আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৪

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৪
Raiha Zubair Ripti

নতুন এক সকাল,সকালটা ছিল অন্যরকম। শহরের কোলাহল থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ের কোলে সাজানো ছোট্ট এই রিসোর্টটা যেন প্রকৃতির কোলজুড়ে রাখা শান্তির আস্তানা। রোদের কিরণ জানালা ভেদ করে সরাসরি আষাঢ়ের মুখে এসে পড়লো। আষাঢ় চোখ মেলে তাকাতেই তার নজরে এলো পাশের বিছানায় এলোমেলো হয়ে শুয়ে থাকা সন্ধ্যাকে। মুখ ঢেকে আছে এলোমেলো চুলে। কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল আষাঢ়।

তারপর আলতো করে সন্ধ্যার চুলগুলো সরিয়ে দিল। ওর ঘুমের গভীরতা আর নিষ্পাপ মুখটা দেখলে আষাঢ়ের মন এক অদ্ভুত প্রশান্তিতে ভরে যায়। মুহূর্তে তার ভেতরে এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি জাগে, যা শুধু সন্ধ্যার জন্যই। কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে সে ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।
গোসল শেষে টাওয়ালে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে দেখে সন্ধ্যা তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । আষাঢ় একবার হেসে ল্যাগেজ থেকে প্যান্ট আর শার্ট বের করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর সে সন্ধ্যাকে ডাক দিল—

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“সন্ধ্যা, ওঠো। এত ঘুমিয়ে থাকলে দিনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।”
সন্ধ্যা আষাঢ়ের ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে পাশ ফিরে একটু বিরক্ত মুখে তাকিয়ে বলল,
“এত সকাল সকাল ডাকছেন কেন?”
আষাঢ় মুচকি হেসে বলল,
“উঠবে না? গোসল করবে না? ব্রেকফাস্ট করবে না? বের হবে না?”
সন্ধ্যা বিরক্ত হয়ে বলল,
“দম নিয়ে এক এক করে বলুন।
আষাঢ় তার ভঙ্গি দেখে হাসতে হাসতে বলল,
“ওক্কে, ম্যাডাম। বলছি। উঠুন, গোসল করুন, তারপর ব্রেকফাস্ট। আমাদের আজ ঢাকা ফিরে যেতে হবে।”
সন্ধ্যা যেন কথাগুলো শুনে বিরক্ত হলো।
“ঢাকা ফিরতে হবে? আমি তো আরেকদিন থাকতে চাই। এত সুন্দর জায়গা ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না।”
“আমারও ইচ্ছে নেই, কিন্তু কাজ আছে তো।”

সন্ধ্যা গা ঝাড়া দিয়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল।সেটা দেখে আষাঢ় রিসোর্টের রুম সার্ভিসে ফোন করে তাদের ব্রেকফাস্ট রুমে পাঠানোর ব্যবস্থা করল। কিছুক্ষণ পর একজন লোক দরজায় নক করল। আষাঢ় দরজা খুলে খাবার গুলো নিয়ে টেবিলে রাখল। প্যানকেক, ওমলেট, সসেজ আর চায়ের গন্ধে পুরো রুমটা ভরে গেল।
খাবারগুলো গুছিয়ে রেখে সে অপেক্ষা করতে লাগল সন্ধ্যার জন্য।
সন্ধ্যা গোসল সেরে বের হলো। চুলগুলো ভেজা। টুপটুপ করে পানি পড়ছে। কামিজের পেছনের অংশ ভিজে লেপ্টে আছে শরীরে। আষাঢ়ের ঘোর লেগে আসলো। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে এক ঢোক গিলে বলল-,

“তুমি কি একটা কথা জানো?
-“ কোন কথা?
-“ এই যে ভেজা চুলে তোমাকে আরও সুন্দর দেখায়। জানতে সেটা?
সন্ধ্যা চুলের পানি মুছতে মুছতে বলল,
-“ আগে জানি নি। তবে আপনি বলায় আজ জানলাম।
-“ সব কিছুই কি আমি বলার পরই জানো তুমি?
-“ না তো। এই যেমন আমি সুন্দরী মানেন তো সেটা?
-“ হুমম মানি।
-“ এটা আপনি না বললেও তো আমি জানি।
-“ কে বলেছিলো?
-“ কত ছেলেই তো বলেছে ভার্সিটিতে।
-“ আর তুমি সেসব শুনেছো!

