একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৩

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৩
Mousumi Akter

পরেরদিন ভোর পাঁচটা। রোশানের বুকে মাথা গুজে শান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে সারাহ। যেন দীর্ঘকালের ঘুমের তৃষ্ণা গতরাতে মিটেছে। ঘড়িতে যখন ভোর পাঁচটা দশ রোশানের ঘুম ভাঙল। ঘুম ভাঙতেই দেখল তার উন্মুক্ত বুকের ওপর এলোমেলো চুলে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে সারাহ। বাদামি রঙের সিল্কিচুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। মাঝে মাঝে বোধহয় এলোমেলো অবস্থায় ও মেয়েদের ভয়াবহ সুন্দর লাগে। তা’না হলে রোশান সিদ্দিকী এই মুহুর্তে মুগ্ধ হবে কেন? কেনই বা চোখ ফেরাতে পারবে না নিজের বউ এর থেকে। রোশান সারাহ’র মুখের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো।

সাথে সাথে যেন সদ্য ফোটা একটা গোলাপ দেখতে পেল চোখের সামনে৷ ঘুম ঘুম চোখে গোলাপের গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বিছানা ছাড়ল। ভোরে উঠে হাঁটাহাঁটি করা রোশান সিদ্দিকী’র অভ্যাস। সে বিছানা ত্যাগ করে ওয়াশ রুমে গেল। ওয়াশ রুম সেরে কিচেনে প্রবেশ করল। রাইস কুকারে চাল আর ডিম আলু ভর্তা বসিয়ে দিলো। ফ্রিজ থেকে মাছ, মাংস বের করে ভিজিয়ে রেখে হাঁটতে বের হল। সারাহ’র সকালে ওঠার অভ্যাস নেই। তাছাড়া গতরাতে অনেক লেট করে ঘুমিয়েছে। এখন ডাকলেও মাথা ধরবে ওর। তার চেয়ে ও শান্তিতে ঘুমাক। রোশান কোনো শব্দ না করে আস্তে ধীরে ঘর ছেড়ে বের হল। যাওয়ার সময় একটা চিরকুটে লিখে রেখে গেলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” শুভ সকাল মিসেস সারাহ সিদ্দিকী।
আমাকে খুঁজে না পেয়ে চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। মর্নিং ওয়াকে যাচ্ছি।”
রোশান সিদ্দিকী নিচে নামতেই গতকালকের সেই লোকটার সাথে দেখা। সাথে কম বয়সী একটা মেয়ে। মেয়েটার পরণে ট্রাউজার আর জার্সি। হাঁটতে বের হয়েছে পোশাক দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রোশানের একবার চোখ পড়েছে মেয়েটার দিকে, দ্বিতীয়বার আর তাকায়নি। লোকটা রোশান কে দেখেই নিজ থেকে কথা বলল।।রোশান ও ভদ্রতার সাথে কথা বলল। লোকটা বলল,

” আপনার ওয়াইফ কে আনেন নি?”
রোশান সিদ্দিকী হাঁটতে হাঁটতে উত্তর দিলো,
” ও লেট নাইট ঘুমিয়েছে। তাই আর ডাকিনি। ”
লোকটার সাথে থাকা মেয়েটা রোশানের দিকে কেমন লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। যেন রোশানকে দেখেই সে ফিদা। রোশানের সাথে কথা বলার জন্য মনের মাঝে আকুপাকু করছে। এইজন্য রোশানের সাথে কথা বলা শুরু করার অজুহাতে উত্তর দিলো,

” ওমা সকালে হাঁটাহাঁটি না করলে তো ফ্যাট হয়ে যাবে। ”
রোশান মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই উত্তর দিলো,
” আই হ্যাভ নো প্রব্লেম। মাই ওয়াইফ ফ্যাট অর স্লিম।”
মেয়েটা ভাবল এমন স্লিম ফিগারের অধিকারী, সুদর্শন ছেলে, দেখতে পুরাই হট। নিশ্চয়ই তার জীবনযাত্রা অনেক আধুনিক। স্মার্ট কথাবার্তা বললে নিশ্চয়ই নিজের বউ ছেড়ে আমার প্রতিই ইন্টারেস্টেড হবে। মেয়েটা বলল,
” তবুও আপনার ওয়াইফ আপনার মতই হওয়া উচিৎ। আপনার মত স্মার্ট না হলে কি মানাবে?”

রোশান তীব্র বিরক্ত হল মেয়েটার কথা শুনে। মেয়েটা এত বেয়াদব কেন? অন্য কারো ওয়াইফ স্মার্ট নাকি আনস্মার্ট এটা দিয়ে এই মেয়ের কাজ কি? সারাহ সম্পর্কে একটা বাজে কথা সে সহ্য করতে পারেনা। রোশান মনে মনে ভাবল, লোকটা ঠিকই বলেছিলো, তার মেয়ে আসলেই ভাল নয়। এই মেয়ের চোখ মুখের লক্ষণ কিছুই ভাল নয়। এখানে সারাহ থাকলে মেয়েটার মাথার চুল একটাও এতক্ষণ আর মাথায় থাকত না। উফফ বড় বাঁচা বেঁচে গেল আজ। এই বাসা দেখছি চেঞ্জ করা লাগবে। না হলে আমাকেই আস্ত রাখবে না। এই মেয়ে যেভাবে তাকাচ্ছে। রোশান বিরক্ত কণ্ঠে উত্তর দিলো,

“ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া হাউ স্মার্ট এন্ড গরজিয়াস শী ইজ।”
মেয়েটা আবার বলল,
” এইযে আমাকে দেখুন সকালে হাঁটাহাঁটা করি, সকালে ভাত খাইনা, তেলযুক্ত খাবার ও খাইনা। আমার ভালোই লাগেনা। প্রতিটা মেয়ের উচিৎ আগে নিজের ফিগার কন্ট্রোল রাখা।”
” ইটস ইওর চয়েস।” বলেই লোকটাকে বলল,
” এইযে কি আপনার সেই মেয়ে আঙ্কেল?”
লোকটা এক গাল হেসে বলল,

” না, না, শী ইজ মাই ওয়াইফ?”
রোশানের চোখ কপালে উঠল। শরীরের মাঝে কেমন ঝাঁকি দিয়ে উঠল। এই বয়সের লোকের এমন একটা বউ। কীভাবে সম্ভব। এই মেয়েটার ফিউচার ই বা কি? মেয়েটা কি ইচ্ছাকৃত বিয়ে করছে নাকি জোর করে। রোশানের মনে হাজারো প্রশ্ন। সে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
” বিয়েটা কীভাবে হল?”
লোকটা উত্তর দিল,
” ফেসবুকের মাধ্যমে আমাদের পরিচয়, পরে রিলেশন। পরে ও পালিয়ে চলে আসে।”
” মানে লাভ ম্যারেজ।”
” হ্যাঁ। ”
” তাহলে আপনার মেয়ে কোথায়?”
” আছে বাসায় ই আছে। রান্না বান্না করছে। ”

রোশানের কাছে সবটাই অদ্ভুত লাগল। লোকটাকে একদম ভাল লাগল না রোশানের। মনে হাজারো প্রশ্ন নিয়ে বলল,
” আপনারা এগোন, আমার একটু কাজ আছে। ” বলেই অন্যদিকের রাস্তায় গেলো। রোশানের মনে হাজার টা প্রশ্ন। কীভাবে একটা বাচ্চা মেয়েকে লোকটা বিয়ে করল। আর তার মেয়ের ব্যাপারে যা বলছে তা কি বিশ্বাসযোগ্য। আর এই লোকের সেকেন্ড ওয়াইফ এর যে অবস্থা, সে কি তার মেয়েটাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে। নিশ্চয়ই মেয়েটা ভাল নেই। লোকটা এই কম বয়সী মেয়েকে নিয়ে সংসার করবে বলে নিজের মেয়েটার নামে অপবাদ ছড়িয়ে বিয়ে দিতে চাইছে। লোকটা ভাল হলে কি আর এত বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করত? মনে হাজারটা প্রশ্ন নিয়ে রোশান দ্রুত বাসায় ফিরল। বাসায় ফিরে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থায় দ্রুত সারাহ’র রুমে গেল। সারাহ তখন কেবল ই চিরকুট টা পড়ছিলো বিছানায় সুয়ে সুয়ে। এত দ্রুত রোশানকে ফিরে আসতে দেখে সারাহ সন্দিহান চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,

” এখনি ফিরে এলেন যে?”
রোশান চট জলদি বিছানায় বসে পড়ল। সারাহ’কে বলল,
” কুইক ওঠো।”
রোশানের এত তাড়াতাড়ি আর টেনশনরত ফেস দেখে সারাহ দ্রুত উঠল। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল,
” কি হয়েছে?”
” শোনো গতকাল লোকটার যে মেয়ের ব্যাপার বলছিলাম। আমার মনে হয় মেয়েটা ভাল নেই? মেয়েটার বাবাকে দেখলাম কম বয়সী একটা মেয়ে তার বউ। তাকে নিয়ে হাঁটতে বের হয়েছে। কেমন একটা সন্দেহ হচ্ছে। ”
সারাহ এক লাফে বিছানা ছেড়ে উঠল। তড়িঘড়ি করে বলে উঠল,
” পেয়ে গেছি। আল্লাহ আমি যা ভাবছি তাই যেন হয়। ”
রোশান দুই ভ্রু কুঁচকে সারাহ’কে প্রশ্ন করল,

” কি পেলে? মাথা কি গেছে তোমার। আমি একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করছি তোমার সাথে।”
সারাহ কোনো কথাবার্তা না বলে রোশান’কে জড়িয়ে ধরে বলল,
” থ্যাংকিউ আমার বন্ধুর জীবন বাঁচানোর জন্য। আজ ষোলো টা দিন মৃন্ময় খাবার খায়না, ঘুমায় না, পা-গ-লে’র মত খুঁজে চলেছে ওকে।।আমার সন্দেহ যেন সঠিক হয়। আর ওই যেন তরী হয়। আমার বন্ধুরা হল আমার প্রাণ। ওরা ভাল না থাকলে আমি ভাল থেকেও ভাল থাকতে পারিনা। সেদিন আমি ছিলাম না,তাই তরীকে ওর শয়তান বাবা মৃন্ময়ের জীবন থেকে কেড়ে নিতে পেরেছিলো। আর তা হবেনা। আমার বন্ধুর জন্য এইবার যা করতে হয় তাই করব আমি।”
রোশানকে এসব কথা সারাহ শেয়ার করেনি। এইজন্য রোশান কিছুই জানেনা। সারাহ’র এসব কথার মানে কিছুই না বুঝে বলল,

” বুঝিয়ে বলোতো কি হয়েছে?”
সারাহ রোশান’কে ছেড়ে দিয়ে দোঁড় দিল তরীদের ফ্ল্যাট এর দিকে। রোশান সারাহ’র এসব কাজ কর্মের কিছুই না বুঝলেও টের পেল কিছু একটা কাহিনী আছে।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪২

সারাহ ছুটে গিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপছে ক্রমাগত। আর বুকের মাঝে ঢিপঢিপ শব্দ হচ্ছে। তার সন্দেহ যেন ঠিক হয়। মৃন্ময়ের মুখের হাসি যেন ফিরিয়ে দিতে পারি। কয়েকবার কলিং বেল চাপতেই দরজাটা খুলে দিল। সারাহ’র বুকের মাঝে ভয়ানক ভাবে বাড়ি মেরে উঠল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৪