এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৪

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৪
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

সকালে খাবার টেবিলে সবাই খাওয়ার জন্য আসে নাবিলা বেগম আর মলি বেগম খাবার বেড়ে দেয়। নোটন ও নিজের খাবার নিয়ে খেতে থাকে আহনাফ চৌধুরী খাবার খেয়ে বলে
“- খাবার বেশ ভালো হয়েছে কে রান্না করেছে?
নাবিলা বেগম বেশ খুশি নিয়ে বলে –
“- আমি আর মলি রান্না করেছি খাবার প্রথমবার। সত্যি কি অনেক ভালো হয়েছে।
আহনাফ চৌধুরী নাবিলা বেগম কথা শুনে ওনার দিকে দেখে তার বউ আজকে বিয়ের পর প্রথমবার রান্না করেছে। আহনাফ সাহেবের এখনো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওনি বলে –

“- নাবিলা জীবনের প্রথম তুমি রান্না করলে তাও এতো ভালো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার। সত্যি খাবার দারুণ হয়েছে।
মলি বেগমের প্রশংসা ও করে তার স্বামী সবাই খাবার খেয়ে অনেক খুশি হয়। নোটন শুধু নিজের খাবার খেতে থাকে আর চুপচাপ সবার কথা শুনে তার মন খুশি আজকে। সবার খাওয়া শেষ করে নোটন উপরে উঠে যায় সেখান থেকে রেডি হয়ে নিচে নামে। নোটন গাড়ি করে এখন অফিসে যাচ্ছে আজকে থেকে তার নতুন মিশন শুরু হবে।
নোটন যখন গাড়িতে থাকে তখন তার ফোনে কল আসে যেটা তার বাবার নাম্বার। ড্রাইভার নোটনের লোক তাই তার সামনে কথা বললে কোনো সমস্যা হবে না নোটন ফোন ধরে আর বলে –
“- হুম আব্বু বলো। কি অবস্থা সবকিছু কি ঠিক আছে ডক্টর কি কোনো নতুন আপডেট দিয়েছে?
“- ডক্টর আর কি নতুন আপডেট দিবে এতোবছর এক কথা শুনতে হচ্ছে জানি না কবে যে ও সুস্থ হবে। আচ্ছা বাদ দাও নোটন তোমার কি অবস্থা বলো চৌধুরী বাড়ির সবাই কি তোমার কথা মেনে নিয়েছে। তুমি কি ঠিক আছো নোটন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- হুম আব্বু আমি ঠিক আছি আর সবকিছু ঠিক আছে আমি যেমন করে পরিকল্পনা করেছি সবাই সেইরকম করে চলছে। আচ্ছা আব্বু আমাদের সাথে কোনো এইরকম হলো মাঝে মধ্যে মনে হয় এই পৃথিবীতে সবাই শুধু আমাকে টাকার জন্য ভালোবাসে। আমি কি এতোটা খারাপ আব্বু যে আমাকে মন থেকে একটু ভালোবাসা যায় না “।
নোটনের কথা শুনে ওর আব্বু বুঝতে পারে তার মেয়ে ঠিক কতটা অসহায় অনুভব করছো নিজেকে। আব্বু বলে –
“- আমার মেয়ে এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মেয়ে সবাই তাকে ভালোবাসবে। তবে সবার জন্য ভালোবাসা পাওয়া এতো সহজ হয় না নোটন আর ওই চৌধুরী বাড়ির থেকে ভালোবাসা অর্জন প্রায় অসম্ভব। ওরা শুধু টাকাকে ভালোবাসে অন্য কিছুকে না “।

“- হ্যা আব্বু ঠিক বলেছো ওই চৌধুরী বাড়িতে টাকা ছাড়া কোনো মানুষের দাম নাই। তবে ওরা এখনো নোটনকে চিনতে পারে নাই আমি ঠিক কতটা খারাপ সেটা আজকে থেকে ওরা বুঝতে পারবে “।
নোটন আর ওর আব্বু অনেক সময় কথা বলে এরপর নোটন তার অফিসে পৌঁছে যায়। নোটন গাড়ি অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সেখান থেকে নেমে দাঁড়ায়। অফিসের সকল স্টাফ ফুল দিয়ে নোটনকে শুভেচ্ছা জানায় নোটন বলে –
‘- ধন্যবাদ সবাইকে এখন অফিসের ভিতরে যাওয়া যাক অফিসের টাইম শুরু হয়ে যাবে “।
নোটন অফিসের ভিতরে ঢুকে যায় একবার ভালো করে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে। এরপর নিজের কেবিনে চলে যায় সামনে থাকা একটা চেয়ারে বসে আজ থেকে সে এই চৌধুরী গ্রুপের এমডি। নোটন মনে মনে বলে –
“- ফাইনালি এই কোম্পানির এমডি হয়েছি আমি তিনটা বছর শুধু মাএ এই দিনের অপেক্ষা করে কাটিয়ে দিয়েছি। আজকে আমার সকল পরিকল্পনা সফল হয়েছে এখন ওই চৌধুরী পরিবারকে আমি বুঝাবো টাকা আর পাওয়ার কি জিনিস “।
নোটন যখন চেয়ারে বসে ছিলো তার কর্মচারী আসে তার রুমে আর বলে –

“- ম্যাম ভিতরে আসতে পারি “।
“- হুম আসুন “।
“- ম্যাম আমার নাম রাজু। আপনি আমাকে কোনো কেবিনে আসতে বললেন?
“- মিস্টার রাজু আপনাকে আমি কেবিনে আসতে বলেছি দুইটা কাজ করার জন্য। প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে অফিসের সকল লোককে আমি একসাথে দেখতে চাই সেখানে সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে সবাই যেনো থাকে। আর অফিসের সকল জরুরি কাজের ফাইল আমার কেবিনে চাই “।
“- ওকে ম্যম এখুনি যাচ্ছি “।
নোটনের কথা অনুসারে রাজু অফিসের সবাইকে একসাথে করে আর সব কাগজ রেডি করে। নোটন নিজের কেবিন থেকে বাহিরে বের হয় এবং অফিসের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে –
‘- সকলকে একসাথে উপস্থিত হতে বলেছি কারণ আজকে থেকে এই অফিস সহ চৌধুরী বাড়ির সকল সম্পত্তির মালিক আমি। যেহেতু অফিসের মালিক আমি তাই আজ থেকে আমি যেই নিয়ম তৈরি করব সেই নিয়মে অফিস চলবে। প্রথম নিয়ম অফিসের সকলে একটা নিদিষ্ট সময়ে অফিসে ঢুকবে একমিনিটের দেরি যাতে না হয়। আর অফিসের কাজ যেনো ঠিক সময়ে সম্পূর্ণ হয়ে যায় লেইট করা বা কাজ পেন্ডিং রাখা আমার একদম পছন্দ না “।
নোটন এইবার সিকিউরিটি গার্ডকে বলে –
“- আজকে পর থেকে নোটন চৌধুরী ছাড়া চৌধুরী বাড়ির সকল সদস্যর এই অফিসে ঢুকা নিষেধ। আমার অনুমতি ছাড়া যদি কেউ চৌধুরী বাড়ির কোনো লোককে এই অফিসে ঢুকতে দেয় তাহলে তাকে চাকরি থেকে বাতিল করা হবে এবং তাকে শাস্তি প্রদান করা হবে “।
নোটন কয়েকটা রুলস সকলের জন্য ঠিক করে দেয় এরপর বলে –

“- রাজু অফিসের সকল ফাইল আমার রুমে নিয়ে আসো চেক করব আমি “।
নোটন কথাটা বলে নিজের রুমে চলে যায় রাজু সকল ফাইল সেখানে নিয়ে যায়। কিন্তু অফিসের সকল স্টাফের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে কারণ যখন আহনাফ চৌধুরী এই কোম্পানির মালিক ছিলো তখন ওনি এতো সব বিষয়ে খেয়াল রাখেন নাই। অফিসে যে কেউ যেকোনো অফিস এসেছে তার তার কাজ করেছে কিন্তু এখন নোটন এসে সব শেষ করে দিয়েছে।
আহনাফ চৌধুরী আর অসীম চৌধুরী প্রতিদিনের মতো অফিসে এসেছে গাড়ি থেকে নেমে যখন তারা অফিসের ভিতরে ঢুকতে যাবে। হঠাৎ করে সিকিউরিটি গার্ড তাদের আটকে দিয়ে বলে –
“- সরি স্যার আপনারা এই অফিসে ঢুকতে পারবেন না।দয়া এখান থেকে চলে যান “।
আহনাফ সাহেব অবাক হয়ে যায় সিকিউরিটি গার্ডের সাহস দেখে তার অফিস থেকে তাকে বলছে বেরিয়ে যেতে। আহনাফ বলে –
“- কি বললে এই অফিসের ভিতরে ঢুকতে পারব না তোমার সাহস কি করে এই কথাটা বলার। সামান্য একজন সিকিউরিটি গার্ড হয়ে তুমি আমার মুখের উপর কথা বলছো.
“- সরি স্যার কিন্তু নোটন ম্যাম নিষেধ করেছে চৌধুরী বাড়ির কেউ যেনো আজকের পর থেকে অফিসে ঢুকতে না পারে। আর যদি এখন আমরা আপনাদের অফিসে ঢুকে দেয় তাহলে নোটন ম্যাম আমাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দিবে “।
আহনাফ চৌধুরী আর অসীম চৌধুরী ওর কথা শুনে রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। নোটনের এতো বড়ো সাহস কি করে হয় এই কথা বলার আহনাফ চৌধুরী ফোন বের করে নোটনকে কল দেয়।নোটন ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার শশুড় আব্বু কল করেছে সে যানে কি হতে পারে নোটন চেয়ার থেকে উঠে যায় জানলার কাছে যায় আর বলে

“- কি হয়েছে শশুড় আব্বু হঠাৎ করে আমাকে কোনো ফোন করলেন?
“- নোটন তুমি না কি সিকিউরিটি গার্ডকে বলেছো আমাদের যাতে অফিসে ঢুকতে না দেয়?
“- আচ্ছা শশুড় আব্বু একটু সিকিউরিটি গার্ডকে ফোনটা দেন তাকে সব বলে দিচ্ছি আমি “।
নোটনের কথা শুনে আহনাফ চৌধুরী তার ফোন সিকিউরিটি গার্ডকে দেয়। নোটন বলে
-“গার্ড আমি তোমাদের তখন যা বলেছি তাই করো সুন্দর করে আহনাফ চৌধুরী আর অসীম চৌধুরীকে অফিস থেকে বের করে দাও। ওনারা যেনো অফিসে ঢুকতে না পারে “।
সিকিউরিটি গার্ড আর কি করবে সে আহনাফ চৌধুরী আর অসীম চৌধুরীকে জোর করে অফিস থেকে বাহির করে দেয়। নোটন জানালা দিয়ে সব দেখতে থাকে আর হাসতে থাকে আর বলে –
“- এখন মাএ অফিস থেকে বের করেছি এরপর দেখেন শশুড় আব্বু আপনাদের সাথে আমি কি কি করি “।
নোটন কথাটা বলে নিজের কেবিনে চলে যায় এরপর নিজের কাজ শেষ করে বাড়িতে ফিরে যায়। নোটন যখন চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে তখন সবাই তার দিকে এগিয়ে আসে নোটন সেটা দেখে বলে –
“- কি হয়েছে এখানে সবাই এইরকম এগিয়ে আসছেন কোনো?
“- নোটন তুমি কোনো আমাকে আর অসীমকে অফিস থেকে বাহির করে দিলে। ওই অফিসের এমডি আমি “।
নোটন কথাটা শুনে একটা ডোনট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে –
“- অফিসের এমডি আপনারা আগে ছিলেন শশুড় আব্বু কিন্তু এখন আর নাই। অফিস আমার আর সেখানে আমি কাকে ঢুকতে দিবো কাকে বাহির করে দিবে্া সেটা পুরােটা আমার বিষয়। তার জন্য নিশ্চয়ই কাউকে কৈফিয়ত দিতে চাই না “।
অসীম চৌধুরী বলে –

“- নোটন তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করে ফেলছো আমরা তোমার সব কথা মানতে বাধ্য নয়। আর তুমি যানো ওই অফিস বড়ো করতে আমাদের কতো কষ্ট হয়েছে সেই অফিস থেকে তুমি আমাকে বাহির করে দিলে “।
“- কি বললেন অফিস বড়ো করতে কষ্ট করেছেন আপনারা কি কষ্ট করেছেন শুনি। অফিসের প্রতিটা হিসাবে গন্ডগোল রয়েছে গত দুইবছরের কোনো উন্নতি হয় নাই। শুধু লস হয়েছে আর কয়েকবছর পর আপনারা রাস্তার ভিখারি হয়ে যাবেন।
“- তোমাকে আমাদের নিয়ে ভাবতে হবে না নোটন আর ব্যবসায় লাভ লস থাকে “।
নোটন কথাটা শুনে বলে –
“- ব্যবসা আমার সেখানে লস আমি চাই না আর আজকের পর থেকে অফিসে আপনাদের ঢুকা নিষেধ। আর চৌধুরী বাড়ির সকল খাবার আপনাদের জন্য নিষিদ্ধ যদি নিজেরা রোজগার বাজার করতে পারেন তাহলে শুধু খাবার পাবেন?.
চৌধুরী বাড়ির সকলে নোটনের কথা শুনে অবাক হয়ে যায় তারা ভাবতে পারে নাই নোটন এইরকম করতে পারে। আহনাফ চৌধুরী বলে –

‘- নোটন তুমি এইসব কি বলছো খাবার বন্ধ মানে আর রোজগার করতে হবে কোনো আমাদের অফিস থেকে টাকা আসতে। আর আমরা রোজগার করব কি করে যদি তুমি আমাদের অফিসে যেতে না দাও “।
“- আপনারা কি করে রোজগার না করবেন সেটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু আমার টাকা দিয়ে আজকের পর থেকে এই বাড়ির কোনো লোকে খাওয়ানো হবে না। যে টাকা দিবে তার খাওয়া রয়েছে আর যার টাকা নাই তার খাওয়া নাই “।
“- যদি অফিসে ঢুকতে পারি তাহলে কি করে টাকা রোজগার করব রাস্তায় ভিখা করে “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৩

“- যদি দরকার পরে তাহলে ভিখা করবেন সমস্যা কি কিন্তু আমি কোনো টাকা আপনাদের খাওয়ার জন্য দিবো না। নিজের বউ নিজের সন্তানদের খাওয়ার দায়িত্ব আপনাদেন যদি না পারেন তাহলে না খেয়ে থাকবেন।আপনারা না খেয়ে মারা যান তাহলে ও এই নোটনের কোনো কিছু যায় আসে না.
আজকের পর্ব দেখে দয়া করে নোটনকে ভুল বুঝবেন না নোটন কোনো এইরকম করেছে সেটা পরের পর্বে জানতে পারবেন। তাই আগেই নোটনকে খারাপ মনে করবেন না আর কোনে ভুল করলে মাফ করে দিবেন।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৫