এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৫

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৫
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

সকালে নোটন দাঁড়িয়ে আছে তাদের গ্রামের কোম্পানির সামনে সাথে তার অফিসের সকলে রয়েছে সেখানে। গ্রামের মানুষ সেখানে দাঁড়িয়ে যা হচ্ছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না কিন্তু নোটন চুপচাপ। সামনে কয়েকটা বেকু এসে কোম্পানি ভেঙ্গে ফেলছে খুব তাড়াতাড়ি কোম্পানির দেয়াল সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নোটনের বাম পাশে দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্র আর ওর ডান পাশে শিমুল সাহেব অবস্থান করছে। নোটন বলে –
“- সো মিস্টার শিমুল আমার কাজ আমি করে ফেলেছি নাও কোম্পানি ভেঙ্গে ফেলেছি। নাও আপনার টার্ন কি করতে হবে সেটা নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে। দুইদিনের মধ্যে গ্রামের মানুষকে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করবেন.
শিমুল সাহেব এখনো তাকিয়ে আছে কোম্পানির ভেঙে যাওয়ার দিকে তার বিশ্বাস হচ্ছে না নোটন সত্যি এইরকম কিছু করতে পারে। তবে যেহেতু নোটন চাই এই গ্রামে এইটা হোটেল তৈরি করতে তাই সে রাজি হয়ে যায়। শিমুল সাহেব বলে –

“- অবশ্যই মিসেস নোটন আপনি যা ইচ্ছা তাই হবে কালকের মধ্যে গ্রামের মানুষ তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে।
“- ওকে তাহলে পরশু থেকে গ্রামে হোটেল তৈরি হওয়ার কাজ তৈরি হবে “।
সমুদ্র রাগী চোখে নোটনের দিকে দেখছে কিন্তু নোটনের আচরণ দেখে মনে হচ্ছে তার এইসব রাগে কিছু যায় আসে না। গ্রামের মানুষের ভিড়ের মধ্যে একজন লোক সবকিছু খুব ভালো করে দেখছিলো সে একটু দূরে গিয়ে কাকে যেনো ফোন দেয় আর বলে –
“- বস নোটন ম্যাম সত্যি ফ্যাক্টরী ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে? তাহলে এখন কি করব আমরা?
ফোনের ওপাশে থাকা লোকটা কথাটা শুনে হাসে সে ভাবতে পারে নাই নোটন গেমটা এতো ভালো করে খেলবে। ফোনের লোক বলে –
“- নোটন ইচ্ছা করে এমন করেছে আচ্ছা এইসব বাদ দাও নোটনকে শেষ করে দাও। নোটন যেনো গ্রাম থেকে জীবিত অবস্থায় শহরে ফিরতে না পারে তার জন্য যতো টাকা লাগবে পেয়ে যাবে। কিন্তু নোটনের শেষ আমি দেখতে চাই “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ফোনে থাকা লোকটার কথা শুনে সে আবার গ্রামের মানুষের ভিড়ের মধ্যে চলে যায়। লোকটা তার পাশে থাকা লোককে ইশারা দেয় সে হাতে একটা পাথর তুলে নেয় এরপর সামনের দিকে ছুড়েঁ মারে। নোটন খুব একটা বেশি দূরে দাঁড়িয়ে ছিলো না যার কারণে পাথর সরাসরি তার মাথায় এসে লাগে। হঠাৎ করে পাথর এসে নোটনের মাথায় লাগার কারণে সবাই অবাক হয়ে যায় নোটন নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখে সেখান থেকে রক্ত পড়ছে।
নোটন মাথায় হাত দিয়ে যখন পড়ে যেতে যাবে ঠিক তখন সমুদ্র ওকে ধরে ফেলে। সমুদ্র নোটনের মাথার দিকে তাকিয়ে দেখে সেখান থেকে অঝরে রক্ত পড়ছে সমুদ্র বলে –
“- নোটন কি হয়েছে আপনার নোটন কথা বলেন? রবিন যাও গাড়ি নিয়ে আসো নোটনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে “।

সমুদ্র কথাটা বলে নোটনকে নিজের কোলে তুলে নেয় অন্যদিকে রবিন গাড়ি নিয়ে আসে। শিমুল সাহেব নিজের গার্ডদের আর্দেশ দেয় কে পাথর ছুঁড়ে মেরেছে তা খুজেঁ বের করতে। ফোনের অপর পাশে যে লোক ছিলো তার কাছে একটা ম্যাসেজ আসে যেখানে লেখা ছিলো নোটনকে মারা যায় নাই। তবে নোটনের মাথার গভীর ভাবে আঘাত করা হয়েছে তবে খুব তাড়াতাড়ি নোটনকে মেরে ফেলবে। লোকটা বলে –
“- নোটন তুমি খুব ভুল করেছো এই চৌধুরী বাড়ির সম্পত্তি নিজের নামে করে। কারণ ওই বাড়ির মালিক শুধু আমি আমার এতোদিনের সব পরিকল্পনা নষ্ট হতে দিবো না আমি.

সমুদ্র নোটনকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে তবে গ্রামে খুব একটা ভালো হাসপাতাল নাই। শিমুল সাহেব শহর থেকে ডক্টর নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠালেন। সমুদ্র গাড়ি করে নোটনকে তাদের বাসায় নিয়ে যায় সেখানে ডক্টর আসে নোটনের মাথায় বেন্ডেজ করে দেয়। নোটনের জ্ঞান এখনো ফিরে আসে নাই সমুদ্র নোটনের বিছানার পাশে তার মাথার কাছে বসে আছে।
সমুদ্র ডক্টরকে জিজ্ঞেস করে –
“- ডক্টর নোটনের অবস্থা কেমন? মাথায় কি খুব বেশ আঘাত লেগেছে?
“- আঘাত খুব বেশি লাগে নাই কারণ পাথর দূর থেকে মারা হয়েছে তবে কপালের কিছু অংশে বেশ ভালো ব্যাথা লেগেছে। বেন্ডেজ করা হয়েছে আমি কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি খাওয়াতে থাকেন আশা করি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে “।

ডক্টরের কথা শুনে সমুদ্র একটু শান্তির নিশ্বাস ছাড়ে এরপর নোটনের দিকে তাকায় কোনো জানি তার আজকে খারাপ লাগছে নোটনের জন্য। রবিন ডক্টরকে এগিয়ে দিয়ে আসে সমুদ্র নোটনের মাথায় হাত রাখে এরপর সুন্দর করে চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। সমুদ্র বলে –
“- সরি নোটন কালকে আপনার সাথে রাগ দেখানোর জন্য কিন্তু কি করব আপনি যা কাজ করেন হঠাৎ করে সেইজন্য রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।তবে আর কখনো আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করব না আমি প্রমিজ “।
সমুদ্র কথাটা বলে নোটনের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে নোটনের এখনো জ্ঞান ফিরে আসে নাই। প্রায় চার ঘণ্টা পর নোটনের জ্ঞান ফিরে আসে সে চোখ খুলে দেখে সমুদ্র তার পাশে শুয়ে আছে। নোটন সেটা দেখে অবাক হয়ে যায় এরপর মাথায় ব্যাথা অনুভব করে যার জন্য মাথায় হাত দিয়ে দেখে সেখানে বেন্ডেজ করা। নোটনের কিছু সময় আগের ঘটনার কথা মনে পড়ে কেউ একজন তার মাথায় পাথর ছুঁড়ে মেরেছে।

নোটনের পাশে সমুদ্র ছিলো তবে তার চোখ একটু লেগে যায় কিন্তু নোটনকে ঘুম থেকে উঠে পড়তে দেখে সমুদ্র বলে
“- নোটন আপনার মাথার ব্যথা কি ঠিক আছে? কোনো সমস্যা হচ্ছে আপনার নোটন?
“- না সমস্যা হচ্ছে না ঠিক আছি আমি। অফিসের সবাই কোথায় ওরা কি সেইফ আছে?

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৪

“- হুম ওরা সেইফ আছে শুধু আপনাকে উদ্দেশ্য করে কেউ পাথর ছুঁড়েছে।শিমুল সাহেব অপরাধীকে খুব তাড়াতাড়ি খুজেঁ বের করবে চিন্তা করবেন না। আপনি এখন রেস্ট নেন আমি খাবার নিয়ে আসছি পরে ঔষধ খেতে হবে “।
সমুদ্র কথাটা বলে চলে যায় নিচে খাবার আনতে নোটন বসে থাকে বেডে। অল্প সময়ের মধ্যে সমুদ্র খাবার নিয়ে আসে নোটনের সামনে এরপর চামচ দিয়ে নোটনের মুখের সামনে ধরে আর বলে –
“- খাবার খেয়ে নেন খিদে পেয়েছে নিশ্চিয় আপনার “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৬