একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫০

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫০
Mousumi Akter

তরী গুটি সুটি মেরে বসে আছে মৃন্ময়ের খাটে। মৃন্ময় ওর বন্ধুমহলের সব চেয়ে দুষ্টু ছেলে। নিজের বউ -এর সাথে দুষ্টুমি করবে না তাই কখনো হয়? দুষ্টু বুদ্ধি মাথায় অভাব নেই। তরী ছোট মানুষ। ও কোনো দুষ্টামি নাও বুঝতে পারে। না বুঝলেই দুষ্টুমি করে মনা বেশী। মৃন্ময় তরীর নার্ভাস ফেসের দিকে তাকিয়ে বলল,
” মায়াবিনী, তোমাকে এমন নার্ভাস দেখাচ্ছে কেন? মেইন হু না! ”
তরীর চোখের ঘন পাপডি গুলা ঘন ঘন পড়ছে। মৃন্ময় আস্তে তরীর হাতের ওপর হাত রাখল। তরী লাফিয়ে উঠে হাতটা সরিয়ে নিলো। মৃন্ময় হেসে উঠল। হেসে উঠে উপরের ঠোঁট দিয়ে নিচের ঠোঁট চেপে ধরল। ত্রিশ সেকেন্ড পরে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে নিয়ে বললল,

” আর কিছু তো ধরছি না। শুধু হাত টা। হাতের ওপর হাতটা রাখতে দাও।”
তরী গোল গোল চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকাল। সে কি ভয়ানক লাজুকতা তরীর চোখ মুখ ভর্তি। সে মৃন্ময়ের থেকে আরো খানিকটা সরে বসল। মৃন্ময় মাথার চুলে হাত চালিয়ে বলল,
” আরে এখনি সরে বসছো কেন? এখন তো ফুলসজ্জা করছি না৷ ফুলসজ্জা করব রাতে। এই ভর সন্ধ্যায় আমাকে কি পা-গ-লে পেয়েছে ফুলসজ্জা করে ফুলসজ্জার বারোটা বাজাই। আমার জীবনের প্রথম ফুলসজ্জা তা আমি দারুনভাবে ইনজয় করব রাতে। ”
লজ্জায় তরীর মাথাটা যেন কে’ টে যাচ্ছে। ছিঃ ছিঃ এসব কি বলছে। লজ্জায় তরী একভাবে নিচু দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময় তরীর কাছাকাছি গিয়ে বলল,
” বুঝলাম না রোশান স্যারের সামনে, দুনিয়ার মানুষের সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারলে। এই বন্ধ ঘরে কীসের লজ্জা। তোমার উচিৎ না এইবার আমাকে আরো ভয়ংকর ভাবে জড়িয়ে ধরে বাচ্চার বাবা টাবা বানিয়ে ফেলা। দেখো আই আম রেডি। তুমি চাইলেই ট্রাই করতে পারো।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তরী এইবার লজ্জায় বোধহয় ম’রা ই যাবে। কি বিশ্রী কথা বলছে এই মানুষ টা। এমনিই সে টেনশনে ম’রে যাচ্ছে। ঘেমে যাচ্ছে সর্বাঙ্গ। তরী উঠে হাঁটা দিলো। মৃন্ময় তরীর হাত টেনে ধরে বলল,
” লজ্জা ও মেয়েদের অনেক বড় একটা সৌন্দর্য্য। এইযে তুমি লজ্জা পাচ্ছো, নার্ভাস আছো এটাও দারুণ লাগছে আমার কাছে। আর কিছু বলছি না। বসো এখানে। কি নিয়ে নার্ভাস শেয়ার করো প্লিজ!”
তরী কাঁপা কণ্ঠে বলল,

” আমার খুব টেনশন হচ্ছে। আপনার বাবা এসে যদি কিছু বলেন।”
মৃন্ময় জানে তার বাবা তার প্রতি কত দূর্বল। একটু রাগি থাকলেও ছেলের প্রতি সে ভীষণ দূর্বল। ছেলে যা বলবে তাই মেনে নিবে। মৃন্ময় খুব কনফিডেন্সের সাথে বলল,
” আরে টেনশন কেন করছো? বাবা এসে হাসি মুখে তোমাকে গ্রহন করবেন।”
” যদি এমন টা না হয়।”
মৃন্ময় তার কনফিডেন্সের মাত্রা বাড়িয়ে বলল,
” আমি হলাম একমাত্র ছেলে। আমার একটা আলাদা পাওয়ার আছে এ বাসায়। আমার খুশি ই আমার বাবার খুশী।”
তরীর মন কেন যেন তা মানতে চাইছে না। তার গলা বুক শুকিয়ে আসছে চিন্তায়। শুকিয়ে আসা মুখে মৃন্ময়কে বলল,
” আমার না খুব ভয় হচ্ছে। যদি মেনে না নেন।”
মৃন্ময় জানে তার বাবা মেনে নিবেন। সে তরীকে বিশ্বাস করাতে বলল,
” আরে পা-গ-লি। যদি ও বা বাবা কিছু বলেন তো আম্মু আছেনা। আম্মু বাবাকে বুঝাবে। বাবা আম্মুর সব কথা শোনে। ”

