একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩
Mousumi Akter

সারাহ তন্ময় হয়ে একাউন্টিং ডিপার্টমেন্টের দো’তলা ভবন দিয়ে হাঁটছে।দু’ চোখের তারায় ভাষছে লেকচারার রোশান সিদ্দিকীর গম্ভীর চেহারা। রোশান সিদ্দিকী যতক্ষণ ক্লাসরুমে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে ছিল ততক্ষণ তার হৃদপিন্ড যেন থমকে গিয়েছিল।ভেবেছিলো পরীক্ষা টা কোনমতে শেষ হলেই সে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন আবার রোশান সিদ্দিকী’র মুখোমুখি হতে হবে।তাকে দিয়ে আবার কি স্পেশাল পরীক্ষা দেওয়াবে? কিছুই সারাহ’র মাথায় ঢুকছে না।

গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে এলোমেলো পা ফেলে লাইব্রেরীর দিকে এগোলো।লাইব্রেরীর দিকে যত এগোচ্ছে ততই সারাহ’র হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে চলেছে।এই মুহুর্তে যেন হৃদয়ের মাঝে ঝ’ড় উঠেছে।লাইব্রেরীর সামনে এসে নিজের বুকে নিজে একটা ফুঁ দিয়ে রুমে উঁকি মারল। উঁকি মেরে দেখল, লাইব্রেরিতে রোশান সিদ্দিকী ছাড়া আর কোনো স্যার নেই।সারাহ’র বুকের ঢিপ ঢিপ বেড়ে গেল আরো কয়েকগুন।মুহুর্তের মাঝে সারাহ’র চঞ্চল মস্তিষ্ক চিন্তা করল, ফাঁকা রুমে ডেকে আমার সাথে কি করতে চলেছে রোশান সিদ্দিকী। সে টিপ টিপ করে পা ফেলে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করল।রুমে ঢুকেই বা পাশে রোশান সিদ্দিকী’র টেবিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

টেবিলের উপর দুই পাশে দুটো সুন্দর ফুলদানি।রোশান সিদ্দিকী পায়ের উপর পা তুলে বাম হাত কপালে ঠেকিয়ে গভীর মনযোগে ফোন স্ক্রল করছে।পরণের ব্লু শার্টে তাকে মারাত্মক সুদর্শন লাগছে।কে বলে শ্যামবর্ণ অসুন্দরের প্রতিচ্ছবি। তাহলে রোশান সিদ্দিকীকে দেখে কলেজভর্তি সমস্ত সুন্দরী মেয়েরা হা করে তাকিয়ে থাকত না।তাকে নিয়ে কল্পনায় প্রেমের রাজ্য গড়ত না।তাকে দেখার জন্য হলেও ক্লাস মিস দিতনা।তাকে ভেবে রাত-দিন এক করত না। সৌন্দর্য্য আল্লাহর অশেষ নেয়ামত। তা যে-কোনো বর্ণের ই হতে পারে।

সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র টেবিলের সামনে গিয়ে মুখ কাচুমাচু করে দাঁড়াল। রোশান সিদ্দিকী কি টের পেল তার সামনে এসে কেউ দাঁড়িয়েছে।নাকি টের-ই পেলনা।তাকে দেখে সারাহ কিছুই অনুমান করতে পারছে না।রোশান সিদ্দিকী আনমনে ফোন স্ক্রল করছে।সারাহ ঘনঘন চোখের পলক ফেলে রোশান সিদ্দিকীর দিকে তাকাচ্ছে।কিন্তু রোশান সিদ্দিকীর কোনো হেলদোল নেই।সারাহ তাকে কি বলে সম্মোধন করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।এইদিকে গতরাতে তার সাথে বিয়ে হয়েছে এই মানুষটার।বিয়ে হলেও স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারেনি একফোঁটা ও। তাই হ্যাগো, ওগো বলে সম্মোধন করাও সম্ভব নয়।আবার স্যার ডাকতেও কেমন সংকোচ হচ্ছে।এক রাজ্য চিন্তা মাথায় নিয়ে সারাহ শুকনো কাশি দিয়ে নার্ভাস কন্ঠে বলল,

” আ’ আমাকে আসতে বলেছিলেন ?”
রোশান সিদ্দিকী ফোনের ওয়ালপেপার থেকে চোখ সরিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল সারাহ’র দিকে। সেই দৃষ্টি এতই গম্ভীর যে সারাহ’র হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করল।এমন ভয়ংকর গম্ভীর চোখের দৃষ্টি সারাহ আগে-পরে কখনো দেখেনি।এই দৃষ্টি সারাহ-কে আবার-ও থমকে দিল।প্রচন্ড নার্ভাসে ঘন ঘন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচ্ছে।রোশান সিদ্দিকী গভীর মনযোগে সারাহ’র আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,
“লাইব্রেরিতে প্রবেশের পূর্বে টিচারদের অনুমতি নিতে হয় জানেন না?”

