আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৩৫

আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৩৫
ইশরাত জাহান

ফারাজ তার কেবিনে যাওয়ার সময় শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”মিস শ্রেয়া আমার কাছে ফাইল নিয়ে আসুন।আর এই এক বছরে কি কি ডিল কমপ্লিট হয়েছে তার একটা লিস্ট আমাকে দিবেন।”
শ্রেয়া চলে গেলো নিজের কেবিনে।মুখ থেকে একটা কথাও বলেনি।এখন সে নিজের ব্যাবস্থা করেছে।এই চাকরি থাকলে থাকলো না থাকলে নাই।ফারাজকে পাত্তা দিবে না সে।শুধু এই সূচির বিয়ের জন্য অপেক্ষা।নিজের কেবিন থেকে ফাইল নিয়ে শ্রেয়া চলে যায় ফারাজের কেবিনে।ফারাজের সামনে বসতেই ফারাজ বলে,”তো মিস সূচির ব্রাইডাল ড্রেসের কালার কম্বিনেশন সম্পর্কে আপনার আইডিয়া কি?”

শ্রেয়া ফাইলের দিকে তাকিয়েই বলে,”মিস সূচি ডিফারেন্ট স্টাইলে বিয়ে করতে চায়।কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান একট্রেস সুরভী চান্দানার বিয়ের ভিডিও দেখেছে।বলা যায় ভাইরাল হয়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।যেটা মন কেড়েছে মিস সূচির।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফারাজ চিনলো না সুরভী চান্দানাকে।চলে গেলো গুগলে সার্চ দিতে।বড়সহ এক মহলের ভিতরে গান গাইতে গাইতে আসছে সুরভী চান্দানা আর সামনে তার বর দাড়িয়ে।আশেপাশে অহরহ মানুষজন আছে।ভিডিওটি দেখে ফারাজ বলে,”আম্বানির পরিবারের ভিডিও কয়েকদিন আগে ভাইরাল হয়েছিলো।ঐভাবে কেনো বিয়ে করতে চাইলো না।”
বিরক্ত হলো শ্রেয়া।ফারাজ যে খোচা মেরে বলছে এটা বুঝতে পারল।শ্রেয়া বলে,”এটা মিস সূচির পার্সোনাল চয়েজ।আমি কি জানি?”

“ওকে, বাট এই ড্রেস তো এখন আমাদের কোম্পানিতে অর্ডার দেওয়া সম্ভব না।গার্মেন্টস সাইটের লোকেরা তো আর কোনো প্লানিং ছাড়া এভাবে কাপড়ের ডিজাইন করতে পারবে না।আবার তো আছে টেইলর সাইট।”
“হুবহু এমন ড্রেস মিস সূচি চাননি।ওনার ইচ্ছা নুড কালারের লেহেঙ্গা সাথে পিংক কালারের জুয়েলারি সেট।”
“ডিজাইন রেডি আছে?”
“আমি কয়েকটা ডিজাইন করে রেখেছি।মিস সূচি এর মধ্যে তিনটি ড্রেস পছন্দ করেছেন কিন্তু আমাদের ওনাকে দিয়ে ট্রাই করানোর পর উনি মন্তব্য দিবেন।”

“ওকে।এই ডিল নিয়ে আপাতত কন্টিনিউ করা হোক আর হ্যাঁ এই এক বছরের একাউন্ট লিস্ট সহ আমাকে সবকিছু খুলে বলুন।”
“জি।”
একেক করে হিসাব দিতে থাকে শ্রেয়া।কিন্তু সে একবারও তাকালো না ফারাজের দিকে।অন্যদিকে এনি তার কাজ করছে।দ্রুততার সাথেই করছে।কারণ একটু পর এনি আর ফারাজ মিটিং করবে।কাপড়ের মান কেমন এই বিষয়ে এনি নিজেই ফারাজের সাথে কথা বলে নিবে।কাজ শেষ করে ফারাজের কেবিনে এসে দেখে শ্রেয়া আর ফারাজ কথা বলছে।ভিতরে না ঢুকে হাসি মুখে চলে আসলো এনি।

