একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৬
Mousumi Akter
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গিয়েছে। সারাহ’র মনে পড়ল সে বাসায় কাউকে না জানিয়ে চলে এসছে। সারাহ’র অসুস্থ শরীর রোশান স্যার’কে বললে সে জীবনেও আসতে দিতনা। আর শ্বাশুড়িকে বললে হাজারটা কথা শোনাতো। সারাহ ব্যাগ থেকে ফোন বের করল। ফোনের দিকে তাকিয়ে চোখ উল্টে গেলো তার। ৯৭ মিসড কল। সারাহ কলগুলো চেক দিয়ে দেখল, সব কল রোশান সিদ্দিকী’র দেওয়া। ফোন কখন সাইলেন্ট হল ; সেতো জানেইনা। এইদিকে ছোঁয়ার বাড়িতেও যাওয়ার দরকার। ছোঁয়া যা কিছুই বলে যাক না কেন? ওর মনের অবস্থা ভাল নয়। এইদিকে আবার তন্ময়। তন্ময়কে না সামলাতে পারলে ভুলভাল কিছু করে ফেলবে। সারাহ’র দুঃচিন্তা দেখে মৃন্ময় বলল,
” সারাহ তুই বাসায় যা। আর হ্যাঁ, ওই মাদারবোর্ড ছোঁয়ার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই আজ থেকে। সবাই ওকে মিলে ব্লক দিবো। জীবনে পাপ করেছিলাম ওর মত বড়লোকের মেয়ের সাথে ফ্রেন্ডশীপ করে। ওর সাথে আজ থেকে কোনো সম্পর্ক নেই আমাদের।”
দ্বীপ তন্ময় এর উদ্দেশ্য বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” শালা তুই ছেমড়ি মানুষের নত কান্দিস ক্যান। এসব ব্রেকাপ ফ্রেকাপের কষ্ট আহামরি কিছুই নয়। কাকিমার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করিস তোকে জন্ম দিতে গিয়ে কতটুক ব্যাথা সহ্য করেছে। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা কর আমরা গরিব হয়ে জন্ম নিয়েছি মরব বড়লোক হয়ে। আমাদের তিন বন্ধুর একদিন বিশাল বড় ব্যাবসা হবে। ছোঁয়ার বাবার চেয়েও বড়। অনেক বড়। তখন অনেক ছোঁয়ার বাপ মেয়ে নিজ হাতে আমাদের দিকে এগিয়ে দিবে।”
সারাহ বলল, ” তোরা সামলা ওকে প্লিজ! আমি পরে ফোন দিবো আবার।”
সারাহ ওদের থেকে বিদায় নিয়ে রোশান স্যার’কে কল ব্যাক করল। সারাহ একটা জিনিস খুব ভাল ভাবেই জানে, যা কিছুই হয়ে যাক না কেন? রোশান স্যার তাকে কখনোই কিছু বলবেনা। রোশান স্যারকে সামলানোর জন্য তার একটু হাসিই যথেষ্ট। রোশান সিদ্দিকী ফোন রিসিভ হতেই গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” আর ইউ ওকে?”
সারাহ হাসিমাখা মুখে উত্তর দিলো,
” হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। ফোন সাইলেন্ট ছিলো বুঝতে পারিনি। কুরিয়ারে একটা পার্সেল এসছে, নিয়েই ফিরছি।”
আবারও একই রকম কণ্ঠে উত্তর এলো,
” ইওর উইশ।” বলেই ফোনটা কেটে দিলো।
এই প্রথমবার কেমন অদ্ভুত শোনালো রোশান স্যারের কথা। কেমন যেন ভারী কণ্ঠে উত্তর দিলেন। সারাহ দ্রুত কুরিয়ার অফিসে গেলো। একটা নাম না জানা অজ্ঞাত ব্যক্তি সারাহ’র নামে পার্সেল পাঠিয়েছে৷ শুধু পার্সেল নয় সে প্রায় তার ফোন নাম্বারে রোমান্টিক মেসেজ সেন্ড করে। সারাহ’র এই নাম্বারটা পৃথিবীর কেউ জানেনা। এই নাম্বার বাইরে যাওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। এই নিয়ে পাঁচবার কুরিয়ারে পার্সেল এলো। খুব অদ্ভুত ব্যাপার! তার একান্ত পছন্দ গুলা ও এই অজ্ঞাত ব্যক্তিটা জানে। এমন বড়লোকি পার্সেল কে দেয় তাকে?
