এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ১০
আদ্রিতা জান্নাত অরিন
নোটন নিজের রুমে আসে আজকে অফিসে বেশ অনেক কাজ করতে হয়েছে তাকে সেইজন্য বেশ টার্য়াড ফিল করছে নোটন। নোটন যখন ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে তখন সমুদ্র ওর সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সমুদ্র বলে –
-” কি সমস্যা আপনার নােটন? আপনি আর কতো খারাপ আর লোভী হতে চান বলুন? আমার বাবা কাজ করতে করতে ওনার হাতে ব্যাথা করে ফেলছে তবুও আপনার এই বিষয়ে কোনো যায় আসে না.
সমুদ্রের কথা শুনে নোটনের কিছু যায় আসে না সে চলে যেতে চাই কিন্তু ঠিক তখন সমুদ্র ওর হাত ধরে ফেলে। সমুদ্র বলে –
-” আমি আপনার সাথে জরুরি বিষয় কথা বলছি কিন্তু আপনি আমাকে ইগনোর কোনো করছেন? সত্যি করে বলুন নোটন কি চাই আপনার আমাদের পরিবার থেকে? কোনো সবাইকে এতো কষ্ট দিচ্ছেন? আজকে যদি আমার বাবার কিছু হয়ে যায় তাহলে আপনাকে আমি শেষ করে ফেলবো নোটন “.
সমুদ্রের কথা শুনে নোটন হাসে আর বলে –
“- সমুদ্র দয়া করে এইসব বাংলা সিনেমার ডায়লগ আমার সামনে দিতে আসবেন না। কারণ আমার আপনার কথা শুনে ভয় পাওয়া তো দূরের কথা বরং হাসি পায়। আপনার বাবার সাথে আমি কোনো খারাপ কাজ করি নাই ওনি নিজের পরিবারের খাবারের খরচ চালাতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। আর ওনার শরীরে এইরকম অবস্থার জন্য ওনি দায়ী?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- মানে আপনি বলতে চান আব্বুর হাতের বা শরীরের যা অবস্থা হয়েছে সেটার জন্য আব্বু দায়ী?
“- হুম অবশ্যই কারণ আপনার আব্বু কোম্পানির মালিক থাকা অবস্থায় কোনো কাজ করে নাই শ্রমিকদের জন্য। সব মেশিন পুরান হয়ে গেছে ওনি ঠিক করেন নাই তার জন্য ওনার এই অবস্থা। প্রতৈক শ্রমিকের কাজ করতে গেলে এইরকম অসুবিধা হয় শুধু আপনার বাবার নয়। সবাইকে যদি ওনার ভুলের কারণ শাস্তি পেতে হয় তাহলে ওনি কোনো বাদ যাবেন “।
নোটন কথাটা বলে সেখান থেকে চলে যায় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হয়ে যায়। স্টাফ খাবার নিয়ে আসে নোটনের জন্য ও সেটা খেয়ে বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সমুদ্র নিজের বাবার রুমে যায় সেখানে গিয়ে ওনার হাতে মলম লাগিয়ে দেয় এরপর নিজের রুমে ফিরে আসে।নোটনকে বিছানায় আরাম করে শুয়ে থাকতে দেখে রাগে সমুদ্রের গা জ্বলে যাচ্ছে। সমুদ্র বলে –
“- নোটন আপনি আমার পরিবারের সাথে করেছেন তার শাস্তি আপনাকে নিশ্চয়ই পেতে হবে। আমার বাবা কষ্ট করছে শুধু আপনার জন্য নোটন এরচেয়ে বেশি কষ্ট যদি আপনাকে ফিরিয়ে না দেয় তাহলে আমার নাম সমুদ্র না “।
সমুদ্র কথাটা বলে টেবিলে বসে কাগজ রেডি করতে থাকে নোটন ঘুমিয়ে রয়েছে। রাতে প্রায় আটটা নোটন ঘুম থেকে উঠে ছাদে গিয়ে বসে চাঁদ দেখছে ঠিক তখন ওর ফোনে কেউ কল করে। ফোনের স্কিনে আপু কথাটা লেখা দেখে নোটনের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠে। নোটন ফোন রিসিভ করে বলে –
“- কি হয়েছে আমার মিষ্টি আপুর? এতোদিন পর আমার কথা মনে পড়েছে তোমার আপু?
নোটনের কথা শুনে ওপাশ থেকে একটা মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে আসে একজন বাচ্চা মেয়ে যেমন করে কথা বলে সেইরকম কণ্ঠ। আপু বলে –
“- নোটন খুব খারাপ আমাকে একদিন ও ফোন দেয় নাই নোটন। আমার অনেক মন খারাপ হয়েছে কিন্তু নোটন তাও আমার সাথে কথা বলে নাই পঁচা নোটন “।
আপুর কথা শুনে নোটন হাসে আর বলে –
“- আচ্ছা সরি আপু আর কখনো এইরকম হবে না। এখন বলো আপু ডক্টর কি তোমাকে ঠিক করে ঔষধ দেয়। আর আম্মুকে দেখে ডক্টর কি বলে আম্মু কি সুস্থ হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি “।
“- ডক্টর কোনে কথা বলে না শুধু ওষুধ আর ইনজেকশন দেয়। আচ্ছা নোটন আম্মু আমার সাথে কথা বলে না কোনো শুধু চুপচাপ বেডে শুয়ে থাকে কোনো কথা বলে না। আমার এখানে একা একা থাকতে অনেক ভয় করে ওরা কেমন যানি? ওরা যদি আমাকে মেরে ফেলে?
“- কার এতো সাহস যে সে আমার আপুকে মারবে।আর বেশিদিন তোমাকে ওখান থাকতে হবে না খুব তাড়াতাড়ি আমি ফিরে আসবো “।
নোটনের কথা বলা শেষ হয় ওর আপুর সাথে এরপর ফোন রেখে শান্ত হয়ে বসে যায় ছাদে। আকাশে বিশাল চাঁদ উঠেছর তবে কোনো যানি মনে হচ্ছে আজকে চাঁদটা তার মতো একলা। নোটন এক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে দেখে আর দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ছাড়ে। নোটন বলে –
‘- কোনো কোনো এইরকম হলো আমার জীবন? সবাই আজকে আমাকে ঘৃণা করে কারণ শুধু মাএ আমি তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করব। কিন্তু সবাই যে আমার সাথে এতোবছর অন্যায় করেছে সেটা কি কেউ দেখে নাই। এই পরিবারের জন্য আমার মা বাবা বোন সবার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে “।
নোটন নিজের মনে অনেক কথা বলতে থাকে এরপর নিজের রুমে চলে আসে। নোটনের রুমে এসে দেখে সমুদ্র কাগজ দেখছে আর হাতের ফোন নিয়ে কল করছে।নোটন কোনো কথা না বলে অফিসের কাজ করার জন্য ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ে। সমুদ্র বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছে চাকরির জন্য কিন্তু কোথাও কোনো খালি নাই দেখে সমুদ্রের চোখে মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠছে। নোটন বিষয়টা খেয়াল করে এরপর বলে –
“- কি হয়েছে মিস্টার সমুদ্র কেউ কি আপনাকে চাকরি দিচ্ছে না?
সমুদ্র বিরক্তি নিয়ে নোটনের দিকে তাকিয়ে দেখে তবে কোনো কথার কোনো উত্তর প্রদান করে না। নোটন সমুদ্রের এইরকম চুপচাপ থাকা দেখে বেশ মজা পায় মাএ একদিন বাবা ছেলের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে ভাবতে পারে নাই। নোটন সমুদ্রকে আরেকটু জ্বালাতে বলে –
“- আরে কি হয়েছে মিস্টার সমুদ্র আপনি কি আমার সাথে কথা বলবেন না। কি অবস্থা দেখুন আপনাদের শুধু একটু কাজ করে খেতে বলেছি বলে আপনারা কথা বলতে ভুলে গেছেন। এই বাড়ি আমি কেঁড়ে নিয়েছি কিন্তু আপনার বাকস্বাধীনতা নিশ্চয়ই কেঁড়ে নেয় নাই “।
সমুদ্র এইবার রাগী চোখে নোটনের দিকে দেখে তবে নোটনের মুখে এখন ও একটা ডেভিল হাসি ফুটে উঠছে। সমুদ্র যানে নোটন ইচ্ছে করে তার পরিস্থিতির উপর মজা করছে সমুদ্র বলে –
“- নোটন আপনার সাথে ফালতু কথা বলার ইচ্ছা বা আগ্রহ এখন আমার নাই। একটা কাজ করছি দয়া করে বিরক্ত করবেন না নোটন “।
“- ওহ মিস্টার সমুদ্র আপনি না খুব তাড়াতাড়ি রেগে যান আমি শুধু জানতে চাই আপনাকে কি কেউ চাকরি দিচ্ছে না। আমার কাছে কিন্তু আপনার জন্য একটা দারুণ অফার রয়েছে একদম ফাস্ট ক্লাস অফার “।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র বলে –
“- কেমন অফার?
“- দেখুন আপনাকে এতো তাড়াতাড়ি কেউ চাকরি দিবে না কিন্তু চাকরি না পেলে কালকে সকাল থেকে আপনার পরিবার না খেয়ে থাকবে। তাই আমি চাই আপনি একটা চাকরি করেন সেইজন্য আমার অফিসের বর্তমান এমডি মিসেস নোটনের পিএ হিসাবে আপনাকে নিয়োগ করা যেতে পারে। বেশি কাজ করতে হবে না একটু ফাইল চেক করবেন অফিসের সবাইকে চা নাস্তা দিবেন। আবার মিটিং জন্য সময় ঠিক করবেন অফিসের সবার কি লাগবে না লাগবে সেটার খেয়াল রাখবেন “।
নোটনের কথা শুনে সমুদ্র ওর দিকে একটা অবাক করা মনোভাব নিয়ে দেখে। মানে সমুদ্র চৌধুরী যে বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসেছে সে না কি পিএ হবে। তাও আবার নিজের কোম্পানির সকলের জন্য চা নাস্তা তৈরি করবে। সমুদ্র বলে –
“- নোটন আপনি কি যানেন আমার পড়াশোনা ব্যাপারে আমি বিদেশ থেকে পিএইচডি কমপ্লিট করেছি বিজনেসর উপর৷ আর আমি এখন আপনার কোম্পানির পিএ হবো কি করে ভাবলেন কথাটা আপনি “।
“- সমুদ্র যানেন আপনার বাবা আর আপনার অহংকার অনেক বেশি যেটা আবার আমার পছন্দ না। আমার কোম্পানির পিএ হওয়া ছাড়া আপনার কোনো উপায় নাই কারণ কালকে থেকে চাকরি নিশ্চয়ই আপনাকে কেউ দিবে না। আর বিদেশ থেকে পিএইচডি করে এসে দেশে পিএ হবেন কথাটা কিন্তু শুনতে খারাপ না “।
“- আমার বাবা এই শহরের সবচেয়ে বড়ো বিজনেস ম্যাম আহনাফ চৌধুরী। তার ছেলে হয়ে আমি একটা কোম্পানি পিএ হবো?
“- আপনার বাবা অনেক আগে বড়োলোক ছিলো কিন্তু বর্তমানে ওনি একদম ফকির। আর একজম শ্রমিকের ছেলে কোনো কোম্পানির পিএ হওয়ার যোগ্যতা রাখে তাই না। তবে যদি আপনার এই চাকরি করতে সমস্যা হয় তাহলে অন্য কোথাও চাকরি করেন। দেখি একদিনের মধ্যে কোথা থেকে আপনি চাকরি জোগাড় করেন?
নোটন কথাটা বলে নিজের কাজের উপর ফোকাস করে আর মনে মনে বলে –
“- সমুদ্র আপনার জন্য আমাকে তিনবছর সকলের কাজের লোক হয়ে থাকতে হয়েছে তাই এখন আপনার ও আমার কাজের লোক হয়ে থাকতে হবে। কারণ নোটনের সাথে যে অন্যায় করে তাকে নোটন শাস্তি দিয়েই ছাড়ে সেটা স্বামী হোক বা শশুড় “।
এক বিন্দু ভালোবাসা দাও পর্ব ৯
আহনাফ চৌধুরী এখন টার্য়াড হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে নাবিলা বেগমের কোনো জানি অনেক খারাপ লাগছে নিজের স্বামীর জন্য। নাবিলা বেগম ফোন হাতে নিয়ে কাউকে কল দেয় আর বলে –
“- জাফর কোথায় তুমি? বিদেশ থেকে ফিরে আসো এই নোটকে শিক্ষা দিতে হবে তোমার?
“- হুম খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসছি আমি নোটনের খেলা শেষ করতে। শুধু দুইটা দিন সময় দাও নোটনের নাম এই পৃথিবী থেকে মুছে দিবো আমি “।