গম্ভীর মুখে বলল আষাঢ়। সন্ধ্যা ভেজা টাওয়াল টা বেলকনিতে মেলে দিতে দিতে বলল-
-“ এমন ভাবে সামনে এসে হিরোর বেসে বলতো যে না চাইতেও কথা গুলো কানে আসতো। তাই শোনা হয়ে গেছে।
-“ আফসোস কোনো মেয়ে আজ অব্দি হিরোইনের বেসে এসে আমার প্রশংসা করলো না।
-“ ইশ কষ্ট লাগছে নাকি?
-“ ভীষণ। বুক টা ফেটে যাচ্ছে সেই কষ্টে।
-“ ব্রেকফাস্ট সেরে নিন। মেডিসিন খাইয়ে দিব কমে যাবে কষ্ট।
-“ মেডিসিন! আর ইউ সিওর?
-“ ওক্কে। ব্রেকফাস্ট করা যাক তাহলে, কাম।
সন্ধ্যা এসে পাশে বসতেই ব্রেকফাস্ট শেষ করলো।
ব্রেকফাস্ট শেষ হতেই আষাঢ় বলল-
-“ গিভ মি মাই মেডিসিন।
সন্ধ্যা ড্রয়ার থেকে নাপার টেবলেট এনে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-

-“ ধরুন।
আষাঢ় মেডিসিনের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ নাপা দিলে কেনো?
-“ বাহ্ রে আপনিই তো মেডিসিন চাইলেন।
-“ আমি তো এই মেডিসিন চাই নি। আমি তো ওটা চেয়েছি।
সন্ধ্যার ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বলল আষাঢ়। সন্ধ্যা ভ্রুকুটি করে তাকালো।
-“ এটা মেডিসিন?

-“ বিবাহিত পুরুষদের কাছে এটাই তাদের একমাত্র মেডিসিন বুঝলে। তাই সময় নষ্ট করো না, কাম।
সন্ধ্যা মুখটা এগিয়ে আনলো আষাঢ়ের মুখের কাছে। আষাঢ়ের হার্টবিট বেড়ে গেলো। সন্ধ্যা কিছুক্ষণ মুখের দিকে চেয়ে থেকে সরে আসতে নিলে আষাঢ় নিজ থেকে আঁকড়ে ধরে সন্ধ্যার ঠোঁট। সন্ধ্যা চোখ বড়বড় করে তাকায়। আষাঢ় আলতো করে চুমু দিয়ে বলল-
-“ ভেরি নাইস টেস্ট। রোজ সকালে ব্রেকফাস্টের পরপরই পেলে মন্দ হয় না। তো মিসেস আহমেদ চলুন যাওয়া যাক।
সন্ধ্যা ওড়না দিয়ে ঠোঁট মুছতে মুছতে বলল-
-“ কোথায়?
-“ যাওয়ার আগে আশেপাশে টা আরেক বার ঘুরে দেখে নেওয়া যাক।

সন্ধ্যা সম্মতি প্রকাশ করলো। তারপর দুজন রিসোর্টের আশপাশটা দেখতে বের হলো। পাহাড়ের মাঝখানে ছোট্ট একটা নদী বয়ে গেছে। পাখির কিচিরমিচিরে চারপাশটা গুঞ্জরিত। সন্ধ্যা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,
– আচ্ছা আমরা কি শহরের দমবন্ধ করা জীবন ছেড়ে এখানে এই ধরনের জায়গায় পুরো জীবন কাটিয়ে দিতে পারি না?
আষাঢ় বলল,
-“ কাটিয়ে দেওয়াই যায়। কিন্তু..
-“ কিন্তু কি?
-“ কাজের জন্যই তো শহরে থাকা। এখানে থাকলে কাজ পাবো কই? কাজ না পেলে তোমাকে খাওয়াবো কি? আর খাওয়াতে না পারলে তুমি কি তখন আমার পাশে থাকবে? উষ্ঠা দিয়ে আরেক বেডার সাথে চলে যাবা৷ তখন একূল ও যাবে অকূল ও যাবে।

-“ ধূর কি বলেন। আরেক বেডার সাথে ভাগবো কেনো। এখানে কি হসপিটাল নেই নাকি?
-“ এখানে বেতন ভাতা কম। এখানে হসপিটালে জব পেলেও যেই টাকা পাবো সেটায় তোমার আমার শুধু খাওয়াতেই চলে যাবে। নতুন নতুন পোশাক.. ট্যুর আর দেওয়া হবে না। এরচেয়ে বেটার যেখানে আছি সেখানেই থাকা। মাঝেমধ্যে এমন সব জায়গায় ট্যুর দিব। এসব জায়গা যেমন মন ভালো করে, তেমনি আমাদের সম্পর্কটাকেও নতুন করে সাজাবে প্রতিনিয়ত।

-“ আমরা প্রচুর ট্যুর দিব হ্যাঁ? আই লাভ ভ্রমণ।
-“ আই লাভ প্রদোষ।
-“ প্রদোষ! সেটা আবার কি?
-“ প্রদোষ মানে জানো না?
-“ না। এটার মানে কি?
-“ প্রদোষ মানে তো সন্ধ্যা। নিজের নামের সমার্থক শব্দ জানো না সন্ধ্যাবতী! দ্যিস ইজ সো ব্যাড।
-“ আপনি এতে কিছু জানেন কি করে?
-“ বিকজ আমি ডক্টর সেজন্য।
-“ এ্যাহ্।
-“ এ্যাহ না হ্যাঁ। চলো ওদিকটায় যাই। একটু পরই রওনা দিব আমরা।

পাহাড়ের সেই সৌন্দর্য থেকে বিদায় নেওয়া কঠিন ছিল। দুপুরের দিকে তারা রিসোর্ট থেকে বের হলো। আষাঢ় গাড়ি চালাচ্ছিল, আর সন্ধ্যা চুপচাপ বাইরের দৃশ্য দেখছিল। গাড়ি চলতে চলতে আষাঢ় হঠাৎ বলল,
“তোমার সঙ্গে থাকলে আমি সব ভুলে যাই সন্ধ্যাবতী।”
-“ যেমন?
-“ এই যে আমাদের বের হবার কথা ছিলো ব্রেকফাস্ট করেই। অথচ তোমাকে নিয়ে বের হলাম প্রকৃতি দেখতে। অথচ আমার রাতে একটা অপারেশন আছে। এখন পৌঁছাবো কখন আর হসপিটালে যাব কখনও। সবাই বলবে আষাঢ় আহমেদ বিয়পর পর বউ পাগল হয়ে নিজের কাজকর্ম নিয়ে গাফিলতি করছে। তুমি দিনকে দিন আমার নেশায় পরিনত হচ্ছো।
সন্ধ্যা হেসে বলল,

“তাহলে কি আমাকে আপনার ওষুধ হিসেবে ধরে নিতে হবে?”
আষাঢ় মৃদু হেসে বলল,
“তোমার মতো ওষুধ পাওয়া সহজ নয়। যদি ওষুধের মতো শার্টের পকেটে তোমায় ভরে নিজের সাথে রাখতে পারতাম। কি যে ভালো হতো।
সন্ধ্যা কিছু বললো না আর। গাড়িটা যতই ঢাকা শহরের কোলাহলের দিকে ফিরছে ততই সন্ধ্যার মন বিষণ্ন হয়ে যাচ্ছে ।
“এত শান্তি ছেড়ে আবার এই শহুরে কোলাহলে ফেরা, ভালো লাগছে না।”
রাত জানালার ধারে দাঁড়িয়ে ছিল। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। আজ আইইএলটিএস এর এক্সাম দিয়ে এসেছে। এবার টিকলেই হয়। তারপর সোজা বাহিরের দেশে। কনার কথা বা কনার আচরণ রাতের মাথায় একটুও নেই। বরং তার মনে একটাই চিন্তা—নিজের ভবিষ্যৎ।
নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে রাত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার নিজের জীবনে অনেক স্বপ্ন, অনেক চ্যালেঞ্জ। জীবন নিয়ে তার চিন্তা কেবল তার নিজের চারপাশেই সীমাবদ্ধ। সে কখনোই আরেকজনকে জীবনের অংশ করে ভাবেনি। কনা তার জীবনে কোনো জায়গা রাখেনি—এটাই ছিল তার শক্ত অবস্থান।
হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে পেছন ফিরে দেখলো তার মা এসেছে।

