একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২১

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২১
Mousumi Akter

রোশান-সারাহ দু’জন দু’দিকে মুখ করে সুয়ে আছে। হঠাৎ শেষরাতের দিকে আকাশে কালো মেঘ জমেছে। চারদিকে মেঘ ডাকছে। মুহুর্তের মাঝে শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। সারাহ ঠান্ডা আবহাওয়ায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কিন্তু তার শীত করছে। ঠান্ডায় হাত-পা ভাজ করে গুটিসুটি মেরে রয়েছে। রোশানের ঘুম ভেঙে গিয়েছে। সে বাইরে মেঘের গর্জন শুনে উঠে বসল। তাকিয়ে দেখল সারাহ ঠান্ডায় কেমন গুটিসুটি মেরে রয়েছে। রোশান বিছানা ছেড়ে উঠল। অয়্যাড্রব খুলে পাতলা একটা কাঁথা নিয়ে এলো। সেটা সারাহ’র গায়ে ভালভাবে জড়িয়ে দিলো। ডিম লাইটের কৃত্রিম আলোয় সারাহ’র মুখটা আরোও উজ্জ্বল দেখাচ্ছে৷

রোশান পুরা ঘরে চোখ বুলালো। চারদিকে ফুল আর ফুল। বিশেষ করে খাটটা পুরা বেলি ফুল দিয়ে সাজানো। সেই খাটের মাঝে যেন আস্ত একটা ফুল ঘুমোচ্ছে। রোশান ডিম লাইট ও অফ করে দিলো। রুমের কোনায় রাখা কয়েকটা কালার মোমবাতি জ্বালালো। বাইরে যেন ক্রমশ বৃষ্টির মাত্রা বাড়ছে। রোশান নিজেও গিয়ে সুয়ে পড়ল।
সারাহ’র সারাজীবন কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমোনোর অভ্যাস। ঘুমের ঘরে হাত দিয়ে কোলবালিস হাতড়াতে গিয়ে কোলবালিশের মত কিছু একটা হাতে বাঁধল। ওটা আসলে কোলবালিশ ছিলো না, ছিলো রোশান স্যার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারাহ রোশানের দিকে ঘুরে সুয়ে এক পা রোশানের গায়ের ওপর তুলে দেয়। তারপর রোশান’কে কোমবালিশের মত করেই শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে নিজের কাঁথার নিচে নিয়ে নেয়। বাইরে ঝুম বৃষ্টি, আবহাওয়া শীতল, আবহাওয়া এমনিই উষ্কানি দিচ্ছে। রোশান শরীরে কেমন উষ্ণতা অনুভব করলো ঘুমের মাঝে। ঠান্ডার মাঝে নারী উষ্ণতা কার না ভাল লাগে। রোশানও সারাহ’কে সারাহ’র দিকে ঘুরে সুয়ে সারাহ’কে জড়িয়ে ধরল। দু’জনের বক্ষ,ওষ্ঠ, দেহ, মণ, প্রাণ সবই মিলিত হলো। দুজন ই দুজনের উষ্ণতায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হলো।

পরেরদিন ঘুম ভাঙতে সকাল সাতটা বেজে গেলো। রোশানের ঘুম ভাঙেনি, কিন্তু সারাহ’র ঘুম ভেঙেছে। ঘুম ভাঙতেই নিজেকেই এমন ভয়ঙ্করভাবে দেখে সারাহ’র চোখ কপালে উঠল। সে রোশান’কে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। তাও দু’জনে একই কাঁথার নিচে। সারাহ লজ্জায় যেন মরে যাচ্ছে। সে দ্রুত সোয়া থেকে উঠে বসার চেষ্টা করল। কিন্তু অনুভব করলো রোশানের শক্ত হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। সারাহ সোয়া অবস্থায় রোশানের হাত সরানোর চেষ্টা করল। রোশানের গায়ে সারাহ’র স্পর্শ পেতেই রোশানের ঘুম ভেঙে গেলো। তখনও রোশানের চোখে চশমা।

ঘুম ভাঙতেই রোশান দেখল সারাহ আর সে খুব ঘনিষ্ট ভাবে সুয়ে আছে। রোশান নিজেও জানেনা কখন সে সারাহ’র কাছাকাছি এসছে। সারাহ লজ্জায় যেন ম’রে যাচ্ছে এমন অবস্থায় নিজেকে দেখে। গায়ের কাঁথা টান দিয়ে ফেলে দ্রুত উঠে বসল। তাকিয়ে দেখল গায়ে ওড়না নেই। অথচ রোশান তার দিকে ঝিম ধরে তাকিয়েই আছে। গায়ে ওড়না নেই দেখে সারাহ আরোও লজ্জা পেলো। দ্রুত এদিক-সেদিক তাকিয়ে দেখল ওড়না খাঁটের নিচে পড়ে আছে। সারাহ বড় বড় চোখে একবার খাঁটের নিচে একবার রোশানের দিকে তাকাচ্ছে। এইভাবে তার বস্ত্রহরণ কি এই ভদ্রলোক করলো। সারাহ দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে ওড়নাটা তুলে গায়ে পেঁচিয়ে অগ্নিচোখ রোশানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” আপনি এত চরিত্রহীন কেন? ঘুমের ঘরে আমার সাথে ছি! ছি!।”
রোশান চোখের চশমা খুলে উঠে বসল। সারাহ’র আপাদমস্তক ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বলল,
” ইউ আর মাই ওয়াইফ। সো চরিত্রহীনের কিছুর হয়নি এখানে।”
” তাই বলে আমার পারমিশন ছাড়া করবেন?”
রোশানের দুই ভ্রু কুঁচকে এলো সারাহ কথা শুনে। কি করার কথা বলছে সারাহ। রোশান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
” কি করেছি?”

সারাহ রোশানের দিকে তাকিয়ে দেখল সে উত্তরের অপেক্ষায় অধির আগ্রহে তার দিকে চেয়ে আছে। রোশানের চাহনি সারাহ’কে লজ্জা দিলো, ভীষণ লজ্জা। এই মানুষটা কি জানে সে কি করার কথা বলেছে। বুঝেও আবার প্রশ্ন করছে। সারাহ এবার বিস্ফোরিত কণ্ঠে বলল,
” কি করেছেন জানেন না? কি জন্য একটা ছেলে, একটা মেয়েকে গভীর নিশীতে জড়িয়ে ধরে জানেন না। ”
রোশান বিছানা ছেড়ে উঠে এসে সারাহ’র সামনে দাঁড়ালো স্ট্রং হয়ে। ট্রাউজারের দুই পকেটে দুইহাত গুজে কপালের চামড়ায় ভাজ ফেলে বলল,

” হাউ লেইম!”
সারাহ এইবার রোশানের দিকে এক আঙুল উঁচিয়ে অগ্নিচোখে তাকিয়ে বলল,
“আপনি করতে পারেন আর আমি বললেই লেইম।”
রোশান এবার বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
“আমি যদি বলি ঘুমের ঘরে একজন শিক্ষকের থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করেছো তুমি।”
সারাহ চোখ কপালে তুলে বলল,
“নাউজুবিল্লাহ, অস্তাগফিরুল্লাহ, ছি! ওই ধরণের মেয়ে আমি নই বুঝেছেন।”

” তাহলে ঘুমের ঘরে আমাকে ওভাবে জড়িয়ে ধরছিলে কেন বারবার। আমি কি তোমাকে জড়িয়ে ধরেছি একবারও।”
সারাহ’র মাথা এইবার চক্কর দিয়ে উঠল। লজ্জায় যেন কান দু’টো কাটা যাচ্ছে। সে কীনা গিয়ে রোশান স্যারকে জড়িয়ে ধরেছিলো। সারাহ কি উত্তর দিবে বুঝে উঠতে পারছে না। তর্কে তো আর হারা যাবেনা৷ দ্রুত তোতলানো কণ্ঠে বলল,

” মানে আমি জড়িয়ে ধরেছি সেটা আপনি জানেন, তো তখন কিছু বলেন নি কেন?”
রোশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” জাস্ট সাট আপ। ফ্রেশ হও।”
এরই মাঝে কে যেন দরজায় টোকা দিলো। রোশান গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই দেখল, তার আট বছরের ফুফাতো বোন দাঁড়িয়ে আছে। রোশান বলল,
” আয় ভেতরে আয়।”
মেয়েটি ভেতরে এসে সারাহ’র হাত ধরে বলল,
” ভাবি বাহিরে ডাকছে সবাই।”
সারাহ মৃদু হেসে বলল,
” আমি একটু ফ্রেশ হয়ে নিই।”

সারাহ ওয়াশ রুম গেলো, ব্রাশ করল, টাওয়াল দিয়ে হাতমুখ মুছে তারপর মেয়েটির হাত ধরে বাহিরে গেলো৷ বাহিরে নতুন বউ-এর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। বাসার আত্মীয় -পাড়াপ্রতিবেশী সবাই আছে। সারাহ’র চেহারা দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। বলতে গেলে পাড়ার সবাই মুগ্ধ নতুন বউ দেখে। রোশানের আম্মা রান্নাঘরেই আছে। বারান্দায় সারাহ’কে ঘিরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। রান্নাঘর থেকে উঁকি মেরে রোশানের আম্মা কিছু একটা ভেবে সারাহ’র হাত ধরে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে গেলো। সারাহ বুঝতে পারল না তাকে টেনে এভাবে নিয়ে যাচ্ছে কেন? সারাহ চুপচাপ আছে, কিছুই বলল না। রোশানের আম্মা সারাহ’কে রান্নাঘরে নিয়ে বলল,

” এত বেলা করে কেউ ঘুম থেকে ওঠে। নামাজ পড়ার অভ্যাস নেই তাইনা তোমার। ”
সারাহ মিহি কণ্ঠে বলল,
” ইয়ে মানে আম্মা, ঘুমোতে দেরি হয়েছে। আর ক্লান্ত ছিলাম।”
” নামাজ পড়োনা তুমি।”
সারাহ শান্ত গলায় বলল,
” মাঝে মাঝে কামাই যায়।”
” আর কামাই দিবানা।”
” ঠিকাছে।”
রোশানের আম্মা বিরক্ত কণ্ঠে আবারও বলল,

” বাড়ির বউয়েরা কখনো এত বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেনা। তুমি জানো সকাল থেকে মানুষ কতবার এসেছে নতুন বউ দেখার জন্য। কত মানুষ বাজে কথা শুনিয়ে গিয়েছে। এত বেলা করে নিজের স্বামীর সাথে সুয়ে থাকা মানে নির্লজ্জতা। এটা আমি বলছি না, মানুষ বলছে।”
সাত সকালে শ্বাশুড়ির মুখে বরের সাথে সুয়ে থাকা নিয়ে কু মন্তব্য শুনে লজ্জায় সারাহ মরে যাচ্ছে। এমন সময় একজন বয়স্ক মহিলা এসে বলল,

” কি বরের সাথে সুয়ে কি মন ভরেছে।”
এমন বিশ্রী কথাটা সারাহ’র কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই সারাহ’র সমস্ত শরীর ঘিনঘিন করে উঠল। মহিলাটির দিকে তাকিয়ে বলল,
“মানুষের বিয়ে হয়ই তো বরের সাথে সুয়ে থাকার জন্য। মানুষ বিয়ে করেই তো সুয়ে থাকার জন্য। আপনি কখনো বরের পাশে ঘুমোননি।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২০

এমন সময় কি কারণে যেন রোশান কিচেনের দিকে এসছিলো। সারাহ’র মুখে এমন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে সারাহ’র দিকে তাকালো। সারাহ’র ও চোখ পড়ল রোশানের দিকে৷ সাথে সাথে সারাহ চোখ বন্ধ করল। এমন নির্লজ্জ কথা বলার সময় ই উনাকে আসতে হলো।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২২