তরীর বুক দুরুদুর করছে ভ’য়ে। সে ভ’য়ে শুকনো মুখে আবার বলল,
” যদি বাবা মায়ের কথা ও না শোনেন?”
” আরে আম্মু খুব জেদি। বাবা বাড়াবাড়ি করলে আম্মু ব্যাগ গুছিয়ে হাঁটা দিবে। আম্মু পিহুর চেয়েও আমার প্রতি দূর্বল বেশী। আম্মু আমার জন্য এ ঘর সংসার ছেড়ে দিতে দু’বার ভাববে না। ”
তাও তরীর চিন্তা যাচ্ছেনা। সে চিন্তায় পা-গ-ল হয়ে যাচ্ছে। কেন যেন মনে হচ্ছে বাবা এসেই ঝামেলা করবেন। তাকে মেনে নিবেনা। কারণ আগে একবার অনেক ঝামেলা হয়েছে। তার বাবা অনেক খারাপ কথা বলেছিলো। দুঃচিন্তায় তরী ঘেমে যাচ্ছে। মৃন্ময় তরীর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,
” অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। এত চিন্তা করছো দেখবা কিছুই হবেনা।”
এমন সময় পিহু এসে দরজায় নক করল। কেমন যেন ভারী কণ্ঠে বলল,
” ভাইয়া বাবা এসছেন।”

মৃন্ময় তরীর হাত ধরে বলল,
” বাবাকে গিয়ে সালাম করবা। বাবা বলে ডাক দিবা। দেখবা বাবা সব ভুলে যবেন। তোমাকে পিহুর মত করে আগলে রাখবেন।”
মৃন্ময়ের মুখে হাসি। সে জানে আজ থেকে তার সব কষ্ট শেষ। তার জীবনের সব চেয়ে মূল্যবান জিনিস আজ সে পেয়ে গিয়েছে। ভেবেই শান্তি লাগছে রোজ রাতে তরীকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঘুমোবে। ভাবতে ভাবতে মৃন্ময় ড্রয়িং এ প্রবেশ করল। মৃন্ময়ের বাবা তখন পানি খাচ্ছিলেন। পানি খাওয়া কেবল শেষ হয়েছে। তখন ই চোখ গেল মৃন্ময় আর তরীর দিকে। ঘটনা বুঝতে চোঝে চশমা খুলে সেন্টার টেবিলের ওপর রাখলেন। মৃন্ময়ের মায়ের দিকে তাকালেন। মৃন্ময়ের আম্মু মাথা নিচু করলেন। তখন তিনি পিহুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
” ওই অসভ্য লোকের মেয়েটা এখানে কেন পিহু?”
পিহু কিছু বলল না। তখন ই মৃন্ময়ের বাবা চোখ বোলালেন তন্ময় আর দ্বীপের দিকে। বেশ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
” কি সমস্যা? তন্ময় তুমি কিছু জানো? ওই মেয়েটা আমার বাড়িতে কেন?”
তন্ময় স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,

” আঙ্কেল আপনি মাথা ঠান্ডা করুন। শান্ত হন প্লিজ!”
” কেন শান্ত কেন হতে হবে? কি সমস্যা তোমাদের?”
তন্ময় ছাড়া এই কথা মৃন্ময়ের বাবার সামনে বলার মত কেউ নেই। তন্ময়ের অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্য সে সব জায়গা সব স্থানে সবার প্রিয়। সে নির্ভয়ে সবাইকে সব বলতে পারে। তন্ময় মৃন্ময়ের দিকে তাকালো। মৃন্ময় ইশারা দিতে বলার জন্য। তন্ময় তখন বলল,
” আঙ্কেল ওরা বিয়ে করেছে।”
মৃন্ময়ের বাবা তরীর পোশাক দেখেই আন্দাজ করতে পেরেছেন তরী বাসা ছেড়ে এসেছে এমন কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু বিয়ে এত বড় ঘটনা ভাবতে পারেন নি। তিনি বসা থেকে উঠে দঁড়িয়ে আকাশ থেকে পড়ার ন্যায় বললেন,
” বিয়ে? কার বিয়ে?”
তন্ময় বলল,