সারাহ’র কাছে খুব-ই অবাক লাগছে রোশান সিদ্দিকী’র ব্যবহার।সারাহ মনে মনে ভাবছে, তাদের যে সদ্য বিয়ে হয়েছে সে-কথা কি এই মানুষটা ভুলে গিয়েছে।নাকি গতরাতের ব্যবহারের জন্য এই বিয়ে ভেঙে দিতে চাইছে।সে-ও কি সারাহ’র মতই ফ্যামিলির চাপে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে।উঁহু, এটা তো হতে পারেনা।উনাকে দেখেতো মোটেও অতটা ফ্যামিলিভক্ত ছেলে বলে মনে হয়না।জোর পূর্বক কেউ বিয়ে দিবে এমন ও-তো মনে হয়না।উনি যথেষ্ট ম্যাচুরড আর ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। তাহলে কাহিনী টা কী?

গতরাতেই তো তুমি করে কথা বলেছিলো।এখন আবার আপনি কেন? আর যদি বৈবাহিক সম্পর্ক না রাখতেই চাইবে তাহলে তো গতরাতে সোজাসাপটা জানিয়ে দিত। নাকি আজ জানিয়ে দিবে।বৈবাহিক সম্পর্ক উনার তরখ থেকে না রাখলে তো বড় বাঁচা বেঁচে যাবো।ডিভোর্স দিয়ে দিলেই ভাল।উনার জন্যই আরিয়ান ভাই-এর সাথে আমার ভালবাসা পূর্ণতা পায়নি।কিন্তু ডিভোর্স যদি দিয়েই দেয়, আমিই বা কীভাবে ডিভোর্সি স্বামীর কলেজে লেখাপড়া করব।উনার সামনে মুখ দেখাব কীভাবে? জীবন টা কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাবে আল্লাহ ভাল জানে।সব দোষ এই রোশান স্যারের।আমার জীবন টা ত্যানা ত্যানা করার পেছনে সম্পূর্ণ হাত উনার।

উনি যদি উদ্ভট ভাবে আমাকে বিয়ে না করতেন তাহলে আজ কলেজের স্যার আমার বর হতনা।সেই স্যারের সাথে ডিভোর্স ও হতনা।সেই ডিভোর্সী স্যারের বউ হয়ে তার -ই কলেজে পড়াশুনা করা লাগতনা।নিজের প্রেমিক-কেও হারানো লাগত না।সব দোষ এই রোশান নামক কাল সা’ পে’ র।আমার সাথে এত এত অন্যায় করার জন্য আমিও এত সহযে ছেড়ে দিবনা।আমাকে তো চিনেনা।আমার নাম ও সারাহ।সারাজীবন বন্ধবীরা ঝ’ গ’ ড়া’ য় হেরে গেলে আমাকেই ডেকে নিয়ে জিতে এসছে।

মাত্র এক -দেড় মিনিটের মাঝে দুনিয়ার হাবি জাবি চিন্তা সারাহ’র মাথায় প্রবেশ করল।রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র উত্তরের অপেক্ষা করছে।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সারাহর দিকে।সারাহ আবার ও কাচুমাচু মুখে উত্তর দিল,
“সরি, ভুল হয়ে গিয়েছে।আবার বাইরে গিয়ে অনুমতি নিচ্ছি।” বলেই সারাহ বাইরে যেতে পা বাড়াল।রোশান সিদ্দিকী খানিকটা মুড নিয়ে চেয়ারের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“বসুন।”
সারাহ নিঃশব্দে বসল।এক হাত দিয়ে আরেক হাত কচলাচ্ছে।সে বুঝতে পারছে না এই গম্ভীর মুডি মানুষ’টা কেন তাকে এখানে ডেকে এনেছে।সারাহ এইবার মিহিকন্ঠে বলল,
“আমাকে ডেকেছেন কেন? ”
রোশান সিদ্দিকী খেয়াল করল সারাহ’র নাক ঘামছে।চেহারায় কিছুটা দুঃচিন্তা।সে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,

