আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৮
Raiha Zubair Ripti
নেক্সট শুক্রবারই আষাঢ় রাজশাহী চলে আসে। সন্ধ্যা কে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে চেক-আপ করিয়ে জানতে পারে সন্ধ্যা দু মাসের প্রেগন্যান্ট। আষাঢ় চোখে হারাচ্ছে সন্ধ্যা কে। সন্ধ্যার যেনো এই প্রেগন্যান্ট জার্নিটা সমস্যা পোহাতে না হয় সেজন্য আষাঢ় রাজশাহীর একটা বড় হসপিটালের সাথে কথা বলেছে। আগেও এসেছে এখানে রোগীর অপারেশন করতো। সেজন্য জবের কথা বলতেই হসপিটালের মালিক ডক্টর ফরিদ হোসেন এক বাক্যে রাজি হয়েছে। এর আগে ফরিদ নিজেই আষাঢ় কে এই হসপিটালে জব করার অফার দিয়েছিলো। কিন্তু আষাঢ় রাজি হয় নি।
এখন আষাঢ় নিজ থেকে বলায় সে মহা খুশি। আষাঢ় জাস্ট এক থেকে দেড় বছর এই হসপিটালেরে জব করবে। তারপর সন্ধ্যার অনার্স শেষ হলে ঢাকায় আগের হসপিটালেরে ফিরে যাবে। আগের হসপিটালের মালিক এতে রাজি আছেন। সে আষাঢ় কে ছোট ছেলের মতনই স্নেহ করে। তার নিজের কোনো ছেলে নেই। আষাঢ় বাবা হবে শুনে সে ভীষণ খুশি হয়েছে। একবার এসে সন্ধ্যার সাথে দেখা করবেন বলেছেন।
ডক্টর দেখিয়ে আষাঢ় সন্ধ্যা কে নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। আসার পথে অবশ্য সন্ধ্যা ফুচকা খেতে চেয়েছিলো। আষাঢ় এক ধমক দিয়ে বলেছে এসময় বাহিরের কোনো খাবার সে সন্ধ্যা কে খেতে এলাও করবে না। সন্ধ্যা তারজন্য আষাঢ়ের উপর ভীষণ রেগে আছে। বাসায় আসার পর থেকে কথা বলছে না। মুখটাকে হুতুম পেঁচার মতো বানিয়ে রেখেছে। আষাঢ় গলা খাঁকারি দিয়ে বলল-
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
-“ সন্ধ্যা আমার বাচ্চাকাচ্চার জন্য কি কোনো নাম ঠিক করছো?
সন্ধ্যা জবাব দিলো না। আষাঢ় এবার বিছানা ছেড়ে উঠে সন্ধ্যার পাশে এসে সোফায় বসলো।
-“ কি হলো চুপ কেনো? আমার বাচ্চাকাচ্চার বিষয়ে চুপ থাকলে কিন্তু আমি মেনে নিবো না মিসেস সন্ধ্যা আহমেদ। তাই ফটাফট বলো।
সন্ধ্যা প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট দেখছিলো। আষাঢ়ের কথায় রিপোর্ট দেখা বাদ দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ সবে মাত্র আমার প্রেগন্যান্সির দু মাস। ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে সেটাই জানি না। আন্দাজে কি নাম ঠিক করবো আমি?
আষাঢ় রিপোর্ট টা হাত থেকে নিয়ে বলল-
-“ আমার বাচ্চাকাচ্চার বিষয়ে এতো খামখেয়ালিপনা কেনো তোমার? ছেলে হোক মেয়ে হোক। হবে তো একটা তাই না। তোমার কি উচিত ছিলো না দু জোড়া নাম ঠিক করার? তবে তুমি খামখেয়ালি হতেই পারো। আমি তো আমার বাচ্চার বাবা। আমি তো আর খামখেয়ালি হতে পারি না তাদের নিয়ে। তাই আমি তাদের নাম ঠিক করে রেখেছি।
-“ তা কি নাম ঠিক করলেন শুনি?
-“ আমাদের মেয়ে হলে নাম হবে আরাধ্যা। আর ছেলে হবে নাম হবে আরাধ বা আরাধ্য। কেমন লাগলো?
-“ আনকমন তবে সুন্দর।
-“ দেখতে হবে নাম কে ভেবেছে। বাচ্চার মা নাম রাখলে দেখা যেতো নাম রাখতো ছকিনা,জরিনা,রহিম,করিম।
-“ শাট-আপ আমি এসব নাম রাখতাম না।
-“ তাহলে কি রাখতে?
-“ মেয়ে হলে নাম রাখতাম জমিলা। আর ছেলে হলে নাম রাখতাম মোখলেস। সুন্দর না?
