উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৮

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৮
আফিয়া আফরোজ আহি

গোধূলি বিকেলে দক্ষিণা হাওয়া। আকাশ জুড়ে রৌদ্র মেঘেদের ভেলা। পেজো পেজো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। শীতের বিকেলে পাশের মাঠে বাচ্চারা ব্যাডমিন্টন খেলেছে। তাঁদের মাঝে আলাদাই এক আনন্দ, উত্তেজনা। আগে আমরাও শীতের সময় বিকেলে বেলা বাগানে ব্যাডমিন্টন খেলতাম। এবার খেলা হয়নি। উল্টো দিক ঘুরে তাকালাম। ধপ ধপ পায়ে কেউ এগিয়ে আসছে সিঁড়ি দিয়ে। মিনিটের মাঝে মানুষটা এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। একদম সামনে এসে দাঁড়ালো। বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করলো,

“এই বিকেলে বেলা এখানে কি করছি?”
“গোধূলি বিকেল বিলাস করছি”
“একা একা?”
“তাহলে দোকা কোথায় পাবো?”
“চোখের সামনে জল জ্যান্ত বর দাঁড়িয়ে আছে তাকে তু্ই অস্বীকার করিছিস? বিয়ের পরও নিজেকেই সিঙ্গেল দাবি করতে চাইছিস? এই ছলনা সহ্য হবে না বলে দিলাম”
“দুপুরে খেয়ে বেরিয়ে ছিলো কে?”
“কে আবার? আমি”
“তাহলে বিকেল বিলাস করার জন্য তোমার কোথায় পাবো বলো?”
“কল করে ডেকে নিলেই পারতিস”
“তুমি আসতে?”
আদ্র ভাই চোখে চোখ রেখে সম্মোহনী কণ্ঠে বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তু্ই শুধু একবার ডেকে দেখ আমি সব ছেড়ে ছুড়ে সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে তোর কাছে চলে আসবো। তু্ই শুধু আমায় একবার ডাক”
আদ্র ভাইয়ের কথা শুনে থমকে গেলাম। এই মানুষটা এমন কেন? কোনো কথার পৃষ্ঠে এমন কিছু বলে বসবে যার বিপরীতে বলার মতো কিছু খুঁজে পাইনা। সব সময় আমায় এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। বজ্জাত লোক একটা।
“এরপরের বার ডাকবো। দেখবো কেমন আসো!”
আদ্র ভাই বুকে হাত গুঁজে জিজ্ঞেস করলো,
“যদি সত্যি সত্যি আসি, তাহলে?”
“তাহলে আর কি? তুমি যা চাইবে তাই পাবে”
কথাটা শুনে আদ্র ভাইয়ের চোখ জ্বল জ্বল করে উঠলো। উচ্চাসিত কণ্ঠে সুধালো,

“সত্যি?”
“সন্দেহ আছে?”
“না তু্ই যেহেতু বলছিস তাহলে আর সন্দেহ কিসের?”
বলে তো দিলাম কিন্তু এখন কি হবে? যদি সত্যি সত্যি চলে আসে? চিন্তার বিষয়! ভাবতে শুরু করে দিলাম। আরে বুদ্ধি পেয়ে গেছি। আমি কখনো ওনাকে ডাকবোই না তাহলেই তো হবে। মনে মনে নিজের বাহুতে নিজেই চাপর দিয়ে সাবাসী দিলাম।
“বাহ্ রোদ তোর তো অনেক বুদ্ধি? দেখতে হবে না খান বাড়ির মেয়ে বলে কথা”

রাতে সবাই বসে ড্রয়িং রুমে আড্ডা দিচ্ছি। সবাই বলতে আমি, ঈশিতা আপু, রোশনি, ইভা, ভাবি, আর আম্মুরা। আম্মু আমার মাথায় তেল মালিশ করে দিচ্ছে। এর মাঝে হাতে এপ্রোন ঝুলিয়ে প্রবেশ করলো শুভ ভাই। ওপর না গিয়ে আমাদের দিকে এলো। আমাদের আড্ডা দিতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন। অতঃপর গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
“সব গুলো পড়াশোনা লাটে তুলে গল্পে মজেছিস? রেজাল্ট শুধু খারাপ হোক তারপর একেকটাকে ধরে ধরে শাস্তি দিব”

এই চলে এসেছে আমাদের বাড়ির পড়ুয়া ছেলে। বাড়িতে পড়া নিয়ে সব চেয়ে সিরিয়াস এবং ভালো স্টুডেন্ট হলো শুভ ভাই। তারপর রিসাব ভাইয়া। এরা পারলে সারাদিন বইয়ের মাঝে ডুবে থাকে। আমার ভাই তো বাড়ি ছেড়েছে পড়া পড়া করে। তার নাকি বাড়িতে থাকলে পড়াশোনা হয়না। তাই হোস্টেলে উঠেছে। বাকিরা যেমন তেমন। সব চেয়ে ফাঁকিবাজ হলাম রুদ্র ভাইয়া, আমি, ইভা আর রোশনি। পড়তে না বসার জন্য যতোটা বাহানা দেওয়া দরকার আমরা সবই দিতে পারি। আর শুভ ভাই আছেন একজন! আমাদের ঘাড়ে ধরে পড়তে বসায়।
“কি হলো সব গুলো এখনো বসে আছিস? পড়তে যাচ্ছিস না কেন?”

শুভ ভাইয়ের রাম ধমক খেয়ে সব গুলো উঠে সিঁড়ি বেয়ে যার যার রুমে দৌড়। আম্মুরা আমাদের দৌড়ে যেতে দেখে হাসছে। এক দৌড়ে রুমে এসে সোজা টেবিলে। শুভ ভাই এসে যদি দেখে পড়তে বসিনি তাহলে কপালে দুঃখ আছে। বই খুলে পড়তে বসে গেলাম। জীব বিজ্ঞান বই পড়ছি। পড়ছি কম বকছি বেশি। কোন বজ্জাত যে এই পড়া নামক অত্যাচার আবিষ্কার করেছিলো তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। মন চাচ্ছে তাকে ডিটার্জেন্ট ছাড়াই ধুয়ে ফেলি। বই বের করেছে ভালো কথা তোদের শরীরে পার্টস নিয়ে এতো বেশি ভাবতে কে বলেছে? যেটা যেখানে থাকার থাকলেই হলো। এগুলো এতো ঘেটে লাভ কি? একটা হলেই তো হলো। ক্লাস নাইনে ভেবেছিলাম মানবিক বিভাবে পড়বো। এতে খাটুনিও কম হবে। সারা বছর ঘুরে ফিরে আড্ডা দিয়ে বেড়াবো।

শুধু পরীক্ষার আগের দিন পড়ে পাশ করবো। কিন্তু সেই সুখ বোধ হয় আমার কপালে নেই। ভর্তি হতে গেলে স্কুলের স্যাররা ধরে বেঁধে জোর করে সাইন্স ধরিয়ে দিলো। মোটা মোটা বই দেখে সেদিন ঢোক গিলেছিলাম। ভেবেছিলাম পড়ে চেঞ্জ করবো কিন্তু শুভ ভাই সেটা হতে দিলে তো! তার ভাষ্য মতে আমি এতটাও গাধা স্টুডেন্ট নোই যে আমাকে সাইন্স গ্রূপ ছেড়ে অন্য গ্রূপে যেতে হবে। আর উনি এটা হতেও দিবে না। শুরু হলো এক প্রকার যুদ্ধ। পড়া যুদ্ধ! শুভ ভাই পারেনা গুলিয়ে পড়া আমায় খাওয়ায়। বুঝতে শেখার পর থেকে অবচেতন মনে কেন যেন ডক্টর হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম! সেটাও শুভ ভাইকে দেখেই।

বিশেষ করে এপ্রোন জিনিসটা আমার কাছে অনেক সুন্দর লাগতো। পড়লে কেমন ডাক্তার ডাক্তার ফিল আসে। কতো বার যে লুকিয়ে লুকিয়ে শুভ ভাইয়ের এপ্রোন পড়েছি তার ইয়াত্তা নেই। তাই গ্রূপ আর চেঞ্জ করলাম না। শুভ ভাইয়ের পরিশ্রম আর নিজের চেষ্টায় এস এস সি তে রেজাল্ট জিপিএ-৫ এসেছে। কিন্তু এবার কি হবে? এস এস সি তে সাইন্স যেমন তেমন ইন্টার এর পড়া পুরোই চেঞ্জ। মনে হচ্ছে কুয়া থেকে নদীতে এসে পড়েছি। কয়েক দিন পর দেখা যাবে নাকের জলে চোখের জলে এক হবে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে রসায়ন বইয়ে থাকা ক্যামিকেলে ডুব দেই। এতে অন্তত কিছুটা শান্তি পাওয়া যাবে। মাথা থেকে সকল চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ায় মন দিলাম।

গভীর রাত। বাড়ির সকলে এতক্ষনে ঘুমিয়ে গেছে নিশ্চিত। পড়ার টেবিলে থেকে উঠে আরমোড়া দিয়ে উঠলাম। এতক্ষন বসে থাকার ফলে পিঠ ধরে এসেছে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম একটা বেজে ১৩ মিনিট। এতক্ষন বসে পড়লাম আমি? অবাক করা কাণ্ড তো! পড়তে বসার খানিকক্ষণ পড়ে রুমে আগমন ঘটলো শুভ ভাইয়ের। পাশের চেয়ার টেনে বসলো। টেবিলে থাকা উচ্চতর গণিত বইটা টেনে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলো কিছুক্ষন। অতঃপর কতগুলো ম্যাথ দাগিয়ে দিয়ে বলল,
“আজ রাতের মধ্যে এগুলো করে রাখবি। কাল সকালে এসে দেখবো”

বলে চলে গেল। এদিকে আমার মাথায় হাত। এতো গুলো ম্যাথ করবো কিভাবে? কম করে হলেও পঞ্চাশটা হবে। কি আর করার করতে তো হবেই। দুটো ম্যাথ করা শেষ হলে নিচ থেকে ডাক পড়লো খাবার খেতে যাওয়ার জন্য। ভাবলাম আরো কয়েকটা ম্যাথ করে তারপর যাবো। কিন্তু সেটা হতে দিলে তো! রোশনি এসে হাজির। অগত্যা খেতে যেতে হলো। খেয়ে এসে সেই যে বসেছি সবে মাত্র উঠলাম। সবগুলো ম্যাথ শেষ করে তবে উঠেছি।
রুমে হাটাহাটি করছি তবে ভালো লাগছে না। খোলা আকাশের নিচে মন খুলে শ্বাস নিত পারলে বোধ হয় ভালো লাগতো। গাঁয়ে চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম ছাদের উদ্দেশ্যে। পা টিপে টিপে যাচ্ছি। সবাই ঘুমিয়ে আছে। এই রাতের বেলা ছাদে গেছি জানতে পারলে বকবে। আম্মু সব সময়ই আমায় রাতে ছাদে যাওয়ার জন্য বকে। রাতে ছাদে গেলে নাকি তেঁনারা এসে নিয়ে যাবে। আমি বরাবরই হাহ করে আম্মুর কথা উড়িয়ে দেই। ভুত, প্রেতে ভয় আমার নেই। ছাদের দরজার কাছে এসে ভ্রু কুঁচকে গেল। ছাদের দরজা খোলা? বিকেলে তো ছাদের দরজা লাগানো হয়েছিল। আদ্র ভাই নিজ হাতে লাগিয়েছে যেন আমি রাতে ছাদে না আসি। তাহলে কে খুলল? ছাদে উঠে আশেপাশে চোখ বুলালাম। এক কোণে ছায়া দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে গেলাম সেদিকে। উল্টো দিকে ফিরে কেউ ফোনে কথা বলছে। কাছে গেলে কণ্ঠস্বর ক্লিয়ার হলো। ইভান ভাই ফোনে কারো সাথে কথা বলছেন। ক্রুর হেসে কাউকে বলছে,

“ইরা অনেক বার বেড়েছিলো তাই এটা হওয়া জরুরি ছিলো। ওর কারণে আমি আমার প্ৰিয় মানুষটাকে হারিয়েছি”
একটু থেমে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমার ভালোবাসার মানুষটাকে ও আমায় পেতে দেয়নি। ওর জন্য আমি সব হারিয়ে হয়েছি দেবদাস। তারপরও ভেবেছিলাম ওকে ছেড়ে দিবো। আদালত ওকে যেই শাস্তি দিবে সেটাই ওর শাস্তি হবে। কিন্তু ও সেটা হতে দিলো না। ও আমায় হু*মকি দিলো ও আমার প্রাণ ভোমরা কেড়ে নিবে। তাই ওর প্রাণ টাই আমি নিয়ে নিলাম। ওর মতো জঘন্য মেয়ে বেঁচে থাকার যোগ্য না। নারী জাতির কলঙ্ক ও। ওকে মে*রেছি বেশ করেছি, সে জন্য আমার একটুও আফসোস নেই। সামান্য তমও না”

ইভান ভাইয়ের কথা শুনে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। উনি এগুলো কি বলছে? উনি ইরাকে মে*রেছে? ইভান ভাই একটা জলজ্যান্ত মানুষকে মে*রে ফেলেছে? ওনার বুক কি একবারও কাপেনি। এখন কি হবে? পিছিয়ে যেতে নিলাম। পাশে থাকা ফুলের টবে পা বেঝে গেল। ধড়াস করে টব পড়ে ভেঙ্গে গেল। আমিও পড়ে যেতে নিলাম। কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দে ইভান ভাই পিছনে ফিরে তাকালো। আমায় পড়ে যেতে দেখে সাথে সাথে ধরে ফেলল। ফোনের অপর পাশের মানুষটাকে বলল,
“তোর সাথে পড়ে কথা বলছি। এখন রাখছি”
কল কেটে ফোন পকেটে ঢুকিয়ে আমায় সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলেন। বুকে হাত গুঁজে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

“এতো রাতে এখানে কি করছিস?”
ইভান ভাইকে দেখে ভয় লাগছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম,
“পড়া শেষ তাই দুই মিনিটের জন্য এসেছিলাম। আমি এখনি চলে যাচ্ছি। আপনি কথা বলুন”
চলে আসতে নিলাম। ইভান ভাই আটকে দিলেন।
“ভয় পাচ্ছিস আমায় রোদ পাখি?”
মাথা নেড়ে নাকোচ করলাম। ইভান ভাই বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বলল,
“সবার ভালোর জন্য কিছু মানুষ নামক অমানুষ গুলোকে না মা*রলেই নয়। ওরা বেঁচে থাকলে নিরপরাধ মানুষ গুলোকে ভুগতে হবে তাই তাদের ম*রে যাওয়াই শ্রেয়”
“তাই বলে তুমি ইরাকে মে*রে ফেলবে? এখন পুলিশ তোমায় ধরে নিয়ে যাবে না? তোমার জেল হবে তো!”
ইভান ভাই মুচকি হাসলো। হেসে বলা শুরু করলো,

“ইরা অপরাধী। যেন তেন নয় ভয়ংকর অপরাধী। ওর জন্য আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ গুলোকে সাফার করতে হয়েছে। আর এমনিতেও ওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে। সারাজীবন জেলে থাকতে হবে। সরকারকে ওর সারাজীবনের খরচ বহন করতে হবে। ওর মতো জঞ্জালের পিছনে খরচ করার মতো এতো টাকা সরকারের নেই। তাই ওর বেঁচে থাকার চেয়ে ম*রে যাওয়াই বেটার। কিভাবে মা*রলাম জানতে চাস?”
মাথা দুলিয়ে সায় জানালাম। ইভান ভাই ফের বলা শুরু করলেন,
“ওকে জেল থেকে বের করে খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়ে বলেছি ও যদি এখান থেকে এক দৌড়ে চলে যেতে পারে তাহলে ও মুক্ত। বেচারি আমার কথায় বিশ্বাস করছে। একটু দূরে যেতেই গুলি ছুঁড়েছি। জানিস কতো গুলো গুলি ছুঁড়েছি? একটা না, দুটো না, পাঁচ পাঁচটা। মুহূর্তের ব্যাবধানে ও লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে। তখন কি যে সুখ অনুভব করছিলাম তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। ওর কারণে দাদুমনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। শুধু মাত্র ওর জন্য আমার সাজানো গোছানো জীবনটা পুরোপুরি এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। সব হারিয়েছি আমি। ওকে এতো সহজে ছেড়ে দেই কিভাবে বল?”

“তোমার জেল হলে?”
ইভান ভাই মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“আমার কিচ্ছু হবে না। সিনিয়র অফিসার সব সামলে নিবে। তু্ই আমায় নিয়ে এতো টেনশন করিস না। মন দিয়ে পড়াশোনা কর”
আমি তাকিয়ে আছি ইভান ভাইয়ের দিকে। গতকাল বেরিয়েছে মানুষটা কখন ফিরেছে কে জানে? খেয়েছি কি? সারাদিন বাহিরে বাহিরেই কাটান তিনি। পরনের কালো শার্ট টা এলোমেলো হয়ে কুঁচকে আছে। চুলগুলোও উস্ক খুস্ক। মুখ শুকিয়ে গেছে। ঠিক মতো নিজের যত্নও নেন না।
“খেয়েছেন কিছু?”
অদ্ভুত ভাবে হাসলো মানুষটা। হাসি বজায় রেখে বলল,
“কাজের চাপে নাওয়া খাওয়া সব ভুলে বসেছি। সত্যি বলতে খাওয়ার ইচ্ছে জাগেনি”
“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার গরম করে আনছি”
“তোকে কষ্ট করতে হবে না। ইচ্ছে হলে আমি খাবার গরম করে খেয়ে নিবো। তু্ই ঘুমাতে যা”
“আমি নিচে গেলাম”

বড় আম্মু জেগে থাকলে নিশ্চয়ই তার আদরের ছেলেকে না খেয়ে ঘুমাতে দিতো না। না খেয়ে, নিজের যত্ন না নিয়ে কি হাল বানিয়েছে। খাবার গরম করে টেবিলে রাখতেই ইভান ভাই এসে বসলো। খাবার তার দিকে এগিয়ে দিলাম। তিনি খাওয়া শুরু করলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে পেটে খিদে ছিলো। কাউকে খেতে দিয়ে চলে যাওয়া টা কেমন? তাই চেয়ার টেনে বসে পড়লাম। ইভান ভাই এক মনে খাচ্ছেন।
“বাসায় এসেছেন কখন?”
“মিনিট দশেক আগে”
একটু সময় নীরবতা পালন করলাম। ফের জিজ্ঞেস করে বসলাম,
“ইভান ভাই আপনি বাসায় থাকেন না কেন? সারাদিন বাহিরে কি করেন? বাড়িতে আসলেও তো পারেন”
ইভান ভাই কেমন করে তাকালো আমার দিকে। অতঃপর বললেন,

“পাখিরা দিন শেষে তাঁদের বাসায় ফিরে আসে কারণ সেখানে তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে। যে তার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে। তেমন প্রতিটা মানুষ একটা নির্দিষ্ট মানুষের টানে বাড়ি ফিরে। যেই মানুষটা সে ফিরে এলে আনন্দে আত্নহারা হবে। তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকবে। আমার এমন কেউ নেই। সবচেয়ে বড় কথা বাড়ি ফিরলে আমার কেমন কান্না কান্না পায়, দম আটকে আসে, নিজেকে পা*গল পা*গল লেগে। তাই যতটা পাড়া যায় বাহিরে বাহিরেই থাকি”
কথা গুলো শেষ করে উঠে পড়লেন। বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বলল,
“খাবার গুলো রেখে দে”

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৭

খাবার গুছিয়ে ফ্রিজে রেখে টেবিল পরিষ্কার করছি। ইভান ভাই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে যেতে যেতে বলল,
“আদ্র অনেক ভাগ্যবান। অনেক ভাগ্য করে তোকে পেয়েছে”
কথাগুল্প বলে অদ্ভুত ভঙ্গিতে হাসলো। অতঃপর বিড়বিড় করে বলল,
“আর আমি হলাম অভাগা যে তোকে পেতে গিয়েও হারিয়ে ফেলেছি”

উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ১৯