আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২২
Raiha Zubair Ripti
রিসিপশনের আয়োজনে পুরো হল রুম লাইট আর ফুল দিয়ে সাজানো। অতিথিরা আসতে শুরু করেছে। আষাঢ় সন্ধ্যার হাত ধরে হলে ঢুকতেই চারপাশে ফিসফাস শুরু হলো। সবার চোখ যেন আটকে গেলো নবদম্পতির দিকে। সন্ধ্যার পরনে মেরুন রঙের শাড়ি, সাথে গাঢ় সোনালি জড়ি কাজ। চুলে ফুলের সাজ আর গলায় হালকা সোনার নকশা। পাশে আষাঢ়ের পরনে ডিপ ব্লু স্যুট।
অনুষ্ঠানের আলোকঝলমলে পরিবেশের মাঝেও সন্ধ্যা খানিকটা চুপচাপ। আষাঢ় সেটা লক্ষ করলো।
আষাঢ় সন্ধ্যার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
“কী হয়েছে? এত চুপ কেন?”
সন্ধ্যা চোখ নামিয়ে বলল,
“তেমন কিছু না। জীবনটা তো নতুনভাবে শুরু হলো। ভয় লাগছে একটু।”
আষাঢ় হাসি দিয়ে বলল,
“যতক্ষণ আমি আছি, ভয় কিসের? তুমি শুধু আমার হাতটা ধরে রাখো ব্যাস।”
সন্ধ্যার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
-“ বাপ্রে এতক্ষণ লাগে তোদের রেডি হতে! লোকজন এসে গেছে সেই কখন।
কথাটা বলতে বলতে আরাফাত এগিয়ে আসলো।
আষাঢ় আর সন্ধ্যা নির্ধারিত সোফায় গিয়ে বসল। আলোকচিত্রী বারবার ভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলতে ব্যস্ত হলো।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
অনুষ্ঠানের মাঝে কনাও এসেছে। কিন্তু আজ তার মধ্যে যেন একটা ভিন্ন রূপ ফুটে উঠেছে। সাজগোজে তেমন না থাকলেও তার মধ্যে থাকা একটা অভিজাত সৌন্দর্য কারো চোখ এড়াচ্ছে না। রিসিপশনের ভিড়ে রাত কনার দিকে তাকিয়ে একটু দ্বিধায় পড়ে গেল। কারন মেয়েটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
কনার চেহারায় একটা অদ্ভুত শূন্যতা। মনে হচ্ছিল, সে কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। রাত ভিড় ঠেলে কনার কাছে এসে দাঁড়ালো।
“সব ঠিক আছে?”
কনা প্রথমে চমকে গেলেও নিজের চেহারায় স্বাভাবিক ভাব আনল।
“হ্যাঁ, সব ঠিক আছে। আপনি এভাবে হুট করে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন কেন?”
” নাহ্ অনেকক্ষণ ধরে দেখছি আমার দিকে তাকিয়ে আছো সেজন্য।
” আপনার অস্বস্তি হয় আমি তাকালে?
” তা তো হবেই।
” সরি আর হবে না।
কনা চলে গেলো সন্ধ্যার কাছে। একটু কথাবার্তা বলে চলে আসলো।
রিসিপশনের সব আয়োজন শেষে অতিথিরা বিদায় নিল। আষাঢ় সন্ধ্যাকে নিয়ে রুমে আসলো। পরনের থাকা জামাকাপড় পাল্টে সাধারণ কাপড় পড়ে নিলো।
” খুব ক্লান্ত লাগছে এখন?
সন্ধ্যা মাথা নেড়ে বলল-
-“ হ্যাঁ কিছুটা।
সন্ধ্যা ঘরের জানালার পাশে দাঁড়ালো। আষাঢ় পেছন থেকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল।
“কী দেখছো?”
