আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৩
Raiha Zubair Ripti
আজ রাতের অফিসের প্রথম দিন। রাত রেডি হয়ে রুম থেকে বের হতেই দেখলো কনা হাতে করে পায়েসের বাটি নিয়ে আসছে। রাতের সামনে দাঁড়াতেই রাত বলে উঠল-
-“ পায়েস?
কনা মৃদু হেঁসে বলল-
-“ হুমম।
-“ মা বানিয়েছে?
-“ না আমি। খেয়ে দেখুন।
রাত চামচ দিয়ে একটু উঠিয়ে মুখে নিয়ে বলল-
-“ ভালোই হয়েছে।
-“ তাহলে শুধু একটু খেলেন কেনো?
-“ সময় নেই। এসে খাবো। এখন আসছি।
রাত চলে গেলো। কনা তপ্ত শ্বাস ফেলে পায়েসের বাটিটা টেবিলে রেখে দিলো।
সন্ধ্যা রেডি হয়ে নিয়েছে। আজ রাজশাহী যাবে। দুদিন থেকে ক্লাস সেরে চলে আসবে। আষাঢ় নিচে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে৷ সন্ধ্যা আয়নায় নিজেকে একবার দেখে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। কনাকে টেবিলের উপর মনমরা হয়ে বসে থাকতে দেখে বলল-
-“ কি হয়েছে তোর?
কনা সন্ধ্যা কে দেখে নড়েচড়ে বসে বলল-
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-“ কিছু না। যাচ্ছিস?
-“ হু। সাবধানে থাকিস আসলাম।
সন্ধ্যা নিচে এসে গাড়িতে উঠে বসলো। আষাঢ় আড়চোখে তাকালো। সেলোয়ার-কামিজ পড়ে আছে সন্ধ্যা। আষাঢ় গাড়ি স্টার্ট দিতেই সন্ধ্যা বলল-
-“ আমি রাজশাহী থেকে ফিরে এসে নিখিল ভাইয়ের সাথে দেখা করতে চাই। নিয়ে যাবেন তো?
-“ হঠাৎ নিখিলের সাথে দেখা করবে কেনো?
-“ আমি সব টা জানতে চাই।
-“ কি জানতে চাও? আমায় বলো আমি বলছি।
-“ নিখিল ভাই কি সত্যি বিয়ে করে নি?
-“ না। সেদিন তো বললাম।
-“ কেনো করে নি?
-“ জানি না।
-“ তাহলে অন্যের বিয়ের ছবি কেনো তার কলিগ শ্রেয়া কে পাঠিয়ে বলল নিখিল বিয়ে করেছে?
-“ শ্রেয়ার সাথে নিখিলের ঐ কলিগের মাঝেমধ্যে কথা হত। তো নিখিলের থেকে শ্রেয়ার ব্যপারে সব শুনে শ্রেয়ার উপর রেগে গিয়েছিল। ইউ নো শ্রেয়া রীতিমত ব্ল্যাকমেইল করে নিখিল কে বিয়ে করেছে। সেটা ওর কলিগ জানতো না। জানার পর সে শ্রেয়াকে দেখাতে চেয়েছিল নিখিল সুখে আছে।
-“ শ্রেয়া কি জানে না এখনও ওটা ফেক ছিলো?
-“ না মেবি।
-“ ও জীবনেও সুধরাবে না। আপনি প্লিজ ওর সাথে কম মিশবেন। ও হয়তো চায় না আমি সুখী থাকি।
-“ যা আপনার মর্জি ম্যাডাম।
বিকেলের দিকে রাজশাহী চলে আসলো সন্ধ্যা। হলের সামনে নামিয়ে দিয়ে গেছে আষাঢ়। তার পরপরই সে ফিরে চলে গেছে। সন্ধ্যা নিজের হল রুমে বসে ফ্রেশ হয়ে ফের প্রেজেন্টেশন টায় চোখ বুলালো।
কনা বিকেলের দিকে শাশুড়ির সাথে বাজারে এসেছে সবজি কিনতে। সবজি কেনার সময় হঠাৎ আকস্মিক রাহুল কে দেখে চমকে উঠলো। শাশুড়ী কে কিনতে বলে সে এগিয়ে গেলো রাহুলের দিকে। রাহুল দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার ধারে। কনা গিয়ে সামনে দাঁড়াতেই রাহুল ও চমকে উঠলো। রাহুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
-“ কনা যে৷ কেমন আছ?
