এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৮

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৮
আদ্রিতা জান্নাত অরিন

সকাল হয়ে যায় নোটন কালকের মতো আজকে ও চৌধুরী বাড়ির সবাইকে ঘুম থেকে উঠিয়ে দেয়। বাড়ির সকল পুরুষ নামাজ পড়তে গেছে আর মহিলারা রান্না ঘরে রয়েছে। নোটন নাবিলা বেগম আর মলি বেগমকে রান্নার কাজে সাহায্যে করতে থাকে। রান্না শেষ হলে সবাই খাবার খেতে আসে কিন্তু রাইমা আসে না সমুদ্র বলে –
“- আম্মু রাইমা কোথায় ও আসে নাই কোনো এখনো খাবার খেতে?
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন তাকিয়ে দেখে রাইমা সত্যি আসে নাই যদি ও তাতে আর কিছু যায় আসে না। সমুদ্র খাবার খাওয়া রেখে যখন রাইমাকে ডাকতে উপরে যাবে তখন রাইমা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামে। রাইমার হাতে একটা বাক্স ছিলো সমুদ্র বলে –

“- রাইমা ভালো হয়েছে তুমি এসে গেছো একসাথে খাবার খায় “।
রাইমা বাক্স নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে এরপর বলে –
“- সরি সমুদ্র কিন্তু আমি আর এই বাড়িতে থাকতে পারব না আমি আজকে বিদেশে চলে যাবো। তোমার মতো এইরকম একটা গরীব ভিখারির সাথে সারাজীবন কাটাতে আমি পারব না “।
রাইমার কথা শুনে চৌধুরী বাড়ির সকলের খাবার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু নোটনের বেশ দারুণ লাগছে। কালকে রাতে রাইমার কথা শুনে সমুদ্র মনে হয়েছে রাইমা সমুদ্রকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু সমুদ্র ভাবতে পারে নাই রাইমা সত্যি সত্যি শুধু মাএ টাকার জন্য তাকে ছেড়ে চলে যাবে। সমুদ্র বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“- রাইমা আগে যখন আমার কাছে টাকা ছিলো এই সম্পত্তির মালিকানা ছিলো তখন তুমি আমাকে ভালোবেসে ছিলে। কিন্তু আজকে যখন আমার টাকা নাই সম্পত্তির নাই তখন তোমার ভালোবাসা ও নাই। সত্যি করে বলো রাইমা তুমি শুধু আমাকে টাকার জন্য ভালোবেসে ছিলে তাই না?
রাইমা বুঝতে পারে এখন সমুদ্রেকে সব সত্যি তার জানাতে হবে আর সমুদ্র যদি জেনে ও যায় রাইমা তাকে টাকার জন্য ভালোবাসে। তাহলে ও রাইমার কোনো কিছু যায় আসে না কারণ তার কাছে সমুদ্রের এখন কোনো দাম নাই। রাইমা বলে –

“- হুম ঠিক বলেছো সমুদ্র এই রাইমা শুধু টাকার জন্য এতোদিন তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করেছে। তোমার বাড়ি গাড়ি এইসব দেখে প্রেমে পড়েছি আমি শুধু মাএ টাকার জন্য তোমার মতো এইরকম একটা বিবাহিত ছেলের সাথে প্রেম করেছি। কিন্তু এখন যখন তোমার কাছে টাকা নাই তখন তোমার সাথে সারাজীবন কেনো থাকবো আমি “।
রাইমার কথাটা শুনে সমুদ্রের পায়ের নিচের থেকে মাটি সরে যায় সে কোনো কথা বলতে পারছে না। চৌধুরী বাড়ির সবাই খাওয়া রেখে টেবিল থেকে উঠে রাইমা আর সমুদ্রের কাছে যায়। নাবিলা বেগম রাইমার আচরণ দেখে রীতিমতো অবাক এইরকম একটা লোভী মেয়েকে সে তার ছেলের বউ করতে চেয়েছে। নাবিলা বেগম বলে –
“- রাইমা তুমি এতো খারাপ আর লোভী একটা মেয়ে হবে সেটা আমি কখনো ভাবতে পারি নাই। তুমি শুধু টাকার জন্য আমার ছেলের বউ হতে চেয়েছিলে শুধু টাকার জন্য। ভালো হয়েছে তোমার এই আসল রূপটা বিয়ে আগে সামনে এসে গেছে না হলে আমার ছেলের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে যেতো।

“- আন্টি জীবন আপনার ছেলের না বরং বিয়েটা হলে আমার জীবন নষ্ট হয়ে যেতো। আপনাদের মতো ফকিন্নি আর ভিখারির সাথে থাকতে হতো সারাজীবন আমার অন্য কারো গেলামি করে। চোরের মায়ের বড়ো গলা আপনাদের পরিবারের এখন শুধু নোটনের পায়ের নিচে সারাজীবন থাকতে হবে। যেটা আমি পারব না আর সমুদ্রের মতো এইরকম ফকিরের সাথে সারাজীবন সংসার করা সম্ভব না আমার জন্য। তাই দয়া করে নিজের ছেলের জন্য নিজের মতো ভিখারিকে খুঁজে নিবেন “।

রাইমার কথাটা শুনে নাবিলা বেগম কোনো কথা বলবে তার আগে সমুদ্র রাইমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর গালে একটা থাপ্পড় মারে। সমুদ্র নিজের গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে রাইমার গালে আরেকটা থাপ্পড় দেয় যার ফলে রাইমা একটু দূরে সরে যায়। রাইমার দুই গালে থাপ্পড়ের দাগ বসে গেছে সেইটা দেখে নোটন দারুণ খুশি হয়। নোটনের মতো হচ্ছে সে কোনো ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল দেখছে একদম টান টান উত্তেজনার পর্ব।
রাইমা নিজের গালে সমুদ্রের থাপ্পড়ের ছাপ বুঝতে পারে রাইমা বলে –
“- সমুদ্র তোমার কতো বড়ো সাহস তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে?
সমুদ্রের সারা শরীর এখন রাগে ফুঁসে রয়েছে সমুদ্রের চোখ লাল হয়ে গেছে। রাইমা এতো বছরের সম্পর্কে কখনো সমুদ্রের এইরকম রূপ দেখে নাই সবসময় শান্ত শিষ্ট হিসাবে দেখেছে। সমুদ্র রাইমার কাছে যায় আর ওর গাল চেপে ধরে বলে –

“- তোর এতো বড়ো সাহস কি করে হয় তুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার মায়ের সাথে উঁচু গলায় কথা বললি। আমার পরিবারকে ভিখারি ফকিন্নি বলার সাহস কি করে হয় তোর বল রাইমা।এতোদিন তোর অনেক কথা সয্য করেছি শুধু মাএ তোকে ভালোবাসি বলে কিন্তু এখন আর না তোর মতো মেয়েকে কোনো রাস্তার লোক ও বিয়ে করবে না।
রাইমা সহ সমুদ্রের এইরকম ব্যবহার দেখে চৌধুরী বাড়ির সবাই অবাক। নোটন নিজে ও ভাবতে পারে নাই সমুদ্রের এইরকম রাগী লুক প্রতিবাদী কণ্ঠ রয়েছে তবে নোটনের ভালো লাগছে। সমুদ্র নিজের ফাইনালি নিজের ভুলটা বুঝতে পারছে সেটা দেখে। রাইমা বলে –
“- সমুদ্র তুমি আমাকে রাস্তার মেয়ে বললে? ভুলে যেও না সমুদ্র আমি কিন্তু তোমার প্রেমিকা ভালোবাসো তুমি আমাকে?

“- রাইমা তোকে রাস্তার মেয়ের সাথে তুলনা করেছি সেটা তোর ভাগ্য না হলে এর চেয়ে বেশি খারাপ ভাষা ব্যবহার করতে আমি জানি। আর তুই আমার প্রেমিকা আগে ছিলি বাট এখন তুই আমার কেউ না তোর মতো মেয়েকে ভালোবাসা সবচেয়ে বড়ো ভুল আমার।যদি টাকা দিয়ে ভালোবাসা কিনার এতো ইচ্ছা থাকে তাহলে বাজারে গিয়ে নিজের জন্য নিজের মতো একটা চরিএহীন পুরুষ কিনে নিয়ে আয়। সমুদ্র চৌধুরী তোর মতো রাস্তার মেয়েকে কখনো বিয়ে করবে না?
“- সমুদ্র কিন্তু অপমান করছো আমাকে?
“- অপমানের দেখলি কি তুই রাইমা। খুব তাড়া না তোর এই বাড়ি থেকে বের হয়ে বিদেশে চলে যাওয়ার তোর ইচ্ছা পূরণ করব আমি। চল “।

সমুদ্র এইবার রাইমার গাল ছেড়ে ওর হাত শক্ত করে ধরে দরজার সামনে নিয়ে যায় এরপর এক ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বের করে দেয়। নোটন হাসতে থাকে কোনো জানি তার মনে হচ্ছে সে যেটা চেয়েছে সেটাই হচ্ছে। তার প্রথম পরিকল্পনা একদম পারফেক্ট হয়েছে রাইমাকে সমুদ্রের জীবন থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। সমুদ্র বলে –
“- এতোদিন তোর জন্য আমার চোখে শুধু ভালোবাসা ছিলো কিন্তু আজকে পর থেকে শুধু ঘৃণা থাকবে। জীবনে কখনো তোর চেহারা আমি দেখতে চাই না বাহির হয়ে যা এখান থেকে। আই হেট ইউ রাইমা আই হেট ইউ “।
সমুদ্র কথাটা বলে দরজা লাগিয়ে দেয় চৌধুরী বাড়ির সবাই সমুদ্রের রাগ দেখে আর কোনো কথা বলার সুযোগ পায় না। সমুদ্র নিজের রুমে চলে যায় নাবিলা বেগম বলে –
“- এই রাইমা মেয়ের জন্য আমার ছেলের এইরকম অবস্থা ওই মেয়ের কখনো ভালো হবে না।
নোটন এতোখন কোনো কথা বলে নাই শুধু খাবার খেয়েছে আর নাটক দেখেছে৷ তবে এখন মনে হচ্ছে তার কথা বলা দরকার নোটন বলে –

“- এই যে চৌধুরী বাড়ির সকলে আপনাদের নাটক শেষ হয়ে গেলে দয়া করে খাবার খেয়ে নেন। খাবার নষ্ট করা আমার পছন্দ না আর খাবার আমার টাকা দিয়ে কিনা কথাটা ভুলে যাবেন না “।
আহনাফ চৌধুরী বলে –
“- তোমাকে এইরকম পরিস্থিতি ও নিজের খাবারের খোটাঁ দিতে হবে নোটন?
“- অবশ্যই দিতে হবে শশুড় আব্বু এমনি আপনাদের খাওয়ার পিছনে আমার এতো টাকা খরচ হচ্ছে। দুইটাকা রোজগার করার সামর্থ্য নাই আবার বড়ো বড়ো কথা। অন্যর টাকার খাবার খাচ্ছে কিন্তু কথা শুনতে পারবে না চুপচাপ খাবার খান না হলে খাবার নষ্ট হলে কিন্তু সারাদিন কোনো খাবার কপালে জুটবে না আপনাদের “।
নোটনের কথাটা শুনে চৌধুরী বাড়ির সবাই অনেক অপমানিত বোধ করে তবে সবাই গিয়ে খাবার খেতে থাকে। নোটন অন্য প্লটে খাবার নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে যেখানে সমুদ্র ছিলো। সমুদ্র বসে বসে সিগারেট খেতে থাকে তার যখন রাগ হয় তখন সে সিগারেট খায়। হঠাৎ করে কেউ সমুদ্রের মুখ থেকে সিগারেট নিয়ে তার সামনে খাবার ধরে সমুদ্র বলে –

“- হোয়াট দ্যা হ্যাল সাহস কি করে আমার সিগারেট কেঁড়ে নেওয়ার “।
“- এই নোটনের সাহস সবসময় বেশি এই রুমটা শুধু আপনার না এই নোটনের ও। আর আমি নিজের রুমে এইসব খাওয়া একদম পছন্দ করি নাই “।
“- ঠিক আছে বাহিরে চলে যাচ্ছি “।
“- দাঁড়ান কথা শেষ হয় নাই আমার এই নেন খাবার খেয়ে নেন “.
“- আমার খিদে নাই “।
“- দেখুন খাবার আপনার বা আপনার বাবার টাকা দিয়ে কিনা না এইটা আমার টাকার কিনা। আপনাকে যে বিনামূল্যে খাবার খেতে দিচ্ছি সেটা অনেক তাই এইসব রাগ খাবারের উপর দেখাবেন না। যখন নিজে রোজগার করবেন খাবার কিনবেন তখন রাগ দেখাবেন “।
“- নোটন আপনার এইসব কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না আমার আর কি বললেন আপনি খাবার রোজগার না করলে খেতে পারব না। ঠিক আছে কালকে থেকে রোজগার করে খাবার কিনে নিয়ে আসবো এখন যান এখান থেকে আপনি নোটন “।

“- দেখুন সমুদ্র আপনি কবে থেকে রোজগার করবেন সেটা জেনে আমার কোনো দরকার নাই। কিন্তু এখন এই খাবার আমার টাকায় তাই খাবার খেয়ে নেন যদি খাবার নষ্ট হয় তাহলে কিন্তু আপনি সহ আপনার পুরো পরিবার সারাদিন কোনো খাবার পাবে না “।
“- নোটন আপনি কিন্তু অতিরিক্ত করছেন?
“- যদি আপনি খাবার না খান তাহলে অতিরিক্ত কি হতে পারে সেটা আপনি দেখবেন। চুপচাপ খাবার খান “।
নোটন কথাটা বলে চামচ দিয়ে সমুদ্রের মুখের সামনে খাবার রাখে সমুদ্র সেটা খায়। নোটন সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে আর মনে মনে বলে –

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৭

“- কোনো সমুদ্র কোনো আপনি কখনো আমার ফিলিংস আমার কেয়ার দেখেন না। সবসময় শুধু রাইমা রাইমা কোনো করেন আপনার মুখে রাইমার নাম শুনলে কষ্ট হয় আমার। আপনার চোখ থেকে রাইমার অন্য পানি বের হলে আমার জঘন্য রকমের খারাপ লাগে। আপনি কি কখনো বুঝতে পারবেন আমার মনের কথা গুলো কখনো না?

এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৯