ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ২৪
Arishan Nur
আয়না যতোবারই বলে উঠে বালিশে মাথা রাখেন। সমুদ্র যেন ততোই গা ছেড়ে দেয় তার উপর। একটা মানুষ এতো পরিমাণ ঘাড়বেকা কেমনে হয়?
–” আয়না, আমার মাথা টিপে দেও একটু। স্বামী সেবা করো।”
আয়না বাধ্য বালিকার ন্যায় ওনার মাথায় হাত বুলায়, চুলে বিলি কেটে দেয়। সমুদ্র পরম আরামে চোখ বুজে ওর কোলে শু’য়ে থাকে। আধাঘন্টা উপর আয়নার ওনার মাথা টিপে দিচ্ছে, তাও নাকি মাথাব্যথা সাড়ে না। এদিকে আয়নারই হাত ব্যথা হয়ে যাচ্ছে। কোমড় লেগে যাচ্ছে।
সে হাত থামালেই ওনার দুষ্টুমি শুরু হয়ে যায়। এতো বজ্জাত! আয়না একটু আগে চুলে বিলি কেটে দেওয়া থামায়, সঙ্গে সঙ্গে সে চোখ খুলে তার পানে তাকালো। এরপর আয়নার পে ;টে কাতুকুতু দেওয়া শুরু করে। আয়নার আবার কাতুকুতু বেশি। কোনোভাবে-ই এসব সহ্য করতে পারে না সে। ব্যাঙের মতো লাফ দিতে চায় কিন্তু একটা দামড়া ভারী শরীর তার কোলে থাকায় সরতেও পারে না৷ পুনরায় বাধ্য হয়ে মাথায় বিলি কেটে দেওয়া শুরু করে।
এরপর বলে উঠে, ” আপনার গলা ব্যথা করবে কবে?”
–” গলা ব্যথা করলে ডাক্তার দেখাবো৷”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আয়না মাথায় হাত বুলানো থামিয়ে দিয়েছিলো কথা বলার ফাঁকে। সমুদ্র ফের ওর পানে দুষ্টুমি ভরা চোখে তাকায়। ওনার ওমন চাউনি দেখামাত্র আয়নার ভয় হতে থাকে। না জানি আবার এই লোক কী করে বসে!সমুদ্র একটু ঘাড় কাত করে হাতে ভর দিয়ে শু’য়ে থেকে বলে, ” তোমরা এই যুগের মেয়েরা খুব ফাজিল তো। দু’মিনিটও স্বামীসেবা করতে চাও না। খুব অলস। আগের যুগের নারীরা দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা সেবা দিতো!
আয়না নাক ফুলিয়ে বলে, ” তাহলে আগের যুগের মেয়েকে বিয়ে করতেন। এই যুগের মেয়ে কেন বিয়ে করলেন।”
–” এতো কথা বলো তুমি! অথচ এক মিনিট ও মাথা টিপে দিতে পারো না।”
–” প্রায় ত্রিশ মিনিট ধরে আপনার সেবা করছি। আর বলছেন মাত্র এক মিনিট? ”
সমুদ্র ভ্রু কুচকে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকায়। চারটার বেশি বাজছে। ও বলে উঠে, ” ঘড়ির মাথা নষ্ট।”
–” আপনার চোখ ও মাথা দু’টোই নষ্ট।”
এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র আয়নাকে চেপে ধরে একদম বিছানায় ফেলে দেয়। মানুষ বালিশ যেভাবে বিছানায় ফেলে ওভাবে উনি আয়নাকে একপ্রকার শু’ইয়ে দেয়। আয়না টাল সামলাতে পারে না। একপ্রকার বিছানায় পড়ে যায় সে। সমুদ্র ওর উপর ঝুঁকে এসে ওর কপালের উপর পড়ে থাকা চুল গুলোয় ফুঁ দেয়। সঙ্গে সঙ্গে কপালে গরম ভাব অনুভব করে আয়না। লাজ, লজ্জা, শরম সব সমার্থক শব্দ ব্যবহার করলেও ওর লজ্জা বহিঃপ্রকাশ সম্ভব না।
সে চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে। সমুদ্র ওর কপালে পড়ে থাকা অবশিষ্ট জেদি চুলগুলো নিজের ঠোঁট দিয়ে ইচ্ছা করে আস্তে আস্তে সরাতে ব্যতিব্যস্ত হতে থাকে। যেন আয়নার কপালে পড়ে চুলগুলো ভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় সরানোই তার একমাত্র লক্ষ্য। আয়না ঘন-ঘন ওমন পাগলাটে উষ্ণ ছোয়া সহ্য করতে পারেনা। শেষের ক’টা উড়ন্ত চুল সমুদ্র ওর মুখে নিয়ে থু করে ফেলে দেয়।
এরপর বলে, ” শ্যাম্পু করো না চুলে? চুলে এতো ময়লা কেনো?”
