এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৩

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৩
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

সমুদ্র মুগ্ধ নয়নে নোটনের দিকে তার দৃষ্টি স্থির রাখে বেশ অনেকটা সময়। নোটন চাঁদ দেখতে বিজি ছিলো তবে হঠাৎ করে সমুদ্র দিকে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র ওকে দেখছে। সমুদ্রের এইরকম মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে নোটন বলে –
-” কি হয়েছে সমুদ্র এইরকম করে দেখন কোনো?
“- না কিছু হয় নাই।
সমুদ্র আর নোটন অল্প কিছুট সময় ছাদে কাটিয়ে নিজের রুমে ফিরে আসে। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে যায় তাড়াতাড়ি কারণ সকালে খুব ভোরে উঠতে হবে। শহর থেকে গ্রাম বেশ অনেক দূরে তাই পৌঁছাতে বেশ অনেকটা সময় লাগবে। ভোর হয়ে যায় নোটন আর বাড়ির প্রতৈকে যেহেতু ফজরের নামাজের সময় উঠে তাই ঘুম থেকে উঠতে বেশি অসুবিধা হয় নাই।
সমুদ্র আর নোটন সকালের নাস্তা খেয়ে গাড়ি করে গ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সমুদ্র আর নোটন চুপচাপ গাড়িতে বসে রয়েছে ড্রাইভার তার আপন মনে গাড়ি চালাতে বিজি। দুইজনের নিরবতা ভেঙে সমুদ্র কিছু কাগজ নোটনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে –

“- নোটন এই কাগজে গ্রামের মানুষের কিছু সমস্যা কথা উল্লেখ রয়েছে যা আমাদের ভুলের জন্য হয়েছে। কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শ্রমিকদের কাজের কোনো উপায় ছিলো না। সেইজন্য তারা বাধ্য হয়ে গ্রামের মাতবর মিস্টার শিমুলের কাছ থেকে টাকা ধার করে নিজেদের জমিতে ফসল লাগানো শুরু করে। কিন্তু সামনের বছর অপেক্ষাকৃত বৃষ্টি না হওয়ার ফলে তাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে “।
নোটন ফাইল দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কারণ ফাইলে যা রয়েছে তাতে শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করা এতো সহজ হবে না। কিন্তু যদি এই বন্ধ ফ্যাক্টরী এখন চালু না করা হয় তাহলে কোম্পানিকে অনেক বড়ো ক্ষতির সম্মুখে হতে হবে। নোটন বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- সমুদ্র এই ফাইলে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা দেখে স্পষ্ট ফুটে উঠছে গ্রামের শ্রমিকরা আমাদের উপর রেগে আছে। কারণ তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তারা ঋণ শোধ করতে পারে নাই। যার কারণে নিজেদের জমি বন্ধক দিতে হয়েছে আর শিমুল সাহেবের জন্য বিনামূল্যে কাজ করতে হচ্ছে।
“- হুম নোটন আপনার কথা ঠিক। গ্রামের সবাই এখন আমাদের কোম্পানির লোকদের বেশ অপছন্দ বা ঘৃণা করে বলতে পারেন। আর শিমুল নামের সেই মহাজন এখন গ্রামের মানুষদের দিয়ে বিনামূল্যে কাজ করিয়ে যাচ্ছে। তাই যদি এখন আবার কোম্পানি চালু করে সবাইকে কাজে ফিরাতে চাই তাহলে ওনি সমস্যা করতে পারেন। এই ফ্যাক্টরী চালু করা খুব বেশি কঠিন হয়ে যাবে আমাদের জন্য?
নোটন পরিস্থিতি বুঝতে পারে কিন্তু এখন নিজের উপর থেকে বিশ্বাস বা আস্থা হারালে চলবে না। তাকে যে করে হোক এই বন্ধ ফ্যাক্টরী আবার চালু করতে হবে না হলে নিজের কোম্পানিকে সে হারিয়ে ফেলবে। নোটন বলে –

“- দেখবেন সমুদ্র আমরা ঠিক পারব গ্রামের প্রতিটা মানুষের মনে আবার বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। আর এই নোটন যখন বলেছে সে কোম্পানি চালু করবে সে চালু করেই ছাড়বে। এর জন্য যা করতে হয় সেটাই করব বাট কোম্পানির শ্রমিকদের আমার চাই এট এনি কোস্ট “।
নোটনের এইরকম দৃঢ়তা দেখে সমুদ্র হাসে সত্যি নোটনের মতো সাহসী মেয়ে সে জীবনে খুব কম দেখেছে।নোটনের কনফিডেন্স তাকে প্রতিনিয়ত মুগ্ধ করে সমুদ্র মনে মনে মেনে নিয়েছে নোটন সত্যি অসাধারণ সাহসী আর বুদ্ধিমতি মেয়ে। সমুদ্র বলে –

“- নোটন যেকোনো বিপদে আপনার মতো সাহসী হওয়া প্রতিটা মেয়ের দরকার। হুম ঠিক বলেছেন পরিস্থিতি যায় হোক কোম্পানির ক্ষতি হয় এমন কাজ বন্ধ করতে হবে “।
বিকাল তিনটা বাজে গাড়ি এসে পৌঁছে গেছে গ্রামে বেশ সুন্দর জায়গা। আশেপাশে বহু দূর অবধি কোনো গাড়ির শব্দ নাই রয়েছে শুধু পাখির কিচিরমিচির সবুজ মন আর গ্রামের সহজ সরল মানুষ। গাড়ি থেমে যায় একটা বিশাল জমিদার বাড়ির সামনে গ্রামে এতো বড়ো বাড়ি আশা করা যায় না। তবে এই জমিদার বাড়ি অনেক পুরাতন এখানে কেউ থাকে না যার জন্য সমুদ্র আর নোটন সহ অফিসের কলিগ এখানে থাকবে।
গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় সমুদ্র আর নোটন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তার প্রায় অনেকটা সময় গাড়িতে অবস্থান করেছে। নোটন বলে –

“- রবিন বেশ ভালো বাড়ি ঠিক করেছে সকলের থাকার জন্য
“- হুম বাড়িটা বেশ বড়ো অফিসের সকলের থাকতে অসুবিধা হবে না। আর গ্রামের মধ্যে এই বাড়িটা রয়েছে তাই আমাদের বেশি কষ্ট করতে হবে না “।
“- আচ্ছা চলুন ভিতরে যাওয়া যাক এতোখন গাড়িতে বসে থেকে টার্য়াড ফিল করছি আমি। আর বিকাল হয়ে গেছে তাই বেশ খুদা লেগেছে ভিতরে গিয়ে কিছু খাওয়া যাবে “।
নোটন আর সমুদ্র বাড়ির ভিতরে চলে যায় তবে ওদের সাথে অন্য লোকেরা এখনো আসতে পারে নাই। নোটন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে যায় এরপর বাহির হয়ে এসে বিছানায় বসে। নোটনের বেশ খিদা লেগেছে তাই সে নিচে যায় কোনো খাবার আছে না কি তার খোঁজ করতে। সমুদ্র রান্না ঘরে গিয়ে হালকা নাস্তা তৈরি করতে থাকে নোটন সেটা দেখে বলে –

“- সমুদ্র কি করছেন আপনি রান্নাঘরে?
“- না তেমন কিছু না নোটন একটু হালকা নাস্তা তৈরি করছি আপনার না খিদে পেয়েছে সেইজন্য। যদিও বাড়িতে কেউ থাকে না বলে রান্না ঘরে বাজার ছিলো না কিন্তু নুডলস আর হালকা কিছু সবিজ ছিলো যা দিয়ে এখন মেনেজ করার চেষ্টা করছি “।
নোটন রান্নাঘরের ভিতরে ঢুকে যায় এরপর সমুদ্রের হাত থেকে চামচ নিয়ে বলে –
“- সমুদ্র আপনার রান্না করতে হবে না আমি করে নিতে পারব। আর খিদে যেহেতু আমার পেয়েছে তাই সেটা নিবারণ করার দায়িত্ব ও আমার “।
“- নোটন টেনশন করবেন না আমি বিদেশে থাকতে অনেক রান্না করেছি সো কোনো সমস্যা হবে না। আর এখন থেকে আপনি আমার বস তাই বসের খেয়াল রাখা পিএ হিসাবে আমার দায়িত্ব।
নোটন রান্না করতে চাই কিন্তু সমুদ্র সেটা হতে দেয় না সেই রান্না করে এরপর তারা একসাথে খাবার খায়। নোটন বলে

“- ওয়াও আপনার হাতের রান্না অনেক মজার “।
“- ধন্যবাদ নোটন ম্যাম “।
সমুদ্র আর নোটন খাবার খেয়ে রেস্ট নিতে রুমে চলে যায় অনেক সময় গাড়ির ভিতরে থাকার কারণে তারা দুইজনে টার্য়াড হয়ে গেছে। বিকালে অফিসের সকলে এসে পৌঁছে যায় জমিদার বাড়ির সামনে। অফিস থেকে খুব বেশি লোক আসে নাই কারণ সেখানের কাজ কর্ম ও দেখে রাখতে হবে। বিকালে সবাই নাস্তা করে বাহিরে বের হয় সমুদ্র রবিনকে বলে দিয়েছিলো শহর থেকে সবার জন্য খাবার নিয়ে আসতে।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১২

গ্রাম অনেক সুন্দর সমুদ্র আর নোটন ঘুরে ঘুরে দেখছে গ্রামটা অনেক মানুষ মাঠে কাজ করছে। হঠাৎ করে শহর থেকে নতুন মানুষ আসার কারণে তারা অবাক হয় তবে কিছু বলে না। নোটন গিয়ে গ্রামের মানুষকে বলে –
‘- আচ্ছা এখানে মহাজন শিমুল সাহেবের বাড়িটা কোথায়?
“- ওই সামনে গিয়ে বাম দিকে যে বাড়িটা দেখবেন সেটা “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৪