এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১১
আদ্রিতা জান্নাত অরিন
সকাল হয়ে যায় নোটন ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে রান্না ঘরে চলে যায় সেখানে গিয়ে দেখে মলি বেগম আর নাবিলা বেগম রান্না করছে। নোটন বিষয়টা বুঝতে পারে তারপর মুখে একটা মিষ্টি হাসি নিয়ে রান্না ঘরের ভিতরে যায়। নোটন বলে –
“- কি ব্যাপার শাশুড়ী আম্মু আপনি আজকে এতো সকালে রান্না করছেন? কাহিনি কি খাবারের মধ্যে কোনো কিছু মিশিয়ে আমাকে মেরে ফেলার ফন্দি করছেন না কি?
নাবিলা বেগম কোনো কথা বলে না কারণ নোটনের সাথে কথা বলার ইচ্ছা তার নাই। মলি বেগম ও নিজের রান্নার জন্য তরকারি কাটতে থাকে তবে নোটন তাদের খাওয়া দাওয়া নিয়ে কোনো কথা শুনায় নাই। রান্না করা শেষে নোটন ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায় আর মলি বেগম খাবার টেবিলে নিয়ে আসে। নোটন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে সমুদ্র তার কাগজ রেডি করছে মনে হয় কোথাও ইন্টারভিউ দিতে যাবে।
সমুদ্র নিজের কাগজ ব্যাগে সুন্দর করে গুছিয়ে নেয় নোটন বলে –
“- এতো সকালে রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছেন চাকরি খুঁজতে?
“- নোটন আমি কোথায় যাবো না যাবো না সেটা কি আপনাকে বলে যেতে হবে? এই বাড়ি আপনি বাটপারি করে নিজের নামে করে ফেলেছেন বলে কি বাড়ির মানুষের চলাচল করা স্বাধীনতা ও আমার কথা অনুসারে হবে?
“- না একদম না সমুদ্র আপনি কোথায় যাবেন? কি করবেন সেটা নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যাথা নাই কিন্তু আমার আবার মানুষের কষ্ট দেখলে খুব খারাপ লাগে। তাই কালকে রাতে যে অফার আপনাকে দিয়েছি সেটা গ্রহণ করে নেন। আপনার জন্য আর এই পরিবারের জন্য ভালো হবে সত্যি বলছি বেশি কিছু করতে হবে না শুধু কাজের লোকের মতো আমার সেবা যত্ন করতে হবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” নোটন আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন? আমি মরে গেলে ও আপনার মতো এইরকম একটা লোভী আর নোংরা মহিলার চাকরি করবো না “।
সমুদ্রের মুখে লোভী আর নোংরা মহিলা কথাটা শুনে নোটন হাসে কারণ এইসব কথায় তার কোনো যায় আসে না। নোটন একপা দুইপা করে এগিয়ে যায় সমুদ্রের কাছে এরপর সমুদ্রের শার্টের কর্লার ধরে বলে –
“- সমুদ্র আপনি একদম ঠিক বলেছেন আমি নোংরা আর লোভী মহিলা। কিন্তু আমি ঠিক কতটা জঘন্য সেটা আপনি এখনো যানেন না এই নোটন যা চাই তাই করে। আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে যদি আপনাকে আমার কাজের লোক না বানাতে পারি তাহলে আমার নাম নোটন না। আর এই নোটন ঠিক কতটা নোংরা সেটা আপনি খুব তাড়াতাড়ি দেখতে পাবেন “।
সমুদ্রের কর্লার থেকে নোটনের হাত সরিয়ে দেয় এরপর ধাক্কা দেয় নোটনকে আর বলে –
“- যদি আমি মরে ও যায় তাহলে ও আপনার গোলাম আমি হবো না নোটন?
“- সমুদ্র আমি আপনাকে এতো তাড়াতাড়ি মরতে দিবো না সমুদ্র কারণ এখনো অনেক হিসাব বাকি আছে। আর আপনি মারা গেলে আমি বিধবা হয়ে যাবো যেটা আমি একদম চাই না। সো রেডি থাকবেন সমুদ্র আমার পারর্সোনাল এসিস্টেন্ট হওয়ার জন্য.
নোটন কথাটা বলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে থাকে অফিসের জন্য। সমুদ্র রাগে জ্বলতে থাকে কিন্তু নোটন গুণগুণ করে গান গাইতে থাকে আর নিজের চুল আঁচড় করতে থাকে। সমুদ্র রুম থেকে বেরিয়ে যায় নোটন ও রেডি হয়ে খাবার টেবিলে বসে পড়ে।
আহনাফ চৌধুরীকে আবার শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে যেতে হবে কারখানায় তাই সে রেডি হয়ে যায়। নোটন যখন খাবার টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে তখন আহনাফ সাহেব সেখানে আসে। টেবিলের চেয়ার সরিয়ে বসতে গিয়ে ও উঠে চলে যেতে থাকে তখন নাবিলা বেগম বলে –
“- কি হয়েছে আহনাফ খাবার খাবে না? খাবার না খেয়ে উঠে চলে যাচ্ছো কোনো?
“- থাক আমার এখন আর খিদে নাই বাহিরে গিয়ে কিছু খেয়ে নিবো “।
আহনাফ চৌধুরী কথাটা বলে যখন চলে যেতে চাই তখন নোটন কি একটা ভেবে ওনাকে দাঁড়িয়ে যেতে বলে। সামনের টেবিলে থেকে খাবার বেড়ে ওনার কাছে দেয় আর বলে –
“- এই নেন খাবার আমি চাই না আমার কারখানার কোনো শ্রমিক না খেয়ে কোনো কাজে করুক। এমনি বিজনেসের যে অবস্থা করছেন তা ঠিক করতে আমার দিন রাত কষ্ট করতে হচ্ছে। এরপর যদি নিজের শরীর খারাপ করেন তাহলে শ্রমিকের কাজ কে করবে? আর আপনার ঔষধ খরচ দিতে আমি পারব না “।
নোটন কথাটা বলে খাবার দেয় আহনাফ চৌধুরী সামনে এরপর গিয়ে চেয়ারে বসে নিজের খাবারের দিকে মনোযোগ দেয়। আহনাফ সাহেব নোটনের ব্যবহার দেখে মাঝে মধ্যে অবাক হয়ে যায় কোনো জানি মনে হয় মেয়েটা হয়তো এতোটা খারাপ না। আহনাফ চৌধুরী কোনো কথা না বলে খাবার খেতে থাকে কারণ তাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। নোটন মনে মনে বলে –
“- শশুড় আব্বু আপনাদের খুব কষ্ট দিতে চাই কিন্তু সেটা সবসময় না। কারণ আমার পরিবারের সাথে যা খারাপ হয়েছে তার কিছুটা আপনার ভুলের জন্য হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ দোষ আপনার না আসল অপরাধী কে সেটা আমি জানি। তাকে শাস্তি দেওয়া আমার আসল উদ্দেশ্য মাফ করে দিবেন যদি আপনার সাথে কোনো বেয়াদবি করে থাকি “।
নোটন নিজের খাওয়া শেষ করে অফিসের জন্য বের হয়ে যায় এরপর সমুদ্র আসে খাবার টেবিলে। সমুদ্র এতোখন বাগানে ছিলো সে এসে টেবিলে বসে যায় চৌধুরী বাড়ির সবাই এখানে উপস্থিত রয়েছে। নাবিলা বেগম বলে –
“- সমুদ্র তুমি কি কোথাও যাবে?
“- হৃম আম্মু একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যাবো । আব্বুর উপর এই সমস্ত সংসারের দায়িত্ব আর কতদিন থাকবে বাড়ির বড় সন্তান হিসাবে সব দায়িত্ব আমাকে নিতে হবে।
“- হুম সেটা আমি জানি কিন্তু সমুদ্র এতো তাড়াতাড়ি চাকরি কি করে পাওয়া যাবে। বর্তমানে এতো অল্প সময়ে চাকরি জোগাড় করা কোনো সহজ বিষয় না সমুদ্র “।
“- হুম সেটা আমি জানি আম্মু তবে চেষ্টা করতে হবে। পরিস্থিতি এমন হয়ে গেছে এখন দরকার হলে বাগানে গিয়ে সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতে হবে “।
নাবিলা বেগম সহ চৌধুরী বাড়ির সবাই একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ে। অসীম চৌধুরী এখন থেকে নোটনের অফিসের দারোয়ান হিসাবে চাকরি করবে আর বাড়ির মহিলারা ঘরের সব কাজ করবে। নোটন এখন গাড়ি করে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে সে তার ফোন বের করে কল করে আর বলে
