একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৫
Mousumi Akter
তন্ময়ের কথা শুনে ছোঁয়া তন্ময়কে ছেড়ে দিলো। বুকের ভেতরটা অজানা এক ভ’য়ে বাড়ি মে-রে উঠল। তার তন্ময় তো এমন প্রশ্ন করতে পারেনা। ছোঁয়ার ছেড়ে দেওয়া দেখেই তন্ময় বুঝতে পারল ছোঁয়া নির্ঘাত তাকে ভুল বুঝেছে। ভুল না বুঝলে এভাবে ছেড়ে দিতনা। ছোঁয়ার চোখ মুখ অস্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। তন্ময় ছোঁয়ার দুই বাহুতে হাত রাখল। খুব মোলায়েম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” ধরার আগেই ছেড়ে দিলে কেন বেবি?”
তন্ময়ের মুখে তুমি সম্মোধন টা অদেখা এক মোহনীয়া সুঘ্রাণের মত লাগে ছোঁয়ার কানে। নিমিশেই অশান্ত হৃদয়টা শীতল হয়ে গেল। ছোঁয়া কিছু বলার আগেই তন্ময় বলল,
” আমিতো বহুবার তোমাকে বলেছি চলে আসো আমার কাছে। তুমি তো আসতে চাওনি। কারণ তোমার বাবা তোমাকে অনেক ভালবাসে। সেই ভালবাসা উপেক্ষা করে আমার কাছে এসেছো মানে আমাকে তুমি তোমার বাবার ভালবাসার সমপরিমান বা তার চেয়েও বেশী ভালবেসে ফেলেছো। আমি জানতে চাইছি তুমি তো তোমার বাবাকে প্রচন্ড রকমের ভালবাসো, তাকে ছাড়া থাকতে পারোনা। তাকে ছেড়ে এসছো ভেবে এসছো। কষ্ট হবেনা।”
ছোঁয়া আবার কাঁদল। কেঁদে বলল,
” তোকে ছাড়া যে কষ্ট পাচ্ছি তার চেয়ে অনেক কম কষ্ট হবে আমার। আমার পৃথিবীর কাউকে লাগবেনা তন্ময়। শুধু তোকে লাগবে। আমাকে কি এখন ফিরিয়ে দিবি?”
তন্ময় বিশাল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” যাকে পেতে রোজ সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছি তাকে ফিরিয়ে দিই কীভাবে?”
দ্বীপ পেছন থেকে বলে উঠল,
” উঁহু আর যেন জড়িয়ে ধরিস না। আমি ভীষণ লজ্জা পেয়েছি একটু আগে। এইভাবে পাব্লিক প্লেসে জড়িয়ে ধরে আমার মত সিঙ্গেল কে বিবাহের উষ্কানি দিচ্ছিস তোরা।”
ছোঁয়া এইবার লজ্জা পেল। আসলেই তো, সে দ্বীপ আর সারাহ’র সামনে তন্ময়কে জড়িয়ে ধরার মত লজ্জাজনক কাজ করেছে। ছোঁয়া চোখের পানি মুছল। সারাহ আর দ্বীপের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
” আমাকে কেউ মিস করিস নি জানি। সবাই আমাকে ভুলে গিয়েছে। ”
দ্বীপ বলল,
” তোরে সমুদ্রে ডুবিয়ে মা’ র ‘ ব এইবার। সমস্যা কি তোর? আমাদের এতগুলা মানুষরে অশান্তিতে রেখে কই পালাইছিলি। আবার ম- র- তে ফিরে আসছিস কেন? এমনে তোর চিন্তায় বাঁচিনা তাতে তোর শোকে কাতর শহরের নতুন দেবদাস তন্ময় আহমেদ। ওদিকে মৃন্ময় বারেবার ম’ র’ তে যাচ্ছে। এই দুই দুইটা প্রেমে স্যাকাখোর কে আমি একা সামলাইতে গিয়ে যে প্যারা খাইছি তাতে নিজের প্রেমের শখ মিটে গিয়েছে। খুব কষ্টে ফেসবুকে একটা প্রেমিকা জুটিয়েছিলাম তা তোদের চক্করে ব্রেকাপ হবে৷ দু’দিন ধরে অন লাইনেও দেখছিনা। তোরা দুইটা যতটুকু জ্বালাইছিস তার চেয়েও হাজারগুন জ্বালাব ব্রেকাপ হলে। রিভেঞ্জ ক্যামনে নিই দেখিস।”
তন্ময় এগিয়ে এসে ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তুই ও স্যাকা খাবি? সিরিয়াসলি।”
দ্বীপ তন্ময়ের কথা শুনে অবাক করা কণ্ঠে বলল,
” হোয়াট ডু ইউ মিন ভাই? আমিও স্যাকা খাবো এ কোন ধরণের কথা। আমার মত একজন রিয়েল লাভার কে এভাবে চরম অপমান করা হচ্ছে কেন? ইচ্ছা করতেছে সমুদ্রে ঝাপ দিই একটা৷ ”
ছোঁয়া বলল,
” দে তাইলে? কার জন্য অপেক্ষা করছিস। আমি দশ গুনতেছি তুই ঝাপ দে। ”
দ্বীপ বলল,
” এভাবে দেশের একজন নিরীহ সিটিজেন কে সু’ ই’ সা’ ই’ ডে র জন্য অনুপ্রেরণিত করার জন্য তোদের নামে মামলা দিবো আমি। কঠিন মামলা। ”
অনেকদিন পর ছোঁয়াকে পেয়ে ওরা ভীষণ খুশী আর আনন্দিত। ভেতর থেকে আনন্দ যেন উথাল -পাথাল ভাবে ঢেউ খেলছে। কিন্তু সারাহ আজ নিশ্চুপ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে অন্য মনস্ক হয়ে আছে। অন্য মনস্কভাবে ওদের কথায় সায় দিচ্ছে। অনিচ্ছাকৃত মৃদু হাসছে। সেই হাসিতে প্রাণ নেই। ব্যাপারটা সবার আগে তন্ময় খেয়াল করল। অন্য দিন হলে সারাহ একাই মাতিয়ে রাখত। কারণ ফ্রেন্ড সার্কাল এর মাঝে সারাহ সব চেয়ে কথা বলে। ওদের ছয়জনের সর্দারনী সারাহ একা। সারাহ’র চোখের দৃষ্টি ওদের থেকে দূরে সাদা শার্ট পরিহিত একটা ছেলর দিকে। ছেলেটা ননস্টপ সিগারেট টানছে। এই ছেলেটা এইখানে কেন?..
সারাহ ওদের মাঝখান থেকে উঠে গেল। কিছুটা দূরে গিয়ে বেশ অবাক হল। সারাহ’র সন্দেহ ঠিক হল। এটা তো ওশান। সারাহ’র দেবর। ওশান কুয়াকাটা কখন এলো। বন্ধুদের সাথে নিশ্চয়ই ঘুরতে এসছে৷ কিন্তু আজব ব্যাপার! এত বড় সৈকতে ঘুরে ঘুরে ওশান তাদের কাছাকাছি কেন?
তন্ময় বলল, ” চল তো সারাহ’র কি প্রব্লেম দেখি। ”
দ্বীপ বলল, ” তোরা গল্প কর, আমি গিয়ে দেখছি, ওরে জ্বী’ ন ধরল কীনা! ”
বলেই দ্বীপ এগিয়ে গেল। দ্বীপ সারাহ’র কাছাকাছি গিয়ে বলল,
” এ্যানি প্রব্লেম সারাহ। ”
সারাহ তন্ময় চোখে ওশানের দিকে থেকে বলল,
” না। ”
এরই মাঝে ওশান ফোন কানে দিয়ে অন্যদিকে হেঁটে চলে গেল। দ্বীপ খেয়াল করল সারাহ ওই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে। দ্বীপ প্রশ্ন করল,
” ছেলেটা কে? চিনিস তুই?”
সারাহ সাথে সাথে ফোন বের করে বলল,
” ওয়েট। ”
ফোনে রোশান সিদ্দিকী’র নাম্বার ডায়াল করতে করতেই রোশান সিদ্দিকী’র ফোন এলো। সারাহ একটু সাইডে গিয়ে ফোন রিসিভ করে বলল,
” সারাহ উত্তেজিত গলায় বলল, জানেন,আমি আপনাকেই ফোন দিচ্ছিলাম। কেবল ই ফোন হাতে নিয়েছিলাম আপনাকে ফোন দেওয়ার জন্য। এর মাঝেই আপনি ফোন দিয়েছেন।”
রোশান সিদ্দিকী বরাবরের ন্যায় গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” এত রাতে তুমি একা একা কার সাথে আছো বিচে?”
সারাহ খুব এক্সসাইটেড কণ্ঠে বলল,
” আমি একা নই, সাথে দ্বীপ, তন্ময় আর ছোঁয়া আছে।”
“এখন কে আছে পাশে?”
” দ্বীপ আছে।”
রোশান সিদ্দিকী দাঁত কিড়মিড় করে বললেন,
” হোয়াট টাইম ইজ ইট নাউ সারাহ! এত রাতে তুমি দ্বীপের সাথে কি করছো? তোমাকে আমি স্বাধীনতা দিয়েছি তার মানে এই নয় তুমি আমার স্ত্রী হয়ে একা একা একটা ছেলের সাথে বীচ দিয়ে ঘুরে বেড়াবে। ”
সারাহ ফিঁসফিসিয়ে বলল,
” ও একটা ছেলে নয়, ও দ্বীপ। ”
“দ্বীপ তাহলে ছেলে নয়?”
” ছেলে বাট এমন কোনো ছেলে নয় যার দ্বারা আমার ক্ষতি হতে পারে।”
” আরে দ্বীপ কেন? আমি তো তোমার আপন ভাই-এর সাথেও এত রাতে একা ছাড়ব না। তুমি বলেছিলে ছোঁয়ার সাথে থাকবে, সেটা না করে তুমি দ্বীপের সাথে ঘুরছো?”
সারাহ কেঁদে দিলো। কান্না ভেজা কণ্ঠে বলল,
” তাই বলে আপনি আমাকে বকবেন? আবার সন্দেহ ও করবেন? তাও আমার ফ্রেন্ডস দের সাথে।”
রোশান সিদ্দিকী বেশ ধমকের স্বরে বললেন,
” একদম কেঁদে আমাকে ইমোশনাল ব্লাকমেইল করবে না সারাহ! তোমাকে নিয়ে আমি কতটা চিন্তিত সেটা তোমার ধারণা নেই। আমার মনে হচ্ছে আমার জা_ন ভেতর থেকে বাহিরে বের হয়ে গিয়েছে। যতক্ষণ না খাঁচায় বন্ধি করতে পারছি শান্তি পাচ্ছি না। ” বলেই রোশান সিদ্দিকী ফোন কেটে দিলো।
এমন সময় দ্বীপ ফোনে কথা বলতে বলতে সারাহ’র কাছে এলো। ও ফোনে বলছে,
” জি, স্যার, আচ্ছা স্যার। আপনি একটুও চিন্তা করবেন না। আমরা আছি, জা-ন দিয়ে সারাহ’কে আগলে রাখব।”
সারাহ চোখের পানি আড়াল করে বলল,
” কে ফোন দিয়েছে?”
” রোশান স্যার, বললেন, তোকে যেন দেখে রাখি। তুই একটু ডিস্টার্ব আছিস। সত্যি অনেক ভাগ্য করে এমন কেয়ারিং স্বামী পাওয়া যায়। বাট কি হয়েছে তোর সারাহ?”
রোশান সিদ্দিকী তন্ময় আর ছোঁয়াকেও কল দিয়েছিলেন। ওরাও সারাহ’র কাছে চলে এলো।
সারাহ বালুতে রোশান সিদ্দিকী’র নাম লিখতে লিখতে কল্পনায় চলে গেল। ১৬ ঘন্টা আগের কথা…….
তরীর বাবা আর রোশান সিদ্দিকী’র তরীকে নিয়ে কথা হচ্ছে। তরীর বাবা জিজ্ঞেস করল,
” তরী কোথায়?”
রোশান সিদ্দিকী বলল,
” আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। ”
তরীর বাবা বলল,
” আমাকে জানাবেন না কোথায় বিয়ে দিয়েছেন?”
রোশান সিদ্দিকী বলল,
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫৪
” মেয়ে আর জামাই হানিমুনে গিয়েছে, আপনার সামনে এসে হাজির হবে শিঘ্রই। আমি আশা করছি আপনার জামাই দেখে পছন্দ হবে।”
তরীর বাবা বলল,
” সে বিশ্বাস আমার আছে। ”
এরই মাঝে সারাহ’র ফোনে একটা কল আসে।