“আর ইউ নার্ভাস?”
সারাহ চোখ টেবিলে নামিয়ে জবাব দিল,
“না স্যার।”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল, “আপনার গলা শুকিয়ে এসছে। পানি খেয়ে নিন।”
সারাহ পানির বোতলের মুখ খুলে ঢকঢক করে পানি খাচ্ছে।রোশান এক নজরে তাকিয়ে সারাহ’র পানি খাওয়া দেখছে।সারাহ পানি খাওয়া শেষ করে বোতল টা টেবিলের উপর রাখতে যেতেই বোতল পড়ে টেবিল ভেষে গেল পানিতে।টেবিলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সব ভিজে গেল।সারাহ দ্রুত নিজের ওড়না দিয়ে পানি মুছে নিচে ফেলল।পানি মুছতে মুছতে বার বার বলছে, সরি স্যার, আমি বুঝতে পারিনি।রোশান সিদ্দিকী কোনো কথার উত্তর দিলনা।সে বিরক্ত মুখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে রইলো।রোশান সিদ্দিকীর এই চোখের দৃষ্টি সারাহ’কে অপমানের অনলে পুড়ালো।এই দৃষ্টি সারাহ’কে অপমানিত করছে। সারাহ আবার ও মান-ইজ্জত হারাল।মনে মনে বলল,

” এইসব অকাজ আর দূর্ঘটনা এনার সামনেই কেন ঘটছে।দুনিয়াতে কি ঘটনা ঘটার মত আর কেউ অবশিষ্ট নেই।”
সারাহ কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন-ই রোশান সিদ্দিকী বলল,
“আপনি কি বাচ্চা?”
“কেন?”
“সামান্য একটা পানির বোতল সামলাতে পারেন না।”
সারাহ চুপ রইলো। মনে মনে বলল, ‘ এখন ন্যাকামি হচ্ছে।বাচ্চা না বুড়ি না জেনেই তো আবার ঠিক ই বিয়ে করে নিলি।’
সারাহ’কে চুপ থাকতে দেখে রোশান আবার বলল,
“আপনি এগেইন এক্সাম দিবেন?স্পেশাল এক্সাম।”
“কেন স্যার?”

“আমি বলছি তাই। ” বলেই খাতা এগিয়ে দিল রোশান সিদ্দিকী। সারাহ খাতা টেনে নিয়ে বলল,
“এটাই কি স্পেশাল এক্সাম স্যার?”
“না সেটা টাইমমত হবে, এখনি নয়।”
সারাহ কৌতুহল প্রবন হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কোন বিষয়ের উপর এক্সাম স্যার।”
রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দিকে আবার ও গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“স্পেশাল সাব্জেক্ট এর উপর স্পেশাল এক্সাম।”
“স্পেশাল সাব্জেক্ট কোনটা স্যার।”
রোশান সিদ্দিকী এইবার খানিকটা মুড নিয়ে বলল,
“এত কথা বলেন কেন আপনি? আগে লিখুন। দেখি কি কি লেখেন।”

সারাহ খাতা নিয়েছে ঠিক-ই।কিন্তু কিছুই লিখতে পারছে না।কি লিখবে সে? সারাবছর তো কোনো লেখাপড়া-ই করেনি।পরীক্ষার খাতায় সম্পূর্ণ বানিয়ে বানিয়ে লিখে আসে।এখন তো বানিয়ে লিখলে রোশান সিদ্দিকী পড়ে শোনাবে।এতে ইজ্জত যেটুকু আছে সেটুকুও আর থাকবে না।হঠাৎ সারাহ-র মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এল।গত রাতের কথা মনে পড়ল।সে খাতায় লিখতে শুরু করল,