-“ ভীষণ খারাপ ভাবনা তোমার। আমি বিশ্বযুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতাম তখন আমার বাচ্চাদের নাম এসব রাখা নিয়ে। হাইকোর্টে চলে যেতাম। আষাঢ় আহমেদের ছেলে মেয়ের নাম এসব রাখার কথা মাথাতেও আনো কি ভাবে হু?
-“ ওভাবেই। কারন আমি ওদের পেটে রাখছি। আমারও অধিকার আছে নাম রাখার।
-“ নো ওয়ে এই অধিকার আমি হরন করলাম তাদের বাবা হিসেবে। আমার বাচ্চা কাচ্চা ছো বলে কি ওদের মানসম্মান নেই? ওদের কেউ কোলে নিতে এসে নাম জিজ্ঞেস করলে বলবো আমার মেয়ের নাম জমিলা, ছেলের নাম মোখলেস! আমার বাচ্চাদের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি করার অধিকার তোমার নেই। তাই আমার নামই ফাইনাল।
-“ ওক্কে ডান তবে এক শর্তে।
-“ কি বলো?
-“ আমার ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে।
-“ বলো ভাত খাবা নাকি তরকারি? আমি নিয়ে আসতেছি।
-“ ধূর ভাত খাবো না তরকারিও খাবো না।
-“ তাহলে কি? নুডলস খাবা?
-“ রেঁধে আনবেন?
-“ অবশ্যই। তুমি খেতে চেয়েছো আর আমি রাঁধবো না?
-“ আচ্ছা যান রেঁধে নিয়ে আসেন।
আষাঢ় রুম থেকে বেড়িয়ে কনার রুমে টোকা দিলো। কনা রাতের সাথে কথা বলছিলো। আষাঢ়ের গলার আওয়াজ শুনে পরে কথা বলবে বলে ফোন কেটে বাহিরে আসতেই আষাঢ় বলল-
-“ তুমি এখন ফ্রী আছো কনা?
কনা মুচকি হেঁসে বলল-
-“ হ্যাঁ ভাইয়া। কেনো কিছু বলবেন?
-“ হু। বড় ভাইকে হেল্প করতে পারবে একটু?
-“ আপনি বলুন না কি হেল্প করতে হবে।
-“ নুডলস রান্না করবো। তুমি জাস্ট দেখিয়ে দিবে।
-“ আমিই রেঁধে দিচ্ছি চলুন।
-“ এ্যই না। আমি রাঁধবো। সন্ধ্যা খাবে।
-“ আচ্ছা আমি পেঁয়াজ মরিচ কেটে দিচ্ছি আপনি নুডলস টা সিদ্ধ করুন।
-“ ওক্কে চলো।
আষাঢ় আর কনা মিলে নুডলস টা রান্না করলো। এই প্রথম আষাঢ় খুন্তি হাতে নিয়ে রান্না ঘরে বউয়ের জন্য রাঁধছে। তিনটা প্লেটে নুডলস বেড়ে কনাকে বললো তাদের রুমে আসতে। তিনজন মিলে আড্ডা দিবে খেতে খেতে। কনা রুমে আসলো তাদের সোফায় বসলো সন্ধ্যার পাশে। সন্ধ্যা রুমের লাইট নিভিয়ে ল্যাপটপে হরর মুভি দেখছে। আষাঢ় নুডলসের বাটি সন্ধ্যার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল-
-“ নিন ম্যাডাম।
-“ পারলেন রাঁধতে তাহলে?
-“ জ্বি ম্যাডাম শখের নারীকে বিয়ে করেছি।তারজন্য এটুকু পারবো না?
-“ গুড। কয়েকমাস পর তো বাবুর পটির ত্যানাও ধুতে হবে।
-“ সমস্যা নাই একদিন বাবা একদিন চাচা তো একদিন খালা পরিষ্কার করবে। কি কনা খালা হিসেবে করবে না?
-“ খালা চাচি দুই হিসেবেই করবো ভাইয়া।প্যারা নিয়েন না। আমাদের পুচকু শুধু দুনিয়াতে আসুক। তার চাচা খালা তাকে আদরে মুড়িয়ে রাখবে। রাত তো এখন থেকেই এক্সাইটেড।
-“ তুইও একটা বেবি নিয়ে ফেল কনা।
-“ আমি এখন বেবি নিলে তোর বাচ্চা পালবে কে শুনি? তাছাড়া আমার অনার্স শেষ হবে রাত আর একটু স্টাব্লিশ হবে তারপর ভাববো আমরা।
-“ গুড আমার যা হবে তার উল্টো টা যেনো তোর হয়। তাহলে ঘরের ছেলে মেয়ে ঘরেই রাখবো বাহিরে দিব না। কি বলুন ডাক্তার?
আষাঢ় নুডলস খেতে খেতে বলল-
-“ ছেলেমেয়ে যেখানে পছন্দ করবে আমি সেখানেই দিব। সেটা বাড়ির ভেতর হলে ভেতরে আর বাহিরে হলে বাহিরে। তোমরা দুজন বরং আজ এক সাথে ঘুমাও আজ। আমার অনেক কাজ আছে সেগুলো করতে হবে। কনা তোমার রুমে বসে কাজ করলে কোনো সমস্যা হবে তোমার?
