আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৪০

আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৪০
ইশরাত জাহান

মিমিকে নিয়ে মিসেস নাজমার বাসায় এলো অহি।মিমি অহির হাত ধরে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো।চারপাশ দেখছে।তাদের বাসার মতোই এই বাড়িটি।অহি জোরে ডাক দিলো,”অহনা তোর মেয়ে এসেছে।”

রান্নাঘরে মিমির পছন্দের খাবার রান্না করতে থাকে অহনা।সকালেই জানতে পারলো মিমি কি কি খেতে ভালোবাসে।মাথায় কাপড় দিয়ে বাইরে এসে দাড়ালো অহনা।মেয়েকে দেখে ঠোঁট প্রসারিত করে দুই হাত মেলে কোল পেতে মিমিকে আহ্বান দিলো।মিমি একবার অহনাকে দেখছে আবার অহিকে দেখছে।অহির ইশারা পেতেই অহনার কোলে দৌড়ে চলে যায় মিমি।অহনার কলিজায় শান্তি মেলে।অহি চোখের পানি মুছতে থাকে।অহনা মিমির দুই গালে হাত রেখে বলে,”আমাকে ভয় করছে কি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিমি উত্তর দেয় না।অহনা মিমির দুই গালে চুমু দেয়।আপনমনে মিমির চোখ ভিজে আসে।অহনা চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,”তোমার মাম্মি এখন আর তোমাকে বকবে না।অনেক ভালোবাসবে তোমাকে।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ,সত্যি।”
“তাহলে আমিও তোমাকে ভালোবাসবো।”
হেসে দিলো অহনা।সুখের হাসি হাসতে থাকে।মিমিকে বলে,”নানুর সাথে মাঝে মাঝে আমার কাছে আসবে তো মাম্মি?”

“পাপা জানলে রাগ করবে তো।”
“পাপাকে বলবে না।তুমি এসে একটু থেকেই আবার চলে যাবে।”
“আচ্ছা,তাহলে আসবো।”
মা মেয়ের আজ মিলন হলো।অহনা মন ভরে আদর করছে মিমিকে।মিমি তার মায়ের ভালোবাসা অবশেষে পেলো।শুধু আফসোস যখন মমতার স্নেহের আশায় মিমি হাত বাড়িয়েছিলো তখন মিমি শূন্যতা নিয়ে ফিরেছিল এখন এতদিন পর মমতার হাত ফিরে পেলো।

লাঞ্চ করে অফিসে আসলো ফারাজ ও শ্রেয়া।আজকে অফিসে কাজ নেই।ফারাজের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে হয়েছে সবাই জানে।এখন সবাই মিলে একসাথে কেক এনেছে।ফারাজ ও শ্রেয়ার জন্য।একসাথে কেক কেটে সবাই এখন আনন্দ করছে।ফারাজ তার কেবিনে এসে বসেছে মাত্র।শ্রেয়া ফারাজের কেবিনে এসে দুটো ফাইল দেখাতে থাকে।ফারাজ ফাইলদুটো বন্ধ করে পাশে রেখে বলে,”আজ কাজ করতে হবে না।কাল থেকে সবাই কাজ করতে শুরু করবো।আজকে সবাই আনন্দ করতে চায় সুতরাং আনন্দ করুন।”

শ্রেয়া ভাবছে এখন একটু বাইরে যাবে।দেখতে চায় সূর্য কোনদিকে আছে। ফারাজকে বলে,”ওকে।”
শ্রেয়া চলে যেতে নিলে ফারাজ পিছন থেকে বলে,”একটা কথা ছিলো।”
“জি বলুন।”
“রিমলির বিষয়ে।”
ভ্রুকুটি করে শ্রেয়া বলে,”কি হয়েছে ওর?”
“আসলে আমার খালাতো ভাই শিহাব ওকে পছন্দ করে।আমার খালামণি এই সম্পর্ককে সম্মান জানিয়েছে।বাকিটা আপনাদের হাতে।”

শ্রেয়া খুশি হলো।বলে,”আম্মুকে একটু কল করে বলি?”
“শিওর।”
শ্রেয়া কল দিয়ে কথা বলল সৃষ্টি বেগমের সাথে।সৃষ্টি বেগম খুশিতে বলে ওঠেন,”বাড়ির কাছে দুই মেয়ে থাকবে।আমি হীরের টুকরোদের পেয়ে না করবো কেনো?আমার তো বেশ ভালো লাগে শিহাবকে।তোর বোন কি বলে শুনি।”
“ওর থেকে শুনে আমাকে জানিয়ে দিও।”

