এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২০

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২০
তানিশা সুলতানা

নিস্তব্ধ রজনীতে ব্যাকুল প্রেয়সী অধিক আগ্রহে প্রহর গুনছে একখানা ফোনকলের আশায়। হাতে তার বড়সড় স্মার্ট ফোন। ফোনটা বাবার। গতবছরই কিনেছে। তারেক রহমান ভীষণ সাশ্রয়ী মানুষ। নিজের প্রয়োজন অর্থ ব্যয় করতে সচারাচর দেখা যায় না তাকে। দুটো শার্ট দীর্ঘ দিন যাবত পড়তে থাকে। মাস শেষে মোটা অঙ্কের কিছু টাকা তার হাতে পড়লেও নিজের জন্য শার্ট কেনে না। জুতো ছিঁড়ে গেলে সেটা চামারের থেকে শেলাই করে পড়বে তবুও এক জোড়া চপ্পল কিনবে না। তার মতে যে টাকা দিয়ে চপ্পল কিনবে বা শার্ট কিনবে সেই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়ের জন্য জামা কিনবে। নিজের পেছনে অর্থ ব্যয় করার চেয়ে বাচ্চাদের পেছনে ব্যয় করাতে তিনি বেশি আনন্দিত হয়।
বাবারা বোধহয় এমনই।

আধুনিক যুগের আধুনিক কায়দাকানুন। স্মার্ট ফোনেই বর্তমানে সকল খবরা-খবর আদান প্রদান হয়ে থাকে। চাকরিজীবী সকল মানুষদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় মাধ্যম হচ্ছে স্মার্ট ফোন। তাই তো কিনেছিলো ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে। অবশ্য এক মাস শুধু আফসোসই করেছে তারেক।
ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা বেজে চল্লিশ মিনিট। নেটওয়ার্কে সমস্যা করছে আজকে ভীষণ। একটু পরপরই ফোনে ইমার্জেন্সি নেটওয়ার্ক উঠে আসছে। সিমও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
এমনোতবস্থায় অর্ণব কল দিলে নিশ্চয় বন্ধ পাবে ফোন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাই আরামদায়ক বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে গিয়ে বসেছে তন্নি সেই রাত বারোটা পঁয়ত্রিশ মিনিটে। বৃষ্টি পড়েছে বিধায় পরিবেশ স্তব্ধ। কোলাহল নেই কোনো। মাঝেমধ্যে দূরে কোথাও কুকুর ডেকে উঠছে।
তন্নি অন্ধকারে ভয় পায়। বেলকনিতে বসে থাকার সাহস তার কখনো ছিলো না। কিন্তু আজকে ভয় করছে না। রুমের দরজা ভালো করে আটকে দিয়েছে।
ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসছে তন্নির। বসে থাকা দায়। রেলিঙ এ মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। মুহুর্তেই দিন দুনিয়া ভুলে যায়। তলিয়ে যায় ঘুমের অতল গভীরে।।

কতোখন ঘুমতে পেরেছে জানা নেই। তবে তীব্র ফোনের কাঁপুনিতে ঘুম ছুটে যায়। কোলের মধ্যে ফোন ছিলো বোধহয় কাঁপুনি অনুভব করতে পেরেছে। চমকে চোখ খুলে তন্নি। বুক কাঁপছে। দুরুদুরু বুকে কাঁপা-কাঁপি হাতে ফোন খানা তুলে নেয়। স্কিনে ভাসছে আননন নাম্বার। তন্নি ঠিক বুঝে যায় এটা অর্ণবের নাম্বার৷
এখন চারটা বেজে দুই মিনিট। এতোখনে সময় হয়েছে তার কল দেওয়ার?
অভিমানি প্রেয়সী অভিমান চেপে কল রিসিভ করে। মুহুর্তেই কানে বাড়ি খায় পুরুষালি গম্ভীর নিঃশ্বাসের শব্দ। কেঁপে ওঠে তন্নির সত্তা। বুকের কাঁপন বাড়ে। গলা শুকিয়ে কাঠ। পানি পেলে ভালো হতো বোধহয়।
মাঝেমধ্যে তন্নি ভাবে “এই লোকটাকে দেখে এতো ভয় পাওয়ার কি আছে? খেয়ে তো আর ফেলবে না। নরমাল থাকবি তন্নি”

কিন্তু এই ভাবনা লোকটার আশেপাশে গেলে টিকে না।
“জান আই ওয়ান্ট সী ইউ। ভিডিও কল দিবো? এমবি আছে?
ভরকায় তন্নি। এতোটা আদর করে কখনোই লোকটা কথা বলে নি। তবে আজকে কেনো? আর কন্ঠ কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে। ঘুম থেকে উঠেছে মনে হয়।
তন্নির ভাবনার মাঝে আবারও ভেসে আসে
“ওড়না টরনা ফেলে কলে এসো। দেখবো। আশেপাশে অনেক মেয়ে আছে। ওড়না নেই, শর্ট ড্রেস। বাট মন লাগছে না। ওদের মধ্যে তোমাকে খুঁজে চলেছি।
আই নিড ইউ জান। নিড ইউ সো মাচ।