“দেখুন গতরাতের ব্যবহারের জন্য আমি সরি। কিন্তু তার মানে এই না যে আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিচ্ছি।আমাকে জোর করে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করার জন্য আমি কোনদিন আপনাকে ক্ষমা করব না।তবে হ্যাঁ, আমি জানতাম না যে আপনি আমার কলেজের স্যার, জানলে ওসব ব্যবহার করতাম না।দেখুন স্যার আপনি আমার শিক্ষক, আমি আপনার ছাত্রী।আপনি আমার গুরুজন।আমার কাছে সম্মান ডিজার্ভ করেন আপনি।সে হিসাবে আমি গতরাতে খারাপ ব্যবহার করেছি।দয়াকরে ওসব মনে রাখবেন না।আপনি আমার গুরুজন,আমার ভুল হবে স্বাভাবিক বিষয়, ক্ষমা করা আপনার দায়িত্ব।গতরাতের রাগ পুষে রেখে যেন আমাকে ফেল করিয়ে দেন না।আপনার কাছে বিনীত অনুরোধ এইসব ব্যক্তিগত রাগে যেন আমাকে ফেল করাবেন না।শিক্ষক হয় পিতার সমতুল্য কিন্তু আপনি বরের সমতূল্য কিভাবে হলেন বুঝতে পারিনি।গতরাতের ব্যাপার টা স্যার হিসাবে না দেখে বর হিসাবে দেখে আমাকে ক্ষমা করুন।”
রোশান সিদ্দিকী ফোন স্ক্রলের ফাঁকে ফাঁকে দেখছে সারাহ খুব মন দিয়ে লিখছে।সারাহ -কে এত মনোযোগ দিয়ে লিখতে দেখে রোশান সারাহ-কে বলল,

“দেখি আপনার খাতাটা কি লিখেছেন?”
সারাহ’র চোখ-মুখের সমস্ত নার্ভাস ভাব আপনা-আপনি কেটে গিয়েছে।সে এক গাল হেসে রোশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“লেখা শেষ হয়নিতো।”
“যা লিখেছেন অতটুকুই দেন।দেখলেই বুঝব।”
সারাহ খাতাটা রোশানের দিকে এগিয়ে দিল।রোশান টেবিল থেকে চশমাটা নিয়ে খাতার দিকে দৃষ্টি দিতেই তার চোখ কপালে উঠল।সে অদ্ভুত দৃষ্টিতে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
“হোয়াট ইজ দিস! এসব কি লিখেছেন।পরীক্ষার খাতায় আপনি ব্যক্তিগত রচনা লিখেছেন!”
সারাহ মৃদু হেসে বলল,
“আমার কি দো’ষ। আপনিই তো বলেছেন যা যা বলতে ইছা করে আমি যেন খাতায় লিখে দিই।তাই লিখলাম।”
রোশান এইবার আরো বেশী অবাক হয়ে সারাহ’র দিকে তাকাল।তার জীবনে এত বেশী বিস্মিত আগে হয়নি।অবাককরা কন্ঠে বলল,

“হোয়াট? তাই বলে সরকারি খাতায় আপনি এসব লিখবেন? পা- গ- ল আপনি।”
“আপনি তো আর খাতা কিনে দেননি লেখার জন্য। যা পেয়েছি তাতেই লিখেছি।”
রোশান ডানে -বামে তাকাল।বিরক্তিতে ভ্রুঁ কুচকালো।চোখ মুখের অবস্থা এমন যে, এই মেয়েটা কি আসলেই পা- গ- ল। পরীক্ষায় খাতায় কেউ এসব দেখে। রোশান টেবিলের উপর দুই হাত রেখে সারাহর দিকে সরাসরি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

“আপনি কিন্তু এখানে রিতীমত বেয়াদবি করলেন।একজন শিক্ষকের সাথে এ ধরণের বেয়াদবি করাতে আপনাকে যে-কোনো শাস্ত দিতে পারি। এসব কি উল্টা-পাল্টা কাজ করেছেন আপনি।”
সারাহ এইবার মৃদু হেসে টেনে টেন বলল,
“ছাত্রী যখন বউ শিক্ষকের তো এসব সহ্য করতে হবেই স্যার।”
রোশান এইবার ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
“এইখানে কোনো আনঅফিসিয়াল কথা-বার্তা বলবেন না।”
“আনঅফিসিয়াল কাজ তো আপনিই করছেন স্যার।আমাকে ডেকে এনে আলাদা পরীক্ষা নিচ্ছেন।”
রোশান এইবার ভ্রু যুগল সুঁচালো করে বলল,
“আমি যদি আগে জানতাম তুমি আমার ছাত্রী ভুলেও বিয়ে করতাম না।”
সারাহ এইবার কন্ঠ ঝাঁঝালো করে বলল,

“আপনি কি শিশু, কেউ জানতে নিষেধ করেছিলো।জানেন নি কেন? সুন্দরী মেয়ে দেখে বিয়েতে আর না বলতে পারেন নি তাইনা? আমি জীবনেও আপনাকে স্বামী হিসাবে মেনে নিবনা।”
“এটা গত রাতেই শুনেছি। নতুন কিছু থাকলে বলো।”
“বুঝলাম না একবার তুমি একবার আপনি।কাহিনী কী আপনার? ”
“প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কথা বললেই সব জান্তা হওয়া যায়না।”
“মানে?”

“মানে আমার বউ আর অফিস দু’টোই ভিন্ন। বউকে তুমি বলি আর ছাত্রীকে আপনি বলি। বউ এর নজর আর ছাত্রীর নজর অনেক ডিফারেন্স আমার কাছে।যখন বউ এর সাথে কথা বল স্রেফ তুমি বলি। ”
সারাহ রোশানের মতিগতি কিছুই টের পাচ্ছেনা। রোশানের মনে কি চলছে তাও বুঝতে পারছে না।রোশান কি তাকে মেনে নিবে কিছুই বোধ গম্য হচ্ছে।এর-ই মাঝে সারাহ’র ফোন বেজে উঠল।আর সেই ফোনে বেজে উঠল অদ্ভুত এক গান।

“তুই চাইয়া থাকোস ক্যান
কি কবি ক,
তুই কইলেই তো
আমি কমু হ”
এই রিংটোন তো সারাহ দেয়নি।এটা তার নতুন ফোন।ফোন নিয়ে আজই কলেজে এসছে।মৃন্ময় নতুন ফোনের সেটিংস ঠিক করে দিতে গিয়ে নিশ্চিত এই অকাম করেছে।সারাহ লজ্জায় যেন এখনি পুঁতে যাবে।এটা কি জঘন্য গান বাজছে তার ফোনে।রোশান এইবার এত অবাক হল তা প্রকাশের মত নয়।মানে এমন জজগাখিচুরি মার্কা ফালতু গান কোনো কলেজ পড়ুয়া মেয়ের রিংটোন হতে পারে।রোশান কে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে সারাহ আরো অপমানিত হল।এই ঘটনের চেয়ে বড় অঘটন ছিলো ফোনের স্ক্রিনে ভেষে ওঠা সেভ নাম্বার টা।নাম্বার টা দ্বীপের।সারাহ সকালেই সেভ করেছে।রোশান গোল গোল চোখে তাকিয়ে আছে সেই নামের দিকে।ফোনের স্ক্রিনে ভাষছে,
“ট্যাবলেটের সোয়ামি।”

এমন সিচুয়েশন এ এর মত চরম লজ্জাজনক ঘটনা এই পৃথিবীতে আর নেই।সারাহ’র ইচ্ছা হচ্ছে লজ্জায় এখনি ম’রে যেতে।সাথে রোশানের অদ্ভুত চাহনি।সারাহ লজ্জায় ম’রি ম’রি মুখের বদনে ফ্যাল ফ্যাল করে রোশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“স্যার এসব বন্ধুরা করেছে।আমি কিছুই জানিনা।”
রোশান অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থেকে বলল, “সিরিয়াসলি, বলার কোনো ভাষা নেই আমার।”
“আমি এখন উঠি স্যার।”

সারাহ ভাবছে কোনমতে উঠে পালাতে পারলেই বাঁচি।
“যাও।”
সারাহ উঠে হাঁটা দিল।রোশান পেছন থেকে ডেকে বলল,
“টাকা আছে?”
“আছে।”
রোশান উঠে এল। সারাহ এর হাতে এক হাজার টাকার পাঁচটা নোট গুজে দিয়ে বলল,
“হাত খরচ রাখো।”

সারাহ’র চোখ বড় বড় হয়ে গেল।সে এটার জন্য প্রস্তুত ছিলনা।এইবার রোশান বলল,
“মনিহারের সামনে আলতাফ ভাই-এর দোকান ঠিক করে রেখেছি।কলেজ থেকে যাওয়ার সময় রেগুলার লাঞ্চ করে যাবে।যা ইচ্ছা হয় তাই খাবে।নিজেকে খুদায় কষ্ট দিবেনা ভুলেও।”
এই কথাটার জন্য সারাহ মোটেও প্রস্তুত ছিলনা।সে ড্যাব ড্যাব চোখে রোশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি একা খেতে পারব না।আমার বন্ধুরা সাথে থাকবে।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২

রোশান বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
“কলেজের সবাই-কে নিয়ে খেতে যাও।” বলেই হাঁটা দিল।
আর সারাহ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো রোশানের দিকে।আর চোখের সামনে বার বার ভাষছে ‘ ট্যাবলেটের সোয়ামি নামটা’

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