আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৬
Raiha Zubair Ripti
রুমের বাতি নিভিয়ে পুরো রুম অন্ধকার করে বিছানায় শুয়ে আছে সন্ধ্যা। কেনো যেনো ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ করেও যখন দেখলো ঘুম আর আসছেই না তখন বিরক্ত হয়ে উঠে বসলো। বিছানা থেকে ফোন টা নিয়ে রুম থেকে বের হলো। সবাই ঘুমিয়ে গেছে৷ সন্ধ্যা দরজা খুলে বাহির থেকে লাগিয়ে ছাঁদে আসলো৷ রাস্তায় জ্বলতে থাকা আলোয় আবছা আলোকিত হয়ে আছে ছাঁদ টা। সন্ধ্যা ছাঁদে থাকা দোলনায় গিয়ে বসতেই শুনতে পেলো কোনো মেয়েলি কন্ঠ। সন্ধ্যা ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো। দেখলো রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলছে। সন্ধ্যা ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কে ওখানে?
শরিফা চমকে পেছন ফিরলো। সন্ধ্যা কে দেখে এগিয়ে এসে থতমত হয়ে বলল-
-“ আ..আমি শরিফা।
সন্ধ্যা ঠিক চিনলো না শরিফা কে। তাই জিজ্ঞেস করলো –
-“ নতুন এসেছো?
-“ না.. দু বছর হয়েছে এসেছি। আপনি বুঝি নতুন এ বাড়িতে?
সন্ধ্যা স্মিত হেঁসে বলল-
-“ না।
-“ তাহলে? আমি তো চিনতেছি না আপনাকে।
সন্ধ্যা চেপে বসে বলল-
-“ বসো।
শরিফা বসে পড়লো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“ এবার বলুন।
-“ থার্ড ফ্লোরে আমার রুম।
-“ থার্ড ফ্লোরে তো শ্রেয়াপু রা থাকে।
-“ হু।
-“ আপনি কি সন্ধ্যা?
-“ হ্যাঁ।
শরিফা চমকে বলল-
-“ সত্যি!
শরিফার চমকে যাওয়া দেখে সন্ধ্যা ভরকে গিয়ে বলল-
-“ হ্যাঁ সত্যি। এভাবে চমকালে কেনো?
শরিফা উৎফুল্ল হয়ে বলল-
-“ আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?
সন্ধ্যা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। শরিফা জবাবের অপেক্ষা না করেই সন্ধ্যা কে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ আসার পর থেকেই আপনার কথা শুনেছি। আপনাকে দেখার,ছোঁয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো।
-“ কেনো আমি বিশেষ কেউ?
-“ সেটা জানি না। তবে আপনাকে দেখার,ছোঁয়ার ইচ্ছে ছিল৷ এখন অনেক টা ভালো লাগছে।
-“ পড়ো কিসে?
-“ অনার্স ফাস্ট ইয়ারে।
-“ আমার ছোট তাহলে। তা ছাঁদে কেনো এত রাতে?
-“ ঘুম আসছিলো না। তাই বাতাস খেতে আসা।
-“ আপনি কেনো ছাঁদে?
-“ আপনি না.. আপনি ডাকটা শুনে কেমন জেনো নিজেকে আন্টি আন্টি লাগে। আর আমিও তোমার মতো বাতাস খেতে এসেছি।
-“ আপনি… সরি তুমি কি আবার চলে যাবা?
সন্ধ্যা চাঁদের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ হুমম।
-“ ওহ্ চলো চলে যাই মশা কামড়াচ্ছে।
-“ তুমি যাও আমি পরে যাব।
শরিফা চলে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে নামার পথে আষাঢ়ের সাথে দেখা হলো। শরিফা মাথা নিচু করে ফললো। আষাঢ় শরিফা কে দেখে বলল-
-“ এতো রাতে… ছাঁদে ছিলি তুই?