শুকনো ঢোক গিলে তন্নি। লোকটা যে নেশা করেছে ঢেড় বুঝতে পারছে। সিগারেটের নেশা তার আছে জানতো তন্নি। কিন্তু ড্রিংকের নেশা ছিলো এটা তো জানতো না। আরও কি কি বাজে স্বভাব আছে তার? কোথায় ফেঁসে গেলি তন্নি? মেয়েও আছে আশেপাশে। বড্ড বাজে লোক।
বিরবির করে নিজেকে একটু বকে তন্নি প্রশ্ন করে
“মদও খান আপনি?
সাথে সাথেই অর্ণবের জবাব

“ তোকে খাই নি তো আর। গড প্রমিজ জান তোকে খেতে দিলে আর মদ খাবো না।
কান গরম হয় তন্নির। লজ্জা অস্বস্তি এবং রাগ তিনটাই কাবু করছে তন্নিকে। খট করে কল কেটে দেয়। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে। মুহুর্তেই আবারও কল বেজে ওঠে। তন্নি পণ করেছে ধরবে না। অশ্লীল কথা একদম শুনবে না সে। এখনো কান গরম হয়ে আছে। হৃদপিণ্ডের ধুপ বুকনি থামার নামই নেই।
পরপর কল আসছে আর আসছে। তন্নি বুঝে যায়। না ধরলে কল দিতেই থাকবে। তাই আবারও রিসিভ করে কানে দেয়।

“কল কাটলে ডিরেক্ট বাসায় চলে যাবো এন্ড যা যা করতে ইচ্ছে করছে করে ফেলবো। ইডিয়েট
ধমক খেয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায় তন্নি। অর্ণব একটু থেমে আবারও বলে ওঠে
“মায়াবতী ইউ আর সো সুইট এন্ড সো হ…ট। আমি নিড ইউ রে। তুই থাকলে আমি বারে আসতাম বল? তোর সাথে রোমাঞ্চ করতেই বিজি থাকতাম। রুমে ঢুকলেই তোকে ফিল করি মিস করি। তোকে ভেবে নির্ঘুম রাত কাটাই। কল্পনায় কতোবার তোর সাথে ইন্টিমেন্ট হয়েছি। এই মায়াবতী তোকে তুলে নিয়ে বিয়ে করবো। এসব বয়স টয়স বা***ল ছা*****ল গোনার টাইম নাই। তোর বাপ কিছু বলতে আসলে শা***লার টাক ফাটিয়ে দিবো।
অর্ণবের কথা শুনে তন্নির আঁখি পল্লব বড়বড় হয়ে যায়। কি বলছে লোকটা এসব? নেশার ঘোরে মানুষ অবশ্য সত্যি কথাই বলে।
অর্ণব আবারও শুরু করে।

“ইউ নো জান যখন তুই ওড়না ছাড়া টিশার্ট পড়ে আমার সামনে এসেছিলি। আই কুডনট কন্ট্রোল মাই সেলফ। ইচ্ছে করছিলো জাপ্টে ধরে যা করতে মন চাচ্ছে করে ফেলি। তোর গলার তিলটা উফফফফ জাস্ট ওসাম। আর লিপস। দেখলেই মাথা নষ্ট হয়ে যায় আমার। তোর বু
চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে ফেলে তন্নি। শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা-কাঁপি গলায় বলে
“আপনি ঔষধ খেয়েছিলেন?
বিরক্ত হয় বোধহয় অর্ণব। তেমনই শব্দ করে বলে

“বা*****লের ডাক্তার। তুই আমার কথা শোন। ডাক্তার বা****ল ছা****ল কি চিকিৎসা করবে আমার?
তন্নি জিভ দ্বারা ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
“আশ্চর্য ডাক্তারকে বকছেন কেনো?
“তো তোকে বকবো ইডিয়েট?
রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে দিলি স্টুপিট। সামনে থাকলে চাপকে গাল লাল করে দিতাম।
তন্নি ভ্রু কুচকে ফেলে। কি এমন বললো ও? এতোটা কেনো রেগে গেলো?
“আমি কি করেছি?
নিচু স্বরে সুধায় তন্নি।

কিন্তু আর অর্ণবের থেকে জবাব আসে না। মিউজিকের শব্দ কানে বাজতে থাকে। আর কিছু ছেলেদের।
তন্নি মন খারাপ করে কল কাটে। চোখে টলমল করে ওঠে অশ্রুকণা। এই যে তন্নির বাবাকে কি না কি বলবো কই তন্নি তো রাগ করে কিছু বললো না। রাগটা মনের মধ্যেই রেখে দিলো। কিন্তু উনি?

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ১৯

আজকের রাতটাই নির্ঘুম কাটে তন্নির। এখন ফজরের আজান দিচ্ছে। ডায়াল লিস্ট হতে অর্ণবের নাম্বার ডিলিট করে রুমে যায় তন্নি। ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে বাবার রুমে যায় ফোন দিতে।
তারেক কিছু পেপারস দেখছিলো। তন্নি যখনই তারেকের হাতে ফোনটা দেয় তখনই কল বেজে ওঠে। স্কিনে অর্ণবের নাম্বার দেখে তন্নির হাঁটু কাঁপতে শুরু করে।

এক মায়াবতীর প্রেমে পর্ব ২১