আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৮

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৮
Raiha Zubair Ripti

আষাঢ়, কামরুল হাসান, সন্ধ্যা,আরাফাত বসে আছে রুমের ভেতর। গতকাল রাতেই রাহুল জানিয়ে দিয়েছিল সে বিয়েটা করতে পারবে না। কামরুল হাসান কথাটা শোনামাত্রই চমকে উঠেন। রাত পোহালেই বিয়ে। আর ছেলের মত ছিলো ছেলে নিজেই তো পাঠিয়েছিল পরিবার তাহলে হঠাৎ গায়ে হলুদ শেষ হতেই ছেলে এমন কথা কেনো বললো? সন্ধ্যা কামরুল হাসান কে চিন্তিত হতে দেখতে এগিয়ে আসলো। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আপনি ঠিক আছেন আঙ্কেল? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো?
কামরুল হাসান আশেপাশে তাকালো। চাপা স্বরে বলল-

-“ সন্ধ্যা রাহুল বিয়ে টা করতে পারবে না। ফোন করে এখন জানালো এটা। আমি কারন জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু কিছুই বললো না। এখন বিয়ে টা না হলে কি আমার মানসম্মান থাকবে বলো? ছেলেটা কি বিয়েটা কে খেলনা ভেবেছে? এখন আমি কি করবো বলো? আত্মীয়দের সামনে তো মুখ দেখাতে পারবো না।
সন্ধ্যাও চমকালো। যেই ছেলে নিজ থেকে পরিবার পাঠিয়ে বিয়ে ঠিক করেছে সেই ছেলের তো বিয়ে করবে না বলার কথা নয়। তাহলে কি এমন হলো?
-“ আচ্ছা আঙ্কেল চিন্তা করবেন না। আমি আষাঢ় কে পাঠাচ্ছি ও রাহুল কে বুঝাবে।
কথাটা বলেই সন্ধ্যা আষাঢ় কে খুঁজতে গেলো। আষাঢ় কে পেতেই বলল-
-“ শুনুন একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।
-“ কি ঝামেলা?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-“ রাহুল বিয়ে করবে না বলছে। আপনি একটু ওকে বুঝান না। মানসম্মানেরও তো একটা ব্যপার আছে। এভাবে গায়ে হলুদের দিন হুট করে বিয়ে করবে না বললেই তো হয়ে যায় না। ও বাচ্চা ছেলে নয়। একটু বুঝান।
আষাঢ় কামরুল হাসানের থেকে রাহুলের নম্বর নিলো। ফোন করলো। রিসিভ হতেই আষাঢ় জিজ্ঞেস করলো-
-“ কোথায় তুমি?
রাহুল জানালো বাড়ি থেকে খানিক টা দূরে আছে।
আমি আসছি বলে ফোন কেটে তড়িঘড়ি করে বের হলো। আসার পথে সিঁড়িতে কনার সাথে দেখা হয়েছিল। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় রাহুলের কাছে। কনা দের বাড়ির থেকে কিছুটা দূরে এক শান্ত শীতল নদী। নদীর সামনেই বসে আছে রাহুল। আষাঢ় গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। গম্ভীর কন্ঠেই বলল-
-“ এসব কি শুনলাম রাহুল? তুমি বিয়ে করবে না কেনো বলেছো? তুমি জানো এতে কনা সহ কনার বাবাকে কত কি সহ্য করতে হবে?

রাহুল স্মিত হাসলো। হাসিতে প্রাণ নেই। পাশেই হাত দেখিয়ে বলল-
-“ আষাঢ় ভাই একটু বসবেন? আমার কোনো বড় ভাই নেই। আমি একাই। বাবা মায়ের কাছে যখন যা চেয়েছি আমাকে তাই এনে দিয়েছে। কখনও বলে নি এনে দিতে পারবে না। আজ সেই ছেলেই তার প্রিয় মানুষ টাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। নিশ্চয়ই যুক্তিসঙ্গত কারন আছে বিধায়।
আষাঢ় বসে পড়লো রাহুলের পাশে। কাঁধে হাত রেখে বলল-
-“ কেনো ফিরিয়ে দিচ্ছ নিজের প্রিয় মানুষটাকে?

