একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৯

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৯
রনীতা তুশ্মি

হঠাৎ বিকেল বেলায় কিছু মানুষের আগমনে শিকদার বাড়ির বাকি সবাই বাদে শুধু আনায়াই যেন প্রচন্ড সারপ্রাইজড হয়ে গেলো।
রাত জেগে রেহানের সাথে সময় পার করে দেরীতে ঘুমিয়ে আজ সকালে দেরীতেই জেগেছে আনায়া। তবে এতোদিনের মনমরা মেজাজ হুট করেই গায়েব হয়ে গিয়েছে। যে কারণে সকাল সকাল একদম ফ্রেশ মনে নিচে নিচে নেমে দেখে ফরিদা আর তার বোন মিলে বিশাল এক তোড়জোড় শুরু করেছে।
হঠাৎ এমন আয়োজনের কারণ খুঁজে না পেয়ে আনায়া অনেকটাই অবাক হয়ে ফরিদা আর ইনায়াকে জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় আজ নাকি কোন অতিথি আসবে। সঙ্গে আজ দিনটাও অনেক বিশেষ।

কিন্তু আনায়া এই বিশেষ দিন আর অতিথির বিষয়টি ঠিক বুঝতে পারলো না।তাদের আত্মীয় বলতে তো সে কাউকেই চেনে না।আদোও কেউ আছে কিনা সেটাও তো জানা নেই।
আনায়া এই নিয়ে ফরিদা আর ইনায়াকে অনেক জোড়াজুড়ি করলে তারা শুধু এতটুকু জানায় যে, বিশেষ দিনটা তার জন্যই সঙ্গে এসব নাকি রেহানের কথামতোই হচ্ছে।
আনায়া খেয়াল করে দেখলো,রাতে রেহান একবার তাকে বলেছিলো যে আজ নাকি সে কোনো বড় সারপ্রাইজ পেতে চলেছে। কিন্তু সেটা আসলে কি তা আন্দাজ করতে পারলো না। পরক্ষণে এসবকে রেহান আর তার পরিবারের পাগলামি ছাড়া তার কাছে কিছুই মনে হলো না।
আনায়া আর বেশি কিছু না বলে উল্টো তাদের সাথেই কাজে হাত বাড়িয়ে দিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিকেলের দিকে আনায়াকে জোর করে বেবি পিংক কালার আর হালকা সোনালী সুতোয় কাজ করা একটা শাড়ি পড়িয়ে সঙ্গে কিছু প্রসাধনী লাগিয়ে একদম ফিটফাট করে সাজিয়ে দিয়েছে ফরিদা আর ইনায়া। ওরাও আবার কি কমতি রাখবে। সেজন্য ফরিদা সেভাবে কিছু না করলেও ইনায়া একদম সেজেগুজে ফিটফাট। মনে হচ্ছে তার ঈদ লেগে গিয়েছে।
এদিকে আনায়া আন্দাজ করতে পারছে না রেহান আদোও ঠিক কি করতে চাইছে। তবে যখন বিকেলের দিকে রেহান ওর পুরো ফ্যামিলি নিয়ে শিকদার বাড়িতে হাজির হলো, তখনই আনায়ার মাঝে সম্পূর্ণ বিস্ময়ের জোয়ার বসে গেলো।

সবার এতো হাসিখুশি চেহারার মাঝে আনায়া পুরো বিস্মত চেহারা নিয়ে সবাইকে দেখছে। এদিকে রেহান তার শাড়ির কালারে মতোই একদম হালকা বেবি পিংক কালারের মধ্যে হালকা সোনালী কারুকাজ করা পাঞ্জাবি পড়ে হাজির। চোখেমুখে অমায়িক মুচকি হাসি। সে হাসি যেন আনায়াকে বারবার আড় চোখে তাকিয়ে দেখে আরো বিস্তৃত হচ্ছে।
রেহানের সাথে তার মা, বাবা সঙ্গে তার ভাই রোহান আর ইমনও সেজেগুজে চলে এসেছে। রেহানের মা বাদে সবাই খুব হাসিখুশি প্রকৃতির । তার মানে এই না যে রেহানের মা শিউলি বেগম খুব রূঢ় প্রকৃতির মানুষ। সে এমনিতে খুব স্বাভাবিক আর নরম স্বভাবের মানুষ হলেও তার জীবনের সবটুকুই যেন তার পরিবার। বিশেষকরে ছেলেদের নিয়েই তার যত সব চিন্তা ভাবনা। ছেলেদের প্রতি তার আবেগ, স্নেহ এতোটাই প্রবল যে সামান্য অসুখ কিংবা দূর্ঘটনাতেও সে প্রচন্ড রকমের অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার দিনদুনিয়া যেন ঘুরে যায়। আর সে কারণেই মা হয়েও নিজের ছেলের এক্সিডেন্টের খবরটাও সে পায়নি।

এক্সিডেন্টের কারণে রেহানের কপালের উপরের অংশে অনেকটাই ক্ষ*ত সৃষ্টি হয়েছিলো যার দাগ এখনোই রয়ে গিয়েছে। কিন্তু মায়ের নজর থেকে বাঁচতে তাকে নিজের বড় বড় চুল গুলো দিয়ে সেই স্থান ঢেকে রেখেছে। কিন্তু কখন যে সেটা তার মায়ের নজরে পরে যায়, সেই ভয়েই আছে রেহান।
অন্যদিকে তার বাবা রিফাত আহমেদ হাসিখুশি প্রকৃতির। তার জীবনে প্যারা বলতে মনে হয় কিছুই নেই। সবসময় হাসিখুশিতেই তার দিন যায়।

ফরিদা প্রথমের সাবইকে দেখেই দ্রুত গতিতে গিয়ে তাদের সালাম দিয়ে সম্মানের সাথে ভেতরে আসতে বলে৷ অন্যদিকে আনায়াও বেশি দেরী হওয়ার আগে তড়িঘড়ি করে গিয়ে সালাম জানায় সঙ্গে ইনায়াও বাদ যায় না।
সবাই গিয়ে সোফায় একসঙ্গে বসলে ফরিদা আনায়ার মাথায় ছোট করে ঘোমটা টানিয়ে সোফায় একপাশে বসিয়েই চলে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই হুইলচেয়ারে বসা তারেক শিকদারকে সবার মাঝে নিয়ে আসে।
আনায়ার একপাশে রেহান আর তার মা বসা। অন্যপাশে ইমন আর রোহান। এবং একদম মুখোমুখি বসা রেহানের বাবা। আনায়ার নজর প্রথমে গিয়ে সরাসরি রিফাত আহমেদের উপর পড়লো। লোকটির প্রফুল্ল মুখটাকে দেখে এটা বুঝতে বাকি নেই তিনি নিতান্তই অনেক বন্ধুসূলভ কিংবা হাসিখুশি প্রকৃতির।কিন্তু তার প্রশ্ন হচ্ছে এখানে হচ্ছেটা কি? সে আন্দাজ করছে এমনটা কি করে হয়। রেহান তো বলেছিলো তাদের রিলেশনের কথা বিয়ের আগেই তার পরিবারকে জানাবে তবে আজ সবাইকে নিয়ে এমন আয়োজন…

আনায়া একবার নিজের বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তারেকের চোখে মুখে যেন খুশির জোয়ার বইছে। আনায়া মনে মনে ভাবছে কয়েকদিন ঘরবন্দী ছিলো তাতেই মনে হয় পুরো দুনিয়া ঘুরে গিয়েছে।
এরই মাঝে হুট করেই শিউলি বেগম আনায়াকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করলো। আনায়াও ধীরে ধীরে সেসব প্রশ্নের উওর দিতে লাগলো। শিউলি বেগম তাকে ঘরের কাজকর্মের পাশাপাশি পড়ালেখা, পরিবার নিয়েও অনেক কিছু গম্ভীর সুরে জিজ্ঞেস করতে করতে একটা পর্যায়ে আনায়ার মাঝের মাধুর্যতায় সে প্রফুল্ল চিত্তে আনায়ার সাথে হাসিখুশি ভাবে কথা বলতে লাগলো। অন্যদিকে রেহানের বাবাও বা কম কিসে। আনায়াকে নিজের মেয়ে ভেবে কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে সে পারলে আনায়াকে নিজের বান্ধবীই বানিয়ে ফেলে।
এদিকে রোহান যদিও কিছু বলতে পারছে না তবে সে আনায়া আর ইনায়া দুজনকেই দেখে যাচ্ছে।
আনায়ার সাথে কথাবার্তা শেষে ইনায়া আর ফরিদার সাথেও সৌজন্যে মূলক কথাবার্তা শেষে রিফাত আহমেদ হাসতে হাসতে তারেকের উদ্দেশ্যে বললো,

—“তো শিকদার সাহেব, আপনার মেয়েকে আমার মেয়ে বানানোর জন্য রাজি আছেন তো? না.. না..আপনার মেয়েকে কিন্তু একেবারে নিয়ে নেবো না।মেয়ে আপনারও থাকবে সাথে আমারও। আপনার দুইটা মেয়েই কিন্তু অনেক মিষ্টি। হিরের টুকরো পেয়েছেন আপনি।”
এই বলেই সে আবারও হাসতে লাগলো সঙ্গে তার এসব কথাবার্তা শুনে তারেকেও অমায়িক মুচকি হাসলো। আনায়া খেয়াল করে দেখলো তার বাবা প্রচন্ড খুশি। সাথে আশেপাশের সকলেই। আনায়ার বুঝতে বাকি রইলো না এই বিষয়ে সে বাদে বাকি সবাই আগে থেকেই এই বিষয়ে অবগত।
কিন্তু আনায়ার মনে তো চলছে অন্যসব প্রশ্ন। সবার এতো হাসিখুশির মাঝেও সে তার বাবা আর বোনের কথা ভেবে খুশি হতে পারছে না। এখন তার বিয়ে হয়ে গেলে পরিস্থিতি ঠিক কোথায় যাবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না।
আনায়া খুব করে চাইছে রেহানের সাথে আলাদা করে কথা বলতে। কিন্তু এতো মানুষের মাঝে কিভাবে কি সম্ভব। তার এই ইচ্ছে এই মূহুর্তে সবার মাঝে প্রকাশ করাটাই তো মস্ত বড় বোকামি। কিন্তু তাকে আর বেশিক্ষণ এই নিয়ে ভাবতে হলো না।

আনায়ার চেহারা, ভাবসাবে চিন্তার আভাস প্রথমে রেহানের সেভাবে নজরে না এলেও আনায়া যখন স্তব্ধ চোখে অনবরত ঠোঁট ভিজিয়ে বারবার রেহানকে দেখতে লাগলো তখন বিষয়টি রেহান ঠিকই আন্দাজ করে ফেললো। সেই মূহুর্তেই রেহান নিজের পাশে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললো। তার মা এসব জিনিস এতো খোলামেলা পছন্দ করে না।অনেকটা ব্যাকডেটেট টাইপের তিনি।
তাই সরাসরি বাবার দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। এদিকে বিচক্ষণ মানুষ রিফাত আহমেদের আর বুঝতে বাকি রইলো না তার ছেলে কি চাইছে। তাই খানিকটা কেশে নিয়ে, গলা ঝেড়ে বললো,
—“আমরা বড়রা না হয় কথা বলতেই থাকবো। তার আগে ছেলে আর মেয়ে বরং আলাদা কথা বলে আসুক। বিয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশনে ওদের আলাপ আলোচনাই তো আসল।”

তার এই কথাতে আর কেউ দ্বিমত পোষণ করলো না। সবার মতামতেই আনায়া আর রেহানকে আলাদা কথা বলার অনুমতি দেওয়া হলো। তখনই ফরিদা আনায়ার উদ্দেশ্য বললো,
—“আনায়া মা! রেহান বাবাকে তোর রুমটাতেই নিয়ে যা।”
এটা শুনতেই আনায়া ফরিদার দিকে করুন চোখে তাকালো। সারপ্রাইজ দিবে ঠিক আছে তবে এমন সারপ্রাইজ কে দেয়? এসব বিষয়ে তো আগাম প্রস্তুতি না নিলে হয় নাকি! আনায়ার ওমন চাহনিতে ফরিদাও চোখের ইশারায় বোঝালো যে, কোনো চিন্তা না করতে। সব কিছু স্বাভাবিক হচ্ছে আর হবে। আনায়াও ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রেহানকে ইশারায় তার রুমের দিকে যেতে বললো।

—“এসব কি রেহান? তুমি তো আমাকে কিছুই জানাও নি। আর তুমি……
বদ্ধ রুমে গম্ভীর মুখে বলতে থাকা আনায়ার সম্পূর্ণ কথা শেষ হওয়ার আগেই রেহান মুচকি হেসে দুহাতে আনায়ার কোমড় জড়িয়ে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এরপর ধীরগতিতে মুচকি হেসে বললো,
—“আবার কি হতে যাবে! নিজের অতিথি পাখিটাকে এবার সত্যিকারের বউ পাখি বানানোর সময় চলে এসেছে। যেন আমার অতিথি পাখিটা আবার ফুড়ুৎ করে উড়ে না যায়।”
আনায়া বিস্ময় নিয়ে বললো,
—“কিন্তু তুমি তো বলেছিলে আমাদের…..
—“হ্যাঁ,আমি বলেছিলাম যে আমার তোমার ক্যারিয়ার ঠিকঠাক মতো না গড়ে ওঠা পর্যন্ত আমরা এমন কোনো ডিসিশনে যাবো না। তবে কতদিন আর এই হারাম কাজে পড়ে থাকবো। এরচেয়ে বিয়ে করে ফরজ কাজটা সেরে নিলেই হয় না! ”

—“তুমি তো ঠিকই বলছো কিন্তু এই মূহুর্তে এসব কিভাবে সম্ভব রেহান। একে তো তুমি আবারও আমেরিকায় ফিরে যাবে। আর এখন আমার দায়িত্বে শুধু আমার ফ্যামিলি কিন্তু বিয়ের পর তোমার ফ্যামিলিও তো আমার আরো এক নতুন ফ্যামিলি হবে তাই না? এই মূহুর্তে যা সিচুয়েশন তাতে বাবাকে ছেড়ে…. ইনায়া তো ছোট মানুষ। ওকে সব দায়িত্ব দিয়ে…. কিভাবে কি সম্ভব…. আমি বুঝতে পারছি না।”
আনায়ার এতো চিন্তিত হয়ে বলা কথাবার্তা শুনেও রেহান আবারও হেসে আনায়ার খোঁপা করা চুলের স্টাইলে, কপালে দিকে দুপাশে কিছু ছড়িয়ে দেওয়া চুল একহাতে কানের পিছনে ঠেলে দিতে দিতে বললো,

—“তোমাকে এতো কিছু ভাবতে কে বলেছে? তোমার প্রবলেমের সলিউশনের জন্য তো আমি আছি। আর তোমাকে কে বললো যে এখনি বিয়ে করে তোমায় সংসারী হতে হবে। তুমি যখন ফোন ধরছিলে না তখন আমি পুরো পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলাম। ইমন, রোহান আর ইনায়াকে তো আমি পুরো নাজেহাল করে তুলেছিলাম। কি করবো না করবো তাই বুঝতে পারছিলাম না। পরে অনেক হিসাবনিকাশ করে আমাদের বিয়ের ডিসিশন নিলাম।
আর এটাকে বাস্তবায়ন করতে ফোন লাগালাম বাবাকে। বাবাকে রাজি করাতে আমার বেশি কষ্ট হয়নি। সে তার ছেলের বিয়ের কথা শুনেই খুশিতে গদগদ। তবে চিন্তা ছিলো মাকে নিয়ে। কিন্তু আমার বলার পর বাকিটা বাবাই মাকে রাজি করিয়ে নিয়েছে। এরপর আমি এখানে আসার আগেই তারা সব প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে।

আর শুনো, তোমাকে বিয়ের পর একদম আমার বাড়িতে গিয়ে থেকে সংসারী হতে হবে এমন কিছু নয়। আমাদের শুধু বিয়েটাই হবে আর সপ্তাহ খানেক বাদে আবার আমেরিকায় ফিরে যাচ্ছি।যাস্ট বিয়ের জন্যই আসা। আর আমার পড়াশোনা কিংবা আমাদের ক্যারিয়ার ঠিকঠাক না গড়ে ওঠা পর্যন্ত আমরা এখন যে যেমন আছি ঠিক সেভাবেই থাকবো। এমুহূর্তে বিয়ে করার কারণ হলো এই তুমিটাকে আমার পার্মানেন্ট বউ পাখি বানানো। সো, এতো প্যারা নেওয়ার কোনো কারণ নেই।”
রেহানের এতোসব কথা শুনে আনায়া আবারও বিস্মিত সুরে বললো,
—-“আমি সত্যিই বুঝতে পারছি না, কি হতে চলেছে!”
রেহান আনায়ার কপালে ছোট করে চুমু এঁকে বললো,
—“যা হবে ভালোই হবে, তুমি যাস্ট আমার উপর ভরসা রাখো।”

রেহান আর আনায়া রুম থেকে আবারও সবার মাঝে ফিরতেই দেখতে পেলো সবাই বিয়ের আয়োজনের কথাবার্তা প্রায় শুরু করে দিয়েছে। আর আনায়কে দেখেই রিফাত আহমেদ আনায়া উদ্দেশ্যে বললো,
—“তো মা, বিয়েতে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?”
আনায়া মাথা নিচু করে বসেই ছিলো হঠাৎ এহেন প্রশ্নে খানিকটা চমকে গিয়ে রিফাতের দিকে তাকিয়ে এরপর তার বাবা আর রেহানের দিকে তাকালো। তারা দুজনেই ইশারায় আনায়াকে আশ্বস্ত করতেই আনায়াও অস্ফুটস্বরে মাথা নাড়িয়ে বললো,
—“জ্বী, নাহ।”

তার এই কথাতেই সবার মাঝে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠলো। রিফাত আহমেদ গিয়ে তারেকের হাত ধরে তাকে কোলাকুলির উদ্দেশ্যে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরে বললো,
—“চিন্তা করবেন না। আমার আর আমার স্ত্রীর সবসময় একটা মেয়ের অভাব ছিলো। আশাকরি খুব শীঘ্রই তা পূরণ হয়ে যাবে। আপনার মেয়ে মানেই আমার মেয়ে। আর আপনার মেয়ে যদি হিরা হয় তবে আমার ছেলে কিন্তু প্লাটিনাম। দুজনের কম্বিনেশন কিন্তু সেই জমবে।”
একটা সময় সবার মাঝে নানা সৌজন্যে মূলক সংলাপ শেষে রেহানের বাবা আবারও বললো,
—“ছেলে তো আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছে। সাত দিনের ছুটি নিয়েই বিয়ে করতে চলে এসেছে। প্রথমে তো ভেবেছিলাম শুধু পারিবারিক ভাবে বিয়ে পড়িয়ে রাখবো। কিন্তু পরে ভাবলাম, বড় ছেলের বিয়ে যখন, তখন তো ধুমধাম করে না হোক, তবে কিছুটা আয়োজন তো করতেই হবে।
পরেরবার না হয় একদম ধুমধাম করে বিয়ের আয়োজন করা যাবে। এখন বলুন, তারিখ কবে ঠিক করা যায়। যেহেতু সময় কম সেহেতু সব তাড়াতাড়িই করতে হবে।”
রিফাতের কথা শুনে তারেক তার আধভাঙ্গা ভাষায় কথা বলতে লাগলো। তার ভাষা যেহেতু তারা বুঝবে না সেজন্য ফরিদাই তারেকের কথা শুনে বললো,

—“আপনারা যেটা ঠিক মনে করেন। আমাদের মেয়ের যেহেতু কোনো আপত্তি নেই সেক্ষেত্রে আপনারা যখন বলবেন আমরা সেভাবেই আমরা আয়োজন শুরু করবো।”
রিফাত আহমেদ বললো,
—“আহা… আমাদের তো সবকিছু প্রস্তুতি নেওয়াই আছে। সেক্ষেত্রে আপনাদের কোনো কষ্ট করতে হবে না। যদি কোনো সমস্যা না থাকে তাহলে দুদিন পর ছোট করে একটা গায়ে হলুদ করে সেদিনই বিয়ের কাজ না হয় সেরে ফেলি। যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে। ”
—“না, না, আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আপনারা যা ঠিক মনে করেন তাই হবে। ”
—“ঠিক আছে, তাহলে কাল সারাদিন ধরে বিয়ের শপিং চলতে থাকবে আর পরদিন বিয়ে। বিয়ে যেহেতু পারিবারিক ভাবেই সেক্ষেত্রে আমাদের থেকে তেমন কোনো আত্নীয় নেই। তবে আপনারা যদি…
এবার ইনায়া ফট করে বলে ফেললো,

—“আমাদের তো আত্নীয়ই নেই। আর এই এলাকার লোকদের বিয়েতে ডাকার তো কোনো মানেই নেই। সবগুলোই বদলাক……সরি,ভুল করে বড়দের মাঝে বলে ফেলেছি।”
ইনায়ার হুট করে হুস হতেই দাঁত খিঁচে নিজের ভুলের জন্য মাফ চেয়ে চুপ হয়ে গেলো। তবে তার এমন কাজে রিফাত হেসে বললো,
—“হা হা, তুমি মনে হয় অনেক মজার মেয়ে। তোমাকেও আমার পছন্দ হয়েছে….তোমার যদি আপত্তি না থাকে তবে তোমাকেউ কিন্তু আমার ছেলে……
রিফাতের কথা শেষ হওয়ার আগেই ইনায়া আঁতকে উঠে বিস্ফো*রিত সুরে বললো,
—“নাহ আঙ্কেল, আমি বিয়ে করবো না।”
ইনায়ার কথা শুনে সবাই হেসে ফেললো।
—“আরে আমি তো মজা করছিলাম, হা হা।”
ইনায়া ইতস্তত হয়ে বললো,
—“তাহলে ঠিক আছে।”
ওর এহেন হাবভাবে সবাই পুনোরায় হাসতে লাগলো এদিকে ইনায়া তব্দা খেয়ে সবাইকে দেখছে। সে এমন বললোইটা কি যাতে এভাবে হাসতে হবে। তবে রোহানকে আড়চোখে দেখে বিড়বিড় করে বিরক্তি নিয়ে বললো,
—“এই মৃগীকৃমির বডিগার্ড আর আমি? অসম্ভব!”

সবার কথাবার্তা শেষে আনায়া আর রেহানের আংটিবদল হলো। এরপর হালকা কিছু নাস্তা আর গল্পগুজবের পর রেহানের পরিবার মিলে শিকদার বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে নিলো। এরই মাঝে রোহান আর ইনায়ার এক কথার সংঘ/র্ষ সৃষ্টি হলো।
—“কি ইরাবতী বেয়াইন সাহেবা, খোঁজ খবর তো কিছুই নেন না।”
ইনায়া চোখ ছোট ছোট করে বললো,
—“আমি বলেছিলাম, আমাকে এসব উল্টো পাল্টা নামে না ডাকতে।”
ইনায়ার কথা শুনে রোহান হেসে বললো,
—“আরে এসব বেয়াই বেয়াইনের মধ্যে হয়েই থাকে।”
—“ভালো কথা, তবে আমাদের এখনো এই সম্পর্ক হয়নি। আগে বিয়ে হোক, তারপর…
—“তুমি কি আমার সাথে কথা বলে বিরক্ত হচ্ছো?”
ইনায়া নির্বিকারে বললো,
—“হু…! ”
রোহান কিছুটা কেশে বললো,

—“এর কারণটা…?”
—“জানি না…?”
—“আচ্ছা তুমি সেদিন মিতুকে ওসব বললে কেনো। তুমি জানো এই নিয়ে ও আমাকে কত কথা শুনিয়েছে।”
এবার আনায়া বাঁকা হেসে বললো,
—“ওহ, এবার বুঝছি হঠাৎ এখানে টপকানোর মানে কি? আমি সোজাসাপটা উত্তর দিচ্ছি, আমার যেটা ঠিক মনে হয় আমি তাই করি, তাই বলি। কে কি ভাবলো কিংবা বললো তা আমার ভাবনার বিষয় না।”
—“তাই বলে তুমি আমার সামনে ওকে ওসব বলবে….!”
রোহানের ইনোসেন্ট মুখের কথা শুনে ইনায়া হেসে, বুকে হাত গুঁজে রোহানের দিকে কিছুটা মুখ বাড়িয়ে বললো,
—“কষ্ট পেলে সরি, বাট নট সরি। আমি সত্যি বলতে কখনো দ্বিধাবোধ করি না। এখন সত্যি যেমনটাই হোক, নিজের মনের বিরুদ্ধে যাওয়াটা আমার পছন্দ নয়। আমার মন যা চায়, আমি তাই করি।”
এই বলেই ইনায়া আর একমুহূর্তেও দেরী না করে তাচ্ছিল্যের সাথে হেঁসে চলে গেলো। ইনায়াকে ফাঁকা পেয়েই রোহান গিয়েছিলো কথা বলার জন্য আর বাকিটা ইনায়াই এভাবেই ধুয়ে দিয়েছে।

ইনায়া, আনায়া, রোহান, রেহান আর ইমন ;এই পাঁচজন মিলে একসাথে বিয়ের মার্কেট করতে বেড়িয়েছে। বিয়ের খরচ যেহেতু আনায়াদের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্ভব নয় তাই সব আয়োজনই আহমেদ পরিবার থেকে হবে। আর রিফাত আহমেদ চায়ও না যে আনায়ারা এতে কোনো খরচ করুক। ওদের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে রেহানের পরিবার ভালো করেই জানে আর এসব নিয়ে কোনো চাপ সৃষ্টি করার মতো লোক তারা নয়।
আনায়া, ইনায়া দুজনেই কালো রংএর লং কুর্তি পড়ে এসেছে। অন্যদিকে ছেলে তিনজন টিশার্ট, প্যান্ট পড়ে পুরো সেজেগুজে চলে এসেছে।

এদিকে আনায়া ইমনের সাথে চাকরি বিষয় নিয়ে কথা বলতে চেয়েছিলো পরবর্তীতে ভাবলো ওসবের আর প্রয়োজন নেই। আপাতত বিয়ের জন্য সেসব বন্ধ রাখাটাই ভালো। এই ভেবে আনায়া পুরো পরিবেশটাকেই স্বাভাবিক রেখেছে।
মোটামুটি সব কেনাকাটা শেষে এবার তোরজোর চলছে আনায়ার কেনাকাটার জন্য। খুব ভারী কাজে কিংবা জমকালো বিয়ের পোশাক হবে না৷ খুব স্বাভাবিক একটা লেহেঙ্গা। কিন্তু সেটাই কারো মনে ধরছে না। যদিও রেহানের মন আকুপাকু করছে নিজের আনায়াকে পুরো জমকালো সাজে দেখতে কিন্তু একটু বেশি খরচ করলেই আনায়া পুরো হামলে পড়বে তার উপর। এখানে আসার আগেই আনায়া রেহানকে অনেকটা শাসিয়ে জানিয়ে দিয়েছে।
বিয়ের ড্রেস লাল হতে হবে এটা পারিবারিক ভাবে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে কারণে জুতো সহ সকল জুয়েলারি কিংবা বরেরে ড্রেস সেই হিসেবেই নেওয়া হয়েছে। মাঝখান থেকে কনের ড্রেস খুঁজতেই সবাই আঁটকে গিয়েছে। আনায়া তো চাইছে এমনি একটা লাল রং-এর নিয়ে নিলেই হয় কিন্তু রেহান তাতে রাজি নয়।
কিন্তু এরই মাঝে তাদের সবার সাথে হঠাৎ এক অপ্রত্যাশিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায়। যাকে সর্বপ্রথম নজরে আসে ইনায়ার।

ইনায়া একাই গিয়ে পাশের একটা জুয়েলারি শপে নানা জিনিস ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। তখনই সেই শপেই তার নজর যায় কেনীথের মতো গায়ের গঠনের মাক্স আর কালো হুডি পড়া একজন লোককে। কোনো প্রকার নিশ্চিত না হয়েই ইনায়া ওকেই কেনীথ মনে করে ফেলে। আর তার ধারনাই ঠিক হয়। আনায়া ত্বরিত পিছন থেকে বললো,
—“ভিকে….! ”
তার কথা শুনে কেনীথ পিছনে ফিরে ইনায়াকে দেখলো। তবে কিছু বললো না। আর এদিকে ইনায়া আবারও অবাক সুরে বললো,
—“তুমি এখানে কিভাবে?”
কেনীথ ইনায়ার কাছে এসে বললো,
—“আস্তে বলো, কেউ বুঝে গেলে প্রবলেম হবে।”
ইনায়ার কথার উদ্দেশ্য বুঝতেই তড়িঘড়ি করে ফিসফিসিয়ে বললো,
—“হু, হু,সরি খেয়াল ছিলো না। কিন্তু তুমি এখানে কি করছো?”
কেনীথও ধীরে সুরে বললো,
—“কাজে এসেছিলাম তবে তুৃমি কি করে চিনলে আমায়? আর একাই এসেছো?”
ইনায়া কিঞ্চিৎ হেসে বললো,

—“হাহ, তোমাকে চিনবো না এটা কি করে হয়। আর আমি এখানে একা আসিনি। আপুর বিয়ের শপিং করতে এসেছি।”
—“তোমার আপু বলতে….
—“হ্যাঁ,হ্যাঁ, তোমার পিএ আনায়া। আচ্ছা তুমিও চলো না ওখানে।…. যদি তুমি কিছু না মনে করো…”
কেনীথ নির্বিকারে বললো,
—“চলো তবে।”
ইনায়া বিস্ফোরিত সুরে বললো,
—“সত্যি!, তুমি না অনেক ভালো।”
এই বলেই কেনীথকে নিয়ে ইনায়া আনায়াদের দিকে যেতে নিলো। ইনায়া সামনে আর কেনীথ পেছন পেছন পকেটে দু হাত গুঁজে ওকে অনুসরণ করে কালো মাক্সের আদলেই হেঁসে এগিয়ে যাচ্ছে।

হঠাৎ কালো মাক্স, হুডি, প্যান্ট পড়া লোকের পরিচয় জেনে সবাই চমকে গেলো। রেহান, রোহান, ইমন কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না এটা স্বয়ং ভিকে তাও আবার এই শপিং মলে। সত্যিই অনেক আশ্চর্যের বিষয়।তারা বাদে যেন অন্য কেউ জানতে না পারে তাই ইনায়া চুপ করেই শুধু ওদের কেনীথের কথা জানিয়েছে।
এদিকে সবার মাঝে কেনীথকে নিয়ে আগ্রহ, বিস্ময়, আন্দনের জোয়ার থাকলেও আনায়ার মাঝে চলছে অন্যকিছু। তার মাঝে বিস্ময় আর আ*তংক দুটোই কাজ করছে। এই মূহুর্তে সে কখনোই কেনীথকে আশা করেনি।
আনায়া চোখমুখ অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে। এদিকে আবার রেহান কেনীথের সাথে খুব স্বাভাবিক ভাবেই পরিচত হওয়া পর বিয়ে নিয়েও নানা কথা বলতে লাগলো।

এদিকে আনায়া এই সময়টুকু পর্যন্ত নিরবে কেনীথের সবকিছু কপাল খানিকটা কুঁচকে দেখতে লাগলো। মূলত কেনীথের আসল হাবভাব বোঝাটাই তার মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু সে লক্ষ করে দেখলো কেনীথ একবারও আনায়ার দিকে ফিরেও তাকায়নি। সামান্য চোখাচোখি হওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি করেনি।
আনায়া প্রায় অনেকটাই অবাক হলো কেনীথের এমন হাবভাব দেখে। হঠাৎ এমন পরিবর্তনের কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সঙ্গে এমন একটা জায়গায় তার আগমনও স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারছে না। কেনীথকে তার অনেকটা অসহ্যও লাগছে। তাই বিরক্ততে ইনায়াকে চুপ করে জানালো যে সে অন্য দোকান গুলোতে একবার ঘুরে দেখার বাহানায় ওখান থেকে সেরে এলো।

আনায়া প্রায় কিছুক্ষণ ফিরে আসতেই দেখলো, কেনীথ নেই। সে চলে গিয়েছে জেনে যতটা না খুশি হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হলো অন্য এক ঘটনা জেনে। রেহান আনায়ার জন্য পুরো শপের সবচেয়ে এক্সপেন্সিভ গাঢ় লাল আর জমকালো লেহেঙ্গা কিনে নিয়েছে। কিন্তু এটা জেনে যেই না রেহানের সাথে রাগারাগি করতে যাবে তখনই জানতে পারলো লেহেঙ্গাটা নাকি সে কেনীথ তার পক্ষ থেকে গিফট হিসেবে কিনে দিয়ে গিয়েছে। বলেছে তার পি.এ. হিসেবে সে এতোটুকু গিফট দিতেই পারে।
আনায়ার যেন বিস্ময় কাটছেই না। কিছুটা ঝাঁঝালো আর অবাক সুরে রেহানকে বললো,
—“সে দিলো আর তুমি নিয়ে নিলে?”
রেহান অপারগ মুখে বললো,

—“আমি কি করবো, সরাসরি লেহেঙ্গাটার পেমেন্ট করে, দিয়ে গিয়েছে। জোড়াজুড়ি তো আর কম করিনি কিন্তু লাভ কি হলো। তুমি থাকলেও তো একটা কথা ছিলো। কোথায় যে গায়েব হলে কে জানে।”
আনায়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। মনে মনে ভাবছে এই কেনীথ আদোও চায়টা কি? সে কোনো নতুন গেম খেলছে না তো! আনায়ার চিন্তায় চোখমুখ খানিকটা কুঁচকে গেলো। ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে পড়লো। তখনই কি যেন ভেবে সেলস্ মেনদের কাছে এক অদ্ভুত আবদার করতে লাগলো। সে তোরজোর লাগিয়ে অনুরোধ করলো যেন লেহেঙ্গাটা তারা ঘুরিয়ে নেয় আর লেহেঙ্গার জন্য যা পেমেন্ট করা হয়েছে তা যেন ভিকের নামে তার অফিসে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি ভিকের অফিসের কার্ডও পর্যন্ত দিয়ে অনুরোধ করেও লাভ হলো না।

তাদের একটাই কথা, তাদের শপের একবার পেমেন্ট হওয়া জিনিস কখনোই তারা রিটার্ন নেবে না। কেনার শুরুতেই সবকিছু দেখে নিতে হবে।
আনায়ার মাথাটা রাগে গিজগিজ করছে। ওই লোকটার জিনিস সে কখনোই নেবে না। কিন্তু এখন করবে কি! এদিকে রেহান সহ বাকিরা আনায়ার এতো বেশি রিয়েক্ট করার কারণ খুঁজে পেলো না। যেখানে ভিকের মতো কেউ তাদের এতোবড় গিফট দিয়েছে, সেট নিত্যান্তই অবিশ্বাস্য। তবে আনায়ার এতো রিয়েক্ট করা যেন আরে বেশি অবাক লাগছে সবার। একটা সময়ে রেহান এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে, আনায়া নিজেকে সামলে নেয়।
এরপর অবশ্য রেহান আনায়ার জন্য আলাদা করে কোনো বিয়ের ড্রেস না নিলেও হলুদের জন্য লেহেঙ্গা সঙ্গে আরে কিছু দামী শাড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে নিজেরের গাড়ি করে রওনা দেয়। তবে এর মাঝে আরো এক খবর শুনে আবারও বিস্মিত হয় যখন রেহান তাকে বললো কেনীথকে তারা তাদের বিয়েতে ইনভাইট করেছে সঙ্গে কেনীথ নাকি এতে রাজিও হয়েছে। আর এটা শুনে আনায়া বিস্ফোরিত সুরে বললো,

—“কিহ…!”
আনায়াকে আবারও এতোটা অবাক হতে দেখে রেহান বললো,
—“কেনো, তুমি খুশি হওনি। লেহেঙ্গা না হয় বেশি এক্সপেন্সিভ তাতে রিয়েক্ট করছো কিন্তু ভিকে তো তোমার বস। সেক্ষেত্রে তার মতো মানুষ আমাদের বিয়েতে আসতে রাজি হয়েছে এটা অকল্পনীয় ব্যাপার। তোমার তো খুশি হওয়ার…আচ্ছা আনায়া, সত্যি করে বলো তো কোনো প্রবলেম…..
রেহানের এহেন কথার সুর দেখে আনায়া নিজেকে দ্রুত তটস্থ করে ইতস্ততভাবে বললো,
—“না,না, আমার কি সমস্যা থাকতে পারে। আমি বলছিলাম যে ওনার মতো এতো বড় মাপের মানুষ কিভাবে…..
এরই মাঝে গাড়ি চালাতে থাকা ইমন বললো,
—“আমিও তো এটাই ভাবছি। আজ পর্যন্ত যে ভিকের সাথে কাজ করলাম তাকে তো আমি চিনতেই পারছি না।”
এটা শুনে পেছনের সিটে আনায়ার পাশে বসে থাকা রেহান মুচকি হেসে বললো,
—“আমিও কিন্তু কম অবাক হয়নি। লোকটিকে আমরা সবাই যেভাবে দেখি তিনি মোটেও হয়তো ওরকম নয়। সেলিব্রিটি হলে যা হয়, ভারী অদ্ভুত জীবনযাপনের নিয়ম এদের।”
এতোসব আলোচনার মাঝে আনায়া শুধু এটাই ভাবছে কেনীথ ঠিক কি গেম খেলতে চাইছে। যতটুকু কেনীথকে জেনেছে সে তাতে এতোটুকু নিশ্চিত যে কেনীথ স্বাভাবিক কিংবা সাধারণ কেউ না। তার উদ্দেশ্য নিশ্চিত ভিন্ন কিছু। তবে মনে মনে এটাও বললো যে,
—“যদি বিয়েতে কোনো ব্যাঘাত ঘটানোর উদ্দেশ্য থাকে, তবে মিস্টার ভিকে! আই সয়ার, আমি আপনাকে ভুলেও ছেড়ে দেবো না। আমার লাইফ ব্যাঘাত ঘটালে আপনার লাইফ আমি একদম শেষ করে দেবো।”

নিত্যদিনের মতো কেনীথ ক্লারা আর কেনেলকে তার স্পেশাল মাংসের স্টেক রেঁধে খাওয়াচ্ছে।হাঁটু গেঁড়ে বসে ওদের খাবার খাওয়া দেখতে দেখতে একটা সময় কেনীথ কেনেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
—“জানিস তোরা, কাল তারার বিয়ে। আমাকে আবার দাওয়াতও দিয়েছে। আচ্ছা বলতো, আমার কি করা উচিত?”
ওর এই প্রশ্ন শুনে কুকুর দুটো নিজেদের খাবার খাওয়া বন্ধ করে নিজেদের ভাষায় কেনীথকে কিছু বললো। যা মনোযোগ দিয়ে কেনীথ শোনার পর বললো,
—“আরে নাহ! আমি আকাশের তারা নয়, আমার তারার কথা বলেছি।”
কুুকুর দুটো আবারও শব্দ করে আওয়াজ করলো। তখন কেনীথ মুচকি বাঁকা হেসে বললো,
—“উহু, আমি তো এমন কিছুই করবো না। ও যদি বিয়ে করে নিজের সুখ খুঁজে নিতে চায়, তবে তাই হোক। আমি কেনো শুধু শুধু বাঁধা দেবো। তবে আমি ওকে কাল একটা গিফট দিতে চাই। একটা স্পেশাল গিফট। যা ওর লাইফের জন্য এতোটাই স্পেশাল হবে যে…
বাকিটা অসমাপ্ত রেখেই কেনীথ আবারও বাঁকা হেসে বললো,

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ১৮

—“গিফটা আদোও কি হতে চলেছে, এটা নিশ্চয় তোরা জানিস!”
কেনীথের কথা শুনতেই কেনেল আর ক্লারা জোরে জোরে আওয়াজ করে ডাকতে লাগলো। তাদের আওয়াজের শব্দ এতোটাই প্রকট হলো যে কেনীথের সেই বিশাল ভবনের চারপাশ সম্পূর্ণ রুপে তা ছড়িয়ে পড়লো।
এরই মাঝে কেনীথ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বললো,
আকাশে এতো তারার ভিড়ে
যে তারাটা ছিলো শুধু কেনীথের জন্য বরাদ্দ,
সেই তারাই কিনা হতে যাচ্ছে অন্য কারো!
হাস্যকর!”

একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ২০