এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৫

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৫
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

নোটনের কথাটা শুনে চৌধুরী বাড়ির সকলের মুখে চিন্তার ছাপ পড়েছে নোটন আবার বলে –
“- কালকে শেষ দিন যেদিন আপনারা চৌধুরী বাড়ির খাবার খেতে পারবেন। পরশু থেকে আপনারা নিজেদের সকলের খাবার নিজেরা রোজগার করবেন আমার কোনো টাকা আপনাদের জন্য বরাদ্দ থাকবে না।
নাবিলা বেগম বলে –
-” নোটন তুমি কিন্তু অতিরিক্ত করছো এখন এই চৌধুরী বাড়ির সবকিছু তোমার নামে লিখা রয়েছে বলে কি তুমি যা ইচ্ছা তাই করবে। তোমার কি নূন্যতম মনুষ্যত্ব নাই তোমার শশুড় এই বয়সে কি করে চাকরি করবে?
নাবিলা বেগমের কথা শুনে নোটন হাসে সে তাকিয়ে দেখে সেখানে সমুদ্র দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে রাইমা। নোটন বলে –
“- আমি অতিরিক্ত এখনো করি নাই শাশুড়ী আম্মু আজকের পর থেকে শুরু করবো। আর মনুষ্যত্ব বোধের যদি কথা আসে তাহলে আপনাদের মনুষ্যত্ব কোথায় ছিলো এই তিনবছর। যখন এই নোটন আপনাদের বাড়ির সকল কাজ করতো বাড়ির কাজের লোকের মতো আপনাদের সকলের সেবা যত্ন করতো। আর শশুড় কে শশুড় আপনারা আমার কেউ হন না আমার। যদি আমি আপনার ছেলের বউ হয় তাহলে রাইমাকে কোনো এখনো এই বাড়িতে রেখে দিয়েছেন বলুন “।

নাবিলা বেগম আর কোনো কথা বলতে পারে নাই নোটন বলে –
“- দেখুন সারাদিন অফিস করে এসে আপনাদের এইসব নাটক দেখার মতো সময় আমার নাই। তবে একটা কথা খুব করে ভালো বলে দিচ্ছি কালকের পর থেকে এই বাড়িতে টাকা ছাড়া সবার খাওয়া বন্ধ। কাজ করবেন বাজার করবেন খাবার খাবেন আর যদি সেটা না করতে পারেন তাহলে না খেয়ে থাকবেন “।
নোটন আর কারো কোনো কথা শুনে নাই সে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। অন্যদিকে নোটনের এইরকম কথা শুনে চৌধুরী বাড়ির সকলের শরীরে রাগে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে আহনাফ চৌধুরী বলে –
“- এই মেয়ে দুইদিন ধরে সম্পত্তির মালিক হয়ে এখন আমাদের কাজ করে খেতে বলে এতো বড়ো সাহস। একবার শুধু আমাদের সম্পত্তি এই মেয়ের থেকে ফিরত নিতে পারলে ওকে আমি খুন করে ফেলবো “।
“- হুম ঠিক বলেছো ভাই একবার শুধু সম্পত্তি ফিরে পেতে দাও এই মেয়ের সব কথার জবাব দিবো। কিন্তু এখন আমাদের নিজেদের খাবারের জন্য আয়োজন করতে হবে না হলে পরশু থেকে সত্যি না খেয়ে থাকতে হবে “।
সমুদ্র সবার কথা শুনে উপরে চলে যায় সিঁড়ি দিয়ে রাইমা এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে সে বুঝতে পারছে এই বাড়িতে আর সে থাকতে পারবে না। দেখা যাবে পরশু দিন থেকে তার খাওয়া বন্ধ করে দিবে নোটন তখন সে কি করবে।রাইমা বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- না রাইমা তোকে এইবার বিদেশে ফিরে যেতে হবে সেখানে গিয়ে আবার একটা বড়লোক ছেলেকে নিজের প্রেমের জালে ফাঁসাতে হবে৷ এই চৌধুরী বাড়ির এখন যা অবস্থা ওরা কখনো নোটনের থেকে নিজের সম্পত্তি ফিরে পাবে না। আর সমুদ্রের সাথে সারাজীবন কাটানো মানে হলো শুধু কষ্ট আর গরীব মানুষের জীবন কাটানো “।
নোটন রুমে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে যায় ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে পানি ছেড়ে দেয়। নোটন যানে যদি একবার এই সকল সম্পত্তি চৌধুরী মানুষ ফিরে পায় তাহলে তাকে শেষ করে দিবে। এই চৌধুরী বাড়ির মানুষ ঠিক কতটা জঘন্য সেটা নোটন যানে কিন্তু তাকে শক্ত থাকতে হবে নোটন বলে –
‘- আপনাদের সাথে কখনো এইরকম খারাপ ব্যবহার করতে চাই নাই আমি কিন্তু কি করব বলেন আপনারা যা করেছেন। আমার সাথে আমার পরিবারের সাথে সেইজন্য শাস্তি পেতে হবে আপনাদের। শুধু অপেক্ষা করুন চৌধুরী পরিবার এই দুনিয়ার মধ্যে যদি আপনাদের নরকের কষ্ট না দিতে পারি তাহলে আমার নাম নোটন না “।
নোটন কথাটা বলে হাসে এরপর ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বাহিরে এসে দেখে সমুদ্র রাগী দৃষ্টিতে ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নোটনকে ওয়াশরুম থেকে বাহির হতে দেখে ওর কাছে এগিয়ে যায় সমুদ্র এরপর নোটনকে ওয়াশরুমের দরজার সাথে পিন করে দিয়ে জিজ্ঞেস করে –
“- কি সমস্যা আপনার নোটন কোনো করছেন এইসব বলুন। আব্বু সাথে এইরকম ব্যবহার কোনো করলেন আব্বু এই বয়সে কি করে রোজগার করবে। আর আপনি আমাদের সম্পত্তি আমাদের থেকে কেঁড়ে নিয়ে এখন আবার আমাদের খাওয়া জন্য রোজগার করতে বলছেন “।

সমুদ্র কথাটা বেশ রাগী স্বরে বলে তবে তাতে নোটনের কিছু যায় আসে না সে বলে –
“- যদি আপনার আব্বুর জন্য এতো কষ্ট হয় আপনার তাহলে নিজে রোজগার করে সংসার চালান। বাড়ির বড় ছেলে আপনি পরিবারের খরচের দায়িত্ব আপনার নেওয়া উচিত। বিদেশে পড়াশোনা করিয়ে কি উপকার হয়েছে আপনার আম্মু আব্বুর যদি একটা চাকরি করে তাদের খাওয়াতে না পারেন “।
নোটনের কথাটা শুনে সমুদ্র নোটনের থেকে সরে আসে সত্যি তার দায়িত্ব নিজের পরিবারকে খাওয়ানো। কিন্তু সে এই কয়েকদিনের মধ্যে কোথা থেকে চাকরি খুঁজে নিয়ে আসবে। আর বিদেশে থেকে সে পড়াশোনা করেছে শুধু তাই চাকরির বিষয়ে খুব একটা অভিজ্ঞতা তার নাই। সমুদ্র বলে
“- আমি চাকরি করব না করব না সেটা আপনার দেখতে হবে না নোটন। কিন্তু আপনি কোনো আমার পরিবারের সাথে এইরকম করছেন? কি করেছি আমরা আপনার সাথে নোটন?
সমুদ্রের কথাটা শুনে নোটন হাসে এই পরিবার তার সাথে কি করেছে সেটা যদি সমুদ্র যানে তাহলে হয়তো নিজের পরিবারকে ঘৃণা করবে। নোটন বলে –

“- আপনার পরিবার আমার সাথে কি করেছে সেটা খুব তাড়াতাড়ি আপনি জানতে পারবেন সমুদ্র। তবে একটা কথা কি যানেন এই চৌধুরী বাড়ির জন্য আমার জীবন থেকে সবকিছু হারিয়ে গেছে। এই চৌধুরী বাড়ির আসল চেহারা সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নাই “।
নোটনের কোনো কথা সমুদ্র বুঝতে পারে না নোটন সমুদ্রের থেকে নিজেকে সরিয়ে আয়নার সামনে চলে যায়। সমুদ্র ওয়াশরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে এখনো নোটনের কথা সে বুঝতে পারছে না। অন্যদিকে নোটন নিজের মাথার চুল শুকানোর চেষ্টা করছে সেটা দেখে সমুদ্র ওইদিকে তাকিয়ে দেখে। নোটনের চুল থেকে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে যেটা দেখতে দারুণ সুন্দর লাগছে।
সমুদ্র যে নোটনের দিকে তাকিয়ে আছে সেটা নোটন আয়নার মধ্যে দেখতে পারছে। সমুদ্রের তাকিয়ে থাকার মধ্যে হঠাৎ রুমে রাইমা প্রবেশ করে যেটাতে নোটন খুব বিরক্ত অনুভব করে আর বলে –
“- রাইমা কারো রুমে প্রবেশ করার আগে একটা নক করে আসতে হয় সেটা নিশ্চয়ই তোমার জানা রয়েছে। না জন্ম সময় লজ্জা শরমের সাথে সাথে কমনসেন্স নিয়ে জন্মাতে ভুলে গেছো “।
নোটনের কথাটা শুনে রাইমা রেগে গিয়ে বলে –
‘- নোটন তুমি কি বলতে চাও আমার লজ্জা শরম আর কমনসেন্স নাই?
“- লজ্জা শরম থাকলে বুঝি কেউ অন্য কারো স্বামী সাথে পরকীয়া করে? আর কমনসেন্স তোমার কতটা রয়েছে সেটা তোমার ব্যবহারে বুঝা যায় “।
নোটনের জবাব শুনে রাইমার শরীরে রাগ উঠে যায় কারণ নোটনের জন্য তার সব পরিকল্পনা শেষ হয়ে গেছে। রাইমা বলে –

“- তুমি আমাকে এইসব কথা বলছো আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো নোটন। তুমি কি ধরনের মেয়ে যদি এই চৌধুরী বাড়ির সম্পত্তি ধোকা দিয়ে নিজের নামে না লিখিয়ে নিতে তাহলে এতোদিন রাস্তায় থাকতে। তোমার যোগ্যতা কি নোটন না আছে কোনো ক্লাস আর না আছে শিক্ষা “।
“-রাইমা আমি না হয় চৌধুরী বাড়ির সম্পত্তি না থাকলে কিন্তু তুমি তো আগে থেকে রাস্তার মেয়ে। অন্যর স্বামীর সাথে পরকীয়া করা চরিএহীন মেয়ে তুমি। আর আমার কি যোগ্যতা সেটা সেটা নিয়ে তোমার মাথা ব্যথা করার দরকার। এক তুমি আর তোমার এই চরিএহীন প্রেমিক দুইজনে একে অপরের জন্য তৈরি হয়েছো।
“- ওহ রিয়েলি নোটন আমি চরিএহীন তাই না তাহলে তুমি কি নিজের স্বামীর প্রেমিকা আছে সেটা জেনে ও তার সাথে জোর করে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছো। আমার মনে হয় তুমি সমুদ্রকে ভালোবাসো কিন্তু দেখাতে চাও না?
“- দয়া করে রাইমা এই কথাটা নিজের মাথায় নিয়ে এসো না। মানে একজন আমাকে ভালোবাসবে না সম্মান করবে না আর আমি তার পিছনে পিছনে ঘুরবো রিয়েলি এইটা কোনো সিনেমা চলছে। সিনেমার কোনো ন্যাকা নায়িকা মনে হয় তোমার আমাকে আমার স্বামী অন্য মহিলার সাথে প্রেম করবে আর আমি তার জন্য কান্না করবো “।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্রর অনেক রাগ হয় সে জোর গলায় বলে –

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৪

‘- নোটন আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করে কথা বলছেন?
“- একদম আওয়াজ নিচে ভুলে যাবেন না সমুদ্র আপনি যে বাড়িতে দাড়িঁয়ে কথা বলছেন সেটা এই নোটনের একটু আগে যেই খাবার খেয়েছেন সেটা এই নোটনের।সো নোটনের সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলবেন না না হলে গলার আওয়াজ কি করে কম করতে হয় সেটা নোটনের ভালো করে জানা রয়েছে।
আমি অনেক অসুস্থ তাই এই পর্বটা ভালো করে দিতে পারি নাই সরি।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৬