“জানালার বাইরে পূর্ণিমার চাঁদ। এত সুন্দর লাগছে।”
“আমার চাঁদ তো এই ঘরেই আছে। জানালার বাইরের চাঁদের থেকে বেশি উজ্জ্বল।”
সন্ধ্যা লজ্জা পেয়ে মাথা নত করল।
আষাঢ় অবাক হয়ে সন্ধ্যা কে সামনে ঘুরিয়ে বলল-
-“ তুমি লজ্জা পাচ্ছো সন্ধ্যাবতী! এটা কি সত্যি! ও মাই গড। তুমি লজ্জা পাও! আনরোমান্টিক মেয়ে।
-“ আশ্চর্য লজ্জা নারীর ভূষণ আর আমি তো নারী। তো পাবো না লজ্জা?
-“ কি জানি। লজ্জা পেতে খুব কমই..না না লজ্জা তো পেতেই দেখি নি। সব সময় আনরোমান্টিক গম্ভীর মুখে থাকো। সে যাই হোক তোমার জন্য একটা কবিতা লিখেছিলাম। শুনবে?”
সন্ধ্যা চোখ বড় করে তাকালো,
” আপনি লিখেছেন!
আষাঢ় হাসল,
” অফকোর্স। ডক্টর দেখে ভেবো না কবিতা লিখতে পারি না তাই বলে। সব পারি। তোমার এই ডাক্তার সাহেব একের ভেতর সব। তা বলা শুরু করি?
-“ জ্বি শুরু করুন মশাই। আমিও দেখি আমার ডাক্তার সাহেব কি লিখেছেন আমাকে নিয়ে।
-“ ❝আকাশ ভরা তারা নয়, আমি শুধু একখণ্ড চাঁদ চাই,
সেই চাঁদটিই তুমি,
যে আলোকিত করে রাখবে আমার গোটা পৃথিবী।❞
সন্ধ্যার মুখে গভীর তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠল।
-“ বাহ্ সুন্দর ছিলো তো।
-“ সত্যি?
-“ হুম। চলুন ঘুমাই। ঘুম পেয়েছে।
-“ আজও ঘুমাবে? ফুলসজ্জা হবে না আমাদের?
-“ ফুলসজ্জা!
-“ হু।
-“ ফুলসজ্জা টা তোলা থাক। আজ বরং আমরা শুধু ঘুমাই।”
আষাঢ় গম্ভীর মুখে বলল-
“ঠিক আছে। তবে একটা শর্তে।”
“কী শর্ত?”
“আমার বুকের কাছে মাথা রেখে ঘুমাবে।”
-“ সেটাই তো করি।
সকালের আলো ঘরে পড়তেই সন্ধ্যার ঘুম ভাঙল। পাশে তাকিয়ে দেখল, আষাঢ় গভীর ঘুমে। তার মুখে প্রশান্তির এক ছাপ। সন্ধ্যা ধীরে ধীরে উঠে বসল। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালো।
বাড়ির বাগানে ছোটো ছোটো পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে। হঠাৎ মেজাজ ফুরফুরে লাগতে শুরু করল। মনে হলো, এই নতুন জীবন তার কাছে যেন একটা নতুন দিগন্ত।
আষাঢ় ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখল সন্ধ্যা জানালার কাছে দাঁড়িয়ে। তার মুখে মৃদু হাসি।
“সকাল সকাল কী দেখছো?”
সন্ধ্যা পেছনে ফিরে বলল,
“এই সকালটা যেন অন্য রকম। আমি ভাবছিলাম আমাদের জীবনটা এভাবেই সুন্দর থাকুক।”
আষাঢ় উঠে এসে তার কাছে দাঁড়াল।
“তুমি পাশে থাকলে, সবকিছুই সুন্দর হবে।”
অন্যদিকে, রাত ঘরের এক কোণে বসে আছে।
রাতের মা এসে তাকে ডাকতে ব্রেকফাস্ট করার জন্য। আচমকা ছেলেকে ভাবুক হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল-
“রাত, এখানে বসে কী ভাবছিস?”
রাত চমকালো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-
“কিছু না, মা। তোমার কোনো কাজ আছে?”
“না, তবে তোর এমন মনমরা ভাব আমাকে চিন্তিত করছে।”
রাত মৃদু হেসে বলল,
“তোমাকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই, মা। আমি ঠিক আছি।”
-“ আচ্ছা খেতে আয় তাহলে।
আষাঢ় সন্ধ্যা,রাত আমেনা বেগম একসাথে সকালের নাস্তা করল। নাস্তার শেষে আষাঢ় সন্ধ্যাকে জিজ্ঞাসা করল,
” আচ্ছা আজ কী করব আমরা?