” আঙ্কেল মৃন্ময় আর তরী বিয়ে করেছে।”
মৃন্ময় -এর বাবা উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন,
” কে দিয়েছে ওদের বিয়ে? ”
তন্ময় বলল,
” আঙ্কেল আমরা।”
মৃন্ময়ের বাবা ভয়ানক ভাবে রেগে গিয়ে বললেন,
“কেন?”
দ্বীপ বলল,
” প্লিজ আঙ্কেল শান্ত হন। ওরা দুজন দুজনকে ছাড়া মা’রা যেত আঙ্কেল। বিয়ে না দিলে তরী আবার হারিয়ে যেত। বিয়ে না দিলে ওরা ভাল থাকত না আঙ্কেল। ”
মৃন্ময়ের বাবা ভয়ংকর এক চিৎকার দিয়ে বললেন,
“তোমরা কি ওর গারডিয়ান। যে ওর বিয়ের দায়িত্ব তোমরা নিয়েছো। বিয়ে যখন তোমরা দিয়েছো তোমাদের বাসায় নিয়ে যাও এখানে এনেছো কেন?”
মৃন্ময় বলল,

” বাবা ওদের দোষ নেই। ওরা আমাকে বিয়ে দেওয়ার কেউ না। বিয়ে আমি নিজেই করেছি। ”
” কাকে বিয়ে করেছো? একটা রাস্তার মেয়ে ওর চেয়ে ভাল আছে। ওর ফ্যামিলির যে ব্যাক গ্রাউন্ড, ওর বাবার চরিত্রের যে সমস্যা তুমি ভাবলে কিভাবে এমন একটা মানুষের মেয়েকে আমার বাড়ির বউ বানাব। আমি একটা রাস্তার মেয়েকে বাড়ির বউ বানালেও ওই অভদ্র লোকের মেয়েকে নয়।”
মৃন্ময় বেশ শক্ত গলায় বলল,
” বাবা ওর বাবার চারিত্রিক সমস্যার জন্য ওর দোষ নেই। ও নিজেই সেখানে অত্যাচারিত। ”
মৃন্ময়ের বাবার মাথায় আ-গু-ন। তিনি ভয়ানক ভাবে রেগে গিয়ে বললেন,
” তুমি এখনি এই মেয়েকে আমার বাসা থেকে বের করো মৃন্ময়। আমি বেঁচে থাকতে এই মেয়েকে কোনদিন মেনে নিবোনা।”
মৃন্ময়ের মা বললেন,
” ও এখন তোমার ছেলের বউ। এসব বলে শুধু শুধু মেয়েটার চোখে ছোট হচ্ছো কেন?”
” তুমি একটা কথাও বলবে না। তুমি যদি এ ব্যাপারে কথা বলো আমার সাথে কোনো সম্পর্ক তোমার থাকবে না।”
পিহু বলল,
” বাবা তরী নিষ্পাপ। ওর দিকে তাকিয়ে ওর বাবার অন্যায় ক্ষমা করে দাও।”
তন্ময় বলল,

” আঙ্কেল আমরা আপনাকে বুঝিয়ে বলছি। প্লিজ শান্ত হন।”
মৃন্ময়ের বাবা তন্ময়ের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বলল,
” চুপ! বেয়াদব কোথাকার। তোমাদের মত রাস্তার ছেলেদের সাথে মিশেই আমার ছেলের আজ এত অধঃপতন। তোমার নেই বাবা। তুমি কি বুঝবে একজন বাবার তার ছেলের প্রতি ভালবাসা। তোমার যদি নিজের বাবা থাকত তাহলে তুমি বুঝতে বাবা আর ছেলের সম্পর্ক। তোমাকে আমি ভাল ভাবতাম। তুমি দেখছি সব চেয়ে বেয়াদব অসভ্য। এই সব কিছুর জন্য তোমরা দায়ী।”
দ্বীপ উত্তেজিত হয়ে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৯

” আঙ্কেল তন্ময় কে এসব কি বলছেন আপনি। এখনে ওর একার দোষ নেই।”
” তুমি একটা কথা ও বলবা না। বেয়াদব ছেলে। তোমাদের মত বেয়াদব অসভ্য ছেলে দুইটার সাথে মিশে আজ আমার ছেলে এত খারাপ হয়েছে। তোমাদের মত পরিবারের ছেলের সাথে মিশতে দেওয়া আমার ভুল হয়েছে। ছোট লোক গুলা। তোমাদের জন্য আমার আলিশান বাড়ি ছেড়ে মেসে গিয়ে থাকে। পাঁচ লাখ টাকার বাইক ছেড়ে আড্ডা দিয়ে বেড়ায়। আজ সব কিছুর জন্য তোমরা দায়ী।”
মৃন্ময় রাগান্বিত হয়ে বলল,
” বাবা তুমি যদি আর একটা বাজে কথা ও ওদের বলো আমি বাড়ি ঘরে আ-গু-ন লাগিয়ে দিবো। তোমাদের মত ওরা আমার জীবনের অনেক বড় একটা অংশ। তুমি আমাকে যা ইচ্ছা বলো। ওদের একটা বাজে কথা ও বলবে না।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫১