আয়ুর প্রহর পর্ব ১৮

আয়ুর প্রহর পর্ব ১৮
তুশিতা নুর তৃষ্ণা

প্রহর বিছানা থেকে নেমে আয়ুশের হাত ধরে আয়ুশকে এনে বিছানায় বসালো।তারপর নিজে ফ্লোরে বসে আয়ু্শের হাঁটুর উপর আয়ুশের দু’ হাতের ভাঁজে নিজের হাত রাখলো।তার চোখ ছলছল করছে।ছলছল চোখেই আয়ুশকে জিজ্ঞেস করলো,
-“ একটা কথা বলি?”
-“ বলো?”
-“ আয়ু ছাড়া মানুষ বাঁচে?”
-“ একদমই না।”
-“ তবে আমি আমার আয়ু ছাড়া কিভাবে বাঁচবো?বলুন!”
প্রহরের এমন কথা শুনে আয়ুশ প্রহরের দিকে অবাক নেত্রে তাকিয়ে থাকে। প্রত্যুত্তর হিসেবে করে প্রশ্ন,
-“ তোমার আয়ু ছাড়া মানে…..
প্রহরের চোখে অশ্রুকণার ফোঁটা স্পষ্ট। আয়ুশের দু হাত আরও শক্ত করে ধরে আবেগপ্রবণ গলায় বলে উঠলো,
-“ আপনিই তো আমার আয়ু!আমার নিঃশ্বাস!আমার অক্সিজেন।আপনার কিছু হয়ে গেলে আমি কি করে বাঁচবো বলুন!”

আয়ুশ চকিত নয়নে প্রহরের দিকে তাকায়।এই মেয়েটা তাকে এতো এফোর্ট দেয় কেন!মেয়েটার প্রতিটা কথায় সে এমনভাবে মিশে থাকে,গল্পের আসল লেখিকা তুশিতা নুর তৃষ্ণা যেন সে শুধুই আয়ুশের!
নিজের আবেগকে সংবরণ করে আয়ুশ প্রহরের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলে,
-“ এমন বলছো কেন?আমার কী হবে?”
-“ আমি সব জেনে গিয়েছি।আমি জানি আপনি কি কাজ করেন।”
আয়ুশ প্রহরকে কিছু বলতে যাবে,তার আগেই প্রহর বলে উঠে,
“ আমাকে কিছু বলবেন না প্লিজ।আমি গতকাল ঘর গুছাতে গিয়ে আপনার কাপড়চোপড় ভাঁজ করতে যাই।তখনি শার্টের ভাঁজ থেকে একটা কাগজ বেরিয়ে আসে।যেটাতে আপনার জয়েনিং লেটার এর কপি ছিল।ওইটা দেখেই আমি বুঝে ফেলি।আমাকে ক্ষমা করে দিবেন প্লিজ।আমি জানতাম না ওইখানে আপনার গোপন তথ্য থাকবে!”
মাথা নিচু করে বলে প্রহর।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ ধুর বোকা!ক্ষমা চাইতে হবে কেন?দেখেছো,ভালোই হয়েছে।
আর হ্যাঁ,আমি জানি তুমি দেখে ফেলেছো।আসলে ওইদিন জয়েনিং লেটারের সাথে কিছু কাগজ কপি করিয়েছিলাম‌।একটা কাজে লাগতো।আমার সিক্রেট সবকিছু একটা লকারে রেখে দিলেও জয়েনিং লেটারের একটা কপি শার্টের ভাঁজে লুকিয়ে রেখে দিয়েছিলাম।আশা রেখেছিলাম,তুমি এটা দেখবে ,পড়বে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি পড়বে তা ভাবিনি।
গতকাল শার্টটা ধরার পর আমি বুঝে যাই,এটা কারো হাতে পড়েছে।কেননা,আমি শার্টটা উল্টো করে ভাঁজ করে রেখেছিলাম।আর যখন বাড়ি ফিরে শার্টটা দেখলাম,তখন দেখি ভাঁজটা সম্পুর্ন ঠিকঠাক।
তুমি যদি কি কাগজটা না দেখতে তবে আমিই তোমাকে জানাতাম।আজকের কাজটা শেষ হয়ে গেলেই সব খোলাসা করে বলতাম। কিন্তু তুমি তো জেনেই গেলে।”

আয়ুশের কথা শুনে প্রহর জিভ কাটলো। সত্যিই তো।গতকাল ওই শার্টটা থেকে কাগজটা পড়ার পর কাগজটা সুন্দর করে আগের মতো রাখলেও ভুলবশত শার্টটা ভাঁজ করে ফেলেছিল প্রহর গল্পের আসল লেখিকা তুশিতা নুর তৃষ্ণা তাইতো গতকাল আয়ুশ তাকে জিজ্ঞেস করেছিল,রুমে কেউ এসেছে কী না!গতকালের প্রশ্নের মানে এখন বুঝতে পারলো প্রহর।
মনে মনে নিজেকে বকা দিতে গিয়েও থেমে গেলো প্রহর।এখন আয়ুশকে থামাতে ইচ্ছে হচ্ছে তার ।তাই সে বললো,

“ আপনি যাবেন না প্লিজ।আমি জানি আপনি একজন তুখোড় ক্রাইম অফিসার। এইজন্য আপনাকে ক্রাইম স্পেশালিস্ট এর উচ্চপদে যোগদান করার লেটার দেওয়া হয়েছে।অন্যান্য অফিসাররা যেখানে অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে অ্যাকশন নেয়,সেখানে আপনি রিস্ক নিয়ে সরাসরি অ্যাকশন নেন।এটা কী ঠিক বলুন?আমি চাই না আপনি কোথাও যান।আমি চাইনা আপনি কোনো রিস্ক নিন।আপনার কোনো ক্ষতি হোক আমি চাই না।আপনাকে কোনো ঝুঁকিতে পা বাড়াতে দিতে চাইনা আমি।প্লিজ আপনি কোথাও যাবেন না।প্লিজ”
আকুতি ঝরে পড়লো প্রহরের কন্ঠে।
প্রহরের কথা শুনে আয়ুশ তপ্ত শ্বাস ফেললো।এমনটা হওয়ারই ছিল।যেকোনো মেয়েই তার স্বামীর এমন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে এরকম ব্যাবহার করবে স্বাভাবিক।কিন্তু প্রহরের আকুতিতে সে গললো না। সে চায়,তার প্রহর স্ট্রং হোক।নিজের মনকে নিজে শক্ত করুক।সে চায় তার প্রহর কোনো কষ্টসাধ্য সময়েও কঠিন থাকুক।তাই প্রহরের হাতের ভাঁজ থেকে নিজের হাত সরিয়ে বললো,

“ এমনটা কখনোই হবে না প্রহর।আমি আমার কাজ,আমার দ্বায়িত্ব থেকে কখনোই সরে যাবো না।যারা গোপনে অপরাধ করে,যে সকল অপরাধীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধ করেও নির্ভয়ে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে,আমি তাদের শাস্তি দিবো প্রহর। এদেশে আইনের থেকে অনেক অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়।আমি তাদের শাস্তি দিবো।নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার চেয়ে এমন রিস্ক নিয়ে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া ভুল কিছু নয় প্রহর।তাছাড়া আজকে আমি যেই জায়গায় যাবো,ওইখানে আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে।”
-“ আজ না গেলে হয় না?”
-“ একদম না।
-“ কি এমন কাজ আপনার যে এভাবে বলছেন।”

প্রহরের কথার জবাবে আয়ুশ বড় একটা নিঃশ্বাস নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে বললো,
-“ আজকের দিনটি,আজকের কাজটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রহর।ছোট থেকে যার প্রতি ঘৃণায় আমার বুক রি রি করতো,তাকে আজ আমি শা’স্তি দিতে যাবো প্রহর।আমার মায়ের সাথে হওয়া অন্যায়ের শাস্তি আমি তাদের দিবো।ছোট থেকে দেখা স্বপ্ন আজ বাস্তবায়ন করবো প্রহর।”
আয়ুশের কথা তেমন করে না বুঝলেও এতটুকু বুঝলো প্রহর যে,আজকে আয়ুশ খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছে। কিন্তু তাও…

প্রহর কেঁদে ফেললো।আয়ুশ প্রহরের ভেজা গালে দুই হাত রেখে চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,
-“ এমন করে বললে হবে প্রহর।জানো, এইজন্যই আমি বিয়ে করতে চাইনি কখনো। কিন্তু তোমার সাথে যখন আমার জুড়ি বাঁধলো তখন তোমাকেই আমি আমার করে নিয়েছি।আমি জানি তুমি খুব নরম মনের মেয়ে, কিন্তু তোমাকে এখন থেকে স্ট্রং হতে হবে প্রহর।যেকোনো পরিস্থিতিতে তোমার মনকে শক্ত রাখতে হবে।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী প্রহর।আমার অর্ধেক শক্তি,মনোবল তুমি।তুমি যদি নিজেকে ঠিক রাখতে পারো তাহলে দু’জনে মিলে হাজার পথ পাড়ি দিতে পারবো।তুমি কী আমায় আটকাবে প্রহর?

আয়ুর প্রহর পর্ব ১৭

আজকে না গেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।এতোবছর ধরে মনে মনে যা কল্পনা করেছিলাম,তা সত্যি হবে প্রহর।তুমি কী আমার পাশে থাকবে না?মনোবল হারিয়ে আমাকে কষ্ট দিবে প্রহর?”
প্রহর মাথা দুদিকে করে না বলে মাথা নাড়ালো।নিজের আয়ুকে কী কেউ কখনো কষ্ট পেতে দেয়।প্রহর তো তার আয়ুকে নিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে চায়।নিজের আয়ুকে কষ্ট দেওয়ার প্রশ্নই আসে না প্রহরের।তাই নিজের মনকে শক্ত করে সে আয়ুশ কে যেতে দিল।

আয়ুর প্রহর পর্ব ১৯