-“ কি করবো আমরা?
“কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছে করছে না? চলো দূরে কোথাও যাই।
সন্ধ্যা বলল,
” কোথায় যাবেন?
-“ পাহাড়ে।
-“ আচ্ছা যেখানে আমরা দুজনেই আরাম করে সময় কাটাতে পারি। আর…
-“ আর কি?
গম্ভীর গলায় বলল সন্ধ্যা। আষাঢ় মেকি হাসি দিয়ে বলল-
-“ আর কিছুই না। শুধু ঘুরবো আর ঘুরবো ওক্কে?
-„ ওকে।
কনা সন্ধ্যার ঘরে বসে আছে। আজ সে অন্যরকম অনুভব করছে। জীবনের সবকিছুতে যেন একধরনের অদ্ভুত পরিবর্তন এসেছে। সকালেই তার বাবা ফোন করে জানিয়েছে রাহুলের মা তার বাবার কাছে তার আর রাহুলের বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে। কনার বাবা শীগ্রই তাকে বাসায় আসতে বলেছে। কনা লাস্ট বার আজ রাতের সাথে একটু কথা বলবে। একটু খানি কথা বলে দেখুক না রাত কি বলে। কথাটা ভেবেই কনা রেডি হয়ে নেয় কোচিং এর জন্য। কোচিং-এ ঢুকতেই দেখে রাত আগে থেকেই বসে আছে। কনা কোচিং শেষ হবার অপেক্ষা করলো। আজ রাহুল আসে নি। কোচিং শেষ হতেই রাত বের হলে কনা পেছন থেকে ডেকে উঠে। রাত পেছন ফিরে বলে-
-“ কিছু বলবে?
-“ জ্বি। সময় হবে?
-“ বলো।
-“ এখানেই? না মানে পার্সোনাল কথা ছিলো। সামনে ক্যাফে আছে ওটায় বসা যাবে?
-“ চলো।
কনা আর রাত এসে বসলো ক্যাফে তে। রাত খুব তীক্ষ্ণ চোখে কনাকে দেখে বলল-
-“ এবার বলো।
-“ রাহুলের মা আমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব রেখেছে।
-“ ওহ কংগ্রেস। কিছুটা জানতাম।
-“ ওহ। একটা কথা বলতে চাই। কিভাবে নিবেন বিষয় টা জানি না। তবে বলতে চাই।
-“ বলো।
-“ আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলছি এই কয়েকদিনে। আপনার জীবনে কি আমাকে জায়গা দেওয়া যায়?
রাত কিছুটা চমকালো। তবে অস্বস্তি ভরা কন্ঠে বলল-
-“ আমার জীবনে কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই যেখানে তোমাকে জায়গা দিব আমি।
-“ কাউকে ভালোবাসেন?
রাত থতমত খেয়ে গেলো।
-“ আগেও তো বলেছি।
-“ তখন গার্লফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।
-“ কিছুই নেই।
-“ আমি কিন্তু জানি। আপনি সন্ধ্যা কে ভালোবাসতেন।
রাত থমকে গেলো। কনা রাতের অবস্থা বুঝে বলল-
-“ সেদিন আমি সব শুনে ফেলছিলাম আপনার কথা। আচ্ছা আমাকে কি কোনোভাবে আপনার জীবনের সাথে জুড়িয়ে দেওয়া যায় না?
-“ না। তোমার আগামী জীবনের জন্য অগ্রীম শুভেচ্ছা রইলো। রাহুল নিঃসন্দেহে ভালো ছেলে। আর ভালো ছেলে বলেই সোজা মা কে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
-“ কিন্তু আমি যে আপনাকে ভালোবাসি। মনে একজন কে রেখে কি আরেকজনের সাথে সংসার করা যায়?
