এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৬

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৬
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

রাইমা নোটনের কথা শুনে অপমানিত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আর সমুদ্র রাইমার পিছনে পিছনে যায়। নোটন সেইদিকে দেখে আর বলে –
“- মানে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার লাইফে এইরকম একজন স্বামী হিসাবে এসেছে যার না আছে কোনো চরিত্র না আছে কোনো মান সম্মান বোধ৷ সারাদিন শুধু রাইমা রাইমা করতে থাকে মানে রিয়েলি নোটন তোর জীবনে আর কি কি হবে “।
নোটন কথাটা বলে আয়নার সামনে চলে যায় সেখানে গিয়ে নিজের চুল মুছতে থাকে। অন্যদিকে রাইমার ইচ্ছে করছে নোটনকে খুন করে ফেলতে এই নোটনের এতো সাহস কি করে হয় সে তাকে অপমান করে। সমুদ্র রাইমার পিছনে পিছনে গিয়ে ওর হাত ধরে ফেলে রাইমাকে শান্ত করতে বলে

“- কি হয়েছে রাইমা তুমি এইরকম রাগ করছো কোনো?
“- আমি কোনো রাগ করছি সেটা কি তুমি বুঝতে পারছো না সমুদ্র। ওই নোটনের এতো বড়ো সাহস কি করে হয় ও আমার সাথে এইরকম খারাপ করে।
“- রাইমা নোটন ব্যবহার কেমন সেটা তোমার খুব ভালো করে জানা রয়েছে তাহলে কোনো ওই রুমে যেতে গেলে। আর নোটন এখন এই বাড়ির মালিক তাই ওর কথা এখন শুনতে হবে আমাদের। খুব তাড়াতাড়ি আমরা সম্পত্তি ফিরে পেয়ে যাবো তখন নোটনের প্রতিটা কথার জবাব ওকে দেওয়া হবে রাইমা “।
“- এই খুব তাড়াতাড়ি কবে আসবে সমুদ্র তোমরা কবে এই সম্পত্তি আবার ফিরে পাবে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে আমাকে। আর একটু আগে আব্বু ফোন করেছিলো আমাদের বিয়ের বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক ওনি। কিন্তু কি বলবো আব্বুকে আমি যে আমি একজনকে ভালোবাসি যার কোনো টাকা পয়সা নাই। যার পরিবার এখন একটা ভিখারি চেয়েও গরীব হয়ে গেছে “।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাইমার কথাটা সমুদ্রের বেশ খারাপ লাগে কারণ সে আগে কখনো সমুদ্রের সাথে এইরকম ব্যবহার করে নাই। আর রাইমার বাবা তাদের সম্পর্কের বিষয়ে শুরু থেকে সব জানে এখন কি সমস্যা হচ্ছে। সমুদ্র বলে –
“- রাইমা তুমি এইরকম করে কোনো কথা বলছো? আর তোমার বাবা আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি থাকলে সমস্যা কি বিয়ে করতে৷ আমার পরিবার এখন সব সম্পত্তি হারিয়ে ফেলেছে কিন্তু তারা ভবিষ্যতে সবকিছু ফিরে পাবে। আর ছয়মাস পড়ে নোটন আর আমার ডিভোর্স হয়ে যাবে তখন আমরা বিদেশে গিয়ে চাকরি করব। চাকরি করে নিজেদের সংসার চালিয়ে নিতে পারবো তাই আমার পরিবারের কাছে যদি সম্পত্তি না থাকে তাহলে কোনো সমস্যা নাই “।
রাইমা সমুদ্রর কথাটা শুনে খুশব হয় নাই কারণ সে চাই না সারাজীবন চাকরি করে কম টাকা রোজগার করে নিজের জীবন চালাতে। রাইমার ইচ্ছে ছিলো সে কোনো বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করবে এরপর সারাজীবন রানীর মতো চলবে। সেইজন্য সমুদ্রকে নিজের ভালোবাসার জালে ফাঁসিয়ে বিয়ে করতে চেয়েছে কিন্তু এখন পরিস্থিতি একদম অন্যরকম হয়ে গেছে। রাইমা বলে –

“- দেখো সমুদ্র তুমি আর আমি চাকরি করে কয় টাকা বেতন পাবো আর তোমার পরিবারের যা অবস্থা। তাদের জন্য তোমার টাকা পাঠাতে হবে তাহলে আমাদের কাছে কয়টা টাকা থাকবে। আর আমার আব্বু তোমার মতো এইরকম একটা গরীব আর ভিখারি সাথে জীবনে ও বিয়ে দিবে না।
রাইমার কথা গুলো এখনো সমুদ্র বিশ্বাস করতে পারছে না যেনো মনে হচ্ছে সে তার সামনে নতুন কোনো রাইমাকে দেখছে।সমুদ্র বলে –
“- রাইমা আমি বুঝতে পারছি না তুমি এইরকম ব্যবহার কোনো করছো। আমার পরিবার সবসময়ের জন্য গরীব হয়ে যায় নাই তারা কোনো ভিখারি না রাইমা সো এইরকম করে কথা বলা বন্ধ করো। আর এইটা আমার পরিবার তাদের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব রয়েছে সেটা পালন করতে হবে আমাকে “।

“- তোমার দায়িত্ব পালন করতে করতে আমাদের ভবিষ্যত সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে। টাকা ছাড়া সারাজীবন কাটানো অসম্ভব যেটা আমি পারব না আর তোমার কি বিশ্বাস রয়েছে যদি তুমি কোনোদিন সম্পত্তি ফিরে না পাও। তখন আমার সারাজীবন ভিখারির মতো থাকতে হবে দুমুঠো ভাত খেয়ে চলতে হবে। যেটা আমি পারব না সমুদ্র তোমার মতো ভিখারির সাথে সারাজীবন কাটানো অসম্ভব আমার “।
“- তাহলে কি চাও তুমি রাইমা আমার সাথে আর কোনো সম্পর্ক না রাখতে। আজকে আমার আর আমার পরিবারের টাকা সম্পত্তি নাই বলে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে। তাহলে কি তুমি আমাকে বুঝতে চাও টাকা জন্য তুমি আমাকে ভালোবাসে ছিলে?

“- দেখো সমুদ্র তোমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা আমার নাই এখন রুমে যেতে চাই আমি। তুমি বরং তোমার পরিবারের খাবারের আয়োজন করার চেষ্টা করো না হলে পরশু থেকে সবাই না খেয়ে থাকবে। আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল হয়েছে তোমার মতো এইরকম একটা গরীব ভিখারির সাথে প্রেম করা “।
রাইমা কথাটা বলে নিজের রুমে চলে যায় সমুদ্র সেখানে দাঁড়িয়ে যায়। কোনো জানি মনে হচ্ছে তার পায়ের নিচে থেকে জমি কেউ কেঁড়ে নিয়েছে। বিদেশে থাকতে যে মেয়ে তাকে এতো ভালোবাসতো আজকে সে তার সাথে কথা অবধি বলতে চাই না। সমুদ্র আর রাইমা একসাথে পড়াশোনা করেছে বিদেশে থাকতে তখন থেকে তাদের রিলেশন রয়েছে। রাইমা আগে থেকে সমুদ্রকে পছন্দ করতো তাই সে সমুদ্রকে প্রপোজ করেছে। সমুদ্র যেহেতু নোটনকে নিজের বউ হিসাবে মানে নাহ তাই সে আর রাইমাকে না করে নাই।

অন্যদিকে আহনাফ চৌধুরী নিজের কর্মজীবনের বন্ধুদের সাথে কলা বলছে তাদের কোম্পানিতে যদি একটা কাজ থাকে সেটা দিতে। কিন্তু কেউ দিতে রাজি হচ্ছে না বিভিন্ন অযুহাত দিচ্ছে যার কারণে আহনাফ চৌধুরী অনেক রাগ আর টেনশন হচ্ছে। আহনাফ সাহেব যখন কোনো উপায় সাহায্য না পেয়ে সোফায় মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে৷ সিঁড়ির উপর থেকে একজন কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে আর সবকিছু দেখছে আর মুখে একটা ডেভিল হাসি ফুটে উঠে।
আহনাফ চৌধুরী অবস্থা দেখে নোটনের বেশ মজা লাগছে সে বলে –
“- ওহ শশুড় আব্বু সত্যি আপনার জন্য আমার অনেক কষ্ট লাগছে। কতো কষ্ট করছেন একটা চাকরির জন্য শুধু দুমুঠো খাবার খাওয়ার জন্য। সত্যি বলতে আপনার এই অসহায় মুখটা দেখে কষ্ট হলে ও বেশ আনন্দ লাগছে মনের মধ্যে প্রশান্তি বয়ে যাচ্ছে। এইটা মাএ শুরু আহনাফ চৌধুরী আগে আগে দেখুন কি কি হয় আর কি কি করি আপনার সাথে আমি “।

নোটন সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে হাতে রয়েছে একটা গরম কফি। আহনাফ চৌধুরী এখনো নিজের মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছে বিষয়টা নোটন দারুণ ইনজয় করছে। নোটন বলে –
“- কি ব্যাপার শশুড় আব্বু হঠাৎ করে আপনার মাথায় হাত কি করে পড়লো। আমি শুধু বলেছি পরশু দিন থেকে খাবার বন্ধ এইজন্য এইরকম মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকবেন। ওহ শশুড় আব্বু আপনাকে এইরকম অসহায় অসহায় দেখে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। কতো কষ্ট হচ্ছে আমার আসলে গরীর মানুষের প্রতি আমার অনেক মায়া।
নোটনের কথা শুনে আহনাফ চৌধুরী তার দিকে দেখে এমনি সে কোনো চাকরির জোগাড় করতে পারছে না। আর অন্যদিকে নোটনের তার কথায় আহনাফ চৌধুরীর অবস্থার মজা নিতে থাকে। আহনাফ চৌধুরী বেশ বিরক্ত হয় নোটনের কথায় আর বলে –

“- তোমার কি সমস্যা নোটন আমার মাথায় যদি হাত থাকে তাহলে তোমার কি সমস্যা? আমার বিষয়ে না ভেবে যাও নিজের রুমে যাও তোমার আজাইরা কথা শুনার টাইম নাই।
“- আরে শশুড় আব্বু এতো রাগ কোনো করেন আমার শুধু একটু কষ্ট লাগছিলো সেইজন্য বলেছি। কি হলো শশুড় আব্বু কোনো চাকরি কি মেনেজ করতে পারলেন আপনার বন্ধু কি চাকরি দিতে পেরেছে?
‘- না চাকরি পাই নাই তবে চেষ্টা করছি “।
“- চেষ্টা করতে থাকেন কিন্তু পরশু দিন থেকে টাকা ছাড়া খাবার খেতে পারবেন না তখন কি হবে। আমার পরিবার না খেয়ে থাকবে সত্যি খুব কষ্টের বিষয় “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৫

“- নোটন যাও এখান থেকে তুমি “।
“- আচ্ছা চলে যাচ্ছি তবে একটা কথা আসলে আমার কোম্পানির কাপড়ের কারখানায় কয়েকজন লোক লাগবে।আপনার যদি চাকরির খুব দরকার থাকে তাহলে সেখানে চাকরি করতে পারেন মাসে দশ হাজার টাকা বেতন দিবো।
“- মানে নোটন তুমি কি বললে আমার কোম্পানির কাপড়ের কারখানায় আমি কাজ করবো মাএ দশ হাজার টাকার জন্য। তোমার সাহস কি হয় এই অফার দেওয়ার জন্য ওই কোম্পানির মালিক আমি চৌধুরী পরিবারের কেউ শ্রমিকের কাজ করবে “।
“- দেখুন শশুড় আব্বু যদি খাবার খেতে চান তাহলে শ্রমিকের কাজ করতে হবে না হলে না খেয়ে থাকবেন৷ সো ভেবে চাকরি করবেন কি না “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৭