ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১৩
Arishan Nur
বিকেলের দিকে আয়নাদের বাসা জমজমাট হলো। সমুদ্রের বাসার সকলেই এলো। ইশরাক রহমান, মিসেস রোদেলা এবং পিউ এসেছে। সঙ্গে স্পেশাল মেহমান হয়ে ইভানা ও তার ছেলে এসেছে। হৈহল্লা করতে করতে ডিনার শেষ করে সবাই আকদে দেওয়া গিফট খুলতে বসলো। সমুদ্রকে আয়নার পাশে বসিয়ে দেওয়া হলো। সমুদ্রের পরনে গতরাতে সফেদ পাঞ্জাবিটাই রয়ে গেছে৷ ওর হাব-ভাব দেখে বোঝাই যাচ্ছে নতুন জামাই। আয়নাও আজ শাড়ি পরেই আছে। একে একে সব গিফট আনপ্যাক করা হচ্ছিলো। মেয়ে পক্ষের আয়োজিত অনুষ্ঠান বিধায় বেশিরভাগ উপহার দেখা যাচ্ছিলো ঢালাওভাবে কণেকে উদ্দেশ্য করেই দেওয়া। শাড়ি, জুয়েলারি, জুয়েলারি বক্স কতো কি যে পেয়েছে উপহারে৷
সমুদ্র মুখ ফসকে বলেই দিলো, ” বিয়েতে সবচেয়ে লাভ আয়নারই হলো। সব গিফট তো ওর জন্যই।”
ইভানা আন্টি কথাটা শুনতে পেয়ে বলে উঠে, ” কি যে বলিস না! এইসব তো সমুদ্র তোর ভাগেরই উপহার !”
সমুদ্র খুব বিরক্ত ভরা চাউনি নিয়ে শাড়িগুলোর দিকে তাকায়। আন্টির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নাহলে কোনোদিন বলত যে শাড়ি নাকি সমুদ্রের ভাগের উপহার!
ইভানা আন্টি সমুদ্রের অভিব্যক্তি দেখে হেসে বললো, ” বিশ্বাস করলি না? দাঁড়া ব্যাটা দেখাই তোকে।” এরপর পাশে থাকা একটা ব্লেন্ডারের প্যাকেট ইশারা করে বলে, ” এই ব্লেন্ডারে আয়না জুস বানায় তোকেই তো খাওয়াবে, তাই না?”
সমুদ্র চোখ ছোট ছোট করে আয়নার দিকে তাকালো। আয়না একবারও ওর দিকে তাকায় নি৷ এতে সমুদ্রের ইগো হার্ট হলো। বাসায় গেস্ট আসার পর সমুদ্র দু’বার ওর সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু কেন জানি আয়না ইতিউতি নানান উছিলায় তাকে ইগনোর করে আত্মীয়দের সঙ্গে বিজি ছিলো। তার থেকে এখন ওর কাছে আত্মীয়রাই বড় হয়ে গেলো?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এ’দিকে ইভানা আন্টি থেমে নেই। তিনি আরেকটা চায়ের কাপের সেট দেখিয়ে বলে, ” চা বানিয়ে তোকেই তো খাওয়াবে এই কাপ গুলো দিয়ে। তাহলে বল এসব উপহার কার কাজে বেশি আসছে। ওই বেড কভারে তুই-ই ঘুমাবি৷ তারপর এই যে এতো শাড়ি-জুয়েলারি এসব তোর বউই তো পড়বে৷ হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে তোর বউ-ই তো চুল শুকাবে। সব প্রফিট তো তোর ভাগেই গেলো। ”
সমুদ্রের ব্যবসায়ী মন অংক কষে জানান দিলো, আসলেই উপহার গুলো দিয়ে তার-ই ফয়দা হলো। সংসারে অন্তত একবছর আর কিছু কেনা লাগবে না। একদম যাওয়ার আগ বেলায় আয়না তার দিকে তাকিয়েছিলো। সন্ধ্যা থেকে ওর বুনন করা দূরত্বে সমুদ্র একবারও ওর পানে তাকালো না। বরং সবার আগে দরজা পেড়িয়ে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা হলো৷
আয়নার দাদাভাই বলে উঠে, ” ডাক্তার সাহেব, ভালো থেকো। আগামীকাল আসবে না?”