-“ কিছু বলবে?
-“ আষাঢ় সন্ধ্যা আসতেছে। ডিম ফুরিয়ে গেছে। দোকান থেকে নিয়ে আয়।
রাত ছাতাটা নিয়ে বের হলো। আসার পথে শরিফার সাথে দেখা হলো। এই বৃষ্টি তে শরিফা সেজেগুজে নায়েকা সেজে ছাতা মাথায় নিয়ে হাঁটছে। রাত শরিফা কে দেখে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ এই বৃষ্টিতে এমন সেজেগুজে কই যাচ্ছিস?
-“ ডেটিংএ।
-“ আরাফাত ভাইয়ের সাথে?
-“ না আমার আরেক টা বয়ফ্রেন্ড আছে তার সাথে।
-“ পারিসও বটে। এই বৃষ্টিতে ডেটিং! ছাতা সামলাবি নাকি নিজেকে সামলাবি। দেখিস আবার পিছলে পড়ে টড়ে যাস না।

কথাটা বলেই রাত চলে গেলো। শরিফা আরো সতর্কতার সাথে হাঁটতে গিয়ে ঠাস করে পা পিছলে পড়ে গেলো। রাত ততক্ষণে চলে গেছে। শরিফা আশেপাশে তাকালো কেউ দেখে ফেললো না তো? নাহ্ কেউ দেখে নি। তাড়াতাড়ি করে পড়া থেকে উঠে বাসার দিকে ছুটলো ড্রেস চেঞ্জ করতে।
অন্যদিকে কনা তার বাবার দেওয়া পরামর্শ নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে। তাই ভাবলো বাবার থেকে কৌশলে একটা কথা জেনে নিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। গুটিগুটি পায়ে বাবার রুমপ আসলো। দরজায় কড়া নেড়ে নিজের উপস্থিতি জানিয়ে বলল-

-“ বাবা আসবো?
কামরুল হাসান ব্যাংকের ফাইল টা পাশে রেখে বলল-
-“ আয়।
কনা ভেতরপ ঢুকলো।
-“ কিছু বলবি?
-“ একটা কথা জানতে চাচ্ছিলাম।
-“ হ্যাঁ বল।
-“ আচ্ছা বাবা জানো আমার না একটা ফ্রেন্ড আছে। সে না একজন কে ভালোবাসে। কিন্তু যাকে ভালোবাসে সে আমার ফ্রেন্ড কে ভালোবাসে না। এদিকে আমার ফ্রেন্ড এর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে বাসা থেকে৷ এখনও ও দ্বিধায় ভুগছে। ওর কি করা উচিত?
-“ ছেলে না মেয়ে তোর ফ্রেন্ড?
-“ মেয়ে।

-“ কেউ যদি ভালো না বাসে তাহলে তো আর সেখানে জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না। মেয়েটার উচিত পরিবার যাকে পছন্দ করেছে তাকেই বিয়ে করা।।
-“ কিন্তু বাবা ও যে আরেকজন কে ভালোবাসে। মনে একজন কে রেখে আরেকজন কে কি বিয়ে করা যায়?
-“ প্রথমে কষ্ট হবে কিন্তু সময় যেতে যেতে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷ মনে রাখবে মেয়েরা হচ্ছে তরল। তাকে যেই পাত্রেই রাখবে সে সেই পাত্রেই নিজেকে মানিয়ে সেই পাত্রের ই আকার ধারণ করবে।
-“ তারমানে বলছো মেয়েটার রাজি হয়ে যাওয়া উচিত বিয়ে তে।
-“ হ্যাঁ যদি একপাক্ষিক ভালোবাসা হয়ে থাকে তাহলে রাজি হয়ে যাওয়াই উচিত।
-“ আচ্ছা আসছি। পরে কথা বলবো।

কনা চলে আসলো নিজের রুমে। তার উত্তর সে পেয়ে গেছে। ফোনের স্কিনে কল লিস্টে ঢুকলো। রাতের নম্বর টা জ্বলজ্বল করছে। কি একটা ভেবে কনা রাত কে কল লাগালো।
রাত সবেই ডিম টা মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে এসেছে। আকস্মিক ফোন বেজে উঠায় অচেনা নম্বর দেখতে পেয়ে ফোন টা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল-

-“ হ্যালো কে?
কনা জবাব দিলো-
-“ আমি কনা বলছি।
রাত কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নম্বর টা দেখে নিলো।
-“ কিছু বলবে?
-“ চেয়েছিলাম তো অনেক কিছুই বলতে। কিন্তু সেই বলার অধিকার টা তো দেন নি আর। তা কেমন আছেন?
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
-“ আমার কথা জিজ্ঞেস করলেন না?
-“ কি জিজ্ঞেস করবো?
-“ কেমন আছি আমি।
-“ সেটা জিজ্ঞেস করাটা জরুরি মনে হলে না। তাই জিজ্ঞেস করি নি।
-“ আপনি ভীষণ পাষান একটা পুরুষ জানেন সেটা?
-“ হয়তো।

-“ আর একবার ভাবুন না রাত।
-“ ভাবার রাস্তা আমি রাখি নি কনা। তাই ভাবাভাবির কিছুই নেই।
-“ আমি যে দহনে পুড়ে ছারখার হচ্ছি।
-“ তার দায়ভার নিশ্চয়ই আমার নয়।
-“ আমার কি উচিত বিয়ে টা করে ফেলা?
-“ আমার মতে তোমার বিয়ে টা করে নেওয়াই উচিত।
-“ আমার বিয়েতে আসবেন?
-“ যদি বাহিরে যাওয়ার আগে হয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই যাওয়ার চেষ্টা করবো। রাখছি এখন একটু কাজ আছে।
রাত ফোনটা কেটে দিলো।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই আষার আর সন্ধ্যা ঢাকায় এসে পৌঁছালো। বাসায় এসেই জানতে পারলো কনা চলে গেছে। সন্ধ্যা কনা কে ফোন দিয়ে কিছুটা কথা শোনালো না বলে চলে যাওয়ায়। কনা ভুলক্রমে ও বিয়ের ব্যপার টা বললো না। রাত সন্ধ্যা কে কনার সাথে কথা বলতে দেখে নিজের রুমে গিয়ে চেয়ার টেনে বসল। টেবিলে রাখা কাগজে কিছু একটা লিখতে শুরু করল। তার লক্ষ্য একটাই—নিজেকে শক্তিশালী এবং অটল রাখা। সে জানে, অন্যের আবেগে সে তার নিজের পথ পরিবর্তন করবে না।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৩

রাতের ডায়েরির একটি অংশ:
“আমার জীবনে এখন বর্তমানে আবেগের জায়গা খুবই কম। পৃথিবীটা বাস্তব এবং কঠিন। এখানে আবেগ দিয়ে কিছু হয় না। জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে নিজের চাওয়া-পাওয়া স্পষ্ট থাকা জরুরি।”
রাত জানে তার জীবনে কোনো অনুভূতি তাকে এখন দুর্বল করতে পারবে না। কারন সে এখন পাথরের মত নিজেকে শক্ত করে নিয়েছে। কারন জীবনে একটা ধাক্কা না খেলে কখনও পরিবর্তন আসে না। আর পরিবর্তন না আসলে জীবনের কোনো মানেই হয় না।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৫