একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ২৫
রনীতা তুশ্মি
প্রায় অনেকক্ষণ সময় পার হওয়ার পরও যখন আনায়া ফিরে এলো না।তখন কেনীথ নিজের কাজকর্ম সব থামিয়ে কপাল কুঁচকে কিচেনের দিকে তাকালো। ড্রইং রুম থেকে অবশ্য কিচেন সরাসরি দেখা যায় না।
কেনীথ আর দেরী না করে কিচেনে গিয়ে দেখলো সেখানে আনায়া নেই। সেখানে থেকে বেড়িয়ে যেতে নিলেও আর বেড়িয়ে এলো না। বরং ফ্রিজ খুলে কিছু মাংস স্টেক করে কেনেল আর ক্লারার উদ্দেশ্যে যেতে লাগলো।
কিচেন থেকে বেশ খানিকটা দূরে কেনেল আর ক্লারার থাকার জায়গা। কেনীথের একহাতে খাবার অন্যহাত তার পকেটে গুটানো। শিরদাঁড়া সোজা করে বড় বড় পা ফেলে হেঁটে চলেছে। কিন্তু একটা সময় গিয়ে হুট করেই কেনীথ থেমে গেলো। আচমকা পাশে ফিরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তুই এখানে কি করছিস?”
হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত গম্ভীর কন্ঠস্বরে অন্ধকার হতে চমকে কেউ বেড়িয়ে আসতে লাগলো।
একটা সময় আনায়া ইতস্তত চেহারা নিয়ে কেনীথের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মুচকি হেসে বলতে লাগলো,
“আমি তো…একটু…,আপনি বাহিরে যেতে দেবেন না তাই বাড়িটাই ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম।”
কেনীথ আনায়ার দিকে কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আনায়া যতটা পারলো নিজেকে স্বাভাবিক করে ফেললো। অন্যদিকে কেনীথ তার কুঁচকে থাকা কপালটাকে স্বাভাবিক করে বললো,
“এখানে ঘুরে ঘুরে দেখা যাবে এমন কিছু তো আমি দেখছি না। যাই হোক…তোর যেটা ভালো মনে হয় কর। কিন্তু ভুলেও আমার রুমে যাওয়ার চেষ্টা করবি না। নয়তো সেটা তোর জন্যই খারাপ হবে।”
আনায়া কেনীথের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে কয়েকবার চোখের পাপড়ি ঝাপটিয়ে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ঠিক আছে, ঠিক আছে।আমি কেনো আপনার রুমে যাবো শুধু শুধু।… আচ্ছা আপনি কি কোথায় যাচ্ছেন?”
—“হুম”
কেনীথের গম্ভীর কথার সুরে আনায়া ঘাড় উঁচিয়ে বললো,
—“কোথায়?”
কেনীথ পুনোরায় গম্ভীর কন্ঠে জবাব দিলো,
—“কেনেল আর ক্লারাকে খাবার দিতে।”
আনায়া খানিকটা মুখ ভেঙ্গিয়ে বললো,
—“ওহ আপনার ঐ কুত্…আচ্ছা বাদ দিন। আমিও যাই আপনার সাথে?
—“ইচ্ছে”
কেনীথ এই বলেই আরে একমুহূর্তও দেরী না করে পুনরায় তার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। অন্যদিকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আনায়াও কেনীথের যাওয়ার পানে কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে কেনীথের পেছন পেছন যেতে লাগলো।
“ও মা আ…!”
—“যাস্ট শাটআপ।”
কেনীথের ধমক শুনে আনায়া নিজের চিৎকার দিতে থাকা মুখটা নিজ হাতে চেপে ধরলো। তবে কিছুক্ষণ চুপ থেকেই পুনরায় বিস্মিত চোখে কেনীথের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
—“এগুলো কুকুর নাকি বাঘ-ভাল্লুক। এতো বড়… বড়…
এদিকে আনায়ার কথা নিমিষেই থেমে গেলো সঙ্গে আচমকা ও কয়েক পা পিছিয়ে গেলো। কেননা ওর ওমন চিৎকার শুনে শান্ত হয়ে বসে থাকা কেনেল-ক্লারা হুট করেই ডাকাডাকি করতে লাগলো। এতেই আনায়ার কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছে। একে তো বড়সর দেখতে তার উপর এমন কালো কুচকুচে। আনায়ার মতে এমন কুকুর তো নিমিষেই জ্যান্ত মানুষ খেয়ে ফেলতে পারবে।
এদিকে কেনীথ আনায়ার কাজকর্মে কোনো পাত্তা না দিয়ে ক্লারা আর কেনেলের সামনে খাবার দিয়ে শান্ত হতে বললো। এরপর তার পাশেই রাখা রকিং চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখ বুঁজলো। অতঃপর কেনেল আর ক্লারার উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—“ওকে দেখতে কেমন লাগে?”
কেনীথের কথা পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা আনায়া না বুঝলেও কেনেল আর ক্লারা কেনীথের কথায় জোরে জোরে ডেকে সারা দিতে লাগলো। এদিকে আনায়া আবারও খানিকটা চমকে কয়েক পা পিছিয়ে গিয়ে কেনীথের দিকে তাকাতেই দেখলো কেনীথও তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। এদিকে আনায়া প্রথমে এই হাসির অর্থ বুঝতে না পেরে কপাল কুঁচকে ফেললো। তখনই আনায়ার উদ্দেশ্যে কেনীথ বলতে লাগলো,
“ওরা তো বলছে, ওদের নাকি তোকে পছন্দ হয়েছে।”
আনায়া কিঞ্চিৎ তব্দা খেয়ে বললো,
“মানে?”
—“মানে তোর মাংস খেতে ওদের কোনো অসুবিধা নেই?”
কেনীথের কথা শুনে আনায়া বিস্মিত চোখে বললো,
“কিহ!”
খাটের উপর বসে বসে আই প্যাডে দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে অনবরত কি না কি করে যাচ্ছে। অন্যদিকে আনায়া বারান্দায় হতে নিচের বাগানে কিছুক্ষণ উঁকিঝুঁকি দিতেই ত্বরিত রুমের ভেতরে এসে কেনীথের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,
—“আপনার মতো আপনার বাগানের গাছ ফুলগুলোও তো ভারী অদ্ভুত? বিশ্বাস করুন, আমি এতো তরতাজা গাছ-ফুল খুব কমই দেখেছি। এগুলোকেও কি আপনি ভিআইপি খাবার দাবার দেন নাকি? না মানে, একটু বেশিই অদ্ভুত তো… ”
কেনীথ নিজের কাজ থেকে ধ্যান সরিয়ে আনায়ার দিকে তাকালো। এবং স্বাভাবিক কন্ঠেই বলতে লাগলো,
—“তুই প্রচন্ড ফালতু ভাবে টাইম পাস করছিস। হোয়াট এভার, ভুল কিছু বলিস নি। আমার বাগানের দেখভালও ভিআইপি স্টাইলেই করি।”
আনায়া খানিকটা বিরক্ত হয়েই বললো,
—“তা আমাকেও একটু বলেন, আমিও একটু শুনি।”
—“তোর শুনে কাজ নেই। ওসবের সাধ্য তো নেই।”
—“আসছে…টাকার গরম দেখাতে।”
—“এখানে টাকা নয় কলিজার পানি লাগবে, সঙ্গে হাড় হাড্ডির গুড়ো।”
—“মানে?”
—“আপাতত আর কোনো কিছুর মানে জেনে লাভ নেই। আমাকে এখন যেতে হবে তবে যথা সময়ে ফিরে আসবো। চুপচাপ রুমে বসে থাকবি না ঘুমাবি তা তোর ব্যাপার। কিন্তু টইটই করে যে লাফালাফি করতে না দেখি।”
—“আপনার তো নাকি দিনের আলো ভালো লাগে না। তবে এখন কোথায় যাচ্ছেন?”
কেনীথ চলেই যাচ্ছিলো তবে আনায়ার কথার উত্তরে গম্ভীর কন্ঠে বললো,
—“সব কিছুর কৈফিয়ত আমি তোকে দিতে বাধ্য নই।
—“যাক বাবা, আমি আবার….
আনায়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেনীথ দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো।এদিকে প্রথমে আনায়া খানিকটা ইনোসেন্ট হওয়ার ভাব নিলেও মূহুর্তেই কিঞ্চিৎ বাঁকা মুচকি হাসলো।
চারপাশে শুনশান নিরবতা। বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলেছে। আনায়া বিছানায় বসে সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা সে নিজেও জানে না। আচমকা ঘুম থেকে জেগে উঠে বিস্মিত হয়ে নিজের উপর গালাগালি করতে লাগলো। তবে বেশি সময় নষ্ট না করে একবার বাহিরে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে নেওয়া উচিত। আদোও কেনীথ এসেছে কিনা তাও তো আনায়ার জানা নেই।
আনায়া চুপচাপ রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। এরপর সোজা নিচে এসে প্রথমে স্বাভাবিক কন্ঠেই ডাকতে লাগলো,
—“আপনি কি আছেন?”…এসে পড়েছেন আপনি? নাকি এখনো আসেননি। মিঃ ভিকে, আপনি আশেপাশে থাকলে প্লিজ একটু সাড়া দিন।”
এটা বলেই কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর আনায়া খানিকটা মুচকি হেসে বললো,
“তারমানে আপনি কোথাও নেই, তাই তো?”