-“ আরে না ভাইয়া আপনি বরং গিয়ে কাজ করুন।
আষাঢ় চলে আসলো। সন্ধ্যা কনা আর কিছুক্ষণ মুভি দেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আষাঢ় রাত জেগে কাজ করলো।
সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে যায় সন্ধ্যার। কনা ঘুমে বিভোর। সন্ধ্যা নিজের রুম থেকে বেরিয়ে কনার রুমে ঢুকে আষাঢ় কে দেখার জন্য। গিয়ে দেখে আষাঢ় সোফায় বসে কাজ করতে করতে ওখানেই ঘুমিয়ে গেছে। সন্ধ্যা কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে দেখলো আষাঢ় কে। তারপর ফ্লাই কিস ছুঁড়ে দিয়ে বিরবির করে বলল-
-“ কিতনা হ্যান্ডসাম মেরা পাতি।
তারপর উঠে সন্ধ্যা রান্না ঘরে আসলো। পরোটা আর ডিম ভেজে টেবিলে সাজিয়ে কনা কে ডেকে দিলো। কনা ঘুম থেকে উঠে বাহিরে আসতেই টেবিল সাজানো দেখে বুঝলো সন্ধ্যা করেছে এসব।
-“ আমাকে ডাকতি। আমি বানাতাম ব্রেকফাস্ট।
-“ সবসময় তো বানাসই। আজ না হয় আমি বানালাম। ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে আয়। খেয়ে ভার্সিটি যাব।
কনা ফ্রেশ হয়ে নিলো। সন্ধ্যা আষাঢ় কে ডেকে দিলো। আষাঢ় হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে আসলো। তিনজন ব্রেকফাস্ট করে নিলো। আষাঢ় তার গাড়ি দিয়ে কনা আর সন্ধ্যা কে ভার্সিটি তে নামিয়ে দিলো।
সন্ধ্যা কনা ভার্সিটি শেষ করে একটু মলে গেলো কেনাকাটা করতে। আগামীকাল আষাঢ়ের বার্থডে সেজন্য গিফট কিনতে আসলো। আষাঢ়র জন্য একটা পাঞ্জাবি, ঘড়ি আর পারফিউম কিনলো। কিনে মল থেকে বের হতেই সন্ধ্যা নিখিল কে দেখতে পেলো। এক দোকান থেকে বের হচ্ছে। সন্ধ্যা অবাক হলো রাজশাহীতে নিখিল কে দেখে। রাজশাহীতে কেনো নিখিল? আচ্ছা সে কি এখনও একা? শ্রেয়ার বিষয় টা জেনেছে? তখন কেমন রিয়াক্ট করেছিলো? আচ্ছা নিখিল কি ভালো আছে?
সন্ধ্যার খুব কথা বলতে ইচ্ছে করলো নিখিলের সাথে। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো— কেমন আছেন নিখিল ভাই?
কিন্তু জিজ্ঞেস করা আর হলো না। রিকশায় উঠল চলে গেলো নিখিল। সন্ধ্যার মন অজান্তেই ভার হয়ে আসলো। বাড়ি ফেরার সারা রাস্তাটা সন্ধ্যার মন খারাপে কেটে গেলো। বাসায় ঢুকে আষাঢ়ের মুখটা দেখতেই সব মন খারাপ চলে গেলো। মস্তিষ্ক থেকে উধাও হলো নিখিলের ভাবনা।
রাত রাতের দিকে বাসায় ফিরলো। বাসাটা এখন ফাঁকা আগের মতই। মা আর সে ছাড়া কেউ নেই। মা কে মন খারাপ করে বসার ঘরে বসে থাকতে দেখে রাত এগিয়ে আসলো। পাশে বসে বলল-
-“ খেয়েছো?
আমেনা বেগম না বললেন।
-“ মন খারাপ তোমার?
-“ পরশু আষাঢ়ের জন্মদিন। অথচ ছেলেটা আমার কাছে নেই। একটু কি দেখা করতে আসবে না সেদিন?
-“ এজন্য মন খারাপ করে বসে আছো! মন খারাপ করো না। আমরা ভাইয়াকে সারপ্রাইজ দিতে পরশু ভাইয়ার কাছে চলে যাব। এতে তুমিও ভাইয়াকে দেখতে পারবে আর ভাইয়াও খুশি হবে।
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৩৭
-“ সত্যি?
-“ হু সত্যি। আমি ছুটি নিয়েছি দুদিনের অফিস থেকে। তোমাকে নিয়ে যাব। কনার সাথে দেখা হবে আর ভাবিকেও দেখে নিবে।
আমেনা বেগমের চোখ মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।