আলোর ভীড়ে পর্ব ৫

আলোর ভীড়ে পর্ব ৫
ইশরাত জাহান অধরা

“আমাকে আপনার ঠিক কি কারনে পছন্দ না সেটা কি বলবেন?আসলে বাসায় ফিরার সময় সারাটা রাস্তায় এই চিন্তাটা মাথায় ঘুরঘুর করেছে।ইভেন অফিসেও।”
ইনাম চুপ করে রইলো।এর উত্তর ওর কাছে নেই।থাকলেই না দিবে!ইনামকে চুপ করে থাকতে দেখে প্রিয়তা চোখ ছোটছোট করে বলল,

“আচ্ছা আপনি কি মেয়ে পছন্দ করেন না?ছেলে পছন্দ করেন?”
কিছু একটা ভেবেই মুখে হাত দিয়ে বলল,
“আপনি গে?অইযে এলজিবিটি! এই গ্রুপের সদস্য আপনি?”
ইনাম অবাক হয়ে গেল প্রিয়তার কথা শুনে।
“কিসব বলছো তুমি?মাথা ঠিক আছে তোমার?”
“আপনি গেও না আবার অন্য কোন মেয়েকে পছন্দও করেন না তাহলে আমাকে না পছন্দ করার কারন কি?”
“যেকারনই থাকুক না কেন মোট কথা তোমাকে আমার পছন্দ না।মা বাবার কারনে বিয়ে করেছি।”
বলেই ইনাম চলে গেলো।ইনামের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকল প্রিয়তা।ইনামের বলা কথাটা ওর মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

পরেরদিন সকালে,
নাস্তা শেষে ইনাম হাতে ঘড়ি দিতে দিতে বলল,
“আমার সাথে গাড়িতে করে যাবে।”
প্রিয়তা কথাটা শুনে বলল,
“লাগবে না। থ্যাংকস!আমি বাসে করে যেতে পারব।”
ইনাম প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার গাড়িতে করে গেলে তোমার কি প্রবলেম?আমি তো বলেছি অফিসের স্টাফরা দেখলে আমি ওদেরকে কৈফিয়ত দিব।”

প্রিয়তা দরজার সামনে গিয়ে জুতা পরতে পরতে বলল,
“তার আর দরকার হবে না। যেখানে আপনি আমাকে পছন্দই করেন না সেখানে অফিসের মানুষকে কৈফিয়ত কেন দিতে যাবেন?আমার বাসে করে যেতে কোন অসুবিধা হয়না।ছোটবেলা থেকে বাসে চড়ে এসেছি। এখন বরং গাড়িতে চললেই আমার অসুবিধা হবে।গেলাম আমি।আপনি দরজা লক করে গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করে তারপর অফিসে আসুন।”

প্রিয়তার উপর রাগ হলো ইনামের।এই মেয়ে এত ঘাড়ত্যাড়া কেন?একটা কথা বললে দশটা কথা শুনিয়ে দেয়!জুতা পরে টেবিলের উপর থেকে চাবির রিং নিয়ে দরজা লক করে বেরিয়ে গেলো।
প্রিয়তা বাসে উঠে একটা সিটও খালি পেলো না।অগত্যা না চাইতেও দাঁড়িয়ে থাকতে হলো ওকে।হঠাত ব্যাগে থাকা মোবাইল তীব্র শব্দে বেজে উঠতেই এক হাতে সামনে থাকা সিট ধরে অপর হাতে ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করতেই দেখল সেখানে “ফাবিহা” নামটা জ্বলজ্বল করছে।মুখে হাসি ফুটে উঠলো প্রিয়তার।ফোন কল রিসিভ করে প্রিয়তা বলল,

“আমি এখন অফিসে যাচ্ছি।বাসায় ফিরে তোর সাথে কথা হচ্ছে কেমন?”
কল কেটে ব্যাগে রাখতে যেতেই বাসের ব্রেকে প্রিয়তার হাতের বাধন ঢিলে হয়ে গেলো।প্রায় পরেই যাচ্ছিলো এমন সময় হঠাত কেও প্রিয়তার হাত ধরে ফেলল।প্রিয়তা দাঁড়িয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।আরেকটু হলেই পরে যেতো।সামনের লোকটার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে ফিরতেই মনে হলো ইনামকে দেখেছে সে।কিন্তু উনি বাসে কি করে আসবে?সিউর হওয়ার জন্য আবার ভ্রু কুঁচকে পাশে তাকাতেই মুখ হা হয়ে গেল প্রিয়তার। অবাক হয়ে দুই হাত মুখে চেপে ধরলো।ও কি সত্যিই ইনামকে দেখছে?

