একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৭
রনীতা তুশ্মি
“বেশি না! যাস্ট চার-পাঁচ রাউন্ড খেলেই ঘুমিয়ে যাবো,পাক্কা!”
এই বলেই আনায়া আবার কেনীথের দিকে বিস্তৃত হেঁসে বাম চো”খ মারলো।
“ছিহ! আনায়া, তুই কত জ”ঘন্য।”
কেনীথের এহেন রিয়াকশনে আনায়া খানিকটা ক্ষেপে গিয়ে বললো,
“হেই কিসের জ’ঘন্য! বউ আমি তোমার, হক আছে আমার।”
কেনীথ নিজের গলা থেকে নিজের দুহাত দিয়ে আনায়ার হাত দুটো ছাড়িয়ে নিতে নিতে আশেপাশে তাকিয়ে খোজাখুজি করতে করতে বলতে থাকলো,
“ছাড় তুই আমায়।ছেড়ে দে বলছি, ছেড়ে দে! এক মিনিট আমার টিশার্ট…টিশার্ট কোথায় আমার। ওহ টিশার্ট গায়েই আছে।”
কেনীথ নিজের গায়ে টিশার্ট আছে দেখে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে নিশ্বাস ফেললেও। আনায়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে নিজের হাতের বন্ধনটা দৃঢ় করে বললো,
“মেজাজ খারাপ করো না। এতো রিয়েক্ট করার কি আছে। ভুল কি বলেছি আমি?”
—“নি”র্লজ্জ বে”হায়া,, সর আমার থেকে।”
এই বলেই কেনীথ চোখমুখ খিঁচে আনায়াকে সরাতে চাইলেও আনায়ার সরে গেলো না। উল্টো চোখমুখ শক্ত করে কেনীথের চুল শক্ত করে টেনে ধরে বসে রইলো। ঠিক সেই সময় কেনীথ কিছু একটা ভেবে নিয়ে বললো,
“তোর কথা শুনতো রাজি রয়েছি। তবে তার আগে আমার আগে একটা শর্ত রয়েছে।”
কেনীথের মাথা ঝিমঝিম করছে তবুও নিরেট কন্ঠে বললো,
“একটা গেইম খেলবো। যদি তুই জিতে যাস তবে তুই যা বলবি তাই করবো আর যদি আমি জিতে যাই তবে আমি যা বলবো তাই করবি।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
—“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
—“কি ঠিক আছে, আমায় ছেড়ে আগে ভালো মতো বস।”
আনায়া যথারীতি কেনীথের কথামতো ওকে ছেড়ে দিয়ে কেনীথের সামনে বসে পড়লো। অতঃপর নিজের নিভু নিভু চোখ গুলো দুহাতে কিছুটা ঘষাঘষি করে বড় বড় করে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
“বলো এবার, কি গেইম খেলতে হবে।”
—“বেশি কিছু না। রক, পেপার, সিজার ; খেলেছিস কখনো?”
আনায়া কিছুটা প্রফুল্লচিত্তে বললো,
“হুম, তো। বাচ্চাকালে অনেক খেলেছি।”
—“তাহলে ঠিক আছে। ওটাই খেলতে হবে। শুধু তিনবার খেলবো। এতে যে আগে জিতে যাবে সেই উইনার।”
আনায়াও বাচ্চাদের মতো ঘাড় এপাশ ওপাশ করে সম্মতি জানালো। এরপর দুজনে অনেক তোরজোর নিয়ে যুদ্ধের ময়দানের সৈনিকের ন্যায় ভাবসাব নিয়ে খেলতে বসলো। বেশি না, মিনিট খানেকের মধ্যে দুজনের খেলা শেষ হয়ে গেলো। আনায়া প্রথম বার জিতলেও বাকি দুইবার কেনীথ জিতে গিয়ে বিস্তৃত হাসলো। তখনই আনায়া কিছুটা নেশাগ্রস্তের ন্যায় দুহাতে মাথা উপর নিচ ঝাকিয়ে বিরক্তি নিয়ে বললো,
“মানে আমি হেরে গিয়েছি?”
কেনীথ বিস্তৃত মুচকি হেঁসে বললো,
“হুম,আর আমি জিতে গিয়েছি।”
এবার আনায়া কিছুটা অবুঝের ন্যায় হাভভাব নিয়ে বললো,
“তাহলে এবার কি করতে হবে।”
কেনীথ আনায়ার কথা শুনে চোখমুখে বিরক্তি ফুটিয়ে তুলে আনায়ার ঘাড় ধরে টেনে বালিশের মধ্যে ঠেসে শুইয়ে দিয়ে বললো,
“কিচ্ছু না,ঘুমাতে হবে। আরেকবার বিরক্ত করলে এখানেই শেষ করে ফেলবো।”
কেনীথের কথামতো আনায়াও দীর্ঘ শ্বাস তার নিভু নিভু চোখ জোড়া বুঁজতে বুঁজতে বিড়বিড় করে বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে, ঘুমাই তবে।”
অনেকটা বেলা করেই কেনীথের ঘুম ভাঙ্গলো। এ যেন ম’রার ঘুম ঘুমিয়েছিলো। এতো ঘুম হঠাৎ কোথায় থেকে এলো তা কেনীথের জানা নেই। তবে উপর হয়ে বিছানায়া ঘুমাতে থাকা কেনীথের ঘুম ভাঙ্গতেই ও কিছুটা অবাক হলো। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে মনে হলো তার পিঠের উপর আস্ত এক আলুর বস্তুা। যে কারণে নড়াচড়া করতেও অসুবিধা হলো। কেনীথ বালিশ থেকে মাথা উচিয়ে কোনো মতে ঘাড় পেছনের দিকে ঘুরিয়ে তাকাতেই ওর চোখমুখ কুঁচকে গেলো।
পিঠের উপর চিৎপটাং হয়ে শুয়ে রইছে আনায়া। তবে বিছানায় শুধু তার পা থাকলেও মাথাটা বেডের বাহিরে চলে গিয়েছে। উপর থেকে দেখলে হয়তো দুজনকে ক্রস সিম্বলের মতো লাগবে। কেনীথ মাথাটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে দেখলো আনায়ার মাথাটা বিছানার বাহিরে নিচের দিকে হেলে রইছে। বড় বড় চুলগুলো ফ্লোর ছুঁইয়েছে। সঙ্গে নিজের হাত দুটোও উল্টো হয়ে শূন্যে ঝুলছে। কেনীথের নড়াচড়াও একটু বেশি তারতম্য হলেই সোজা মাথা উল্টে নিচে পড়ে যাবে। এরপর মাথা-নাক ফা”টার পাশাপাশি হাত-পাও ভাঙ্গবে।
কেনীথ এসব দেখে নিমিষেই বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। সকাল সকাল এমন কিছু দেখতে হবে তা আশা করেনি হয়তো। কেনীত বিরক্তি নিয়ে আনায়াকে কয়েকবার ডাকলো ঠিকই কিন্তু আনায়ার কোনো সাড়াশব্দ নেই। কেনীথের মনে হলো আনায়ার শুধু জান যাওয়াটা বাকি এছাড়া পুরো মৃ”ত মানুষের মতো ঘুমিয়ে রইছে। এবার কেনীথ প্রথমে উপর হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় আনায়া একপা শক্ত করে চেপে ধরলো। অতঃপর কোনো মতে ওর একটা হাত উল্টো ভাবে ধরে নিয়ে কোনো মতে ধাক্কা দিয়ে আনায়াকে নিজের পিঠ থেকে সরিয়ে নিলো। অতঃপর খুব দ্রুত বিছানা থেকে নেমে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আনায়াকে দেখলো।
গত কাল রাতেই পড়ে আসা জামাকাপড়েই দিব্যি উল্টোপাল্টা হাত পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। কেনীথের কেনো যে এইসব বিষয় ঠিক মনে হলো না। কাল হাতে হুট করেই হেডেক হলো অতঃপর ঘুমিয়ে গেলো। কিন্তু এরপর আর কিছুই মনে নেই। বিষয়টা সেদিন রিসোর্টের মতো মনে হচ্ছে।
কেনীথ দাঁড়িয়ে থেকে কিসব ভাবনা চিন্তা করার পর রুম থেকে বেরিয়েই যেতে নিয়েছিলো তবে আনায়ার ড্রেসআপ ঠিকঠাক ছিলো না বিধায় কিছুটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আনায়ার কাছে ফিরে এলো। অনেকটা অনীহার ন্যায় ভাবসাব নিয়েই আনায়ার হাটুর উপর উঠে থাকা প্লাজোটা টেনে নিচে নামিয়ে দিলো। এরপর আবারও চলে যেতে নিয়েও পুনোরায় ফিরে এসে আনায়ার দিকে ঝুঁকে বালিশটা ঠিক করে দিলো।
তবে এবার আর কেনীথ রুম থেকে চলে যেতে উদ্বেগ প্রকাশ করলো না বরং আচমকা নিচে হাঁটু গেড়ে বসে আনায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে পলকহীনভাবে চেয়ে রইলো। এতবছরে কেনীথ এতটুকু বুঝেছে যে আনায়ার শুধুমাত্র এই একটি বিষয়ই তাকে প্রতিবার দূর্বল করে দেয়। আনায়ার এই ঘুমন্ত চেহেরায় আদতে কি রয়েছে তা কেনীথের অজানা। কিন্তু এর আকর্ষণ শক্তি এতোটাই প্রবল যে কেনীথ না চাইতেও বারবার এই মূহুর্তে নিজের সর্বস্বকে দূর্বল অনুভব করে।
কেনীথ অকপটে নিষ্পলক চোখে আনায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। চোখের ঘন-কালো পাপড়ি, সুউচ্চ নাকের ডগা,মসৃণ গাল, গোলাপি ঠোঁট। যে ঠোঁটের উপর বিচ্ছিন্ন ভাবে হালকা লিপস্টিকের প্রলেপ। কেনীথ ঠোঁটের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতেই আকস্মিক মুচকি হাসলো।
কেনীথ এবার আনায়ার কপাল আর গালের উপর কিছু অংশে ছড়িয়ে থাকা চুলগুলো আলতো হাতে সরিয়ে দিলো৷ এদিকে আনায়া প্রায় কিঞ্চিৎ হা করে ঠোঁট কিছুটা উন্মুক্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে যাচ্ছে। ওর ঘুমানোর হাল দেখে কেনীথের কিছুটা হাসিও পেলো। তবে এরই মাঝে কেনীথের নজর গিয়ে ঠেকলো অন্যজায়গায়। আনায়ার শার্টের প্রথম একটা বাটন এমনিতেই খোলা ছিলো। তবে তার নিচের আরো একটা বাটন হয়তো উল্টোপাল্টা ঘুমানোর কারণেই হয়তো খুলে গিয়েছে। যার দরূন আনায়ার ফর্সা বাম পাশের বুকের কিছুটা উপরে, ছোট্ট একটা কালো কুচকুচে তিল কেনীথের নজরে জ্বলজ্বল করছে। আচমকা কেনীথের নজর গিয়ে সেখানেই আঁটকে যেতেই কেনীথ কিছুটা অবাক হয়ে ভাবতে বসলো। আর মনে মনে বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগলো,
“এটা আবার কোথায় থেকে আসলো। এতোদিন তো কখনো নজরে…”
কেনীথ আর মনে মনে নিজের বাকি কথাটুকু সম্পূর্ণ করলো না। হুশ ফিরতেই আকস্মিক তিলটার দিকে চেয়ে থাকা অবস্থাতেই ঢোক গিলো।গলায় মাঝে খুসখুস করছে। এই মূহুর্তে কেশে ফেললে পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যাবে। আর থাকা সম্ভব না। কোনোমতে আলতো হাতে তড়িঘড়ি করে শার্টের বাম পাশের কলারটা টেনে ঠিক করে দিয়েই সোজা দাঁড়িয়ে পড়লো। অতঃপর আশেপাশে আর কিছুতে নজর দেওয়ার সময় হলো না বরং তার আগেই একপ্রকার দৌড়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
তবে রুম থেকে বের হতেই কেনীথের নজরে পড়লো পাভেল। কেনীথের এহেন তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হতে দেখে পাভেল খানিকটা কপাল কুঁচকে কেনীথের দিকে তাকিয়ে রইছে। পাভেলের এমন তির্যক চাহনিতে কেনীথ খানিকটা ভরকে গেলেও পুনোরায় নিজেকে সামলে নিয়ে গাম্ভীর্যের সাথে কেনীথের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,
“এখানে কি করছিস?”
কেনীথের কথায় এবার পাভেল ভরকে গিয়ে বলতে লাগলো,
“সরি ব্রো, আ’ম রিয়েলি সরি। আমি তোমায় সবকিছু জানাতেই চেয়েছিলাম কিন্তু…”
—“তো কবে জানাতেন আমায়? আমি ম”রে মাটির নিচে যাওয়ার পর?”
কেনীথের তাচ্ছিল্যতে পাভেলের আর কিছু বলার জোর হলো না। কেনীথের মেজাজ যে কোনো সময় বিগড়ে যাওয়ার আগেই তার এখান থেকে সরে পড়াটাই মঙ্গল হবে। যথারীতি বেশি আর একটা দেরী না করে কোনো মতে কেনীথের কাছ থেকে সরে নিচে চলে গেলো। অবশ্য কেনীথও বিষয়টা বুঝতে পেরে পাভেলের উপর কিছুটা বিরক্তও হলো।
ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে ফ্রেস হয়েই আনায়া রুম থেকে বেড়িয়ে এলো। আসতেই সবার প্রথমে নজর পড়লো কেনীথের উপর। সোফার উপর পায়ের পা তুলে লেপটপে কিছু একটা করতে ব্যস্থ। পড়নে তার সেই চিরপরিচিত কালো রংএর হুডি আর প্যান্ট। আনায়া মুচকি হেসে হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো ওলটপালট করে ঠিক করে নিয়ে দ্রুত গিয়ে কেনীথের সামলে গিয়ে বললো,
“কলিজা! চলে যাচ্ছি, একটু পাপ্পা ঝাপ্পা দিয়ে দেও তো।”
আনায়ার কথা শুনে কেনীথ মুখ তুলে ওর দিকে তাকালো। সং সেজে ভং ধরে মুখে এক বিস্তৃত শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইছে। কেনীথ বিশেষ কোনো ভাবভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ না করে পুনোরায় মাথা নিচু করে নিজের কাজে মনোযোগ দিলো।যা দেখা মাত্রই আনায়া বাম পাশের ভ্রু উঁচিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো।
—“আমার কথা কি তুমি বুঝো না? আরো সহজ করে বলবো?”
কেনীথ আনায়ার কথায় কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না। নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে আনায়া কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হুট করেই কিছুটা ইনোসেন্ট ভাবে বলতে লাগলো,
“আমার না একটা বিশাল সমস্যা হয়ে গিয়েছে। চারপাশের সবকিছু কেমন যেন এলো মেলো হয়ে যাচ্ছে। নেশা না করেও মাতাল মাতাল লাগে। মাথার মগজটা মনে হয়, গাধার মগজের সাথে একচেঞ্জ হয়ে গিয়েছে। তাই বলছি, নিয়ম করে বেলায় বেলায় বেশি করে চুমু দেও।সামনে অনেক কাজ, সাথে বহু প্যাচ। চুমু দিলে নাকি মগজের IQ বাড়ে। অন্তত আমার IQ আপগ্রেড করতে একটু হেল্প করো,কলিজা!
আর এতো নাক ছিটকাও কেন?বউই তো তোমার, পাশের বাসার আন্টি তো আর না।”
—“ফালতু কথা না বলে যেখানে যাওয়ার সেখানে চলে যা। বিরক্তি করবি না।”
—“তারমানে কথা শুনবে না, তাই তো? ঠিক আছে, তবে কাজের কথা বলি। সন্ধ্যায় তৈরি হয়ে থেকো। একটা জায়গায় যেতে হবে।”
—“কোথাও যেতে পারবো না। অন্তত তোর সাথে না।”
কেনীথ সবগুলো কথা মাথা নিচু করে বললো। তবে এবার গিয়ে আনায়ার ফুরফুরে মেজাজ বিগড়ে গেলো। হিসহিসিয়ে ধমকে বলতে লাগলো,
“কলিজা!বেশি ফরফর করে আমার মেজাজ খারাপ করো না। নয়তো তোমার ঐ কলিজা টেনে হিঁচ”ড়ে বের করে, কুচিকুচি করে কেটে লবণ দিয়ে চিবিয়ে খাবো।”
আনায়ার এহেন কথা শোনা মাত্রই কেনীথ ল্যাপটপটা একহাতে বন্ধ করলো। অতঃপর আনায়ার দিক মুখ তুলে চেয়ে এক ভ্রু উঁচিয়ে তির্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।যা দেখা মাত্রই আনায়া কোনো প্রকার ভড়কে না গিয়ে জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে একগাল জোরপূর্বক মুচকি হেসে বলতে লাগলো,
“চিন্তা করো না, টেস্ট ভালো না হলে লবণের সাথে আরো মসলাও এড করে দেবো। হোয়াট এভার, যেটা বলতে চাচ্ছিলাম আরকি। সন্ধ্যার পর একজনের সাথে দেখা করতে যেতে হবে। কেনো যেতে হবে, কার সাথে দেখা করতে হবে তা পড়ে জানাবো। আমার সাথে গিয়ে নিজেই দেখে নিও। শুধু একটু রেডি হয়ে থেকো। অবশ্য না হলেও প্রবলেম নেই, তোমায় কাপড়চোপড় ছাড়াও হয়তো আ”গুন লাগবে।”
শুরুতে প্রচন্ড সিরিয়াস হয়ে কথাগুলো বললেও শেষের দিকে আনায়া কেনীথের উপর মজা নিয়ে ভুলভাল বলে চোখ মা”রলো। এদিকে কেনীথের বিরক্তিতে চোখমুখ কিঞ্চিৎ কুঁচকে গেলো।
—“ঠিক আছে।”
কেনীথ এটুকু বলেই পুনোরায় ল্যাপটপ খুলে কাজে লেগে পড়লো। অন্যদিকে আনায়ার আর দেরী না করে কেনীথের সামনে থেকে সরে গিয়ে চলে যেতে লাগলো। কেনীথ আনায়াকে নিজের কাছ থেকে সরতে দেখেই অজানা স্বস্তিতে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলো। তবে আচমকা গালে চু”মু পড়তেই কেনীথ কিছুটা চমকে উঠলো। কেনীথ বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেওয়ার আগেই কেনীথের বসে থাকা সোফার পেছন দাঁড়িয়ে থেকে কেনীথের গালে চু”মু খাওয়া আনায়া ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
“জামাই নিরামিষ হলে তাকে আমিষ বানানোর দায়িত্ব বউয়ের। যত বড়ই ভ’ণ্ড শয়তানের কাছ থেকেই বিদ্যা নেও না কেনো।রোমান্টিক বিষয়ে ভ’ণ্ডামি করলে একদম নিজ দায়িত্বে ভ’ণ্ডামি ছাড়িয়ে দেবো।”
আনায়ার কথাগুলো কেনীথ কড়া চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে শুনছিলো। আনায়ার কথা শেষ হলেই চলে যেতে নিলেও পুনোরায় কেনীথের কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
“সন্ধ্যায় বেড়োনোর কথা ভুলে যেও না। আর হ্যাঁ,আমার দেবর মশাই এই বিষয়ে যেন কিছু না।”
“আরে দেবর মশাই! শুনে যান একটু৷”
আনায়া নিচে গিয়ে দেখতে পেলো পাভেল গার্ডদের সাথে কথা বলছে। আনায়ার ডাক শুনে তাকে দেখামাত্রই মুচকি হেসে বলতে লাগলো,
“আরে আপনি এতো তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছেন?”
আনায়া একগাল মুচকি হেসে বললো,
“আরেহ একবারে যাচ্ছি না তো,আবার আসবো।”
—“ওহ আচ্ছা।”
—“ভাবছি সন্ধ্যায় আপনার নিরামিষ ভাইটাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসবো। দিনে গেলে হয়তো বেশি ভালো হতো। সূর্যের আলো গায়ে না লাগিয়ে বান্দা তো পুরো ফার্মের মুরগীর মতো হয়ে গিয়েছে। উপরে ফকফকা সাদা চামড়া আর ভেতরে হয়তো রক্ত শূন্যতা। আপাতত এখন না হয় একটু চান্দের আলো লাগিয়ে নিয়ে আসি। জামাইটা পুরো নিরামিষ হয়ে গিয়েছে। এখন যদি পূর্ণিমা চাঁদের আলোয় দুই চামচ মধু খাইয়ে আমিষ বানানো যায়।”
পাভেল পুরো হতভম্ব আনায়ার নির্বিকার কথা শুনে। বুঝতে পারছে না আনায়া বললোটা কি আর সে রিয়াকশনটা দিবে কি। তবুও অপ্রস্তুত হয়ে মুচকি হাসার চেষ্টা করলো। কিন্তু পাভেলকে আরেকটু ভড়কে দিয়ে আনায়া আচমকা পাভেলের কাঁধের উপর একহাত ঠেকিয়ে খানিকটা ভড় ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো,
“গেইমগুলো কিন্তু ভালোই খেলছেন দেবর মশাই!”
পাভেল আনায়ার এহেন কথায় থতমত খেয়ে গিয়ে বললো,
“মানে?কিসের গেইম?”
আনায়া এবার ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
“কালকে রাতে ঐ শরবতে কিছু উল্টো পাল্টা মিশিয়ে ছিলেন। সে রাতের রিসোর্টের মতো, তাই না?”
একজোড়া আগুন পাখি পর্ব ৩৬
—“না মানে…”
—“আহা, বলতে এতো লজ্জা কিসের। আমারটা না মেশালেও পাড়তেন। সারারাত খালি উল্টোপাল্টা করে ঘুমিয়েছি। কাজের কাজ কিছুই তো হয়নি। উল্টো আবার কিছু মনেও পড়ছে না।”