আয়নার সামনে এসে মাথা আঁচড়াতে শুরু করে অহনা।মাথায় চিরুনি দিতেই চিরুনি ভরে গেলো চুলে।মাথায় আবারও হাত দিয়ে একটু টানতেই চুলগুলো উঠে আসলো অহনার হাতে।এভাবে কিছুক্ষন করতে করতে অহনা একসময় ওখানেই কান্না করে দেয়।অহনার কান্নার শব্দে রুমে আসে মিসেস নাজমা।অহনাকে প্রশ্ন করে,”কি হয়েছে?”
অহনা তার মাথার চুলগুলো দেখিয়ে বলে,”পাপের ফল ভোগ করছি আমি।”

মিসেস নাজমা চোখ বন্ধ করে নেন।কয়েক ফোঁটা পানি পড়তে থাকে চোখ দিয়ে।প্রায় দেড় বছর ধরে অহনা আছে তার সাথে।এখন মেয়েটার দুর্দশা হতে চলেছে।কাছে থেকে যে মেয়েকে আদর স্নেহ দিয়ে পরিবর্তন করেছে আজ তার জীবনে অন্ধকার ছেয়ে গেছে।আল্লাহ হয়তো এই সময়ের অপেক্ষায় ছিলেন।তিনি ভালো মানুষদের একটু তাড়াতাড়ি নিয়ে যান।অহনার আগের কৃতকর্ম যেমন হোক না কেনো বর্তমানে সে ভালো মনের হয়েছে।তাড়াতাড়ি করে বাইরে আসে মিসেস নাজমা।ফোন হাতে নিয়ে কনটাক্টে ঢোকে।ডায়ালে লেখা আছে অহি।ওখানে কল করতে যাবে ঠিক তখনই মিসেস নাজমার হাত ধরে অহনা।মিসেস নাজমা কিছুটা ঘাবড়ে যান।অহনা বলে,”আমাকে যারা স্বীকৃতি দেয়নি তাদেরকে আমার এই দুর্দিন না জানালেই আমি খুশি হব।এই পৃথিবীতে অনেক কিছু আমি জন্ম থেকেই হারিয়েছি তো অনেক কিছু নিজ পায়ে ঠেলে হারিয়েছি।আর ফিরিয়ে আনতে চাই না সবকিছু।দয়া করে আমার জীবনে আমার অতীতকে আনবেন না।”

মিসেস নাজমা চোখের পানি মুছে বলেন,”তোমার মা জানেন তুমি আমার সাথে আছো অহনা।একমাত্র তোমার মায়ের অনুরোধেই আমি তোমাকে আমার কাছে রেখেছি।”
অবাক চোখে তাকালো অহনা।মিসেস নাজমা হালকা হেসে বলেন,”কি মনে করো তুমি আমাকে?আমি খুব উদার মনের মানুষ?হ্যাঁ আমি উদার হতে পারি কিন্তু বোকা না।তোমার মা আমার ছোটবেলার বান্ধবী।তোমাকে দেখে আমি চিনে ফেলি।পিরাতেই কল দেই তোমার মাকে।নিউজ আমিও দেখছি।সব জানি তোমার ব্যাপারে।তোমার মায়ের আর আমার আলাদা হওয়ার কাহিনী কি জানো?

আমাদের বিয়ে।আমার পারিবারিক অবস্থা উন্নত থাকায় আমার পড়াশোনা চলতে থাকে আর অহির বিয়ে দেওয়া হয় অল্প বয়সে।খুবই সাধারণ ঘরের মেয়ে অহি।মা বাবা নেই।ভাই ভাবী খেতে দিতো আবার দিতো না।কোনো রকমে নাইন পাশ করেই বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়ে।জোর করেই বিয়ে দেওয়া হয় তাকে।কত স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে চাকরি করবে।সবকিছু বিসর্জন দিয়ে এক টিনের ছাউনি থেকে বের হয়ে এলো পাকা দালানের বাড়িতে।ভেবেছিলো একটু সুখ হয়তো এখানে লেখা আছে।ভাগ্য খারাপ থাকলে যা হয়।ওই অল্প বয়সে দেখতে হয় সতীনের ছেলেকে।আমাদের যুগ সম্পর্কে যদি তোমার কোনো আইডিয়া থাকে তাহলে তুমি বুঝবে ওই সময় স্বামী মানে আমাদের কাছে অনেক কিছু।

স্বামী যেটা বলবে আমরা মুখ বুজে ওটাই মানতাম।অহির ক্ষেত্রেও তাই।বিয়ের পর পড়াশোনা করতে চাইলেও দায়িত্বে থাকে তূর্য।চারমাসের তুর্যকে কোলে পিঠে বড় করে অহি।তার বছর দুই কি তিন যায় তখন তুমি আসো।তোমাকে জন্ম দিতে সাপোর্ট করেনি কেউ।পেটের সন্তানকে মেরে ফেলতে পারেনি অহি।অনেক জায়গায় আশ্রয় চেয়েছিলো জাতে তোমাকে জন্ম দিয়ে সে আলাদা থাকতে পারে।ভাগ্য হতে দিলো না।একটা সার্টিফিকেট থাকলেও তোমাকে নিয়ে আলাদা চাকরি করতে পারতো।

ভিটেমাটি সব তো ভাই নিজের নামে করে রেখেছে।যে মেয়েটা কোনো দিক খুঁজে পায়না সে মুখ বুজে তোমার সুখের জন্য ওই বাড়িতেই থাকে।একটা সত্যি কথা কি জানো?তোমাকে নিয়ে যদি তোমার মা সবার সামনে মুখ খুলতো তোমার যে শান্তি স্বাধীনতা গেছে অতটুকুও পেতে না।এবার আসি তোমার দিকে।আমি জানি তুমি জীবনে অনেক কিছু সহ্য করেছো কিন্তু এতকিছুর বিনিময়ে তোমার মধ্যে কোনো শিক্ষাগত কিছুই অর্জন করোনি।বাকিদের কথা বাদ দিলাম বিয়ের পর নিজের জীবনকে পাল্টাতে পারতে।

নিজের সন্তানকে একটাবার নিজের কোলে নিয়ে পৃথিবী ঘুরে দেখতে।মিমি তো তোমার গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে।কেনো পারলে না নিজ সন্তানকে নিয়ে সবার সামনে সুখে সংসার করতে।তুমি যদি একটাবার ওই স্বামী সন্তানের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে তাহলে আজ তুমি রানীর হালে থাকতে।অস্বীকার করতে পারবে না যে ফারাজ তোমাকে কোনো কমতি দিয়েছে।বরং আমি বলতে পারি আমরা স্বামীদের থেকে যতটুকু অর্জন করেছি ফারাজ না চাইতেও তোমাকে ততটুকু দিয়েছে।বরং তার থেকেও বেশি দিয়েছে।জীবনের কিছু অংশ তুমি ভাগ্যক্রমে হারালেও বাকি অংশ তুমি নিজের কারণে হারিয়েছো।এগুলোর জন্য তুমি নিজেই দায়ী।”

অহনা কোনো কথা বলেনা।এগুলো সবই সত্যি।সে পারেনি তার স্বামীকে ভালোবাসতে সে পারেনি তার সন্তানকে আগলে রাখতে।বরং সে তার শান্তির জন্য ব্যবহার করেছে ফারাজকে।অনেক মারধর করেছে মিমিকে।কান্না করতে করতে ঘর থেকে বের হলো অহনা।মিসেস নাজমা আর কল করলেন না অহিকে।দেখা যাক অহনা কি বলে।অহনার বিষয়ে জানাতে চাইলেও একদিক ভেবে তিনি থেমে যান।

রাতে ফারহান চৌধুরী তার দুই ছেলেকে এক ঘরে ডাকলেন।এখন তিনজনে মিলে কথা বলছেন।ফারহান চৌধুরী কিছুক্ষণ ভিন্ন কথা বলে তারপর ফারাজকে প্রশ্ন করেন,”শ্রেয়াকে নিয়ে কি ভাবলে তুমি?”
ফারাজের সোজা উত্তর,”জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু করতে আমি প্রস্তুত বাবা।আমি রিয়েলাইজ করেছি আমাকেও মুভ অন করতে হবে।”

ফারহান চৌধুরী খুশি হলেন।মিরাজ বুঝতে পেরেও বলে,”কি বললে বুঝিনি।একটু সোজাভাবে কথা বলো।”
“আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে রাজি।”
“মানে তুমি তোমার জীবনে দ্বিতীয় নারী আনতে চাও।”
“হ্যাঁ।”
“দেখেছো বাবা?তোমার বড় ছেলের এক মুখে কত কথা।একবার বলে বিয়ে করব না এখন আবার বলে বিয়ে করব।একবার বলে জীবনে কোনো দ্বিতীয় নারীর স্থান নেই এখন বলে দ্বিতীয় নারীর স্থান আছে।কয়দিন পর কি কি বলে কে জানে?”

“একটু বেশি বুঝিস তুই?”
“তুমি যেমনটা বুঝতে দেও তেমনটাই বুঝি আমি।”
দুই ছেলের সাথে কথা বলে হাসিমুখে ফারহান চৌধুরী কল করলেন সৃষ্টি বেগমকে।খুলে বললেন সবকিছু।সাথে এটাও বলেছে শ্রেয়াকে এখন কিছু না বলতে।শ্রেয়াকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।ভালোবাসার মানুষকে পেতে চলেছে এটা একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করবে শ্রেয়ার কাছে।সৃষ্টি বেগম এটা শুনে খুশি।এতদিনে তিনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন মেয়ে তার ভালোবেসেছে।ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে দিলে সুখে সংসার করতে পারবে।সকালে শ্রেয়া রেডি হচ্ছে এমন সময় সৃষ্টি বেগম এসে বলেন,”তোর জন্য একটা সম্বন্ধ এসেছে।”

হিজাব বাঁধছিলো শ্রেয়া।মায়ের কথা শুনে হাত থেমে গেলো।সৃষ্টি বেগমের দিকে ঘুরে বলে,”আমি এখন বিয়ে করতে চাই না মা।আমি যেমন আছি ভালো আছি।”
শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে হিজবটা নিজে নিয়ে শ্রেয়াকে বেধে দেয়। রিমলি এখন কলেজে।যদি এখানে থাকতো শ্রেয়াকে খেপাতে থাকতো।সৃষ্টি বেগম বলেন,”ছেলেটা অনেক ভালো।আমাদের প্রতিবেশী।এই তো বাড়ি থেকে কয়েক কদম পা রাখলেই তার বাসা।আমি কয়েকবার তার সাথে কথা বলেছি।অমায়িক ব্যাবহার মা।আমি এবার খুব ভালোভাবে দেখেছি বাকিটা আল্লাহর হাতে কিন্তু আমার মনে হয় তুই রানীর মত থাকবি।”

শ্রেয়ার দম বন্ধ অবস্থা হয়ে আসছে।মনে একজনকে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার বাধার স্বপ্ন কোনো মানব মানবী করতে পারে না।ওটাকে সংসার না ওটাকে বলা হয় দায়িত্বের ভার।যেখানে নিয়তি সেখানে নিজেকে বাঁধিয়ে রাখা।কিন্তু যাকে ভালোবাসা হয় যার সাথে প্রতিটা মুহূর্ত কাটানোর আগ্রহ জাগে ওটাতে দায়িত্বের ভার বহন করতে হয় না।দায়িত্ব নিজ কাধে নিয়ে খুশিতে দিন পার করা যায়।কথা এড়াতে শ্রেয়া বলে,”আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে মা।আমি আসি এখন।আল্লাহ হাফেজ।”