-“ জ্বি।
শরিফার হাতে ফোন দেখে তপ্ত শ্বাস ফেলে আষাঢ় হাঁটা ধরলো। শরিফা তড়িঘড়ি করে চলে গেলো। আষাঢ় ছাঁদে এসে উল্টোপাশে এসে দাঁড়ায়। তারও ঘুম আসছিলো না। অনেকদিন পর আজ কাউকে সামনা-সামনি দেখে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। আরেকবার দেখার ভীষণ লোভ হচ্ছে। ইচ্ছে পাখি বা প্রজাপতি হলে এখনই উড়ে চলে যেত দেখতে। কথাটা ভেবেই আনমনে পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেট জ্বালালো। মুখে নিয়ে টান মে’রে ধোঁয়া গুলো আকাশে উড়িয়ে দিলো। সন্ধ্যা হঠাৎ করে ছাঁদে সিগারেটে গন্ধ পেয়ে আশেপাশে তাকালো। নাহ্ কেউ তো নেই। তাহলে গন্ধ টা আসছে কোথা থেকে। সন্ধ্যা কিছুটা ভয় পেলো। রাত ও হয়েছে৷ দোলনা থেকে উঠে এগিয়ে আসতেই ছাঁদের ওপর পাশে উল্টো হয়ে এক পুরুষ কে দেখতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে আসতে নিলে অন্ধকারে পানির পাইপে পা বেঁধে পড়ে যায়।
আকস্মিক মেয়েলি চিৎকার শুনে আষাঢ় পেছন ফিরে দেখে একটা মেয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বসা থেকে উঠে চলে যাচ্ছে। আষাঢ় সিগারেট টা ফেলে দিয়ে বলে উঠল-
-“ কে?
সন্ধ্যা কোনো জবাব না দিয়ে চলে যেতে নিলে আষাঢ় ফের পেছন থেকে বলে উঠে –
-“ সন্ধ্যাবতী তুমি?
সন্ধ্যা দাঁড়িয়ে গেলে। পাশ ফিরে একবার তাকালো। ছাঁদের দরজার সামনে থাকা লাইটের আলোয় স্পষ্ট হলো সন্ধ্যার মুখ। আষাঢ় তাকিয়ে রইলো সেই মুখের দিকে। ইশ এই মুখটায় কতই না মায়া ভরা। ইচ্ছে করে বক্ষপিঞ্জরের আঁটকে রাখতে। পৃথিবী কে খুব করে বলতে ইচ্ছে করে — “ এই পৃথিবীর খবরদার আষাঢ়ের এই সন্ধ্যা কে আষাঢ় ব্যতিত আর কোনো পুরুষের নজরে এনো না। আষাঢ় সব জ্বালিয়ে দিতে দু’বার ও ভাববে না।
সন্ধ্যা চলে গেলো। অথচ সে জানলো না তার সামনে থাকা পুরুষ টি তাকে নিয়ে কত কল্পনা জল্পনা করছে। সে যদি জানতো তাকে পাওয়ার কতটা তীব্র ইচ্ছে নিয়ে এখনও এই ২৯ বছর বয়সের যুবকটি সিঙ্গেল তাহলে বোধহয় একটু করে হলেও সন্ধ্যার মায়া হতো। একটা ছেলে তাকে ভালোবেসে কিভাবে অপেক্ষা করছে।।
শুধু কি একটা ছেলেই তাকে ভালোবাসছে? নাকি না পাওয়ার শহরে তাকে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে কয়েক প্রতিযোগী? সেটা না হয় আজ নাই জানলাম আমরা। কোনোদিন হয়তো জানবো এই না পাওয়ার শহরে কেউ একজন দূর থেকে কাউকে ভালোবাসছে।
সন্ধ্যা খোঁড়াতে খোঁড়াতে রুমে এসে শুয়ে পড়লো। ঘুম না আসলেও তাকে চোখ বন্ধ করে রাখতে হবে।
শরিফা রুমে এসেছে সেই কখন কিন্তু তার ঘুম আসছে। থেকে থেকে একজনের চেহারা ভেসে উঠছে হৃদয় গহব্বরের। ভালোবাসা জিনিস টা এতো সুমধুর কেনো? এই যে কাউকে ভালোবাসা..নিয়ম করে এটা ওটার ছলে কথা বলা। বিনা কারনে রাগ দেখানো ইশ কি সুন্দর এই ভালোবাসা। শরিফা ঝটপট বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করলো। গ্যালারিতে ঢুকে কাঙ্ক্ষিত মানুষটির ছবি বের করে বুকে চেপে ধরে বলল-
-“ আপনার মুখে সরিষা ডাক শুনলে মোটেও বিরক্ত, রাগ কিছুই করবো না। সারাজীবন শুধু আপনি পাশে থেকে যাবেন ভালোবেসে। আর কিছুই চাইবো না।
পরেরদিন বিকেল বেলা,,,
সন্ধ্যা বসার রুমে বসে টিভি দেখছে। বাসায় সন্ধ্যা, সন্ধ্যর মা আর চাচি রয়েছে। শ্রেয়া কোথায় একটা বের হয়েছে৷ আর বাকি সবাই কাজে গেছে। আকস্মিক কলিং বেল বাজতে সন্ধ্যা বসা থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখে নিখিল এসেছে। ভিজে ছিপছিপে অবস্থা। সন্ধ্যা দরজার সামনে থেকে সরে চলে আসলো। নিখিল দরজা আঁটকে গলার টাই ঢিলে করতে করতে সোফায় বসলো। হাঁক ছেড়ে শ্রেয়া কে ডেকে বলল পানি দিতে। কিন্তু শ্রেয়া কে আসতে না দেখে সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ শ্রেয়া কি বাসায় নেই?