-“ যাবে না কেনো? আমাদের মাঝে কোনো কিছু শুরুই হয় নি। সেখানে এসব কথা ভিত্তিহীন। আর তার চেয়ে বড় কথা। আমি তোমাকে এজ এ্যা ভাবির বন্ধু হিসেবেই দেখেছি। তুমি যদি ভেবে থাকো আমি তোমাকে ভালোবাসবো সেই আশায় বিয়ে ভেঙে দেওয়া। তাহলে ভুল করছো। কারন আমি তা কখনই করবো না। ভালো এটাই হবে যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে সাদরে গ্রহণ করে নাও। ভালো থেকো আসছি।
রাত চলে গেলো। কনা ঠাই বসে রইলো। রাত যেই কথাটা বলে গেলো সেম কথাটা কেনো সে নিজে মানছে না? তাকে যে ভালোবাসে তাকে কেনো সে গ্রহণ করে নিচ্ছে না?
আষাঢ় সন্ধ্যাকে নিয়ে একটি রিসোর্টে এসেছে।
রিসোর্টটি পাহাড়ের কোলে। চারপাশে ঘন সবুজ বনানী, যা দেখলেই মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সবটুকু সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। দূরে পাহাড়ের গায়ে মেঘের দল খেলা করছে। পাখির ডাক আর গাছের পাতা নড়ার মৃদু শব্দ মিলে এক অদ্ভুত মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
কটেজগুলো ছিমছাম, কাঠের তৈরি। ছাদের কোণায় ঝুলছে ছোট্ট লণ্ঠন, যা রাতে জায়গাটাকে আরও রোমান্টিক করে তোলে। কটেজের বারান্দা থেকে একটি সরু রাস্তা নেমে গেছে পাহাড়ের নিচে। রাস্তার দুপাশে লাল-নীল ফুলের বাগান, আর মাঝখান দিয়ে বইছে এক ছোট্ট ঝরনা।
সন্ধ্যা গাড়ি থেকে নামতেই মিষ্টি হাওয়া এসে তার চুলে খেলা করল। সে চারপাশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বলল,
” জায়গাটা তো বেশ সুন্দর।
” দেখতে হবে না পছন্দ টা কার?
কটেজের ভেতর ঢুকে সন্ধ্যা আরও অবাক। ভেতরটা সিম্পল কিন্তু দারুণ পরিপাটি। একটি চমৎকার খাট, জানালার পাশে কাঠের চেয়ার, আর মাঝখানে ছোট্ট টেবিলে সাজানো ফুলদানিতে সাদা বেলি আর গোলাপ। রুম থেকে দূরের পাহাড় আর বন দেখা যায়। সন্ধ্যা জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। তার চোখে যেন প্রশান্তি ঝরে পড়ল।
আষাঢ় এক কাপ চা নিয়ে এসে বলল,
“এই নাও, প্রকৃতির সঙ্গে এক কাপ চা উপভোগ করো।”
সন্ধ্যা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল,
“আচ্ছা আপনার মতো করে কেউ কি আর এতটা যত্ন নিতে পারবে আমার?
আষাঢ় পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
-“ কেনো তুমি কি আরো কারো যত্ন চাও আমি ব্যতিত?
