এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৭
আদ্রিতা জান্নাত অরিন
সমুদ্রের প্রতিটা কথা নোটনের হৃদয়ে অদ্ভুত ভালোলাগার অনূভুতি সৃষ্টি করে যার জন্য তার মুখে একটা মায়াবী হাসি ফুটে উঠে। সমুদ্র আর নোটন অনেক সময় চাঁদে অবস্থান করে নোটনের মন খারাপ দূর হয়ে যায়। সময় তার আপন গতিতে বয়ে চলে যায় তবে বেশ অনেক রাত হয়ে যাওয়ার কারণে তারা দুইজনে নিচে নেমে আসে। সমুদ্র নোটনকে কোলে করে নিয়ে আসে রুমে এরপর তাকে শুয়িয়ে দেয় আর বলে –
“- নোটন আপনারা জন্য খাবার নিয়ে আসি আমি। খাবার খেয়ে আবার ঔষধ খেতে হবে না হলে ব্যাথা রাতে বেড়ে যাবে.
নোটন সম্মতি দেয় এরপর সমুদ্র নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে নোটনকে খায়িয়ে দেয়। রাত হলে সকল ব্যাথা বাড়তে থাকে যার জন্য নোটনের কপালে বেশ অনেক ব্যাথা করছে। কিন্তু নোটন সমুদ্রকে আর টেনশনে ফেলতে চাই নাই যার জন্য সে চুপচাপ খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। সমুদ্র তাদের বাসায় থাকতে নোটনের সাথে ঘুমায় কিন্তু এখানে এসে তারা আলাদা রুমে থাকে। তবে আজকে নোটনের শরীরে অসুস্থতার কথা ভেবে সে নোটনের সাথে ঘুমাতে চাই। নোটন কোনো বাধা দেয় না বরং সমুদ্রকে তার সাথে থেকে যেতে বলে।
প্রায় মধ্যরাত সমুদ্র ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু নোটনের চোখে কোনো ঘুম নাই কারণ তার শরীরে প্রচুর জ্বর। মাথার আঘাতের কারণে হয়তো জ্বর এসেছে আর বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে যার জন্য রুমে ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। নোটনের শরীরে ঠান্ডা বাতাসের কারণে বেশ শীত করছে যার জন্য সে একটু কেঁপে উঠে। সমুদ্র ঘুমিয়ে রয়েছে তার কোনো খেয়াল নাই তবে ঘুমের ঘোরে যখন তার হাত হঠাৎ করে পিছন থেকে নোটনকে টার্চ করে। তখন হাতে গরম কিছু অনুভব করে যার জন্য তার ঘুম হালকা হয়ে যায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সমুদ্র ঘুমের মধ্যে শুনতে পারে কেউ শীতে কাঁপতে কাঁপতে কিছু অস্পষ্ট ধ্বনি উচ্চারণ করতে থাকে। সমুদ্র চোখ খুলে নোটনের দিকে তাকায় এরপর তার হাত সযত্নে নোটনের কপালে রাখে। নোটনের কপাল অত্যাধিক গরম হয়ে গেছে মনে হচ্ছে সমুদ্রের হাত পড়ে যাবে। সমুদ্র তখন উঠে পড়ে আর ভালো করে নোটনের কপালে হাতে গায়ে হাত দিয়ে দেখে শরীর অনেক জ্বর। সমুদ্র বলে –
“- নোটন আপনার শরীরে অনেক জ্বর? নোটন আপনি কি কোথাও কষ্ট হচ্ছে নোটন?
শরীরে অতিরিক্ত জ্বরের কারণে নোটনের হয়তো অজ্ঞান হয়ে গেছে প্রায় যার জন্য সমুদ্রের কথা তার কান অবধি পৌঁছাতে পারে না। সমুদ্রের কথার কোনো উত্তর নোটন দেয় নাই যার জন্য সমুদ্র নোটনকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দেখে নোটন ঠান্ডার কাঁপতে আছে। সমুদ্র তাড়াতাড়ি কভার থেকে কিছু উষ্ণ কাপড় নিয়ে এসে নোটনের শরীরের সাথে জড়িয়ে দেয়। সমুদ্র বলে –
“- নোটন এখন ভালো লাগছে আপনার? নোটন?
সমুদ্রের এই কথার ও কোনো উত্তর নোটন দেয় না যার জন্য সমুদ্রের মনে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে। তবে উষ্ণ কোনো কিছু শরীরে সাথে থাকার কারণে নোটনের কাঁপা কমে যায়। সমুদ্র বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে পানি নিয়ে এসে জল পট্টি দেয় নোটনের মাথায়। সমুদ্র বলে –
“- নোটন আপনার শরীরে জ্বর যদি না কমে তাহলে সমস্যা হতে পারে আর গ্রামে কোনো ভালো হাসপাতাল নাই। যেখানে আপনার চিকিৎসা হবে যার জন্য এখন আপনার সেবা যত্ন করা আমার দায়িত্ব “।
সমুদ্র সারারাত সেবা যত্ন করে নোটনের যদি ও নোটন খুব একটা বেশি খেয়াল করতে পারে নাই কারণ সে অসুস্থ ছিলো। কবে নোটন স্পষ্ট ফুটে উঠে সমুদ্রের সেই কেয়ার করা যত্ন করা যা দেখে নোটনের মুখে হাসি ফুটে উঠে। সকাল হয়ে যায় নোটন চোখ খুলে দেখে সমুদ্র তার পাশে বসে আছে। সারা রাত জেগে থাকার কারণে স্বাভাবিক ভাবে সমুদ্রের চোখ লেগে যায় ভোরের দিকে আর নোটনের জ্বর তখন নিয়ন্ত্রণে ছিলো তাই সমুদ্র ঘুমিয়ে পড়ে।
নোটন সমুদ্রের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসে এরপর মাথার সামনে আসা চুল সযত্নে সরিয়ে দেয় সমুদ্র। নোটন বলে –
“- ধন্যবাদ সমুদ্র সারারাত জেগে আমার খেয়াল রাখার জন্য। হয়তো আপনার করা ভুল কখনো ক্ষমা করতে পারব না আমি কিন্তু আমাদের শেষ বিদায়ের সময় এই প্রতিটা সুন্দর মূহুর্ত নিজের সাথে যত্ন করে রেখে। বিদায় নিয়ে চলে যাবো আপনার জীবন থেকে।
নোটন কথাটা বলে সমুদ্রের মুখের দিকে দেখে বেশ অনেকটা সময় এরপর শরীরের অবস্থা ভালো থাকায় ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। জানালা ভেদ করে ভোরের আলোর আভা এসে লাগে সমুদ্রের মুখে যার জন্য তার ঘুম ভেঙে যায়। সমুদ্র চোখ খুলে পাশে নোটনকে না দেখতে পেয়ে খুজঁতে থাকে তখন নোটন ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসে। সমুদ্র বলে-
“- নোটন আপনি ঠিক আছেন? কোনো সমস্যা কি হচ্ছে আপনার? বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলেন কোনো?
“- সমুদ্র এতো টেনশন করতে হবে না আমার জন্য এখন শরীর সুস্থ আমার। আর কালকে সারারাত জেগে আপনি আমার সেবা করছেন যার জন্য সকালে ডাক দেয় নাই আমি। একা একা ওয়াশরুমে যাওয়ার শক্তি এখন আমার আছে.
নোটনকে সুস্থ থাকতে দেখে সমুদ্রের চিন্তা কমে যায় কালকে রাতে সত্যি সে অনেক ভয় পেয়ে যায়। যখন নোটনের জ্বর কমে নাই সমুদ্র বলে –
“- ওকে তাহলে আপনি বসুন। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি “।
“- ওকে যান “।
নোটন বিছানায় বসে যায় আর সমুদ্র ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায় এরপর তারা দুইজনে একসাথে নাস্তা করতে আসে। অফিসের সকল কলিগ তখন নাস্তা করতে টেবিলে বসে নোটন আর সমুদ্রকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে সবাই হাসি দেয়। সবাই নাস্তা করতে থাকে গ্রামের একজন মহিলা এসে রান্না করে যায় শিমুল সাহেব তাকে বলে দিয়েছে। যখর সবাই নাস্তা করতে থাকে তখন সমুদ্র আর নোটনের দিকে তাকিয়ে সকলে মিটিমিটি করে হাসতে থাকে। নোটন বিষয়টা খেয়াল করে আর বলে –
‘- কি হয়েছে সবার খাওয়া দাওয়া রেখে এইরকম করে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসার কি হয়েছে। এখানে কি কেউ কোনো জোকস বলেছে না আমাদের জোকারের মতো লাগছে কোনটা?
নোটনের গলায় এইরকম শক্ত কণ্ঠ শুনে সবার মুখ থেকে হাসি চলে যায় সমুদ্র চুপচাপ খাবার খেতে থাকে। সকলের খাওয়া দাওয়া শেষ করে যখন তারা সোফায় বসে থাকে। তখন শিমুল সাহেব বাড়ির ভিতরে আসে আর বলে –
“- আরে নোটন ম্যাম কেমন আছেন? কালকে যা হয়েছে তার জন্য সত্যি খারাপ লাগছে আমার।গ্রামের মানুষ হয়তো আপনার উপর রাগ করেছে সেইজন্য তাদের মধ্যে থেকে কেউ পাথর ছুঁড়ে মেরেছে? আপনার কি বেশি ব্যাথা লেগেছে?
এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৫
নোটন একটা সৌজন্যে মূলক হাসি মুখে বজায় রেখে বলে –
“- না সেইরকম ব্যাথা লাগে নাই। কাজের কথায় আসব গ্রামের মানুষ কখন তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে চলে যাবে। হোটে তৈরির কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করতে চাই আমি.