“- রাফি এই শহরের সব অফিসে বলে দাও যদি কেউ সমুদ্র চৌধুরীকে কোনো চাকরি দেয় তাহলে তাদের সাথে আমাদের সকল ধরনের বিজনেস বন্ধ থাকবে।সমুদ্র যাতে কোথাও চাকরি না পায় এবং শেষে তাকে চৌধুরী কোম্পানির পিএ হিসাবে চাকরি করতে বাধ্য করতে হবে “।
-” ওকে ম্যাম হয়ে যাবে “।
নোটন কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় এরপর মুখে একটা কূটনীতিক হাসি বজায় রাখে আর বলে –
“- সমুদ্র আপনি এখনো এই নোটনকে ভালো করে বুঝতে পারেন না নোটন যা চাই তাই করে। নোটন যখন বলেছে যে সমুদ্র চৌধুরী ওর পিএ হবে তখন সেটা হবে। গল্পে শুধু নায়ক জিতে যাবে সেটা সবসময় হবে না সমুদ্র আর যে গল্পের নায়িকা নোটন সেখানে ভিলেন থাকবে নোটন আর হিরোইন থাকবে শুধু নোটন।
নোটন যেমন বলেছে ঠিক তাই হয়েছে সমুদ্রকে কোনো অফিসে চাকরি দেয় নাই কেউ। নোটনের অফিসে আজকে ইন্টারভিউ হচ্ছে অনেক লোক এসেছে চাকরির জন্য। ইন্টারভিউয়ের দায়িত্ব রয়েছে অফিসের কয়েকজন কর্মচারী। নোটন নিজের কেবিন থেকে সবকিছু দেখছে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কিন্তু এখনো তার প্রত্যাশিত লোককে দেখতে পায় নাই সে। নোটনের ফোনে কেউ কল করে সে রিসিভ করে আর বলে –
“- হুম বলো কি হয়েছে?
“- ম্যাম সমুদ্র চৌধুরী এসেছে ইন্টারভিউ দিতে?
“- ওকে সমুদ্রের ইন্টারভিউ নাও আর প্রতিটা লোক যেমন করে ইন্টারভিউ দিয়েছে ওনি ও সেইরকম করে ইন্টারভিউ দিবে। আর যদি টিকে যায় তাহলে আমার কেবিনে পাঠিয়ে দিবে “।
“- ওকে ম্যাম “।
নোটন কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় ফাইনালি নোটনের পরিকল্পনা সফল হয়েছে। ইন্টারভিউ অনেক সময় ধরে চলে সবার মধ্যে থেকে সমুদ্র সব কথার সঠিক উত্তর দেয়। আর সমুদ্র যেহেতু বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে তাই তাকর সিলেক্ট করা হয় নোটনের পিএ হিসাবে। সমুদ্র এখন নোটনের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে নিজের মনকে শক্ত করে দরজায় নক করে বলে –
“- ম্যাম মে আই ক্যাম ইন?
“- ইয়েস মিস্টার সমুদ্র কাম ইন “।
নোটনের অনুমতি পেয়ে সমুদ্র কেবিনের ভিতরে চলে যায় এরপর বলে –
“- নোটন ম্যাম আজ থেকে আমি আপনার পিএ। আপনার যাবতীয় সকল কাজ আমি করব। বলুন ম্যাম কি কি করতে হবে “।
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন চেয়ার সামনের দিকে ফিরিয়ে ওর দিকে তাকায়। সমুদ্র মাথা নিচুঁ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেটা দেখে বলে –
“- মিস্টার সমুদ্র আপনাকে এইরকম মাথা নিচুঁ করে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে দারুণ আনন্দ লাগছে আমার। তিনবছর আগে আপনি যখন বিদেশে চলে গিয়েছেন সেইদিন আমি ও ঠিক এইরকম করে মাথা নিচুঁ করে অসহায় হয়ে আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সত্যি সময় মানুষকে ঠিক তার কাজের পরিমাণ ভোগ করায় “.
নোটন মনে মনে বলে-
এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১০
“- এই নোটন ন্যাকা বা ছ্যাঁচড়া মেয়ে না স্বামী বিদেশে থেকে পরকীয়া করবে আর দেশে ফিরে আসলে তার ভালোবাসা পেয়ে বউ সব ভুলে যাবে। এইটা কি কোনো নাটক চলছে এইসব ন্যাকামি নোটন করে না। যদি ভুল করে তাহলে শাস্তি তাকে পেতে হবে। এই নোটনকে কেউ ইট মারলে তাকে সে পাটকেল মারে না বরং দুনিয়া থেকে শেষ করে দেয়।