সৃষ্টি বেগম খুব ভালোভাবেই বুঝলেন শ্রেয়া কথা এড়িয়ে চলল।সূচি এসেছে ওর হবু বরকে নিয়ে।ড্রেসগুলো ট্রাই করে শ্রেয়া ও এনির প্রশংসা করেছে খুব।এই এক বছরে অফিসে শ্রেয়া নিজের কনফিডেন্ট নিয়ে অনেক কাজ করেছে।এখন মাথা উচু করে কথা বলে সবার সামনে।

সূচির প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছে সবাই।আজ সূচির বিয়ে।চৌধুরী পরিবারের সবাই উপস্থিত।অর্পা এসেছে কিন্তু ওর মুখ ভার।কয়েকবার কনসিভ করার পরও দুই তিন মাসের মাথায় মিসকারেস হয়ে যায়।ডাক্তার দেখালেও কাজ হচ্ছে না।মিরাজ অনেক শান্তনা দিয়েছে কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়ার জন্য অর্পা ব্যাকুল।শ্রেয়া বসে আছে অর্পার হাত ধরে।অর্পাকে অনেক কিছুই বলতে থাকে।এক পর্যায়ে এসে অর্পার মন ভালো হয়।মিরাজের মতো স্বামী পেয়ে অর্পা সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী ভাবে আবার বান্ধবী হিসেবে শ্রেয়া।এরা অর্পাকে মানসিক শান্তি দেয়।

জিনিয়া এসেছিলেন অর্পার কাছে।এসে মিমিকে দিয়ে বলে,”নিজে তো নাতি নাতনি দেখালে না এখন আমার এই নাতনিকে দেখে রাখো।আমি একটু ওদিকে যাচ্ছি।”
অর্পা কষ্ট পেলেও কিছু না বলে মিমির হাত ধরে।যাওয়ার সময় শ্রেয়ার দিকে তাকালো।শ্রেয়াকে দেখে বলে,”নিজে তো মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির আবার বান্ধবীটাও তেমন।আমার ছেলে যে কিভাবে এদের পছন্দ করে কে জানে?”
বলেই মুখ ঘুরিয়ে যেতে নেয় শ্রেয়া বলে,”এক মিনিট আন্টি।”

থেমে যায় জিনিয়া।দূরে দাঁড়িয়ে দেখছে ফারাজ।শ্রেয়া এবার জিনিয়ার সামনে এসে বলে,”মিডিল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে তো আমি।আপনার গায়ে এত জ্বালা কিসের?আমি তো আপনার কাছে হাত পেতে দু বেলা খেতে যাই না।নিজের যোগ্যতায় চলছি।দয়া করে আমার ফ্যামিলি স্ট্যান্ডারের জন্য আপনি নিজে মানসিক কষ্ট নিবেন না আন্টি।আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর।”

কথাগুলো কড়াভাবে বললেও শ্রেয়ার চোখেমুখে হাসির রেখা দেখা যায়।শ্রেয়া আবারও বলে,”আমার বান্ধবী কিন্তু আপনার ছেলেকে বিয়ে করত না।একমাত্র ভাইয়া অর্পাকে ভালোবাসে তাই এই বিয়েটা হয়।নতুন করে বলতে হবে না নিশ্চয়ই কিভাবে বিয়ের সূচনা ঘটে?আন্টি একটা মেয়ে তার পরিবার ছেড়ে শশুড় বাড়িতে আসে সংসার করতে।দুই পরিবারের স্ট্যাটাস দেখাতে না।কিছু বলার হলে আপনার ছেলেকে বলুন।উনি বিয়ে করে এনেছে আপনার বাড়ির বউমাকে।আপনার বউমা জোর করে আসেনি যে পদে পদে কথা শোনাবেন ওকে।হার্ট হলে ক্ষমা করবেন কিন্তু আমি আপনার কাছে এই বিষয়ে ক্ষমা চাইছি না।কারণ আমরা ছোটরাও আপনাদের থেকে কিছু শিখে থাকি।আপনাদের বড়দের জানা উচিত আমাদের একটা মন আছে।এই মন নিয়ে প্রতি নিয়ত খেলা করার অধিকার আপনাদের নেই।সুযোগ পেলেই এত কথা শুনিয়ে দেওয়ার অধিকার আপনারা রাখেন না।”

রক্তচক্ষু নিয়ে চলে যায় জিনিয়া।কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে ফারাজ।ওখানে ফারহান চৌধুরী ও মিরাজ ছিলো।মিরাজ এগিয়ে আসতে চেয়েছিল জিনিয়াকে কিছু শোনাবে বলে কিন্তু ফারাজ আটকে দেয়।শ্রেয়ার মুখে এমন কথা শুনে দুষ্টু হেসে ফারহান চৌধুরীকে মিরাজ বলে,”তোমার হবু বউমা তো তোমার বউকে কথা শুনিয়ে দিলো বাবা।এতবড় অপমানের পরও কি বাড়ির বড় বউ হতে পারবে শ্রেয়া?”

“তোমার ভাই ভালো জানে।তবে এতটুকু কথা শ্রেয়া শোনাতেই পারে।একদিকে ইট মারবে আর পাটকেল ফেরত আসবে না এমনটা তো হবে না।ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে।আর তোমাকে বলি।একটু তাড়াতাড়ি বিয়েটা করো।বয়স তো দিনদিন বেড়েই চলেছে।”
শেষের কথাটি ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে।সূচির বিয়ে শেষ করে যে যার বাসায় চলে আসে।ফারাজ কিছু একটা ভেবে ফেইসবুকে পোস্ট করে,”গট ম্যারিড সুন।”

পোস্টে ইতিমধ্যে অহরহ লাইক কমেন্ট চলে এসেছে।অর্পা নিজেও লিখছে,”বেস্ট অফ লাক বড়ভাই।”
সবাই লাভ লাইক কেয়ার দিলে রাগে ফুঁসতে থাকে শ্রেয়া ও সিনথিয়া।শ্রেয়া মনে করে ওই সিনথিয়াকে বিয়ে করবে ফারাজ আর সিনথিয়া জানে শ্রেয়াকে বিয়ে করতে চায় ফারাজ।শ্রেয়া পোস্ট দেখে সৃষ্টি বেগমের কাছে এসে বলে,”তুমি যে প্রতিবেশীকে দেখেছিলে।তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করো।দুই একের মধ্যে বিয়ে করতে চাই আমি।”

“ছেলে পক্ষকে কাল আসতে বলি?তোরা একে অপরের সাথে কথা বল।”
“কোনো দরকার নেই মা।কাল আমার পেস্ট্রি হাউজে একটা বড় অর্ডার আছে।ওখানেই মিনি বার্থডে অ্যারেঞ্জ করা হবে।আর আমি ডিভোর্সী নারী।এখন বসে বসে রূপ দেখে বিয়ে করব না।যেটা ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় ওটা তো তুমি দেখেছো।আমার তাতেই হবে।যেহেতু প্রতিবেশী তাহলে ভালোই হবে।এট লিস্ট আমার পেস্ট্রি হাউজে তো আমি রেগুলার আসতে পারবো।”

আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৩৪

“চাকরি করবি না?”
“না,চাকরি ছেড়ে দিবো।ওদিকেই আমি আর যাবো না।”
মুচকি হেসে সৃষ্টি বেগম বলেন,”আচ্ছা।”

আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৩৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here