এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১২

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১২
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

তিনদিন কেটে যায় নোটন এখন অফিসের প্রায় অনেক উন্নতি করে ফেলেছে সকল স্টাফ সঠিক সময়ে অফিসে আসে। আর আহনাফ চৌধুরী শ্রমিকের কাজ করছে প্রথম কয়েকদিন অনেক অসুবিধা হয়েছে তবে এখন কোম্পানি থেকে নতুন মেশিন দেওয়া হয়েছে। সমুদ্র নোটনের পিএ হিসাবে কাজ করে তবে তাকে শুধু নোটনের কাজ করতে হয় অন্য কারো না।
নোটন যখন অফিসে বসে নিজের কেবিনে ফাইল দেখছে সমুদ্র তখন ওর কেবিনের দরজার সামনে এসে নক করে। সমুদ্র বলে –

“- নোটন ম্যাম ভিতরে আসতে পারি?
সমুদ্রের গলার ভয়েজ শুনে নোটন নিজের কাজ রেখে বলে
“- হুম আসেন সমুদ্র “।
সমুদ্র রুমের ভিতরে ঢুকে যায় এরপর নিজের হাতে থাকা ফাইল নোটনের সামনে রাখে। আর ফোন থেকে একটা ভিডিও বের করে নোটনের সামনে দেয় আর বলে –
“- নোটন ম্যাম এই আমাদের অফিসের সকল কারখানার ডিটেইলস যেখানে কোথায় আমাদের কয়টা ফ্যাক্টরী রয়েছে। সেখানে কতজন শ্রমিক কাজ করছে আর সেখান থেকে আমাদের ঠিক কতটা মুনাফা হচ্ছে তার সমস্ত হিসাব রয়েছে।
নোটন সকল ফাইল ভালো করে দেখে সেখানে যে হিসাব রয়েছে তাতে কোম্পানির সকল বিষয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে ফাইলের চেক করতে গিয়ে নোটন দেখে সেখানে কয়েকটা ফ্যাক্টরী রয়েছে যা গ্রামে অবস্থিত। গ্রামের প্রায় অধিকাংশ ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে গেছে যার কারণে কোম্পানির লস হচ্ছে যা রিকোভার করা সম্ভব হবে না। নোটন বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- সমুদ্র গ্রামের ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ কি? বিগত কয়েক বছর আগে ও সেখান থেকে আমাদের কোম্পানির অনেক মুনাফা আসতো। কিন্তু হঠাৎ করে কি এমন হয়েছে যার জন্য গ্রামের মানুষ আমাদের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে? আপনি কি সেই বিষয়ে কোনো খোঁজ করেছেন?
সমুদ্র ফোন থেকে ভিডিও অন করে নোটনের সামনে ধরে যেখানে কয়েক বছর আগে গ্রামের মানুষের সমস্যার কথা তারা শেয়ার করছে। সমুদ্র বলে –
“- গ্রামের ফ্যাক্টরী বন্ধ হয়ে যাওয়ার আসল কারণ আমাদের অহংকার। কারণ সেইসব ফ্যাক্টরী থেকে আমাদের কোম্পানি মোটা অঙ্কের মুনাফা পাওয়ার পর ও। তারা সেখানে কাজ করা কর্মচারীদের উপর ভালো করে নজর দেয় না তাদের সঠিক সময়ে বেতন প্রদান করে নাই। কর্মচারীরা নিজেদের সমস্যা কথা ভিডিও করে বা চিঠি দিয়ে কোম্পানিকে বলেছে কিন্তু সেই সমস্যার বিষয়ে কেউ নজর দেয় না। যার জন্য সকলে বাধ্য হয়ে বেতন না পেয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে “।
নোটন সমুদ্রের হাত দেখে ভিডিও টা নিয়ে দেখতে থাকে যেখানে সকল শ্রমিক তাদের সমস্যার কথা বলেছে। ভিডিও বেশ পুরানো প্রায় দুইবছর আগের যেখানে পুরাতন মেশিন আর মজুরির বিষয়ে বেশ ভালো করে বলা হয়েছে। নোটন বলে –

“- ফাইল দেখে যা মনে হচ্ছে যদি এখন আমরা গ্রামের ফ্যাক্টরী চালু না করি তাহলে কোম্পানির লস আটকানো সম্ভব না। যার জন্য ভবিষ্যতে অনেক বেশি সমস্যা হবে এমনকি এর জন্য আমাদের কোম্পানির বন্ধ ও হয়ে যেতে পারে।
“- হুম ঠিক বলেছেন ম্যাম তাই আমি মনে করি আমাদের একবার সেখানে গিয়ে শ্রমিকদের সাথে কথা বলা দরকার। তাদের সমস্যা সমাধান করা দরকার না হলে কিন্তু ভবিষ্যতে অনেক বড়ো সমস্যা হতে পারে “।
“- ইউ আর রাইট সমুদ্র। একটা কাজ করেন রবিনকে বলেন আমাদের গ্রামে যাওয়ার সকল আয়োজন করতে। আর কোম্পানির কয়েকজন লোক সেখানে যাবে সাথে আপনি আর আমি। সো সবকিছু রেডি করতে বলেন কালকে আমরা গ্রামে যাবো?

“- ম্যাম আপনি ও যাবেন?
“- হুম যেহেতু সমস্যা আমাদের ভুলের জন্য হয়েছে তাই সমাধান ও আমাকে করতে হবে।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র যখন কেবিন থেকে বের হয়ে যেতে চাই তখন নোটন বলে –
“- মিস্টার সমুদ্র?
সমুদ্র পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলে –
“- জি নোটন ম্যাম।
“- আপনি বেশ ভালো কাজ করছেন। এই তিনদিনে অফিসের অনেক সমস্যা সমাধান করছেন দারুণ। সত্যি বলতে আপনার কাজের প্রতি এতোটা ভালোবাসা আর দায়িত্ব বোধ দেখে আই এম ইমপ্রেস “।
“- ধন্যবাদ ম্যাম। আশা করি ভবিষ্যতে আরো ভালো করতে পারব “। এখন আমি আসি ম্যাম
“- হুম অবশ্যই “।
সমুদ্র নোটনের থেকে অনুমতি নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। নোটন কয়েকদিন ধরে সমুদ্রের আচরণের পরিবর্তন খেয়াল করছে। সমুদ্র এখন অফিসে একজন পিএর মতো সব রকম দায়িত্ব পালন করে বাসায় গিয়ে কোনো কথায় তর্ক করে না নোটনের সাথে। নোটন মনে মনে বলে –
“- সমুদ্র কোনো জানি আমার মনে হচ্ছে আপনার মনের মধ্যে কোনো পরিকল্পনা চলছে। এতো ভালো মতো সবকিছু মেনে নেওয়ার মতো মানুষ আপনি না। তবে যায় হোক আপনার কোনো রকম কেয়ার বা ভালোবাসায় এই নোটন দুর্বল হবে না “।

নোটন কথাটা বলে আবার অফিসের কাজে মনোযোগ দেয় সমুদ্র গিয়ে রবিনকে বলে দেয় তাদের যাওয়া বিষয়টা। রাত নয়টা বাজে সমুদ্র এখন তার বাবার রুমে বসে আছে কারণ আহনাফ চৌধুরীর প্রেশার নর্মাল নয়। নাবিলা বেগম ঔষধ দিয়েছে আহনাফ চৌধুরীকে ওনি এখন ঘুমিয়ে পড়েছেন। নাবিলা বেগম সামনে বসে থাকা সমুদ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে
“- সমুদ্র তোমার কাজ কেমন চলছে? তোমার মামা যেমন করতে বলেছে তুমি কি তেমন করছো?
সমুদ্র এতোখন নিজের বাবার হাত ধরে বসে ছিলো কিন্তু মায়ের কথা কানে যায় তার। সমুদ্র বলে –
“- হুম আম্মু নোটন এখন আমার উপর বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। কালকে আমরা বিজনেসের কাজের জন্য শহর থেকে দূরে গ্রামে যাবো “।
নাবিলা বেগম শুনে বেশ খুশি হয় সমুদ্র নোটনের কাছে যেতে পেরেছে তবে সে বলে –
“- ওই নোটনের জন্য তোমার আব্বুর আজকে এই অবস্থা।চৌধুরী বাড়ির সকল সম্পত্তি নোটন চালাকি করে নিজের নামে করে নিয়েছে সেইজন্য ওর শাস্তি পাওয়া দরকার। আমাদের বিজনেস থেকে আমাদের কে সরিয়ে নিজে সবকিছু দখল করছে “।

নাবিলা বেগমের কথা সমুদ্র শুনে তবে ওনার প্রতিটা কথার সাথে সে একমত হতে পারে নাই। সমুদ্র বলে –
“- আম্মু নোটন যা করেছে সেটা অন্যায় কিন্তু নোটন খুব একটা খারাপ মেয়ে না। আর আমাদের বিজনেসের যা অবস্থা ছিলো যদি এখন নোটন এমডি না হতো। তাহলে সত্যি লসের কারণে আমরা সবকিছু হারিয়ে ফেলতাম “।
নাবিলা বেগম সমুদ্রের কথা শুনে রীতিমতো অবাক তার ছেলে মাএ দুইদিন নোটনের সাথে থেকে তার বিরুদ্ধে কথা বলছে। নাবিলা বেগম বলে –
“- তুমি কি বলতে চাও সমুদ্র ? নোটন খুব ভালো মেয়ে? আর ও না থাকলে এই বিজনেস শেষ হয়ে যেতো? তোমার আব্বু আর চাচার কি বিজনেস সামলানোর কোনো যোগ্যতা নাই?
“- আম্মু আমি সেটা বলছি না তবে এই কথা সত্যি যে আব্বু আর চাচা ভালো বিজনেস ম্যান না। দাদা যে ব্যবসা কষ্ট করে গড়ে তুলেছে সেটা আব্বু আর চৌধুরী বাড়ির সবাই শুধু তাদের অহংকারের কারণে শেষ করে ফেলেছে। আর আজকে যদি নোটন আমাদের সম্পত্তির নাও কেঁড়ে নিতো তবুও দুইদিন পর আমরা ফকির হয়ে যেতাম “।

“- সমুদ্র তুমি কি চৌধুরী বাড়ির ছেলে হয়ে নোটনকে সমর্থন করছো?
“- আমি কাউকে সমর্থন করছি না আম্মু। শুধু যেটা সত্যি বা যা ভবিষ্যতে হতে যাচ্ছে সেটা বলছি।
সমুদ্র কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। নোটন ছাদে বসে চাঁদ দেখতে থাকে তখন পিছন থেকে কারো ডাক শুনে। সমুদ্র দাঁড়িয়ে রয়েছে পিছনে সমুদ্র বলে –
“- নোটন কালকে আমাদের খুব সকালে গ্রামে যেতে হবে তাই আপনার তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত। আর অনেক রাত হয়ে গেছে খাবার খাবেন না?
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন বলে –
“- সত্যি করে বলুন সমুদ্র আপনার মনে কি চলছে? হঠাৎ করে দুইদিন ধরে আমার প্রতিটা বিষয়ে আপনি খেয়াল রাখেন? কেয়ার করেন? আবার কোনো কথা বলার আগে তার করেন। অতি ভক্তি কিন্তু আবার চোরের লক্ষণ “।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র সামনে আসে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে –
“- নোটন আপনি এখন থেকে আমার বস এই চৌধুরী কোম্পানির এমডি আপনার খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। আর আমি আমার বিজনেস কে খুব ভালোবাসি তাই যদি আপনি সুস্থ থাকেন তাহলে বিজনেসের কাজ ও ভালো থাকবে।সো সেইজন্য “।

“- সমুদ্র এই চৌধুরী বাড়ির কোনো সদস্যর ভালো ব্যবহার কেয়ার বা ভালোবাসা কিছুই আমার দরকার নাই। আপনাদের এই পরিবারের কোনো বিশ্বাস নাই বিশ্বাসঘাতক আপনারা পিছন থেকে ছুরি মারতে খুব ভালো পারেন আপনারা “।
নোটনের কথার উত্তর সমুদ্র দেয় না সে চাঁদ দেখতে থাকে। সমুদ্র বলে –
“- আচ্ছা নোটন আপনি প্রতিদিন এই চাঁদকে কোনো দেখেন?
” জীবনে যোগ্যতার চেয়ে সৌন্দর্য প্রয়োজন অনেক বেশি ”
“- সেইজন্য মানুষের কাছে সূর্যের চেয়ে চাঁদের গুরুত্ব বেশি.
সমুদ্র কথাটা শুনে নোটন বাস্তব জীবনের কথা বলেছে। নোটন আর সমুদ্র দুইজনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখে নোটন যানে সমুদ্রের ভালো ব্যবহারে পিছনে রয়েছে একটা নোংরা ষড়যন্ত্র। নোটনের এই চৌধুরী বাড়ির সকলের প্রতি সব ধারণা রয়েছে তাই কে কখন কি নাটক করতে পারে সেটা সে জানে। নোটন মনে মনে বলে –

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১১

“- সমুদ্র আপনার মনের ভিতরে কি চলছে সেটা আমি জানি আর কে এইসব করতে বলেছে সেটা ও আমি জানি। অতিরিক্ত চালাক মানুষের একটা সমস্যা কেউ যে তার চালাকি বুঝতে পারে। সেই কথাটা সে বুঝে না “।
নোটন মনে মনে এই কথাটা ভাবতে থাকে আর চাঁদ দেখতে থাকে।অন্যদিকে সমুদ্র নিজের দৃষ্টি নোটনের দিকে রাখে সত্যি মেয়েটা অসম্ভব সুন্দরী। কখনো এতো খুঁটিয়ে নোটনকে দেখে নাই সমুদ্র তবে আজকে মনে হচ্ছে চাঁদের চেয়ে অধিক মায়া নোটনের মধ্যে রয়েছে। সমুদ্র বলে –
” আমি চাঁদ দেখেছি দেখেছি হাজার তাঁরা ”
“- কিন্তু আমার নজরে মায়াবতী তুমিই সেরা “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৩