কথাটি শোনামাত্র আয়না সমুদ্রের বুক বরাবর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কিল দিতে লাগে৷ সমুদ্র ওর উপর সম্পূর্ণ ভর ছেড়ে দেয় এবং নিজের হাতের মুঠোয় আয়নার হাত ধরে ফেলে। হাতে হাত কিছু পল ধ–স্তাধ–স্তি চলে। আয়না চায় ওর হাত দু’টি মুক্ত করে নিতে, অন্যদিকে সমুদ্র চায় ওর হাত শক্ত করে ধরে রাখতে। অবশেষে সমুদ্র জয়ী হয়। সে নিজের দু’হাত আয়নার দু’হাতের আঙ্গুলের ভাঁজে গুজে দেয়। আয়না আর চোখ খোলার সাহস পায় না।
সমুদ্র বলে উঠে, ” এতো তেজ যে দেখাচ্ছো, সামান্য ছুঁ’তেই কাপাকাপি করো যেন শরীরের ভেতর ভূমিকম্প যাচ্ছে!”
আয়না একবার চোখ মেলে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। সমুদ্র ওর দিকে আগাচ্ছিলো। ভাবেও নি সে মুখ ঘুরিয়ে ফেলবে ও। সমুদ্র মুখ থুবড়ে আয়নার গলা বরাবর পড়ে। ওর মেজাজ ভীষণ চটে। এই মেয়েটা সবসময় কই মাছের মতো নড়চড় করে সব বিগড়ে দেয়। কই মাছকে সামলাবে না রোমা–ন্সে ফোকাস করবে সে?
সমুদ্র বলে উঠে, ” আমার মতো ইয়ং এন্ড হ্যান্ডসাম হাসবেন্ড থাকা সত্ত্বেও ঘুরেফিরে তুমি সাদা দেয়ালের দিকেই তাকিয়ে থাকো। তোমার উচিত ছিলো কোনো বুইড়া, স্যুগার ড্যাডি বিয়ে করা। তাইলে ঠিক হত। ওই বুইড়া রে সারাদিন ইনসুলিন দিতা আর হসপিটালে নিয়ে যাইতা। তাই ঠিক ছিলো তোমার জন্য। আমার মতো সুদর্শন পুরুষ তোমার জন্য না।”
আয়না ওর দিকে তাকাতেই সমুদ্র মুখ নিচু করে ওর গ–লায় মুখ ডুবায়। মাতোয়ারা হতে থাকে।আলতো কা৷ মড় বসায়। গ–লার জায়গাটা লাল হয়ে আসে। আয়না ছু’টার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে।
এমন সময় দরজার ও’পাশ থেকে আলিয়ার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে। ও এদিকেই আসছে। আপা করে ডাকছে৷
আয়না তৎক্ষনাৎ সরে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে বললো, ” দরজা লক করা নেই।”
সমুদ্র সরতে চায় না, সে বলে উঠে, ” আশ্চর্য! তুমি আর তোমার চৌদ্দ গুষ্টি মিলে আমার রোমা–ন্সের বারোটা বাজাও। কোনো প্রাইভেট মোমেন্ট দেও না।”
সমুদ্র হাল্কা সরে আসতেই ওনাকে বিছানায় ধাক্কা মেরে আয়না রুম ছেড়ে যেতে ধরলে, সমুদ্র বেডে শু’য়েই বললো, ” সুন্দরী পালাচ্ছো কেন?”
আয়না জবাব দেয় না। বেরিয়ে যায়। সমুদ্র একা একাই মুচকি হেসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়। আজকে হাফ ডে করবে ভেবে নিয়েছিলো। বিছানায় একটা কোলবালিশ ছিলো। সে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে বলে, ” কী বা– লের জীবন! বউ থাকতেও কোলবালিশ লাগে!”
সমুদ্র নাক ডেকে ঘুমালো। খুব আরামের ঘুম দিলো ও। এমন গভীর ঘুম ঘুমিয়ে ছিল এইচএসসি শেষ এক্সাম দিয়ে এসেছে। আজ এতোদিন পর মাত্র দু’ঘন্টায় এতো আরামদায়ক ঘুম দিলো। অনেকদিন এমন শান্তিতে ঘুমায়নি সে । ও যখন ঘুমাচ্ছিলো আয়না রুমে এসে বসে ছিলো। ঘুমন্ত সমুদ্রের নিষ্পাপ চেহারার দিকে তাকিয়ে মাথায় বুলি কেটে দেয়।
হুট করে সমুদ্রের ফোন বেজে উঠে। সাইলেন্ট করা নাই। ভাবলো ওনার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে, এজন্য ফোন হাতে নিতেই পুনরায় কল বেজে উঠে। ও না চাইতেও রিসিভ করে৷ ফোনের ও’পাশ থেকে এক ভদ্রলোক কথা বলে উঠে। উনি বললেন আজ সমুদ্র অফিসে নেই কেন।
আয়না কি বলবে ভেবে পায় না। ও বলে, ” ওনার মাথাব্যথা এজন্য অফিস করতে পারেনি।”
ভদ্রলোক সমুদ্রের ফোনে মেয়েলি কন্ঠস্বর শুনে বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ” আপনি কে বলছেন? মানে সাদবিন রহমানের কে হন আপনি? ”
আয়না একবার ঘুমন্ত সমুদ্রের দিকে তাকায়। উনি নাকি অফিসের কাউকে খোলাসা করে কিছু বলেনি। আয়না গম্ভীরমুখে জবাব দিলো, ” আমি ওনার কেউ হই না।”
ভদ্রলোক হেসে ফেললেন এরপরে বলে, ” ইন্টারেস্টিং তো! ভাইয়ের পার্সোনাল ফোন আপনার কাছে আর বলেন কেউ হন না। ওয়েল, মিস জানেন কী? এই কেউ হই না টাইপ সম্পর্ক গুলো অনেক গভীর হয়। ভাই ফ্রি হলে একটু কল দিতে বলবেন। রাখি।”
আয়না ফোন রাখতে গিয়ে কেন জানি মোবাইল অন করে। এরপর আবার সমুদ্রের দিকে একপল তাকায়। ফোনে পাসওয়ার্ড দেওয়া। সে বড় আশা নিয়ে নিজের নাম লিখে কিন্তু ফোন ওপেন হয় না। ও সঙ্গে সঙ্গে ফোন রেখে দেয় টেবিলের উপর।
সমুদ্র যখন উঠে তখন অন্ধকার হয়ে গেছে। সে রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে আয়না নেই রুমে। সে রুম ছেড়ে বের হয়। খাবারের গন্ধে মো মো করছে চারপাশ। বাসার পরিবেশ তার কাছে স্বাভাবিকই লাগছে। তবে শায়লা আন্টি বলেছিলো, আয়না আর আলিয়া নাকি ওর বাবার সঙ্গে কথা বলছে না। ওদের দু’বোনকে একটু বুঝাতে যেন বাবার সঙ্গে খারাপ আচরণ না করে। সমুদ্র ভেবে পায় না কী বুঝাবে ওকে। এরচেয়ে বরং ওরা সবটা মেনে নেওয়ার জন্য সময় নিক। ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে সে নাক গলাতে চায় না৷ ইন ফ্যাক্ট সমুদ্র এটাও চাচ্ছিলো না যে সে আয়নাকে ওর বাবার সেকেন্ড ম্যারেজ নিয়ে খোলাসা করুক। এটা ওর বাবা বা শায়লা আন্টির জানানো উচিত ছিলো। কিন্তু ওনারা ভয় পাচ্ছিলো আয়না বাজে ভাবে রিয়্যাক্ট করবে কীনা৷
এতোদিন যেহেতু বিয়ের খবর গোপন রাখতে পারলো, তাহলে জানাতে কী অসুবিধা কে জানে? শায়লা আন্টি অনুরোধ করে বলেছিলো যেন সমুদ্র নারায়ণগঞ্জ নিয়ে গিয়ে সবটা ক্লিয়ার করে ওকে জানায় আর বুঝায়। উনি রিকুয়েষ্ট করেছে জন্য সমুদ্র না করতে পারেনি। রাজী হয়ে যায়। কিন্তু এটার প্রভাব তাদের রিলেশনেও পড়ছে। আয়নার ভাবখানা এমন যে সমুদ্র তার বাবার বিয়ের ঘটক। কিন্তু সত্য এটাই সমুদ্র নিজেও কিছু জানতো না। এসব ওই মাথামোটা মেয়েটাকে কে বোঝাবে!
সে ডাইনিং টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো। দুপুরে খায়নি। ক্ষুধা লেগেছে বেশ। সে বসতেই আয়না খাবার সার্ভ করে ছিলো। ফ্রাইড রাইস বানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় কে ফ্রাইড রাইস খায়? কিন্তু এতো ক্ষুধা লাগছে। সে খাওয়া শুরু করে। দাদী আর আলিয়াও এসে বসলো ওর সাথে।
দাদী বলে উঠে, ” দিদাভাই, চা খাবা?”
–” জি, তবে চিনি ছাড়া দিবেন।”
আয়না অবাক হলো উনি চিনি ছাড়া চা খান! ওহ এইজন্য তোমার মধ্যে কোনো চিনি নাই মানে মিষ্টি আরকি। সে দ্রুত চা বানাতে রান্নাঘরে চলে যায়। কাপে চিনিসহ চা এনে টেবিলে রাখে।
সমুদ্র ওইসময় বলে উঠে, ” আলিয়া, আপু, আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে পারবে?”
আলিয়া সমুদ্রের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। ওর ছোট বোনের সমান। তাও ওকে সম্মান দিয়ে আপু বলে ডাকে। তথাকথিত দুলাভাইদের মতো আজাইরা কথা বলে না। আলিয়া আর দাদা-দাদি ও ওর সাথে খেতে বসেছে। এই বাসায় সবার নিজের প্লেট-গ্লাস আছে৷ সমুদ্রের জন্যও গ্লাস আনা হয়েছে যেটায় এখন চা আছে৷ টেবিলে কেবল এক্সট্রা বলতে আপার গ্লাস আছে।
আলিয়া বলে, ” ভাইয়া অন্যসব গ্লাস গুলো শোকেজে। আপনি আপার গ্লাসে পানি খান।”
একথা শোনামাত্র সমুদ্রের অভিব্যক্তি দেখবার মতো ছিলো কাজেই আয়না বলে, ” যা, শোকেজ থেকে বের কর গ্লাস।”
আলিয়া খাচ্ছিলো। খাওয়ারত অবস্থায় উঠে যাবে যা অভদ্রতা। তাই সমুদ্র বলে, ” যেটায় ইচ্ছা দাও।”
আলিয়া পানি ঢেলে দিলো। সমুদ্র খাওয়া-দাওয়া করলো। চায়ে চুমুক দিয়েই বুঝলো বউ তার যা বলবে উল্টাটা করবে। আয়নার দিকে তাকায় একবার। কিছু বলে না। কিন্তু ভুলেও গ্লাস থেকে পানি খাচ্ছে না। চা খাচ্ছে, ফ্রাইড রাইস খাচ্ছে কিন্তু আয়নার গ্লাসে পানি খায় না একবারও।কেউ লক্ষ্য না করলেও আয়না এটা খেয়াল করে। একটু আগেই ওকে পাওয়ার জন্য কেমন উতলা হচ্ছিলো আর এখন বউয়ের গ্লাসে পানি খেতে ওর ঘেণা লাগছে। আয়না খুব আহত হলো। কেন উনি ওর গ্লাস থেকে পানি খাবে না? এতো কিসের সমস্যা!
আয়না উঠে দাঁড়িয়ে শোকেজের দিকে যাবে, এমন সময় সমুদ্র ওর গ্লাসে চুমুক দেয়। আয়না এ-দৃশ্য দেখে পা চালানো থামিয়ে দেয়।
সন্ধ্যাতেই একদম ডিনার সেরে সমুদ্র জানালো আগামী শনিবার ওর এক স্কুলের খুব ক্লোজ ফ্রেন্ডের বিয়ের প্রোগ্রাম। সেখানে আয়নাকে নিয়ে যাবে। আয়না সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠে, ” রবিবার আমার কুইজ আছে। অনেক পড়া বাকি।”
এটা শোনার পর সমুদ্র তাকে দ্রুত পড়ার টেবিলে বসিয়ে দিল। এরপর আদেশ দেয়, ” বই খুলো। যে সাবজেক্টের উপর এক্সাম সেটা এখন থেকে পড়ো। আরোও পাঁচদিন আছে। হয়ে যাবে সব পড়া।”
আয়না চোখ গোল গোল করে বলে, ” পাঁচদিন পর এক্সাম এখন থেকে কেন পড়বো?”
–” তো কবে পড়বে?”
–” আমরা ইঞ্জিনিয়ার’রা সবসময় পরীক্ষার আগের দিন রাতে পড়ি।”
সমুদ্র হতভম্ব হলো ওর কথা শুনে। এরপর ধমক দিয়ে পড়াতে বসালো। আয়না ধমক খেয়ে ল্যাপটপে কোডিং করা শুরু করে।
সমুদ্র কড়া গলায় বলে, ” আগামী পাঁচদিন আমি রেগুলার এসে তোমাকে দুইঘন্টা করে পড়াতে বসাবো। আশা করি আগের দিন রাতে না পড়লেও এক্সাম ভালো হবে।”
কুইজের জন্য একরাত পড়লেই যথেষ্ট তবুও উনি প্রতিদিন আসবেন, এই উছিলায় ওনাকে দেখতে পারবে। এজন্য আয়না নীরব থাকে। কোডিং কিছুই হয় না। মাথা হ্যাংক মেরে গেছে। একটু পরপর ওই নীল চোখের দিকে তাকাচ্ছিলো সে। যদিও বা আয়নার ওনার ফ্রেন্ডের বিয়ে এটেন্ট করার একদম ইচ্ছা নাই। ছুঁতা খুঁজছে কীভাবে না যাওয়া যায়। উনি অনেক জ্বালায় ওকে। এরকম জ্বালানী লোকের সঙ্গে বিয়ে খেতে যাবে না সে। তার উপর উনি প্রোফেশনাল লাইফে বিয়ের খবর ডিসক্লোজ করেনি। বন্ধুমহলে করেছে কিনা জানা নাই। সে নানা অযুহাত দেখায় না যাওয়ার। সমুদ্র সব অযুহাত ভেস্তে দেয়। শেষ অযুহাত ছিলো কুইজের সাবজেক্টটা অনেক কঠিন। আগের দিন না পড়লে ফেইল আসবে। তবুও সমুদ্রের সঙ্গে যুক্তিতে পারে না। ও পড়ানোর সময় আধাঘন্টা বাড়ায় দেয়। একদিন আসতে পারেনি। সেদিন জুম মিটিং করে টানা দুইঘন্টা আয়নাকে পাহারা দিয়ে পড়ায়।
আয়না শনিবার জানতে পারে যে আগামীকালের এক্সাম ক্যানসেল। সে হতাশই হলো। যদিও, পরীক্ষা পিছিয়েছে জানা সত্ত্বেও, সকালেও আয়না আরেকদফা অযুহাত দিয়ে বলে যে কুইজের পড়া কঠিন অনেক। রাতে বাইরে গেলে ফেইল আসলে সমস্যা হতে পারে।
সমুদ্র ফোনেই ওকে বলে, ” পাঁচদিন ধরে পড়ছো একই পড়া স্টিল এই কথা! তোমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে গরুর জন্য ঘাস কাটা উচিত। গবেট কোথাকার। আমরা মেডিকেলে আইটেমের জন্য বড়জোর বাইশ ঘন্টাও টাইম পাইতাম না। আর তুমি ছয়দিন ধরে পড়েও এসব বলো।
আয়নার মুখ কালো হয়ে আসে। আসলে কুইজটা ফ্যাক্ট না। ফ্যাক্ট হলো আয়নার-ই যাওয়ার ইচ্ছা নাই। বিভিন্ন কারণে বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছা করে না তার। উনি যতোই আগ্রহ দেখাক। আয়নার যেতে মন চাচ্ছে না। মনে হচ্ছে ও না গেলে ওনাকে একটু শায়েস্তা করা যাবে।
বিকেলের দিকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছিলো সমুদ্র কিন্তু সমুদ্র ওর বাসায় পৌঁছে দেখে আয়না এখনো রেডি হয়নি। সমুদ্র সোজাসাপটা রেডি হতে বলে ওকে। একপ্রকার টেনে ওয়াশরুমে পাঠায়৷ আয়না অনিচ্ছায় ওয়াশরুমে যায় মুখ ওয়াশ করতে।
এমন সময় আয়নার ফোনে অর্পার কল আসে৷
আজকে সমুদ্র রিসিভ করে। অর্পা সৌজন্যবশত ওর সাথে কথা চালিয়ে যায়। সমুদ্রের মনে হচ্ছে, অর্পা খুব রিল্যাক্সড আছে। কালকে ওর এক্সাম কিন্তু ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ছুটি।
সে প্রশ্ন করে, ” অর্পা কাল তোমাদের কুইজ না?”
–” না তো৷ ভাইয়া।”
–” আর ইউ সিউর? আয়না বললো কুইজ আছে।”
–” ছিলো, ভাইয়া। ক্যান্সেল হয়ে গেছে। আয়নাই গ্রুপে জানালো যে আগামীকালকের কুইজ স্থগিত। ”
মুহূর্তের মধ্যে সমুদ্রের চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। সে ফোন কেটে দিয়ে, ফোনটা চটকা মারে।
তখনই আয়না বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, ” শাড়ি পড়ব?”
–” তোমার কাল কুইজ না?
–” হ্যাঁ। হার্ড সাবজেক্টের কুইজ। জানেন তো।”
–” যেতে চাচ্ছিলে না। আমিই ফোর্স করলাম। সর্যি। তোমার ডিস্টার্ব হবে। যাওয়ার লাগবে না।”
কথাগুলো খুব কর্কশ গলায় বলে বেরিয়ে যায়। আয়না পেছনে থেকে দু’বার ডাকে কিন্তু সাড়া পায় না। আয়নার কলিজা ধক্ করে উঠে। সে বুঝতে পারে না কী করবে৷ সেই মুহুর্তে অর্পা কল আসে। কল ধরতেই ও জানালো ওর সমুদ্রের সঙ্গে কথা হলো একটু আগে। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার খবর সে জানিয়েছে।
ইলেকট্রিক্যাল মন পর্ব ২৩
আয়নার মাথায় হাত। উনি যে রাগী, এই মিথ্যা বলার জন্য নিশ্চয়ই এতো খেপেছে। এখন কী করবে সে? ওনার রাগ কীভাবে ভাঙ্গাবে? সবকিছু এতো জটিল কেন হচ্ছে। ধ্যাত! জীবনটাই প্যারাময়!