এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৪

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৪
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

নোটন আর সমুদ্র এখন মহাজন শিমুল সাহেবের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আশেপাশে বেশ অনেক গার্ড রয়েছে। নোটন ভিতরে ঢুকে যায় তাদের সাথে অফিসের কোনো লোককে নিয়ে আসে নাই। নোটন ভিতরে ঢুকে যায় সেখানে একটা বিশাল বড়ো রুমের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনে একজন লোক বসে আছে। শিমুল নোটন আর সমুদ্রকে দেখে হেঁসে বলে উঠে –

“- মিসেস নোটন চৌধুরী বর্তমানে শহরের সবচেয়ে বড়ো কোম্পানি চৌধুরী গ্রুপের মালিক। শুধু তাই না চৌধুরী বাড়ির সকল সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী সমুদ্র চৌধুরী ওয়েলকাম “।
নোটন শিমুল সাহেবের কথা শুনে সামনে থাকা চেয়ারে বসে যায় সমুদ্র ও বসে। নোটন বলে –
“- ওয়াও আমি এতো অল্প সময়ে এতো জনপ্রিয় হয়ে গেছি সেটা জানতাম না। বাই দ্যা ওয়ে শিমুল তালুকদার আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। আপনার গ্রামটা অনেক সুন্দর ভালো লাগছে আমার “।
“- হুম এই গ্রামটা অনেক সুন্দর। কিন্তু হঠাৎ করে চৌধুরী গ্রুপের মালিক এই ছোট একটা গ্রামে কি শুধু এর সৌন্দর্য দেখতে এসেছে। না অন্য কোনো কারণ আছে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- একটা কথা কি যানেন ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করা সম্ভব কিন্তু যে ঘুমানোর নাটক করে থাকে তাকে ঘুম থেকে উঠানো সম্ভব না। এই গ্রামে আমি কোনো এসেছি সেটা আপনি খুব ভালো করে যানেন “।
“- মিসেস নোটন আপনি যে কারণে এই গ্রামে এসেছেন সেটা কখনো সম্ভব না। এই গ্রামের কোনো মানুষ শ্রমিক হিসাবে চৌধুরী গ্রুপের জন্য কাজ করবে না তারা শুধু আমার জন্য কাজ করবে। তাই আপনি যদি ফিরে যান তাহলে ভালো হবে না হলে এই মহাজন শিমুল কি করতে পারে সেটা আপনাকে দেখাতে হবে “।
শিমুলের কথা শুনে সমুদ্র কিছু বলতে যাবে এর আগে নোটন ওকে থামিয়ে দেয়। শিমুলের কথা শুনে নোটনের মুখে কোনো ভয়ের ছাপ ফুটে উঠে নাই বরং সে আগের মতো একটা ডেভিল হাসি দিয়ে বলে –
“- আরে মহাজন সাহেব আপনি বড্ড বেশি বোকা নোটনের কোনো দরকার নাই গ্রামের মানুষকে। আর এই গরীব মানুষ যদি আমার কোম্পানির শ্রমিক না হয় তাহলে আমার কিছু যায় আসে না। এমনকি এই গ্রামে চৌধুরী কোম্পানির যে ফ্যাক্টরী রয়েছে সেটা ভেঙে ফেলতে এসেছি আমি “।

নোটনের কথা শুনে সমুদ্র আর শিমুল দুইজনে অবাক হয়ে যায় সমুদ্র নোটনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। নোটন গাড়িতে থাকতে বলেছে সে এই ফ্যাক্টরীর কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। তাহলে এখন কোনো বলেছে সে ফ্যাক্টরী ভেঙ্গে ফেলতে চাই আসলে নোটনের মাথায় চলছে কি। শিমুল সাহেব নিজে ও ভাবতে পারে নাই যে নোটন তার কোম্পানি ভেঙ্গে ফেলতে গ্রামে এসেছে। শিমুল সাহেব বলে –
“- মিসেস নোটন আপনি কি বলছেন এইসব? নিজের ফ্যাক্টরী ভেঙে ফেলার জন্য এই গ্রামে এসেছেন আপনি?
“- হুম অবশ্যই বিশ্বাস না হলে কালকে সকালে আপনার সামনে ফ্যাক্টরী ভেঙে ফেলা হবে। তবে আপনার জন্য আমার কাছে একটা দারুণ অফার রয়েছে যাতে আপনার আর আমার দুইজনের লাভ হবে।
শিমুল সাহেব কিছু একটা ভেবে নোটনের দিকে তাকায় আর বলে –

“- কেমন অফার?
“- শিমুল সাহেব আমার জানা মতে আপনি এই গ্রামের মহাজন গ্রামের অনেক মানুষকে ঋণ দিয়েছেন তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করার জন্য। কিন্তু বৃষ্টির জন্য গ্রামের সকলের ফসল ভালো হয় নাই যার জন্য আপনার টাকা ও কেউ পরিশোধ করতে পারে নাই। আর সেইজন্য গ্রামের সকল মানুষ আপনার জন্য বিনামূল্যে কাজ করে।
“- হুম কথাটা সত্যি “।
নোটন নিজের ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে সেটা শিমুলের সামনে রাখে। শিমুল কাগজা দেখে সেখানে কিছু নকশা আকাঁ ছিলো নোটন বলে –

“- আপনি যদি গ্রামের মানুষদের সকল সম্পত্তি তাদের কাজ থেকে কেঁড়ে নিয়ে তাদেরকে এই গ্রাম থেকে বের করে দেন। তাহলে এখানে একটা বড়ো হোটেল তৈরি করতে চাই আমি যেখানে শেয়ার থাকবে ফিফটি ফিফটি সকল ধরনের খরচ থাকবে আমাদের। টাকা যায় মুনাফা হবে তার অর্ধেক টাকার মালিক থাকবেন আপনি “।
শিমুল সাহেব কাগটা ভালো করে দেখেন সেখানে স্পষ্ট ফুটে উঠছে এই গ্রামের সম্পূর্ণ জায়গা জুড়ে হোটেল তৈরি হবে। গ্রামের মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে তবে এই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি উপকার হবে শিমুলের। আর গ্রামের মানুষ বাড়ি ঘর ছেড়ে কোথায় গিয়ে থাকবে তাতে তার কোনো মাথা ব্যাথা নাই। শিমুল বলে –

“- তাহলে আপনি বলতে চান মিসেস নোটন যে কোনো খরচ আমাকে করতে হবে না তবে মুনাফার অর্ধেক আমার হবে “.
“- একদম ঠিক মহাজন সাহেব তবে আপনাকে এই গ্রামের মানুষদের থেকে তাদের বাড়ি ঘর সম্পত্তি সহ সবকিছু কেঁড়ে নিতে হবে। এই হোটেল তৈরি হওয়ার সময় যাতে কোনো রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় আমাদের সেটার খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে। সো আপনি কি রাজি মিস্টার শিমুল?
শিমুল সাহেব অনেকটা সময় চিন্তা করতে থাকে অন্যদিকে সমুদ্র শুধু নোটনের প্রতিটা কাজ দেখে যাচ্ছে। নোটন নিজের কোম্পানির লাভের জন্য গ্রামের মানুষের এতো বড়ো ক্ষতি করতে পারে সেটা ও ভাবতে পারে নাই। সমুদ্র কোনো কথা বলতে যাওয়ার আগে নোটন তাকে থামিয়ে দেয়। শিমুল সাহেব অনেক সময় চিন্তা করে বলে –
“- হুম আমি রাজি খুব তাড়াতাড়ি গ্রামের মানুষদের এই গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করব আমি। আর এই গ্রামে হোটেল তৈরি করব যার হাফ মালিকানা আমার হবে “।

“- ওকে ডিল ডান “।
নোটন আর শিমুল সাহেব হাত মিলিয়ে একে অপরের সাথে হাসি মুখে কথা বলে। রাত প্রায় নয়টা বেজে গেছে নোটন এখন জমিদার বাড়ির সুইমিংপুলের পানির মধ্যে পা দিয়ে বসে আছে। সমুদ্র নোটনের সাথে কোনো কথা বলে নাই গাড়ির মধ্যে ও নিরব ভূমিকা পালন করছে। সমুদ্র বাড়িতে এসে নিজের রুমে চলে যায় নোটন ও আর কোনো কথা বলে নাই।
নোটন যখন বস ছিলো তখন সমুদ্র পিছন থেকে নোটনকে ডাক দেয় কিন্তু নোটনের কানে এয়ারফোন ছিলো বলে সে কিছু শুনতে পায় নাই। সমুদ্র দুইবার ডাক দেওয়ার পর নোটনের কোনো সাড়া না পেয়ে ওর সামনে যায়। নোটন পানির মধ্যে সমুদ্রের ছায়া দেখতে পেয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। নোটন কান থেকে এয়ারফোন খুলে বলে –
“- সমুদ্র কি হয়েছে হঠাৎ করে পিছনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন যে কিছু বলবেন?
“- নোটন আমি আপনাকে কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি আপনি কি শুনতে পান নাই?
“- ওহ সরি আসলে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম তাই শুনতে পাই নাই। এখন বলেন কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?
নোটনের এতো সাধারণ ব্যবহার দেখে সমুদ্র বলে –

“- নোটন আপনি কোনো তখন মহাজনের সাথে এইরকম নোংরা পরিকল্পনা করলেন? নিজের কোম্পানির লাভের জন্য গ্রামের মানুষদের থেকে তাদের বাড়ি ঘর সবকিছু কেঁড়ে নিবেন? সত্যি করে বলুন নোটন আপনি কি করতে চান?
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন হাসে সে বলে –
“- দেখেন সমুদ্র আমার কাছে টাকা ছাড়া আবেগ ভালোবাসার কোনো দাম নাই। কোম্পানির লস পূরণ করতে হলে অনেক টাকা দরকার যার জন্য এই গ্রাম আমার দরকার। আর গ্রামের মানুষদের খুব একটা সমস্যা হলে কয়েক লাখ টাকা হাতে ধরিয়ে দিবো তাহলে হবে “।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র বিশ্বাস করতে পারছে না নোটন এমন কাজ করতে পারে। সমুদ্র বলে –

‘- নোটন এতোটা লোভি হতে পারেন সেটা আমি ভাবতে পারেন নাই। এই কয়েকদিনে আপনার সাথে থেকে আমার মনে হয়েছে আপনি যতোই রাগ দেখান না কোনো মনের দিক থেকে আপনি খুব ভালো একজন মানুষ। কিন্তু শুধু টাকার জন্য যে অন্য মানুষের মাথার উপর থেকে ছাদ সরিয়ে নিতে পারে সে কখনো ভালো হতে পারে না। আপনি একটা লোভী মেয়ে মানুষ “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৩

“- সমুদ্র আমি আপনাকে কখনো বলি নাই আমার বিষয়ে ভালো ধারণা করতে। সেই শুরু থেকে বলে আসছি আমি খুব খারাপ মেয়ে টাকা ছাড়া আমার অন্য কোনো চাওয়া নাই। একটা কথা মনে রাখবেন সমুদ্র টাকা ছাড়া এই নোটনের জীবনে কেউ গুরুত্বপূর্ণ না “।
“- আমি আপনাকে ঘৃণা করি নোটন “।
“- সমস্যা নাই এই নোটনের কারো ভালোবাসার দরকার নাই.

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৫