-“ আপনি কখনও মানতে পারবেন? আপনার প্রিয় নারী আপনাকে ভালোবাসে না। তার মনে অন্য এক পুরুষ আছে। সংসার কি করতে পারতেন? একটা মেয়ের মনে আমি ছাড়া অন্য পুরুষের বসবাস সর্বদা সেখানে আমি কি করে জেনেশুনে তাকে বিয়ে করি বলুন? আমার তো বিবেক বলে কিছু একটা আছে। এমন যদি হতো বিয়ের পর জানতে পেরেছি তাহলে না হয় মেনে নিয়ে চলা যায়। কিন্তু বিয়ের আগেই যেখানে শুনলাম আমার প্রিয় নারী অন্য এক পুরুষ কে পাগলের মতো ভালোবাসে সেখানে আমার দ্বারা হচ্ছে না বিয়েটা করার। আমার নিজেক লোভী মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো নিজ হাতে জেনেশুনে আরেকটা সচল প্রান হয়তো চিরতরে দমবন্ধ করে সাথে ঝুলিয়ে রাখতাম।
আষাঢ় নিশ্চুপ হয়ে গেলো। সে কনা আর রাতের ব্যপার টা জানার পরও নিজ থেকে রাত কে ফোন দিয়ে এসব জিজ্ঞেস করে নি। কারন কারো মনে জোর করে কিছু বলে তো আর অনুভূতি তৈরি করা যায় না। আর রাহুল ছেলেটাকেও তার মন্দ মনে হয় নি।

“তাহলে কি তুমি মনে করো, নিজের ভালোবাসার মানুষকে তার মতো করে ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত? তুমি যে পদে পদে ভেঙে পড়বে।
-“ আষাঢ় ভাই, ভাঙছি তো প্রতিটা মুহূর্তে। আমি চাইলে জোর করেই বিয়ে করতে পারতাম। কিন্তু কনা সুখী হবে না, আমিও না। আমরা দু’জনেই হয়তো বেঁচে থাকতাম, কিন্তু আমাদের জীবনটা বয়ে নিয়ে যেতাম বোঝার মতো করে। ভালোবাসা মানে তো শুধু পাওয়া নয় ভাইয়া। হারানোর পরেও শক্ত থেকে তাকে সুখী দেখতে চাওয়া। কনাকে আমি ভালোবাসি বলেই তার ইচ্ছেগুলোকে বাঁধা দিতে চাই না। বরং তার মুক্তিই আমার ভালোবাসার প্রকৃত প্রকাশ।”
আষাঢ় মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ রইল। নিজের ভেতরে অদ্ভুত এক দ্বন্দ্ব অনুভব করল।
আষাঢ় গভীর গলায় বলল—
“রাহুল, ভালোবাসা কখনো সহজ নয়। কিন্তু তুমি আরেকবার ভেবে দেখো। তোমরা একটা ডিসিশন পরে না আবার আফসোসের কারন হয়।
রাহুল দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

“আমি নিশ্চিত। আফসোস হবে না, আষাঢ় ভাই। কনার প্রতিটি কথা, প্রতিটি অনুভূতিতে রাতের জন্য ভালোবাসা স্পষ্ট। আমি শুধু তার সুখের জন্য সরে যাচ্ছি। কনার সুখই আমার শান্তি।
-“ আর তোমার সুখ?
-“ কখনও দেখছেন কারো জন্য কারো জীবন থেমে থাকতে? আমার জন্য হয়তো আল্লাহ তায়ালা অন্য কাউকে বানিয়েছেন। কনা হয়তো আমার বুকের বা পাঁজরের তৈরি নয়।
আষাঢ় আর কিছু বলল না। কয়েক মুহূর্ত বসে থেকে উঠে দাঁড়াল। রাহুলের কাঁধে হাত রেখে বলল—
“তোমার কি মনে হয় তুমি কনাকে বিয়ে না করলে রাত বিয়ে করবে? আমি চিনি তো আমার ভাইকে। ও করবে না বিয়ে।