-“ জ্বি ভালো আছি। আপনার সাথে কথা বলা যাবে?
রাহুল আশেপাশে তাকিয়ে বলল-
-“ হু বলো।
-“ বিয়ে কেনো করলেন না আমায়?
-“ তাতে নিশ্চয়ই আফসোস বা ক্ষতি কোনো টাই হচ্ছে না তোমার।
-“ আপনি না আমাকে ভালোবাসতেন?
-“ তুমি না রাত কে ভালোবাসতে? আমি চাই নি এমন কাউকে যার মনে আরেক পুরুষের বসবাস। সেজন্য মানা করে দিয়েছি।
-“ কার সাথে কথা বলছো রাহুল ভাইয়া? কে উনি?
কথাটা বলতে বলতে একটি মেয়ে রাহুলের পাশে এসে দাঁড়ালো। মেয়েটা ভীষণ মিষ্টি দেখতে। রাহুল মেয়েটার হাত ধরে বলল-
-“ মিষ্টি ও কনা।
নাম টাও মিষ্টি!
-“ উনিই সেই কনা?
-“ হুম। কনা ও হচ্ছে মিষ্টি। আমার কাজিন+আমার হবু বউ। খুব শীগ্রই আমাদের বিয়ে হতে যাচ্ছে। ইনভাইটেশন পাঠিয়ে দিব প্লিজ রাত ও সবাই কে নিয়ে চলে এসো। মিষ্টি চল যাওয়া যাক।
রাহুল চলে গেলো মিষ্টির হাত ধরে। কনা দাঁড়িয়ে গেলো। সবাই সবার লাইফ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ কনা ভালোবাসার মানুষটাকে পেয়েও ভালোবাসা পাচ্ছে না।
কনা চুপচাপ শাশুড়ির পাশে এসে দাঁড়ালো। আমেনা বেগম আলুর ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল-
-“ কোথায় চলে গিয়েছিলে?
-“ একটু সামনেই। বাজার শেষ?
-“ হুম।
কনা অন্যসব বাজারের ব্যাগ নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো।
রাত অফিস শেষে রাস্তায় হাঁটতে শুরু করল। চারপাশ নিস্তব্ধ, এক অদ্ভুত নীরবতা ভেসে আছে পুরো পরিবেশে। মাঝে মাঝে কিছু গাড়ির হর্ন আর পথচারীদের ছায়ামূর্তি সেই নীরবতা ভঙ্গ করছে। রাত পকেট থেকে ফোন বের করে সময় দেখল। রাত প্রায় এগারোটা। নিজের মনে ভাবল, “দিনটা আজ অদ্ভুত কেটেছে।”
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছাতেই নিজের ঘরের জানালার আলো চোখে পড়ল। মনে একটা প্রশ্ন উঁকি দিল— “এত রাতে কনা এখনো জেগে আছে কেন?” কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই নিজের চিন্তাগুলো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল রাত।
বাড়িতে ঢুকেই দেখল, কনা সোফায় বসে আছে। তার মুখটা যেন একদম নিস্তেজ, হালকা ক্লান্তি মিশে আছে চোখে-মুখে। টেবিলের ওপর পায়েসের বাটিটা যেমন রাখা হয়েছিল, ঠিক তেমনই আছে। একবারও স্পর্শ করা হয়নি।
রাত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধীর গলায় বলল—
“এখনো ঘুমাওনি?”