-“ নাহ্ সেটা বোঝাই নি। আপনি বেশ যত্নশীল পুরুষ একটা।
“ততো টা যত্নশীল পুরুষ হতে পেরেছি কি না জানি না। তবে চেষ্টা করব, যেন কখনো তোমার কোনো অভাব অনুভব না হয়।”
দু’জনে বারান্দায় গিয়ে বসল। দূর পাহাড় থেকে আসা মৃদু বাতাস তাদের ঘিরে এক অন্য রকম অনুভূতি সৃষ্টি করল। সন্ধ্যা আষাঢ়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“ আপনাকে যদি বিয়ে না করতাম আমি। তাহলে হয়তো কখনো বুঝতেই পারতাম না জীবন ঠিক কতটা সুন্দর হতে পারে। দেখুন না আমাদের বিয়ে চার দিনও হয় নি।
আষাঢ় সন্ধ্যার হাতটা ধরে চুমু খেয়ে বলল,
“আমার জীবনটা তো তুমি দিয়েই শুরু। সেখানে প্রতিটি দিন আমি তোমার মতো করে কাটাতে চাই। তোমার মুখে হাসি ফুটাতে চাই। কারন তোমার মুখের এই হাসিটাই আমার সব কষ্টের পুরস্কার।
রাতের দিকে কনা নিজের ব্যাগ পত্র সব গুছিয়ে নেয়। কালকেই রওনা হবে রাজশাহী। সন্ধ্যাকে বলা হয় নি। বাসায় এসেই জানতে পারলো সন্ধ্যা আর আষাঢ় দূরে কোথাও গেছে। জামাকাপড় গোছানোর শেষ হতেই টেবিলে থাকা ডায়েরি তে চোখ গেলো। কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। ডায়েরি টা খুললো। তারপর কিছু একটা ভেবে লিখতে শুরু করলো-
” আজকের তারিখটা লিখতে ইচ্ছা করছে না। সময় আর তারিখ কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ? দিন আসে, রাত যায়—একটানা চক্র। কিন্তু জীবনের আসল গল্পগুলো তারিখের খোপে বাঁধা পড়ে না।
জীবনটা যেন নদীর মতো। কখনও শান্ত, কখনও উচ্ছল, কখনওবা ভীষণ বেগবান। ভাবি, এই জীবনটা আমরা ঠিক কিভাবে বাঁচি? রোজ সকালে উঠি, কাজ করি, রাতে ঘুমোতে যাই। অথচ এই অভ্যাসের মাঝেই কোথাও কোথাও লুকিয়ে থাকে অজানা সুখ, কিংবা প্রচ্ছন্ন বেদনা।
আমার মনে হয়, জীবন মানে শুধু ভালোবাসা বা ঘৃণা নয়। জীবন মানে সেই গভীর অনুভূতিগুলো, যা শব্দ দিয়ে বোঝানো যায় না। সেই মুহূর্তগুলো, যখন তুমি একা থাকো কিন্তু একাকিত্ব অনুভব করো না। যখন বাতাসে গন্ধ থাকে বৃষ্টি নামার, আর হৃদয়ে থাকে আশার ঝড়।
জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। মানুষ কখনও বদলায় না, বদলে যায় তাদের অবস্থান, তাদের প্রয়োজন। যে মানুষ একদিন তোমার কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, হয়তো সে আজ তোমার জীবনের অতীত। কষ্ট লাগে? অবশ্যই লাগে। কিন্তু এটাও সত্যি, মানুষ হারানোর মধ্যেই হয়তো নতুন কিছু পাওয়ার ইঙ্গিত থাকে।
জীবন আমাকে শিখিয়েছে, স্বপ্ন দেখতে হবে। তবে সেই স্বপ্ন যেন বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়ায়। হার না মানা একটা মনের জোর থাকতে হবে। কারণ জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে, তোমার ইচ্ছায় নয়। তুমি চাইলেও সব কিছু পাবার অধিকার নেই। কিছু কষ্ট সয়ে যেতে হয়, কিছু ভুল মেনে নিতে হয়, আর কিছু ভালোবাসা মনে গেঁথে রাখতে হয়।
আজকের রাতটা অদ্ভুত। মনে হচ্ছে আকাশও কথা বলতে চায়। তারার ঝিকিমিকি দেখছি। প্রতিটা তারা যেন হাজারো গল্প নিয়ে বসে আছে। জীবনও তো এরকমই, অসংখ্য গল্পে ভরা। আমরা কি সব গল্প শুনতে পারি?
জীবনের কোনো ইস্তেহার নেই। এখানে নেই নিয়মিত সূচি, নেই পূর্ব পরিকল্পনা। শুধু একটা সত্য আছে—তুমি যতটা ভালোবাসা ছড়াবে, ততটাই ফিরে পাবে।
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২১
আমি জানি না আমার জীবনটা কোথায় থামবে। তবে যতদিন বাঁচি, নিজের গল্পগুলো নিজের মতো করে বুনে যেতে চাই। হয়তো একদিন কেউ আমার এই ডায়েরি পড়বে। জানতে চাইবে, কে ছিল কনা?
জানি না সে জানতে পারবে কি না। তবে আমি তাকে বলে যেতে চাই, কনা ছিল এক সাধারণ মেয়ে, যার জীবনও ছিল অসাধারণ। কারণ জীবনকে সে সবসময় মনের মতো বাঁচতে চেয়েছিল।