একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৭

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৭
Mousumi Akter

মৃন্ময় হেলে দুলে ছাদ থেকে নামছে দু’হাতে দু’টো ফুলের ব্যাগ নিয়ে।দো’তলায় নামতেই মুখোমুখি হল পিহু’র সাথে।পিহু কোমরে হাত বেঁধে চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে মৃন্ময়ের দিকে।পিহুর এমন সন্দেহভাজন চাহনি দেখে মৃন্ময় ভ্রু কুঁচকালো।ভ্রু কুঁচকে পিহুর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে ডান ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“সমস্যা কী এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?তোর চাহনি দেখে মনে হচ্ছে যেন আমি একটা চো’র।”
পিহু তার চোখ মুখের অবস্থা একইরকম রেখে বলল,

“তুমিতো চোরই ভাইয়া। চো’র ছাড়া কি?”
মৃন্ময় ডান হাতের ব্যাগ ছেড়ে দিয়ে হাত উঁচু করে চাপা কন্ঠে বলল,
“দিবো একটা বেয়াদব ছেড়ি কোথাকার।আমার মত একটা ভদ্র ছেলেকে চো’র অপবাদ দিচ্ছিস। আমি না তোর ভাই। এসব কথা পাঁচকান হলে জীবনে বিয়ে হবে আমার?কোন মেয়ে চাইবে জীবনসঙ্গী হিসাবে একজন চো’র কে বেছে নিতে। জীবনে কিছু চু’রি করেছি আমি?”
মৃন্ময় হাত উঁচু করাতে পিহু পেছন দিকে ঝুকল খানিকটা।মৃন্ময় হাত নামালে পিহু আবার সোজা হল আগের ন্যায়।মৃন্ময়ের আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলল,
“চু’রি করোনি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে?”
মৃন্ময় কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি চু’রি করেছি?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“সারাজীবন আমার বই এর ভাজে জমানো টাকা, আমার ব্যাংকে জমানো টাকা আমার ই চুলের ক্লিপ দিয়ে বের করে নিয়েছো। যা কোটি টাকার সমান।স্টুডেন্ট লাইফে জমানো টাকার বহুত মূল্য।আবার বলছো কি চু’রি করোনি।”
“ওসব তো ভাইগত অধিকার। ওটাকে চু’রি বলেনা বেয়াদব মেয়ে।ভদ্রতার তো লেশমাত্র নেই।বড় ভাইয়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় তাই জানিস না।বড় ভাইকে সম্মান দিতে শেখ।বড় ভাই হল পিতৃতূল্য। বাবার অভাব পূর্ণ করে।পাশের বাসার সাদিয়াকে দেখেছিস কীভাবে তার বড় ভাই -এর কাপড় কেচে দেয়, পা টিপে দেয়, খাবার নিয়ে টেবিলে দিয়ে আসে, মাছের বড় মাথা পাতে তুলে দেয়।”
“আমিও তো দিই।”

“হ্যাঁ দিস, বাবার কানে নালিস টাই ঠিকঠাক ভাবে দিস।এখন বল, এখানে দাঁড়িয়ে কি পাহার দিচ্ছিলি।”
“তুমি আবার সিগারেট খেতে ছাদে গিয়েছিলে।এখনি যদি বাবাকে না বলি।”
“আমার সিগারেট নিয়ে তোর সমস্যা কি?”
“কারণ তোমার হার্টে সমস্যা হলে ভাই হারাব আমি। আমি ছাড়া আর কার সমস্যা হবে।”
ভাই এর প্রতি বোনের ভালবাসার দৃষ্টান্ত’র শেষ নেই।মৃন্ময় আর পিহু সারাদিন ঝ’গ’ড়া করে।দিন শেষে ওদের ভালবাসার ঘাটতি নেই।মৃন্ময় পকেট থেকে এক টাকার দু’টো চকলেট পিহুর হাতে তুলে দিতে দিতে বলল,
“তোকে চকলেট খাওয়াতে খাওয়াতে ফ’কির হয়ে গেলাম।”