কনা মাথা নিচু করে বসে রইল। কোনো উত্তর দিল না। তার নীরবতা যেন আরও ভারী করে তুলল চারপাশের পরিবেশ। রাত একটু বিরক্ত হলেও নিজেকে সংযত করল। তারপর পায়েসের দিকে ইঙ্গিত করে বলল—
“পায়েস ভালো হয়েছিল। একটু গরম করে দাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
কনা এবারও কোনো কথা বলল না। রাত এক ঝলক কনার দিকে তাকিয়ে নিজের রুমে চলে গেল। রাত ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখলো পায়েশ টা গরম করে রাখা হয়েছে। রাত খেয়ে নিলো। কনা বসার ঘরের জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। কাল অফিস আছে কথাটা মাথায় রেখে চলে গেলো রুমে ঘুমানোর জন্য রাত।
বিছানায় শুয়ে রাতের ঘুম ধরলো না। বরং মাথায় নানা চিন্তা ভিড় করল। অফিসের নতুন দায়িত্ব, আর কনার আজকের আচরণ—সবকিছু যেন এলোমেলো লাগছে। কিছু কি হয়েছে আজ? চোখ বন্ধ করতে চাইল, কিন্তু মনে অদ্ভুত এক অস্থিরতা ভর করল।
জানালার বাইরে গভীর রাতের অন্ধকার। আকাশের চাঁদটাও যেন কনার মতোই একা। মনে পড়লো রাহুলের কথা। তার সেই কঠিন অথচ নির্মম স্বীকারোক্তি—
“আমি চাইনি এমন কাউকে, যার মনে অন্য কারো জায়গা আছে।”
একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল কনার বুক থেকে। চুপচাপ জানালার গ্রিলে হাত রেখে কনা নিজেকে বলল—
“কেন যেন কেউ আমাকে বুঝতে চায় না। ভালোবাসা কেন এভাবে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে?” ভালোবাসা কি সত্যিই এত কঠিন?
ঘরের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা কনার একাকিত্ব যেন রাতের নীরব অন্ধকারকে আরও গভীর করে তুলছিল।
অন্যদিকে, রাত নিজের রুমে শুয়ে অস্থিরভাবে পাশ ফিরে ভাবলো-
“আচ্ছা আমি তো এমন ছিলাম না। আমি তো প্রানবন্ত চমৎকার একটি মানুষ ছিলাম। হঠাৎ কেনো এমন পাল্টে গেলাম। এই পাল্টানোর পর থেকেই জীবনে সুখ নামক শব্দ টার অস্তিত্ব ই যেনো বিলীন হয়ে গেছে। আচ্ছা আমি কি কনার সাথে অবিচার করছি না? কনার প্রতি আমার এই দূরত্ব কি আসলেই ঠিক হচ্ছে ? মানলাম সন্ধ্যাকে ভালোবাসতাম তাই বলে কি কনার সাথে এটা করা ঠিক হচ্ছে। সন্ধ্যাও তো এক সময় পাগলের মত ভালোবাসতো নিখিল কে। তারপর তো সন্ধ্যা ভাইয়াকে আপন করে নিয়েছে। সবাই সবার জীবন নিয়ে এগিয়ে গেছে। আমারও উচিত এগিয়ে নেওয়া। একদম আগালেই না আরেককদম আগাবে।
রাত অনেকক্ষণ বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করল। ঘুম যেন তার চোখের ধারেকাছেও নেই। মনটা কেমন অস্থির। কনার নির্লিপ্ত মুখটা বারবার মনে পড়ছে। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে বসল সে।
রাতের একটাই অভ্যাস, কিছু ভাবলে আর মন থেকে সরাতে পারে না। কনার সাথে তার সম্পর্কটা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটা নিয়ে কখনো সে খুব গভীরভাবে ভাবেনি। কিন্তু আজ মনে হলো, এভাবে চলতে থাকলে হয়তো দুজনেই একসময় আরও দূরে সরে যাবে।
রাত ধীরে ধীরে দরজা খুলে বাইরে এল। ড্রয়িং রুমে এসে দেখল, কনা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের আঙুলগুলো গ্রিলের ফাঁক গলিয়ে বাইরে প্রসারিত, চোখ দুটো দূরের অন্ধকারে স্থির।
রাত কিছুক্ষণ কনার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। এই মেয়েটা তাকে ঘিরে আছে, তার খুব কাছেই থাকে—তবু কেমন যেন দূরের কেউ মনে হয়।
-“কনা,” হালকা গলায় ডাকল রাত।
কনা ধীরে ফিরে তাকাল। চোখে ক্লান্তি মাখা এক ধরনের স্থিরতা।
-“এখনো ঘুমাতে আসলে না যে?
কনা মাথা নাড়ল। কোনো কথা বলল না।
রাত আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলল—
-“সব ঠিক আছে তো?”
কনা মৃদু হেসে বলল—
-“সব ঠিক। আপনি ঘুমান নি কেন?”
রাত একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ল। তার কণ্ঠ নরম, তবু গভীর—
-“তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করল।”
কনা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল—
-“কথা বলতে ইচ্ছে হলেই কি সব কথা বলা যায় কাউকে?”
রাত এবার কনার দিকে সরাসরি তাকাল। তার চোখের গভীরতা কনাকে যেন আরও চুপ করে দিল।
-“সব কথা বলা যায় না, কিন্তু যা না বললে মন ভারী হয়ে যায়, সেটা বলা উচিত,” বলল রাত।
কনা একটা নরম হাসি দিয়ে বলল—
-“আপনার মনের কথাগুলো কি কখনো ভারী হয় রাত?”
রাত কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল—
-“হয়তো হয়, হয়তো নয়। কিন্তু আজ তোমার কি হয়েছে কনা, এত চুপচাপ কেনো?
কনার চোখ ভিজে উঠল। কিন্তু সে চোখ সরিয়ে বলল—
– কিছু হয় নি। আমি ঠিক আছি।”
রাত এবার উঠে দাঁড়াল। কনার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, তার কাঁধে হাত রেখে বলল—
-“ শোনো কনা মিথ্যা বলো না। মিথ্যা তুমি বলতে পারো না। সম্পর্ক মানে একে অপরের উপর ভরসা করা। আমি চাই, তুমি আমায় সব খুলে বলো। তোমার মনের সব কথা আমি শুনতে চাই। হয়তো আমি সব সমাধান দিতে পারব না, কিন্তু তোমার পাশে দাঁড়াতে পারব। আর যদি কিছু বলতে না চাও, তাও ঠিক আছে। শুধু জানো, আমি আছি।”
কনা মাথা নিচু করে থাকল। চোখের পানি থামানোর চেষ্টা করছিল। কিন্তু রাতের হাতের স্পর্শ যেন তার সব প্রতিরোধ ভেঙে দিল। ধীরে ধীরে বলল—
-“আপনি কখনো আমায় বুঝতে চাননি রাত। আমি কি চাই, সেটা কেউ বোঝে না। সবাই নিজের মতো করে বিচার করে। আপনি কি বুঝতে পারছেন, আমি…”
কথা শেষ করতে পারল না কনা। চোখ থেকে ফোঁটা ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল। রাত আর কিছু বলল না। তার হাতটা কনার কাঁধে রাখাই রইল।
-“তুমি কাঁদছ কেন, কনা? আমি কি এমন কিছু করেছি?”
কনা মাথা নাড়ল। কোনো উত্তর দিল না। রাতের মনটা কেমন করে উঠল।
-“ কি হয়েছে বলবে তো, কনা। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে, দুজনের মনের মাঝে কোনো দেয়াল থাকতে পারে না। আমি চেষ্টায় ত্রুটি রাখব না। তুমিও রাখো না, কেমন?”
কনা কিছু বলল না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে যেন এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করল। তার চোখ মুছতে মুছতে বলল—
-“আমি চাই আপনি সবসময় আমার পাশে থাকুন। আমায় আগলে রাখুন।
-“ প্রমিস আমি তোমাকে আগলে রাখবো। তোমার পাশে সবসময় থাকবো।
কনার চোখের জল শুকাতেই রাত নিজের হাত দিয়ে কনার কাঁধে হালকা চাপ দিয়ে বলল-
-“এতদিন তোমার সাথে হয়তো আমি ঠিকমতো কথা বলি নি। কিন্তু আমি চাই আমরা দুজন একে অপরকে বুঝি। সম্পর্ক টাকে সামনের দিকে নিয়ে এগোতে চাই।
কনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে নিচু গলায় বলল—
-“আপনি কখনো বোঝেননি আমার কষ্টটা। আমি তো আপনাকে খুব ভালোবাসি… অথচ প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয় আমি শুধু আপনার জন্য বোঝা হয়ে আছি।”
রাত কনার কথা শুনে স্থির হয়ে গেল। তার এই অভিমান, এই একাকিত্বের গল্প হয়তো রাত কখনো বুঝতেই চায়নি। রাত গভীর চোখে কনার দিকে তাকিয়ে বলল—
-“তুমি বোঝা হয়ে আছো, এমন ভাবনাটা আর এনো না মনে। তোমার সাথে এই সম্পর্কটা হয়তো আমি বুঝিনি, কিন্তু কখনোই ফেলে দেওয়ার মতো ভাবিনি।”
– “ শুধু শান্ত করার জন্য বলছেন?”
রাত এবার সরাসরি তার হাতটা ধরে বলল—
-“আমি যা বলছি, তা পুরোপুরি সত্য। হয়তো আমি নিজেও এই সম্পর্কটা নিয়ে দ্বিধায় ছিলাম। সব সম্পর্ক কখনোই নিখুঁত পারফেক্ট হয় না। সম্পর্ক গুলো পারফেক্ট নিখুঁত বানিয়ে নিতে হয়।
কনা কিছু বলল না, তবে তার চোখের পানি থেমে গিয়েছে। একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল—
-“আপনি জানেন, আমি শুধু আপনার একটু সময় আর মনোযোগ চেয়েছিলাম। আপনি যখন দূরে দূরে থাকেন, তখন মনে হয় আমি এই বাড়িতে শুধু একজন অতিথি।”
রাত এবার একটু হাসল।
-“ এই ব্যপার? শোনো তুমি অতিথি না, কনা। তুমি আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছ। আমি হয়তো তোমার মতো প্রকাশ করতে পারি না, কিন্তু আমি তোমার জন্যই এত কিছু করছি। নিজের স্বপ্ন টাও বিসর্জন দিয়ে ফেলছি। আজ থেকে আমি চেষ্টা করব তোমার ছোট ছোট এফর্ট গুলো পূরন করার। তুমি শুধু আমার ভুলগুলো দেখিয়ে দিও আমি ঠিক করে নিব। তুমি শুধু পাশে থাকবে, কেমন?”
কনার মুখে একটুখানি হাসি ফুটে উঠল। এই প্রথম রাতের কাছ থেকে এমন কথা শুনল। মনে হলো, অভিমান আর অপ্রাপ্তির ভার যেন একটু একটু করে হালকা হচ্ছে।
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩২
-“আপনি তাহলে আজ থেকে পাল্টে যাবেন?”
-“না,” রাত হেসে বলল। “আমি ধীরে ধীরে শিখব। ধীরে ধীরে পাল্টাবো। কিন্তু শর্ত আছে।”
-“শর্ত?”
-“তুমি তোমার সবকিছু খুলে বলবে । মন খুলে কথা বলবে। যতই কঠিন হোক, যতই কষ্ট হোক। আমরা দুজন মিলে সব ঠিক করব।”
কনা হালকা হেসে মাথা নাড়ল।
-“ঠিক আছে। তবে আপনি কিন্তু আমায় ছাড়বেন না কখনও।”
রাত মৃদু হেসে বলল—
-“ কখনই না।