প্রথমবার বিশাল বড় একটা কসমেটিক্স এর বক্স পাঠয়েছিলো। সেখানে সব ব্রান্ডের সাজগোজের প্রডাক্ট ছিলো। এর পরের বার এলো জু’তার পার্সেল। সারাহ’র একদম পায়ের মাপে ৮ জোড়া দামি জুতা পাঠালো। এর পরেরবার ত্রিশটা সুন্দর সুন্দর কালারের লিপিস্টিক পাঠালো। এর পরেরবার পাঠালো বিশাল বড় বড় দুইটা পান্ডা সাথে অনেক রকমের কানের দুল সাথে অনেকগুলা ফুল। আজ আবার কি আছে? সারাহ পার্সেল রিসিভ করে একটু মন খারাপ করল। গিফট গুলা যে পাঠাচ্ছে পাঠাক। একদিন না একদিন ঠিকই তার পরিচয় দিবে৷ যেদিন পরিচয় পাবে সেদিনই মুখের ওপর ছুঁড়ে মারব। মনটা ভারী হল সারাহ’র। এই গিফট গুলা রোশান স্যার দিলে আজ খুশীতে পা’গ’ল হয়ে যেত সারাহ। আচ্ছা রোশান স্যার কি কোনদিন এভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারবেন? উনি কি আদৌ বুঝেন এসব। হয়ত উনার বয়সী পুরুষরা এসব বোঝেন না।
বিকালে সারাহ বাসায় ফিরল। বাসার সবাই ঘুমোচ্ছে। পার্সেল হাতে চুপি চুপি সারাহ নিজের ঘরে প্রবেশ করল। রুমে প্রবেশ করে পার্সেলটা নিচে রাখল। বিছনায় বসে রোশান সিদ্দিকী ল্যাপটপ চাপাচাপি করছে। সারাহ রোশানের ভাবসাব খুব একটা ভাল বুঝছেনা। রোশানের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
” কীভাবে যে ফোন সাইলেন্ট হল, টের পাই নি। ”
সারাহ এগিয়ে আসতেই রোশান ল্যাপটপ এর সাটার অফ করে দিলো। চেহারার অবস্থা আকাশের কাল বৈশাখী মেঘের মতন ভয়াবহ। সারাহ একটু ভয় করছে। সে আমতা আমরা করে বলল,
” আপনি কি রাগ করেছেন স্যার? আসলে কি হয়েছে জানেন।”
রোশান সারাহ’র দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
” আই আম নট ইন্টারেস্টেড। ”
সারাহ ধপ করে বিছানায় রোশানের পাশে বসে পড়ল। রোশানের মুখের দিকে উঁকি মেরে বলল,
” যা ভেবেছিলাম তাই, মাই সোয়ামি ইজ রাগিং।”
রোশান অদ্ভুত চোখে সারাহ’র দিকে তাকালো। এটা কোন ধরণের ল্যাঙ্গুয়েজ। রোশানের অদ্ভুত চাহনির মুখের দিকে তাকিয়ে সারাহ বলল,
” কত ডিগ্রী রেগে আছেন স্যার?”
রোশান চোখের চশমা খুলল। সারাহ’র ফ্যাকাসে চেহারার দিকে তাকাল। চোয়াল শক্ত করে বলল,
” তুমি কি আমার সাথে মজা করছো? টেবিলে খাবার এন্ড ওষুধ আছে। খেয়ে নিও।”
বলেই রোশান বিছানা ছেড়ে নামল। ড্রেসিন টেবিলের ড্রয়ার থেকে বাইকের চাবি নিয়ে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে গেলো। সারাহ পেছন থেকে ডেকে বলল,
” আরে যাচ্ছেন কোথায়? আমি অসুস্থ মানুষ। হাত দিয়ে খেতে পারব না।” বাইক এর হর্ণ এর শব্দ শোনা গেলো। মানে রোশান বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। সারাহ পড়ল মহাবিপদে। সে রেগে গেলে রোশান সিদ্দিকী ঠান্ডা মাথায় ডিল করে। কিন্তু রোশান সিদ্দিকীর রাগ সে কীভাবে নিবারন করবে৷ রোশান সিদ্দিকী’র পছন্দ -অপছন্দের ব্যাপারে তো কিছুই সে জানেনা। সারাহ’র ফোনে মেসেজ এর টুং একটা শব্দ হল। ইনবক্স ওপেন করে দেখল রোশান স্যারের মেসেজ। সেখানে লেখা রয়েছে,
” বাসায় ফিরে যেন দেখি খাবার এন্ড মেডিসিন খেয়ে নিয়েছেন। না হলে ভাল হবেনা ব্যাপারটা।”
সারাহ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে খাবার আর ওষুধ খেয়ে নিলো। ক্রমাগত রোশান স্যারের ফোনে ট্রাই করেই যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছেনা। ফোন তুলছেনা রোশান স্যার। সারাহ পুরা রুম জুড়ে পায়চারী করতে করতে ইউটিউবে সার্চ দিলো কীভাবে স্বামীর মন ভালো করতে হয়।
অতি দ্রুত ফোন চাপার ফলে মন ভাল টুকু আর লেখা আসেনি। সাথে সাথে সারাহ’র বাক্যটুকুর মানেই বদলে গেলো। ইউটিউবে অসং্খ্য আজে বাজে জিনিসে ভরে গেলো। সারাহ দ্রুত কেটে দিয়ে চোখ কপালে তুলে বলল,
” নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। এসব কি হ্যাঁ! ”
ইউটিউব, নিজের মায়ের থেকে পরামর্শ, বিবাহিত কাজিন সবার থেকে এতক্ষণে তার পরামর্শ নেওয়া শেষ। যে কীভাবে স্বামীর মন ভাল করতে হয়।
সন্ধ্যা গড়িয়ে ঘড়ির কাটায় রাত এগারোটা বাজে। এত রাত করে রোশান স্যার কখনো বাড়িতে ফেরেন না। সারাহ একবার ঘর একবার বারান্দা এমন করছে। অশান্তিতে ছটফট করছে ভেতর -বাহির। অবশেষে রাত সাড়ে এগারটার সময় রোশান স্যার বাসায় ফিরল। সারাহ ছুটে গেল বারান্দায়৷ রোশানের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে আহলাদি গলায় বলল,
” এত লেট করলেন কেন? জানেন না রাতে আমার একা ভয় করে।”
রোশান সে কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বাইক রেখে রুমে চলে গেলো। সারাহ পিছ পিছ গেলো রোশানের। রোশান অয়্যারড্রব খুলে একটা ট্রাউজার আর টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুম গেলো। চেঞ্জ করে ফিরে এসে সারাহ’র দিকে একবার ও তাকাল না। সোজা বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ল।
সারাহ অবাক হয়ে রোশানের দিকে তাকাল। রোশান তাকে একটুও পাত্তা দিচ্ছেনা। রোশানের রাগ ভাঙাতে গিয়ে নিজেই রেগে যাচ্ছে। বিরক্ত হয়ে রোশানের কাছে গিয়ে বলল,
” বিয়ে হতে পারল না দু’দিন এখনি এত অবহেলা? রাত করে বাড়ি ফিরছেন, আমার দিকে তাকাচ্ছেন না, সমস্যা কি?”
রোশান কোনো কথার উত্তর দিলোনা। সে ঘুমের চেষ্টা চালাল। সারাহ বিরক্ত হয়ে রোশানের গায়ে হাত রেখে বলল,
” কি সমস্যা আপনার? কথা বলছেন না কেন?”
রোশান সারাহ’র হাত ঝাড়ি মেরে বলল,
” তুমি কি আমাকে ঘুমোতে দিবে? নাকি রুমের বাইরে যাবো? ডোন্ট ডিস্টার্ব মি!”
