এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা পর্ব ১১

এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা পর্ব ১১
লেখিকাঃ তামান্না

কেন করলো না বিয়েটা সে?
আজ যদি বিয়েটা সে করতো তাহলে কি এইদিন দেখতে হতো?আফজাল আকাশের মোবাইল থেকে তার মায়ের ফোনে কল করে জানিয়ে দিল আকাশকে থানায় নিয়ে আসার ঘটনা। আকাশের মা সব শুনেই পুরো বাড়ি জুড়িয়ে কান্নাকাটি শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে পুরো এলাকা জুড়ে যেন হইচই পরেগেছে। আকাশ হোটেলে একটা মেয়ে নিয়ে ধরা পরেছে। এই জন‍্যই তো বউটা চলে গিয়েছে। অথচ আকাশের বোন আর আকাশের মা বলেছেন মেহরিন তার ছেলেকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।

পাড়া প্রতিবেশীদের মধ‍্যে বলাবলি হচ্ছে, আর যাইহোক
এমন নির্লজ্জ ছেলেকে এই পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না। আকাশের বাড়ির সামনে সবাই দাড়িয়ে আছে।
আকাশের মাকে শুনিয়ে শুনিয়ে অনেকে বলছে-
“এই ছেলে তার বউটাকে একদিন ও শান্তি দেয় নাই।
কত ভালো ছিল মেয়েটা, এখনকার দিনে এমন সংসারি আর বাইরের কাজে পটু মেয়ে পাওয়া যায়? অনেকে তো বাইরের কাজের দোহাই দিয়ে সংসারই ভুলে যায়! আর সেখানে মেয়েটা কত কিছু করেছে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আকাশের মা সব শুনছেন, তার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে তারই আদরের সন্তান। কাকে কি বলবেন তিনি?
তার কথার উপর দুটো কথা বলতে গেলে সবাই চুপ হয়েযেত সেখানে তার সামনে বসে এত কথা বলছে।
আকাশের বোন সব শুনেই মায়ের কাছে চলে এসেছে। সে ও ভাবতে পারেনি আকাশ এমন একটা জঘণ‍্য কাজ করবে। সে জানতো শীলার আর আকাশের সম্পর্কের ব‍্যাপারে কিন্তু বিয়ের পর দুজন যে আবার সম্পর্কে জড়াবে তা সে ভাবতেই পারেনি। তাও আবার একটা হোটেল পর্যন্ত গড়িয়েছে। মিডিয়ায় ছড়াছড়ি হয়েগেছে এই ঘটনা নিয়ে।

আকাশের বোন আয়েশা বাড়িতে ঢুকে দেখে তার মা পরে পরে কাদছে আর পাড়া প্রতিবেশী তার মায়ের কানের কাছে বসে বসে আকাশের ঘটনাগুলোকে আরও জঘন্য ভাবে বিশ্লেষণ করছে।লজ্জায় তার মাথা নিচু হয়ে যাচ্ছে। আকাশ শুধু যে তার একার নিজের মানসম্মান শেষ করেনি তার পরিবারের ও করেছে। আয়েশার শশুর বাড়ির লোকজন যেন এই ঘটনার পর থেকে উঠতে, বসতে কথা শুনাতে এতটাই ব‍্যস্ত হয়েগেছে। কাল সারাদিন তাদের মুখে এই আলোচনাই ছিল। অন‍্যকিছু নয় সারাদিন আয়েশাকে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। আয়েশা তার স্বামীর সঙ্গে আকাশের কেস এর ব‍্যপারে কথা বললে – সে বলে দেয় সে আর এই বিষয়ে কিছুই করতে পারবে না। সম্বন্ধীর ব‍্যাপারে কেস নিয়ে নড়া মানে সবার সামনে তার মাথা কাটা যাওয়ার যোগাড়। তাই সে পুরো সময় কাজের ব‍্যস্ততা দেখিয়ে এরিয়ে গেছে। আয়েশা ও বুঝেগেছে তার স্বামী ও তার পাশে নেই।
আয়েশা বাধ‍্য হয়ে চুপ করে রইল। তার কিছুই করার নেই সবদিক দিয়ে সে এখন কোনঠাসা হয়েগেছে। যা হওয়ার হোক এ নিয়ে আর কিছুই সে করতে পারবে না।

মেহেদীর সঙ্গে কথা বলছেন সুলতানা বেগম। সুলতানা বেগম ইতিমধ্যে বুঝেগেছেন মেহেদী খুব দূর্ত আর সাহসী ও বটে, ছেলেটার মধ‍্যে ভালো গুনাবলিই সবচেয়ে বেশি আছে। খুব সহজে সবাইকে আপন করে ফেলে। সবার সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব ভালো। মেহেদীর সঙ্গে কথা বলে ফোন রাখার পরই কলিংবেল বেজে উঠলো। ময়না দরজা খুলে দেখল, শিমুর নানু মানে নিশিতার মা এসেছেন এবং নিশিতার খালা এসেছে। ভিতরে আসলে সুলতানা বেগম তাদেরকে সোফায় বসতে বলেন। শাফায়েতের বিয়ের ব‍্যাপারে সবই তারা জানেন তাদেরকে জানানো হলে এতে তারা কোন আপত্তি করেননি। ছেলেটার জীবন তো আর থেমে থাকবে না, মেহরিনের ব‍্যাপারে সবকিছুই সুলতানা বেগম জানানোর পর তারাই তাকে শাফায়েতের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। সুলতানা বেগম বা শাফায়েত কেউই তাদের মেয়ে নিশিতার অনুপস্থিতিতে শিমুর অবহেলা করবে না।

দুজন বেয়ান মিলে অনেকক্ষণ গল্প করার পর নিশিতার মা উঠে দাড়ালেন উদ্দেশ্যে মেহরিনের সাথে কথা বলা।
মেহরিনের সঙ্গে তার কথা বলা উচিৎ নাতনির ভালো মন্দটা যাচাই করা উচিৎ । নিশিতার মা ও তার বোন রুমে এসে দেখেন শিমু আর মেহরিন ঘুমিয়ে আছে।
সুলতানা বেগম মেহরিনকে ডেকে দিতেই উঠেগেল।
সুলতানা বেগম –
” মেহরিন উনি নিশিতার মা, আমার বেয়ান!”
মেহরিন উঠেই তাকে সালাম করতে নিলে তিনি তাকে বাধা দিয়ে বলেন –

“আহা, কি করছো, থাক, থাক, সালাম করতে হবে না বসো বসো, ” মেহরিন বসে পরল।
নিশিতার মা-” কেমন আছো?আমরা নাতনিটা কি খুব বেশি জ্বালাচ্ছে?
মেহরিন -” না আন্টি, তেমন কিছুই নয়,
নিশিতার মা-“কিছুই করার নেই জ্বালালেও, মেয়েটার মা নেই, তূমি ওর মা! তুমিই ওকে দেখে রাখবে।”
বেয়ান আমাকে সবই বলেছে তোমার ব‍্যাপারে তুমি কেমন। তাও আমি এসেছি তোমার সঙ্গে কথা বলতে।
দুটো মেয়ের মধ‍্যে নিশিতা বড় ছিল আর ও ছোট ছিল।

ওদের নিয়েই আমার জগত ছিল। একজন তো চলেই গেলো। তাই ওদের দুজনকে নিয়েই আমার জগত।
নিশিতা মারাগেলেও তার এই শেষ সম্বল যে আমাদের হাতে দিয়েই গেছে।
মেহরিন-” আপনারা চিন্তা করবেন না,” ও তো আমারই মেয়ে ওর দেখাশুনা আর সবকিছু করার দায়িত্ব আমার।”
নিশিতার মা মেহরিনের হাত ধরে কেদে উঠলেন।
-” আমার আর কিছু চাই না মা, এটাই শূনতে চেয়েছিলাম আমি! তোমার মুখ থেকে দুটো কথাই শুনতে চেয়েছিলাম। শিমুকে দেখে রেখো ওর যেন কিছু না হয়।”

এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা পর্ব ১০

থানা থেকে কারাগারে স্থান্তারিত করা হচ্ছে আকাশ আর শীলাকে। তাদের পরিবার যদি রাতারাতি কেসটা ক‍্যান্সেল করতে পারতো বা কেসটা মিথ‍্যে প্রমাণ করতো তাহলে তা থানা থেকেই শেষ হয়েযেত। কিন্তু কেসটার পক্ষ নিয়ে যুক্তিযুক্ত প্রমাণ না দেখাতে পাড়ায় কারাগারে তাদের স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। আকাশকে কেন্দ্রীয় কারাগারে আর শীলাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। শীলাকে থানা থেকে অনেক জোরাজুরি করে ও তার পরিবারের কোন খোজঁ বের করা যাচ্ছিল না। একপ্রকার জোর করেই তার মুখ থেকে সব বের করেন।শীলার পরিবারের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে তারা বলে দেয় -” মেয়ে কেন, মেয়ের ছায়াও তারা তাদের বাড়িতে পরতে দিবেন না।”

নির্লজ্জ এমন মেয়েকে তারা একমুহূর্ত ও বাড়িতে ডুকতে দিবে না। শিলার মনে হচ্ছে এক নিমিষেই জীবনটা কেমন বিষাক্ত হয়েগেছে। কি থেকে কি হয়েগেল।
সেতো এমনটা চায়নি, সে চেয়েছিল আকাশের সঙ্গে বাকিটা জীবন কাটাতে। আকাশকে ঘিরে তার অন‍্যরকম একটা জগত তৈরী করতে যেখানে শুধু আকাশ আর তারই বিচরণ থাকবে, আর কারোর নয়!

তাই তো সে আকাশ যেভাবেই তাকে চাইতো, ঠিক সেইভাবেই আকাশের কাছে ধরা দিত। আকাশকে পাওয়ার জন‍্যই তো সবকিছু বিসর্জন দিল সে। এতকিছু বিসর্জন দিয়েও শেষ রক্ষা হলো না। কলঙ্কের লালীমায় লাল রক্তবর্ণ ধারন করল তার জীবনের রঙ্গে। কেন সেদিন সেই ঘটনার পর নিজেকে সুধরালো না?
কেন আবার সেই ঘটনার পুনারায়বৃত্তি ঘটল?

কেন সে নিজেকে সেখান থেকে সরিয়ে নিল না! মেহরিন আর আকাশের মাঝে এসে মেহরিনকে কাটার মত উপড়ে ফেলতে গিয়ে নিজেই, চোরাবালিতে ফেসে গিয়েছে সে। দুটোদিন সে খায়নি, কিভাবে এমন খাবার তার মুখে রুচবে?

এই শহরের পাখিগুলো ডানা মেলে উড়তে জানেনা পর্ব ১২