কথা শেষ করে শ্রেয়া তাকালো ফারাজের দিকে।বলে,”আম্মু রাজি।তবে রিমলি কি চায় এটাও তো দেখতে হবে।”
“হ্যাঁ,ও পড়াশোনা করতে চাইলে ওকে ওই সুযোগ করতে দেওয়া উচিত।বিদ্যার চেয়ে মূল্যবান সম্পদ কিছুই না।”
“এলো আমার বিদ্যাসাগর!আমার বোন বই পড়ুয়া না উপন্যাস পড়ুয়া।বিয়ের কথা শুনলে হয়তো লাফাতে লাফাতে নাচতে থাকবে এখন।”(বিড়বিড় করে বলে শ্রেয়া।)
ভ্রুকুটি করে ফারাজ বলে,”কি বললেন?”
“বলছিলাম হুম।দেখা যাক কি রেসপন্স আসে।”

ওদের কথার মাঝে এনি আসে কেবিনে।শেষে ফারাজের বললেন কথাটি এনির কর্ণপাত হয়।এসেই বলে,”ওহহো হ্যান্ডসাম!বউকে কেউ আপনি করে বলে?তুমি করে বলো।”
“এত তাড়াতাড়ি?”
“তো তুমি কি চাও বিয়ের মতো এখন তুমি বলার জন্য আরো একটা বছর বিদেশে পারি দিতে?”
হেসে দিলো শ্রেয়া।ফারাজ চোখ ছোট ছোট করে দেখছে।শ্রেয়ার হাসিকে লজ্জাতে পরিণত করতে ফারাজ বলে,”ফাইলগুলো নিয়ে যাও।আর এখন কাজ করতে হবে না। কাল তো বিয়ে করেছি।আজ নাহয় ইনজয় করলাম,শ্রেয়াময়ী।”

অবাক হয়ে তাকালো শ্রেয়া।এনি মিটিমিটি হাসতে থাকে।শ্রেয়া লজ্জা মাখা মুখ নত করে আছে।এনি শ্রেয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,”হ্যান্ডসামকে হারানো এতটা সহজ নয় শেহনাজ।”
চলে গেলো শ্রেয়া।সবার সাথে গল্প করতে থাকে।সৃষ্টি বেগম এলেন রিমলির কাছে। রিমলিকে জানালেন শিহাবের কথা।সাথে রিমলির মতামত জানতে চান।রিমলি মুচকি হেসে বলে,”তোমরা যা চাও তাই হবে।”
“শিহাবকে তোর পছন্দ না?”
“অপছন্দও না আম্মু।”

মেয়ের কথার মাঝে প্রকাশ পেলো বিয়েতে সে রাজি।আর রাজি হবে না কেনো?রিমলি তার মায়ের কাছে থাকতে পারবে দোকান দেখতে পারবে আবার নিজের মনের মানুষকে বিয়ে করে সংসারটাও করতে পারবে।এই সুযোগ তো আর বারবার আসবে না।শ্রেয়াকে কল করে জানিয়ে দিলেন সৃষ্টি বেগম।গাড়িতে উঠে ফারাজ ড্রাইভ করে আর পাশে বসেছিলো শ্রেয়া।ফারাজকে বলে,”বোন অমত করেনি।”
অবাক হয়ে ফারাজ বলে,”একবারও বলেনি যে পড়াশোনা করতে চাই?”

“ও আবার চাইবে পড়াশোনা করতে!”(বিড়বিড় করে)
“কি বললে?”
“কিছু না।পড়াশোনা তো বিয়ের পরও করতে পারবে।শিহাব ছেলে হিসেবে তো ভালো।একসাথে এক বাসায় এক বছর থেকেছি আমরা।খারাপ কিছু তো চোখে বাদেনি যে না বলে দিবে।আর আমার বোনের কোনো আলাদা চয়েজ নেই।”
“ওকে।”
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।অহি এখন মিমিকে নিয়ে যেতে চায়।অহনার কাছে এসে বলে,”তুইও চল ওই বাড়িতে।”
“না মা।আমি যেতে চাই না ওই বাড়িতে।”
মিমি অহনার হাত ধরে বলে,”কেনো যেতে চাও না মাম্মি?তুমি আমার সাথে থাকবে।”

