একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৭

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৭
Mousumi Akter

মৃন্ময় তরীকে পেয়ে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে পা’গ’লে’র মত কাঁদছে। অঝরে বৃষ্টি ঝরছে তার দু’চোখ দিয়ে। তরীও কাঁদছে। একেকটা পানির ফোঁটা যেন একেক পাহাড় কষ্টের পরিমান কমাচ্ছে। কত শত পাহাড় কষ্ট দু’জনের বুকে জমেছিলো তা কেউ জানেনা। মৃন্ময় কাঁদতে কাঁদতে তরীর কপালে অজস্র চুমুতে ভাষিয়ে বলল,
” শত শত ঝ’ড়, তুফান, ভূমিকম্পন এর বাঁধা পেরিয়ে তোমাকে পেয়েছি মায়াবিনী। আর কখনো হারাতে দিবোনা।

তোমাকে না পাওয়ার দুঃখ রোজ আমার শরীরের সবগুলো হাড় ভাঙার সমান যন্ত্রণা দিয়েছে। সেই যন্ত্রণাটুকু যে কত ভয়াবহ, আমি তোমাকে তা বোঝাতে পারব না। পরিবার, বন্ধু সবার সাথে থেকে দেখেছি, ভাল খাবার খেয়ে দেখেছি, ভাল পোশাক পরে দেখেছি, ভাল জায়গা ঘুরে দেখেছি, পৃথিবীর কিছুই আমাকে শান্তি আর স্বস্তি কোনটাই দিতে পারেনি। আমি তখন প্রতিটা মুহুর্তে মুহূর্তে উপলব্ধি করেছি, তুমি পৃথিবীর সব কিছুর উর্ধ্বে, তোমার বিকল্প কোনো কিছুইতেই নেই, তোমার শূন্যস্থান পূরণের ক্ষমতা এই পৃথিবীর আর কারোর নেই, তোমার তুলনা আর কারোর সাথে চলেনা, তোমার তুলনা তুমি নিজেই। তোমার না থাকা আমাকে সেকেন্ডে সেকেন্ডে উপলব্ধি করেছে তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার জন্য অক্সিজেন ও নিষিদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। তুমি ছাড়া ঠিকঠাক নিঃশ্বাসটুকুও চলেনি আমার। এই পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে হলেও আমার তোমাকেই লাগবে। লাগবে মানে তো লাগবেই। ”
তরীর কান্নার মাত্রা দ্বিগুন বেড়ে গেল। সে তার অনুভূতির কিছু অংশ প্রকাশ করতে যাবে। কেবল ই কান্নায় হেচকি ওঠা কন্ঠে আধো স্বরে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” আ’ আ ‘আমার। ”
এতটুকু বলতেই মৃন্ময় তরীর ঠোঁটের ওপর হাত রাখল। ভেজা চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। বুকের সাথে আরেকটু শক্তভাবে চেপে ধরে বলল,
” কিছুই বলতে হবেনা মায়াবিনী। আমি জানি তোমার কেমন লেগেছিলো। কারণ ওই একই কষ্ট আমি পেয়েছি। তোমার কান্না, তোমার চোখের নিচের কালো দাগ, তোমার মলিন মুখ ই যথেষ্ট ভালবাসার বহিঃপ্রকাশের জন্য।”
রোশান সিদ্দিকী ওদের কাছে আসেনি। সে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। কখনো নিচু দিকে তাকাচ্ছে কখনো সারার দিকে। সারাহ তার পাশেই আছে। মৃন্ময় তরীর কান্না দেখে সারাহ চোখেও পানি। কি আশ্চর্য! সারাহকে কাঁদলেও এত সুন্দর লাগে কেন? পৃথিবীর সব সৌন্দর্য্য কি সারাহ নিজের ভেতর লুকিয়ে রেখেছে। হুট হাট একেক রুপে বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সারাহ’র এই কান্নায় অন্যরকম সৌন্দর্য্য আছে। রোশান সিদ্দিকী চোখের সামনে সুন্দর একটা বন্ধুত্বের সুসম্পর্ক দেখতে পাচ্ছে। একজন ভাল বন্ধু থাকলে জীবনে কি লাগে। এক জনের সুখ আরেক জনের চোখে সুখের অশ্রু ঝরে। রোশানের কাছে ভীষণ ভাল লাগছে তাদের বন্ধুত্ব। একজন আরেকজনের জন্য কত বড় রিস্ক নিতে পারে তা ওদের না দেখলে বোঝার উপায় নেই। রোশান সারাহ’র ফোন নাম্বারে একটা টেক্সটা পাঠালো। সাথে সাথে সারাহ’র ফোনে ফোনের মেসেজের সাউন্ড বেজে উঠল। সারাহ ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখল শ্যামসুন্দর পুরুষ দিয়ে সেভ নাম্বার থেকে মেসেজ এসছে,

” একটু কাছে আসবেন ম্যাডাম?”
সারাহ ফোনের স্ক্রিন থেকে সরাসরি চোখ রাখল রোশান সিদ্দিকীর দিকে। এক মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দিকে তাকিয়ে আছে। সারাহ একটু অবাক হল। এভাবে মেসেজ দিয়ে ডাকছেন কেন? ওহ বুঝছি! লোক সমাজে বউকে উচ্চস্বরে ডেকে লজ্জায় পড়ার মতন মানুষ উনি নন। নিজের বউ তাকে মানুষের মাঝে ডাকলে কি ইজ্জত যাবে। আজ উনি জোরে আমার নাম ধরে ডাকবেন তবেই যাবো। সব সময় মেসেজে ডাকাডাকির উত্তর সারাহ দেবেনা। সারাহ মেসেজের উত্তর দিলো,
” লজ্জা শরম ধুয়ে পানি দিয়ে গুলিয়ে লজ্জার শ্রাদ্ধ না করলে আপনার কাছে যাচ্ছিনা আমি।”
রোশান মেসেজের আবার রিপ্লাই দিলো,
” তোমাকে কাছে আনতে এই মুহুর্তে কি করা লাগবে আমার?”
সারাহ’র মাথায় দুষ্টুমি ছাড়া তো কিছুই খেলেনা। সে আবার রিপ্লাই পাঠালো,
” এখানে মাইক এনে উচ্চস্বরে ডাকতে হবে, একটু কাছে আসবেন ম্যাডাম।”
রোশান রিপ্লাই টা দেখে হতাস। তার বউ-এর পক্ষে এসব কিছুই অসম্ভব নয়। দেখা গেল সত্যিই মাইক একটা এনে সামনে হাজির করে বলবে,’ নিন বলুন।’ রোশান সেই ভ’য়ে উত্তর দিলো,

” প্রাইভেট ম্যাটার গুলা পাব্লিক করা কি খুব প্রয়োজন।”
” অবশ্যই প্রয়োজন।”
” ওকে আমি রাজি, এক শর্তে।”
” কি শর্ত?”
” নাইট রোমান্স গুলাও পাব্লিক লি শেয়ার করতে হবে।”
সারাহ চোখ পাকিয়ে রোশানের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
” আপনি না একজন শিক্ষক? শিক্ষক হয়ে এসব বলতে শরম করেনা?”
রোশান কপালের চামড়া কুঁচকে সারাহ’র দিকে অদ্ভুত চোখে তাকালো। সামনে মৃন্ময়’রা আছে কিছু বলতেও পারছেনা। খুব আস্তে বলল,
” ছাত্রী যখন বউ ম্যাটেরিয়াল হয়, আমাদের মত নিরীহ শিক্ষক দের ছাত্রীকেই পাত্রী বানাতে হয়। রোমান্স ও ছাত্রী নামক বউদের সাথেই করতেই হয়।”
সারাহ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,

” বউদের? কতগুলা ছাত্রীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন?”
” ওয়ান এন্ড ওয়ানলি মাই পারসোনাল স্টুডেন্ট আমার বউ।”
সারাহ’র ঝ’গ’ড়ু’টে চেহারার রুপ বদলে গেল। রোশান আবার ও সারার দিকে তাকিয়ে বলল
” তরীর মত পিচ্চির থেকে শিখো কীভাবে স্বামীকে ভালবাসতে হয়।”
সারাহ রোশান সিদ্দিকী’র গম্ভীর চেহারার দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনি মৃন্ময় এর থেকে শিখেন কীভাবে মানুষের মাঝে নিজের বউকে জড়িয়ে ধরতে হয়।”
“লোক দেখানো ভালবাসা কি উচিৎ। ”
“যে ভালবাসা মানুষকে দেখাতে প্রব্লেম সেই ভালবাসা দিয়ে কি করব।”
“হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট? আমি তোমাকে লোক সমাজে জড়িয়ে ধরি?”
“সেই সাহস আছে আপনার?”
উষ্কানি দিচ্ছো? পুরুষ মানুষকে এসব উষ্কানি দিতে নেই। আজ ঘরে চলো, তারপর দেখো কি করি আজ তোমার সাথে।”

সারাহ ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আল্টিমেটাম? ”
রোশান কিঞ্চিৎ পরিমাণ হেসে জানাল,
“মানসিকভাবে প্রস্তুতি নাও কতটুকু রোমান্স হজম করতে পারবে।”
“অস্তাগফিরুল্লাহ, অস্তাগফিরুল্লাহ, নাউজুবিল্লাহ। আপনি না শিক্ষক।”
রোশান এর কোনো উত্তর দিলোনা। সে থমথমে চোখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে রইলো।
দ্বীপ তন্ময়ের কাঁধে হাত রেখে জানাল,
“তন্ময় দেখলি মৃন্ময় আগে বেশী আবেগ দেখলে কত উপহাস করত। সেই ছেলে আজ কারো জন্য হাউমাউ করে কাঁদে। ভালবাসা কি অদ্ভুত তাইনা? একটা শক্ত মনকে কেমন ভেঙে চুরে দেয়।”
তন্ময় এর ছোঁয়ার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। মলিন মুখে জানাল,
“মানুষ ভাল না বাসলে বুঝেনারে। ভালবাসার কাছে সবাই দূর্বল।”

তারপর ই ওরা সবাই মিলে কালো গাড়িটায় উঠল। গন্তব্য কাজী অফিস। কাজী সাহেব কে আগেই ঠিক করা আছে। ওখানে গেলেই বিয়ে হবে।।গাড়িটা দশ মিনিট পর কাজী অফিসে পৌঁছালো। সব কিছু আগেই রেডি আছে। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হবে এখনি। এরই মাঝে রোশান সিদ্দিকী বলল,
” মৃন্ময় তোমার বাসায় কি একবার জানাবে?”
মৃন্ময় মলিন মুখে বলল,
” না স্যার, আমি ডিসিশন নিয়ে নিয়েছি। আমি আগে বিয়ে করব দেন সবাইকে জানাব।”
রোশান সিদ্দিকী আর কথা বাড়াল না। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হলে কাজী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৬

” দেনমোহর মত?”
মৃন্ময় তরীর দিকে তাকিয়ে হেসে দিয়ে বলল,
” আমাকে ওর নামে লিখে দেন কাজী সাহেব।”
তন্ময় আর দ্বীপ দু’জনে হো হো করে হেসে উঠল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৮