এবার আনায়া কিঞ্চিৎ বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো,
“সো মাম্মাহ… এবার কাজে লেগে পড়। যা হওয়ার হবে কিন্তু আমি হাল ছাড়বো না।”
এই বলেই আনায়া আশেপাশে আরেকটু খুঁজেও যখন কোথাও কেনীথের দেখা পেলো না তখন দ্রুত পায়ে সিঁড়িবেয়ে প্রথমে দোতলায় পৌঁছে গেলো। উদ্দেশ্য তার প্রথমে কেনীথের রুমটাকে চেক করা। সে মনেপ্রাণে বিশ্বাসী যে এখানে এমন কোনো রহস্যের সন্ধান মিলবে যা পুরো গেমকেই চেঞ্জ করে ফেলতে পারে।
আনায়া দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা বন্ধ করা। এবার সে কিছু একটা খুজতে লাগলো। মূহুর্তেই সে তার কাঙ্ক্ষিত জিনিসটি খুঁজেও পেলো। তা দেখে মুচকি হেসে এবার নিজের গলা থেকে স্টার শেইপের সে লকেটটা খুলে ফেললো। এবং তা কালচে দরজার মাঝে ছোট একটা স্টার শেইপের আকৃতিতে প্রবেশ করাতেই মুহুর্তেই দরজার লকটা খুলে গেলো। তবে আনায়া এতে মোটেও বিস্মিত হলো না বরং মুচকি হেসে চেইনটা পুনোরায় গলায় পড়ে নিলো।
তার বিস্মিত না হাওয়াও অবশ্য কারণও রয়েছে। কারণ এমন ঘটনার সাক্ষী সে এর আগেও একবার হয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরও যখন আনায়া ফিরে এলো না এবং কেনীথ আনায়াকে খুঁজতে কিচেনের দিকে গিয়েছিলো।সেই সময়টাতে আনায়া মূলত ভিন্ন কিছুর সন্ধান পেয়েছিলো।
কিচেন থেকে খানিকটা দূরে একদম ফাঁকা জায়গা খানিকটা অন্ধকারে একটা পেইন্টিং আনায়ার নজরে পড়ে। কেনীথের বাড়িতে সব পেইন্টিং গুলো খুবই উদ্ভট হলেও এবার চেনা পরিচত সাধারণ একটা গোল্ডেন স্টারের ছবি দেখে আনায়া খানিকটা খুশি হয়েছিলো। সেটাকে আরেকটু পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েই আনায়া খেয়াল করে বাড়ির অন্যসকল জায়গার চেয়ে এই জায়গাটা অনেকটাই পরিত্যক্তের মতো। মনে হচ্ছে ঠিকঠাক ভাবে জায়গাটা পরিচর্যাও হয় না। তবে হলেও সেটা খুব কম।
আনায়ার এমনটা মনে হওয়ার কারণ হলো আশেপাশে সহ বড় ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটাতেও অনেকটা ধুলাবালি জমে গিয়েছে। এর কারণটা অবশ্য আনায়া ঠিক বুঝতে পারলো না তবে আনায়া ছবিটার দিকে খেয়াল করে দেখলো এই ছবিটা মোটেও স্বাভাবিক নয়।
আনায়ার আচমকা নিজের লকেটের কথা মনে পড়তেই চমকে উঠলো। তার অদ্ভুত স্টার শেইপের লকেট আর ছবিটা তো একই রকম দেখতে। একদম হুবহু কালার, ডিজাইন সব এক। এটা কি সম্ভব?
মূহুর্তেই মাথাটা পুরো ঘুরে গেলো। এদিকে সে কেনীথের পূর্বপরিচিত অন্যদিকে আবার এই সাধারণ লকেটটাও কেমন রহস্যময় হয়ে উঠলো। চারপাশে সবজায়গায় তো শুধু রহস্যই মিলছে তবে এই রহস্যের উত্তর কোথায় মিলবে তাই তো জানা নেই।
সেহেতু জায়গাটা অনেকটাই অন্ধকার তাই আনায়া চাইলেও ঠিকঠাক সবকিছু পরিষ্কার ভাবে দেখতে পেলো না। যে কারনে ছবিটা দেখতে গিয়ে এলোমেলো ভাবে হাত লেগে ছবিটা নড়ে উঠলো। আর সঙ্গেই ছবির ফ্রেমের পেছন হতে কিছু একটা নিচে পড়ে গেলো।
আনায়া প্রথমে খানিকটা চমকে উঠলেও দ্রুত নিচে পড়ে থাকা জিনিসটা হাতে নিয়ে দেখলো একটা অদ্ভুত ধরনের ছোট ছুরি। যা অনেকটা রাজকীয় কারুকার্যে শোভিত সোনালী আর কালচে রংএর। তবে উপরে একটা খোলসের মতো আরো একটা সোনালী পাতের আস্তরণ রয়েছে। যার কারণে আনায়া অনেকবার টানাটানি করেও তা খুলতে পারলো না।
এরপর আনায়া ভালো করে খেয়াল করে দেখলো ছুরিটার মাঝে একটা স্টার শেইপের ফাঁকা অংশের খোলসের মতো কিছু। মনে হচ্ছে এর মাঝে সেইম শেইপের কিছু প্রবেশ করালেই তা খুলে যাবে। আনায়া কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে জিনিসটা দেখার পর ত্বরিত নিজের লকেটটা বের করে ছুটির ঠিক জাগয়া বরাবর স্টারটাকে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তা বাউন্স করে খুলে গেলো। এতো ধারালো ছুরির আনায়া খানিকটা বিচলিতও হলো।
তবে আনায়া এই বিষয়টি দেখে প্রথমে যতটা বেশি অবাক হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি খুশিও হয়েছিলো। কারণ এটা দেখা মাত্রই তার মাথায় খেলে গিয়েছিলো নতুন ভাবনা। অবশ্য আনায়া অনেক আগে থেকেই এমন কিছুর প্লান করছিলো। আর কিছু হোক বা না হোক, আনায়ার মতে পৃথিবীর সব সমস্যারই একটা না একটা সমাধান রয়েছে। আর যখন সেই একটি সমাধানও আমাদের হাত ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে তখন হতাশ না হয়ে দ্বিতীয় সমাধানের খোঁজ করা উচিত।
তখন থেকে ছুরিটা আনায়ার কোমড়ের পেছনে জামার নিচেই গুঁজে রাখা আছে। আর এখন আনায়া দরজা খোলা মাত্রই খুব দ্রুত কেনীথের ঘরে প্রবেশ করলো। প্রথমে রুমের সাইজটা দেখে আনায়ার মাথা চক্কর দেওয়ার মতো অবস্থা। আগেকার রাজা-বাদশারাও হয়তো এমন বিলাসিতা-সৌখিনতা করেনি। একরুমই যেনো ফুটবল খেলার মাঠের সমান। অথচ রুমে খুব সামান্যই জিনিসপত্র রাখা। বিশাল বড় খাট আর কিছু সামান্য ফার্নিচার। একপাশের দেওয়ালে তো শুধু ছোট বড় পেইন্টিং ঝুঁলিয়ে রাখা। আবার অন্যদিকে পুরো দেওয়ালের সঙ্গেই আকা বিশাল বড় বড় দুটি চোখ এবং যার আশেপাশে নানা ফুল লতাপাতার কারুকার্যে ঘেরা।
সে চোখজোড়ার দিকে আনায়া আচমকা তাকাতেই বুকের মাঝে হাত চাপড়ে ঢোক গিললো। মনে হচ্ছে চোখ দুটোই তাকে সম্পূর্ণ রুপে গিলে খাবে। আনায়া প্রথমে ভেবেছিলো চোখদুটো কেনীথের হয়তো কিন্তু পরে খেয়াল করলো এই চোখজোড়া কোনো মেয়ের হয়তো। তবে চোখজোড়া আদতে কার তা আনায়া খেয়াল করে দেখার প্রয়োজন মনে করলো না বিধায় তার কাছে বিষয়টি অজানাই রয়ে গেলো।
আনায়া এসব ছেড়ে রুমের অন্যান্য দিকে নজর বুলাতে লাগলো। খেয়াল করে দেখলো রুমে আরো একটি দরজা রয়েছে। যেটা নিশ্চয় বাথরুমই হবে।এছাড়া আর তেমন কিছুই নেই দূরে একটা বড়সড় বারান্দা ব্যতীত।
যে কারণে আনায়া খোঁজার মতো তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। তবে এসেছে যখন এমনি এমনি তো যাওয়াও যাবে না। তাই দ্রুত গতিতে বিছানার পাশে ছোট কাভার্ডের কাছে গিয়ে ড্রয়ার গুলো খোঁলার চেষ্টা করলো। কিন্তু সবার উপরের ড্রয়ারটা ব্যতীত বাকি সকল ড্রয়ার লক করে রাখা। আনায়া পুনোরায় স্টার শেইপের লক সিস্টেমের কিছু আছে কিনা তা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করলো তবে এবার আর এখানে তেমন কিছুই দেখতে পেলো না। এসব সাধারণ জিনিসে এমনটা থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। আনায়া বিরক্তি নিয়ে প্রথম ড্রয়ারটাও খুলতে গিয়ে দেখলো কিঞ্চিৎ খুলে আর বাকিটা খুলছে না। হয়তো কিছু একটার সাথে আঁটকে গিয়েছে।
আনায়া প্রচন্ড বিরক্ত হলো এসব দেখে। কি করতে এসেছে আর এসব কি হচ্ছে। আনায়া ত্বরিত কোমড়ের পেছন থেকে ছুরিটা বের করে সেটার লকটা খুললো। এবং দ্রুত গতিতে সেলটা খুলতে গিয়ে খানিকটা আঙ্গুলের সাথে লেগে গিয়ে র*ক্ত
বের হতে লাগলো। আনায়া আরো বেশি বিরক্ত হলো তবে এরই মাঝে ব্যাথায় হাত ঝাড়ি দিতে গিয়ে ছুরির শেলটা কাভার্ডের নিচে ছিটকে চলে গেলো।
আনায়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শেলটা বের করতে গিয়েও ব্যর্থ হলো। এতো চিকন জাগয়ায় তার হাত কোনোভাবেই ঢুকবে না। চারপাশে লাল রং-এর আলো জ্বলছে আর টেবিলের নিচে পুরোটাই কালো কুচকুচে। আনায়া এবার এসবের চিন্তা বাদ দিলো। তার ভাবনা মতো যে এখানে কিছুই হবে না তা খুবই ভালোই বোঝা হয়ে গিয়েছে। কেনীথকে সে পরে দেখে নিবে কিন্তু আগে এখান থেকে বের হতে হবে।
আনায়া ছুরিটা নিয়ে দ্রুত ড্রয়ারে মাঝে জোরে চাপ দিতেই ত্বরিত খুলে গেলো। তবে সেখানে যেসব জিনিস রাখা ছিলো তাতে আনায়া পুরো তব্দা খেয়ে গেলো। কয়েকটা ছোট কাঁচের শিশি ব্যতীত কিছুই নেই। আনায়া হতাশ হয়ে একটা কাঁচের শিশি হাতে নিয়ে দেখলো তাতে খুব ছোট করে ইংরেজিতে “poison”। যা দেখে আনায়া কপাল কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,
—” বি*ষ? এই বেটায় এসব রেখে কি করে? আর বড় কথা আমি এটা নিয়ে কি করবো। নিয়ে নেবো?… যদি এখান থেকে বের হওয়ার প্লান কাজে না আসে তবে এটা বেটাকে খাইয়ে উপরে পাঠিয় দেবো। প্লানটা খারাপ না।”
আনায়া যাস্ট একটা ছোট শিশি উঠিয়ে ড্রয়ার লাগিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইলো। কিন্তু হুট করেই কেনো যেন বাথরুমটা দেখতে যাওয়ার শখ জাগলো। শখ নয় বরং না চাইতেও তার মন বলছে ওখানে যাওয়া উচিত। আজও আনায়ার মতে একখান প্রশ্ন ঘুরপাক খায়।
আনায়া তার বুক সমান একটা কাভার্ডের উপরে ফুলদানির পাশে ছুরি আর শিশিটাকে রেখে বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খোলা মাত্রই চমকে উঠলো। পা বাড়িয়ে দুকদম যেতে না যেতেই ওর চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিতেই ওর হাত-পা সহ পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো।
এতো দিন যেটাকে সে সপ্ন আর বাস্তবতায় গুলিয়ে ফেলতো আজ ঠিক তেমনটাই তার চোখের সামনে দৃশ্যমান। সেই একই চিরচেনা লাল রং-এর আলোয় আচ্ছাদিত বিশাল বাথরুম। সেই একই পজিশনে রাখা বাথটাব আর তার সামনে ঠিক সেই জাগয়া যেখানে…কেনীথ বসে ছিলো।
আনায়া বুঝতে পারছে না সে নিজের চোখের সামনে এসব কি দেখছে। অনবরত তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। যদি সেই ঘটনা সত্যিই হয় তবে… আনায়ার র*ক্তের বাথটাবে ডুবে থাকা,সেটাও কি…?আনায়া জানে না, তার চোখমুখ দিয়ে অনবরত ঘাম ছুটছে। না চাইতেও এখন মনের মাঝে কেনীথকে নিয়ে ভয় ঢুকছে। আর ভয় পাওয়া মানেই সে দূর্বল হয়ে যাবে। আনায়া নিজেকে শক্ত করতে চেয়েও কোনো লাভ হলো না বরং এরই মাঝে নাকের কাছে অনবরত র*ক্তের গন্ধ ভিড়তে লাগলো। যেটা দরজা খোলার সাথে সাথেই আনায়া অনুভব করলেও এতোকিছুর মাঝে এই বিষয়টি খেয়াল করার সুযোগ হয়নি।
আনায়া নিজের অজানা ভয়ে কাঁপতে থাকা শরীরে বাথ টাবের দিকে এগোতে লাগলো। কারণ ওখান থেকেই গন্ধটা বেশি তীব্র অনুভব হচ্ছে। আনায়া বাথটাবের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো বাথটাবটা ঘন তরলে পূর্ণ করে রাখা হয়েছে। বাথরুমের লাল আলোতে তরলটা দেখতেও একদম কালচে দেখাচ্ছে।
আনায়া কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের হাত এগিয়ে তরলের মাঝে খানিকটা আঙ্গুল চুবিয়ে তা নিজের নাকের কাছে এনে শুঁকতেই ওর মাথা ঘুরতে লাগলো। হাত পা অবশ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। ত্বরিত অন্যহাতে নিজের মুখ চেপে যত দ্রুত সম্ভব সেখান থেকে বেড়িয় আসতে চাইলো। এখানে আর এক মূহুর্তও থাকলে আনায়া আর সজ্ঞানে থাকতে পারবে না।
আনায়া নিজের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে একপ্রকার ছুটতে লাগলো। প্রথমে বাথরুম হতে আর পরবর্তীতে সোজা রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লো। এরমাঝে না দরজা লাগানোর সুযোগ হলো না তা সেই ছুরি আর শিশিটা। তার হিমোফোবিয়ার জন্য সে অতটুকু সময় যে ওখানে সজ্ঞানে থাকতে পেরেছে এটাই তো অনেক।
আনায়ার শরীর এখনো ঠিকঠাক ভাবে কাজ করছে না। অনবরত মাথা চক্কর দিচ্ছে। এই মূহুর্তে আনায়া আর কোনো কিছু না ভেবে দ্রুত বাড়ির সদর দরজায় পৌঁছে গেলো। সেখানেও সে স্টার শেইপের ডিজাইন খুঁজে পেলো। আনায়ার জানা ছিলো এমনটাই হবে। হাঁপাতে থাকা আনায়া কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। তবে এই হাসি দীর্ঘস্বায়ী হলো না। নিজের গলা হতে লকেটটাকে দরজায় ঠিক সঠিক স্থানে প্রবেশ করিয়েও কোনো লাভ হলো না। আনায়া পুনোরায় একই কাজ করলো তবে কোনোভাবেই দরজা খুললো না। আনায়া এটা দেখে অস্থির হয়ে উঠলো। সঙ্গে মনের ভেতর ভিড়তে লাগলো আ*তংক, ভয়। সে এটা কোথায় এসে পড়েছে। কেনীথ আদতে কি তাই তো সে বুঝতে পারছে না। বি*ষের বিষয়টি না হয় মানা যায় কিন্তু ওসব এত্তো এত্তো র*ক্ত…!
আনায়া দরজায় প্রচন্ড গতিতে ধাক্কাধাক্কি করতে লাগলো। কোনো প্রকার সন্তোষজনক ফলাফল না পেয়ে অস্থিরতায় কাতর হতে লাগলো। চোখের কোনায় পানি জমতে শুরু করলো। আনায়ার আর এক মূহুর্তও এখানে থাকার ইচ্ছে নেই। কেনো যেন তার শুধু এটাই মনে হচ্ছে কেনীথকে সে যেমন সাধারণ পাগল ভেবেছিলো ও তা নয়। কোনো ভ*য়ংকর… আনায়ার আর নূন্যতম ভাবার মতো অবস্থা নেই।
আনায়া দরজা থেকে সরে এসে পুনোরায় ড্রইং রুমের দিকে ছুটলো। শুধুমাত্র এই আশায় যে, কিছু না কিছু বের হওয়ার উপায় তো পাওয়াই যাবে। আনায়া প্রচন্ড অস্থিরতার সঙ্গে হাঁপাতে লাগলো। ছুটতে ছুটতে সোফা সহ আশেপাশে সবজায়গায় রিমোট খুঁজতে লাগলো। বেচারীর মাথায় নেই যে আদোও রিমোট এখানে পাবে কিনা। কিন্তু আপাতত জানপ্রাণ লাগিয়ে সন্ধান চালাতে লাগলো। মাঝেমাঝে আতংকে চোখ হতে আপনা আপনি পানি ঝড়তে লাগলে আনায়া ত্বরিত নিজের হাতের সাহায্য মুছে নিলো কিন্তু নিজের ব্যার্থ চেষ্টা করাটা সে আর থামালো না।
এরই মাঝে হন্য হয়ে ছুটতে থাকা আনায়া যখন সুইমিংপুলের একদম পাশ হতে অতিক্রম করতে লাগছিলো, ঠিক তখনই আচমকা তার পায়ের এক আকস্মিক টান পড়ে। আনায়ার অস্থির মস্তিষ্ক অনুভব করলো যে কেউ সজোরে পানি হতে আনায়ার পা ধরে খিঁচে পানিতে টেনে নিচ্ছে। আর ধারনা মতে ঠিক এমনটাই হলো।
আনায়া সোজাসুজি ঠিকঠাক ভাবে কিছু বোঝার কিংবা করে ওঠার আগেই নিজের ভারসাম্য হারিয়ে পানির মাঝে আছড়ে পড়লো। মূহুর্তের মাঝেই আনায়া যখন সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে ছোটাছুটি করতে লাগলো। তখনই সে পানির নিচে থাকা মানবের অস্থিত্ব অনুভব করলো। এবং সেই মানবটিই যে আনায়ার কোমড়ে হাত পেচিয়ে নিজের দিকে অগ্রসর করছে তাও আনায়ার বোধগম্য হলো। আনায়ার আর বুঝতে বাকি নেই এই লোকটি কে।তবে অন্যান্য বারের মতো যেমন কেনীথের কাজকর্মে তার রাগ হয় এবার ঠিক তেমন কিছু হচ্ছে না। আনায়ার মাঝে শুধু এবার কেনীথকে নিয়ে আতংক বিরাজ করছে।
প্রায় কিছুক্ষণ সময় পর্যন্ত কেনীথের দরূন আনায়াকে পানির নিচে থাকতে হলো। যার ফলে একটা সময় পর ওর শ্বাস নিচে কষ্ট হতে লাগলো। অন্যদিকে কেনীথ যে আনায়ার কোমড় শক্ত করে পেচিয়ে নিজের দিকে অগ্রসর করছে তাও আনায়ার বোধগম্য হলো। আনায়ার আর বুঝতে বাকি নেই এই লোকটি কে।তবে অন্যান্য বারের মতো যেমন কেনীথের কাজকর্মে তার রাগ হয় এবার ঠিক তেমন কিছু হচ্ছে না। আনায়ার মাঝে শুধু এবার কেনীথকে নিয়ে আতংক বিরাজ করছে।
প্রায় কিছুক্ষণ সময় পর্যন্ত কেনীথের দরূন আনায়াকে পানির নিচে থাকতে হলো। যার ফলে একটা সময় পর ওর শ্বাস নিচে কষ্ট হতে লাগলো। অন্যদিকে কেনীথ যে আনায়ার কোমড় শক্ত করে পেচিয়ে নিজের কাছে বদ্ধ করে রেখেছে তা আনায়ার কাছে দৃশ্যমান। অনেকবার নিজের হাতের সাহায্যে কেনীথের কাছ হতে ছাড়া পেতে চাইলেও কোনো লাভ হয়নি।
ঠিক যখন আনায়ার অবস্থা করুন হতে লাগলো ঠিক তখনই কেনীথের পাষাণ মন গললো। এবং সে আনায়াকে সহ নিজেও পানির উপরে উঠে এলো।
কাঁধ পর্যন্ত দুজনেরই পানিতে ডুবে রইছে। শুধু দুজনের মাথাটা পানির উপর দৃশ্যমান। আনায়া জোড়ে জোড়ে হাঁপিয়ে কয়েক বার শ্বাস নিলো এরপর খানিকটা স্বাভাবিক হতেই কেনীথের দিকে নিস্তেজ চোখে তাকিয়ে দেখলো কেনীথের ঠোঁটে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসি ঝুলছে। এমন সিচুয়েশনেও কেনীথের মাঝে কোনো হেলদোল নেয়। কেনীথের বাহুর মাঝে আবদ্ধ আনায়া মুক্ত হওয়ার জন্য নিজের হাতের সাহায্যে ছোটাছুটি করতে করতে করুন স্বরে বলতে লাগলো,
“ছাড়ুন আমায়… ছাড়ুন বলছি…কে আপনি? আপনার পরিচয় কি? সত্যি করে বলুন প্লিজ…।আমায় প্লিজ মা*রবেন না। আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আমি তো আপনাকে কোনোদিনও চিনতামও না। আগে কখনো দেখিওনি। তবে কিসের প্রতি*শোধ নিতে চান আপনি? আপনি…
আনায়া আরো কিছু বলার জন্য উদ্বেগ হওয়ার আগেই কেনীথ আনায়াকে নিজের কাছে আরো একটু টেনে নিয়ে এলো। এবং ধীর সুরে মুচকি হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,
” তাহলে এতোক্ষণে মরণের ভয় ঠুকেছে। খুব তো সাহস দেখাচ্ছিলি।বারবার বারবার নিষেধ করেছিলাম কিন্তু একবারও আমার কথা শুনিসনি। এছাড়া নিজেকে প্রচুর চালাক ভাবাটা ছিলো তোর সবচেয়ে বড় বোকামি। তবে আফসোস আমার একটাই, খুব কঠিন কিছুর সাক্ষী তোকে আজই হতে হবে। কারণ এবার তাড়াহুড়োটা করতে তুই আমায় বাধ্য করেছিস।”
আনায়ার মুখ চুপসে গিয়েছে। আচমকা তার মনের ভয়টা হু হু করে বেড়ে চলেছে। তবে এবার কেনীথের হাভভাবে কেনো যেন তার চিন্তাভাবনা আকস্মিকভাবে পরিবর্তন হতে লাগলো। তার মন-প্রাণ বলছে, কেনীথ তাকে নয় বরং তার পরিবার কিংবা খুব কাছের কারো ক্ষতি করতে চায়। হঠাৎ এমনটা মনে হওয়ার কারণ আনায়ার নিজেরও অজানা। তবুও সে কেনীথকে এই বিষয়ে সতর্ক করতে চাইলেও সে সুযোগ আর হলো না। বরং তার আগেই কেনীথ আনায়াকে আরো খানিকটা শক্ত করে পেঁচিয়ে সোজা পানির অতলে ডুব দিলো।
পানি স্বচ্ছ হলেও গভীরতা অনেক। আনায়া দম আঁটকে রইছে, অন্যদিকে কেনীথ অকপটে আনায়কে নিয়ে পানির আরো গভীরে তলিয়ে যাচ্ছে। একটা সময় পর আনায়ার চোখ ঝাপসা হলো সঙ্গে তার দমও ফুরিয়ে আসতে লাগলো। ঠিক সেই মূহুর্তেই কেনীথ আনায়াকে নিয়ে সুইমিংপুলের একপাশের দেওয়ালের মাঝে গোল আকৃতির বড় গর্ত দিয়ে অন্যপাশে প্রবেশ করলো।
আনায়া নিজের করুন অবস্থায় ঠিকভাবে কিছু করতে না পারলেও এমন অদ্ভুত জিনিস দেখে আনায়া প্রচন্ড বিস্মিত হলো। তবে তার দম আচমকা ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে অনেক বেশি পানি খেয়ে শ্বাস আঁটকে ফেললো। এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে যে আনায়া সামান্য ছটফটও করতে পারছে। অতঃপর একগাদা পানি নাক মুখ দিয়ে প্রবেশ করার পর কেনীথ আনায়াকে নিয়ে নিজের বাড়ির সেই সিক্রেট অংশে প্রবেশ করলো।
কিন্তু চারপাশটায় ঠিকঠাক ভাবে চোখ বুলিয়ে নেওয়ার আগেই আনায়া সম্পূর্ণ সেন্সলেস হয়ে পড়লো।
—“তারা…! তারা…!
ঠিক কতক্ষণ পর আনায়ার জ্ঞান ফিরলো তা আনায়ার জানা নেই। মাথাটা প্রচন্ড ভার হয়ে আছে। মাথার ভিজা চুল গুলো বিধ্বস্ত ভাবে এলোমেলো। ভেজা কাপড় শরীরের সাথে লেপ্টে খানিকটা শুকিয়েও গিয়েছে। আনায়া নিজের ভারী ভারী চোখের পাতা গুলো একবার কোনমতে খুলছে তো আবার কখনো তা নিমিষেই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তার সেন্স নিজে নিজে ফিরে নি বরং তার নাম ধরে বারবার কারো ডাকাডাকিতেই জ্ঞান পুরোপুরি ফিরেছে ।
আনায়া নিজের নিস্তেজ চোখের পাতাদুটো ধীরে ধীরে খুলতে লাগলো। শরীরটাও এতো বেশি নিস্তেজ ঠেকছে যে তা বলার বাহিরে। আনায়া কোনোমতে চারপাশটা তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো। কেমন অদ্ভুত বিশাল একখানা জায়গায়। জায়গায় কিসব অদ্ভুত সব জিনিস পত্র। দূরে সেই সুইমিংপুল। চারপাশে লাল নীল আলোর সমাহার। আনায়া নিজের হাত নড়াতে গিয়ে দেখলো তার হাতদুটো চেয়ারের হাতলের সাথে বেঁধে রাখা। আনায়া এবার নিজেকে যতটা পারলো তটস্থ করে হাত দুটোকে ছুটাতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো। আশেপাশে আর কোনোদিকে তার তাকানোর সুযোগ হলো না।
ঠিক সেই মূহুর্তেই কারো কন্ঠস্বর শুনতে পেলো।
—“তারা!…হাতের বাঁধন না হয় পড়েও ছুটাতে পারবি কিন্তু এবার একটু সামনে তাকিয়েও তো দেখ! তোর স্পেশাল সারপ্রাইজ যে এখন তোর সামনে।”
আনায়ার কাছে এই কণ্ঠস্বর খুবই পরিচিত। সঙ্গে বর্তমানে এই কন্ঠস্বর আনায়ার কাছে এক আতং*কের সুর। আনায়া কেনীথের কথা অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই দেখতে পেলো, তার থেকে কিছুটা দূরে একজন মধ্যবয়স্ক লোককে ঠিক তার মতো করেই চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। লোকটিকে আনায়া প্রথমে অজ্ঞান ভাবলেও পরবর্তীতে খেয়াল করে দেখলো লোকটি প্রচন্ড নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। যে কারণে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ অবস্থায় খুবই ধীরে ধীরে নিশ্বাস নিচ্ছে।
এছাড়া লোকটির মুখে শরীরে কিসব যেন লেগে রয়েছে।আনায়া ভালো করে লক্ষ করতেই মনে হলো লোকটি মার*ধর করার ফলে বিভিন্ন জায়গায় রক্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এটা দেখেই আনায়া আকস্মিক চমকে উঠলো। সঙ্গে মাথা নিচু করে চোখ বুজে বসে থাকা লোকটিকে আচমকা তার খুব পরিচত একজন মনে হলো। যে লোকটা আনায়ার বর্তমান দুনিয়ায় সবটাতেই বিরাজ করে।
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ২৪
আনায়া প্রচন্ড বিস্মিয়ের সাথে পাশে তাকাতেই বড়সড় দেহের কেনীথকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো। কেনীথের হাতে একটি প্লায়ার্স, যেটিকে সে অনবরত টগ্ল করে যাচ্ছে। এবং আনায়ার দিকে তাকিয়ে বিস্তৃত বাঁকা হাসছে। এই প্রথম হয়তো কেনীথকে আনায়ার এতো বেশি ভ*য়ংকর মনে হচ্ছে। তার হাসিটাই যেন শরীরে আরো বেশি আতং*কের শিহরণ জাগাচ্ছে। আনায়ার মাঝে কেনীথকে নিয়ে আ*তংক আর সে মধ্যবয়সী লোককে ,এই খানে এই অবস্থায় দেখে প্রচন্ড বিস্ময় জাগিয়েছে। আর আনায়ার এই বিস্ময় কাটার আগেই কেনীথ আচমকা মাথা নিচু করে ঝিমিয়ে থাকা লোকটির মাথার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে তার মাথাটাকে সোজা করলো। আর ঠিক মূহুর্তেই আনায়ার সামনে লোকটির বিধ্বস্ত র*ক্তাক্ত চেহারাটা স্পষ্ট হলো। যা দেখা মাত্রই আনায়ার মুখ আকস্মিকভাবে উন্মুক্ত হলো সঙ্গে অস্ফুটস্বরে মুখ হতে বেরিয়ে এলো,
“বাবা…!”