-“ আপনারা সকলে মিলে বুঝাবেন। রাত ঠিক বুঝবে। একটা পুরুষকে একটা নারী খুব সহজে বদলে ফেলতে পারে। কিন্তু একটা পুরুষ সেটা এতো সহজে পারে না। আর আমার এতো ধৈর্য নেই ভাই। আসছি আপনি কথা বলুন রাতের সাথে। ও মানবে।
রাহুল উঠে চলে গেলো। আষাঢ় পকেট থেকে ফোনটা বের করে রাতকে ফোন করলো। দুবার রিং হতেই ফোন রিসিভ হলো। আষাঢ় ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো-
-“ কোথায় তুই?
-“ স্টেশনে?
-“ কোথাকার?
-“ রাজশাহীর।
-“ তুই রাজশাহী? এ বাসায় আসতেছিস?
-” না ঢাকা যাচ্ছি।
-“ ওয়েট কর আমি আসতেছি।
আষাঢ় ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে স্টেশনের দিকে ছুটলো। মিনিট ত্রিশের মধ্যে স্টেশনে আসতেই দেখা মিললো রাতের। বেঞ্চে বসে আছে। আষাঢ় হেয়ালি না করে সোজা বলল-

-“ কনা কে বিয়ে করবি তুই?
রাত ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কিসব বলছো। আমি কেনো কনা কে বিয়ে করবো? ওর রাত পোহালে কাল বিয়ে।
-“ তুই ও বাড়ি গিয়েছিলি?
-“ হু।
-“ কেনো?
-“ কনার সাথে শেষ বারের মতো দেখা করতে।
-“ রাহুল বিয়েটা করতে পারবে না বলে দিছে।
-“ হোয়াট!
-“ হ্যাঁ। একমাত্র তোর কারনে। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে সেটা জানারপরই না করে দিয়েছে।
-“ জানলো কি করে?
-“ তোদের দুজন কে এক সাথে হয়তো দেখে নিয়েছিল আজ।
-“ আমি ওর সাথে কথা বলছি। বুঝাচ্ছি। ও বুঝবে।
-“ বলে লাভ নেই। আমি কেবল ওর কাছ থেকেই আসলাম। ও করবে না বিয়ে।

কথাটা বলতেই আষাঢ়ের ফোন বেজে উঠলো। আষাঢ় পকেট থেকে ফোন বের করতেই দেখলো সন্ধ্যা ফোন করেছে। আষাঢ় ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই সন্ধ্যা বলল-
-“ বুঝাতে পারলেন রাহুল কে?
-“ না রাহুল বুঝে নি। আর রাতের কাছে এসেছি স্টেশনে।
-“ স্টেশনে মানে?
-“ রাত রাজশাহী এসেছিল আজ। কনার সাথে দেখা করেছে। তখনই রাহুল দেখে ফেলছে।
-“ ফোনটা ওর কাছে দিন তো।
আষাঢ় রাতের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বলল-
-“ নে সন্ধ্যা কথা বলবে।
রাত ফোনটা কানে নিতেই সন্ধ্যা বলল-
-“ আমি আসার আগে আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি আসবেন কি না। প্রতিত্তোরে আপনি কি বলেছিলেন?
-“ না করেছিলাম।

-“ তাহলে আপনি কেনো আসলেন? আপনি যদি না আসতেন তাহলে রাহুল আপনাদের একত্রে দেখতো না। আর না আপনার ব্যপারে শুনতে পারতো। এখন এর দায়ভার কে নিবে? শুধু মাত্র আপনার জন্য কনার বিয়েটা ভেঙে গেছে। আমি কখনই আপনাকে বলতাম না কনার হয়ে কথা। কারন আমি জানি জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। আমি কনার সাথে রাহুলের বিয়েতে একটু আপত্তি করেছিলাম ডায়েরি টা পড়ে। কিন্তু পরে রিয়েলাইজ করেছি কনা ঠিক কাজটাই করছে৷

কিন্তু আপনি তো কাজ টা ঠিক করলেন না। এখন আপনার করা দায়ভার কি এই পরিবার চুকাবে এখন? কনার বিয়েটা ভেঙে যাওয়ার পেছনে তো আপনি। মেয়েটা যদি এখন শুনে রাহুল বিয়ে ভেঙে দিছে তাহলে কি হবে ভেবেছেন? আপনাকে তো পেলোই না। আবার বিয়ের দিনই শুনলো তার বিয়ে ভেঙে গেছে৷ রাত টা ভাবুন। আপনার কি করনীয়। রাহুল তো বিয়ে করবে না। এখন কনার দায়ভার কে নিবে? কাল বিয়তে হয় আপনি রাহুল কে বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে আসবেন আর তা না হলে আপনি আসবেন৷ বাকিটা আপনার উপর নির্ভর করছে কি করবেন। আপনার ভাইয়ের কাছে ফোন দিন।
রাত এগিয়ে দিলো ফোন টা। আষাঢ় কানে নিতেই সন্ধ্যা বলল-

-“ আপনার ভাই কি করবে না করবে তাকে ভাবতে বলুন। আজকের পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ ভাবে সে দায়।
কথাটা বলেই সন্ধ্যা ফোন কেটে দিলো। কনা ঘুমিয়ে আছে। সন্ধ্যা সোজা কামরুল হাসানের রুমে গেলেন। দেখলো তিনি সোফায় কপালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে৷ সন্ধ্যা দরজায় কড়া নাড়লো৷ কামরুল হাসান নড়েচড়ে বসলেন। চোখে চশমা লাগিয়ে বললেন-
-“ আসো ভেতরে। রাহুল কে রাজি করাতে পারলে?
-“ না আঙ্কেল। রাহুল রাজি হচ্ছে না।
-“ তাহলে এখন কি করবো? আমার মান সম্মান তো সব নষ্ট হয়ে যাবে।
-“ আঙ্কেল একটা কথা বলতাম।
-“ বলো।
-“ বলছি আমার দেবর রাত। রাত আর কনা একই কোচিং সেন্টারে পড়েছে। যদি রাত কোনো ভাবে কনাকে..বুঝতে পারছেন কি বলছি?

-“ এটা হয় কি করে সন্ধ্যা। ছেলে কেমন সেটা তো জানি না।
-“ আষাঢ় কে আপনার কেমন লেগেছে?
-“ ভালোই।
-“ আষাঢ়েরই ছোট ভাই সে। আর কনা তো তাকে চিনেই।
-“ কিন্তু লোকজন কি বলবে?
-“ একটু তো কানাঘুঁষা করবেই।
-“ রাত কি করবে বিয়ে? আর কনা সে?
-“ কনা করবে। সেটা নিয়ে প্যারা নেই। রাতও ঠিক আসবে বিয়েতে। আপনার আপত্তি নেই তো? কনা আমার সাথেই থাকবে।
-“ ঠিক আছে যা ভালো হয় সেটাই করো। তোমরাই আমার ভরসা।
-“ নিশ্চিন্তে ঘুমান আপনি। আসছি।
আষাঢ় সারা রাত টা রাত কে বুঝালো। অবশেষে ধৈর্য্য বাঁধ ভেঙে যেতেই ভোরের দিকে চলে আসলো।
বর্তমান,,
রুমের নীরবতা কে পেছনে ঠেলে দিয়ে সন্ধ্যা বলে উঠল-

-“ আঙ্কেল এবার তো আমাদের ফিরতে হবে।
কামরুল হাসান উঠে দাঁড়ালো। মাথা ঝাঁকিয়ে রুম থেকে বের হলো। কনা আর রাত পাশাপাশি বসে আছে৷ কনা ভাবছে এমন কিছু কি করে হলো। রাতের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল-
-“ আপনার সাথে আমার বিয়েটা হলো কি করে? আপনাকে কি সন্ধ্যা তাবিজ করে নিয়ে আসছে?
রাত রাগী চোখে তাকালো কনার দিকে। কনা ভরকে গেলো। কামরুল হাসান এগিয়ে আসলেন। রাতের হাত ধরে বললেন-

-“ তোমাকে আমি চিনি না বাবা। শুনেছি তুমি আষাঢ়ের ভাই। আশা করি তুমি আষাঢ়ের মতোই। তোমার হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিয়েছি পরিস্থিতির শিকার হয়ে। আমার মেয়েকে কখনও কষ্ট পেতে দিও না বাবা।
রাত চোখে ভরসা দিলেন কামরুল হাসান কে। হাতের উপর হাত রেখে বললেন-
-“ চিন্তা করবেন না আঙ্কেল। কবুল বলে আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি৷ তাকে সুখে রাখার সকল দায় আমার। আর কথা দিচ্ছি অখুশি রাখবো না আপনার মেয়েকে।
কথাটা শুনে স্বস্তি পেলেন কামরুল হাসান। মেয়ের দিকে এগিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলো। কপালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ সুখী থাকো সর্বদা।

কনা বাবা কে জড়িয়ে কেঁদে ফেললো। বেশকিছুক্ষন কান্না কাটি হলে সন্ধ্যা কনা কে নিয়ে গাড়িতে বসায়। পাশে রাত কে বসতে বলে। রাত কনার পাশে বসে। আষাঢ় সন্ধ্যা সামনে বসে। আর আরাফাত শরিফা তাদের গাড়িতে বসে।
গাড়ি ছুটে চলছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। ভেতরে চাপা এক অস্বস্তি আর নীরবতা। কেউই কোনো কথা বলছে না। কনা জানালার বাইরে তাকিয়ে। তার মনের ভেতরে যেন ঝড় বইছে। কোথাও যেনো হিসেব মিলছে না।
রাত একপলক তাকিয়ে আছে কনার দিকে। কনার অভিব্যক্তি পড়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার চোখে-মুখে ভাবনার রেশ ছাড়া আর কিছুই দেখছে না।
আমেনা বেগম সোফায় বসে বসে টিভি দেখছেন। ছেলেপেলে কেউ বাসায় নেই। আর রাতটাও কোথায় গেছে যে ফিরে নি আর। ফোন ও ধরছে না। আকস্মিক কলিং বেল বাজতেই রাত এসেছে ভেবে দরজাটা খুললো।
ফ্ল্যাটের দরজা খুলতেই আমেনা বেগম ভেতরে থেকে বললেন—
“রাত, এত দেরি হলো কেন? ফোনও রিসিভ করছিস না যে!
কথাটা বলেই তাকাতেই রাতের পাশে কনা কে বধূ বেশে দেখে চমকে বলল-

-“ কনা!
আষাঢ় সন্ধ্যা পেছন থেকে সামনে এগিয়ে আসলো। সাথে আরাফাত আর শরিফা ও। তাদের হাতে ফুল। আসার পথে নিয়ে এসেছে। রুম সাজাবে বলে।
কনার ক্লান্ত মুখের দিকে একবার তাকিয়ে গভীর শ্বাস ফেলল। ভেতরে ঢুকে সোজা মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
“মা, কনা এখন থেকে এই বাসার সদস্য।”
আমেনা কিছুটা অবাক হয়ে বললেন—
“মানে?

-“ কনা আর রাতের বিয়ে হয়ে গেছে।
-“ কিহ! কেউ কোনো কিছু জানালেও না? কীভাবে হঠাৎ এমন হলো?”
রাত চুপ করে মাথা নিচু করে বসে পড়ল। তার মুখে ক্লান্তির ছাপ। কনা দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে, কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। আমেনা বেগম একটু শান্ত কণ্ঠে বললেন—
“এসো, ভেতরে বসো। আমি কিছুটা পানি এনে দিচ্ছি। তারপর সব খুলে বলো।”
কনা ধীর পায়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে এসে কোণের সোফায় বসে পড়ল। এদিকে আষাঢ় বলল—
“মা, আমি সব বলব। তবে এখন কনা আর রাত কে একটু বিশ্রাম নিতে দাও। ওরা খুব ক্লান্ত।”
আমেনা বেগম বললেন—

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৭

“ঠিক আছে।
কনা একবার রাতের দিকে তাকাল। তার চোখে প্রশ্ন, অস্বস্তি আর ধকলের ছাপ স্পষ্ট। সন্ধ্যা কনাকে রুমে নিয়ে যেতে চাইলে শরিফা আর আরাফাত বাঁধা দেয়। তারা হাল্কার উপর ঝাপ্সা সাজাবে রুম টা। আজ তো বাসর রাত। সন্ধ্যা মাথা নেড়ে বোঝাল আচ্ছা। ওরা রুম সাজাতে চলে গেলো। আষাঢ় তার মাকে নিয়ে তার রুমে চলে গেলো।

আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ২৯