আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫১

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫১
সাবিলা সাবি

আজকের ভেনাসের আকাশ অদ্ভুত শান্ত। যেন কোনো ঝড়ের পূর্বভাস। এটাই সেই দিন—যেদিন ঠিক হবে,
ভবিষ্যতের শাসক কে? কে বাঁচবে, কে হারাবে সব?
যুদ্ধের ময়দানে আজকে এল্ড্র রাজ্যের প্রিন্স জ্যাসপার অরিজিন এসেছে একেবারে নতুন রূপে—
গায়ে কালচে লেদারের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। পায়ে একজোড়া ভারী অথচ দ্রুতগামী স্নিকার্স,কোমরে বাঁধা আধুনিক ব্লেড, এবং সাইবার টেকনো ব্যান্ড। চোখে এক ধরনের প্রতিজ্ঞার লালচে আভা
এদিকে থারিনিয়াস পাশে এসে বললো “এথিরিয়নের শরীরে এখন প্রচন্ড জ্বর, এখন ও শরীরের বিষক্রিয়া কিছুটা রয়েছে। ও আসতে চেয়েছিলো আমি আসতে দেইনি।”

এই দিনই ডক্টর আগ্নিস তার সব গোপন পরীক্ষা ছেড়ে যুদ্ধমাঠে এসে হাজির হলো জ্যাসপারের পাশে। তার হাতে একটি কাচের কন্টেইনার—যার ভিতরে রয়েছে ভয়ানক এক রাসায়নিক গ্যাস।
“নাইক্রোস সাল্ফিট” একটি নিউরো-টক্সিক অ্যাসিডিক ভেপার, যা নির্দিষ্ট রক্তের DNA প্যাটার্নে প্রতিক্রিয়া করে।
দেবতা আভ্রাহার আগেই বলেছেন—“জার্মেইন রাজ্যের সৈন্যদের রক্তে এই গ্যাস প্রবেশ করলেই তাদের পেশি প্যারালাইসড হয়ে পড়বে। তারা হয়তো মরবে না, কিন্তু অস্ত্র ধরতে পারবে না আর।”
এদিকে পৃথিবী—মাউন্টেন গ্লাস হাউজ। ফিওনা আর সিলভা এসে নেমেছে। বহু যাত্রার ক্লান্তি, কিন্তু চোখে গভীর উদ্বেগ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পাহাড় ঘেরা সেই রহস্যময় স্থান, ফিওনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে চেয়ে বলে— “আমার মন বলছে—আজ কিছু একটা ঘটবে।”
আর ভেনাসে…
যুদ্ধ শুরু হয়েছে। শত্রুরা আধুনিক বর্মে, তাদের প্রিন্স অর্কন সামনে দাঁড়িয়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে, ডক্টর আগ্নিস সালফারিক গ্যাসটির পরিবর্তিত রূপ নাইক্রোস সাল্ফিট নিয়ে সামনে আসে। “তোমার সংকেতের অপেক্ষায় ছিলাম, প্রিন্স,” সে বলে।
জ্যাসপার মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি দেয়।গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে যুদ্ধমাঠে— প্রথমেই প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় জার্মেইন সেনাদের মাঝে। তারা পড়ে যেতে থাকে, পেশি শক্ত হয়ে আসে।
অর্কন বিস্ময়ে চিৎকার করে ওঠে— “তোমরা প্রতারণা করছো!”
আভ্রাহার গম্ভীর গলায় বলেন “এটা যুদ্ধ, প্রিন্স অর্কন। আর যুদ্ধ মানেই প্রতিটি কৌশল।”
আজকের দিন শেষ হবার আগেই কেউ হারাবে তার গৌরব, কেউ ছিনিয়ে নেবে ভবিষ্যত।

ভেনাসের যুদ্ধক্ষেত্র। আজ যুদ্ধের শেষ পর্ব। এতক্ষণে নাইক্রোস সাল্ফিট গ্যাসে প্রায় অর্ধ শত জার্মেইন সেনা মাটিতে পড়ে গেছে।
কিন্তু… এখানে এখনও যুদ্ধ থামেনি। শত্রুপক্ষ নতুনভাবে সংগঠিত হয়ে আরও ড্রাগন সেনা নিয়ে এসেছে। তাদের চোখে আগুন, আর মুখে চিৎকার— “ভেনাসের রাজ্য কারো একার নয়!”

যুদ্ধ এখন ভিন্ন লেভেলে।এই মুহূর্তে— লিউ ঝান—গায়ে কালো বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, হাতে ইলেকট্রনিক রাইফেল অ্যাকুয়ারা—আকাশের নিচে, চোখে স্পেশাল স্ক্যানার, প্রতি ৬ সেকেন্ডে গুলি ছুড়ছে। আলবিরা—তার আগুন-ড্রাগন রূপে ঘূর্ণির মতো ঘুরে ঘুরে শত্রুকে পুড়িয়ে দিচ্ছে। থারিনিয়াস তলোয়ার হাতে শত্রুদের ছিন্ন করছে।
সবাই আজ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে এসেছে। এটা সাধারণ পোশাক না— এটি এল্ড্র ল্যাবে তৈরি বিশেষ “হিট-ডিফিউজিং আর্মর” যা ড্রাগনের আগুন, গুলি, এমনকি বাজের আঘাত থেকেও রক্ষা করে কিছু সময়ের জন্য।
এদিকে জার্মেন পক্ষও বসে নেই।তাদের কমান্ড সেন্টার থেকে নতুন করে সেনা পাঠানো হচ্ছে।আর অর্কন নিজে এখনও যুদ্ধক্ষেত্রে নামেনি— সে দূর থেকে দেখছে, আর ধীরে ধীরে তার চোখে ধিক্কার জমছে। “তোমরা ভেবেছো, শুধু গ্যাসেই থেমে যাবে আমার রাজ্য?” তার ঠোঁটে হালকা বাঁকা হাসি।

জ্যাসপার তখন একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে—তলোয়ার হাতে, ক্ষত-বিক্ষত শরীর, তবুও দাঁড়িয়ে, লড়ছে।
এতক্ষণে তার তলোয়ারে জমে থাকা ক্যামিকেল ব্লেড লালচে আলো ছড়াচ্ছে, যখনই সে তলোয়ার চালায়, একেকজন শত্রু চোখে অন্ধ হয়ে যায়। “আমি হারবো না,” জ্যাসপার নিজের ভেতরে উচ্চারণ করে। “আমাকে হারানো এত সহজ না।”
আকাশ থেকে মেঘ সরছে…সূর্যের আলো পড়ছে যুদ্ধক্ষেত্রে…দেবতা আভ্রাহার মুখ নিচু করে ফিসফিস করে বলেন— “আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা… তারপরই ভেনাসের ভবিষ্যৎ স্থির হবে।”

সূর্য এখন মাথার ওপরে। গ্যাসে ঝরে পড়েছে বহু সৈন্য, তবু যুদ্ধ থামেনি।
ঠিক তখনই… আকাশে কালো বজ্র, বিদ্যুৎ চিরে নেমে আসে এক আগুনবর্ণ আলো—মাটি কেঁপে ওঠে। ড্রাগন রুপ থেকে উড়ে উড়ে কয়েক চক্কর ঘুরে হঠাৎ মধাব রুপে নেমে আসে এক রাজপুত্র, যার চোখে অহংকার,পায়ে প্রবল দৃঢ়তা—
সেই অর্কন।
তাঁর পোশাকে সোনালি ও গাঢ় নীল বর্ম, হাতে হালকা ব্লু-ক্রিস্টাল ব্লেড। মুখ কঠিন হয়ে আছে আর চোখে জ্বলছে তীব্র আগুন।
প্রথম আঘাত,কোনো ভূমিকা ছাড়াই,
অর্কন সরাসরি আঘাত হানে থারিনিয়াসের বুকে।
থারিনিয়াস ছিটকে পড়ে যায় পাথরের ওপর—
তার মুখে তীব্র ব্যথার ছাপ। তারপর কোনো বিরতি না নিয়ে সে আলবিরার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে—তলোয়ার এক পাশ ঘেঁষে ওর ডান কাঁধ ফুঁড়ে দেয়, আলবিরা আগুন ছুড়তে ছুড়তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এদিকে…

জ্যাসপার, লিউ ঝান, আর অ্যাকুয়ারা দৌঁড়ে আসে সাহায্য করতে, কিন্তু… তাদের চারপাশ ঘিরে ধরে শক্তিশালী সোনালি-ড্রাগন ইউনিট। তাদের ডানা আগুনের মতো জ্বলছে, তারা ত্রিভুজাকারে ঘিরে ফেলে তিনজনকে।
তাদের মধ্যে অন্যতম একজন বলে— “তোমরা এখন শুধু দেখবে, কিছু করতে পারবে না!”
জ্যাসপারের মুখে ক্ষোভ।অ্যাকুয়ারা রাইফেল তোলে, কিন্তু চারপাশের ড্রাগনদের শক্তি অসাধারণ। লিউ ঝান তার ব্লেড সক্রিয় করে, কিন্তু সেখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব।
দূর থেকে দেবতা আভ্রাহার তাকিয়ে আছেন।তার চোখেও উদ্বেগ।তিনি বললেন নিজেই “এখন যুদ্ধ নয়, এটি পরীক্ষার মাঠ— কোনো একজনের শেষ আজ হতে বাধ্য।”
ভেনাসের যুদ্ধভূমি।শেষ দিন। শেষ সিদ্ধান্ত। অর্কন দাঁড়িয়ে, আগুনের মতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার পেছনে হাজারো ড্রাগন সৈন্য।