সারাহ নিজেই কথায় কথায় ছ্যাত ছ্যাত করে ওঠে। সে আবার আরেকজনের রাগ ভাঙাবে কি করে। সেই ধৈর্য্য তার নেই। নিজেই বিরক্ত হয়ে বলল,
” বাইরে তো যাবেন ই। ঘরে এত সুন্দরী বউ, বউ এর সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, সেই রুচি আছে আপনার। যদি ঠিক বয়সে বিয়ে করতেন তাহলে আজ এই কচি তরুনী, সুন্দরী বউ রেখে ঘরের বাইরে যাওয়ার কথা ভাবতেন না। সব এনার্জি ই তো আপনার শেষ৷ কিন্তু আমার তো উঠতি বয়স,কেবল ই শুরু হল। বাবা যে কেন এই মধ্য বয়সী আধাবুড়ো লোকটার সাথে আমার বিয়েটা দিয়ে আমার জীবন যৌবন সব নষ্ট করল। একটা অসুস্থ রুগীর সাথে বাবা আমার বিয়ে দিয়েছেন।”
রোশান সোয়া ছেড়ে উঠে বসল। চোখের চশমাটা দ্রুত পরে নিলো। ডান ভ্রু কুচকে বিরক্ত চোখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” কি বললে আমি অসুস্থ? তোমার কোন দিক থেকে আমাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে?”
সারাহ আঙুল উঁচিয়ে রোশানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
” যদি সুস্থই হতেন এতদিন আমরা এক ঘরে ঘুমোলাম অথচ আপনি বাবা ডাক শুনতে পারলেন না। এটা সমস্যা ছাড়া কি?”
মুহুর্তের মাঝে রোশানের ঝড় -বৃষ্টির রাতের কথা মনে পড়ল। সারাহ’র অজান্তেই তাদের মাঝে গভীর একটা সম্পর্ক হয়েছে। সারাহ যদি কখনো জানে তার অজান্তেই রোশান এত বড় একটা কাজ করেছে তাহলে কি ভাববে? রোশান তার অসুস্থতার ফায়দা নিয়েছে। অন্য জগৎ–এ হারিয়ে গেলো রোশান। সে সারাহ’র কথার আর কোনো উত্তর দিলোনা। গম্ভীর হয়ে বসে রইলো বিছানায়। রোশানকে গম্ভীর দেখে সারাহ তার সামনে হাতের তুড়ি বাজিয়ে বলল,
” কি ভাবছেন? ”
রোশান তীব্র বিরক্ত চোখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” নোংরা কথাবার্তা বন্ধ করো। আমি ক্লান্ত ঘুমোতে চাই।” বলেই আবার সুয়ে পড়ল। সারাহ চেষ্টা করেও কোনোভাবে রাগ ভাঙাতে পারল না। এভাবে কেটে গেলো তিনদিন। রোশানের রাগ একটুও কমেনি। এর মাঝে সারাহ সব রকম চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
_————————————————
তিনদিন পর। রাত এগারোটা বাজে। রোশান বাইক নিয়ে বাসায় ফিরল। গত তিনদিন ধরে বাসায় ফেরার পর দেখে সারাহ দাঁড়িয়ে আছে। এক নিঃশ্বাসে খানিকটা বিড়বিড় করে, বাবা যে কেন এই বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছিলো। এভাবেই শুরু করে রেগুলার। আজ সারাহ’কে না দেখে রোশান আশে -পাশে তাকাল। সারাহ দুষ্টু কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারে। এদিক ওদিক উঁকি মেরেও লাভ হলনা। আজ ভীষণ টায়ার্ড লাগছে রোশানের। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে রুমে প্রবেশ করল। রুম অন্ধকারাচ্ছন্ন করে রাখা। রোশান দু’বার সারাহ’র নাম ধরে ডাকল। কিন্তু সাড়াশব্দ পেলোনা। বুকের ভেতর অজানা এক দুঃচিন্তা বাড়ি মেরে উঠল।