অহনা এবার মিসেস নাজমার কাছে এসে দাড়ালো।মিসেস নাজমা অহনার হাত ধরে নিলেন।আলতো হেসে অহনা বলে,”একটা জিনিষ লক্ষ্য করেছো মা?আমার আর আমার মেয়ের ভাগ্যটা কেমন যেন একই রকম।আমিও জন্ম থেকে মমতা পাইনি আমার মেয়েটাও পায়নি।আমিও অল্প কিছুদিনের জন্য মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি আমার মেয়েটাও তার মায়ের ভালোবাসা অল্পদিনে পেতে চলেছে।

আবার আমরা মায়ের ভালোবাসা না পেলেও মাতৃত্বের স্বাদ দেওয়ার মতো আরেক মায়ের ভালোবাসা ঠিকই পাচ্ছি।আমি পাচ্ছি নাজমা আন্টির থেকে আর মিমি পেলো নতুন মায়ের থেকে।আমি যতই ওই বাড়িতে যাই আমার মন তো এই মাকে চাইবে।আর মিমি তখন ওর নতুন মাকে বেশি চাইবে।জন্ম দিলেই হয়না।মায়ের ভালোবাসার অনুভূতি মনের মধ্যে আনতে হয়।যেটা মিমির মধ্যে অন্য কারো জন্য এসেছে এদিকে আমার মনের মধ্যেও নাজমা আন্টির জন্য।আমি পারবো না নাজমা আন্টিকে ছেড়ে যেতে আবার নাজমা আন্টিও পারবে না আমাকে ছেড়ে থাকতে।তেমনই মিমি পারবে না শ্রেয়াকে ছেড়ে থাকতে আর শ্রেয়া পারবে না মিমিকে ছেড়ে থাকতে।”

অহনার কথার বিপরীতে কিছুই বলতে পারলো না অহি।কথাগুলো ভুল বলেনি অহনা।অহনা বলে,”তোমরা শুধু আমাকে একটু দেখা দিতে এসো মা।আমি তোমাদের এই ভালোবাসা পেতে চাই শুধু।”
অহি এসে অহনাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আসবো মা।এবার থেকে আমি আসবো তোর কাছে।”
অহনার মাথায় হাত বোলাতেই মাথা ওড়না পড়ে যায়।অহি অবাক হয়ে বলে,”এ কি!তুই টাক কেনো?”
অহনা আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না।দৌড়ে ঘরে চলে গেলো।মিসেস নাজমা সবকিছু খুলে বললেন।অহি মুখে হাত দিয়ে কান্না করে দিলো।মিমি নিজেও এখন কান্না করছে।অহি অহনার কাছে যেতে চাইলে মিসেস নাজমা বাধা দিয়ে বলেন,”ওকে একটু আলাদা থাকতে দে। কাল আবার আসিস।”

“আচ্ছা।”
অহনাকে এখন কিছু বললে ও আরো বেশি কান্না করে দিবে।এই অবস্থায় এত প্রেশার দেওয়া উচিত না।একা থাকলে মন খুলে কান্না করেও নিমিষেই থেমে যায় কিন্তু পাশে কেউ থাকলে কান্নার পরিমাণ যেনো বেড়েই যায়।
মিমি আর অহি বাড়িতে আসতেই ফারাজ বলে,”কেমন ঘুরলে আজ সারাদিন।”
মিমি উত্তর দিচ্ছে না।অহি বলে,”অনেক মজা করেছি আজ আমরা।”

ফারাজ তাকিয়ে আছে মিমির দিকে।মিমির কোনো উত্তর নেই।ফারাজ এসে মিমির দুই বাহু ধরে ঝুঁকে বসে।বলে,”পাপাকে কখনো মিথ্যা বলেনি আমার মেয়েটা।আজও কি মিথ্যা কথা বলবে?”
মিমি চোখ তুলে তাকালো ফারাজের দিকে।ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত বানিয়ে এনেছে শ্রেয়া। ফারাজের এমন কথা শুনে ট্রে সহ ওখানেই দাড়িয়ে আছে।মিমি একবার অহির দিকে তাকাচ্ছে আবার ফারাজের দিকে।ফারাজ কোনো উত্তর না পেয়ে বলে,”পাপাকে মিমি কখন বেশি হার্ট করতে পারে জানো?”

মুখ খুলল মিমি।বলে,”কখন?”
“যখন মিমি তার পাপার থেকে সত্যিটা লুকিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয়।”
মিমি ভয় পেলো।ফারাজ বলে,”আজ সারাদিন কার সাথে ছিলে মা?”
মিমি তাকালো ফারাজ আর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রেয়ার দিকে।ফারাজ বলে,”পাপা কখনও তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করে না মা।তুমি যেটা চাও তোমার ভালোর জন্য আমি সেটা এনে দেই।আজও না করব না।তুমি শুধু একবার বলো কোথায় ছিলে তুমি?”

অহি আঁচল চেপে ধরলো।মিমি বলে দেয়,”মাম্মির কাছে গিয়েছিলাম।”
পাশেই দাড়িয়ে ছিল জিনিয়া।তেড়ে আসতে নেয় সে।ফারাজ বাম হাত দেখিয়ে ওখানেই থামিয়ে দিলো।মুখে হাসির রেখা দেখা দিলো।কিন্তু এই হাসি সুখের না আবার দুঃখেরও না।ফারাজ কিছু না বলে উঠে দাড়ায়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বলে,”সন্তান তার মায়ের কাছে ভালোবাসা আদান প্রদান করতে যেতেই পারে কিন্তু আমাকে মিথ্যা বলার প্রয়োজন ছিলোনা।এতে করে নিজের মধ্যে থাকা আস্থাটাও কবর দিতে ইচ্ছা হয়।”
মিমির কাছে এসব শক্ত কথার মানে প্রকাশ পায় না।শুধু বুঝলো ফারাজ কষ্ট পেয়েছে তবে তাকে অহনার সাথে দেখা করার সুযোগ দিয়েছে।

ঘর থেকে হয়তো কিছু একটা নিতে গিয়েছিল ফারাজ।তাইতো দুই মিনিট থেকেই বের হয়ে আসে।শ্রেয়া লক্ষ্য করলো ফারাজের হাতে চাবি ওটা পকেটে ঢুকিয়ে নিচে নামছে।চোখমুখ লাল হয়ে আছে।কোনোদিকে না তাকিয়ে ফারাজ চলে গেলো সদর দরজার বাইরে।শ্রেয়া শরবত টেবিলের উপর রেখে অহিকে বলে,”আপনি আর মিমি শরবত নিন।বাইরে থেকে এসেছেন।আমি যাচ্ছি একটু।”
বলেই দৌড়ে চলে যায় শ্রেয়া।বেশ দূরে থাকতে জোড়ে চিল্লিয়ে বলে,”কোথায় যাচ্ছেন আপনি?”
কোনো উত্তর মেলে না।নির্বাক হয়ে আছে।

ফারাজ গাড়ি নিয়ে চলে যায়।শ্রেয়া দৌড়াতে থাকে।কল করে ফারাজকে।রিসিভ করে না ফারাজ।শ্রেয়ার চিন্তা বাড়তে থাকে। ফারাজকে আজ বড্ড বিষন্ন লাগছে।হয়তো মেয়ের এই মিথ্যার আশ্রয় নেওয়াটা বাবা হিসেবে মেনে নিতে পারেনি।ফারাজ যে পরিমাণ কষ্ট করেছে শেষে এসে মেয়েকেই নিজের অস্তিত্ব করে নিয়েছে।আজ মেয়েটাও তার থেকে কিছু আড়াল করলো।কষ্ট হচ্ছে ফারাজের।শ্রেয়া কল করতে করতে রাস্তায় গাড়ি খুঁজতে লাগলো।কোনো গাড়ি না পাওয়ায় রাস্তার পাশ দিয়ে দৌড়াতে থাকে।মেইন রোডে এসে গাড়ি নিবে।মেইন রোডের উপরে এসে গাড়ি ধরার জন্য রাস্তা পার হবে তখনই শ্রেয়া পিছন থেকে মিমির ডাক শুনলো।মিমি জোরে জোরে বলে,”মাম্মাম।”

শ্রেয়া থেমে যায়।পিছনে ঘুরে দেখে মিমি দৌড়ে আসছে আর বলে,”আমি আর পাপাকে মিথ্যা বলবো না।আমি কিছু লুকাবো না। পাপাকে আসতে বলো মাম্মাম।”
মিমির পিছনে অহি নিজেও দৌড়াচ্ছে।মিমিকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অহি ব্যার্থ।মিমি কষ্টে আছে।ফারাজ তার উপর অভিমান করে চলে গেছে কোথাও।মিমি একেকটা কথা বলে চিল্লাতে থাকে শ্রেয়া আবারও পিছনে ঘুরে রাস্তা পার হতে নিবে একটি অটোর সাথে ধাক্কা লেগে পাশে থাকা খাম্বার সাথে মাথায় বাড়ি খায়।ছিটকে নিচে পড়ে যায় শ্রেয়া।শ্রেয়ার ডান হাতের উপর দিয়ে অটোর চাকা চলে যায়।

মিমি এটা দেখে ওখানে দাড়িয়ে পড়ে।অহি কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেলেও আবারও দৌড়ে যায় শ্রেয়ার কাছে।ফাঁকা রাস্তায় এখন লোকজনে ভরে গেলো।মিমির হাত ধরে অহি দৌড়ে এলো শ্রেয়ার কাছে।শ্রেয়া অজ্ঞান হয়ে আছে।মেয়েটা স্বামীর চিন্তায় বের হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হলো। অটোয়ালাকে ধরে লোকজন মারতে থাকে।রাতের বেলা এরা নেশা করে রাস্তায় বের হয়।প্রায় মানুষের দুর্ঘটনা ঘটে।

আজ যেমন শ্রেয়ার হলো।অহি কল করে বলে অর্পাকে।অর্পা আর মিরাজ বাজারে গিয়েছিল।ওরা এসেই উপরে চলে যায় তখন ফারাজ বাইরে চলে যায়।তাই অর্পা বা মিরাজ এই সম্পর্কে অবগত না।অর্পা শ্রেয়ার এক্সিডেন্টার কথা শুনেই মিরাজের সাথে গাড়ি করে বের হলো।মিরাজ আর অর্পা এসে শ্রেয়াকে নিয়ে হাসপাতালে গেলো।বারবার কল করছে ফারাজকে।নদীর পাড়ে এসে বসে আছে ফারাজ।একা একা সময় কাটাতে চায়।কোনো শান্তনা বাণী এখন তার চাই না।কিন্তু সে জানেই না তার জন্য এতগুলো মানুষ চিন্তা করে রাস্তায় নেমেছিল।তার মস্তিষ্কে নেই তাকেও কেউ ভালোবাসে।

মিরাজ একটি ম্যাসেস দিয়ে হাসপাতালের বাকি কাজ করতে থাকে।আজ জিনিয়া নিজেও এসেছে শ্রেয়াকে দেখতে।শ্রেয়ার শরীর থেকে রক্ত বের হয়েছে অনেক।রক্ত লাগবে বলে জানিয়েছে ডাক্তার।কিন্তু এই রক্ত এখন হাসপাতালে এভিলেবল না।এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে মিরাজ ও ফারহান চৌধুরী।অর্পা আর মিমি কান্না করছে।এখনও সৃষ্টি বেগমকে জানায়নি।সকালের আগে জানাতে চায় না অর্পা।ভয় পাচ্ছে সৃষ্টি বেগমকে কি বলবে।সৃষ্টি বেগম আসলেও রক্ত পাওয়া যাবে না।সৃষ্টি বেগম বা রিমলি কারোর সাথেই রক্তের মিল নেই।সবার ছোটাছুটির মাঝে জিনিয়া বলে,”আমি দিবো রক্ত।”

আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৩৯

“রক্তের গ্রুপ?”(ডাক্তার জিজ্ঞাসা করে)
“ও নেগেটিভ।যেটা আপনারা শ্রেয়ার জন্য খুজছেন।”
ফারহান চৌধুরী আলতো হাসলেন।স্ত্রীর মাঝে পরিবর্তন এসেছে।ভালো লাগলো তার।তবে পরিবর্তন সম্পূর্ণ রূপে দেখতে চায়।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে নদীর ধারে প্রাকৃতিক বাতাসে নিজেকে প্রশান্তি দিলো ফারাজ।এখন গাড়িতে উঠবে সে।ফোন বের করে সময় দেখতে যেয়ে দেখলো মিরাজের ম্যাসেজ।সাথে সাথে গাড়ি নিয়ে ছুটলো হাসপাতালের দিকে।

আশার হাত বাড়ায় পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here