আয়নার দাদার প্রশ্নে সমুদ্র নিজেই সকলের সামনে বেশ হতবিহ্বল হলো। মানে কালকে আবার কেন সে এ’বাসায় আসবে? একরাতে সে আয়নার এতোবড় দিওয়ানা হয়ে যায়নি সে প্রতিদিন এসে এসে ওর বদনখানা দেখে যাওয়ার লাগবে। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় টের পায়, আয়না তার দিকে জবাবের অপেক্ষায় অপেক্ষারত।
সে জবাবে বলে, ” কাল থেকে অফিস আমার।”
আর একটা শব্দও বেশি বলে না। ভাবখানা এমন, যেন বাড়তি একটা শব্দ বললে শ’খানেক ইউরো জরিমানা দিতে হয়!
ইশরাক রহমান সকলের কাছে বিদায় জানালেন। তবে ওইসময় আয়নার ভারী মন খারাপ হয়৷ সমুদ্র কী পারত না একবার ওর কাছ থেকে বিদায় নিতে? সুন্দর করে কিছু মিষ্টি-মিষ্টি কথা বলতে? ওনার এতো কিসের ভাব? অহংকার অনেক?
আয়না মন খারাপকে পুঁজি করে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে।
পরদিন সকাল থেকেই সমুদ্র অফিস যাওয়া শুরু করলো। ওর মধ্যে যেন কোনো পরিবর্তন নেই৷ ছেলেটা এতো কীভাবে অপরিবর্তিত রয়ে গেলো? বিয়ের পর সব ছেলেদের মধ্যেই পরিবর্তন আসে।
সকালবেলা মিসেস রোদেলা নাস্তার টেবিলে বসে ছিলেন। আজ পিউ-সমুদ্র একসঙ্গে খেতে আসে। দুইজনেই বের হবে। পিউ কলেজ যাবে একটা কাজে৷ ওকে সমুদ্র ড্রপ করে অফিস যাবে। সমুদ্র টেবিলে বসে।
মিসেস রোদেলা বলে উঠে, ” আজকে থেকেই অফিস যেতে হবে? আজ বউমাকে নিয়ে ঘুর। তোকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে না তোর বিয়ে হয়েছে। ধ্যাত!”
সমুদ্র কিঞ্চিৎ হাসলো। বিয়ে হলে আবার বোঝা যায় নাকি? সে মাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” বিয়ে হয়েছে জন্য কি এখন বউয়ের গলা ঝুলে থাকতে হবে? ”
–” ঠিক তাই! আমি তো ভেবেছি তুই বউমার বাড়ি থেকে আসতেই চাইবি না।”
সমুদ্র ফোঁস করে শ্বাস ফেললো। তার বাড়ির মানুষ-জনও পাগল এক প্রকার৷ একদম আয়নার মতো।
পিউকে ড্রপ করে অফিস আসার পর হঠাৎ তার কেমন যেন আজব অনুভূতি হতে থাকে৷ মন হচ্ছে অফিসের সবাই জেনে গেছে তার বিয়ে হয়েছে। সমুদ্র বাবাকে একটা শর্ত দিয়ে এই বিয়েতে রাজী হয়েছে। শর্তটা হলো আকদ হওয়ার সময়ে অফিস বা প্রোফেশনাল লাইফের কেউ যেন না জানে বিয়ে হচ্ছে। পরে সময়-সুযোগ মতো জানানো যাবে৷ কাজেই পারিবারিক পরিসরে বিয়ে হওয়ায় অফিসের কেউই জানে না। সে স্বাভাবিক থাকার প্রচেষ্টা চালালো বেজায়৷ কিন্তু কোথায় জানি সবকিছুই অন্যরকম লাগে তার৷ মন খচখচ করে বড্ড। দুইবার আয়নার ডেস্কের সামনে গিয়ে দেখে এসেছে৷ ডেস্ক আজ খালি৷ ও নিশ্চয়ই আজ আসবে না।
কেন যে মেয়েটা এতো এবসেন্ট থাকে। অসহ্য! লাঞ্চ ব্রেকে সমুদ্র একটু বাইরে গেলো৷ এমনি ছটফট লাগছিলো বিধায় গলির পেছনে দাঁড়িয়ে টংয়ের দোকানে চা খেয়ে সিগারেট ধরালো৷ সিগারেট শেষ করে অলস পায়ে অফিস ফেরত আসে। তখন দুইটা বাজছিলো। পার্ট টাইম জুনিয়ররা দু’টো বাজে অফিসে আসে৷ সমুদ্রের মনে হলো যদি আজ আয়নাও ওদের সঙ্গে আসে তবে একবার চোখের দেখাটা অন্তত হবে। এসব ভেবে সে ঘুরে ঘুরে আয়নার ডেস্কের সামনে দিয়ে নিজের কেবিনে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলো৷ কোনোকিছু মনে মনে ভাবলে, সেরকমটাই যদি ঘটে তবে সাময়িক একটা খুশি লাগে। সমুদ্রও সাময়িকভাবে খুশি হলো। আয়না ওর ডেস্কে বসে ওয়ান টাইম কাপে কফি খাচ্ছে৷ আজ ও সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে সঙ্গে চুন্ডির লাল ওড়না। ওর মধ্যে নববধূ ভাব রয়েছে৷ লাল ওড়নাটার জন্য? আজ ও মাথায় কাপড় দিয়ে এসেছে।
সমুদ্র ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে। সে ইচ্ছা করে ফোন হাতে নিয়ে আয়নার ডেস্ক ক্রস করলো৷ সাধারণত জুনিয়ররা তাকে দেখলে কুশল বিনিময় করে। সালাম দেয়। তাদের অফিসে রুলস আছে, অফিসের কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে সুন্দর করে ফর্মালিটি মেইনটেইন করতে হবে৷ সমুদ্র আশায় ছিলো আয়না তাকে গুড নুন উইশ করবে৷ কিন্তু বিধিবাম! আয়না যেন তাকে দেখলোই নাহ! একদম কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিতে লাগে৷ যেন সমুদ্রের কোনো অস্তিত্ব ই নেই। সমুদ্রের রাগ হলো। আসছে উনি! এমন ভাব যেন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট করে মাইক্রোসফট উদ্ধার করছে! আহা এইসব চুনোপুঁটি বাচ্চা সিএসই ইঞ্জিনিয়ারের ভাব দেখলে হাসি পায়৷ একবার বাগে পাই তোমাকে, তখন বাসার রান্নাঘরে সাইনবোর্ড লাগানো হবে যেখানে বড় অক্ষরে লেখা থাকবে ” এখানে CSE ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা ভাত রান্না করা হয়।”
সমুদ্র কেবিনে গিয়ে বসে পড়ে৷ প্রতি সপ্তাহের যেকোনো ডেটে জুনিয়র ইন্টার্ণদের নিয়ে তার কেবিনে একটা গোল মিটিং বসে। ডিসকাশন হয়, পরবর্তী সপ্তাহের কাজের প্লান করা হয়। এরপর কফি-কুকিজ খাওয়ানো হয়৷ সমুদ্র আজকে সবাইকে তার কেবিনে ডাকলো তিনটার দিকে। তখন আড়াইটা বাজছিলো। সে ঘড়ির দিকে চেয়ে থেকে বললো, ” মিসেস আয়না, স্বামীকে ইগনোর করলেন কিন্তু বসকে কীভাবে ইগনোর করবেন? জলদি আসুন৷ আম ওয়েটিং ফর ইউ।”
তিনটার দিকে সবাই এসে উপস্থিত হলো। আয়না সবার পরে আসলো৷ তখনো ওর মাথায় কাপড় দেওয়া। সমুদ্র সবার ফাইল চেক করছিলো। আয়নার বেলায় সে নিজ থেকে বললো, ” স্যার একজায়গায় ভুল হয়েছে৷”
সমুদ্র যেন এমন কিছুই শুনতে চায়৷ সে বলে উঠে, ” মিস আয়না আপনি প্লিজ এরপর থেকে জাস্ট বলবেন কোনগুলি ঠিক করেছেন৷ আমি বুঝে নিব বাকিগুলোতে ভুল আছে, সংশোধন প্রয়োজন। ”
সজল ভাইসহ টুম্পা আপুও হাসলো৷ এরপর সজল ভাই বললো, ” আয়না তো জুনিয়র। আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে৷”
বোঝাই যাচ্ছে আয়না বেশ ক্ষেপে গেছে। টুপ করে ওর মাথা থেকে ওড়না পরে যায়। সমুদ্রের মন চাইলো, এক্ষুনি গিয়ে তার মাথায় আলতো করে ওড়না জড়িয়ে দিয়ে আসতে৷
সমুদ্র যেদিন প্রথম এই প্রোগ্রামটার জন্য আয়নার সিভি পায়, ওর সেমিস্টার ছিল ২:২। দেখামাত্র রিজেক্ট করে দেয়। কারণ সে ফ্রেশ গ্রাজুয়েট আর ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট নিতে চাচ্ছিলো৷ কানাডিয়ান এক কোম্পানির স্পন্সরশীপে তারা এই ইন্টার্ণ পার্ট টাইম প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করেছে৷ অল্প বেতন, লিমিটেড আওয়ার বেজড জব। ছয়মাস ট্রেনিং সহ কাজ করবে। একটা সার্টিফিকেটও পাবে৷ কিন্তু ইশরাক রহমানের স্পেশাল রেফারেন্সে আয়না এই প্রোগ্রামে সিলেক্টেড হয়৷ সমুদ্র তখনো জানত না আয়নাই সেই মেয়ে ৷ এখন বুঝে আয়না আসলে বউমা কোটায় এই অফিসে আছে৷ নাহ মেয়েটা মেধাবী। ঢাবিতে সিএসই পড়ে। বেশ ব্রিলিয়ান্ট। [ নোট: ঢাবি ক বিভাগ তথা বিজ্ঞান বিভাগে ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট :’কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’ রয়েছে৷ তথ্যটি অনেকের অজানা তাই বিশেষভাবে জানানো হলো। ধন্যবাদ ]
সমুদ্রের ভ্যান ভাঙ্গলো আয়নার ডাকে। আয়না কঠিন গলায় বলে, ” স্যার, আমাকে বিশ মিনিট দিন৷ আমি কারেকশন করে নিচ্ছি।”
সমুদ্র বলে, ” আপনি বসুন। আমি দেখছি। আর সজল ভাই, বাকিদের কাজ ঠিক আছে৷ আপনারা যেতে পারেন আজকে। কফি খান। রিফ্রেশ হন।”
সবাই মনের আনন্দে বের হলে, ওদের অনুসরণ করে আয়নাও বের হতে গেলে, সমুদ্র এক প্রকার ধড়ফড়িয়ে উঠে বললো, ” আরে, আরে তুমি কেন যাচ্ছো। চুপচাপ বসো বলছি। ”
আয়না সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়ে৷ সমুদ্র টুম্পাকে উদ্দেশ্য করে বলে, ” আপু দুই কাপ কফির অর্ডার দিয়ে দিতে পারবেন? আর আয়নাও আমার সঙ্গে পাঁচটার দিকে মিটিংয়ে এটেন্ড করবে।”
–” ওকে স্যার।”
টুম্পা আপু যাওয়ার আগে আয়নার দিকে সুন্দর করে হেসে চলে যায়৷ আয়না একা কেবিনে রয়ে যায়৷
ও মন খারাপ করে বলে, ” ইচ্ছে করে আমাকে আটকিয়ে রাখছেন তাই না?”
সমুদ্র বললো, ” আমার সঙ্গে থাকতে ভালো লাগছে না?”
–” উফ!”
সমুদ্র উঠে দাঁড়িয়ে তার দিকে হাঁটা ধরে। সে বেশ ঘাবড়ে যায়। লোকটার মতিগতির ঠিক নেই৷ কিছু যদি করে? কিন্তু সমুদ্র তাকে ক্রস করে হেঁটে যাওয়ার সময় মাথার ওড়নাটা আলতো করে তুলে দেয়৷ সে নড়েচড়ে ওনার যাওয়ার পানে তাকায়। উনি ওয়াশরুমে ঢুকলো৷
আয়না ভেবেই কুল পাচ্ছে না কেন সমুদ্র অফিসের সবাইকে তাদের বিয়ের কথা হাইড করলো। আয়না বিয়ের পরেরদিন বাবার মুখে শুনেছে যে তাদের বিয়ের খবর অফিসে এখনো কেউ জানে না। তখন থেকে সমুদ্রর উপর একটা চাপা অভিমান কাজ করছে৷ তাকে সবার সামনে পরিচিত দিতে অসুবিধা কেন তার? দ্বিধা কেন? দরকারও নেই ওনার বউ হওয়ার পরিচয়ের। আয়নার নিজেরই শক্ত পরিচয় আছে। সে নিজে যখন ইঞ্জিনিয়ার আর নতুন করে ওনার পরিচয় লাগবে না৷ ওই ডাক্তার কী পারবে তার মতো ইঞ্জিনিয়ার হতে! হুহ।
সমুদ্র কেন জানি কফি খেল না। আয়নাও সেজন্য আর কফি মুখে নিলো না৷ তারা দুইজন মিটিংয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো। আজ ড্রাইভার সঙ্গে আছে৷ পেছনের সীটে বসেছে দুজন। সমুদ্র হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে। আয়নার তা দেখে ভারী মায়া হলো৷
সে সুধালো, ” আপনার মাথাব্যথা করছে?”
সমুদ্র চোখ বন্ধ রেখেই জবাব দেয়, ” না। রাতে ঘুম হয়নি। ”
–” কেন?”
–” বউ ছিল না সেজন্য। বিয়ের পর বউ না থাকলে ছেলেদের রাতে ছাড়া-ছাড়া ঘুম হয়।”
আয়নার কী যে মেজাজ খারাপ হলো। ব্যাটা বিয়ে করেই বাসায় যাওয়ার জন্য অস্থির হচ্ছিলি তার উপর দুই রাত ই হলো কেবল। এতেই উনি বউ-বিবাহ বিশেষজ্ঞ হয়ে গেলো! সে আরোও বাজিয়ে দেখতে চাইলো। বলে উঠে, ” তাহলে বউ থাকলে ভালো ঘুম হয়?”
সমুদ্র এবার চোখ খুলে, হেলান দেওয়া থেকে উঠে পিঠ সোজা করে বসতে বসতে বললো, ” ধুর, কি যে বলেন না, মিস আয়না! বউ সঙ্গে থাকলে তো আরোও ঘুম-ই হয় না৷ রাত জাগা লাগে। ”
বাক্য দু’টো শোনামাত্র আয়নার টসটসে গাল দু’টোয় রক্তিম আভা ফুটে উঠলো। সে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে মনে মনে ভাবে, এই লোক কোনোদিন শুধরাবে বলে মনে হয় না!
দুইদিন ইতিমধ্যে অতিক্রম হয়ে গেলো। সমুদ্র সেদিন লাঞ্চ ব্রেকের পর গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে বিজি ছিলো। তখন সোয়া তিনটা বাজে। আজকে আয়নার অফিসে আসার কথা ছিলো না। এই দুইদিনের মধ্যে তাদের ফোনেও কোনো কথাবার্তা হয়নি৷ কোথায় জানি একটা পুরু দেওয়াল হানা দিচ্ছে তাদের সম্পর্কে। মিটিংয়ের মাঝে আয়নার নাম্বার থেকে কল আসে৷ সমুদ্র মনে মনে ভীষণ শান্তি পায়। মেল ইগো স্যাটিসফাই হয় তার৷ সে ফোনটা ধরলো না। আর কল আসলোও না। আরোও আধাঘন্টা মিটিং চলমান রইলো। এরপর আলিয়ার নাম্বার থেকে কল আসে। সে ভ্রু কুচকে তাকায়৷ আলিয়ার তো কল দেওয়ার কথা না৷ আয়নার কিছু হলো না তো? সে দিক-বেদিক ভুলে কল ধরলো ব্যস্ত মিটিংয়ের মাঝেই৷
আলিয়া ও’পাশ থেকে ভারাক্রান্ত গলায় বললো, ” ভাইয়া একটা বিরাট বিপদ হয়ে গেছে৷ আপা নাক ফোঁ ড়ালো৷ এরপরে নাকফুল পড়তে গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে গেলো। নাক ফুলে গেছে৷ আপার ভীষণ ব্যথা হচ্ছে৷ ব্যথায় আপা কান্না করে বাসা উল্টায় ফেলছে৷ আপনি এসে একটু আপার ব্যথা কমিয়ে দিন।”
সমুদ্র আলিয়ার কথায় কি বুঝলো কে জানে৷ সে এ’প্রান্ত থেকে বলে, ” নাকে ফুল পড়েছে কেন? তোমার আপা নাকে গোলাপ ফুল পড়লো নাকি?”
–” গোলাপ ফুল কেন পড়বে? নাকফুল, ভাইয়া নাকফুল! কানে ফুঁটা করলে যেমন কানের দুল পড়ে, তেমনি নাক ফোঁড়ালে নাকফুল পড়ে।”
সমুদ্র এবার বুঝলো, সে বলে উঠে, ” নাক ফুলে গেছে? পেইন খুব হচ্ছে? আচ্ছা আমি আসছি। একটু ওয়েট করো।”
সমুদ্রের একদম খেয়াল ছিলো না সে মিটিংরুমে বসে আছে। আয়না ব্যথা পেয়েছে শুনে অতি উত্তেজনায় জোরে কথা বলছিলো। আস্তে বলার কথা মনে ছিলো না।
তাদের মধ্যে, রুমে উপস্থিত থাকা একজন মহিলা বলে উঠে, ” নাক ফোঁড়াতে গিয়ে ব্যথা হয় অনেক। তা কে নাক ফোঁড়ালো মিস্টার সাদবিন? কার জন্য এতো ব্যাকুলতা? প্রেমিকা সে?”
সমুদ্র ভেবে পায় না কী জবাব দিবে ওনাকে? অফিসে তো বিবাহের বিষয়টি গোপন রেখেছে৷ পরক্ষণে বিজ্ঞানের একটা অদ্ভুত মজার থিউরি খেয়ালে আসে৷ তা হলো : সকল ক্ষার-ই ক্ষারক কিন্তু সকল ক্ষারক ক্ষার নয়৷ বিজ্ঞানের সঙ্গে সে রিলেট করলো৷
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ১২
“সকল বউ-ই প্রেমিকা কিন্তু সকল প্রেমিকা বউ নয়। ”
তাহলে যুক্তি অনুযায়ী আয়না তো তার একধরণের প্রেমিকাই! বউ-প্রেমিকা৷
সে প্রফুল্লচিত্তে উত্তর দিলো, ” ইয়েস। ”