অন্যদিকে, জ্যাসপার—রক্তাক্ত কিন্তু স্থির।একাই দাঁড়িয়ে আছে যুদ্ধমাঠের কেন্দ্রবিন্দুতে।
ঠিক তখনই— দেবতা আভ্রাহার হঠাৎ পূর্ণ শক্তিতে চিৎকার করে উঠলেন “জ্যাসপার!”
এটা ছিলো একটা গোপন কমান্ড, যেটা জ্যাসপার বুঝতে পেরেছিল, বাকিরা নয়। সে সঙ্গে সঙ্গে লিউ ঝান,অ্যাকুয়ারা ও বাকি কয়েকজন সৈন্যকে বলল “পিছিয়ে যাও। সবাই এখনই!”
তারা বুঝে গেল কিছু হতে যাচ্ছে। তারা সরে যায় পেছনের দিকে। পুরো যুদ্ধক্ষেত্রে নেমে আসে হিমশীতল নীরবতা। এমন নীরবতা, যেন আকাশও নিঃশ্বাস আটকে রেখেছে।
জ্যাসপার ধীরে ধীরে এক পা, এক পা করে পেছোতে থাকে— তার কালো স্নিকার্স থেকে বের হয় ঠুক ঠুক ধ্বনি।
আর ঠিক তখন…সে হঠাৎ এক পাশ হেলে নিজের পায়ের স্নিকার্সের ভেতরের একটি গোপন বাটন প্রেস করে।
মুহুর্তে মাটি কেঁপে ওঠে! চারপাশ ফুঁড়ে ফুঁড়ে উঠে আসে ডজন ডজন রাইফেলস, যেগুলোর নলের মাথায় বিশেষ বিষক্রিয়া ক্যামিকেল।

ট্রিগার একটিভেট! অজস্র গুলি ছুটে যায় সামনের ড্রাগন বাহিনীর দিকে! বুলেট গুলো তাদের ত্বকে গেঁথে যায়, বিষক্রিয়ায় শরীর ঘন কালো হয়ে পড়ে।
মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শত্রুপক্ষের সব সৈন্য ধ্বংস! হয়ে যায়। পুড়তে থাকে মাটি, চারদিকে শুধুই ছাই আর স্তব্ধতা।
অর্কন স্তব্ধ।তার চোখে এক ধরনের অশ্রদ্ধা আর বিস্ময় ফুটে উঠে। “কি… করলি তুই এটা?”
কেউ কথা বলছে না। পিছন থেকে এল্ড্র সৈন্যদের মুখে তখন একে একে ফুটে ওঠে জয়ের হাসি।
অর্কনের সামনে পড়ে আছে তার সব সৈন্যদের নিথর দেহ।
আকাশে ধোঁয়া, মাটিতে ছাই আর যুদ্ধক্ষেত্রে শুধুই এক ভয়ংকর স্তব্ধতা।
কিন্তু অর্কন হাসে। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে জ্যাসপারের দিকে। “এটা অন্যায়। এটা চিটিং! যুদ্ধ তো সম্মুখ সমরে হয়—তুই তো পিছন থেকে গোপনে কৌশল করলি!”

দেবতা আভ্রাহার তখন সামনের দিকে এগিয়ে এসে বলেন
“যুদ্ধ কেবল শক্তি আর ক্ষমতার খেলা নয়, অর্কন। এটা কৌশলেরও খেলা। আর কৌশলও যুদ্ধের এক নিয়ম।তুমি যদি এটা না বোঝো, তবে তুমি কখনোই শাসক হবার যোগ্য নও।”
অর্কন থামে না। সে আবার বলে “সে কোথায়? আমি জানি তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিস। মাউন্টেন গ্লাস হাউজে তাই না? পরবর্তী প্রিন্স আসবে এই ভেনাসের মাটিতে?
জ্যাসপারের চোখ বড় হয়ে যায়।সে চমকে ওঠে। “ফিওনা…? তুমি জানো ওর কথা?”
এই মুহূর্তে সামনে এগিয়ে আসে লিউ ঝান। তলোয়ার ধরে রাখে অর্কনের দিকে। “তুমি আসলে কে? আর ওকে কীভাবে চেনো?”

তখনই দেবতা আভ্রাহার ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এসে বলে “অর্কন…রাজকুমার অর্কন, আজ তোমার আসল পরিচয় প্রকাশ করো। আমি জানি তুমি কে। কিন্তু আমি চাই, আজ তুমি নিজের মুখেই তা বলো—সবার সামনে।”
চারপাশ স্তব্ধ। সবাই অপেক্ষা করছে। আকাশ যেন দম বন্ধ করে তাকিয়ে আছে সেই এক নাম শুনবার জন্য…
যুদ্ধের ধোঁয়া এখনো মাটি থেকে পুরোপুরি উঠেনি, আর ঠিক সেই ধোঁয়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে অর্কন এসে দাঁড়ায় জ্যাসপারের সামনে।
সে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়, তার এমন ভাবভঙ্গি যেনো চোখে একরাশ অভিমান আর দুঃখের ছায়া। তার ঠোঁটের কোণে এক হালকা হাসি “তুই চিনতে পারলি না আমাকে… প্রিয় বন্ধু?”
জ্যাসপার থমকে যায়।অর্কন তার সামনে এক পা এগিয়ে এসে আরও স্পষ্ট করে বলে— “আমার প্রাণের বন্ধুটা… তুই কি আমাকে সত্যিই চিনতে পারছিস না? আমি তোর জন্য অপেক্ষা করেছি…আমি তোকে খুঁজে ফিরেছি অন্ধকার ভেনাস থেকে পৃথিবীর আলো পর্যন্ত। তুইই তো বলেছিলি—বন্ধুত্ব কখনও মরে না, জ্যাসপার!”
চারপাশ স্তব্ধ। জ্যাসপারের চোখ বড় হয়ে যায়। মাটিতে তখনো রক্ত, আকাশে ধোঁয়া। চারদিকে স্তব্ধতা—আর সেই স্তব্ধতা চিরে এবার এগিয়ে আসে লিউ ঝান।

তার চোখে রক্তের আগুন, গলার স্বরে শতবর্ষ পুরোনো ক্রোধ। “আরডন…! তুই ফিরে এসেছিস?আগের জন্মে তোর জীবন আমি শেষ করেছিলাম। এই জন্মেও আমার হাতেই তুই মরবি!”
চারদিক থেকে চিৎকার, কণ্ঠস্বর, বিস্ময়। অ্যাকুয়ারা ফিসফিস করে বলে “তাহলে… অর্কন মানেই আরডন?”
আলবিরার আহত চোখ বড় হয়ে যায়। “মানে, সে-ই ফিওনার সৎ ভাই?”
সেই মুহূর্তে পুরো আকাশের রঙ গাঢ় হয়। অর্কন হেসে উঠে বলে “বাহ! এই জন্যই তো বলে— শত্রু শত্রুকে চিনতে কখনও ভুল করে না। তবে এবার আমার নতুন শত্রু থেরন।কারণ সে এখন আমার সৎ বোনের স্বামী, সে তো আর আগের জন্মের মতো আমার পাশে দাঁড়াবে না। কেউই দাঁড়াবে না। আমি একাই যথেষ্ট।”
জ্যাসপার পেছনে সরে দাঁড়ায়, মুখে অনুশোচনা আর প্রতিশোধের আগুন। সে চিৎকার করে বলে— “আমি যদি আগের জন্মে তোর আসল রূপ দেখতে পেতাম, তাহলে তখনই তোকে শেষ করে দিতাম! তুই আমার এলিজিয়াকে মেরেছিলি, যাকে আমি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালবাসতাম!”

সমস্ত যুদ্ধক্ষেত্র পেছনে ফেলে অর্কন মুখে ঠাণ্ডা এক হাসি নিয়ে দাঁড়ায়। তার ঠোঁটে ঝলসে ওঠে এক কুখ্যাত বিদায়ের সুর—“বায় বায়…”
সাথেসাথেই সে ড্রাগন রূপে রূপান্তরিত হয়— তার বিশাল ধূসর ডানায় আগুনের ছায়া, চোখে মেঘের শীতলতা।
এক ছকভাঙা গর্জনে সে উড়ে যায় তার গন্তব্যে মাউন্টেন গ্লাস হাউজের দিকে।
চারদিক স্তব্ধ হয়ে যায়। তখন দেবতা আভ্রাহার কপালে হাত রাখেন, হঠাৎ বলে ওঠেন—“জ্যাসপার! ওর পেছনে যাও! ও ফিওনার কাছে যাচ্ছে!”
আর এক মুহূর্তও দেরি না করে— জ্যাসপার তলোয়ার ফেলে দিয়ে উড়ে যায় আকাশে। লিউ ঝান আর অ্যাকুয়ারা রাইফেল হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আকাশে
আহত হলেও থারিনিয়াস আর আলবিরা কষ্টে নিজেদের ড্রাগন রূপে রূপান্তরিত করে উড়ে যায় তাদের পেছনে।

দুদিন পেরিয়ে গেছে।
এদিকে… অন্য দিগন্তে, মাউন্টেন গ্লাস হাউজে…ফিওনা আর সিলভা তখন বারান্দায়। পাহাড়ে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে, পায়ে সাদা বরফ ছুঁয়ে যাচ্ছে… হঠাৎ ফিওনার মুখ বিকৃত হয়ে যায় যন্ত্রণায়। সে চিৎকার করে ওঠে “আহ্… পেট…! সিলভা… সিলভা… কিছু একটা হচ্ছে আমার পেটে…”
তার শরীর কাঁপছে, ব্যথায় মাটিতে বসে পড়ছে ফিওনা।
সিলভা ভয় পেয়ে যায়। তার মুখে চিন্তার ছাপ, সে একা একা চেষ্টা করছে সামলাতে। কিন্তু ফিওনার চিৎকার পাহাড়ের নিরবতা ভেঙে দিচ্ছে “ প্রিন্স কোথায়. আমি আর পারছিনা…!”
ঠিক তখন, দূর থেকে ভেসে আসে ড্রাগনের ডানার শব্দ… আর ফিওনার যন্ত্রণার চিৎকার মিলিয়ে যায় সেই তীব্র ঝড়ো হাওয়ায়…

অর্কন অবশেষে পৃথিবীর আকাশে পা রাখে। তার লক্ষ্য একটাই ফিওনা। কিন্তু ঠিক তখনই, তার পথ রোধ করে দাঁড়ায় চারজন বীর।
লিউ ঝান। রাইফেল হাতে দৃঢ়ভাবে,অ্যাকুয়ারা— চোখে আগুন, মনে ঝড়। আলবিরা ও থারিনিয়াস— আকাশে বিশাল ড্রাগনের রূপে উড়ছে
তারা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে অর্কনকে—”তুই আর এক কদমও সামনে যেতে পারবি না!” লিউ ঝান বললো।
অর্কন দাঁতে দাঁত চেপে গর্জে ওঠে, কিন্তু সে বুঝতে পারে—আর সময় নেই, জ্যাসপার এগিয়ে গেছে…
এদিকে—জ্যাসপার আগেই পৌঁছে গেছে মাউন্টেন গ্লাস হাউজে। ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখলো, ফিওনা বিছানায় ছটফট করছে। তার পেট চেপে ধরে আছে, কপালে ঘাম, চোখে জল।

সিলভা কাঁপা গলায় বলে— “প্রিন্স… ফিওনার মনে হচ্ছে এখনই বেবি হবে… আমি একা পারছি না…”
জ্যাসপার আহত, তার মুখেও কষ্টের রেখা।সে সামনে গিয়ে ফিওনার কপালে হাত রাখে। ফিওনা তাকিয়ে দেখে— “প্রিন্স…তুমি এসেছো অবশেষে ? তোমার কি হয়েছে? তোমার কাঁধে রক্ত কেনো…!”
জ্যাসপার নিচু স্বরে বলে— “পরে বলবো সব। এখনই চলো। এখানে বিপদ আছে।এখানে থাকা যাবে না। সিলভা, তুমি এখনই ড্রাগন রূপে ভেনাসে ফিরে যাও…আমি ফিওনাকে অন্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছি!”
সিলভা কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়ে।জ্যাসপার তখন ড্রাগন রুপ ধরে পাহাড়ের কিনারায়। সিলভা ফিওনাকে ধরে ধরে জ্যাসপারের পিঠে তুলে দেয়।

ফিওনা কাঁপা গলায় ফিসফিস করে—“তুমি খুব আহত… তুমি কেন আমায় নিয়ে যাচ্ছো আর কোথায় যাবো?”
জ্যাসপার জবাব দেয় না। ধীরে ধীরে আকাশে উঠে পড়ে…পিছনে ফেলে আসে মাউন্টেন গ্লাস হাউজ,পাহাড়ের চূড়া।
অনেক দূর উড়ে যাওয়ার পর, হঠাৎ ফিওনার ব্যথা বেড়ে যায়। তার দেহ কাঁপে, চোখ বড় হয়ে যায়। সে ফিসফিস করে “প্রিন্স… আমি আর পারছিনা… পড়ে যাবো…”
জ্যাসপার চমকে ওঠে। চারপাশে তাকায়… সামনে একটা গভীর সবুজ জঙ্গল দেখতে পায়। সে নিচে নেমে আসে ধীরে ধীরে, রক্তাক্ত শরীর নিয়েই—ভবিষ্যতের উত্তরসূরি…
এই পৃথিবীতে জন্ম নেবে কি না, এখন নির্ভর করছে এই অজানা জঙ্গলের এক কোণের উপর।
গভীর জঙ্গলের পথ পেরিয়ে, র*ক্তাক্ত জ্যাসপার ফিওনাকে পাঁজা কোলে নিয়ে হেঁটে চলেছে। তার চোখে ক্লান্তি, পায়ে রক্ত, তবু থেমে নেই সে,কারণ সে জানে, ফিওনার প্রতিটি নিঃশ্বাস এখন তার দায়িত্ব।
কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে ফিওনার শরীর একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। “প্রিন্স… আমি… আর পারছি না…”
এই কণ্ঠস্বরটা যেন হাওয়ার থেকেও হালকা, তবু হৃদয় কাঁপিয়ে তোলে জ্যাসপারকে। সে আর সময় নষ্ট না করে, এক বিশাল শালের গাছের গোড়ায় বসে পড়ে হেলান দিয়ে।

ফিওনাকে নিজের উরুর ওপর শুইয়ে দেয়, মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে “হামিংবার্ড, আমি এখন তোমার কাছেই আছি, তোমার আর কোনো চিন্তা নেই…”
কিন্তু ফিওনার চোখে জল…“আমার খুব ব্যথা করছে… প্রিন্স আমাদের বেবির কিছু হবে নাতো?”
জ্যাসপার তার চোখের জল চেপে রাখে।তার বুক ফেটে কান্না আসছে, কিন্তু সে জানে এখন ভেঙে পড়লে চলবেনা। যুদ্ধের চেয়েও কঠিন সময় মনে হচ্ছে এটাই তার কাছে।
ঠিক তখনই আকাশে গর্জন শুরু হয়। বৃষ্টি পড়তে শুরু করে, হালকা, তারপর ক্রমেই বেড়ে যায়।
জ্যাসপার এক মুহূর্তে নিজের বুলেটপ্রুফ লেদার জ্যাকেট খুলে ফিওনার গায়ে ঢেকে দেয়। তারপর তাকে শক্ত করে নিজের বুকে চেপে রাখে।
বৃষ্টির শব্দে গাছের পাতাগুলো কাঁপে, আর তার মাঝেই দুইজন নিঃশব্দে বসে থাকে।
এদিকে অদূরে ঘন জঙ্গলের এক কোণে,একটা লোকালয় চোখে পড়ে— চোখে লন্ঠনের আলো, কুয়াশার মাঝে হাঁসের ডাক, আর কিছু ঘর। এক বুড়ো লোক দূর থেকে টর্চ নিয়ে এগিয়ে আসে “ওহে! কে ওখানে? এই বৃষ্টিতে? কে আছো?”

সবুজ পাতায় ঢাকা গাছ, কুয়াশায় ঢাকা রাস্তা, আর কানে ভেসে আসা অজানা ভাষার ধ্বনি। তখনি আরো কয়েকজন মানুষ ছোটে আসে, হাতে আলো, কারো হাতে দড়ি, কারো হাতে ছাতা। তাদের ভাষা জ্যাসপারের কাছে অজানা হলেও
তার ব্রেইনের ট্রান্সলেটর সফটওয়্যার চালু হয়ে গেছে। তাই শোনা গেলো এক নারীর কণ্ঠে “তোমরা কারা? এই বৃষ্টিতে এই অবস্থা… মেয়েটি তো প্রায় অচেতন!”
জ্যাসপার শান্তভাবে বললো, “আমরা খুব বড় বিপদে পড়েছি…ও আমার স্ত্রী, সম্ভবত ওর সন্তান জন্মদানের সময় হয়ে এসেছে।”
তখন সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল জ্যাসপারের দিকে। তার চেহারায় দেবদূতের ছায়া, চোখে যেন হাজার বছরের অভিজ্ঞতা, আর এমন পোশাক তারা জীবনে কখনো দেখেনি, লেদার বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মেটাল-সোল স্নিকার্সে, আর এক হাত রক্তাক্ত ব্যান্ডেজে মোড়া…

“সে কি কোনো রাজপুত্র?“কোনো ভিনদেশী শক্তিশালী পুরুষ বুঝি?বাহ্… কত সুদর্শন…”
গ্রামের মহিলারা দ্রুত এগিয়ে এসে ফিওনাকে সবাই মিলে তুলে এক কাঠের ঘরে নিয়ে গেলো— জ্যাসপার শুধু একবার ফিওনার চোখের দিকে তাকাল—তখনো ফিওনা তার হাত চেপে ধরে রেখেছিল।
“আমি এখানে আছি… হামিংবার্ড… সব ঠিক হয়ে যাবে।”
এদিকে গ্রামের পুরুষেরা ভিজে জ্যাসপারের সাথেই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। তারা তাকে দেখে একটু দূরত্ব রেখে বললো—
“তুমি কোথা থেকে এসেছো?তুমি তো আমাদের ভাষা বোঝো! তবে আমাদের জাতের না…”
জ্যাসপার শান্তভাবে বললো, “আমি… অনেক দূর থেকে এসেছি।”

গ্রামের প্রধান বয়স্ক ব্যক্তি আসেন, হেঁটে হেঁটে, হাতে কাঠের লাঠি। তিনি চোখে চশমা পরা এক প্রকার বুদ্ধিমান মানুষ মনে হয়। “এই ছেলেটার চোখে শোক আর আগুন— আমি জীবনে এমন চোখ কখনো দেখিনি।”
পুরো গ্রাম একত্রিত হয়ে পড়ে। শিশুরা ভয়ে চেয়ে আছে, নারীরা প্রার্থনা করছে, আর বাইরে বৃষ্টির শব্দ থেমে থেমে মাটিতে এক অদ্ভুত ছন্দ বাজাচ্ছে…
ঘন বৃষ্টিতে গ্রামের মাটিতে পানি জমেছে। পথের ধারে তালগাছ আর বটগাছের পাতা থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে পানি। আর তার মাঝেই—ভিজে দাঁড়িয়ে আছে জ্যাসপার।
তাকে ঘিরে ধীরে ধীরে জমে উঠছে জনতা। কিন্তু এবার যে ভিড়টা সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ল,তা হলো গ্রামের কিশোরীদের দল।
তারা কেউ বৃষ্টিতে রঙিন ওড়না মাথায় দিয়ে এসেছে,
কারো চুল ভিজে গেছে, কেউ পায়ের কাদামাটি মুছছে,
কিন্তু সবাই তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে—

“এই ছেলেটা কে? এত সুন্দর কেউ হতে পারে?” ওর চোখগুলো… যেন গভীর অরন্যর মতো।কোন রাজ্যের রাজপুত্র হবে নিশ্চয়ই।”
তারা ফিসফিস করে: “তুমি দেখেছো, ওর চুলে পানি গড়িয়ে পড়ছে, যেন কোনো সিনেমার দৃশ্য।” তার গলার স্কার তো রক্তে ভেজা— আর তবুও কেমন শান্ত।যার বউয়ের সন্তান জন্ম হচ্ছে, সেই মানুষটা কতো শান্ত… ভয়ংকর সুন্দরও।”
জ্যাসপার অবশ্য এসব লক্ষ করছে। তার ইন্দ্রিয়গুলো এতটাই শক্তিশালী যে আশেপাশের প্রতিটি তাকানোর ভঙ্গিও বুঝতে পারছে।
কিন্তু সে একদম নিরুত্তাপ।তার চোখে কোনো দম্ভ নেই,
হাসি নেই, লজ্জাও নেই। শুধু রয়েছে এক গভীর উদ্বেগ—

“ফিওনা কেমন আছে?” ও যদি ব্যথায় অজ্ঞান হয়ে যায়… যদি আমার বাচ্চার কিছু হয়ে যায়…”
তার চিন্তার মধ্যেই হঠাৎ ছোট এক মেয়ে সামনে এসে বলে বসে—“আপনি কি আকাশ থেকে এসেছেন?”
সবাই স্তব্ধ। কিন্তু জ্যাসপার তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে ” হ্যাঁ আমি আকাশ থেকেই এসেছি তবে আমার আকাশ এই পৃথিবীর ভেতরেই।”
এই উত্তরে কিশোরীরা মুগ্ধ হয়ে যায় আরও।
তারা বুঝে যায়, এই মানুষটি শুধু বাহ্যিকভাবে নয়, হৃদয়েও বিরল।
এদিকে ঘরের ভেতর থেকে হঠাৎ এক নারীর চিৎকার আসে
“এই মেয়েটির ব্যথা বাড়ছে!

বৃষ্টির শব্দ এক মুহূর্তে থেমে গেল— শুধু ঘরের ভেতর থেকে ভেসে এলো এক তীক্ষ্ণ, কোমল, আকাশ ছোঁয়া এক শব্দ—
এক নবজাতকের কান্না।
গ্রামের প্রবীণ মহিলারা চোখ বড় করে তাকায়।
এক বৃদ্ধা ফিসফিস করে বলে “আমি আমার ৭৫ বছরের জীবনে এমন বাচ্চা দেখিনি কখনো…”
ঘরের মাটিতে খড় বিছানো,পাশে মাটির প্রদীপ জ্বলছে,
আর সেই আলোর মাঝখানে— একটা ছোট, অবিশ্বাস্য রকমের আলোকিত শিশু।
বাচ্চাটার দুটো চোখ এক এক করে খুলে…

সবাই অবাক। চোখের মণি দু’টো যেন এক অদ্ভুত রঙের মিশ্রণ— সবুজের মাঝে বাদামি রেখা, ঠিক যেন জ্যাসপারের চোখের গভীরতা আর ফিওনার চোখের কোমলতার মিশ্রনে। কেউ একজন বলে ওঠে, “ওর চোখে যেন অরণ্য আর সূর্য দুটোই লুকানো।”
শিশুর ঠোঁটটা হালকা খয়েরি, কিন্তু মাঝে একরেখা হালকা রক্তিম বেগুনির ছাপ। যেন কোনো শিল্পী দুই রঙ মিশিয়ে তুলির আঁচড়ে বানিয়েছে। নবজাতকের মাথায় হালকা সোনালি-বাদামি চুল,একেবারে ফিওনার মতো।
ত্বক উজ্জ্বল অথচ কোমল, যেন মাটির আর আকাশের মিলনে জন্ম। এদিকে ফিওনা চেতনা হারিয়েছে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

বৃষ্টির ধারা এখন কিছুটা কমে এসেছে। ঘরের মাটির মৃদু গন্ধে যেন গলছে ভয়, কষ্ট আর যুদ্ধের ধোঁয়া।এক নারী দরজার ফাঁক দিয়ে বলে— “রাজপুত্র, ভেতরে আসুন। আপনার ছেলে সন্তান হয়েছে।”
জ্যাসপার ধীরে ধীরে ঘরে ঢোকে।তার চোখে ক্লান্তি, শরীরে ক্ষত, কিন্তু বুকে— এক অদ্ভুত শান্তি। বুকের মাঝে জ্বলছে একটা ছোট আগুন, যেটার নাম— ভালোবাসা।
একজন নারী তার কোলে বাচ্চাটিকে তুলে দেয়।জ্যাসপার কাঁপা হাতে বাচ্চাটিকে কোলে তুলে নেয়। সে দাঁড়িয়ে বাচ্চার দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। দেখে মনে হয় যেন সময় থেমে গেছে। তার ঠোঁট কাঁপে, চোখে জল আসে না। কিন্তু হৃদয় কেঁপে ওঠে। শিশুটি হঠাৎ হালকা হাসে, চোখের কোণে ছোট্ট ভাঁজ পড়ে। তখন জ্যাসপার ফিসফিস করে বলে

“তুমি এতোক্ষণ কাঁদছিলে, এখন হাসছো? ঠিক তোমার মায়ের মতোই…আগুনের ভিতরেও নরম তুলোর মতো…”
তার চোখ ভিজে আসে, সে ফিসফিস করে বলে— “তুমি এসেছো পৃথিবীতে… আমার হামিংবার্ডের একটা অংশ হয়ে…তুমি আমার সব যুদ্ধের শেষে পাওয়া বিজয়ের উপহার…”
পুরো গ্রাম নিঃশব্দ।এক মহিলার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে “ওর নাম কি হবে?”
জ্যাসপার চুপ করে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর শিশুটির কপালে চুমু দিয়ে বলে “ওর নাম হবে ‘জ্যাফিওন’।
সে ধীরে ধীরে শিশুটিকে বিছানার মাঝখানে শুইয়ে দেয়। তার এক পাশে ফিওনা, অন্য পাশে জ্যাসপার।
ফিওনা এখনও ক্লান্ত, কিন্তু চোখ বন্ধ হয়ে আছে।জ্যাসপার ধীরে ধীরে পাশে শুয়ে পড়ে, আর ফিওনাকে টেনে আনে নিজের বাহুর মধ্যে। ফিওনার মাথা তার কাঁধে এসে পড়ে।
এক হাতে সে ফিওনার কাঁধে, অন্য হাতে শিশুটির বুকের উপর। তিনটি হৃদয়ের মাঝে যেন গড়ে ওঠে এক নিঃশব্দ আশ্রয়, যেখানে নেই কোনো যুদ্ধ, নেই ভয়, নেই দুঃখ।
তিনজন একসাথে শুয়ে আছে— একজন বাবা, একজন মা, আর এক নবাগত জীবন।
বাইরে বৃষ্টির ফোঁটা গাছের পাতায় পড়ে এক অদ্ভুত সুর তোলে, আর ঘরের ভিতরে— নতুন জীবনের শুরুতে এক মৌন প্রতিজ্ঞা তৈরি হয়।

পাহাড়ি বাতাসে যেন এখনো যুদ্ধের গন্ধ। আকাশে মেঘ কালো, বজ্রপাত যেন থমকে দাঁড়িয়েছে কিছু একটার অপেক্ষায়।
অর্কনের রক্ত লেগে আছে মাটিতে, তার বুকের শ্বাস কাঁপছে ধীরে ধীরে। চারপাশে থারিনিয়াস, আলবিরা, অ্যাকুয়ারা, আর লিউ ঝান— তাদের শরীরেও ক্ষত, কিন্তু চোখে বিজয়ের আগুন।
লিউ ঝানের তলোয়ারের আঘাতে অর্কনের শরীর ছিটকে পড়ে যায় খাড়া পাহাড়ের ঢালে। এক লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে লিউ বলে— “এবার শেষ… এবার ও আর ফিরবে না,কোনো জনমেও”
সবার ড্রাগন রূপ আবার জ্বলে ওঠে। তারা উড়ে যায়… মাউন্টেন গ্লাস হাউজের দিকে, জ্যাসপার আর ফিওনাকে খুঁজতে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫০

কিন্তু তখনই,এক খাড়া গাছের শক্ত ডালে দুহাতে ঝুলে আছে অর্কন।রক্তে ভেজা মুখে একটা ঠান্ডা হাসি,
আর মুখে ফিসফিস স্বরে সে বলে “এত সহজে রাজকুমার অর্কন মরবে না।আমি পড়িনি… আমি শুধু পেছনে হঠেছি,আর এবার ফিরবো এমন এক ধ্বংস নিয়ে,যেটা কেউ ভুলতে পারবে না…”
একটা কাক ডেকে ওঠে… আর পাহাড় কাঁপে এক গভীর নিঃশব্দে।

আযদাহা সিজন ২ পর্ব ৫২