“সিট ধরো!নইলে আবার পরে যাবে।”
মুখ থেকে হাত সরিয়ে বলল,
“আপনি?এখানে কিভাবে?”
ইনাম বিরক্ত হয়ে বলল,
“তুমি যেভাবে এসেছো ঠিক সেভাবে!”
প্রিয়তা থতমত খেয়ে গেলো।আসলেই কি প্রশ্ন করেছে সে।মিনমিনিয়ে বলল,
“আমি এটা বলতে চাইনি!আপনি গাড়িতে করে না এসে বাসে কেন এসেছেন?”
“গাড়ির কি যেন হয়েছে।স্টার্ট নিচ্ছিলো না।আর সময়ও ছিলো না হাতে।তাই না চাইতেও বাসে উঠা লাগলো।”
“অহ আচ্ছা!”

কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল,
“আগে বাসে উঠেছিলেন?নাকি এটাই ফাস্ট?”
“বাসে উঠেছি এর আগেও।যখন দুরে যাওয়া লাগতো।তবে এমন ভীড়, লোকাল বাসে আজকেই ফাস্ট উঠেছি।”
“তো বাসে যাওয়ার ফিলিংস কেমন?”
“জগন্য।এই ভীড় বাসে যাও তুমি?ঠিক মতো দাঁড়ানোও যাচ্ছে না।বাসের ফাস্টের দিকে ছিলাম।ঢাক্কা খেতে খেতে বাসের লাস্টে এসে পরেছি!”

প্রিয়তা খেয়াল করে দেখলো আসলেই বাসের একদম পিছনে এসে পরেছে ওরা।ইনাম তো লাস্টের সিটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়তা আর কিছু না বলে সামনে তাকিয়ে রইলো।হঠাত খেয়াল করলো পাশে থাকা একটা ছেলে বারবার ইচ্ছা করে ওর গায়ে ঢলে পরছে।প্রথমে ভেবেছিলো হয়তবা এমনেই ভীড়ের কারনে ঢাক্কা খেয়ে গা লাগছে কিন্তু প্রিয়তা ভালো করে খেয়াল করতেই দেখলো ছেলেটার পাশে অনেক জায়গা খালি।বুঝতে বাকি রইলো না ছেলেটা ইচ্ছা করেই এমন করছে।রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“একটু সরে দাঁড়ান!অইপাশে তো খালি আছে!”
ছেলেটা পাশে তাকিয়ে না দেখার ভান করে বলল,
“কই?আমি তো কোন খালি দেখছি না!ফালতু কথা বলবেন না।”
“আপনি বারবার আমার গায়ে এসে পরছেন অইখানে খালি থাকা সত্যেও!”
“আপনি বেশি বুঝেন।বাসে উঠলে একটু ঢাক্কা ঢাক্কি হবেই।এই সত্যিটা না মানতে চাইলে গাড়ি নিয়ে যান।বাসে উঠার কি দরকার?”

প্রিয়তা রেগে উত্তরে কিছু বলতেই যাবে ইনাম থামিয়ে দিলো।
“আমার জায়গায় এসো। আমি তোমার জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছি।”
হাত টেনে প্রিয়তাকে নিজের জায়গায় নিয়ে দাঁড় করালো।ইনাম গেল অই ছেলেটার পাশে।ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটা ঢাক্কা দিয়ে কিছুটা দুরে ঠেলে দিয়ে বলল,
“এইবার খালি জায়গা দেখতে পাচ্ছেন?”