সেকেন্ডের মাঝে হাজারও চিন্তা মস্তিষ্কে বাসা বাঁধল। রোশান হাত দিয়ে হাতড়ে রুমের লাইট অন করল। লাইট অন করতেই দক্ষিণের ওয়ালে চোখে পড়তেই রোশানের চোখ দু’টো কপালে উঠল। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রমনি টির দিকে। চোখে যেন ভ্রম দেখছে রোশান। তার সামনে অতিরিক্ত কথা বলা সে অবুঝ পা-গ-লি মেয়েটি নেই। যেন এক আবেদনময়ী নারী তার ভালবাসার ডাকে ডাকছে। রোশান সারাহ’র পা থেকে মাথা অবধি তাকালো। সারাহ’র গায়ে রোশানের নীল রঙের শার্ট। যা হাঁটুর ওপর অবধি পড়েছে। পরণে কালো শর্ট স্কার্ট যা হাঁটুর উপর পর্যন্ত। কিন্তু শার্টে সেটা ঢেকে গিয়েছে। হাঁটু হতে পায়ের পর্যন্ত ধদধবে সাদা দেখাচ্ছে। যেন সদ্য ফোঁটা লাউয়ের দুধ -সাদা ফুল। এক পায়ে একটা পায়েল পরা। বা পায়ের একটা আঙুলে অঙ্গুট পরা। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপিস্টিক পরা। সোনালি রঙের চুল গুলা এলোমেলো ভাবে ছেড়ে দেওয়া। সারাহ উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে রোশানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রোশানের কাছাকাছি গিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে টাই খুলতে খুলতে বলল,
” টাই আমি খুলে দিচ্ছি স্যার।”
রোশানের রাগ কখন কোথায় উবে গেসে সে নিজেও জানেনা। সে শুধু মাদকগ্রস্থের ন্যায় তাকিয়ে রয়েছে সারাহ’র দিকে। সারাহ’কে এত মোহনীয় দেখাচ্ছে কেন আজ? রোশান শুকনো কাশি দিয়ে বলল,
” উল্টা পাল্টা কিছু খাওনিতো! এমন অদ্ভুত পোশাক পরেছো?”
সারাহ টাইটা খুলে বিছানায় ছুড়ে মেরে রোশানের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল,
” বাহ রে! আমার স্বামীর কি অধিকার নেই, মাঝে মাঝে বউকে একটু হট লুকে দেখার।”
শার্টের বোতাম খোলা শেষ হলে রোশানের উন্মুক্ত বুকে সারাহ আঙুল চালাচ্ছে। রোশান টিচার হিসাবে ধৈর্য্যশীল পুরুষ হতে পারে। কিন্তু স্বামী হিসাবে বউ এর আবেদনময়ী ইশারায় চুপ থাকার মত ধৈর্য্যশীল সে নয়। সারাহ’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল,
” স্বামীকে তার অধিকার প্রয়োগ করতে দিচ্ছো? ”
সারাহ দুষ্টু হেসে জবাব দিলো,
” যে স্বামী তিনদিন রাগ করে থাকে, তার কি আদৌ অধিকার লাগবে?”
রোশানের দু’ঠোট জুড়ে বিশ্বজয়ের হাসি। মাদকভরা কণ্ঠে বলল,
” কোনো রাগ নেই সুইটহার্ট। ”
সারাহ কৌতুহলী চোখে জিজ্ঞেস করল,
” রাগ শেষ।”
” হুম।”
সারাহ এবার রোশানের গলা ছেড়ে বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩৫
” আমারও রোমান্স শেষ। বিবাহিত এক বান্ধবী শিখিয়ে দিয়েছিলো, পুরুষ মানুষ ভীষণ চরিত্রহীন হয়। একবার হট লুকে সামনে যাও, বিষ ও খেয়ে নিবে। আপনার রাগ শেষ, আমারও রোমান্স শেষ।” বলেই হাঁটা দিলো।
রোশান সারাহ’র হাত টেনে ধরল। ভারী হয়ে আসা কণ্ঠে বলল,
” তোমার রোমান্স শেষ?”
সারাহ কাচুমাচু মুখে বলল,
” জি স্যার।”
রোশান সারাহকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। পেছন থেকে সারাহ’র কোমর জড়িয়ে ধরে বলল,
” কিন্তু আমার শুরু, লেট মি ফিনিশ সুইটহার্ট। ”