একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৪২

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৪২
সাদিয়া জাহান উম্মি

ডাক্তারের সামনে বসে আছে অর্থ আর প্রাহি।ডাক্তার প্রাহির সব রিপোর্ট্সগুলো চেক করছেন।অর্থ অস্থির হয়ে আছে রিপোর্টে কি লিখা আছে জানার জন্যে।রিপোর্টগুলো দেখা শেষ হতে ডাক্তার তাকাতেই অর্থ প্রশ্ন করে বসে,
-‘ প্রাহি সবকিছু ঠিক আছে তো ডাক্তার?’
ডাক্তার মুচঁকি হাসলেন।বললেন,

-‘ ইয়াহ সি’জ ফাইন।শুধু প্রেসারটা অনেক লো আর উনার স্বাভাবিকের তুলনায় ওজন অনেক কম।উনাকে এখন বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে মিষ্টার শিকদার।তাহলেই হবে।আর কোন সমস্যা নেই।ঠিক আছে সব।’
অর্থ রাগি চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।প্রাহি সেই রাগি দৃষ্টি দেখে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বসে রইলো।অর্থ গম্ভীর কন্ঠে বলে,
-‘ আমাদের বেবি কেমন আছে?’
-‘ বেবিও ঠিক আছে।একদম সুস্থ আছে। শুধু মা যদি ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করে তাহলে বাচ্চাও রিস্টপুষ্ট হবে বুঝেছেন?’
অর্থ সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো।যাক তাহলে সব ঠিক আছে।অর্থ বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-‘ তাহলে আসি ডাক্তার।আসসালামু আলাইকুম! ‘
-‘ ওয়া আলাইকুমুস সালাম!’
ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসলো অর্থ আর প্রাহি।অর্থ রেগে প্রাহির দিকে তাকাচ্ছেও না।অথচ প্রাহিকে হাত ওকে সাবধানে নিয়ে যাচ্ছে।প্রাহিও ভয়ে কিছু বলছে না। যদি লোকটা আরো রেগে যায়?গাড়িতে উঠে বসতেই অর্থ ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দিতে বললো। আজ অর্থ সাথে করে ড্রাইভার নিয়ে এসেছে।প্রাহি গাড়িতে উঠলে অনেক অসুস্থ হয়ে যায়।ওকে সামলাতে হয় তখন এই কারনেই আনা ড্রাইভারকে।অর্থ এখনো রেগে থম মেরে বসে আছে।প্রাহি এইবার ভয়ে ভয়ে বলে,

-‘ এমন করছেন কেন? আমার সাথে কথা বলুন।’
অর্থ রাগি চোখে তাকালো প্রাহির দিকে।তেজ নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,
-‘ কেন আমি কেন কথা বলবো?তুমি আমার একটা কথাও শোনো?এতো করে বলি একটু পুষ্টিকর খাবার খাও।তা না করে তুমি যতো আজগুবি আনহেলথি খাবার খাওয়ার বায়না ধরো।কেন আমার কথা শুনলে কি সমস্যা তোমার?ডাক্তার কি বলেছে শুনেছো?তোমার ওজন অনেক কম।এমন হলে কিভাবে হবে প্রাহি?’
প্রাহি চোখজোড়া ছলছল করে উঠে।ধরা গলায় বলে,
-‘ আর এমন করবো না প্রমিস।এখন থেকে আপনি যা বলবেন তাই করবো।আপনার সব কথা শুনবো প্রমিস।তাও রাগ করবেন নাহ।’

অর্থ বুঝলো মেয়েটা এইভাবে বলায় কষ্ট পেয়েছে।কিন্তু ওই বা কি করবে?এইসব কথা বললে সবারই রাগার কথা।অর্থ প্রাহি বাহু ধরে প্রাহির মাথা নিজের কাধে নিয়ে আসলো।প্রাহি মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
-‘ হয়েছে আর কান্না করা লাগবে নাহ।এখন থেকে আমি যা বলবো তা শুনবে।আমি তোমার আর আমাদের সন্তানের ভালোর জন্যেই বলি প্রাহি।ঠিক আছে?’
-‘ হুম!’ চোখ বুঝে উত্তর দেয় প্রাহি।
তা দেখে অর্থ প্রশ্ন করলো,
-‘ খারাপ লাগছে?’
প্রাহির ধীর কন্ঠে,
-‘ নাহ! ঘুম পাচ্ছে আমার।’
-‘ আচ্ছা ঘুমাও।আমি আছি।’

প্রাহির আর আওয়াজ পাওয়া গেলো না।ঘুমিয়ে গেছে মেয়েটা।কিয়ৎক্ষন পর অর্থও কেমন যেন চোখে ঝাপ্সা দেখছে।চেয়েও চোখজোড়া খুলে রাখতে পারছে না।ঢলে পরে যাচ্ছে।এমন কেন হচ্ছে বুঝতে পারছে না অর্থ।ভাবলো হয়তো রাতে ঘুম কম হওয়ার কারনে হয়তো হচ্ছে হয়তো।অর্থ আর ওতো একটা কিছু না ভেবে নিজেও চোখ বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো।এদিকে অর্থ আর প্রাহিকে ঘুমিয়ে যেতে দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে হাসলো।পকেট হতে মোবাইল বের করে ফোন লাগালো কাউকে।সাথে সাথে রিসিভ হতেই অপাশ থেকে ভেসে আসে এক উচ্ছাসিত কন্ঠ,

-‘ কাজ হয়েছে সেলিম?’
সেলিম হেসে জবাব দিলো,
-‘ জি স্যার।হয়েছে।দুজনেই বেহুস।’
-‘ তাহলে জলদি নিয়ে আসো।আমার যে আর তর সইছে না।আমার কতোদিনের স্বপ্ন পূরন হবে আজ।ওই অর্থকে মেরে আজ আমি আমার প্রতিশোধের আগুন নিভাবো ওর রক্ত দিয়ে।’
-‘ আচ্ছা স্যার আসছি।’

শিকদার বাড়ি……
ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই।সবাই চিন্তিত বসে আছে।রায়হানা এবার প্রায় কেঁদে দিয়েই বললেন,
-‘ কোথাও গেলো ওরা।এতোক্ষনে তো এসে যাওয়ার কথা।অথচ রাত ১১ টা বাজে এখনো ফিরলো না ছেলে মেয়ে দুটো।সেই বিকেল তিনটায় বাড়ি থেকে বের হয়েছে।আমার অর্থ তো এমন করে না।দেরি হলে অন্তত ফোন করে জানায়।অথচ আজ একটা ফোনও দিলো না।কিন্তু এদিকে একের পর এক ওদের দুজনে ফোন করা হচ্ছে কিন্তু দুজনের ফোনই বন্ধ।আমার মনটা কেমন কু ডাকছে।কিছু একটা ঠিক নেই। আমার ছেলে মেয়ে দুটো নিশ্চয়ই কোন বিপদে আছে।হেমন্ত, আরাফ বাবা তোরা দুজন একটু পুলিশকে ইনফোর্ম কর না।আমার মন যে আর মানে নাহ!’

আরাফ আর হেমন্ত এতোক্ষনে ধুমসে একেরপর এক ফোন দিচ্ছিলো অর্থ আর প্রাহির ফোনে।কিন্তু ওদের দুজনের ফোনই বন্ধ।চিন্তায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে ওদের।
আরাফ রায়হানা বেগমের পায়ের কাছে বসে বললো,
-‘ একদম চিন্তা করো না মামনি তুমি।আমি আর আরাফ আছি না।আমরা থাকতে ওদের দুজনের কিছু হবে না।’
-‘ তাই যেন হয় বাবা।আমার ছেলে মেয়ে দুটোকে আমার কাছে ফিরিয়ে এনে দে বাবা!’
আরাফ রায়হানা বেগমকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে শুনিয়ে কান্না থামালেন উনার।তারপর হেমন্তকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো।আরাফ গাড়ি ড্রাইভ করছে।হেমন্ত পাশে বসে আছে।শেষবার অর্থ’র ফোনে ট্রায় করে আবারও একই বানি শুনে ব্যর্থতার নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

-‘ ভাই তো এমন কোন সময় করে না।কিছু তো একটা খারাপ হয়েছে আরাফ ভাই।আমার মনে হয় ভাই আর প্রাহি কোন বিপদে পরেছে।’
আরাফ কপালে চিন্তার ভাজ ফেললো।আসলেই কি কোন বিপদে পরেছে ওরা?নাহ এইভাবে হাত গুটিয়ে থাকলে হবে নাহ।পুলিশকে ইনফোর্ম করতে হবে।হাসপাতালে খোঁজ নিয়েছিলো ওরা।তারা জানান অর্থ প্রাহিকে নিয়ে নাকি সেখান হতে পাঁচটায় বেড়িয়ে গেছে।আর কোথায় খুজবে ওদের।গার্ডদেরও লাগিয়ে দিয়েছে ওদের খুঁজতে।আরাফ এটা ভেবে পাচ্ছে না।অর্থ কিভাবে পারলো সিকিউরিটি ছাড়া একা একা হাসপাতালে যেতে।সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।মনে মনে একটাই প্রার্থনা করলো যেন অর্থ আর প্রাহি সহি সালামত থাকে।

আস্তে আস্তে চোখজোড়া মেলে তাকালো অর্থ।চোখের পাতাগুলো ভীষন ভারি হয়ে আছে।অনেক কষ্টে চোখ মেলে তাকিয়েছে অর্থ।নড়াচড়া করতে নিতেই বুঝে যে অর্থ’র হাত, পা সব বাধা।সাথে সাথে বুকটা ধ্বক করে উঠে অর্থ’র।এটা কিভাবে হলো?ওকে এইভাবে কে বাধঁলো।ওতো প্রাহিকে নিয়ে গাড়িতে ছিলো।প্রাহি ঘুমিয়ে যেতে তার কিছুক্ষন পর ও নিজেও ঘুমিয়েছিলো। হঠাৎ প্রাহির কথা মনে পরতেই অস্থির হয়ে যায় অর্থ।চারদিকে দৃষ্টি ফেলেও কিছু দেখতে পারলো না।শুধু ঘুটিঘুটে অন্ধকার।কলিজাটা কেমন যেন কামড় দিয়ে ধরে কিছু।কোথায় ওর প্রাহি?ঠিক আছে তো ওর প্রাহি?অর্থ চিৎকার দিতে নিয়েও থেমে যায়।কিছু একটা ভেবে ওর গলার লকেটটার দিকে নজর দিতেই এতো চিন্তার মাঝেও সস্থির নিঃশ্বাস ফেললো অর্থ।যা করার অতি দ্রুত করলো।মাথাটা ঝুকিয়ে অনেক কষ্টে হাতের কাছে এনে নিজের কাজ সেরে ফেললো।তারপর অন্ধকারের মাঝে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-‘ কেউ আছে এখানে?খুলো আমাকে।এখানে বেধে কেন রেখেছো?আর আমার ওয়াইফ কোথায়?কোথায় রেখেছো ওকে?কার এতো বড় সাহস সামনে আসো বলছি।সাহস থাকলে একবার খুলে দে আমায়।দেখি তোর বুকের পাঠা কতো বড়। ‘
চারদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। হঠাৎ সেই অন্ধকার চিরে বেড়িয়ে আসে রূক্ষ একটা কন্ঠস্বর,
-‘ এতো অস্থির হচ্ছিস কেন অর্থ শিকদার।এখনো যে আরো অনেক কিছু বাকি দেখার।এতো তাড়াতাড়ি তোকে মুক্ত করি কিভাবে বল তো?তোকে এখানে আনতে আমাকে কতো কাঠখোড় পুড়াতে হয়েছে।’
অর্থ রাগিস্বরে চিৎকার করলো,

-‘ কে তুই?সামনে আয় বলছি।এইভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কেন কথা বলছিস।আর প্রাহি কোথায়?আমার প্রাহিকে আমার কাছে এনে দে। ওর কিছু হলে তোকে খুন করে ফেলবো আমি।’
-‘ রিলেক্স। এতো অস্থির হচ্ছিস কেন বলতো?তোর বউকে অনেক খাতির যত্ন নিয়ে রেখেছি। এতো চিন্তা করিস নাহ। আগে তোকে সাথে পরিচয় আদান প্রদান করে নেই কি বল?’
সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো।অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকার কারনে হঠাৎ আলো জ্বলায় অর্থ চোখ বন্ধ করে ফেলে।আলো সয়ে আসতেই সামনে থাকায় অর্থ।ওর সামনে প্রায় ওরই বয়সী একজন সুঠোমদেহি তাগড়া যুবককে দেখে ভ্রু-কুচকালো অর্থ।প্রশ্ন করলো,
-‘ কে তুই?’

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৪১

ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।গল্পের আর বেশি পর্ব নেই।জলদি শেষ হতে যাচ্ছে।আমার ভুলগুলো আমাকে সুন্দরভাবে ধরিয়ে দিবেন।যেমন বলতে পারেন, আপু এইখানে এটা ভুল হয়েছে বা আপু এই জিনিসটা একটু কম দিলে গল্পটা আরেকটু ভালো হয় বা কোন জিনিস মিস হয়ে গেলে সেগুলো সম্পর্কে সুন্দর ভাবে বলতে পারেন।কিন্তু প্লিজ।কেউ ব্যঙ্গ করে কটুক্তি করবেন নাহ প্লিজ।আমার গল্প ভালো না।আমিও ভালো লিখি না।আমার লিখা খারাপ।পছন্দ না হলে পড়বেন নাহ।আবারও বলছি পড়বেন নাহ।আমি আপনাদের জোড় করছি না। ভুলগুলো ধরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ।ভালোবাসা নিবেন সকলে।আসসালামু আলাইকুম!

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৪৩+৪৪