এমন সময় তরী দরজা খুলল।দরজা খোলার শব্দে মৃন্ময় আর পিহু দু’জনে তরীর দিকে। তরীকে দেখেই মৃন্ময় কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেল।প্রেম ভালবাসার বিরুদ্ধ ছেলেটার হঠাৎ এমন হচ্ছে কেন।কতশত মেয়ে চোখের সামনে দিয়ে গিয়েছে আর এসছে মৃন্ময়ের কোনদিন এমন অনুভূতি হয়নি।সে মাঝ রাত পর্যন্ত বাইরে আড্ডা দেয়,ট্যুরে যায়, বন্ধুদের সময় দেয়,সিগারেট খায়,মুভি,নাটক দেখে সময় কাটায়।প্রেম ভালবাসা একটা প্যারা তার কাছে।মায়া কি জিনিস সে বোঝে না। মৃন্ময় এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তরীর দিকে।তরী মৃন্ময়ের দিকে তাকাল না।সে পিহুর দিকে তাকিয়ে বলল,

“পিহু আপু আমাদের রুমের একটা লাইট ডিস্টার্ব দিচ্ছে।ঠিক করা যাবে।”
“আচ্ছা ঠিক করে দিচ্ছি।”
“তাহলে ভেতরে আসুন।” বলেই তরী আবার রুমে প্রবেশ করল।
তরী চলে গেলে মৃন্ময় তরীর পরিচয় সম্পর্কে সিওর হতে আবার জিজ্ঞেস করল,
“মেয়েটা কে রে?”
পিহু ফিসফিস করে বলল,

“ওর বাবা বিয়ে করে এনেছে।আমার হাতে ৫০০০ টাকা দিয়ে বলেছে যেন ভাল করে বাসর ঘর সাজিয়ে দিই।”
মৃন্ময় খানিকটা অবাক হয়েই বলল,
“সত্যি কি ওর বাবা ওর বয়সী মেয়ে বিয়ে করেছে।”
“হ্যাঁ ভাইয়া,একদম বয়স কম একটা মেয়ে।তাও রিলেশন করে।সে মেয়ে ভালবেসে পালিয়ে এসছে।”
“তাই নাকি। চল গিয়ে দেখে আসি।”
তরী ডায়নিং গোছাচ্ছে।তখন ই মৃন্ময় আর পিহু প্রবেশ করল। পিহুই আগে কথা বলল।তরীকে বলল,
“তোমার ঘর সাজাতে এসছি তরী, চলো যাই।”
“আমি যাব’না। আপনারা যান।”

“তুমি না গেলে হবে।একা একা কি করবে এখানে তুমি।”
“আমার ঘর সাজানো নিয়ে কোনো আইডিয়া নেই। আমি কিছুই বুঝি না।”
“তোমাকে বুঝতে হবেনা।চলো তোমার বাবার রুমে।”
এমন সময় হাসি,খুশি মুডে জুবায়ের আহমেদ আর তার নতুন ওয়াইফ দিশা বেরিয়ে এল।জুবায়ের আহমেদ হাসিখুশি মুখে বলল,
“এই নাকি তোমার বড় ভাই।”
“হ্যাঁ। ”
জুবায়ের আহমেদ হাসতে হাসতে বললেন,
“কি যেন নাম তোমার ভাই?”

মৃন্ময় ছানাবড়া চোখে তাকাল। তার বাবার বয়সী একজন লোক কীনা তাকে ভাই বলে ডাকছে।কচি মেয়ে বিয়ে করে কি এই লোক নিজেকে কচি ভাবছে।মৃন্ময় যেন আকাশ থেকে পড়ল।সে আকাশ থেকে পড়ায় ন্যায় অবাক হয়ে বলল,
” আমাকে ভাই বললেন নাকি আঙ্কেল?”
জুবায়ের আহমেদ সভাবসুলভ হেসে জবাব দিলেন,
“তোমার বাবা আমার চাচা হন সম্পর্কে।তাই তুমি আবার ভাই হও।”
মৃন্ময় তরীর দিকে তাকিয়ে মাথার পেছনে চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“শালার আপনাকেই আমার ভাই হতে হল।”
“তাতে সমস্যা কি?”
মৃন্ময় সংকোচ ছাড়া বলল,
“দুঃখিত আঙ্কেল আপনাকে আমি ভাই ভাবতে পারব না।”
পিহু বলল,

