এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৭

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৭
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

নোটনের কথাটা শুনে আহনাফ চৌধুরী শরীর রাগে জ্বলে যেতে থাকে এই মেয়েটা তাকে শ্রমিকের কাজ করতে বলছে। মানে চৌধুরী বাড়ির সন্তান মাএ দশ হাজার টাকার চাকরি করবে যেটা তাদের বাড়ির কাজের লোকের বেতনের চেয়ে বেশি। আহনাফ চৌধুরী বলে –
-” আমি মাএ দশ হাজার টাকার বেতনের জন্য শ্রমিকের কাজ করতে পারব না। ওদের মতো গরীবের আমার জুতা পরিস্কার করার যোগ্যতা নাই তার সাথে একসাথে কাজ করব আমি। এইটা আমার দ্বারা সম্ভব না দরকার হলে আমি না খেয়ে থাকবো তবুও এইসব ছোট লোকের সাথে কাজ করব না “।
আহনাফ চৌধুরী কথা শুনে নোটন হাসে সত্যি মানুষের অহংকার কি অদ্ভুত জিনিস তাই না। সম্পত্তি টাকা পয়সা সব চলে গেছে কিন্তু এখনো আভিজাত্য অহংকার রয়েছে। নোটন বলে –

“- দেখুন শশুড় আব্বু আপনার বিপদ দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার তাই রোজগার করার একটা উপায় বলে দিলাম। কিন্তু আপনি শুনলেন না তাহলে আর কি করার আছে পরশু থেকে বউ বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকবেন।তবে ভেবে দেখতে পারেন এই বাজারে দশ হাজার টাকা কম না আর ঘরের ভাড়া দিতে হবে না আপনাকে। চেষ্টা করলে সংসার চালাতে পারবেন “।
“- নোটন আমি না খেয়ে থাকবো না কি করব সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না নিজের কাজ করো। আর আমার বিষয়ে চিন্তা করা বন্ধ করে বিজনেসের দিকে মনোযোগ দাও। আমি ও দেখতে চাই তুমি বিজনেসে কতো ভালো করো “।
“- ওকে শশুড় আব্বু যেটা আপনার ইচ্ছা আমি যাচ্ছি “।
নোটন সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখন আহনাফ চৌধুরী ফোন করে তার বন্ধুকে ফোন করতে থাকে। নোটন পিছনে ফিরে আর বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- শশুড় আব্বু আপনারা বড়লোক মানুষে সবসময় বিপদে পড়লে বিজনেস ম্যান বা বন্ধুদের কোনো ফোন করেন। কোনো মনে করেন তারা আপনাদের বাঁচাতে পারবে? সবসময় বন্ধু বন্ধু না করে একবার উপর ওয়ালার কাছে তো চেয়ে দেখেন হয়তো ওনি আপনাকে সব সমস্যা থেকে বাচঁতে সাহায্য করবেন। আযান দিয়ে দিয়েছে যান নামাজ পড়ে সব সমস্যা কথা বলেন “।
আহনাফ চৌধুরী নোটনের কথাটা শুনে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে এরপর নিজের ফোন পকেটে ভরে। নোটনের কথাটা খারাপ না সত্যি মানুষ সবসময় বিপদে অন্যর কাছে সাহায্য চাই কোনো। একবার ওনার সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইলে হয়তো ওনি সব সমস্যা সমাধান করবেন। আহনাফ চৌধুরী কথাটা ভেবে বাহিরে চলে যান অন্যদিকে নোটন নিজের রুমে যায় নামাজ পড়ে।

নোটন নামাজ শেষ করে বেলকনিতে যায় দেখে নিচে সমুদ্র তার মাথায় হাত দিয়ে বসে রয়েছে। নোটন বিষয়টা খেয়াল করে দেখে কোনো জানি মনে হচ্ছে সমুদ্রের মনটা খারাপ নিশ্চয়ই রাইমার কোনো সমস্যা হয়েছে। কারণ রাইমার কোনো কথায় একমাত্র সমুদ্রের কষ্ট হয় কারণ ভালোবাসে সে রাইমাকে।
সমুদ্র বাগানে বসে রাতের বেলার তারা ভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ অনুভূতি তার হচ্ছে নিজের প্রিয় মানুষকে অনেক অচেনা লাগছে তার। মনে হচ্ছে শুধু মাএ টাকার জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে কিন্তু মন থেকে শুধু ঘৃণা করে। সমুদ্র যখন বসে বসে নিজের মনের কথা মনের গোপনে বলেছিলো তখন হঠাৎ পিছন থেকে নোটন বলে –

“- কি হয়েছে আপনি এইরকম দেবদাস হয়ে বসে আছেন কোনো? আপনার রাইমা বেবি কি কোনো কষ্ট দিয়েছে না আপনার সাথে শুধু টাকার জন্য ভালোবাসার নাটক করেছে?
সমুদ্র নিজের কল্পনার জগৎ থেকে বাহিরে আসে পিছনে ফিরে নোটনকে দেখে তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠে। কত সুন্দর করে একটু শান্তি নিয়ে বসে ছিলো কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না নোটনের জন্য। সমুদ্র বিরক্ত হয়ে বলে –
“- নোটন পুরো বাড়ির মালিক আপনি তাই বলে কি বাড়িতে থাকা মানুষকে একটু শান্তিতে বসতে দিবেন না। দেখুন এখন আপনার ঝগড়া বা সম্পত্তির অহংকার দেখার ইচ্ছা আগ্রহ বা মন মানসিকতা নাই আমার৷ দয়া করে এখান থেকে চলে যান আর না হলে আমি চলে যেতে বাধ্য হবো “।
সমুদ্রের কথা শুনে হাসেঁ তবে সে চলে যায় না গিয়ে সমুদ্রের সাথে বসে। নোটন বলে –

“- নিজের প্রেমকিার দেওয়া কষ্ট যত্ন সহকারে আগলে রাখতে পারবেন তার কথায় কান্না করতে পারেন।আর নিজের বউকে আপনার পাশে বসার অধিকার ও দিতে চান না।
“- নোটন আমি যানি আপনার সাথে আমি যা করেছি সেটা অন্যায় আপনাকে বিয়ে করে এইরকম করে রেখে যাওয়া উচিত হয় নাই আমার। কিন্তু কি করব বলুন আপনাকে আমি ভালোবাসি না নোটন আপনার প্রতি কোনো ফিলিংস ছিলো না আমার কোনোদিন। রাইমাকে দেখলে আমার মনের মধ্যে যে শান্তি অনুভব হয় সেটা আপনাকে দেখলে হয় না। এইটা কোনো সিনেমা না যেখানে জোর করে বিয়ে করিয়ে দিলে জোর করে একসাথে থাকতে বাধ্য করলে ভালোবাসা হয়ে যাবে।
সমুদ্রের কথা নোটন শুনে কোনো জানি মনে হচ্ছে সমুদ্রের কথাটা ভুল না কারণ সত্যি তার প্রতি সমুদ্রের কোনো ফিলিংস নাই। নোটন বলে –

“- সমুদ্র আমার সমস্যা এইটা না যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না আমার সমস্যা এইটা আপনি কোনো নিজের বউ থাকতে অন্য কারো সাথে রিলেশনে ছিলেন। আর এইটা কোনো সিনেমা না সেইটা আমি জানি কিন্তু সিনেমার নায়ক যেমন করে নায়িকার দেখে কখনো কি আপনি সেইরকম করে দেখেছেন। কখনো কি বুঝতে চেষ্টা করেছেন আমার ফিলিংস আমার কষ্ট। আপনি বিয়ের পরে চলে যাওয়ার পর সবাই আমার সাথে কেমন ব্যবহার করেছে।
“- নোটন বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছি কিন্তু সেটা দাদা দিতে দেয় নাই। আর যাকে মন থেকে ভালোবাসি না তাকে শুধু তিনবার কবুল বলেছি বলে মেনে নেওয়া যায় না। রাইমার সাথে থাকতে থাকতে আমি ভালোবাসি কি সেটা বুঝতে পেরেছি তাই যদি এখন আপনাকে ডির্ভোস দিয়ে রাইমাকে বিয়ে করতে চাই তাহলে ভুলটা কোথায়?
সমুদ্রের কথাটা নোটনের মনে বিঁধে যাচ্ছে কি অদ্ভুত ভালোবাসা তার সে যাকে ভালোবাসে তার না ইচ্ছে আছে তাকে পাওয়া, না ভয় আছে তাকে হারানোর। নোটন বলে –

“- সমুদ্র এখানে দোষ সম্পূর্ণ আপনার না সেটা আমি জানি ভালোবাসা জোর করে হয় না। তবে আপনি কি কখনো চেষ্টা করেছিলেন আমাকে ভালোবাসার একদিনের জন্য এই বিয়েটা মেনে নেওয়ার। রাইমাকে দেখলে আপনার মনে শান্তি অনুভব হয় কারণ রাইমার প্রতিটা কাজ প্রতিট আচরণ আপনার মন মুগ্ধতার সাথে দেখেছে আপনার চোখের দৃষ্টি শুধু রাইমার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। কিন্তু আপনি কি কখনো আমাকে দেখেছেন আমার হাসি, কান্না, মন খারাপ করা এইসব
“- না দেখি নাই কি করে দেখবো আমি বিদেশে ছিলাম।
“- হুম জানি সেইজন্য আপনি আর আমি আজকে এতো দূরে যদি কখনো আপনার মন মুগ্ধতা দিয়ে আমাকে দেখতো তাহলে হয়তো আমার প্রেমে ও পড়তো। একবার শুধু অনুভব করেন ভালোবাসা আর মায়ার মধ্যে তফাত কি।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৬

” মায়া জন্মাতে মনের মুগ্ধতা দরকার ”
“- শুরু দৃষ্টি জোড়া একজনের প্রতি সীমাবদ্ধ থাকা দরকার”.
“- কিন্তু ভালোবাসার জন্য মনের গহীনের অনূভুতি দরকার”.
“- সারাজীবন প্রিয় মানুষকে ভালোবাসার মতো ভালোলাগা দরকার “।

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৮