এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ২১
আদ্রিতা জান্নাত অরিন
নোটন রাতে নিজের রুমে বসে অফিসের কাজ করছে এমন সময় সমুদ্র রুমে আসে। নোটন সমুদ্রের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দেয়। সমুদ্রের রুমে থাকতে ভালো লাগছে না তাই সে বাহিরে চলে যায় সেটা দেখে নোটন। হঠাৎ করে নোটনের ফোনে একটা কল আসে যেটা ওর বাবার নাম্বার ছিলো নোটন ফোন রিসিভ করে হাসি মুখে বলে –
“- হুম আব্বু বলো। কি অবস্থা তোমাদের? কেমন আছে?
“- আমরা ভালো আছি কিন্তু নোটন শুনলাম জাফর এসেছে বিদেশ থেকে। ও বাড়িতে ফিরে কোনো ঝামেলা করে নাই তো?
“- না আব্বু এখনো সব ঠিক আছে কিন্তু জাফর মামার মনে কি চলছে সেটা বুঝতে আমার একটু সময় লাগবে। কোনো যানি মনে হচ্ছে ওনি আমার আসল পরিচয়ের বিষয়ে সব জেনে গিয়েছেন?
“- তাহলে তোমাকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে নোটন। আগের ঘটনা নিশ্চয়ই তুমি ভুলে যাও নাই নোটন?
“- কোনো ঘটনা ভুলে যায় নাই সব মনে আছে তুমি টেনশন করবে না সব ঠিক হয়ে যাবে “।
নোটন তার মা আর বোনের বিষয়ে কথা বলে এরপর ফোন রেখে দেয়। সকাল হয়ে যায় সমুদ্র আর নোটন দুইজনে ঘুম থেকে উঠে খাবার খেয়ে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। নোটন আজকে অনেক দিন পর অফিসে যাবে আর অনেক কাজ রয়েছে যেটা শেষ করতে হবে।
অফিসে সময় তখন দুপুর নোটন নিজের কেবিনে বসে অফিসের একটা ফাইল চেক করতে থাকে। তখন ওর ফোনে ডক্টরের কল আসে যিনি তার মায়ের চিকিৎসা করছেন। ফোনে ডক্টরের নাম্বার দেখে নোটনের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠে নোটন তাড়াতাড়ি ফোন রিসিভ করে আর বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- ডক্টর হঠাৎ করে আপনি ফোন কোনো দিলেন? আম্মু বা আপুর কি কিছু হয়েছে?
“- আসলে ম্যাম আপনার আম্মুর শরীর কোনো রেসপন্স দিচ্ছে না ওনার শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। শরীরের অবস্থা এমন খারাপ হতে থাকলে আপনার আম্মুকে বাঁচানো যাবে না নোটন ম্যাম। আপনি দয়া করে হাসপাতালে চলে আসুন “।
ডক্টরের কথা শুনে নোটন এক মিনিট ও অফিসে অবস্থা করে নাই যতো দ্রুত সম্ভব গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য। হঠাৎ করে নোটনকে এমন তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যাওয়া দেখে সমুদ্রের বেশ অবাক লাগে। সে নোটনের সাথে যাওয়া ইচ্ছা প্রকাশ করে কিন্তু নোটন তাকে নিষেধ করে দেয়। নোটন অনেক আগে থেকে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে যার তাকে ড্রাইভারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় নাই।
অন্যদিকে আজকে কাজ করতে গিয়ে আহনাফ চৌধুরীর সাথে থাকা একজন কর্মচারীর হাত কেটে গিয়েছে। একসাথে কাজ করার ফলে বর্তমানে সকলের সাথে আহনাফ সাহেবের সুসম্পর্ক স্থাপন হয়ে। যার জন্য ওনি তার পাশে থাকা শ্রমিককে নিয়ে হাসপাতালে যান সেখানে তার চিকিৎসা হবে । নোটন যখন হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় তখন ওর বাবা কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে আইসিইউ জানালার ফাঁক দিয়ে তার বাবাকে দেখতে থাকে। নোটন তার বাবাকে দেখে বলে –
“- আব্বু কি হয়েছে আম্মুর? ডক্টর কি বলেছে? আম্মুর অবস্থা কি এখন আগে থেকে বেটার হয়েছে? আব্বু কান্না কোনো করছো বলো?
নোটনের কথা শুনে ওর আব্বুর চোখে জমে থাকা পানি অশ্রু হিসাবে গড়িয়ে পড়ে৷ পুরুষ মানুষের কান্না করতে হয় না কিন্তু নিজের স্ত্রীকে এমন অবস্থায় দেখে কোন পুরুষ শক্ত থাকতে পারবে। আব্বুর চোখে পানি দেখে নোটনের মনের ভয় দিগুণ বেড়ে যায় নোটন শান্ত গলায় বলে –
“- আব্বু কান্না কোনো করছো? আম্মু কিছু হয় নাই তাই না। আমার আম্মুর কোনো কিছু হতে পারে না বলো না তুমি? ডক্টর কি বলেছে?
নোটনের আব্বু কোনো কথা বলতে পারে না তখন নিজের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসেন ডক্টর আসিফ। ডক্টর আসিফ নোটনের ফ্যামিলি ডক্টর অনেক আগে থেকে তার মায়ের চিকিৎসা করছেন। ডক্টর বলে –
“- মিস নোটন এতো টেনশন করবেন না। দেখুন আপনার আম্মুর শরীরের অবস্থা ভালো না যদি চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ওনার শরীর কোনো রেসপন্স না করে তাহলে হয়তো ওনাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।
ডক্টরের কথা শুনে নোটন ভেঙে পড়ে সে জীবনের প্রতিটা সিদ্ধান্তে নিজেকে শক্ত রেখেছে কিন্তু এখন সেটা পারছে না। নোটন দুই কদম পিছিয়ে যায় এরপর বলে –
“- আপু কোথায়? আপু কি কান্না করছে?
“- না ওনাকে ওষুধ দেওয়া হয়েছে ঘুমিয়ে পড়েছেন ওনি। জেগে থাকলে হয়তো কান্না করতো “।
“- ভালো করেছেন ডক্টর “।
নোটন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আইসিইউ জানালার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মায়ের নিস্তেজ শরীর দেখে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে ও তার মা কতো শান্ত আর হাসি খুশি মানুষ ছিলো কিন্তু ওই জাফর মামা সব নষ্ট করে দিয়েছে। ছোটবেলা থেকে নোটনের জীবন থেকে সকল সুখ শান্তি কেড়ে নিয়েছে তার জীবন থেকে পরিবারের ভালোবাসন কেড়ে নিয়েছে। নোটন সেইদিন রাতের কথা মনে করে নিজের শরীরে আগুনের লাভার মতো জ্বলে উঠা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে।
তার বাবা অনেক ভেঙে পড়েছেন নিজের স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালোবাসেন ওনি তাই হয়তো এমন অবস্থায় তাকে মেনে নিতে পারছে না। নোটন গিয়ে তার বাবার পাশের চেয়ারে বসে আর বলে –
“- আব্বু দেখো আম্মুর কিছু হবে না। ওনি একদম ঠিক হয়ে যাবে “।
নোটনের বাবা তার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয় এরপর নিজেদের অতীতের কথা মনে করে। নোটন তার বাবাকে শান্ত করে তাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে যায় সেখানে খাবার অর্ডার করে কারণ তার বাবা ডায়াবেটিসের রোগী। সঠিক সময়ে খাবার না খেলে ওনার শরীর অসুস্থ হয়ে পড়বে যার জন্য তারা এখানে আসে। আহনাফ সাহেব তার পাশে থাকা কর্মচারীর সাথে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করিয়ে তার সাথে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয়।
আহনাফ সাহেব হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যখন রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে তখন হঠাৎ করে রেস্টুরেন্টে থাকা একটা মেয়েকে দেখে সে থমকে যায়। ভালো কর৷ খেয়াল করে দেখে সেটা নোটন কিন্তু নোটনের এই সময় অফিসে থাকার কথা ও রেস্টুরেন্টে কি করে। আহনাফ সাহেব সেটা ভেবে রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে নোটনকে দেখে যখন তার কাছে যাবে তখন হঠাৎ করে পাশে থাকা একজন বৃদ্ধ লোককে দেখে অবাক হয়ে যায়।
আহনাফ চৌধুরী পা সেখানে অবশ হয়ে যায় ওনি ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। আহনাফ চৌধুরী ভাবতে পারে নাই যে নোটন এই লোকের সাথে থাকতে পারে। নোটন খাবার খেয়ে রেস্টুরেন্টে থেকে বের হয়ে আবার হাসপাতালে যায় আহনাফ সাহেব তার পিছনে পিছনে যায়। নোটন তার বাবার হাত ধরে নিয়ে যায়। আহনাফ চৌধুরী হাসপাতালের একজন ডক্টরের কাছে যানে পারে নোটনের বাবা সেই লােকটা।
বাবা কথাটা শুনে আহনাফ চৌধুরীর শরীরে রাগে জ্বলে উঠে হাত শক্ত করে বলে –
এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ২০
“- নোটন তুমি কি করে ওর মেয়ে হয়ে আমার বাড়ির বউ হতে পারো। এখন বুঝতে পারছি তুমি কোনো এইসব করেছো? তোমাকে আমি খুন করে ফেলবো নোটন। তুমি আহনাফ চৌধুরী ভয়ংকর রূপ দেখবে আজকে “।