ইনামের কথা শুনে ছেলেটার মুখ শুকিয়ে গেলো।বাসের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে বলে লজ্জায়,অপমানে বাস থামিয়ে বাস থেকে নেমে গেলো।
“ঘাড়ত্যাড়ামি না করে ঠান্ডা মাথায় কিছু কিছু বিষয় সলভ করতে হয়।সব জায়গায় ঘাড়ত্যাড়ামি মানায় না।সবাই তো আর আমি না যে ত্যাড়া ত্যাড়া কথা শুনবে।”
সামনে তাকিয়ে ইনাম কথাটা বলল।কথাটা শুনে প্রিয়তা বলল,
“কথাটা কি আপনি আমাকে বললেন?”

“নাহ বাসের বাকি মানুষগুলাকে বলেছি। তুমি কি ঘাড়ত্যাড়া নাকি!”
প্রিয়তা উত্তরে কিছু বলতেই যাবে।ইনাম প্রিয়তার হাত ধরে বলল,
“অফিসের কাছাকাছি এসে পরেছি।নামতে হবে।”
ইনাম হাত ধরতেই প্রিয়তা স্তব্দ হয়ে গেলো।মুখ থেকে কোন কথা বের হচ্ছে না প্রিয়তার।চুপচাপ ইনামের সাথে বাস থেকে নেমে গেলো।ইনাম যখন খেয়াল করল সে প্রিয়তার হাত ধরে আছে তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে বলল,

“সরি!অফিসের লেট হয়ে যাচ্ছে চলো।”
“আপনি আগে যান!”
“কেন?”
“আপনার সাথে করে অফিসের ভেতর ঢুকলে সবাই খারাপ মনে করবে।”
“তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি এবার একটু বেশিই বারাবারি করছো?”
“না।আমি যা করছি ঠিকই করছি।”
ইনাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি।তুমি আগে যাও!”
“থ্যাংক ইউ!”

প্রিয়তা চেয়ারে বসে কাজ করছিলো।হঠাত এশা এসে পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
“ইনামের সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক? ”
প্রিয়তা অবাক হয়ে এশার দিকে তাকালো।কত্ত বড় সাহস ওর হাজবেন্ডকে নাম ধরে ডাকছে।যেখানে ও বউ হওয়া সত্তেও ইনামের নাম ধরে ডাকেনি!
“কি হলো কিছু বলছোনা কেন?”
প্রিয়তা এশার থেকে চোখ ফিরিয়ে কাজ করতে করতে বলল,
“বস আর স্টাফের সম্পর্ক!”

মনে হলো কথাটা শুনে এশা খুশি হয়েছে।তবুও জিজ্ঞেস করলো,
“তাহলে গতকাল ইনাম তোমাকে খাবার এনে দিলো কেন?”
“উনার সাথে ঢাক্কা লেগে আমার খাবার পরে গিয়েছিলো।তাই দায়িত্ববোধ থেকে এনে দিয়েছে।”
“ইনামকে ফাসানোর চেষ্টা করবা না!ওর থেকে ১০০ মাইল দুরে থাকবা।তোমাদের মতো মেয়েকে আমার চেনা আছে।বড়লোক কোন ছেলেকে ফাসাতে এক সেকেন্ডেও টাইম লাগে না!

” আপনার কথাটা মাথায় থাকবে।”
এশা হেসে বলল,
“গুড গার্ল!”
“আমার একটা প্রশ্ন আছে করতে পারি?”
এশা নিজের সিটে ফিরে যাচ্ছিলো।প্রিয়তার কথা শুনে থেমে পিছনে ফিরে বলল,
“কি প্রশ্ন?”

আলোর ভীড়ে পর্ব ৪

প্রিয়তা হাতে থাকা কাগজ টেবিলের উপর রেখে এশার দিকে ফিরে বলল,
“আমার জানামতে আপনিও আমার মতোই এই অফিসের স্টাফ।তাহলে একজন স্টাফ হয়ে বসের নাম ধরে কি করে ডাকছেন জানতে পারি?”

আলোর ভীড়ে পর্ব ৬