এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৫
তানিশা সুলতানা
“আ..আমাকে যেতে হবে। অনেক রাত হয়েছে। বাই এনি চান্স বাবা যদি দেখে ফেললে মে রেই ফেলবে।
তন্নির কন্ঠস্বরে ভয় স্পষ্ট। মেয়েটা বোধহয় কাঁপছে। তবে এই ভয়টা এতোখন ছিলো না। ফোনের শোকে অস্থির হয়ে ছিলো। এবার বোধহয় ফোনের কথা ভুলতে বসেছে।
অর্ণব বুকে হাত গুঁজে গম্ভীর নয়নে দেখছে। পা হতে মাথা ওবদি নজর বুলাচ্ছে। এই এক রত্তি মেয়ে অর্ণব চৌধুরীর বুকে আগুন জালাচ্ছে। মানা যায়?
“আমার যেতে ইচ্ছে করছে না। (বুকের বা পাশটা আঙুল দ্বারা ইশারা করে) এখানে আগুন জ্বলছে। শান্তি পাচ্ছি না।
ছটফটিয়ে ওঠে তন্নির। অস্থির হয়ে ওঠে নয়ন জোড়া। ব্যথিত গলায় শুধায়
“শরীর খারাপ লাগছে?
“তোকে কয়েকটা চুমু খেয়ে নিতে পারলে শরীর ঠিক লাগবে।
খাবো চুমু? নাকি তুই খাবি?
লজ্জায় কান গরম হয়ে ওঠে তন্নির। মাথা নুয়িয়ে ফেলে। বুকে গিয়ে থুতনি মেশে। লোকটার সামনে থেকে ভ্যানিশ হতে পারলে ভালো হতো। লজ্জা কমতো। কিন্তু ম্যাজিক তো তন্নি জানে না।
“আমি চুমু দিলে কিন্তু খ
অর্ণবকে কথা শেষ করতে না দিয়ে তন্নি রিনরিনিয়ে বলে ওঠে
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ আ..মি কেনো চু…মু দিবো? প্রপোজ তো করেন নি আমায়। ভালোবাসিও তো বলেন নাই।
ভ্রু কুচকে তাকায় অর্ণব তন্নির মুখপানে। বড্ড সাহসী হচ্ছে মেয়েটা দিনে দিনে। প্রশ্ন করতে শিখে গেছে। বাহহহ
“আমি প্রপোজ করলে সয্য করতে পারবে তুমি?
ভালোবাসি বললে চুমুতে থেমে থাকবো না। ডিরেক্ট বাসর করবো। কবুল বলার ধৈর্য থাকবে না আমার।
বাসর মানে বোঝো?
না কি বোঝাবো?
হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে তন্নির। এই লোকটার সাথে কথায় পেরে উঠবে না। ভাগ্য ভালো ধমক দেয় নি।
অর্ণব দু পা এগিয়ে আসে তন্নির দিকে। তন্নি দু পা পিছিয়ে যায়। বিরক্তিতে নাক কুঁচকায় অর্ণব। ধমকের সুরে বলে
“প্রবলেম কি হ্যাঁ? পিছাচ্ছ কেনো?
কেঁপে ওঠে তন্নির সত্তা। শুকনো ঢোক গিলে বলে
“আমাকে যেতে হবে
ব্যাসস বলেই তন্নি দৌড়ে চলে যায়। একবার পেছন ফিরে তাকায় না। অর্ণব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে। বেশ সাহস বেড়েছে মেয়েটার।
বিরবির করে বলে
“সামনে পাই একবার”
সকাল বেলা ভয়ে ভয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসে তন্নি। মানুষ বলে না “বিপদ যখন আসে চারদিক থেকেই আসে”
তন্নির হয়েছে সেই অবস্থা। প্রথমত গতকাল রাতে অর্ণব মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলেছে তারওপর মা আলমারি গোছাতে গিয়ে আংটিখানা পেয়েছে। তন্নিকে অবশ্য এখন পর্যন্ত কিছুই জিজ্ঞেস করে নি। তবে খাবার টেবিলে বাবার সম্মুখীন হতে হবে বেশ জানে তন্নি। তারেক রহমানের সামনে আজকে খাবারের থালা নেই। বিচার করেই সে খাবারে হাত দেবে চতুর তন্নি বুঝে যায়। আঁখিতে অশ্রুকণা জমে। কি জবাব দেবে মনে মনে কথা সাজাতে থাকে। মিথ্যে তন্নি বলতে পারে না। তবে মনে মনে প্রে করে যাতে ঠিকঠাক মিথ্যে বলতে পারে। নাহলে আজকে বাবার ধমকে মূর্ছা যাবে তন্নি।
তামিম নেই খাবার টেবিলে। নিশ্চয় সে এখন রেডি হচ্ছে অর্ণবের বাড়ি যাবে বলে।
পিনপিন নিরবতার অবসান ঘটিয়ে ইতি বেগম বলে
“আংটি তোমার মেয়ে কুড়িয়ে পেয়েছে এটা নিশ্চিত আমি। তবে ওকে জিজ্ঞেস করো
এতো দামি আংটি কেনো লুকালো? আমাদের কেনো বললো না?
আমি কিছু বললে তো আবার সৎ মা হয়ে যাবো। তুমিই বলো।
শব্দ করে কেঁদে ওঠে তন্নি। টপটপ করে চোখের পানি পড়তে থাকে টেবিলের ওপর। বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে ইতি বেগম।
“এই মেয়ের চোখে আল্লাহ কতো পানি দিয়েছে? কিছু বলার আগেই কেঁদেকুটে বন্যা বানিয়ে ফেলবে।
তারেক রহমান চোখ পাকিয়ে তাকায় ইতি বেগমের পানে। থেমে যায় ইতি।
তিনি নরম গলায় তন্নিকে সুধায়
“আম্মু বলো নি কেনো বাবাকে?
দুই হাতে চোখের পানি মুছে নেয় তন্নি। বাবার প্ররোচনায় আহ্লাদী হয়ে জবাব দেয়
“ ভয় পেয়েছিলাম
ব্যাসস আর কি বলবে তারেক? মেয়ে তার একটু বেশিই ভীতু এবং সরল সহজ। ভয় পেয়েই লুকিয়েছিলো এতে সন্দেহ নেই তারেক এবং ইতির। তন্নির স্বভাব সমন্ধে অবগত তারা।
ইতি বেগম প্রসঙ্গ পাল্টে থালাতে ভাজি দিতে দিতে বলে
“থাক এসব এখন
তোমার অফিসে দেরি হচ্ছে। খেয়ে নাও।
তন্নি কান্না থামাও। তোমাকে কেউ বকে নি। শুধু জিজ্ঞেস করেছে।
কিন্তু তন্নির কান্না থামে না। সে আবারও কাঁদতে কাঁদতে বলে
“আমি অন্য কারণে কাঁদছি।
ভ্রু কুচকে তাকায় ইতি বেগম। তারেকও আগ্রহী হয়ে মেয়েতে মনোযোগ দেয়।
“আমি ফোন হারিয়ে ফেলেছি।
মাথা নুয়িয়ে বলে ফেলেন তন্নি।
তারেক নিজের প্লেট কাছে টেনে রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে
“আমি খুশি হয়েছি। ফোন চালানোর বয়স তোমার হয় নি। তোমার মামা কিনে দিয়েছিলো বিধায় বারণ করতে পারি নি৷
এবার ভালো হয়েছে। পড়াশোনায় মন দাও। ভার্সিটিতে যখন যাবে তখন কিনে দিবো আমি।
অসন্তুষ্ট ইতি বেগম। সহজ ভাবে নিতে পারছেন না। এতো দামি ফোনটা। এভাবে হারিয়ে ফেলবে? এই মেয়ে ছোট না কি? ঢেড় বয়স হয়েছে৷ বয়সের তুলনায় বেশিই বোকা। কবে চালাক হবে?
খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে বের হয় তারেক। অথৈদের বাসায় ওদের দিয়ে তিনি যাবেন কোর্টে। তামিম বেশ খুশি। লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে সে। অর্ণবের থেকে বেশ কিছু মারপিট শিখবে এটাও ভেবে নিয়েছে।
যাওয়ার পথে অটো থামিয়ে মসজিদের দান বাক্সে অর্ণবের দেওয়া আংটিখানা রেখে যায় তারেক।
রাস্তা হতে পাওয়া জিনিস মসজিদে দিয়ে দিতে হয়।
আবারও আঁখিতে অশ্রু জমে তন্নির। অর্ণবকে কি জবাব দেবে? লোকটা তো একদমই শুনবে না তন্নির কথা। উল্টে ধমকে শেষ করবে তন্নিকে।
অথৈয়ের আজকে ঈদ। সকাল থেকে সাজুগুজু করছে সে। পার্পল রংয়ের থ্রি পিছ গায়ে জড়িয়েছে। গোলাপি ওষ্ঠদ্বয় রাঙিয়েছে লাল রংয়ের লিপস্টিক দ্বারা। কোমর সমান লম্বা চুল গুলো বিনুনি গেঁথেছে। ভ্রু সমান করে কাটা চুল গুলোও একটু পরিপাটি করে আঁচড়ে নেয়।
দুই হাতে পার্পল রংয়ের চুড়ি পড়েছে।
এবার আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে। সাগরের চোখে ভালো লাগবে তো তাকে?
না কি আরও একটু সাজুগুজু করবে?
অবশ্য ভাড়ি মেকাপ করতে পারে না অথৈ। সাহায্য লাগবে আর্থির। কিন্তু আর্থি তো নিজে সাজতে ব্যস্ত।
অতঃপর অথৈ নিজেকে বোঝায় “এভাবেই সাগরের চোখে ভালো লাগবে”
তন্নি তামিমকে বোঝাতে বোঝাতে অথৈদের বাড়িতে ঢোকে। তামিম বুঝেছে কি না কে জানে? তবে মাথা নেরে সম্মতি দিয়েছে এতেই সন্তুষ্ট তন্নি।
আশা বেগমের একমাস বোন সুমি বেগম এসেছেন। সুমি বেগমের বিয়ে হয়েছেন ২৯ বছর হবে। কন্যা সন্তানের জননী হয়েছেন বিয়ের ১৫ বছর পরে।
ভাসুরের ছেলেকে দত্তক নিয়েছিলেন তিনি। ভাসুর মারা যাওয়ার পরে কোলে তুলে নিয়েছিলেন ছোট্ট এতিম বাচ্চাটাকে। সেই ছেলের বয়স এখন সাতাইশ বছর। ছেলেকেও সাথে নিয়ে এসেছেন সুমি বেগম। ছেলেটার নাম আদিল এবং মেয়ের নাম আঁখি।
রান্না ঘরে সুমি এবং আশা রান্নার তোরজোর শুরু করে দিয়েছেন।
কিচেনে অচেনা মানুষ দেখে তন্নি তামিমকে নিয়ে সোজা অথৈয়ের রুমে আসে।
তামিমকে দেখে অথৈ লাফিয়ে ওঠে। দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে। ভীষণ ভালোবাসে সে তামিমকে। তন্নির খেয়াল নেই তার।
আহ্লাদে গদগদ হয়ে অথৈ বলে
“তামিম ভিডিও গেমস খেলবি।
তামিম সম্মতি প্রকাশ করে। মুহুর্তেই দুজন ভিডিও গেমস খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তন্নি বেশ জানে এবার একা একা বসে থাকতে হবে। তাই সে বেরিয়ে পড়ে রুম হতে।
কিচেনেই যাবে। এবং আশা বেগমকে সাহায্য করবে। অচেনা মানুষটা তো মেয়েই।
কিন্তু কিচেনে যাওয়ার আগেই আর্থির সামনে পড়ে। সে মুখে ফেইস মাক্স লাগিয়ে কানার মতো হাঁটছে।
তন্নিকে দেখে বোধহয় একটু স্বস্তি পেলো।
মাক্স থাকায় কথা বলতে অসুবিধা হচ্ছে। তবুও টেনে টেনে বলে
“তন্নি ভাইকে একটু ডেকে দে তো। ওরা চলে আসবে এখুনি। কিন্তু ভাইয়ের ঘুম আজকে ভাঙবে কি না কে জানে?
বোনু তুই একটু ডেকে তোল ওকে
তন্নি এবার মানা করবে কি করে? কি করে বলবে? “আপু তোমার অসভ্য ভাই আমাকে দেখলেই খালি চুমু খেতে চায়”
কিন্তু না বললে তো আবার বাঘের গুহায় পা রাখতে হবে।
তন্নির চোখে মুখে নার্ভাসনেস দেখে আর্থি প্রশ্ন করে
“কি হলো তন্নি? যাবি না?
তন্নি আমতাআমতা করে জবাব দেয়
“তোমার ভাই আমাকে একা পেলেই খালি চু
বলতে বলতে থেমে যায়। দাঁত দ্বারা জিভ কাটে। ছি ছি মুখ ফঁসকে কি বলে ফেললো? আর্থি কি ভাববে?
হেসে ফেলে আর্থি। তন্নির মাথায় গাট্টা মেরে বলে
“বলিস কি রে? কয়টা চুমু খেয়েছে রে?
অস্বস্তিতে হাঁসফাঁস করতে থাকে তন্নি। নিজের কথার জালে নিজেই ফেঁসেছে৷ এতো বেশি কথা বলার প্রয়োজন ছিলো কি?
তন্নির থেকে জবাব না পেয়ে আর্থি বলে
“একশো হবে?
“ না না
মাত্র ৩ টা চুমু খেয়েছে। তবে আর খেতে পারবে না।
ভ্রু কুচকে আর্থি শুধায়
“কেনো কেনো?
“ এইবার চুমু খেতে আসলে ঠোঁট সেলাই করে দিবো।
“সুঁই সুতো নিয়ে আমি তো পেছনে আছি।
এবার বিসমিল্লাহ বলে যা তো।
এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৪
ধবধবে সাদা বেডে উপুড় হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে অর্ণব। উদাম গা। কোমর ওবদি কম্বল জড়ানো। বালিশ পড়ে আছে ফ্লোরে। কোলবালিশ পড়বে পড়বে ভাব। ঝাঁকড়া চুল গুলো এলোমেলো।
লজ্জায় লাল হয়ে যায় তন্নি। ছিহহ ছিহহ নিলজ্জ পুরুষ। এভাবে দরজা খোলা রেখে খালি গায়ে কেউ ঘুমায়?
শুকনো ঢোক গিলে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় তন্নি। বেড থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে অর্ণবকে ডাকে
“এই যে শুনছেন?
উঠুন না।
মুহুর্তেই এক লাফে উঠে বসে অর্ণব