সন্ধ্যা চুপ রইলো৷ এমন ভান করলো যেনো টিভিতে খুব গুরত্বপূর্ণ কিছু দেখছে। নিখিল তপ্ত শ্বাস ফেলে এবার মা’কে ডেকে উঠলো। নয়না বেগম রুম থেকে বেরিয়ে আসলেন। নিখিল জিজ্ঞেস করলো –
-“ শ্রেয়া বাসায় নেই?
-“ না। ও তো বেরিয়েছে।
-“ কোথায়?
-“ আজ কয় তারিখ জানিস? মনে আছে?
নিখিল ফোনে তারিখ দেখে নিলো। তারপর তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে রুমে চলে গেলো।
বিল্ডিংয়ের ফাইভ ফ্লোরে থাকা আনিসুজ্জামানের একমাত্র মেয়ে আনিকার বিয়ে এই সপ্তাহে। নিজ দায়িত্বে সব ফ্লোরের লোকদের ইনভাইট করলেন। সন্ধ্যা দের ও করে গেলেন। সন্ধ্যার এসব বিয়ের আয়োজন মোটেও পছন্দ নয়। সেজন্য তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। শ্রেয়া তো শোনামাত্র ই কি পড়বে কি পড়বে সেটা নিয়ে গবেষণা করে দিয়েছে যা বিরক্তিকর লাগছে সন্ধ্যার কাছে। চুপচাপ খাবার টা খাচ্ছে। নজরুল ইসলামের মুখে কোনো কথা নেই। বেশ ভাবলেশহীন লাগছে তাকে। মুখে হাসি নেই। বিষয় টা নজরে আসলো সন্ধ্যার তবে পাত্তা দিলো না৷ খাওয়া শেষ হলে নিজের রুমে চলে আসলো। রুমে আসতেই হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। সন্ধ্যা ফোনে নম্বর টা দেখলো অচেনা। তাই আর রিসিভ করলো না৷ কিন্তু ফোন কেটে যেতেই আবার ও বেজে উঠলো। সন্ধ্যা রিসিভ করে হ্যালো বললো। কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসলো না শুধু শ্বাস ফেলার শব্দ ছাড়া৷ সন্ধ্যা হ্যালো হ্যালো করতে লাগলো। কিন্তু ওপাশ থেকে রেসপন্স না পেয়ে ফোন কে’টে দিতে চাইলে ওপাশ থেকে ভারী কন্ঠে ভেসে আসে-
-“ সন্ধ্যাবতী…
সন্ধ্যা চমকে উঠলো। গতকাল রাতেও এই নামে একজন সম্বোধন করেছিলো৷ সন্ধ্যা থতমত খেয়ে বলল-
-“ ক…কে আপনি?
ওপাশ থেকে ভেসে আসলো-
-“ তুমি যাকে ভাবছো। সে আমি।
-“ ক..কে আপনি রাতের ভাই?
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ ভেসে আসলো। সন্ধ্যা ফের বলল-
-“ আমার নম্বর কোথায় পেলেন? আর ফোন কেনো দিয়েছেন?
-“ যদি বলি মন বিনিময় করতে তাহলে?
-“ কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন? আর ফোন দিবেন না আমাকে।
-“ আষাঢ় তো কারো কথা শুনে না সন্ধ্যাবতী। সে তার মর্জি মতো চলে। তোমার এই কথাটা ঠিক রাখতে পারছি না।
সন্ধ্যা রেগে ফোনটা কেটে দিলো। আষাঢ় ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-“ কার সাথে কথা বলছিলে?
হঠাৎ নজরুল ইসলামের কন্ঠ শুনে পিছু ফিরলো সন্ধ্যা। বিছানা ঠিক করতে করতে বলল-
-“ রং নম্বর ছিলো।
নজরুল ইসলাম কে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যা বলল-
আষাঢ় রাতের সন্ধ্যা পর্ব ৫
-“ কিছু বলবেন?
নজরুল ইসলাম খানিকটা চমকে গেলেন। হয়তো কিছু ভাবনায় ছিলেন। অপ্রস্তুত হয়ে বলল-
-“ না না ঘুমাও তুমি।
নজরুল ইসলাম চলে গেলেন। সন্ধ্যা নজরুল ইসলামের যাওয়ার পানে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো।