একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১২

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১২
রনীতা তুশ্মি

“বলেছিলাম না আমি! লজের কাছেই থাকবি, স্টেজের আশেপাশেও আসবি না! তবে কেনো এসেছিস এখানে? ”
আনায়ার প্রচন্ড রকমের কষ্ট হচ্ছে। চোখ বেয়ে না চাইতেও অঝোরে পানি ঝড়ছে। গালের হাড়গুলো মনে হয় এবার সত্যিই ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে যাবে। সাথে সে বিস্মিত হচ্ছে এই ভেবে যে একটা লোকও কেনীথকে আটকাতে তার কাছে আসছে না। আনায়ার চোখের মণি এদিক ওদিক নড়াচড়া করছে দেখে কেনীথ আনায়ার আরেকটু কাছে নিজের মুখটা নিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,

—“আশেপাশে তাকিয়ে লাভ নেই! আমি চাইলে তোকে এখানেই শেষ করে ফেলতে পারি, কিন্তু আমার থেকে তোকে বাঁচানোর মতো সাহস কারো নেই! ”
এইটুকু বলেই কেনীথ আনায়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর আনায়াকে ছেড়ে দিলো। কিন্তু ওর সামনে থেকে সরে দাঁড়ালো না।এখনো তাকে তার বলিষ্ঠ দেহ দিয়ে সবার থেকে আড়াল করে রেখেছে।
অন্যদিকে আনায়ার নজর কেনীথ থেকে সরতেই চলে গেলো দূরে কৌতুহল নিয়ে আর সবার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা রনক আর শিখার দিকে। এরপর আরেকটু খেয়াল করতেই দেখলো ওদের দুজনের সাথে তার পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আনায়া নিজের ব্যাথাকে ভুলে গিয়ে দুশ্চিন্তা করতে লাগলো তাকে আবার তাদের ফ্রেন্ডরা চিনে ফেলেনি তো। আর নিজের বোকামির জন্য প্রচন্ড আফসোস হচ্ছে। কেনীথের কথা মনে না থাকলেও ওর ফ্রেন্ডরাও যে এখানে থাকবে এই বিষয়টা তো মাথায় রাখা উচিত ছিলো। এখন ওকে চিনে না ফেললেই হলো।
এদিকে কেনীথ যখন আনায়াকে অন্যকিছু ভাবতে দেখলো তখন কিছুটা কপাল কুঁচকে পেছন দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গেলেই আনায়া তাড়াহুড়ো নিজের ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে নেয়। যে কারণে কেনীথ পুরোপুরি পিছনে না তাকিয়ে আবারও আনায়ার দিকে তাকিয়ে হিসহিসিয়ে কিছু বলতে চেয়েও আর বললো না।বরং তার হাতটা শক্ত করে ধরে নিয়ে কনসার্ট এরিয়া ছেড়ে গিয়ে ওর গাড়ির কাঁছে যেতে লাগলো।

কেনীথের বড় বড় পায়ের কদমের সাথে তাল মিলাতে না পারলেও আনায়া যথাসাধ্য চেষ্টা করছে নিজের জর্জেট ওড়নাটা দিয়ে সম্পূর্ণ মুখটা ঢেকে রাখার। তাকে দূর থেকে তার ফ্রেন্ডরা ঠিক ভাবে চিন্তে না পারলেও এতো এতো মিডিয়ার ক্যামেয়ায় যদি সে একবার বন্দী হয়ে যায় তবে তাকে আর চিন্তে কারো বাকি রইবে না।
এছাড়া কেনীথের আশেপাশে তার নিরাপত্তার জন্য সকল কর্মী ঘেরাও করে কেনীথের যাওয়ার পথ তৈরি করে দিচ্ছে। সম্পূর্ণ রাস্তাটা আনায়া নিজের ওড়নার নিচ থেকে বারবার খেয়াল করছিলো তার বন্ধুদের। আর তখনই বুঝতে পারলো সবার নজর তাদের দিকে থাকলেও রনক খুব অদ্ভুত ভাবে তার ঢেকে রাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে রইছে।
আড় চোখে তাকিয়ে এটা দেখার পর আনায়া দ্রুত কেনীথের পায়ের সাথে পা মিলিয়ে ওর একপাশের বাহু ঘেঁসে যেতে লাগলো। কিন্তু এ নিয়ে কেনীথের মাঝে কোনো হেলদোল নেই। সে শিরদাঁড়া সোজা করে নির্বিকার যে হেঁটে চলেছে তো চলেছেই।

গাড়িতে একপ্রকার ছুঁড়ে ফেললো আনায়াকে। আনায়া নিজেকে ব্যালেন্স করে ঠিকঠাক ভাবে বসার আগেই ডাইভিং সিটে বসে সজোরে দরজা লাগিয়ে দিলো। এদিকে আবার আনায়া বসতে না বসতেই পাশ থেকে কেনীথ এসে আনায়ার সিট বেল্টটা একটানে লাগিয়ে দিয়ে আবারও নিজের যথাযথ স্টানে ঠিকভাবে বসতে না বসতেই সজোরে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
কেনীথ নিজের কাজকর্ম করতে একটুও দ্বিধাবোধ না করলেও আনায়া বেচারীর সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাওয়ার উপক্রম। একদিকে মুখের ব্যথা আর চোখের পানিই ঠিকমতো মুছেনি। আর তার আগেই যখন কেনীথ ওভাবে তার উপর দিয়ে হাত এগিয়ে সিট বেল্টটা টেনে লাগিয়ে দিলো তখন ক্ষনিকের জন্য নিমিষেই আবারও তার দম বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।

এতোকিছুর মাঝেও আনায়া বুঝতে পারছে না কেনীথের এতোটা রিয়েক্ট করার কারণ কি! শুধু তার কথা না শুনে ভুলে স্টেজের কাছে গিয়েছিলো এইজন্যই এতোকিছু! কই তার ইমন ভাইয়ের সময় তো এমন কিছু ছিলো না।ই তখন তো নাকি ইমন ভাইকে তার আশেপাশেও প্রয়োজন ছাড়া যেতে নিষেধ করতো। আর গতবার যখন ইমনের সাথে কনসার্টে এতো পুরো সময়টা তো সে ইমনের সাথে কনসার্টেই ছিলো। তবে এখন তার সাথে এসব করার মানে কি!
শুধু তার পিএ হয়ে কথার অমান্য করা!, সে মেয়ে এইজন্য নাকি অন্যকিছু!
আনায়া এই প্রশ্নের উওর জানে না।এবং পরবর্তীতে কি ডিসিশন নিবে নে তাও বুঝে উঠতে পারছে না।আপাতত গালে তীব্র ব্যথা থাকা সত্বেও তা নিয়ে আর তার চোখে পানি না পড়লেও পূর্ববর্তী সময়ে চোখের পানি ফেলায় গাল ভিজে পুরো একাকার। মূহুর্তেই আনায়া একবার হালকা কাঁধ বাঁকিয়ে কেনীথকে দেখার পর ওড়না দিয়ে গালটা মুছে নিলো।
এদিকে কেনীথের মনে হয় সর্বোচ্চ স্পিডে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এবার আর আনায়ার মাঝে কোনো ভয়ভীতি নেই। সে নির্বিকারে নিজের সিটে বসে থেকেই কেনীথের সাথে আবারও এক মারা*ত্মক কার রাইডিং এর সঙ্গী হলো।

ভোররাত আর নিস্তব্ধ পাহাড়ি রাস্তা। আশেপাশ সাদা কালো মেঘের আড়ালে ঢাকা। রাস্তার ঠিক শেষ প্রান্তে গিয়ে আবারও কেনীথ গাড়ি থামিয়েছে। আনায়ার গাড়ির ভেতর চুপটি করে বসে রইছে অন্যদিকে কেনীথ রাস্তার শেষ প্রান্তে গিয়ে নিষ্প্রাণ দেহের মতো দাঁড়িয়ে রইছে। তার সামনে অন্ধকার মেঘ ব্যতীত কিছু নেই। সূর্যোদয় হতো হয়তো আরো অনেক দেরী। তবে কেনীথ পাহাড়ের চুড়ায় থেকেও এই মাধুর্যপূর্ণ সূর্যোদয়ের দৃশ্য উপভোগ করার জন্য অপেক্ষা করবে না।কারণ আলো জিনিসটা কেনীথের সবচেয়ে অপছন্দনীয় বিষয়বস্তুর একটি।

অন্যদিকে আনায়ার এসব জিনিস খুব পছন্দের।আর কেনীথও তাকে কিছুই বলেনি। সে চাইলেই গাড়িতে বসে না থেকে বাহিরে যেতে পারে কিন্তু সে এমন কিছুই করবে না। আনায়া খুব গভীর ভাবে কেনীথের কাজকর্ম নিয়ে চিন্তা করছে। এই লোকটিকে তার আর পাঁচটা লোকের মতো কখনোই মনে হয়নি কারণ সে একজন উদ্ভট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন রকস্টার। কিন্তু এখন তার কেনীথকে নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। এই লোককে তার সাইকোপ্যাথও বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। তবে তার ভাবার বিষয় হলো সে কেনীথের সাথে তার এই জবটা আদোও কন্টিনিউ করবে কিনা!
মাসখানেকও হয়নি। স্যালারিও পেতে এখনও অনেক দেরী। এই মাঝ পথে চাকরি ছাড়লে সারামাস চলবে কিভাবে। তার টিউশনি গুলোও তো সব ছেড়ে দিয়েছে আবার এই কেনীথের এই পিএর জবটা করার মূল উদ্দেশ্য ছিলো তারেকের ঠিকঠাক চিকিৎসা করানো। যত তাড়াতাড়ি অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে পারবে তত তাড়াতাড়ি তার বাবা সুস্থ হতে পারবে। কিন্তু…….

কিছুক্ষণ ভাবার পর নিজেকেই অনেকটা বাধ্য হয়েই বোঝালো। এই চাকরিটা তার জন্য না হলেও তার বাবার জীবনের জন্য প্রয়োজন। আর সে তার বাবাকে বাঁচাতে এতোকিছু সেক্রিফাইস করতে পারলে আজ এতোটুকু বিষয় সহ্য করতে পারবে না! অবশ্যই পারবে আর পারতেই হবে।
কিন্তু আনায়া এও ডিসিশন নিলো যে এর পাশাপাশি সে অন্য কোনো অপশনেরও খোঁজ করবে। আর যাই হোক, বেশিদিন এই কেনীথের সাথে কাজ করলে ভবিষ্যতে হয়তো আরো অনেক কিছুই সহ্য করতে হতে পারে। ততদিন পর্যন্ত জেনে বুঝে এখানে থাকার কোনো মানেই নেই।
নিস্তব্ধ আনায়ার ভাবনা চিন্তার মাঝে কেনীথ ফিরে এসে গাড়িতে বসলো এরপর নিদিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে আবারও ফুল স্পিডে গাড়ি স্টার্ট দিলো। এবং পুরো দীর্ঘ পথ অতিক্রমের মাঝে কেউ কারো সাথে টু শব্দ করাটাও প্রয়োজন মনে করলো না সাথে কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকালো না।

সেই ঘটনার প্রায় দুদিন হতে চললো। মাঝে একদিন শুক্রবার থাকায় সেদিন সবকিছুই বন্ধ ছিলো। সেই রাতে কেনীথ আনায়াকে তার বাড়ির ঠিক সামনে পৌঁছে দিয়েছিলো। ভোর সকাল থাকায় এলাকার কিছু মুরব্বি ব্যতীত আর কারো চোখেই এলাকায় কেনীথের এই নতুন চকচকে গাড়ি নজরে আসনি। এছাড়া কেনীথ শুধু আনায়ার বাড়ির সামনেই গাড়ি থামিয়েছিলো। নিচে নামার প্রয়োজন তো সে কখনোই মনে করবে না। তাই কেনীথকে কেউ দেখেওনি।
আবার ভাগ্যক্রমে সেই গাড়ি থেকে আনায়াকে বের হতেও কেউ দেখে ফেলেনি। দেখে ফেললে হয়তো এই দুদিনে যা তা কান্ড হয়ে যেত।

এছাড়া কেনীথকে নিয়ে তার আরেকটি বিষয়েও ভুল ভাঙ্গে। কেনীথের সেই ব্যবহারটাকে সে যা তা ভাবলেও পরে যখন নিউজে জানতে পারলো কেনীথের কনসার্টে কয়েকজন ছেলে কুনজরে একটা মেয়েকে দেখছিলো আর তা দেখেই নাকি কেনীথ সেই ছেলোগুলোকে মারধর করে। এছাড়া মিডিয়া আর কোনো কারণ খুঁজে পাইনি কিংবা আলাদা কোনো বিষয় নিয়েও তারা সন্দেহ করতে পারছে না।কিন্তু তাদের প্রশ্ন সেই মেয়েটি কে! কেনীথের গত কনসার্টেও এমন একটি মেয়ে নিয়ে ঘটনা ঘটে যা আগে কখনো ঘটেনি। আর সেই মেয়ের রহস্য কিংবা পরিচয় এখনো মিডিয়া খুঁজে বের করতে না পারেনি আর তার আগেই নতুন এক মেয়েকে ঘিরে এতো বড় ঘটনা ঘটে গেলো।
বহু ক্যামেরায় ছবি আর ভিডিওকে একসাথে করেও মেয়েটির সঠিক ফুটেজ কেউ বের করতে পারেনি। তার খুব অন্ধকারে থাকা ঝাপসা কিছু ছবি ছাড়া তেমন কিছুই নেই। আর সবাই সেই ছবি নিয়েই আদা-জল খেয়ে নেমে পড়েছে মেয়েটির খোঁজ করতে।

এই নিউজটা দেখার পর আনায়া সম্পূর্ণ বিস্মিত আর চমকে গিয়েছিলো। সে তো জানতোও না ছেলেগুলো তাকে কু-নজরে দেখছিলো আবার কেনীথ যা করেছে তার হিসাবটা পুরোপুরি পরিষ্কার করতে চাইলেও সবসময় মনে হচ্ছে কেনীথের এতো বেশি পসেসিভনেস কি তার ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বাভাবিক নাকি অন্যকিছু। আবার অন্যকিছু হওয়ারও তো কারণ দেখছে না। কেনীথ আর তার পরিচয় তো মাত্র কিছুদিনের। এই মূহুর্তে তার ইমনকে খুব প্রয়োজন ছিলো কিন্তু সে তো নাকি শহরের বাহিরে।

আবার এতসব টেনশন রেখে দিলেও এই মিডিয়াকে নিয়ে তার প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। তাকে আবার এরা খুঁজে না ফেলে। তবে একটা বিষয়ে চিন্তা নেই যে তারা কেনীথের অফিসে গিয়ে এই বিষয়ে কিছু জানতে পারবে কারণ কেনীথ তার অফিসের সব এমপ্লয়িদের পরিচয় কখনোই মিডিয়ায় প্রকাশ করে না। যদি কেউ নিজ ইচ্ছেয় বলতে চায় তো তবে সে বিষয় একান্তই তার ব্যক্তিগত কিন্তু এই নিয়ে পরবর্তীতে কোনো প্রবলেম ফেস করতে কেনীথ কিংবা কেনীথের অফিস রাজি নয়। যা অফিসের রুলস্ এ সুনির্দিষ্ট ভাবে বলা হয়েছে।
আনায়া নিজের সব টেনশন ঝেড়ে ফেলে আপাতত এখন ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। কনসার্ট ছিলো বৃহস্পতিবার রাতে, মাঝে একদিন শুক্রবার থাকলেও কেনীথ শনিবারও অফিস বন্ধ রেখেছিলো। কারো কাজ থাকলে এমনিতে সে অফিসে যেতে পারে কিন্তু বন্ধ থাকলে না গেলেও চলে। আর আনায়ার জানা মতে অফিসে তার কাজকর্ম নেই বললেই চলে।

আজ রবিবার সকাল সকাল নিজেদের সব কাজকর্ম শেষে সবকিছু ফরিদাকে বুঝিয়ে দিয়ে আনায়া আর ইনায়া মিলে ভার্সিটি আর স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে।
আনায়া ভার্সিটিতে ঢুকতেই দেখলো সেই চিরচেনা কাহিনি। তার ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই বড় গাছের নিচে গোল হয়ে বসে সেই চিরচেনা বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছে। আনায়া এবার এদের এসব দেখে বিরক্ত কম কিছুটা চিন্তিত হলো বেশি।তবে নিজেকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক রেখে ওদের কাছে গিয়ে বসতেই প্রত্যেকেই তাদের কনসার্টের এক্সপিরিয়েন্স সম্পর্কে গল্প শোনাতে লাগলো। তবে তার গল্পের মূল কাহিনিই ছিলো কেনীথের মারামারি আর ওই মুখ ঢাকা মেয়েটা!
একটা সময় হাসতে হাসতে আলো বলেই ফেললো,

—“জানিস আনায়া! ওই মেয়েটাকে দেখলে তুই চমকে উঠবি। পুরো তোর মতোই দেখতে। আমরা তো কিছুক্ষণের জন্য ভেবেই নিয়েছিলাম ওটা তুই! ”
এটা শুনতেই যেন আনায়া কলিজার পানি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো। যা শটা পাচ্ছিলো ঠিক তাই হয়েছে। আনায়া ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সর্বোচ্চ স্বাভাবিক রেখে বলতে লাগলো,
—“তোরা ঔ মেয়েটাকে দেখেছিস নাকি! ”

—“আরে নাহ! কিভাবে দেখবো। মেয়েটা প্রথমে অন্ধকার ছিলো আর পরে মুখ ঢেকে নিয়েছিলো। মিডিয়া তো হুমড়ি খেয়ে ওই মেয়েকে খুঁজে বের করতে নেমেছে। আমার মনে হয় ওই মেয়েটার মাঝে রহস্য আছে। সবাই ভাবছে ভি.কে. কে সেদিন চ*ড় মারা মেয়েটা আর এই কনসার্টের মেয়েটা একজনই। ”
এর মধ্যে শিখা বললো,
—“আমার মনে হয় ওই মেয়েটা আর ভিকের মধ্যে কিছু চলছে নাহলে দেখলি কিভাবে শুধু কুনজরে চেয়েছিলো বলে ভিকে ছেলেগুলোকে কি ধোলাইটাই না দিলো। অ্যা…….আমার ভিকে, আমার জানটাও এখন তলে তলে টেম্পু চালনো শিখে গিয়েছে। তবে ওই মেয়েটা যদি আনায়া হতো তাহলে কিন্তু মন্দ হতো না। জামাই না হোক, দুলাভাই তো হতো! ”

এটা শুনতে না শুনতেই আনায়ার প্রচন্ড রকমের কাশি হতে লাগলো। পাশ থেকে সায়েম পানির বোতল এগিয়ে দিলে সাথে সাথে কয়েক ঢোক পানি খেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
—“মাথা খারাপ নাকি! এসব কোন ধরনের কথা। ”
শিখা মজার ছলে কথাটা বললেও এরপর ও সহ সাবা আর রনক বাদে বাকি সবাই কিছুটা হেসে ফেললো। তারপর শিখা আবারও বললো,
—“আরে আমি তো মজা করছিলাম। এতো সিরিয়াস হওয়ার কি আছে। তুই আর রেহান ভাইয়ার মধ্যে কিছু না থাকলে আমি দান দোয়া করে হলেও প্রার্থনা করতাম যেন তোর আর ভিকে বর বউ হয়ে যাস। ওমন একটা দুলাভাই পাওয়া কম কথা নাকি! অবশ্য রেহান ভাইয়াও কম কিসে। ”
এবার তাজিম বললো,

—“মুখে লাগাম দে রে শিখা! এসব কথা যদি রেহান ভাইয়ার কানে যায় তবে তোকে আর আনায়াকে বুড়িগঙ্গার কালা পানিতে চুবিয়ে মারবে। ”
—-“ইহ! আমাকে কেনো চুবাতে যাবে। বাসর যদি বউয়ের সাথে করতে পারে তবে বুড়িগঙ্গার পানিতে না হয় তার বউকেই চুবাবে। ”
এসব কথা শুনে আনায়া বিরক্তির সাথে বললো,
—“ইশ! চুপ কর ছাগলের দল!এটা ভার্সিটি , কিসব আজেবাজে কথা শুরু করেছিস।
আনায়ার কথা শেষ হতে না হতেই একই ভঙ্গিমায় সাবা বললো,
—“যাস্ট স্টপ ইট! আনায়া আর ভিকে? যাস্ট ইম্পসিবল। তোদের জোকস্ ও কত লেইম। ”
সাবার এমন কথা শুনে তাজিম বললো,

—“কেনো তোর ভিকে কি কোনো মানুষ কে বিয়ে না করে গরু ছাগল কিংবা এলিয়েনকে বিয়ে করবে। ”
—“তুই নিজের চিন্তা কর তাজিম। ”
তাজিম খুব ভালো করেই বুঝলো এই সাবা কেনো তাকে এটা বললো। সাবা যা চায় তা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব না। ওমন একটা উড়নচণ্ডী মেয়ের সাথে ও…এমনটা যেন স্বপ্নেও না হয়। ”
এদিকে পরিস্থিতি যেন বেগতিক না হয় সেজন্য আনায়া তাড়াতাড়ি করে বললো,
—“সাবা তো ভুল কিছু বলেনি। তোদের মজা করার বিষয়টিও অনেক বাজে পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এক জীবনে একজনকেই ভালোবেসেছি আর সে হলো রেহান। এখন বিয়ে করলে তো রেহানকেই করবো আর না করতে পারলে সারাজীবনের জন্য দেবদাস-এর ফিমেল ভার্সন হয়ে যাবো। ”
ওর এই কথা শুনতেই সবাই জোরে “ও………” শব্দে আওয়াজ করতে লাগলো। তখনই আনায়া মুচকি হেসে বললো,

—“অনেক হয়েছে, এবার ক্লাসে চল নাহলে স্যার যখন পানিশমেন্ট দিবে তখন এভাবেই ও….. করে চিল্লাতে হবে। ”
ওর কথাগুনে সবাই হাসলেও আজ প্রথম থেকেই রনকের কোনো পরিবর্তন নেই৷ সে প্রথম থেকেই আনায়াকে নিয়ে খুব গভীর চিন্তা ভাবনা করছে। সবাই গাছের নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ক্লাসরুমের দিকে যেতে লাগলো। সামনে থাকা প্রত্যেকেই কিছুটা এগিয়ে গেলে তখনই পেছন থেকে রনক আনায়াকে ডাক দিলো।
—“আনায়া! ”
আনায়া স্বাভাবিক ভাবে বললো,
—“কিছু বলবি! ”
—“একটা সত্যি করে কথা বলতো! ”
আনায়ার চোখমুখ মূহুর্তেই চুপসে গেলো তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো।

—“হুম, বল! ”
—“ওই কনসার্টে যে মেয়েটা, তুই ছিলি তাই না? ”
—“……….
—“কি হলো বল! ”
—“তুই পাগল! আমার অফিসে কাজ থাকতে আমি ওই কনসার্টে….. তোদের আসলেই মাথায় সমস্যা আছে। আমার যাওয়ার হলে তো তোদের সাথেই যেতাম তাই না? ”
রনক কিছু বললো না বরং কিছুক্ষণ আনায়ার দিকে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থেকে পরক্ষণেই মুচকি হেসে বললো,
—“আচ্ছা বাদ দে! চল ক্লাসে চল। নাহলে স্যার আবার বকাবকি করবে। ”
—“হুম!”

দুপুরবেলায় স্কুল ছুটির পর প্রতিদিনের মতোই ইনায়া বাড়িতে ফিরছিলো তবে আজ সে স্কুল ছুটির প্রায় আধঘন্টা পর বাড়ির দিকে যাচ্ছে। অন্যান্য দিকে মতো আজ তার মাঝে কোনো প্রফুল্লতা নেই। খুব গভীর চিন্তা ভাবনায় মগ্ন সে। নিজের হিসেবে পুরোপুরি মেলাতে পারেনি তবে তার প্রশ্নের উওর পেতে হলে তাকে তার বোনের সাথে কথা বলতে হবে।

রাস্তার একপাশ দিয়ে ইনায়া বাড়ি ফিরছিলো এমন সময় হঠাৎ পিছন থেকে এক পরিচয় কন্ঠ স্বর শুনতেই তার পা জোড়া থেমে গেলো। ইনায়া পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখলো রোহান কলেজ ড্রেস পড়া এবং তার দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু সে এবার একা নয় বরং তার এলাকার এক পরিচিত আপুকেও সে দেখতে পেলো। ইনায়ার এক ব্যাচ সিনিয়র, এবার এসএসসি দেবে। মেয়েটার নাম মিতু আর দেখতে শুনতেও যথেষ্ট ভালো হলেও তার ব্যবহার ইনায়ার কখনোই ভালো লাগেনি। মেয়েটার সাথে যতবারই ইনায়ার দেখা কিংবা কথা হয়েছে ততবারই মিতুকে ইনায়ার প্রচন্ড ন্যাকা স্বভাবের মনে হয়েছে। এমনিতে তো চরিত্রটা ঠিক আছে কিন্তু এই ধারণা ইনায়ার ভুল হতে পারে। কারণ মেয়েটাকে যেহেতু তার পছন্দ নয় তাই সে কখনোই মিতুর বিষয়ে ঘাটাঘাটি করতে যায়নি। কিন্তু হঠাৎ মিতু আর রোহান একসাথে এই জায়গায় থাকার কারণটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না।
এরই মাঝে তার দুজন চলে এলে রোহান বললো,

—“কি গো ইরাবতী ! বাড়ি যাচ্ছো নাকি। ”
ইনায়া ছোট করে উত্তর দিলো,
—“হুম! ”
তবে এটা বলেই ইনায়া চলে যেতে লাগলে রোহান বললো,
—“আরে কই যাও! আমাকে দেখলেই চলে যাওয়ার জন্য এতো তাড়াহুড়ো করো কেনো। ”
এরই মাঝে পাশ থেকে মিতু রোহনের উদ্দেশ্যে বললো,
—“তুমি ওকে চেনো! ”
—“হ্যাঁ,চিনি তো। ও ইরাবতী,তুমিও চেনো নাকি! ”
—“রোহান এটা আমাদের এলাকা আর আমি ওকে চিনবো না। ওকে এই এলাকার সবাই চেনে। এই বয়সে ওর এতো ইগো, এ্যাটিটিউট কি আর বলবো। সঙ্গে প্রচন্ড বেয়াদবও!”
মিতুর কথা শুনে রোহান তব্দা খেয়ে গেলো অন্যদিকে ইনায়ার চোখ মুখ স্বাভাবিক কিন্তু তাতে প্রচন্ড বিরক্তর ছাপ।
এরই মাঝে মিতু রোহানের বাহুতে হাত পেঁচিয়ে আহ্লাদী সুরে বললো,

—“আচ্ছা তুমি ওকে ইরাবতী বলছো কেনো বলোতো! কই কখনো তো আমায়কে এসব নামে ডাকো না! ”
মিতুকে এমন করতে দেখে ইমন কিছুটা বিব্রত হয়ে বলতে লাগলো,
—“কি করছো মিতু! এটা পাব্লিক প্লেস, কেউ দেখে ফেললে আমার তেরোটা বেজে যাবে।”
এবার এদের কাজকর্ম দেখে ইনায়া বাঁকা মুচকি হেসে তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে লাগলো,
—-“আশেপাশে এতো হুর-পরী থাকতে শেষে এই মৃগীকৃমি! রুচির দুর্ভিক্ষ, বেস্ট অফ লাক! ”
এই কথা বলা মাত্রই ইনায়া সামনে ঘুরে বাড়ির উদ্দেশ্য যেতে লাগলো আর পেছনে রোহান পুরো স্তব্ধ চোখে ইনায়ার যাওয়া দেখছে। কিন্তু তার পাশে থাকা মিতু অবাক সুরে চেচামেচি করে রোহানের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—“রোহান! ও…ও..এটা কি বললো। ও আমাকে মৃগী.. কৃমি!, ছিহ!!! তুমি কিছু বলছো না কেনো….রোহান….
ইনায়া এসব শুনতে শুনতেই সামনে এগোতে লাগলো। একটা সময় তার বাঁকা হাসি থেমে গিয়ে তাচ্ছিল্যে বিড়বিড় করে বললো,
—“রোহান আহমেদ! হাহ….!!!”

আজ ভার্সিটি থেকে অফিসে গিয়ে কিছুটা অবাক হলো। অফিসে আজ কেনীথ আসেনি। অথচ তাকে অফিস থেকে ভার্সিটি টাইমে ফোন করে জানানো হয়েছে ও যেন আজ দুপুরেই অফিসে চলে আসে। কেনীথ নাকি তার জন্য অনেকগুলো কাজ দিয়েছে সেগুলো আজই শেষ করে হবে।
আনায়া সে কথামতো ভার্সিটি থেকেই অফিসে চলে যায় আর বাড়িতে ফোন করে ফরিদাকে জানিয়ে দেয় এই বিষয়ে। অন্যদিকে সে ভেবেছিলো তার কাজকর্ম বলতে তো তেমন কিছুই নেই সঙ্গে কেনীথও আজ আসেনি তবে কি এমন আর কাজ করতে হবে। কিন্তু অফিসে যাওয়ার পরই তার পুরো চিন্তা ভাবনায় ছাই পড়ে গিয়েছে।
এতগুলো অগোছালো কাজকর্ম আর ফাইল ঠিক করতে গিয়ে সে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে কেনীথ আর যাই হোক, তাকে বসিয়ে বসিয়ে মাস শেষে ওতোগুলো টাকা দিচ্ছে না। এজন্য মনে মনে বিরক্তি নিয়ে বললো,
” বেটায় দশ দিনের কাজ একদিনেই পুষিয়ে নেবে। আচ্ছা, এমনটা কি তার বউদের সাথেও করবে নাকি! ছিঃ ছিঃ,কোথায় থেকে কোথায় চলে গিয়েছি। এসব কি চিন্তা ভাবনা। ”
নিজের উপর এই নিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়েই আনায় নিজের সব কাজ শেষ করেছে আর সর্বশেষে কেনীথকে একজন তার ছেঁড়া বড় ভাই হিসেবে বিবেচনায় রেখেছে।

কপাল করে আজ ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে গোসলটা সেরে গিয়েছিলো তবে এতোরাতে বাড়ি ফিরে আরেকবার গোসল না করলে আর তার আর রাতে ঘুম হবে না। আজ দশটার দিকেই বাড়ি ফিরেছে আনায়া আর এসেই দেখলো তার বাড়ি একদম নিস্তব্ধ ঘুমের আসরে পরিণত হয়েছে। তার বাড়িতে কেউ বেশি একটা রাত জাগে না। তারেক তো সন্ধ্যা রাতেই ঘুমিয়ে পড়ে আর ইনায়া পড়াশোনা শেষ করে দশটা কিংবা এগারোটায়।
আনায়া মনে হলো আজ হয়তো ইনায়াও তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে। আনায়া একবার বাবা আর বোনের রুমে যেতে চেয়েও আর তার শরীরে কুলালো না। কান্ত শরীর নিয়ে আগে নিজের রুমে গিয়ে সরাসরি গোসল করতে বাথরুমে চলে গেলো।
একটা লম্বা সাওয়ার নিতে নিতে পানিতে ভিজতে থাকা তার গলার চকচকে লকেটটার দিকে বারবার তাকিয়ে দেখতে লাগলো। জিনিসটাকে কেনো যেন তার প্রচন্ড অদ্ভুত লাগছে। এটা পড়ার পর থেকে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে যদিও এটাকে সে নিজের অতিরিক্ত ভাবনা বলেই চালিয়ে দিচ্ছে।
আনায়া গোসল শেষে রুমে আসতেই কিছুটা অবাক সুরে বললো,

—“ইরা! তুই ঘুমাসনি? ”
ইনায়া গম্ভীর স্বরে খাবারের প্লেট আর পানির গ্লাসটা ছোট টেবিলে রাখতে রাখতেই বললো,
—“ঘুমালে নিশ্চয় তোমার সাথে থাকতাম না! ”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে মনে মনে বললো,
—“এর আবার কি হয়েছে! ”
এরই মাঝে ইনায়া বিছানায় বসে পড়ে নির্বিকারে বলতে লাগলো,
—“খাবারটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নেও! ”
আনায়া ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আনায়ার সামনে গিয়ে চুল মুছতে লাগলো এরপর মুচকি হেসে বললো,
—“আমার উপর রেগে আছিস? ”
ইনায়া কিছু বললো না। আনায়া পিছনে ফিরে বললো,
—“কিছু বলবো! ”
—“হুম! ”
—“তাহলে বল! এই না শোন… তুই যদি এখন উল্টো পাল্টা কিছু বলতে এসেছিস তাহলে আজ আর সম্ভব না আমি অনেক ক্লান্ত…. প্লিজ কালকে……
—“তোমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড রনক ভাইয়া এসেছিলো! ”
আনায়া ভ্রু কুঁচকে ইনায়ার দিকে তাকালো তখনই ইনায়া নির্বিকারে বলতে লাগলো,

—“বিকেলের দিকে এসেছিলো। এসে জিজ্ঞেস করলো গত বৃহস্পতিবার তুমি কোথায় ছিলে। ”
আনায়া তাড়াহুড়ো করে ইনায়ার কাছে এসে বললো,
—“তুই কি বলেছিস! ”
আনায়া গম্ভীর মুখে বললো,
—“তুমি ঠিক কোথায় গিয়েছিলে তা তো আর বলে যাও নি কিন্তু আমি বলেছি তুমি বাড়িতেই ছিলে। ”
আনায়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে চেয়েও আর ফেলতে পারলো না।উল্টো ইনায়াকে বললো,
—“মিথ্যা কেনো বলেছিস। ”
ইনায়া বোনের দিকে গম্ভীর চাহুনিতে তাকিয়ে বললো,
—“তুমি কিসের জব করো আপু! ”
আনায়া উত্তর না দিয়ে বোনের গম্ভীর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো। এরপর কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বললো,
—“ওটা তোর না জানলেও চলবে। যা ঘুমাতে যা! ”
ইনায়া বাঁকা হেসে বললো,

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১১

—“জানার তো প্রয়োজন আছে, আমার বোন এতোরাত করে কি কাজ করে বাড়ি ফেরে তা জানতে হবে না বুঝি!”
আনায়া চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—“কি বলতে চাইছিস, সরাসরি বল!
ফর্সা মুখের ইনায়া আবারও বাঁকা হেসে বললো,
—“কিছুদিন আগে ভিকের কনসার্টে ওকে চ*ড় মা*রা মেয়েটা আর গত কনসার্টে যে মেয়েটাকে নিয়ে ভিকে এতো ঝামেলা করলো সেই মেয়েটার মধ্যে কোনো কানেকশন রয়েছে। না মানে দুজনেরই পরনের ড্রেসগুলো আমার প্রাণপ্রিয় বড় বোনেরও রয়েছে!”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৩