“ভাইয়া উনাকে আমি ভাই ডেকেছি উনার ওয়াইফ কে ভাবি।এখন তোমাকেও ডাকতে হবে।দূর সম্পর্কের বাবার পরিচিত।সে সূত্রে বাবা উনার চাচা হয়।”
মৃন্ময় তীব্র অস্বস্তি নিয়ে থুতনি চুলকাতে চুলকাতে বলল,
“দু’দিন পরে এমনিই সম্পর্ক পাল্টে যাবে।এখন আবার ভাই ডেকে লাভ কী?”
জুবায়ের আহমেদ বললেন,
“কেন?”
“কারন আপনারা তো সারাজীবন এখানে থাকবেন না।তাই বললাম আরকি।”
“আচ্ছা বুঝেছি।ঘরটা সুন্দর করে সাজিয়ে দাও।উপহার আছে তোমাদের জন্য।তরী যাও ওদের জন্য নাস্তা রেডি করো।”

তরী ধীর পায়ে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াল।
মৃন্ময় মনে মনে বলল, ‘ তোর কাছে নাস্তা খেতে কে চেয়েছে রে মাদারবোর্ড ।এমনিই বাবার পাতানো দূর সম্পর্কের ভাতিজা হয়ে আমাকে বিপদে ফেললি।মেয়েটা চোখের সামনে ছিলো তাকেও কিচেনে পাঠাই দিলি।এখন কি তুই আর তোর বউ এর থোবড়া দেখব।’
মৃন্ময় খাটের উপর উঠে দাঁড়াল।সে আর পিহু খাট সাজাচ্ছে।জুবায়ের আহমেদ বললেন,
“খুব ভাল করে খাট সাজাও। দিশা আবার খুব রুচিশীল মেয়ে বুঝলে।”
মৃন্ময় এবার দিশার দিকে একবার তাকাল।চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,

“এই বয়সে যে আপনাকে বিয়ে করতে পারে, তার রুচি যে কেমন তা আমার বুঝতে বাকি নেই বড় ভাই।আপনাকে দেখেই বোঝা যায় আপনি অনেক রুচিসম্মত লোক।”
জুবায়ের আহমেদ মৃন্ময়ের মিথ্যা প্রশংসা ধরতে না পেরে আনন্দে গদগদ হল।পিহুর মুখ টিপে হাসছে।তার বুঝতে বাকি নেই মৃন্ময় পঁচালো।জুবায়ের আহমেদ আবার বললেন,
“খাট টা একদম পারফেক্ট ভাবে সাজিয়ে দেও।”
মৃন্ময় বার বার উঁকি ঝুকি দিয়ে দেখছে তরী আসছে কীনা।মৃন্ময় এর মনে কিছু অশ্লিল কথা আসল জুবায়ের আহমেদ কে বলার জন্য।কিন্তু ভবিষ্যৎ শ্বশুর বলে মুখে এসেও আটকে গেল।মৃন্ময় পিহুর কানে কানে বলল,
“মেয়ের বাপ তোকে বোন ডাকছে,আবার মেয়েও দেখলাম আপু ডাকল।”
পিহু হেসে বলল,

“ওর আন্টি ডাকতে খেয়াল থাকে না।”
এমন সময় তরী নাস্তার ট্রে নিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল।মৃন্ময় তরীকে দেখেই জুবায়ের আহমেদ কে একটা মালা দেখিয়ে বলল,
“ভাই মালাটা ভাবির গলায় পরিয়ে দিন।”বলেই ছুড়ে মারল।এমন ভাবে মা’র’ল তরীর গলায় গিয়ে পড়ল।মৃন্ময় ইচ্ছা করেই মা’র’ল।বড় বড় হলুদ গাঁদার ফুল তরীর গলায় পড়তেই তরীর মুখটা কেমন হলদেটে আকার ধারণ করল।অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে মুহূর্তের মাঝে তরীকে।মৃন্ময়ের শরীরে যেন ঝিম ধরে এল।সে হা করে তাকিয়ে রইলো তরীর দিকে।তরী চোখ তুলে তাকাল মৃন্ময়ের দিকে।দু’জনের দৃষ্টির আদান-প্রদান হচ্ছে।এক নাগাড়ে দুজন – দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছে।জুবায়ের আহমেদ কি বলবে বুঝতে পারছে না।কিছু বলার আগেই তরী মালাটা খুলতে গেল।তখন ই মৃন্ময় বলল,

” ওটা আর খুলে লাভ নেই। একজনের গলার মালা নতুন বউ এর গলায় পরানো যাবেনা।” বলেই মৃন্ময় আরেকটি মালা জুবায়ের আহমেদের দিকে ছুঁড়ে মেরে বলল,
“এটা পরিয়ে দিন।”
জুবায়ের আহমেদ মালাটা পরিয়ে দিয়ে বললেন, “ফুটফুটে লাগছে তোমাকে।”
মৃন্ময় রাগে ক্ষীপ্ত হয়ে মনে মনে বলল, “শালা লুইচ্চা।এভাবেই মেয়ে পটিয়েছে বোঝা যাচ্ছে।”

ফেসবুক ঘাটাঘাটি করে ছোঁয়া রাত বারোটায় বই নিয়ে বসল।আগামিকাল এক্সাম আছে। সন্ধ্যা থেকে পড়তে বসবে ভেবে ফোন স্ক্রল করতে করতে আর পড়া হয়নি।এখন মহাচিন্তায় পড়েছে।অন্যবার তন্ময়ের টা দেখে লিখত।কিন্তু কলেজে এখন রোশান সিদ্দিকী নামক বিপদ সংকেত হাজির।দেখে লেখার ও সুযোগ হবেনা।কি পড়বে বুঝতে না পেরে তন্ময় কে ফোন করল।তন্ময় একমাত্র ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ওদের সবার মাঝে।প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা তন্ময় ই দিতে পারল।তন্ময় আর দ্বীপ মাঝ রাতে কিচেনে।ছোঁয়ার ফোন দেখে দ্বীপ বলল,
“নে তোর দিন-দুনিয়া,আকাশ-বাতাস ফোন দিয়েছে।”
তন্ময় দ্বীপের দিকে থমথমে চোখে তাকিয়ে ফোন রিসিভ করল।শান্ত কন্ঠে বলল,

“জা’ন বলো।”
“রাতে ফোন দি’লে জা’ন বলে ডাকিস কেন?”
“সব সময় ই তো ডাকতে ইচ্ছা করে।পারমিশন তো দিচ্ছো না?”
“এখন তুমি বলছিস আবার একটু পরেই তুই ডাকবি।”
“জা’নের সাথে তুমিটাই মাননসই।”
” কি করছিস এখন তুই?”
তন্ময় কৌতুহল জাগাল ছোঁয়ার হৃদয়ে।বলল,
“গেজ কর।”
ছোঁয়া এক সেকেন্ড দেরি না করে বলল,
“তুই বই পড়ুয়া ছেলে। পড়া ছাড়া আর কি করবি।”
তন্ময় আবার শান্ত গলায় বলল,
“হয়নি।”

“কি আশ্চর্য আমাদের তন্ময় এত রাতে বই না পড়ে অন্য কিছু করছে।”
“বার্গার বানাচ্ছি।”
“সিরিয়াসলি ভাই।”
“ভাই? হুয়াই ইউ কল মি ভাই?”
ছোঁয়া বুঝেও আবার প্রশ্ন করল,
“বন্ধু আর ভাই কি আলাদা।”
“রিজন টা দিনে একশ বার মনিয়ে করিয়ে দিই। এর পরে কিন্তু আর মনে করিয়ে দিবো না।”
ছোঁয়া মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকে বলল,
“কি রিজন?”
“তোকে আমি বান্ধবী বা বোন এসব কোনো নজরে দেখিনা।হৃদয়ের রানির নজরে দেখি।তুই তো আমার জা’ন পাখিটা।”

“থাম এবার।হঠাৎ বার্গার কেন?”
“মৃন্ময়ের জন্য বানাচ্ছি।কিন্তু এখনো ফেরেনি সে।বাড়ি গিয়েছে।”
“এত রাত হয়ে গিয়েছে ও আর ফিরবেনা।”
“না ফিরলে দ্বীপ আর আমি খেয়ে নিবো।”
“আমাকে খাওয়াবি না।”
“কাল খাওয়াবো।”
“না আমি এখনি খাবো।”
“এত রাতে রাস্তায় তো কিছুই নেই।হেঁটে যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে।”
“আমি জানিনা তন্ময়।এখনি বার্গার চাই।”
“ওকে আমি আসছি।” বলেই ফোন কেটে দিলো তন্ময়।

দ্বীপ তন্ময়ের মুখের দিকে হা করে এতক্ষণ তাকিয়ে গড়গড় করে কথা গিলছিলো।দ্বীপ বলল,
“এই সিঙ্গেল এর সামনে আর কত?”
তন্ময় স্মিথ হেসে বলল, “আমিও তো সিঙ্গেল।ও তো রাজি হয়না।”
“রাজি হলে তো তুই পা’গ’ল হয়ে যাবি। ”
তন্ময় একটা বড় প্লাস্টিকের বাটিতে একটা বার্গার নিয়ে প্যাকিং করল।দ্বীপ কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কি করবি?”
“ছোঁয়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।”
“এত রাতে।”
“হ্যাঁ। ”
“ও মজা করেছে। এত রাতে যেতে হবেনা।”
“ও আমার জা’ন। আমি সারারাত ছটফট করব খাওয়াতে না পারলে।”
“শালার জীবনে প্রেম ও আমার উপর পড়ল না।আমিও প্রেমে পড়লাম না।”
দ্বীপের একটা বাই সাইকেল আছে।তন্ময় সাইকেল টা বের করল।সাইকেলের প্যাটেল ঘুরিয়ে ছোঁয়ার বাসার সামনে গেল।ভালবাসলে মানুষ কি না পারে।তন্ময় ছোঁয়ার নাম্বার ডায়াল করল।ফোনের ওপাশ থেকে ছোঁয়া বলল,
“হ্যাঁ, তন্ময় বল।”

তন্ময় শান্ত কন্ঠে বলল,
“ছোঁয়া নিচে আয়।”
“নিচে মানে?”
“রাস্তায় আয় গেট খুলে।”
“সিরিয়াসলি তুই এসছিস তন্ময়।”
“কুইক নিচে আয়।”
ছোঁয়া দ্রুত গায়ে ওড়না পেঁচালো।মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।এই তন্ময় টা কি সত্যি পা’গ’ল।ছোঁয়া মা-বাবাকে লুকিয়ে পা টিপে টিপে হেঁটে বাড়ির গেট খুলে বের হল।গেট খুলতেই দেখল বাদামি রঙের শার্ট পরিহিত,কালো জিন্স পরণে তন্ময় বাই সাইকেলে দাঁড়িয়ে আছে মধ্য রাস্তায়।চাঁদের আলোয় তন্ময়ের ফর্সা শরীর চকচক করছে।
তন্ময় অসম্ভব সুদর্শন একজন ছেলে।যার দিকে তাকালে চোখ ফেরানো দায় হয়।ছোঁয়া দ্রুত তন্ময়ের কাছে গিয়ে বলল,

“এভাবে সাইকেল চালিয়ে চলে এলি এত দূর।তোর সাথে দেখছি মজা ও করা যায়না তন্ময়।”
তন্ময় স্মিথ হেসে জবাব দিল,
“ঠোঁট টা বন্ধ রাখ, তোর দিকে দশ মিনিট তাকিয়ে থাকলে ক্লান্তি কমে যাবে।”
ছোঁয়ার ভয়ে বুক ঢিপ ঢিপ করছে।আশ পাশ তাকিয়ে বলল,
“কেউ দেখলে কেলেঙ্কারি হবে।”
“কি আর হবে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।”
“বাজে কথা।কি এনেছিস দ্রুত দে।”
পাশেই চায়ের দোকানের বেঞ্চ।দু’জনে ওখানে গিয়ে বসল।তন্ময় বার্গার খুলে ছোঁয়াকে খাইয়ে দিয়ে বলল,
“কেমন হয়েছে জা’ন তন্ময় স্পেশাল বার্গার।”
ছোঁয়া তিন আঙুল উঁচু করে বলল, “এক্সিলেন্ট। বাট ভুলেও অন্য মেয়েদের বলিস না তন্ময় স্পেশাল বার্গার।মেয়েরা তোকে খেয়ে ফেলবে।”

তন্ময় বলল, “এসব ভাবলেও ঘৃণা লাগে।”
তন্ময়ের চরিত্র,ব্যক্তিত্ব অন্যদের থেকে অনেক আলাদা।
ছোঁয়া খানিকটা খেয়ে বলল,
” আমি আর খাবো না তন্ময়।”
তন্ময় শান্ত কন্ঠে বলল,
“রাতে ভাত খাওনি জানি।না খেয়ে থাকলে তো হবেনা।এত রাতে এত কষ্ট করে এসছি তোমাকে বার্গার খাওয়াবো বলে।এতটুকু খেলে হবে? সম্পূর্ণ টা খেতে হবে জা’ন। ”
ছোঁয়া গম্ভীর চোখে তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই মাঝ রাতে আমাকে আবেগী করে তুলতে কে আসতে বলেছে।”
“তোমার প্রতি আমার ভালবাসা আমাকে দিনে, রাতে সব সময় তোমার কাছে টেনে আনে।”

পরের দিন ভোরে রোশানের ফোন কলে সারাহ’র ঘুম ভাঙল।তখন সকাল পাঁচটা বাজে।গভীর ঘুমে বিভোর সারাহ।ঘুম ঘুম কন্ঠে ফোন রিসিভ করে বিরক্ত হয়ে বলল,
“এত সকালে ফোন দিয়েছেন কেন?”
রোশান বরাবরের মত থমথমে কন্ঠে বলল,
“শুভ সকাল।”
সারাহ বিরক্ত কন্ঠে বলল,
“ফোন দিয়ে ঘুম ভাঙিয়ে শুভ সকাল কে অশুভতে পরিণত করলেন।”
রোশান হাত ঘড়ি দেখে নিয়ে বলল,
“পাঁচটা বাজে। ওজু করে নামাজ পড়ে নাও।তারপর একটু প্রকৃতির আলো বাতাস গ্রহন করে সোজা পড়তে বসবে।”
“আমি নামাজ পড়তে পারব না।”
“কেন?”

“আমার সমস্যা আছে।”
“কি সমস্যা?”
“সব বলতে হবে,বুঝেন না।”
রোশান গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“ওহ বুঝেছি।”
“কি বুঝলেন?”
রোশান ধমকের স্বরে বলল,
“সব বলতে হবে।আশ্চর্য। ”
“আমার কথা আমাকে ফেরালেন।”
“যাও পড়তে বসো।ক্লাসে যেন কারো খাতা দেখে লেখার চেষ্টা করোনা।খাতা নিয়ে যাব। ”
“অন্য কারো টা দেখে লিখব না।নিজেই নকল নিয়ে যাব।”
রোশান ঠোঁটের কোণায় স্মিথ হেসে বলল,
“একবার যদি নকল পাই অবস্থা খারাপ হবে।”
” পাবেন কিভাবে? এমন জায়গা রাখব না।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৬

“আমার চোখ ফাঁকি দেওয়া সহজ হবেনা।যেখানেই রাখো।”
“আপনি আমার নকল ধরতে পারলে যা বলবেন তাই হবে।”
“এক্সেপ্ট। কলেজে তো চেক করে দেখতে পারব না।তোমাদের বাসায় আসছি এখন।চেক করে দেখতে।”
সারাহ দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে বসে বলল,
“ওহ মাই গড! কি চেক করবে এসে।”

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৮