এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৮

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৮
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

নোটন আর শিমুল সাহেব কথা বলতে থাকে গ্রামের মানুষের বিষয়ে। সমুদ্র এতোখন নোটনের কথা শুন ছিলো নোটনের মনের মধ্যে ঠিক কি চলছে সেটা বোঝা বড্ড দায় হয়ে পরেছে সমুদ্রের জন্য। তবে সে যানে নোটন কোনো খারাপ কাজ করতে পারে মন থেকে এই বিশ্বাস রয়েছে নোটনের উপর। নোটন আর শিমুল সাহেবের কথা শেষ হয় যেখানে ঠিক করা হয় গ্রামের মানুষদের দুইদিনের মধ্যে গ্রাম ছেড়ে বের করে দিবে।
শিমুল সাহেব নোটনের কথায় প্রথম থেকে রাজি তাই কোনো সমস্যা হয় নাই নোটন একটা বিজয়ের হাসি দেয়। শিমুল সাহেব যখন আলোচনা শেষ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় তখন নোটন সমুদ্রের সাহায্য নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে রুমে আসে। এতোখন নোটনকে কোনো কথা জিজ্ঞেস করে না সমুদ্র তবে এখন সমুদ্র বলে –

“- নোটন আপনার মনে কি পরিকল্পনা চলছে? গ্রামের মানুষকে কি সত্যি আপনি গ্রাম ছেড়ে বের করে দিবেন?
সমুদ্রের কথায় নোটন হাসে আর বলে –
“- সমুদ্র বিজনেস নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করে আসলেই বিজনেস করা যায় না। এর জন্য অনো বুদ্ধি আর সাহস নিয়ে প্রতিটা পদক্ষেপ নিতে হয় ভবিষ্যতে সেটা বুঝতে পারবেন “।
নোটনের কথা শুনে এখন সমুদ্র সিউর হয় সত্যি নোটনের মাথায় কোনো পরিকল্পনা চলছে। তবে নোটনের কথাটা সমুদ্রের খারাপ লাগে নাই কারণ কথাটা সত্যি সে বিজনেস এখনো ভালো করে বুঝতে পারে না। সমুদ্র বলে –
“- হুম সেটা ঠিক আমি ব্যবসা ভালো বুঝতে পারি না তবে এই বিষয় নিয়ে কোনো সমস্যা নাই আমার। বউয়ের থেকে অল্প অল্প করে সময় নিয়ে সবকিছু শিখে নেওয়া যাবে। আর স্বামী যদি কোনো জিনিস না বুঝতে পারে তাদের আর্দশ বউ হিসাবে তাকে সাহায্য করা আপনার কর্তব্য নোটন “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সমুদ্রের কথা শুনে নোটনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে তবে সেটা ভালো লাগার না বরং কষ্টের। কারণ তার আর সমুদ্রের সম্পর্কের মধ্যে সময় খুব কম রয়েছে তাকে ফিরে যেতে হবে আবার নিজের পরিবারের কাছে। কিন্তু তার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া প্রতিটা ঘটনার বদলা তাকে নিতে হবে। নোটন বলে –
“- কে বলতে পারে সমুদ্র হয়তো আপনাকে সঠিক কাজ শিখিয়ে দেওয়ার জন্য আপনার সময় থাকবে না বা সময় থাকবে না। সমুদ্র আপনার জন্য খুব ভালো হবে এই মিথ্যা নাটক না না কারণ নোটন কখনো কারো কথায় নিজের প্রতিশোধ ভুলে যাবে না। যতদিন আমার নিশ্বাস থাকবে ততদিন ওই চৌধুরী পরিবারকে কষ্ট পেতে হবে “।
সমুদ্র যদিও এতোখন মজা নিয়ে নোটনের সাথে কথা বলতে থাকে তবে নোটনের কথা শুনে তার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। নোটনের প্রতিটা কথা যেনো সত্যি চলে চলেছে এমন মনে হয়। সমুদ্র একটু গম্ভীর হয়ে বলে –
“- নোটন এই চৌধুরী পরিবারের সাথে আমার কোন বিষয়ে এতো শএুতা রয়েছে? শুধু কি তারা আপনার উপর অত্যাচার করেছে সেইজন্য তাদের শাস্তি দিতে চান? না অন্য কোনো কারণ আছে কি ক্ষতি করেছে এই পরিবার আপনার.

সমুদ্রের কথা শুনে নোটন এক রাতের চিৎকার কথা মনে পড়ে চোখ বন্ধ হয়ে এক ফোঁটা অশ্রু ঝমে যায় সেখানে। নোটন নিজের মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা ঘৃণা যেটা তার কথার মধ্যে প্রকাশ পায় –
“- সময় হয়ে গেছে সত্যি ঘটনা জানার সমুদ্র। খুব তাড়াতাড়ি যানতে পারবেন কে আমি? আসল পরিচয় কি আমার? আর কব শএুতা আপনাদের সাথে আমার? তবে একটা অনুরোধ নিজের মামার কথায় এই জঘন্য নাটক করা বন্ধ করেন আমার সাথে সমুদ্র?
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র ওর দিকে অবাক নয়নে তাকায় নোটন কি করে যানে সমুদ্র যা করেছে তার মামার কথায় করেছে। সমুদ্র বলে –
“- বিশ্বাস করেন নোটন মামা আমাকে বলেছে আপনার কোম্পানির চাকরির অফার গ্রহণ করার জন্য। আপনার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করার জন্য কিন্তু শুধু সেইজন্য আমি আপনার এতো কেয়ার করছি না নোটন। আমি শুধু জানতে চাই আসল ঘটনা কি? এই সমুদ্র এতোটা খারাপ না নোটন?

“- হুম সেটা আমি জানি সমুদ্র কিন্তু আপনার আর আমার এা হওয়া কখনো সম্ভব না। আর আপনার প্রতিটা অন্যায় ভুলে গিয়ে মাফ করতে পারব না আমি। সো আমার থেকে দূরে থাকুন কোনো মায়া বা ভালোবাসায় জড়ানো বন্ধ করেন।কারণ পরিশেষে অনেক কষ্ট পাবেন আপনি.
“- নোটন আপনি আমাকে যা শাস্তি দিতে চান তাই দেন। কিন্তু আমার থেকে দূরে যাবেন না নোটন দয়া করে.
“- সেটা কোনোদিন হতে পারে না তাই দূরে সরে যান অনেক দূরে। এখন রুম থেকে চলে যান আমার মাথা ব্যাথা করছে সমুদ্র আর যদি পারেন তাহলে জীবন থেকে ও বেরিয়ে যান আমার “।

অন্যদিকে গ্রামের প্রতিটা মানুষকে শিমুল সাহেব গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেছেন। শিমুল সাহেবের বাড়ির গার্ড সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে তাদের বাড়ি কালকে ভেঙে ফেলা হবে সেই আদেশ দিয়েছে। যার জন্য গ্রামের মানুষ প্রচুর রেগে গেছে শিমুল সাহেবের উপর কিন্তু তারা কি করবে বুঝতে পারে না।
সমুদ্র নোটনের রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে ফিরে যায় আর নোটন নিজের ফোন বের করে কাকে যেনো ফেন দেয় আর বলে –

“- কি অবস্থা কাজ কতদূর হয়েছে? ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার?
“- না ম্যাম কোনো সমস্যা হয় নাই। টেনশন করবেন না যেমন পরিকল্পনা করা হয়েছে ঠিক তেমন হবে। আর শিমুল সাহেবকে কি করে ফাঁসাতে হয় সেটা আমার উপর ছেড়ে দেন.
“- ওকে তোমার উপর বিশ্বাস রয়েছে আমার। আর কালকে যে লোক আমার উপর হামলা করেছে তার কোনো খোঁজ কি পাওয়া গেছে?
“- জি ম্যাম তাকে খুব তাড়াতাড়ি আপনার সামনে হাজির করব “।
“- ওকে “।

নোটন কথাটা বলে ফোন রেখে দেয় এখন থেকে তার আসল খেলা শুরু হবে যেটা সে চেয়েছে সেটা পূরণ হবে। নোটন নিজের ঠোঁটে একটা ডেভিল হাসি বাজায় রাখে এরপর ল্যাপটপ নিয়ে অফিসের কাজ করতে থাকে। গ্রামের মানুষ সকলে আসে গ্রামের প্রধানের বাড়িতে যিনি শিমুল সাহেবের পর গ্রামের মানুষকে অর্ডার করতে পারেন। ওনি খুব ভালো মানুষ সকলে তার সিদ্ধান্ত মেনে নেয় বিপদে আপদে সকলকে সমাধান দেন ওনি। তাই সকলে ওনার বাড়ির সামনে ভিড় জমা করেছে।
গ্রামের মানুষ যখন আতিক সাহেবের বাড়ির সামনে এসে তাকে ডাক দেয়। ওনি রুম থেকে বেরিয়ে আসে সবার কথা শুনে এরপর বলে –

“- কি হয়েছে সবার মহাজন নিশ্চয়ই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে? তার জন্য তোমারা আমার কাছে পরামর্শ নিতে এসেছো?
বাড়ির মানুষ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় এরপর আতিক সাহেব বলে –
“- শিমুল মহাজন থেকে ঋণ নিয়ে জমিতে চাষ করতে বারণ করেছি তখন আমি কিন্তু তোমরা আমার কথা শুনো নাই। এখন কি আর করার আছে ওনার কাছে তোমাদের বাড়ির দলিল রয়েছে যার ফলে ওনি তোমাদের বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছে “।
“- আতিক সাহেব কোনো একটা সমাধান দেন আমাদের। না হলে পরিবার পরিজন বউ বাচ্চা নিয়ে ভিটে মাটি ছেড়ে রাস্তায় ভিক্ষা করে খেতে হবে সবার “।

আতিক সাহেব সাবার কথা বুঝতে পারে এরপর ভিতর থেকে একজন লোককে বের হয়ে আসতে বলে। গ্রামের সবার দেখে একটা ছেলে এসেছে তাই যার হাতে ব্যাগ রাখা। যার নাম সুমন। সুমন বলে –
“- আপনারা হয়তো আমাদের চিনতে পারবেন না কিন্তু আপনাদের সাহায্য করার জন্য এসেছি আমি। শিমুল মহাজনের কাছে আপনাদের বাড়ির দলিল বন্ধক রয়েছে যদি আপনারা তাকে দিতে পারে তাহলে সে দলিল ফিরিয়ে দিবে।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৭

“- কিন্তু এতো টাকা আমরা কি করে ফিরত দিবো?
“- আমি আপনাদের সকল টাকা দিবো। বিনিময়ে আমার কিছু শর্ত রয়েছে যা পরে আপনাদের জানানো হবে। রাজি থাকলে হ্যা বলুন সবাই না হলে নিজের বাপ দাদার বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে সবসময়ের জন্য “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১৯