায়।
সে কেঁপে ওঠে… কিন্তু পড়ে না।
এথিরিয়ন ছুটে আসে তার পাশে “জ্যাসু ভাইয়া তুমি আজকে রেস্ট নাও, আমরা সব সামলে নিচ্ছি !”
জ্যাসপার হেসে বলে “যুদ্ধের ময়দানে রাজপুত্র মারা যেতে পারে, কিন্তু পেছনে সরে যায় না।”

অবশেষে পেরিয়ে গেছে যুদ্ধের ১৩ দিন আজকে যুদ্ধের পনেরতম দিন।‌ প্রায় হাজার হাজার সৈন্য নিঃশেষ হয়েছে এই কয়দিনে। আহত হয়েছে আরো হাজার সাথে আহত ছিলো এথিরিয়ন, থারিনিয়াস, আলবিরা ও।তবুও তারা দমে যায়নি , পিছু হটেনি।
আজ পনেরতম দিনের মধ্য দুপুর। যুদ্ধ জারি আছে—রক্ত,ধুলো আর আগুনে ঝাঁপসা আকাশ।
হঠাৎ— আকাশে গম্ভীর শব্দ। ভেনাস যেন ধ্বংসের ঠিক পূর্বমুহূর্তে হঠাৎ নিঃশব্দ হয়ে যায়।
তারপরেই… এক প্রবল ভূকম্পন! পুরো যুদ্ধভূমি কেঁপে ওঠে, সৈন্যরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
দূর পাহাড়ের গা থেকে ভেঙে পড়ে শিলা। সবার চোখ উঠে যায় আকাশের দিকে।
এক জ্বলন্ত সাদা আলো নেমে আসছে! তার গতি ধীরে ধীরে মন্থর… কিন্তু গাম্ভীর্যে এমন, যেন পুরো বিশ্ব থেমে আছে তার অপেক্ষায়।

বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। ঝড় উঠে—কিন্তু সে ঝড়ে আগুন নেই, আছে সম্মোহন!
অবশেষে— এক সাদা ড্রাগন থেকে মানব রুপে নেমে এসে দাঁড়াল যুদ্ধমাঠে।
তার পোশাক ছিলো—কালো আর নীলের গাঢ় ছায়া, কাঁধে প্রাচীন ড্রাগনের সোনালি চিহ্ন।
তার রূপ…এতোটাই উজ্জ্বল ছিলো। এমনকি রক্তাক্ত সৈন্যরাও বিস্ময়ে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।
তার চোখ দুটি—ঘন নীল, যেন মহাসাগরের অতল তলদেশ। চুল সিল্কি—রূপালী সোনায় মেশানো, কাঁধ ছুঁয়ে নামছে।
জ্যাসপার তাকিয়ে থাকে—জ্বলন্ত দৃষ্টিতে।
থারিনিয়াস ফিসফিস করে বলে “এ…এটা কি অর্কন…?”
এথিরিয়নের মুখ শুকিয়ে যায় “অবশেষে… সে এসেছে…”

দেবতা আভ্রাহার তার সিংহাসন থেকে উঠে দাঁড়ান। তিনি এক দৃষ্টিতে চেয়ে বলেন “আমি যা দেখছি তা কি সত্যি? নাকি কল্পনা?… কিন্তু এখন বুঝতে পারছি— এটাই হচ্ছে চূড়ান্ত মোড়ের সূচনা।”
অর্কন হেঁটে আসে, সবার মাঝখান দিয়ে। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কাউকে সে কিছু বলে না।
তার চোখ যায় একবার জ্যাসপারের দিকে। জ্যাসপারও চোখে চোখ রাখে। এই প্রথম—কোনো এক অজানা আতঙ্ক ঠাণ্ডা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধক্ষেত্রে।

অর্কন হালকা হাসে। তার ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপ।
“যুদ্ধ না… এটা তো খেলনা যুদ্ধ। এখন শুরু হবে আসল খেলা…”
চারপাশ স্তব্ধ। সৈন্যরা, রাজারা, দেবতা আভ্রাহার—সবার চোখ অর্কনের ওপর। সে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে, একটু এগিয়ে আসে আর উচ্চস্বরে বলে ওঠে “আমি অর্কন! জার্মেন রাজ্যের একমাত্র উত্তরসূরি, যাকে এক রাজনীতিক চক্রান্তে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল।বহু বছর ধরে হারিয়ে ছিলাম এই ভেনাস থেকে। কিন্তু আজ… আমি ফিরেছি।”
তার কণ্ঠে এমন এক ঝাঁঝ, এমন আত্মবিশ্বাস—
যেটা কাঁপিয়ে দেয় যুদ্ধমাঠের বাতাস।
জ্যাসপার দূর থেকে তাকিয়ে থাকে—চোখে ধোঁয়া আর দ্বন্দ্ব।

অর্কন আবার বলে ওঠে “আমি এমন কাউকে প্রিন্স মানবো না— যার রক্তে নেই আগুন, যার শিরায় নেই রাজ্যর নেতৃত্বের দাবি। যার অস্ত্রের বদলে আছে দুর্বল আর কষ্টে থাকা চোখ আর হারানো শক্তির গল্প।”
সে জোরে ঘোষণা করে “তাই এই যুদ্ধ— শুধু রাজ্য নিয়ে নয়। এই যুদ্ধ প্রমাণ করবে— কে আসল পুরো ভেনাসের যোগ্য প্রিন্স! কে হবে ভেনাসের পরবর্তী রাজা!”
জ্যাসপার দাঁড়িয়ে থাকে, মুখে কোনো কথা নেই। তার হাতে এখনও ব্যান্ডেজ, শরীর র*ক্তাক্ত। কিন্তু চোখে আগুন!
ড্রাকোনিস উঠে দাঁড়ান, মুখ কড়া, ঠোঁট কাঁপছে।
আভ্রাহার এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন “তাহলে এবার যুদ্ধ শুধু অস্ত্রের নয়— এটা হবে পরিচয়, র*ক্ত, উত্তরাধিকার আর আত্মার যুদ্ধ।”

যুদ্ধের ময়দান দাউ দাউ করে জ্বলছে।
অর্কন এক কোণায় রাজকীয় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে,
তার চারপাশে লম্বা এক সারি—ভয়ংকর সুসজ্জিত সৈন্যদের। সে ঠান্ডা গলায় বলে “আমার নামে যুদ্ধ চালানোর জন্য আমার অস্ত্র লাগবে না। আমার সৈন্যরাই যথেষ্ট।”
সৈন্যরা একে একে আক্রমণ শুরু করে এল্ড্র সেনাদের দিকে। বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু ওদের, জ্যাসপার, এথিরিয়ন, আলবিরা ও থারিনিয়াস।
তারা চারজন একত্র হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে— আকাশে উঠে, আগুন, শক্তি, আর ছায়া দিয়ে রক্ষা করতে থাকে এল্ড্র রাজ্যের পতাকা।

ঠিক তখন… বড়সড় এক বিস্ফোরণ!
একসাথে কয়েকশো সৈন্য ছিটকে পড়ে যায় মাঠে—
রক্তে রঞ্জিত হয়ে পড়ে যায় মাঠের একাংশ।
সবাই চমকে তাকায় পেছনে! ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে দেখা যায় দুইটি সিলুয়েট। একজন নারী—গাঢ় কালো যোদ্ধার পোশাক, চোখে লাল সানগ্লাস, হাতে একটি আধুনিক রাইফেল। তার পাশে দাঁড়ানো একজন পুরুষ—ঠান্ডা অথচ বুদ্ধিদীপ্ত চাহনি, হাতে তারও আগ্নেয়াস্ত্র।
“অ্যাকুয়ারা! আর “লিউ ঝান!”
সেনারা চিৎকার করে ওঠে, কেউ কেউ অবাক, কেউ কেউ হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।
লিউ ঝান ঠাণ্ডা গলায় বলে “এই যুদ্ধ শুধু এল্ড্র রাজ্যের নয়— এটা প্রত্যেকটা ড্রাগনদের জন্য, এটা পুরো ভেনাসের জন্য!”

দুজন একসাথে যুদ্ধের মোডে ঢুকে পড়ে।অ্যাকুয়ারা একেকটা টার্গেট করে নিখুঁত শটে সৈন্য নামাচ্ছে মাটিতে। লিউ ঝান দ্রুতগামী এক ডিভাইস ব্যবহার করে শত্রু পক্ষের রোবোটিক শিল্ড ভেঙে দেয়।
এদিকে আলবিরা আর এথিরিয়ন হাঁপাতে হাঁপাতে হেসে বলে “এবার জমবে খেলা…
যুদ্ধমাঠে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। জ্যাসপার, অ্যাকুয়ারা, থারিনিয়াস, এথিরিয়ন সবাই লড়ছে জীবন বাজি রেখে। ঠিক তখনই…
অর্কন এগিয়ে আসে রাজকীয় ভঙ্গিতে, ঠোঁটে হালকা বিদ্রুপাত্মক হাসি।সে জোর গলায় বলে “এই তো… আমার আসল শত্রু। অনেক বছর পর আজ তোমার সাথে দেখা হচ্ছে, লিউ ঝান।”
লিউ ঝান থেমে যায়। তার চোখে বিস্ময়—এক ধরণের পরিচিত ভাব… কিন্তু ঠিক যেন স্মৃতি কুয়াশায় ঢাকা।
“কে তুমি ?” — লিউ ঝান ফিসফিস করে।
অর্কন শুধু হাসে, তার চোখে এক অদ্ভুত জ্যোতি।

ঠিক তখনই, দেবতা আভ্রাহার সামনে এগিয়ে এসে জ্যাসপারের কানে কানে বলেন “সোনালী ড্রাগনের একমাত্র দুর্বলতা—তার চোখ। তাদের শক্তি যতই প্রবল হোক, চোখে আঘাত করলে তারা অন্ধ হয়ে যায়। এখনি সময়।”
জ্যাসপার সঙ্গে সঙ্গে সংকেত দেয়। অ্যাকুয়ারা রাইফেল সেট করে লক্ষ্য করে। জ্যাসপার নিজের ব্যান্ডেজ মোড়ানো হাত দিয়ে তলোয়ার তুলে নেয়।
তারা একে একে টার্গেট করে শত্রু পক্ষের সোনালী ড্রাগন যোদ্ধাদের। অ্যাকুয়ারা স্নাইপার মোডে চোখ বরাবর গুলি ছুঁড়ছে। জ্যাসপার ছায়ার মতো দ্রুত ছুটে যাচ্ছে, একেকটা ড্রাগনের চোখে সুনির্দিষ্টভাবে তলোয়ার বসিয়ে দিচ্ছে। ড্রাগনরা ছটফট করছে, একে একে পড়ে যাচ্ছে মাটিতে।
এই রক্তাক্ত মুহূর্তে, লিউ ঝান স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে। তার চোখ পড়ে অর্কনের চলাফেরা, দাঁড়ানোর ভঙ্গি, গলার স্বরের দিকে। সব কিছু যেন মিলছে কারো সাথে…

যুদ্ধের তীব্রতা আজ তুঙ্গে। ড্রাগন যোদ্ধারা মাটিকে করে তুলেছে রক্তাক্ত। এক পাশে জ্যাসপার, অন্য পাশে এলিন্ডর। দুজনের চোখে ভিন্ন আগুন—একজনের লক্ষ্য রক্ষা, অন্যজনের লক্ষ্য দখল।
এলিন্ডর হঠাৎ আকাশ থেকে নামলো তীব্র গতিতে, ড্রাগন রূপে। তার আগুনের নিঃশ্বাসে ভস্ম হতে থাকে এল্ড্র রাজ্যের একাধিক সৈন্য।
জ্যাসপার, যার ডান হাতে এখনো ব্যান্ডেজ, দাঁড়িয়ে যায় সামনে। তার ঠোঁট শক্ত। “থেমে যা, এলিন্ডর। এখনও সময় আছে।”

কিন্তু এলিন্ডর হেসে ওঠে। “তুমি এখনো কল্পনায় বাঁচো, ভাই। ক্ষমতা ছাড়া আর কিছু নেই এই ভেনাসে আর আমি কি ভুলে গেছি তুমি আমার এক চোখের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছো।”
তারপরই এলিন্ডর ছুটে আসে জ্যাসপারের দিকে তলোয়ার-মুখোমুখি ধাক্কা! রক্ত ছিটিয়ে পড়ে চারদিকে।
জ্যাসপার কাঁপা হাতে তলোয়ার ধরে। এলিন্ডরের তলোয়ার ছিটকে যায়।
এক মুহূর্ত… এলিন্ডর ছলনা করে আরেকটা ছুরি ছুঁড়ে মারে জ্যাসপারের দিকে। কিন্তু জ্যাসপার ঘুরে, একচেটিয়া ঘায়ে তার বুক ভেদ করে ফেলে এলিন্ডরকে।
এলিন্ডর থেমে যায়। তার চোখ বিস্ময়ে ভরা। তার শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে যায় মাটিতে।
অন্যদিকে, থারিনিয়াস আর এথিরিয়ন একত্রে লড়ছে ক্যালিক্সের বিরুদ্ধে। ক্যালিক্স ভয়ানক রকম দ্রুত ও ধূর্ত। তলোয়ার আর শর্ট ব্লাস্টার দুটোই চালাচ্ছে সমান দক্ষতায়।
হঠাৎ থারিনিয়াস পিছনে ছিটকে পড়ে, ক্যালিক্স আক্রমণ করতে আসে। ঠিক সেই সময় এথিরিয়ন লাফিয়ে পড়ে ক্যালিক্সের সামনে। দুইবার কাঁচির মতো আঘাত… ক্যালিক্সের বুক চিরে যায়।

যুদ্ধ আজ তার চরম রূপে। জ্যাসপার—এবার সে ড্রাগন রূপ নয়, মানব রূপেই লাফিয়ে লাফিয়ে একেকটা শত্রু ড্রাগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তার হাতে এক তলোয়ার, যা কোনো সাধারণ তলোয়ার নয়— বিশেষ কেমিকেল আর ড্রাগনভেদী ধাতু দিয়ে তৈরি এক বিপজ্জনক অস্ত্র।
যেই আঘাত পড়ে, ড্রাগনরা ধ্বসে পড়ে—গায়ের আঁশ ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত ঝরতে থাকে।
এদিকে অ্যাকুয়ারা আর লিউ ঝান নিচে রইফেল হাতে গুলি ছুঁড়ছে একটার পর একটা, সোজা গিয়ে বিদ্ধ হচ্ছে শত্রুপক্ষের চোখ, গলা, বা ডানায়।
এথিরিয়ন, ড্রাগন রূপে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে,
পাশে থারিনিয়াস আর আলবিরা—তিনজন একসাথে মাটিতে নেমে আসে এক বিশাল শত্রু দল দমনে।
তখনই… আকাশ ছায়াময় হয়ে ওঠে।
কেউ একজন ছায়া আড়ালে থেকে লক্ষ করে…
হঠাৎ— একটি কালচে সবুজ তির হাওয়ার গতি ভেদ করে এসে এথিরিয়নের বুকে বিদ্ধ হয়—একেবারে হৃদয়ের ঠিক উপরে।

সে কেঁপে ওঠে। এক মুহূর্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তিরের প্রান্তে বিষ ফোঁটা রয়ে গেছে, যা শরীরে ঢুকেই একে নিঃসাড় করে দিচ্ছে।
আলবিরা আর থারিনিয়াস চিৎকার করে ওঠে “এথিরিয়ন!”
জ্যাসপার সেটা দেখতে পায়, তলোয়ার হাতে সরাসরি দৌড়ে আসে বিদ্যুৎ গতিতে। সে হাঁটু গেঁড়ে বসে এথিরিয়নের পাশে, তার বুক থেকে তিরটা বের করতে গিয়েও থেমে যায়।
আভ্রাহারও এসে দাঁড়ান পাশে, চোখে তীব্র গম্ভীরতা।
“এই তির… এটা কেবল বিষ নয়,রক্ত চলাচল থামায়। যদি তাড়াতাড়ি ওকে ‘অ্যালথেন ওয়ার্ম’ না খাওয়ানো হয়, তবে—”

জ্যাসপার তৎক্ষণাৎ থারিনিয়াসকে নির্দেশ দেয়:
“আমাদের এল্ড্র ল্যবের সিক্রেট চেম্বারে লাল রঙের এক ছোট বক্স আছে। সেটা আনো এখনই। যত দ্রুত সম্ভব।
চারপাশে রক্ত, আগুন, ধ্বংস। এথিরিয়ন নিস্তেজ পড়ে আছে মাটিতে—বুকের মাঝ বরাবর বিদ্ধ বিষাক্ত তির।
থারিনিয়াস ছুটে যেতে চায় সোজা ল্যাবে—
তখনই বজ্রের মতো কণ্ঠে উচ্চারণ করেন ভেনাস দেবতা আভ্রাহার “থামো থারিনিয়াস। এই মুহূর্তে কেউ কোনো ঔষধ আনতে পারবে না। যুদ্ধের রুলস অনুযায়ী, সূর্য অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত যে আহত হবে, সে এভাবেই পড়ে থাকবে।”

চারপাশ স্তব্ধ।আলবিরা চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকে, আর বলে— “কিন্তু… ও তো মরে যাবে!”
আভ্রাহার মুখ শক্ত করে, শান্তভাবে বলেন “আমি পাশে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু যুদ্ধ এখনই থামবে না। তোমাদের বাঁচতে হলে, জিততে হবে তাই ওকে রেখেই যুদ্ধে নেমে পড়ো।”
সূর্য তখন মাঝ আকাশে। জ্যাসপার দাঁড়িয়ে যায়। চোখ রক্তবর্ণ, হাতের ব্যান্ডেজের নিচ থেকে রক্ত ঝরছে।
“এই যুদ্ধে আমরা শুধু শত্রুর মুখে নয়, ভাগ্যের মুখেও আঘাত করবো।”
সে আকাশে উড়ে যায় আবার, আর তার পেছনে থারিনিয়াস, আলবিরা, নতুন উদ্যমে ছুটে চলে…
আর মাটিতে শুয়ে থাকা এথিরিয়নের পাশে দাঁড়িয়ে—
চোখ বন্ধ করে আভ্রাহার ফিসফিস করে বলেন “এথিরিয়ন, শক্ত থাকো। তোমার হৃদয় এখন নিয়মের বিরুদ্ধে লড়ছে… আমরা তোমাকে ফিরিয়ে আনবো।”

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৪৯

আকাশের গহীনে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে সুপারসনিক স্পেসশিপ। তার গায়ে খোদাই করা—ELDRE TRANSPORT UNIT 07 এটাই সেই শিপ… যেখানে আছে ফিওনা।
আর মাত্র এক দিন… তারপরই সে অবতরণ করবে মাউন্টেন গ্লাস হাউজে।
সে যতবার ঘুমায়, ততবারই দুঃস্বপ্নে জেগে উঠে। চোখ খুললেই শূন্য কাচের ওপাশে তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়— র*ক্তাক্ত প্রিন্স জ্যাসপারের মুখ।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫১