উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৩৩
আফিয়া আফরোজ আহি
সূর্যের উত্তাপ্ততায় উত্তপ্ত ধরণী। গরমে ঘেমে নেয়ে একেবারে বিচ্ছিরি অবস্থা। গাছের পাতা গুলোও যেন বেইমানি করছে। একটু বাতাস দিলে কি ক্ষতি হয় এদের? ক্লাসের ফাঁকে সকল বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি একটা গাছের নিচে। বাতাস তো দূর গাছের পাতা গুলোও নড়ছে না। খাডুস গাছ একেকটা। সবাই যার যার মতো একেক বিষয়ে কথা বলছে। সবাইকে ঘুরে ঘুরে দেখতে গিয়ে আমার চোখে আটকালো অপর পাশে বসা পিয়াসের দিকে। ও এক দৃষ্টিতে এদিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো।
কাহিনি কি? ও এদিকে তাকিয়ে আছে কেন? ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম বেচারা ইভার দিকে হা তাকিয়ে আছে। আর ইভা রানী? সে তো পুরো দমে মত্ত বক বক করতে। পাশে বসা ঐশীর মাথা খেয়ে ফেলছে। তারমানে পিয়াস কি ইভাকে পছন্দ করে? কয়েক দিন ধরেই ওর হাব ভাব কেমন যেনো লাগছিলো তবে আজ শিওর হয়ে গেলাম পিয়াস ইভাকে পছন্দ করে। এখন শুধু দেখার পালা ইভা কি করে!
দুপুর গড়িয়ে বিকেলে হয়ে এসেছে। ঘড়ির কাটায় তিনটা বেজে পাঁচ মিনিট। বাড়িতে ঢুকতেই নজর গেল গেটের দিকে। গেট সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। একটু এগোতেই দেখলাম পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে। হটাৎ বাড়ি সাজানোর কারণ কি? কোনো অনুষ্ঠান আছে বলে তো আমি জানি না। কেউ তো কিছু বলেও নি। পাশে থাকা ইভাকে খোঁচা মারলাম। ইভা চোখ মুখ কুঁচকে নিলো। ঝাড়ি দিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“খোঁচাচ্ছিস কেন পে*ত্নী?”
ওর সাহস কতো বেশি ও আমায় পেত্নী বলল? ক্ষেপে গিয়ে বললাম,
“তু্ই পে*ত্নী, তোর ভবিষ্যত বরের বউ পে*ত্নী?”
ইভা হা করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। ওর সামান্য একটা কথায় এভাবে রিয়াক্ট করবো বেচারি ভাবেনি। নিজেকে সামলে বলল,
“এদিকে আমি সিঙ্গেল মরছি আর তু্ই আমার ভবিষ্যত বর পর্যন্ত চলে গেলি? তু্ই কেন ভুলে যাচ্ছিস বোন আমি সিঙ্গেল?”
ইশারায় ওকে কাছে ডাকলাম। কাছে আসতেই মৃদু কণ্ঠে বললাম,
“তোর সিঙ্গেল জীবনের অবসান হলো বলে বনু”
ইভা উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে বসলো,
“কিভাবে? তাড়াতাড়ি বল বনু”
ভাব নিয়ে বললাম,
“তোকে বলা যাবে না। কারণ তু্ই আমায় পে*ত্নী বলেছিস”
“আ*স্তা*গ*ফি*রু*ল্লাহ বইন। আমি পে*ত্নী, তু্ই তো আদ্র ভাইয়ের সুন্দরী বউ। এবার বল প্লিজ”
“এখন বলার মুড নেই। তবে একটা জিনিস তো প্রমাণিত হলো যে পে*ত্নী”
কথা বলে ভেংচি কেটে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম। ইভা ব্যাক্কেলের মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। ওর তাকানো দেখে হাসি আসছে। বাড়িতে ঢুকতেই সামনে পড়লো আম্মু। জিজ্ঞেস করে বসলাম,
“আম্মু বাড়ি এতো সাজানো কেন? কারো কি বিয়ে?”
আম্মু গম্ভীর গলায় উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ”
আশ্চর্য! আমার বাড়িতে বিয়ে আর আমিই জানি না!
“কার বিয়ে? কবে ঠিক হলো বিয়ে? আর কবেই বা বিয়ে?”
“এতো কথা না বলে ফ্রেশ হতে যা। তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে একটু রেস্ট নিবি। সন্ধ্যায় প্রোগ্রাম আছে”
“আরে কি বলছো এসব? কার বিয়ে? বলবে তো? আমি তো কিছুই জানি না”
আম্মু ধমক দিয়ে বলল,
“এতো কথা কিসের রোদ? যা বলেছি তাই করো। যখন বিয়ে হবে তখন দেখতেই পাবে”
আম্মুর ধমকের তোপে অন্য কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগই হলো না। ভদ্র মেয়ের মতো নিজের রুমে যেয়ে কাঁধের ব্যাগ বিছানায় রেখে ফোন হাতে নিলাম। সোজা আদ্র ভাইয়ের নাম্বার ডায়াল করলাম। দু বার রিং হতেই রিসিভ হলো। কুশল বিনিময় হতেই আদ্র ভাই ব্যাস্ত কণ্ঠে বলল,
“কিছু বলার থাকলে তাড়াতাড়ি বল। আমার একটু কাজের তাড়া আছে”
অভিমানি স্বরে বলে উঠলাম,
“এই তুমি আমায় ব্যাস্ততা দেখাচ্ছ? তোমার সাহস তো কম না! বেশি ব্যাস্ততা দেখালে খবর আছে বলে দিলাম”
আদ্র ভাই ভীতু কণ্ঠে বলল,
“আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেছি ম্যাডাম। ভয়ে রীতিমতো কাঁপা কাঁপি অবস্থা। বলুন কি করলে আপনি এই অধম কে শাস্তি থেকে রক্ষা দিবেন?”
ওনার কথার ধরণের না হেসে পারলাম না। বদ লোক একটা! ইচ্ছে করে ঢং করছে।
“নাটক করছো আমার সাথে?”
“মোটেও না। বলুন আপনার জন্য কি করতে পারি? আপনার জন্য কিছু করতে পারলে এই অধম নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবে”
আমিও ভাব নিয়ে বললাম,
“বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু বলো বাড়িতে কার বিয়ে? এতো আয়োজন কেন?”
“সেটা তো বলা যাবে না ম্যাডাম”
ভ্রু কুঞ্চিত করে শুধালাম,
“কেন?”
“নিষেধাজ্ঞা আছে”
“কার?”
“সেটাও বলা যাবে না। এখন মেজ আম্মু অর্থাৎ আমার শাশুড়ি আম্মু আপনাকে যা যা বলেছে সেটা করুণ। রাতে দেখা হচ্ছে। ততক্ষন নিজের খেয়াল রাখবেন ম্যাডাম”
আদ্র ভাই কল কেটে দিলো। ওনার এই অদ্ভুত আচরণে অবাক হলাম। আশেপাশে সবাই কেমন আজব আচরণ করছে। ওদের আচরণে নিজেকে এলিয়েন এলিয়েন ফিল হচ্ছে। কি হচ্ছে আমার আশেপাশে? কিছুই বুঝতে পারছি না। সব মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাই বেশি না ভেবে শাওয়ার নিতে চললাম। ঘামে শরীর আঠালো হয়ে আছে। শাওয়া না নিলেই নয়। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে গেল। ফ্রেশ ফিল হচ্ছে। সোজা খাবার খেতে চলে গেলাম। খেয়ে এসে ঘুম। আম্মুর কড়া নির্দেশ না ঘুমালে লাঠি নিয়ে আসবে। মাঝে মাঝে আম্মুর শাসনে নিজেকে ক্লাস টু তে পড়া বাচ্চা মনে হয়। এই বুঝি আমার আম্মাজান লাঠি নিয়ে এলো। মুচকি হেসে পাড়ি জমালাম ঘুমের দেশে।
সন্ধ্যা ছয়টা নাগাদ দূর থেকে ভেসে আসছে কারো কণ্ঠস্বর। কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকছে। চোখের পাতা ভার হয়ে আছে। চোখ খুলতেই ইচ্ছে করছে না। ঈশিতা আপু অনবরত ডেকেই চলেছে। এক পর্যায়ে না উঠে পারলাম না। ঘুম ঘুম কণ্ঠে শুধালাম,
“ডাকছো কেন আপু? ঘুমাচ্ছি তো!”
“এখন যে উঠতে হবে সোনা? এখন কষ্ট করে ওঠ রাতে ঘুমাস”
আচমকা মাথায় খেলে গেল প্রশ্ন। ঈশিতা আপু না শশুর বাড়ি ছিলো? আপু এখানে আসবে কি করে? নাকি আমি সপ্ন দেখছি? ফট করে চোখ মেলে তাকালাম। ঈশিতা আপু বিছানায় এক কোণে বসে আছে। জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলাম,
“তুমি কখন এলে আপু?”
“তুই যখন ঘুমে বিভোর ছিলি তখন। এখন তাড়াতাড়ি ওঠ মেকআপ আর্টিস্ট বসে আছে। এমনিও দেরি হয়ে যাচ্ছে”
“কি হচ্ছে কিছু বলবে তো! সবাই এটা ওটা বলে ঠেলে দিচ্ছ। আমার অগোচরে কি হচ্ছে কিছুই জানি না আমি। নিজেকে এলিয়েন মনে হচ্ছে”
ঈশিতা আপু ঠেলে উঠিয়ে বলল,
“এইতো আর কিছুক্ষণ এরপর সব জানতে পারবি। একটু ওয়েট কর, এখন বললে আমাদের গর্দান যাবে”
ঠেলে ঠুলে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দিলো। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতে হাতে ধরিয়ে দিলো হলুদ, সবুজ রঙের মিশ্রনের লেহেঙ্গা। লেহেঙ্গা পড়ে আসতেই শুরু হলো মেকআপ নামক অ*ত্যা*চার। মনে হচ্ছে মুখের ওপর এক পাল্লা আটা ময়দা ঘষে দিচ্ছে।তাই আগেই সাবধান করে দিলাম মুখে বেশি কিছু দিতে না। আমার কাছে লাইট মেকআপই ভালো লাগে। গর্জিয়াস মেকআপ নিজেকে ভু*ত্নী ভু*ত্নী মনে হয়। সাজ শেষ হতেই রুমে ঢুকলো ইভা, রোশনি, ঈশিতা আপু। তিনজনই মাঞ্জা মেরে সেজেছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে ওদেরই বিয়ে। কিন্তু বিয়ে টা কার? ঈশিতা আপু তাড়া দিয়ে বলল,
“তাড়াতাড়ি চল দেরি হয়ে যাচ্ছে”
আমায় কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিচে নিয়ে এলো। পুরো বাগান সুন্দর করে সাজানো। বাগানের মাঝ খানটায় স্টেজ। আশেপাশে বসার আয়োজন করা হয়েছে। আমায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিলো স্টেজের মাঝে খানটায়। ইভা আর রোশনি চলে গেল। ঈশিতা আপু বাহুতে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে বলল,
“আদ্র ভাই নিঃঘাত আজ পা*গল, হবে দেখে নিস”
আপুর কথায় লজ্জা পেলাম। বিপরীতে কিছু বলবো তার আগে আপু ও স্টেজ থেকে নেমে গেল। হুট্ করে চারপাশের সকল আলো নিভে গেল। মুহূর্তের ব্যাবধানে আমার ওপর স্পট লাইট এসে পড়লো। আশেপাশে আঁধারের চাদরে ঢাকা। স্টেজ থেকে কয়েক হাত দূরে আরেকটা স্পট লাইট। সেখানটায় দাঁড়িয়ে আছে কোনো মানব। মানব ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। মনের মাঝে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক। মানুষটা সামনে এসে দাঁড়াতেই হৃদস্পন্দন থমকে গেল মনে হলো। হলুদ পাঞ্জাবীর, ওপর সবুজ কোটি পরিহিত আমার ব্যাক্তিগত পুরুষ। মানুষটা হাঁটু গেড়ে বসলো, পকেট হাতড়ে রিং বক্স বের করলো। রিং হাতে নিয়ে বলা শুরু করলো,
“কোলেহলে ঘেরা মুহূর্তে কন্দনরত এক পিচ্চি কে দেখে থমকে গিয়েছিলো কিশোর হৃদয়। আশেপাশে শব্দের কোলাহলের মাঝে পিচ্চির কান্নার স্বর, তার অশ্রু পীড়া দিতে শুরু করলো আমায়। আমি ব্যাস্ত হলাম তার কান্না থামাতে। এরপর সব সময় তার মুখশ্রী ভেসে উঠতো চোখের সামনে। আমার ঘুম, নাওয়া, খাওয়া সব কেড়ে নিয়েছিলো সে। অতঃপর একদিন আবিষ্কার করলাম আমি পিচ্চিটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। এই ভালোবাসা আমার সর্বনাশ ডেকে আনবে। হলো ও তাই।
একটু একটু করে ধ্বংস হতে লাগলাম পিচ্চির মায়ায়। পিচ্চি এখন বড় হয়েছে, আমার অর্ধাঙ্গিনী সে। আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া তাকে আমার করে দেওয়ার জন্য। এভাবেই সারাজীবন আমার হয়ে থাকবি রৌদ্রময়ী? তোকে নিয়ে পারি দিবো গোটা একটা জীবন। সংসার নামক যুদ্ধে আমার সঙ্গী হবি?”
থমকে তাকিয়ে আছি সামনের মানুষটার দিকে। আদ্র ভাই আমার উত্তরে অপেক্ষায় বসে আছে খেয়াল হতেই চট জলদি মাথা নেড়ে সায় জানালাম। উনি আলতো করে আমার অনামিকায় আংটি পড়িয়ে, চুমু এঁকে দিলেন হাতের উল্টো পিঠে। উঠে দাঁড়াতেই জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে। আশেপাশ থেকে ভেসে আসছে করতালির শব্দ। এখানে যে বাকিরাও আছে সেটা আমাকে দিব্বি ভুলে বসেছি। সব লাইট জ্বলে উঠলো। লজ্জায় মুখ লুকালাম ওনার বুকে। আমার অবস্থা দেখে শিহাব ভাইয়া খোঁচা দিয়ে বলল,
“শা*লিকা এটা তোমারই বিয়ে করা বর, তাই জড়িয়ে ধরতেই পারো। আমরা মাইন্ড করিনি”
আদ্র ভাই এগিয়ে এসে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো ললাটে। স্বস্তির বিষয় হলো আশেপাশে বড়রা নেই। আমার সকল কাজিনরা। প্রিয়ম ভাবি তাড়া দিয়ে বলল,
“তোমাদের প্রেম শেষ হলে বলো হলুদের প্রোগ্রাম শুরু করি”
“সে নাহয় করবে কিন্তু কেউ বলবে তো এখানে হচ্ছে টাকি? আর কার বিয়ে? হলুদই বা কার?”
আদ্র ভাই বললেন,
“তোর আর আমার”
“আমাদের হলুদ হতে যাবে কেন? আমাদের বিয়ে তো হয়ে গেছে”
“এক বার বিয়ে হয়েছে তাই কি আর বিয়ে করা যাবে না নাকি? আমার বউ আমি যতবার ইচ্ছে বিয়ে করবো সেটা আমার ইচ্ছে”
রোশনি বলল,
“করো মানা করেছে কে?”
“কেউ মানা করলে আমি শুনতে যাবো কেন?”
রোশনির পাশে দাঁড়ানো ইভা হাপিত্বেস করে বলল,
“আমরা একবার বিয়ে করতে পারছি না আর এদিকে মানুষ দু দু বার বিয়ে করে ফেলছে। পোড়া কপাল আমাদের”
রোশনিও ওর তালে তাল মিলালো। ঈশিতা আপু ধমক দিয়ে সব গুলোকে চুপ করিয়ে দিলো। শুরু হলো হলুদ অনুষ্ঠান। বাড়ির বড়রা বাগানে এলো। আম্মুরা সকলে দুজনকে হলুদ ছুঁইয়ে দিয়ে চলে গেল। এখন আমরা আমরা। আমাদের বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছে সকলে। সেঝ আম্মুরা, ভাইয়ারা সবাই। তবে বাকি একমাত্র ইভান ভাই। তার জন্য একটু খারাপ লাগছে। দীর্ঘ দুটো বছর কেটে গেল ভাইয়ার দেখা নেই বললেই চলে। সবাই হলুদ খেলছে এর মাঝে আমার চোখ গেল গেটের দিকে। গেট দিয়ে প্রবেশ করছে কেউ। আরে এটা তো ইভান ভাই! আমি কি ঠিক দেখছি নাকি ভুল! মনের ভুল ভেবে চোখ কচলে তাকালাম। একই দৃশ্য। ইভান ভাই ট্রলি হাতে এদিকেই এগিয়ে আসছে। ঘোরের মাঝে বলেছি উঠলাম,
“ইভান ভাই”
আশেপাশের সকল কোলাহল এক নিমিষেই বন্ধ হয়ে গেল। সবাই অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে ভাইয়ার দিকে। ইভান ভাই আমাদের ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
“আমায় দেখে কি ভিন্ন গ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছিস যে?”
ইভা দৌড়ে যেয়ে ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরলো। রোশনি বাড়ির সবাইকে ডেকে চলেছে। মিনিটের মাঝে বাগানে সবাই উপস্থিত হলো। বড় আম্মু তো ভাইয়াকে জড়িয়ে কান্না কাটি শুরু করে দিয়েছে। এতদিন পর ইভান ভাইকে দেখে সবাই আবেগ প্রবন হয়ে পড়েছে। ওনাকে ঘিরে রেখেছে সবাই। উৎসব মুখর পরিবেশ আরো জমে উঠেছে।
রাত বারোটার মতো বেজে গেছে। এই ভারী লেহেঙ্গা নিয়ে নাজেহাল অবস্থা আমার। তাই রুমে যাচ্ছি ড্রেস চেঞ্জ করতে। ফ্রেশ হয়ে সবাই আড্ডা দিবে ড্রয়িং রুমে। দরজা খুলতেই দুটো হাত টেনে আমায় ভিতরে নিয়ে গেল। আঁকড়ে ধরলো কোমর। আমায় মিশিয়ে নিলো নিজের সাথে। হঠাৎ এরূপ আক্রমণে ভয় পেয়ে গেলাম। ভালো করে খেয়াল করে সামনের মানুষটাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। আদ্র ভাইয়ের বুকে চাপর দিয়ে বললাম,
“এভাবে কেউ টান দেয়? ভয় পেয়েছি না আমি!”
“এই সামান্য হামলায় ভয় পেলে সামনে কি করবি?”
“সামনে কি করবো মানে?”
“মানে… কাছে আয়। কানে কানে বলছি”
আদ্র ভাই ফিসফিস করে কিছু বলল। ওনার কথা শুনে নাক সিটকে বললাম,
“ছিঃ! নিলজ্জ লোক। লজ্জা সরম সব বেঁচে খেয়েছো?”
“বউয়ের কাছে লজ্জা সরম দেখাতে গেলে এই জীবনে আর আর বাবা ডাক সোনা লাগবে না আমার”
“এই তুমি চুপ করবে?”
আদ্র ভাই কথা ঘুরিয়ে বলল,
“সারপ্রাইজ টা কেমন লেগেছে মিসেস?”
একটু ভেবে বললাম,
“ভালোই লেগেছে, মিস্টার। কিন্তু এই পা*গলামির কোনো মানে হয়? আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে, এখন এতো খরচ করে লাভ কি?”
“এই একদম বউদের মতো জ্ঞান দিবি না। আমার রৌদ্রময়ীর কোনো আক্ষেপ থেকে যাক সেটা আমার সহ্য হবে না। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে রৌদ্রময়ীর সকল ইচ্ছে পূরণ করবো। তার কোনো ইচ্ছেই আমি অপূর্ণ রাখবো না যদি সেটা আমার সাধ্যের মধ্যে হয়”
নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আমার এক কথায় মানুষটা এতো কিছু করেছে। আদ্র ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে ধীর কণ্ঠে শুধালাম,
উষ্ণ প্রেমের আলিঙ্গন সিজন ২ পর্ব ৩২
“আমায় এতটা ভালোবাসো কেন?”
“আমি তোকে কোনো কারণ ছাড়াই ভালোবেসছি, ভালোবাসি আর এভাবেই জীবনের শেষ মুহূর্ত অবধি ভালোবেসে যাবো”